বৃহস্পতিবার, মার্চ ২৩, ২০২৩

জাতিসংঘে বঙ্গবন্ধু, বিশ্ব শান্তি ও শেখ মুজিবের মেয়ে

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শুক্রবার স্থানীয় সময় বিকেলে নিউইয়র্কে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে (ইউএনজিএ) ভাষণ দেন এবং সারা বিশ্বের মানুষের জীবনে শান্তি ও স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করার ওপর জোরারোপ করেন । বহুপাক্ষিকতার ওপর জোর প্রধানমন্ত্রী তাঁর ভাষণে বলেন- “প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সঙ্কট ও বিরোধ নিরসনে সংলাপের ওপর সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে শান্তিপূর্ণ বিশ্ব গড়তে অস্ত্র প্রতিযোগিতা, যুদ্ধ ও নিষেধাজ্ঞা বন্ধ করতে বিশ্ব সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।

তিনি বলেন, ‘বিশ্ব বিবেকের কাছে আমার আবেদন, অস্ত্র প্রতিযোগিতা, যুদ্ধ, স্যাংশন বন্ধ করুন। শিশুকে খাদ্য, শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা ও নিরাপত্তা দিন। শান্তি প্রতিষ্ঠা করুন।’ জাতিসংঘ সদর দফতরে সাধারণ পরিষদের ৭৭ তম অধিবেশনে আজ প্রদত্ত ভাষণে প্রধানমন্ত্রী এ আহ্বান জানান।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, যুদ্ধ বা একতরফা জবরদস্তিমূলক অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা, পাল্টা-নিষেধাজ্ঞার মত বৈরীপন্থা কখনও কোন জাতির মঙ্গল বয়ে আনতে পারে না। পারস্পরিক আলাপ-আলোচনাই সঙ্কট ও বিরোধ নিষ্পত্তির সর্বোত্তম উপায়।…তিনি বলেন, ‘আমরা বিশ্বাস করি যে সংঘাতের মূল কারণগুলো সমাধান না করে আমরা শান্তি বজায় রাখতে পারি না।’

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কণ্ঠে যেন বঙ্গবন্ধুর চিন্তা চেতনা ধ্বনিত প্রতিধ্বনিত হয়েছে।  বঙ্গবন্ধু ছিলেন শান্তি ও ন্যায়ের প্রতীক যিনি সারা বিশ্বে শান্তি ও স্থিতিশীলতার স্বপ্ন দেখেছেন ‘বিশ্বশান্তি’ই  ছিল বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক দর্শনের অন্যতম মূলনীতি। স্বাধীনতার জন্য সংগ্রামরত বিশ্বের মানুষের পাশে দাঁড়াতে তিনি মোটেই কুণ্ঠিত ছিলেন না , সে সংগ্রাম হোক আফ্রিকা, লাতিন আমেরিকা কিংবা এশিয়ার যে কোন প্রান্ত । অস্ত্র দিয়ে স্বাধীনতার সংগ্রাম বন্ধ করা যায় না এ কথা তিনি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করতেন।  বঙ্গবন্ধুর পদাঙ্ক অনুসরণ করে  শান্তির প্রতি জোর দেয়া, যে কোনো ধরনের সংঘাত থেকে বেরিয়ে আসার সর্বোত্তম উপায় হিসেবে  সংলাপ এবং শান্তিপূর্ণ সমাধানের পথ খোঁজা ’প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার একটি ভারসাম্যপূর্ণ নীতি।

বঙ্গবন্ধু কখনো কখনো সে ভারসাম্য রক্ষা করতে পেরেছিলেন কিনা তা ইতিহাসের বিচার্য বিষয় হয়ে রয়েছে শোষিত, নিপীড়িত, ও মেহনতি মানুষের অধিকার আদায়ে তিনি ছিলেন প্রকৃত অর্থেই নির্ভয় ও বলিষ্ঠ কণ্ঠস্বর।  তার কণ্ঠে তাই ধ্বনিত হয়েছিল “পৃথিবী আজ  দুই ভাগে বিভক্ত; অত্যাচারী এবং নিপীড়িত। আমি নির্যাতিতদের পক্ষে।” বিশ্ব শান্তির অগ্ৰদূত বঙ্গবন্ধু  শান্তি, মৈত্রী, স্বাধীনতা, গণতন্ত্রের জন্য লড়াই করেছেন। “শেখ মুজিব শুধু বঙ্গবন্ধু নন, আজ থেকে তিনি বিশ্বনেতা” “জুলিও কুরি শান্তি পদক” পাওয়ার পর সেক্রেটারি রোমেশ চন্দ্র এ মন্তব্য করেছিলেন।

