০৫:৫৭ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
                       

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কূটনৈতিক চিন্তাধারাই আমাদের পররাষ্ট্রনীতির মূলভিত্তি

ড. দেলোয়ার হোসেন
  • প্রকাশ: ১২:১৫:১৭ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৫ অগাস্ট ২০২২
  • / ১৯০৭ বার পড়া হয়েছে

রেসকোর্স ময়দানে ৭ মার্চ, ১৯৭১ তারিখে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ভাষণ প্রদান করছেন


আন্তর্জাতিক সম্পর্কের কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে কূটনীতি। আধুনিক বিশ্বে একটি জাতি বিনির্মাণ, একটি রাষ্ট্র সৃষ্টি ও বিকাশের পেছনে রয়েছে কূটনীতির অসাধারণ ভূমিকা। মহান মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে ১৯৭১ সালের ১৭ এপ্রিল প্রতিষ্ঠিত ঐতিহাসিক মুজিবনগর সরকার বাংলাদেশের মুক্তি ও স্বাধীনতার প্রশ্নে বিশ্বব্যাপী ব্যাপক কূটনৈতিক তৎপরতা চালিয়েছিল। স্বাধীনতার স্থপতি ও জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের রাজনৈতিক, দার্শনিক ও মতাদর্শিক দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে ব্যাপক বিশ্লেষণ ও গবেষণা হলেও বঙ্গবন্ধুর কূটনৈতিক ভাবনা ও দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে ততটা গবেষণা হয়নি। অনস্বীকার্যভাবে বঙ্গবন্ধুর কূটনৈতিক চিন্তাধারা ছিল গভীর, অনন্য ও অসাধারণ। বাংলা একাডেমি কর্তৃক প্রকাশিত বঙ্গবন্ধু রচিত ‘আমার দেখা নয়াচীন’ (২০২০) একটি অসামান্য দলিল। বঙ্গবন্ধু রচিত অন্য দুটি গ্রন্থে অসমাপ্ত আত্মজীবনী (২০১২) ও কারাগারের রোজনামচায় (২০১৭) বঙ্গবন্ধুর বিশ্বদর্শন ও পররাষ্ট্র চিন্তার দুর্লভ প্রমাণ রয়েছে। এগুলো গবেষকদের জন্য বিশেষ গুরুত্ব বহন করে। প্রচলিত অর্থে বঙ্গবন্ধুর বক্তৃতা, সাক্ষাৎকার, বিবৃতি, সরকার ও রাষ্ট্রপ্রধান হিসাবে নানাবিধ সিদ্ধান্ত ও দিকনির্দেশনা বঙ্গবন্ধুর কূটনৈতিক চিন্তাধারার অন্যতম উৎস হিসাবে বিবেচিত।

বলাবাহুল্য, বঙ্গবন্ধুর কূটনৈতিক চিন্তাধারাই স্বাধীন বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতি ও আন্তর্জাতিক সম্পর্কের মূলভিত্তি রচনা করেছে। ১৯৭১ সারের ২৬ মার্চ হানাদার পাকিস্তান শাসকগোষ্ঠী কর্তৃক গ্রেফতার ও পরে পাকিস্তানের রাওয়ালপিন্ডির মিয়ানওয়ালি কারাগারে অন্তরিন অবস্থা থেকে ৮ জানুয়ারি ১৯৭২ সালে মুক্তিলাভের পর থেকে প্রতিটি মুহূর্তে বঙ্গবন্ধু গভীর কূটনৈতিক চিন্তাধারার প্রতিফলন তুলে ধরেন। ৮ থেকে ১০ জানুয়ারি ১৯৭২ ঐতিহাসিক স্বদেশ প্রত্যাবর্তনকালেই বঙ্গবন্ধু বিস্ময়করভাবে এক মহান কূটনীতিকের ভূমিকায় অবতীর্ণ হন। বাঙালির মুক্তিসংগ্রামের অগ্রদূত বঙ্গবন্ধু পাকিস্তানের কারাপ্রকোষ্ঠ থেকে মুক্তিলাভের পর লন্ডনে যাত্রাবিরতি করে দিল্লি বিমানবন্দরে ভারতীয় সরকার ও জনগণ কর্তৃক সংবর্ধনা গ্রহণ করে লাখ লাখ অপেক্ষমাণ বাঙালির মাঝে আবহমান বাংলার মাটিতে পদার্পণের যাত্রাকালটি একটি দুর্লভ আন্তর্জাতিক ঘটনা, যা সদ্যস্বাধীন বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ পররাষ্ট্রনীতির জন্য বিশেষ তাৎপর্য বহন করে। লন্ডন ও দিল্লিতে বঙ্গবন্ধুকে দেওয়া হয় সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে উষ্ণ অভ্যর্থনা। যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী অ্যাডওয়ার্ড হিথ ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী শ্রীমতী ইন্ধিরা গান্ধী কর্তৃক বঙ্গবন্ধুকে সাদরে গ্রহণ বিশ্বপরিমণ্ডলে সদ্যস্বাধীন বাংলাদেশকে অনেক উঁচুতে তুলে ধরে।

