শুক্রবার, জুন ৯, ২০২৩

Banking: বাংলাদেশে কি টাকার তুলনায় ব্যাংকের সংখ্যা বেশি?

কোনো কোনো ব্যাংকের সঙ্গে কেন্দ্রীয় ব্যাংক তিন বছর মেয়াদি এমওইউ সই করছে। কিছু কিছু ব্যাংকে অনিয়মের পাহাড় জমে গেছে। নামে-বেনামে নিজেদের মধ্যে ঋণ দেয়া হচ্ছে। আবার এসব ঋণের বিপরীতে যে পরিমাণ জামানত নেয়ার কথা তা নেয়া হয়নি। যে পরিমাণ জামানত নেয়া হয়েছে তার গুণমান খুবই দুর্বল। ভুয়া ঋণ সৃষ্টি করে ঋণ পরিশোধ দেখানো হচ্ছে। এভাবে খেলাপি ঋণ আড়াল হয়ে যাচ্ছে।

ব্যাংকিং খাতকে অর্থনীতির চালিকাশক্তি বলা হয়। ব্যাংকের অন্যতম কাজ হলো দেশের অর্থনীতি ও ব্যবসার চাকা সচল রাখতে ঋণ দেয়া এবং সময়মতো সে ঋণ আদায় করা। ব্যাংকের প্রধান সম্পদই হলো এ ঋণ। যেকোনো দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে নিরাপদ, কল্যাণমুখী খাতে বিনিয়োগসহ শক্তিশালী ব্যাংকিং ব্যবস্থা অপরিহার্য। ব্যাংকের সঙ্গে যাদের লেনদেনের সম্পর্ক তারা বেশিরভাগই শিক্ষিত, সচেতন; সবারই চোখ-কান খোলা। সবাই জানে ও বুঝে, প্রশিক্ষিত ও সৎ কর্মকর্তার সমন্বয়ের সঙ্গে জনস্বার্থ, আমানতকারীদের স্বার্থ সংরক্ষণ ছাড়া কোনো ব্যাংক সাফল্য অর্জন করতে পারে না। অতীত ও বর্তমানে ব্যাংকিং খাতে লুটপাটের প্রতিটি ঘটনার ক্ষেত্রে রাজনৈতিক প্রভাব ছিল স্পষ্ট। দেশের ব্যাংকিং খাতে সমস্যার শেষ নেই।

ব্যাপক দুর্নীতি ও অনিয়ম, ঋণ বিতরণে রাজনৈতিক প্রভাব এবং সরকারি ব্যাংকগুলোর ওপর কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নিয়ন্ত্রণ যথেষ্ট না থাকায় মূলত খেলাপি ঋণ নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেছে। এ ছাড়া বেসরকারি ব্যাংকগুলোতে পরিচালকরা নিজেদের মধ্যে ঋণ ভাগাভাগিসহ আমানত ‘খেয়ে ফেলা’য় সেখানেও খেলাপির সংখ্যা ভয়াবহ। মোটকথা, ঋণখেলাপিদের কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছে ব্যাংকিং খাত। বাংলাদেশে টাকার তুলনায় ব্যাংক বেশি। বিশ্বের অনেক বড় বড় অর্থনীতির দেশেও এত ব্যাংক নেই, যতটা বাংলাদেশে রয়েছে।

