১১:৩৪ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
                       

ঋণ গ্রহণে ইসলামি নীতিমালা

আবদুল্লাহ নোমান
  • প্রকাশ: ১২:৪৩:০৬ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২২
  • / ৪৫৮ বার পড়া হয়েছে

অতি প্রয়োজনে ঋণ করা যেমন বৈধ, তেমনি অপ্রয়োজনে ধার করা চরম নিন্দিত। কেননা, ঋণের কারণে মানুষ সামাজে লাঞ্ছিত, অপদস্ত ও ধিকৃত হয়। অনেকে ঋণের বোঝা সহ্য করতে না পেরে আত্মহত্যার পথ বেছে নেয়। ঋণ মোমিনের জান্নাত লাভের অন্তরায়। তাইতো রাসুল (সা.) মৃতের সম্পদ উত্তরাধিকারীদের মাঝে বণ্টনের আগে তার ঋণ পরিশোধ করার ব্যাপারে জোর তাগিদ দিয়েছেন। (সুনানে ইবনে মাজাহ : ২৪৩৩)। শহিদের সব গোনাহ মাফ হলেও ঋণ মাফ হয় না। রাসুল (সা.) বলেন, ‘ঋণ ছাড়া শহিদের সব গোনাহ ক্ষমা করে দেওয়া হয়।’ (মুসলিম : ৪৭৭৭)।

নির্ধারিত সময় ঋণ পরিশোধে সচেষ্ট হওয়া

ঋণের বোঝা থেকে পরিত্রাণ লাভে নির্ধারিত সময় তা পরিশোধ করা কর্তব্য। কেননা, এটি একটি ওয়াদা বা প্রতিশ্রুতি। লেনদেনের ক্ষেত্রে প্রতিশ্রুতি রক্ষার গুরুত্ব অপরিসীম। ওয়াদা ভঙ্গের ফলে নানা সমস্যা ও সংকট সৃষ্টি হয় রাষ্ট্র, সমাজ ও ব্যক্তি পর্যায়ে। নড়বড়ে হয়ে পড়ে পারস্পরিক সম্পর্কের ভীত। হ্রাস পায় মানবিক মূল্যবোধ। প্রতিশ্রুতি রক্ষার আদেশ দিয়ে আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘হে মোমিনরা, তোমরা অঙ্গীকারগুলো পূর্ণ কর।’ (সুরা মায়িদা : ১)। ভয়ের কথা হলো, কেয়ামতের দিন অঙ্গীকার সম্পর্কে জিজ্ঞেসও করা হবে। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘অঙ্গীকার পূর্ণ কর। অবশ্যই অঙ্গীকার সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।’ (সুরা বনি ইসরাইল : ৩৪)। তা ছাড়া ওয়াদা ভঙ্গ করা মোনাফিকের আলামত। রাসুল (সা.) বলেন, ‘মোনাফিকের আলামত তিনটি- কথা বললে মিথ্যা বলে, ওয়াদা করলে ভঙ্গ করে, আমানত রাখা হলে খেয়ানত করে।’ (বোখারি : ৩৩)।

ঋণ পরিশোধে রবের ওপর ভরসা করা

ঋণগ্রস্ত ব্যক্তি যদি মহান আল্লাহর ওপর ভরসা করে ঋণ পরিশোধে যথাযথ প্রচেষ্টা চালায়, তাহলে অবশ্যই তিনি তাকে ঋণ আদায়ের ব্যবস্থা করে দেবেন। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘যে কেউ আল্লাহর ওপর ভরসা করবে, তিনিই তার জন্য যথেষ্ট।’ (সুরা তালাক : ৩)। রাসুল (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি মানুষের মাল (ধার) নেয় পরিশোধ করার মানসে, আল্লাহ তা আদায়ের ব্যবস্থা করে দেন। আর যে তা নেয় বিনষ্ট (গ্রাস) করার নিয়তে, আল্লাহ তাকে ধ্বংস করেন।’ (বোখারি : ২৩৮৭)।

ঋণ পরিশোধে গড়িমসি না করা

দেনা পরিশোধে সক্ষম হয়ে অযথা টালবাহানা করা মহাঅন্যায়। এটা জুলুমের অন্তর্ভুক্ত। রাসুল (সা.) বলেন, ‘ধনী ব্যক্তির ঋণ পরিশোধে গড়িমসি করা জুলুম। যখন তোমাদের কাউকে (তার জন্য) কোনো ধনী ব্যক্তির হাওয়ালা করা হয়, তখন সে যেন তা মেনে নেয়।’ (বোখারি : ২২৮৭)। তবে ঋণগ্রস্ত ব্যক্তি যথাযথ পূর্ব পদক্ষেপ নেয়ার পরও নির্ধারিত সময় কর্জ আদায়ে অক্ষম হলে, সে গোনাহগার হবে না। অবশ্য তার করণীয় হলো, ঋণদাতার কাছে বিনম্রভাবে নিজের অপারগতা প্রকাশ করে সময় বাড়িয়ে নেয়া।