বিশেষভাবে উল্লেখ করা যেতে পারে, বঙ্গবন্ধুর কূটনৈতিক চিন্তাধারার অসাধারণ ও বিস্ময়কর প্রতিফলন ঘটে ১৯৭২ সালের ৮ জানুয়ারি লন্ডনের সংবাদ সম্মেলনে। বঙ্গবন্ধুর প্রতিটি শব্দ হয়ে ওঠে বিশ্বনেতার বক্তব্য। সদ্যস্বাধীন জাতির মুক্তিপাগল মানুষের হৃদয়ের কথা। বিশ্বের নিপীড়িত অসহায় মানুষের আর্তনাদের বিরুদ্ধে সোচ্চার প্রতিবাদ। পৃথিবীর অগণিত শান্তিকামী মানুষের বক্তব্যের প্রতিধ্বনি সংবাদ সম্মেলনে বঙ্গবন্ধুর বক্তব্য ও বিশ্বনেতাসুলভ আচরণ বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতির গতিপ্রকৃতি নির্ধারণ করে। বঙ্গবন্ধুর আত্মবিশ্বাস, সাহস, দৃঢ়তা, বিচক্ষণতা ও বাঙালি জাতির প্রতি সীমাহীন ভালোবাসা পরবর্তীকালে প্রতিটি কূটনৈতিক ঘটনায় প্রতিফলিত হয়েছে। সংবাদ সম্মেলনে বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সহায়তাকারী রাষ্ট্রগুলো, যেমন ভারত ও তদানীন্তন সোভিয়েত ইউনিয়নের পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স ও পশ্চিম জার্মানির জনগণকে অভিনন্দন ও ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন। প্রায় নয় মাস কারাবন্দি ও প্রতিমুহূর্তে মৃত্যুর সামনে দাঁড়িয়ে থাকা মানুষের পক্ষে যুক্তরাষ্ট্র কিংবা গ্রেট ব্রিটেনের জনগণকে ধন্যবাদ জানানো একটি সাহসী ও কঠিন পদক্ষেপ। কারণ এ দেশগুলোর সরকার বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতা করেছিল। বিশ্বের কাছে বঙ্গবন্ধুর চাওয়া ছিল সার্বভৌম বাংলাদেশকে দ্রুত স্বীকৃতি প্রদান। পাশাপাশি যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশটির মানুষের পাশে দাঁড়ানোর আহ্বানও ছিল, যা তিনি মানবতার দায়িত্ব হিসাবে আখ্যায়িত করেন। লন্ডনের হোটেল ক্লারিজে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনের আগে বঙ্গবন্ধু ১০নং ডাউনিং স্ট্রিটে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী অ্যাডওয়ার্ড হিথের সঙ্গে দেখা করেন। হিথের সঙ্গে বৈঠকে বঙ্গবন্ধু ব্রিটিশ সরকারের সমর্থন অর্জন করতে সক্ষম হন। বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে আলাপের এক পর্যায়ে হিথ বলেন, ‘আপনার জন্য আমরা আর কী করতে পারি?’ সদ্য কারামুক্ত এবং কঠিন আন্তর্জাতিক পরিস্থিতিতে বঙ্গবন্ধুর প্রতি ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর এ সৌহার্দপূর্ণ আচরণ অতুলনীয়।