বর্তমানে বাংলাদেশে ৬১টি অনুমোদিত ব্যাংক রয়েছে। কিন্তু দেশের জিডিপির (GDP) আকারের দিকে লক্ষ্য করলে অর্থনীতি ও ব্যাংকের সংখ্যার সঙ্গে সামঞ্জস্য খুঁজে পাওয়া যায় না। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশ থাইল্যান্ডের বর্তমান জিডিপি ৫০০ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়েছে। অথচ দেশটিতে ব্যাংকের সংখ্যা মাত্র ১৮টি। এর মধ্যে ৬টি সরকারি ও ১২টি বেসরকারি ব্যাংক। অন্যদিকে অর্থনৈতিকভাবে আরেক উন্নত দেশ সিঙ্গাপুর। দেশটির ৩৪০ বিলিয়ন জিডিপির বিপরীতে ব্যাংক রয়েছে মাত্র ৫টি। এদিকে মালয়েশিয়ায় ৩৩৭ বিলিয়ন জিডিপির বিপরীতে ব্যাংকের সংখ্যা মাত্র ৮টি। দেশগুলোতে দেশীয় ব্যাংকের সংখ্যা কম হলেও সমৃদ্ধ অর্থনীতির চমকে অনেক বিদেশি ব্যাংক দেশগুলোতে বিনিয়োগ করছে। প্রায় ১৩০ কোটি মানুষের দেশ ভারতে ব্যাংকের সংখ্যাও বাংলাদেশের তুলনায় অনেক কম। দেশটিতে ১২টি সরকারি ব্যাংকের পাশাপাশি কার্যক্রম পরিচালনা করছে ২২টি বেসরকারি ব্যাংক। এ ব্যাংকগুলোই ভারতজুড়ে ব্যাংকিং সেবা দিচ্ছে। তবে ভারতে অঞ্চলভিত্তিক ৪৩টি ব্যাংকের পাশাপাশি ৪৬টি বিদেশি ব্যাংকও কার্যক্রম পরিচালনা করছে। জাতীয়ভাবে কার্যক্রম পরিচালনা করা ব্যাংকের তুলনায় ভারতে আঞ্চলিক অনেক ব্যাংকের অবস্থান শক্তিশালী।

অন্যদিকে পাকিস্তানে ২৬২ বিলিয়ন জিডিপির বিপরীতে ব্যাংকের সংখ্যা ২২টি, ফিলিপাইনে ৩৬১ বিলিয়নের বিপরীতে ১৭টি, নাইজেরিয়ায় ৪৩২ বিলিয়নের বিপরীতে ২০টি ও মিশরে ৩৬৫ বিলিয়নের বিপরীতে ব্যাংকের সংখ্যা ৩৯টি। মূলত একটি দেশ অর্থনৈতিকভাবে সমৃদ্ধ হলে, সেখানে বিদেশি ব্যাংকের কার্যক্রম বৃদ্ধি পায়। কিন্তু বাংলাদেশের ক্ষেত্রে গত কয়েক দশকেও এমনটা ঘটেনি। বাংলাদেশে বেসরকারি ব্যাংকের সংখ্যা দিন দিন বৃদ্ধি পেলেও কমেছে বিদেশি ব্যাংকের সংখ্যা।

বাংলাদেশে ব্যাংক করার ব্যাপারে ধনাঢ্যরা এত আগ্রহী কেন? কী তাদের উদ্দেশ্য? এসব নিয়ে সাধারণ মানুষ নানা প্রশ্ন করলেও তাদের কথা পাত্তা দেয়ার গরজ মনে করেনি কোনো সরকারই। কিছু দিন আগে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেছিলেন, এখন অনেকেই ব্যাংক করেন জনগণের টাকা লুটের জন্য। তা-ও মেঠো বক্তৃতায় নয়। তিনি কথাটা বলেছেন উচ্চ আদালতে শুনানিতে, যেখানে ছিলেন স্বয়ং তৎকালীন প্রধান বিচারপতি। রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তার এ বক্তব্যকে কথার কথা মনে করে উড়িয়ে দেয়ার সুযোগ থাকে না। শুধু অ্যাটর্নি জেনারেল নন, হাইকোর্টের একটি বেঞ্চ থেকেও কঠিন পর্যবেক্ষণ এসেছিল ব্যাংকিং খাত নিয়ে। একটি রিটের শুনানিতে বিচারপতিদের সমন্বিত বেঞ্চ বলেছেন, দেশের ব্যাংক খালি হয়ে গেছে, হাজার হাজার কোটি টাকা দেশের বাইরে চলে গেছে। এখন বেসরকারি ব্যাংকের মতো সরকারি ব্যাংক থেকেও টাকা চলে গেলে এ খাতে ধস নামবে।