“আমি শেখ মুজিবের মেয়ে—এটা মনে রাখবেন। অন্যায়ের কাছে মাথা নত করিনি, করবও না ( যুগান্তর, ০৯ জুন ২০২২) প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশের উন্নয়নের কারিগর এবং উন্নত সমৃদ্ধ বাংলাদেশের রূপকার। তিনি বাঙালি জাতিকে নতুন এক আশা দেখিয়েছেন। বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা বহির্বিশ্বে এক অনন্য উচ্চতায় পৌছে গেছেন। তিনি বলেন, ‘জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান জাতিসংঘে সর্বপ্রথম বাংলায় ভাষণ দিয়েছিলেন। তিনিই বিশ্বের একমাত্র রাষ্ট্রপ্রধান যিনি জাতিসংঘে ১৯ বার বাংলায়  ভাষণ দিয়ে বিশ্বে এক বিরল দৃষ্টান্ত স্থাপন করবেন। বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা বহির্বিশ্বে এক অনন্য উচ্চতায় পৌছে গেছেন।’ পানি সম্পদ উপ-মন্ত্রী একেএম এনামুল হক শামীম প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জন্মদিন উপলক্ষে বাংলাদেশ সময় শুক্রবার সকালে এবং যুক্তরাষ্ট্র সময় বৃহস্পতিবার রাতে যুক্তরাষ্ট্রের জ্যাকসন হাইটসের একটি মিলনায়তনে যুক্তরাষ্ট্র শ্রমিকলীগ আয়োজিত এক আলোচনা সভা ও মিলাদ মাহফিলে উপমন্ত্রী এসব কথা বলেন বলে বাসস(২৩ সেপ্টেম্বর ২০২২) জানায়।

প্রধানমন্ত্রী জাতিসংঘে তার ভাষণে বিশ্ব পরিস্থিতিকে তোলে ধরে বলেন ” আমরা ইউক্রেন ও রাশিয়ার সংঘাতের অবসান চাই। নিষেধাজ্ঞা, পাল্টা-নিষেধাজ্ঞার মাধ্যমে একটি দেশকে শাস্তি দিতে গিয়ে নারী, শিশুসহ ও গোটা মানবজাতিকেই শাস্তি দেওয়া হয়। এর প্রভাব কেবল একটি দেশেই সীমাবদ্ধ থাকে না বরং সকল মানুষের জীবন-জীবিকা মহাসঙ্কটে পতিত হয়। মানবাধিকার লঙ্ঘিত হয়। মানুষ খাদ্য, বাসস্থান, চিকিৎসা শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হয়। বিশেষ করে, শিশুরাই বেশি কষ্ট ভোগ করে। তাদের ভবিষ্যৎ অন্ধকারে হারিয়ে যায়।…তিনি বলেন, আমরা দেখতে চাই, একটি শান্তিপূর্ণ বিশ্ব-যেখানে থাকবে বর্ধিত সহযোগিতা, সংহতি, পারস্পরিক সমৃদ্ধি এবং ঐকবদ্ধ প্রচেষ্টা। আমাদের একটি মাত্র পৃথিবী এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে এই গ্রহকে আরও সুন্দর করে রেখে যাওয়া আমাদের দায়িত্ব।

জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৭৭তম অধিবেশনে প্রধানমন্ত্রী  শেখ হাসিনা যে ভাষণ দিলেন তা বঙ্গবন্ধু, বিশ্বশান্তি ও শেখ মুজিবের মেয়ে হিসেবে বাংলাদেশকে এক অনন্য উচ্চতায় তুলে ধরবে।

দেলোয়ার জাহিদ
সিনিয়র রিসার্চ ফ্যাকাল্টি মেম্বার, প্রাবন্ধিক ও রেড ডিয়ার (আলবার্টা, কানাডা) নিবাসী

বাংলাদেশি বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানসমূহের মধ্য থেকে 'বিশ্লেষণ'-এর জন্য স্পনসরশিপ খোঁজা হচ্ছে। আগ্রহীদের যোগাযোগ করার জন্য অনুরোধ করা হলো। ইমেইল: contact.bishleshon@gmail.com

এ বিষয়ের আরও নিবন্ধ

বৈশ্বিক পানি সংকট : জলবায়ুর পরিবর্তনের প্রভাব ও বাংলাদেশের উপকূলজুড়ে সুপেয় পানির অভাব

বাংলাদেশ বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তনে বিরূপ প্রভাবের শিকার একটি ক্ষতিগ্রস্ত দেশ। বাংলাদেশের ১৯ টি উপকূলীয়  জেলার সমগ্র অঞ্চল ও অধিবাসীগণ সুপেয় পানি, স্বাস্থ্যসম্মত...

বিভক্ত বিশ্বে সমুদ্রের উচ্চতা বৃদ্ধি রোধে ঐতিহাসিক’ চুক্তি ও বহুপাক্ষিকতার বিজয়

বিভাজিত বিশ্বে পরিবেশের সুরক্ষা নিশ্চিতে একটি ঐতিহাসিক চুক্তি স্বাক্ষরে সম্মত হয়েছে জাতিসংঘের সদস্য রাষ্ট্রগুলো। সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির সম্ভাবনা ও পৃথিবীর প্রায় অর্ধেক...