লন্ডন থেকে বঙ্গবন্ধু ব্রিটিশ রয়েল এয়ারফোর্সের কমেট বিমানে চড়ে ঢাকা বিমানবন্দর পৌঁছে সরাসরি রেসকোর্স ময়দানে জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেন। এ ভাষণে বঙ্গবন্ধু আবার ধন্যবাদ জানালেন সব রাষ্ট্র ও সরকারকে যারা মুক্তিযুদ্ধের সময় বাংলাদেশের পাশে ছিল। অন্যদিকে বিরোধিতাকারী রাষ্ট্রগুলো যেমন-যুক্তরাষ্ট্র ও অন্যান্য দেশের জনগণ, রাজনীতিবিদ ও নাগরিক সমাজকেও ধন্যবাদ জানান। প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব গ্রহণ করে বঙ্গবন্ধু প্রথম সংবাদ সম্মেলন করেন ১৯৭২ সালের ১৩ জানুয়ারি। এই সংবাদ সম্মেলনে বঙ্গবন্ধু ইঙ্গিত দিলেন ভবিষ্যতে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র সম্পর্কের মূলনীতি ও কূটনৈতিক কাঠামো সম্পর্কে। বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমকে উদ্দেশ করে বলেন, বাংলাদেশ হবে ‘এশিয়ার সুইজারল্যান্ড’। শান্তি ও মানবতাবোধ দ্বারা পরিচালিত হবে বাংলাদেশের কূটনীতি। বঙ্গবন্ধু বিষয়টিকে আরও পরিষ্কার ও দৃঢ়তার সঙ্গে বিশ্বকে জানিয়ে দিলেন-‘আমাদের পররাষ্ট্রনীতি অত্যন্ত পরিষ্কার। সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব কারও সঙ্গে বৈরিতা নয়।’ বঙ্গবন্ধুর অনুসৃত কূটনীতির কাঠামো ধরেই বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত এক দশকে বাংলাদেশের বৈশ্বিক অবস্থান করেছেন শক্তিশালী ও আত্মমর্যাদাসম্পন্ন। এ প্রসঙ্গে বঙ্গবন্ধুর কূটনৈতিক চিন্তাধারার উৎস বিবেচনা করলে দেখা যায়, পঞ্চাশের দশকের স্নায়ুযুদ্ধের প্রেক্ষাপটে বঙ্গবন্ধুর কূটনৈতিক দর্শনের বিকাশ ঘটে। যেমন-পঞ্চাশের দশকে পাকিস্তান জোটনিরপেক্ষ নীতি অনুসরণ না করে CENTO ও SEATO সামরিক চুক্তিতে যুক্ত হয়ে পড়ে। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক সামরিক চুক্তি স্বাক্ষর করে। বঙ্গবন্ধু এ নীতির তীব্র বিরোধিতা করেন।

লাহোরে ছয় দফা ঘোষণা করেন শেখ মুজিবুর রহমান
লাহোরে ছয় দফা ঘোষণা করেন শেখ মুজিবুর রহমান