The Bangladesh Bank headquarters in Motijheel | Mahmud Hossain Opu/Dhaka Tribune

ব্যাংকিং খাতের লুটপাট, অর্থপাচার নিয়ে আদালতের মনোযোগ মহল বিশেষকে সে সময় আশাবাদী করলেও এখন হোঁচট খেতে হচ্ছে। খোদ আদালত থেকেই বলা হচ্ছে, এমন ব্যাংক কীভাবে প্রতিষ্ঠা করা হয়? কারা ব্যাংকের অনুমোদন পান? কারা দেন অনুমতি? আবার চুরি বা লুট করার পরও জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিয়ে উপরন্তু প্রণোদনা কেন? আদালতের প্রশ্নগুলো কিছু দিন সাধারণ মানুয়ের মুখে মুখে ঘুরলেও এখন প্রায় অজানা। বর্তমান সময়ের প্রেক্ষাপটে ব্যাংক ও আর্থিক খাতে অনিয়ম রেখে সুষম উন্নয়ন ও উচ্চ প্রবৃদ্ধি অর্জন সম্ভব নয়। সুশাসনের অভাব, উচ্চ কর হার, আর্থিক অপরাধ ও চুরি এবং নীতির ধারাবাহিকতা না থাকার কারণে ব্যবসার পরিবেশ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে দিন দিন। দেশের টেকসই অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা, ব্যাংকিং খাতকে ইতিবাচক ধারায় রাখা এবং কোম্পানি, বিমাসহ সব আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে ক্ষমতাসীনদের সৎ ও সহজ বোঝাপড়া দরকার, এটি যেন কেউই মনেই করেন না। দেশের ব্যাংকিং খাত লুটপাটের এমন নিরাপদ এবং অবৈধ পথ; কিন্তু একদিনে হয়নি। সেখান থেকে ঘুরে দাঁড়ানো প্রয়োজন— এ কথা মুখে বললেও কোনো গরজ নেই বা থাকলেও তা অস্পষ্ট। লুটেরাদের পক্ষে সাফাই এবং তাদের বাঁচিয়ে দেয়ার চেষ্টা সব সময়ে স্পষ্ট।

দেশের ব্যাংক পরিচালকদের ঋণকাণ্ড এখন যেন তেমন কোনো অপরাধের ঘটনা নয়। সরকার বা কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে শক্ত কোনো পদক্ষেপ না নেয়ায় একে এক ধরনের অধিকারের মধ্যে নিয়ে এসেছেন তারা। এ ব্যাপারে অবশ্য পরিচালকদের পারস্পরিক বোঝাপড়া কিন্তু চমৎকার। ‘ভাগেযোগে’ তাদের মধ্যে বেশ মিলমিশ। তারা পরস্পর যোগসাজশে একে অন্যের ব্যাংক থেকে ঋণ নিচ্ছেন এক ধরনের মামাবাড়ির মতো। বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ব্যাংক ম্যানেজমেন্ট-বিআইবিএমের গবেষণায় দেখা গেছে, ব্যাংকিং খাতে সংঘটিত ৯০ শতাংশ অনিয়ম অপরাধে জড়িত ব্যাংকের নিজস্ব লোকজন। কারণ, পরিচালকদের হাতেই রয়েছে ব্যাংকের বেশিরভাগ ক্ষমতা। ফলে ঋণখেলাপিরা শাসন বা বাধার পরিবর্তে উল্টো প্রণোদনা পেয়ে চলছেন। সভা-সেমিনারে নানা কড়া কথা বলা হলেও ঋণখেলাপিদের ছাড় দেয়ার ব্যাপারে সরকারের পাকা সিদ্ধান্তের আলামত অস্পষ্ট। তা ব্যাংক খাতকে বৈষম্যের খাদে ফেলে দিয়েছে। খেলাপিরা উৎসাহিত। আরো বেপরোয়া। এর বিপরীতে প্রকৃত বা ভালো গ্রাহকরা হচ্ছেন নিরুৎসাহিত, হতাশ। ব্যাংক পরিচালকরা অন্য ব্যাংক থেকে বিপুল পরিমাণে ঋণ নিচ্ছেন। স্বাভাবিকভাবেই এতে অন্য ঋণগ্রহীতা বঞ্চিত হচ্ছেন। বেসরকারি ব্যাংকের পরিচালকদের বেশিরভাগই দেশের প্রভাবশালী ব্যবসায়ী। ব্যাংক ব্যবসার পাশাপাশি অন্য ব্যবসাও তাদের কব্জায়। আগে পরিচালকরা নিজ ব্যাংক থেকেই বেশি মাত্রায় ঋণ নিতেন এবং পরিশোধ করতেন না। যখন খেলাপি হয়ে যান, তখন বেনামি ঋণ সৃষ্টি করে ওই ঋণ পরিশোধ দেখাতেন। আবার অনৈতিকভাবে নিজেদের ঋণের সুদ মওকুফ করে নিতেন। পরিচালকদের এ অনৈতিক কার্যক্রম ঠেকাতে নিজের ব্যাংক থেকে কী পরিমাণ ঋণ নেয়া যাবে, তার একটি সীমা বেঁধে দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক।