অভিজ্ঞতাভিত্তিক শিক্ষার যুগে বাংলাদেশ

যেহেতু অভিজ্ঞতাভিত্তিক শিক্ষা একটি নতুন ধারণা, তাই বাস্তবায়নের জন্য এমন একটি কমিটি থাকা উচিত যারা ধারাবাহিকভাবে পর্যবেক্ষণ করবে পাঠ্যক্রমটি সঠিকভাবে বাস্তবায়ন হচ্ছে কি না। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো শিক্ষার্থীদের কার্যক্রম রেকর্ড করার জন্য কোন পদ্ধতি অবলম্বন করবে তাও স্পষ্ট করতে হবে। কারণ মূল্যায়নের ন্যায্যতা প্রমাণের জন্য অভিজ্ঞতার রেকর্ড সংরক্ষণের প্রয়োজন হবে।

‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ গড়তে প্রয়োজন দক্ষ জনসম্পদ

জনশক্তি রপ্তানিতে রেকর্ড হলেও বিদেশি মুদ্রার সঞ্চয়ন বা রিজার্ভের অন্যতম প্রধান উৎস প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স প্রবাহের হার কমেছে বিদায়ী বছরে। সদ্য শেষ...

অভিজ্ঞতাভিত্তিক শিক্ষার যুগে বাংলাদেশ

যেহেতু অভিজ্ঞতাভিত্তিক শিক্ষা একটি নতুন ধারণা, তাই বাস্তবায়নের জন্য এমন একটি কমিটি থাকা উচিত যারা ধারাবাহিকভাবে পর্যবেক্ষণ করবে পাঠ্যক্রমটি সঠিকভাবে বাস্তবায়ন হচ্ছে কি না। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো শিক্ষার্থীদের কার্যক্রম রেকর্ড করার জন্য কোন পদ্ধতি অবলম্বন করবে তাও স্পষ্ট করতে হবে। কারণ মূল্যায়নের ন্যায্যতা প্রমাণের জন্য অভিজ্ঞতার রেকর্ড সংরক্ষণের প্রয়োজন হবে।

যুগে যুগে মুসলমানদের বিরুদ্ধে ধর্মযুদ্ধ

ইউরোপে মুসলিম বিদ্বেষিতা নতুন কিছু নয়। মধ্যযুগ থেকে এর সূত্রপাত। মধ্যযুগে খ্রিষ্টানদের কাছে জেরুজালেম শহরটি ছিল তাদের ধর্মীয় প্রেরণার প্রধান কেন্দ্র। তাদের...

হোয়াইট কলার বা ভদ্রবেশী  অপরাধ কী এবং বাংলাদেশে ভদ্রবেশী অপরাধের সংঘটন

হোয়াইট কলার অপরাধ। এর কোনো আইনগত সংজ্ঞা নেই। বাংলা শব্দে এটা ‘ভদ্রবেশী অপরাধ।’ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে এর উৎপত্তি হলেও ক্রমে তা বিভিন্ন রাষ্ট্রে...
আরও পড়তে পারেন

শিরক কী, মানুষ কীভাবে শিরকে লিপ্ত হয়

ইসলাম একমাত্র ধর্ম যেখানে স্রষ্টা তার কোনো ক্ষমতাতেই কাউকে অংশীদার সাব্যস্ত করেননি। অর্থাৎ আল্লাহই একমাত্র একক ইলাহ যিনি সমস্ত ক্ষমতার অধিকারী। সৃষ্টির...

মানব সম্পদ ব্যবস্থাপনা বা হিউম্যান রিসোর্স ম্যানেজমেন্ট বলতে কী বোঝায়

মানব সম্পদ ব্যবস্থাপনা বা হিউম্যান রিসোর্স ম্যানেজমেন্ট (Human Resource management) হলো একই সঙ্গে একটি অধ্যয়নের বিষয় ও ব্যবস্থাপনা কৌশল যা একটি প্রতিষ্ঠানের...

টপ্পা গান কী, টপ্পা গানের উৎপত্তি, বাংলায় টপ্পা গান ও এর বিশেষত্ব

টপ্পা গান এক ধরনের লোকিক গান বা লোকগীতি যা ভারত ও বাংলাদেশের বাংলা ভাষাভাষী মানুষের কাছে খুবই প্রিয়। এই টপ্পা গান বলতে...

রাষ্ট্রবিজ্ঞান বলতে কী বোঝায় এবং ভারতীয় উপমহাদেশে রাজনীতি বা রাষ্ট্রচিন্তা

রাষ্ট্রবিজ্ঞান (Political Science) সমাজবিজ্ঞানের একটি শাখাবিশেষ যেখানে পরিচালন প্রক্রিয়া, রাষ্ট্র, সরকার এবং রাজনীতি সম্পর্কীয় বিষয়াবলী নিয়ে আলোকপাত করা হয়।  এরিস্টটল রাষ্ট্রবিজ্ঞানকে রাষ্ট্র...

গণতন্ত্রের সংজ্ঞা কী বা গণতন্ত্র বলতে কী বোঝায়

গণতন্ত্র বলতে কোনো জাতিরাষ্ট্রের অথবা কোনো সংগঠনের এমন একটি শাসনব্যবস্থাকে বা পরিচালনাব্যবস্থাকে বোঝায় যেখানে নীতিনির্ধারণ বা সরকারি প্রতিনিধি নির্বাচনের ক্ষেত্রে প্রত্যেক নাগরিক...

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here