বঙ্গবন্ধুর কূটনৈতিক চিন্তাধারা বিশ্লেষণ করলে আরও কয়েকটি বিষয় আমাদের সামনে চলে আসে। প্রথমত, এটি অনস্বীকার্য যে, বঙ্গবন্ধু তার অল্প সময়ের শাসনামলে নজিরবিহীন কূটনৈতিক সাফল্য অর্জন করেছেন। ১৯৭২ সালের ৮ জানুয়ারি কারামুক্তির লগ্ন থেকেই বঙ্গবন্ধুকে কূটনৈতিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হয়েছিল। পাকিস্তানের নতুন শাসক জুলফিকার আলী ভুট্টো বঙ্গবন্ধুকে ইরানের রাজধানী তেহরান হয়ে বাংলাদেশে পৌঁছার অনুরোধ করেন, যা বঙ্গবন্ধু প্রত্যাখ্যান করেন এবং এরপর শুরু হলো বঙ্গবন্ধুর কূটনৈতিক নেতৃত্বের এক নতুন যুগ। বঙ্গবন্ধুর কূটনৈতিক বিজয়ের কয়েকটি বড় ঘটনা উল্লেখ করা যেতে পারে। প্রথমত বঙ্গবন্ধুর ব্যক্তিগত প্রচেষ্টায় বিশ্ব ইতিহাসে নজিরবিহীন দ্রুততায় ১৯৭২ সালের ১২ মার্চ ভারতীয় মিত্রবাহিনীর সব সদস্য বাংলাদেশ ত্যাগ করেন। ভারতীয় সৈন্য প্রত্যাহারের এ সিদ্ধান্ত বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতির সর্বকালের অর্জনের একটি। দ্বিতীয়ত, বঙ্গবন্ধু সরকারের সঙ্গে নিক্সন প্রশাসনের যোগাযোগ, যার ফলে ১৯৭২ সালে এপ্রিলের মধ্যে অবিশ্বাস্য দ্রুততায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বাংলাদেশকে স্বীকৃতি প্রদান। ইতিহাস সাক্ষ্য দেয়, বাংলাদেশের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের কূটনৈতিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার প্রস্তাব নিক্সন প্রশাসনকেই দিতে হয়েছিল বঙ্গবন্ধুর ইচ্ছায়। তৃতীয়ত, ৬ সেপ্টেম্বর ১৯৭৩ বঙ্গবন্ধু জোটনিরপেক্ষ আন্দোলনের শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দেওয়ার জন্য আলজেরিয়া সফর করেন। এ সফরটি তৃতীয় বিশ্বে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্ব যেমন প্রতিষ্ঠিত হয়, তেমনই বাংলাদেশের স্বীকৃতিপ্রাপ্তির সুযোগ বৃদ্ধি পায়। উল্লেখ্য, ১৯৭৩ সালের সেপ্টেম্বরের মধ্যেই বিশ্বের ১০০ রাষ্ট্র বাংলাদেশকে স্বীকৃতি প্রদান করেছিল। জোটনিরপেক্ষ আন্দোলন, কমনওয়েলথ, আইএলও, আইএমএফ, আইবিআরডি, ইউনেস্কোসহ সাতাশটি আন্তর্জাতিক সংস্থা বাংলাদেশকে সদস্য হিসাবে গ্রহণ করে।

বঙ্গবন্ধুর কূটনীতির আরেকটি বিজয় পাকিস্তান রাষ্ট্রের বাংলাদেশকে স্বীকৃতি প্রদান। ১৯৭৪ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি পাকিস্তান বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেয় এবং ২৩ ফেব্রুয়ারি বঙ্গবন্ধু ইসলামি সম্মেলন সংস্থার চতুর্থ শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দেওয়ার জন্য পাকিস্তান সফর করেন। পঞ্চমত, ১৯৭৪ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘের সদস্যপদপ্রাপ্তি বাংলাদেশের একটি বড় কূটনৈতিক অর্জন। ষষ্ঠত, ১৯৭৪ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর বঙ্গবন্ধু জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে বাংলা ভাষায় ঐতিহাসিক ভাষণ দেন। এ ভাষণটি বাংলাদেশের কূটনীতির একটি দার্শনিক ভিত্তি দেয়। এমনকি এ ভাষণটি আন্তর্জাতিক সম্পর্কে মানবতাবাদের গুরুত্ব প্রদানের একটি ঐতিহাসিক দলিল। তাছাড়া ভারতের সঙ্গে স্বাক্ষরিত ১৯৭২ সালের বাংলাদেশ-ভারত বন্ধুত্ব সহযোগিতা ও শান্তিচুক্তি, ১৯৭৪ সালের বাংলাদেশ-ভারত স্থলসীমান্ত চুক্তি বঙ্গবন্ধুর গুরুত্বপূর্ণ কূটনৈতিক অর্জন। এ সিদ্ধান্তগুলোর পেছনে রয়েছে বঙ্গবন্ধুর কূটনৈতিক চিন্তাধারার বাস্তব প্রতিফলন। বাংলাদেশ, বাঙালি জাতির কল্যাণ ও জাতীয় স্বার্থের ভাবনার পাশাপাশি মানবজাতির মঙ্গলের কথা ভেবেছেন তিনি। বঙ্গবন্ধুর কূটনৈতিক চিন্তাধারায় এর প্রতিফলন ঘটেছে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্নভাবে। এ পর্যায়ে কয়েকটি বিশেষ ক্ষেত্র উল্লেখ করা যেতে পারে।