উত্তমরূপে ঋণ পরিশোধ করা

ভালো আচরণের প্রতিদান ভালো হওয়া চাই। ঋণদাতা যেহেতু ঋণগ্রহীতাকে বিপদে দেনা দিয়ে সাহায্য করেছে, তাই মানবতা হচ্ছে, উৎকৃষ্ট পন্থায় পাওনাদারের ঋণ পরিশোধ করা। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘উত্তম কাজের প্রতিদান উত্তম ছাড়া আর কী হতে পারে!’ (সুরা আর রহমান : ৬০)। এ ক্ষেত্রে ঋণদাতা যদি রূঢ় আচরণও করে, তবু তার সঙ্গে সদাচরণ করা চাই। তদুপরি পূর্বশর্ত না করে থাকলে খুশি মনে তাকে কিছু বাড়িয়েও দেয়া যায়। আবু হুরায়রা (রা.) সূত্রে বর্ণিত; এক ব্যক্তি রাসুল (সা.)-এর কাছে পাওনার জন্য তাগাদা দিতে এসে রূঢ় ভাষায় কথা বলতে লাগল। এতে সাহাবিরা তাকে শায়েস্তা করতে উদ্যত হলেন। তখন রাসুল (সা.) বললেন, ‘তাকে ছেড়ে দাও। কেননা, পাওনাদারের (কড়া) কথা বলার অধিকার রয়েছে।’ তারপর তিনি বললেন, ‘তার উটের সমবয়সী একটি উট তাকে দিয়ে দাও।’ তারা বললেন, ‘এমন তো নেই, এর চেয়ে উত্তম উট রয়েছে।’ তিনি বললেন, ‘তাই দিয়ে দাও। তোমাদের মধ্যে সেই সর্বোৎকৃষ্ট, যে ঋণ পরিশোধের বেলায় উত্তম।’ (বোখারি : ২৩০৬)।

পাওনাদারের সঙ্গে বিনম্র ব্যবহার করা

মোমিনকে সব সময় নম্র ভদ্র ও বিনয়ী হওয়া চাই। উপরন্তু যখন সে কারও দয়া বা বদান্যতায় সিক্ত হয়, তখন তার প্রতি বিনীত হওয়া শরয়ি দৃষ্টিকোণে যেমন গুরুত্বপূর্ণ, মানবিক বিচারেও তাৎপর্যপূর্ণ। পাওনাদার খারাপ আচরণ করলেও নবীজি (সা.) তার সঙ্গে কোমল আচরণ করতেন। আবু সাঈদ খুদরি (রা.) সূত্রে বর্ণিত; তিনি বলেন, এক গ্রাম লোক রাসুল (সা.)-এর কাছে এসে তার ঋণ পরিশোধের জন্য তাকে কঠোর ভাষায় তাগাদা দিল। এমনকি সে তাকে বলল, ‘আমার ঋণ পরিশোধ না করলে আমি আপনাকে নাজেহাল করব।’ সাহাবিরা তার ওপর চড়াও হতে উদ্ধৃত হয়ে বললেন, ‘তোমার অনিষ্ট হোক! তুমি কি জানো, কার সঙ্গে কথা বলছ?’ সে বলল, ‘আমি আমার পাওনা দাবি করছি।’ তখন রাসুল (সা.) বললেন, ‘তোমরা কেন পাওনাদারের পক্ষ নিলে না?’ অতঃপর তিনি কায়েসের কন্যা খাওলা (রা.)-এর কাছে লোক পাঠিয়ে তাকে বললেন, ‘তোমার কাছে খেজুর থাকলে আমাকে ধার দাও। আমার খেজুর এলে তোমার ধার পরিশোধ করব।’ খাওলা (রা.) বললেন, ‘হ্যাঁ, ইয়া রাসুলাল্লাহ!’ বর্ণনাকারী বলেন, তিনি তাকে ধার দিলেন। রাসুল (সা.) তা দিয়ে বেদুঈনের পাওনা পরিশোধ করলেন এবং তাকে আহার করালেন। সে বলল, ‘আপনি পূর্ণরূপে পরিশোধ করলেন। আল্লাহ আপনাকে পূর্ণরূপে দান করুন।’ রাসুল (সা.) বললেন, ‘উত্তম লোকরা এমনই হয়। যে জাতির দুর্বল লোকরা জোর-জবরদস্তি ছাড়া তাদের পাওনা আদায় করতে পারে না, সে জাতি কখনও পবিত্র হতে পারে না।’ (সুনানে ইবনে মাজাহ : ২৪২৬)।