বর্তমানে একজন পরিচালকের নিজের ব্যাংক থেকে শেয়ার পরিশোধিত মূলধনের ৫০ শতাংশ ঋণ নেয়ার বিধান রয়েছে। তবে এক ব্যাংকের পরিচালকের অন্য ব্যাংক থেকে ঋণ নেয়ার ক্ষেত্রে এ রকম কোনো সীমা টানা নেই। তাই পরিচালকরা কাজে লাগিয়েছেন এই সুযোগ। নিজেদের ব্যবসার প্রয়োজনে দেখিয়ে তারা অন্য ব্যাংক থেকে ঋণ নিচ্ছেন ফ্রি স্টাইলে। খেলাপি কমিয়ে আনতে এই খেলাপিদের ডাউন পেমেন্টের সুবিধা দিয়ে ঋণ নিয়মিতকরণসহ আরো নানান সুবিধা দেয়া হয়েছে। এতে খেলাপি ঋণ কমেনি। আরো বেড়েছে। তাদের ঋণ দেয়ার সময় যাচাই-বাছাই থাকছে না। রাজনৈতিক সংযোগ থাকা ঋণগ্রহীতারা এমনিতেই প্রভাবশালী। ব্যাংকের পরিচালক বা ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা তাদের শুধু ঋণের ব্যবস্থাই করেন না, ক্ষেত্রবিশেষে তোয়াজও করেন। নিষ্ঠুর ও তামাশাময় এ দৃষ্টান্ত ভাঙার কোনো আলামত নেই। সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ব্যাংকের পরিচালকদের ব্যাংক পরিচালন কার্যক্রমে হস্তক্ষেপ না করার বিষয়ে পরামর্শ দিয়েছেন। এটি অত্যন্ত সময়োপযোগী পরামর্শ। সাম্প্রতিক বছরগুলোয় পরিচালনা পর্ষদের সদ্যদের সুপারিশে অনেক বড় বড় ঋণ দিয়ে বিপদে পড়েছে ব্যাংক।

আবার কোনো গ্রাহককে ঋণ দেয়ার বিষয়ে পরিচালনা পর্ষদের বিভক্ত মতামতও পরিলক্ষিত হয়েছে। কুঋণকে কেন্দ্র করে বেশ কিছু ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদে বিভক্তির খবরও নানা সময়ে গণমাধ্যমে এসেছে। কাজেই এসব বিষয়ে পরিচালনা পর্ষদকে সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করতে হবে। আর ব্যাংক খোলার লাইসেন্স দেয়ার ক্ষেত্রে ন্যূনতম যোগ্যতাসম্পন্ন ব্যক্তিদের বাছাই করা উচিত। কারণ, বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই পরিচালনা পর্ষদের সদস্যরা নিজেদের ব্যাংকের মালিক মনে করেন এবং আমানকারীদের আমানতের অর্থ নিজেদের অর্থের মতো যথেচ্ছ ব্যবহার করার প্রয়াস দেখান, যা কোনোভাবেই কাম্য নয়। পরিচালনা পর্ষদ সদস্য ও উদ্যোক্তা শেয়ারহোল্ডাররা যাতে নিজেদের ব্যাংকের মালিক ভেবে ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষকে অযাচিত নির্দেশ না দেন, সে বিষয়টি কেন্দ্রীয় ব্যাংককে নিশ্চিত করতে হবে। ব্যাংকগুলোর বড় গ্রাহকদের পেছনে বেশি ছুটতে দেখা যায়। অথচ ব্যাংকের ঋণ আদায়ের উপাত্ত পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের ঋণের কিস্তি পরিশোধের হার ভালো। অথচ এই শ্রেণির উদ্যোক্তাদের ঋণ পাওয়ার ক্ষেত্রে নানা ধরনের বিড়ম্বনার শিকার হতে হয়। ব্যবসার বিভিন্ন খাতে ঋণ বিতরণে একটি ব্যাংক যাতে ভারসাম্য বজায় রাখে, সে বিষয়ে পদক্ষেপ নিতে হবে। আর্থিক সূচকে দুর্বল ১০ ব্যাংককে ‘সবল’ করতে বিশেষ তদারকি করছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। ব্যাংকগুলোর সঙ্গে আলোচনা করে সমস্যা উত্তরণে তাদের কাছ থেকে রোডম্যাপ নেওয়া হচ্ছে। বিভিন্ন ধাপ বাস্তবায়নের সময় বেঁধে দিচ্ছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক; এমনকি ব্যাংকগুলোর সঙ্গে চুক্তিও করা হচ্ছে। ওই চুক্তি পরিপালন ও অগ্রগতি নিয়ে তিন মাস পর পর ব্যাংকগুলোর সঙ্গে বৈঠক করা হবে। ইতোমধ্যেটি ব্যাংকের শীর্ষ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। পর্যাপ্ত জামানত না রাখা, খেলাপি ঋণ বেড়ে যাওয়া, মূলধনের অপর্যাপ্ততা, ঋণ-আমানত অনুপাত এবং প্রভিশনের পরিমাণের ওপর ভিত্তি করে এসব ব্যাংককে দুর্বল বলে চিহ্নিত করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। দুর্বল বলেই বাংলাদেশ ব্যাংক তাদের চিহ্নিত করেছে।