ঋণদাতার প্রতি কৃতজ্ঞ হওয়া ও তার জন্য দোয়া করা

যথাসময়ে ঋণ পাওয়া এবং প্রয়োজন পূরণ হওয়া নিশ্চয়ই আল্লাহর মহা-অনুগ্রহ। দয়াময় রবের শোকরিয়া আদায়ের পাশাপাশি এ অনুগ্রহ যার মাধ্যমে লাভ হয়েছে, তার প্রতি কৃতজ্ঞ হওয়াও বাঞ্ছনীয়। রাসুল (সা.) বলেন, ‘মানুষের প্রতি যে ব্যক্তি কৃতজ্ঞ নয়, আল্লাহর প্রতিও সে কৃতজ্ঞ নয়।’ (তিরমিজি : ১৯৫৫)। রাসুল (সা.) কারও কাছ থেকে ঋণ গ্রহণ করলে তার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতেন। তার জন্য দোয়া করতেন। (সুনানে ইবনে মাজাহ : ২৪২৪)। কেউ কারও প্রতি অনুগ্রহ করলে তার জন্য ‘জাযাকাল্লাহু খাইরান’ বলে দোয়া করার নির্দেশনা এসেছে হাদিসে। রাসুল (সা.) বলেন, ‘কাউকে অনুগ্রহ করা হলে সে যদি অনুগ্রহকারীকে জাযাকাল্লাহু খাইরান (অর্থাৎ আপনাকে আল্লাহতায়ালা উত্তম প্রতিদান দান করুন) বলে, তাহলে সে উপযুক্ত ও পরিপূর্ণ প্রশংসা করল।’ (তিরমিজি : ২০৩৫)।

বিষয়:

শেয়ার করুন

মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার তথ্য সংরক্ষিত রাখুন

ওয়েবসাইটটির সার্বিক উন্নতির জন্য বাংলাদেশের বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানসমূহের মধ্য থেকে স্পনসর খোঁজা হচ্ছে।

ঋণ গ্রহণে ইসলামি নীতিমালা

প্রকাশ: ১২:৪৩:০৬ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২২

অতি প্রয়োজনে ঋণ করা যেমন বৈধ, তেমনি অপ্রয়োজনে ধার করা চরম নিন্দিত। কেননা, ঋণের কারণে মানুষ সামাজে লাঞ্ছিত, অপদস্ত ও ধিকৃত হয়। অনেকে ঋণের বোঝা সহ্য করতে না পেরে আত্মহত্যার পথ বেছে নেয়। ঋণ মোমিনের জান্নাত লাভের অন্তরায়। তাইতো রাসুল (সা.) মৃতের সম্পদ উত্তরাধিকারীদের মাঝে বণ্টনের আগে তার ঋণ পরিশোধ করার ব্যাপারে জোর তাগিদ দিয়েছেন। (সুনানে ইবনে মাজাহ : ২৪৩৩)। শহিদের সব গোনাহ মাফ হলেও ঋণ মাফ হয় না। রাসুল (সা.) বলেন, ‘ঋণ ছাড়া শহিদের সব গোনাহ ক্ষমা করে দেওয়া হয়।’ (মুসলিম : ৪৭৭৭)।

নির্ধারিত সময় ঋণ পরিশোধে সচেষ্ট হওয়া

ঋণের বোঝা থেকে পরিত্রাণ লাভে নির্ধারিত সময় তা পরিশোধ করা কর্তব্য। কেননা, এটি একটি ওয়াদা বা প্রতিশ্রুতি। লেনদেনের ক্ষেত্রে প্রতিশ্রুতি রক্ষার গুরুত্ব অপরিসীম। ওয়াদা ভঙ্গের ফলে নানা সমস্যা ও সংকট সৃষ্টি হয় রাষ্ট্র, সমাজ ও ব্যক্তি পর্যায়ে। নড়বড়ে হয়ে পড়ে পারস্পরিক সম্পর্কের ভীত। হ্রাস পায় মানবিক মূল্যবোধ। প্রতিশ্রুতি রক্ষার আদেশ দিয়ে আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘হে মোমিনরা, তোমরা অঙ্গীকারগুলো পূর্ণ কর।’ (সুরা মায়িদা : ১)। ভয়ের কথা হলো, কেয়ামতের দিন অঙ্গীকার সম্পর্কে জিজ্ঞেসও করা হবে। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘অঙ্গীকার পূর্ণ কর। অবশ্যই অঙ্গীকার সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।’ (সুরা বনি ইসরাইল : ৩৪)। তা ছাড়া ওয়াদা ভঙ্গ করা মোনাফিকের আলামত। রাসুল (সা.) বলেন, ‘মোনাফিকের আলামত তিনটি- কথা বললে মিথ্যা বলে, ওয়াদা করলে ভঙ্গ করে, আমানত রাখা হলে খেয়ানত করে।’ (বোখারি : ৩৩)।

ঋণ পরিশোধে রবের ওপর ভরসা করা

ঋণগ্রস্ত ব্যক্তি যদি মহান আল্লাহর ওপর ভরসা করে ঋণ পরিশোধে যথাযথ প্রচেষ্টা চালায়, তাহলে অবশ্যই তিনি তাকে ঋণ আদায়ের ব্যবস্থা করে দেবেন। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘যে কেউ আল্লাহর ওপর ভরসা করবে, তিনিই তার জন্য যথেষ্ট।’ (সুরা তালাক : ৩)। রাসুল (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি মানুষের মাল (ধার) নেয় পরিশোধ করার মানসে, আল্লাহ তা আদায়ের ব্যবস্থা করে দেন। আর যে তা নেয় বিনষ্ট (গ্রাস) করার নিয়তে, আল্লাহ তাকে ধ্বংস করেন।’ (বোখারি : ২৩৮৭)।

ঋণ পরিশোধে গড়িমসি না করা

দেনা পরিশোধে সক্ষম হয়ে অযথা টালবাহানা করা মহাঅন্যায়। এটা জুলুমের অন্তর্ভুক্ত। রাসুল (সা.) বলেন, ‘ধনী ব্যক্তির ঋণ পরিশোধে গড়িমসি করা জুলুম। যখন তোমাদের কাউকে (তার জন্য) কোনো ধনী ব্যক্তির হাওয়ালা করা হয়, তখন সে যেন তা মেনে নেয়।’ (বোখারি : ২২৮৭)। তবে ঋণগ্রস্ত ব্যক্তি যথাযথ পূর্ব পদক্ষেপ নেয়ার পরও নির্ধারিত সময় কর্জ আদায়ে অক্ষম হলে, সে গোনাহগার হবে না। অবশ্য তার করণীয় হলো, ঋণদাতার কাছে বিনম্রভাবে নিজের অপারগতা প্রকাশ করে সময় বাড়িয়ে নেয়া।

উত্তমরূপে ঋণ পরিশোধ করা

ভালো আচরণের প্রতিদান ভালো হওয়া চাই। ঋণদাতা যেহেতু ঋণগ্রহীতাকে বিপদে দেনা দিয়ে সাহায্য করেছে, তাই মানবতা হচ্ছে, উৎকৃষ্ট পন্থায় পাওনাদারের ঋণ পরিশোধ করা। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘উত্তম কাজের প্রতিদান উত্তম ছাড়া আর কী হতে পারে!’ (সুরা আর রহমান : ৬০)। এ ক্ষেত্রে ঋণদাতা যদি রূঢ় আচরণও করে, তবু তার সঙ্গে সদাচরণ করা চাই। তদুপরি পূর্বশর্ত না করে থাকলে খুশি মনে তাকে কিছু বাড়িয়েও দেয়া যায়। আবু হুরায়রা (রা.) সূত্রে বর্ণিত; এক ব্যক্তি রাসুল (সা.)-এর কাছে পাওনার জন্য তাগাদা দিতে এসে রূঢ় ভাষায় কথা বলতে লাগল। এতে সাহাবিরা তাকে শায়েস্তা করতে উদ্যত হলেন। তখন রাসুল (সা.) বললেন, ‘তাকে ছেড়ে দাও। কেননা, পাওনাদারের (কড়া) কথা বলার অধিকার রয়েছে।’ তারপর তিনি বললেন, ‘তার উটের সমবয়সী একটি উট তাকে দিয়ে দাও।’ তারা বললেন, ‘এমন তো নেই, এর চেয়ে উত্তম উট রয়েছে।’ তিনি বললেন, ‘তাই দিয়ে দাও। তোমাদের মধ্যে সেই সর্বোৎকৃষ্ট, যে ঋণ পরিশোধের বেলায় উত্তম।’ (বোখারি : ২৩০৬)।