যেসব ব্যাংকে সুশাসন ও জবাবদিহি নেই, প্রভাব বিস্তারকারী পরিচালক রয়েছে, ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ কারো দ্বারা প্রভাবিত হচ্ছে, মূলধনের অপর্যাপ্ততা, ঋণের রি-শিডিউল ঠিকভাবে হচ্ছে না- সেসব ব্যাংক খারাপ বলে সাধারণত ধরে নেয়া হয়। এর আগে বহুবার বহু ব্যাংকে অবজারভার বসানো হয়েছে, তাতে কোনো লাভ হয়নি। তারা ছিল সাক্ষীগোপাল। কিন্তু অপরাধের ব্যবস্থা না নিলে এসব আলোচনা বা মিটিং করে কোনো ফল আসবে না। এর আগেও বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর এমওইউ স্বাক্ষর হয়েছিল যে, বাংলাদেশ ব্যাংক তাদের সঙ্গে নিয়মিত বসবে। কিন্তু ব্যাংকগুলোর কোনো উন্নতি হয়েছে বলে মনে হয় না। তবে এটি একটি ইতিবাচক দিক যে বাংলাদেশ ব্যাংক বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে নিয়েছে। শুধু দুর্বল ১০ ব্যাংক নয়, অন্য ব্যাংকের বিষয়েও বাংলাদেশ ব্যাংককে কঠোর হতে হবে। সব ব্যাংককে বাংলাদেশ ব্যাংকের মনিটরিংয়ে রাখতে হবে। ব্যাংক খাতের এ পরিণতির কারণ হচ্ছে অনিয়মের ব্যবস্থা না নেয়া। বেশিরভাগ অনিয়মই গোপন থাকে। 

ব্যাংকগুলোকে ভালো অবস্থায় তুলে আনতে সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ, ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান আর্থিক কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক শুরু করেছে বাংলাদেশ। বৈঠকের পর এসব ব্যাংকের সঙ্গে সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) সই করা হচ্ছে। কোনো কোনো ব্যাংকের সঙ্গে কেন্দ্রীয় ব্যাংক তিন বছর মেয়াদি এমওইউ সই করছে। কিছু কিছু ব্যাংকে অনিয়মের পাহাড় জমে গেছে। নামে-বেনামে নিজেদের মধ্যে ঋণ দেওয়া হচ্ছে। আবার এসব ঋণের বিপরীতে যে পরিমাণ জামানত নেয়ার কথা তা নেয়া হয়নি। যে পরিমাণ জামানত নেয়া হয়েছে তার গুণমান খুবই দুর্বল। ভুয়া ঋণ সৃষ্টি করে ঋণ পরিশোধ দেখানো হচ্ছে। এভাবে খেলাপি ঋণ আড়াল হয়ে যাচ্ছে।

সৌজন্যে— আলোকিত বাংলাদেশ

রেজাউল করিম খোকন
রেজাউল করিম খোকন
সাবেক ব্যাংক কর্মকর্তা ও কলাম লেখক

For all latest articles, follow on Google News

বাংলাদেশি বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানসমূহের মধ্য থেকে 'বিশ্লেষণ'-এর জন্য স্পনসরশিপ খোঁজা হচ্ছে। আগ্রহীদের যোগাযোগ করার জন্য অনুরোধ করা হলো। ইমেইল: contact.bishleshon@gmail.com

এ বিষয়ের আরও নিবন্ধ
আরও পড়তে পারেন

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here