পাওনাদারের সঙ্গে বিনম্র ব্যবহার করা

মোমিনকে সব সময় নম্র ভদ্র ও বিনয়ী হওয়া চাই। উপরন্তু যখন সে কারও দয়া বা বদান্যতায় সিক্ত হয়, তখন তার প্রতি বিনীত হওয়া শরয়ি দৃষ্টিকোণে যেমন গুরুত্বপূর্ণ, মানবিক বিচারেও তাৎপর্যপূর্ণ। পাওনাদার খারাপ আচরণ করলেও নবীজি (সা.) তার সঙ্গে কোমল আচরণ করতেন। আবু সাঈদ খুদরি (রা.) সূত্রে বর্ণিত; তিনি বলেন, এক গ্রাম লোক রাসুল (সা.)-এর কাছে এসে তার ঋণ পরিশোধের জন্য তাকে কঠোর ভাষায় তাগাদা দিল। এমনকি সে তাকে বলল, ‘আমার ঋণ পরিশোধ না করলে আমি আপনাকে নাজেহাল করব।’ সাহাবিরা তার ওপর চড়াও হতে উদ্ধৃত হয়ে বললেন, ‘তোমার অনিষ্ট হোক! তুমি কি জানো, কার সঙ্গে কথা বলছ?’ সে বলল, ‘আমি আমার পাওনা দাবি করছি।’ তখন রাসুল (সা.) বললেন, ‘তোমরা কেন পাওনাদারের পক্ষ নিলে না?’ অতঃপর তিনি কায়েসের কন্যা খাওলা (রা.)-এর কাছে লোক পাঠিয়ে তাকে বললেন, ‘তোমার কাছে খেজুর থাকলে আমাকে ধার দাও। আমার খেজুর এলে তোমার ধার পরিশোধ করব।’ খাওলা (রা.) বললেন, ‘হ্যাঁ, ইয়া রাসুলাল্লাহ!’ বর্ণনাকারী বলেন, তিনি তাকে ধার দিলেন। রাসুল (সা.) তা দিয়ে বেদুঈনের পাওনা পরিশোধ করলেন এবং তাকে আহার করালেন। সে বলল, ‘আপনি পূর্ণরূপে পরিশোধ করলেন। আল্লাহ আপনাকে পূর্ণরূপে দান করুন।’ রাসুল (সা.) বললেন, ‘উত্তম লোকরা এমনই হয়। যে জাতির দুর্বল লোকরা জোর-জবরদস্তি ছাড়া তাদের পাওনা আদায় করতে পারে না, সে জাতি কখনও পবিত্র হতে পারে না।’ (সুনানে ইবনে মাজাহ : ২৪২৬)।

ঋণদাতার প্রতি কৃতজ্ঞ হওয়া ও তার জন্য দোয়া করা

যথাসময়ে ঋণ পাওয়া এবং প্রয়োজন পূরণ হওয়া নিশ্চয়ই আল্লাহর মহা-অনুগ্রহ। দয়াময় রবের শোকরিয়া আদায়ের পাশাপাশি এ অনুগ্রহ যার মাধ্যমে লাভ হয়েছে, তার প্রতি কৃতজ্ঞ হওয়াও বাঞ্ছনীয়। রাসুল (সা.) বলেন, ‘মানুষের প্রতি যে ব্যক্তি কৃতজ্ঞ নয়, আল্লাহর প্রতিও সে কৃতজ্ঞ নয়।’ (তিরমিজি : ১৯৫৫)। রাসুল (সা.) কারও কাছ থেকে ঋণ গ্রহণ করলে তার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতেন। তার জন্য দোয়া করতেন। (সুনানে ইবনে মাজাহ : ২৪২৪)। কেউ কারও প্রতি অনুগ্রহ করলে তার জন্য ‘জাযাকাল্লাহু খাইরান’ বলে দোয়া করার নির্দেশনা এসেছে হাদিসে। রাসুল (সা.) বলেন, ‘কাউকে অনুগ্রহ করা হলে সে যদি অনুগ্রহকারীকে জাযাকাল্লাহু খাইরান (অর্থাৎ আপনাকে আল্লাহতায়ালা উত্তম প্রতিদান দান করুন) বলে, তাহলে সে উপযুক্ত ও পরিপূর্ণ প্রশংসা করল।’ (তিরমিজি : ২০৩৫)।