বিশ্ব শান্তি প্রতিষ্ঠা

বঙ্গবন্ধুর বিশ্বদীক্ষায় শান্তি প্রতিষ্ঠার বিষয়টি সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার পেয়েছে। আন্তর্জাতিক সম্পর্কের জন্য কূটনীতি প্রয়োজন আর কূটনীতির প্রধান উপলক্ষ্য হচ্ছে শান্তি। সম্প্রতি প্রকাশিত বঙ্গবন্ধু রচিত গ্রন্থে আমার দেখা নয়াচীন-এ শান্তির বিষয়টি গুরুত্ব পেয়েছে। ১৯৫২ সালে বঙ্গবন্ধু পিকিং সফর করেছিলেন দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় দেশগুলোর শান্তি সম্মেলনে যোগ দেওয়ার জন্য। ১৯৭৪ সালে বঙ্গবন্ধুর জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে প্রদত্ত ভাষণে শান্তির বিষয়টি কেন্দ্রবিন্দুতে ছিল। বঙ্গবন্ধুর ভাষায়-‘মানবজাতির অস্তিত্ব নির্ভর করে শান্তির ওপর। সমগ্র বিশ্বে মানুষের গভীরতম আকাঙ্ক্ষা হচ্ছে শান্তি। শান্তি স্থায়ী হতে পারে কেবল ন্যায়বিচারের ওপর ভিত্তি করে।’ বঙ্গবন্ধু যুদ্ধবিধ্বস্ত ধ্বংসস্তূপের মধ্যে দাঁড়িয়ে সহাবস্থানের কথা বলেছেন। বঙ্গবন্ধু বলেন, ‘আমি সমগ্র পৃথিবীকে দেখাতে চাই যে, বাঙালি শুধু রক্ত দিতে জানে না, শান্তিকামী বাঙালি জানে কীভাবে শান্তি বজায় রাখতে হয়।’

মানবতাবাদ

বঙ্গবন্ধুর কূটনৈতিক ভাবনাজুড়ে ছিল মানবতাবাদ। রাজনীতিবিদ বঙ্গবন্ধু যেভাবে সাধারণ মানুষের, কৃষক ও শ্রমজীবীদের কথা ভেবেছেন, একইভাবে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে তিনি মানবজাতির কথা ভেবেছেন। বিশেষ করে বিশ্বের অগণিত নির্যাতিত ও নিপীড়িত মানুষের জীবন নিয়ে ভেবেছেন। আলজিয়ার্সে জোটনিরপেক্ষ সম্মেলনে পৃথিবীর ক্ষুধা, দারিদ্র্য ও ঔপনিবেশিক শোষণের জাঁতাকলে পিষ্ট লক্ষ-কোটি মানুষের কথা ভাবতে গিয়ে বঙ্গবন্ধু বলেন, পৃথিবী আজ দুভাগে বিভক্ত-শোষক ও শোষিত এবং আমি শোষিতের পক্ষে। মানবতাবাদের এ রকম শক্ত ঘোষণা বিশ্ব ইতহাসে বিরল। ১৯৭৪ সালে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে প্রদত্ত ভাষণে বঙ্গবন্ধু জাতিসংঘকে আখ্যায়িত করেন মানবজাতির সংসদ হিসাবে, যা একটি ব্যতিক্রমধর্মী অভিধা। বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক দর্শনে যেমন মানবতা সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ, তেমনই বঙ্গবন্ধুর কূটনৈতিক দর্শনে মাবনতার ধারণা সমুজ্জ্বল।

বৈষম্য ও সাম্রাজ্যবাদবিরোধী মনোভাব

বঙ্গবন্ধু বিশ্বব্যাপী বৈষম্য ও সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে সোচ্চার ছিলেন। জোটনিরপেক্ষ আন্দোলন, জাতিসংঘসহ অন্যান্য ফোরামে বিশ্বে বিরাজমান নির্যাতন, নিপীড়ন, শোষণ, বঞ্চনা, অধিকারহীনতা ও পরাধীনতার বিরুদ্ধে কথা বলেছেন। এ প্রসঙ্গে বঙ্গবন্ধু ফিলিস্তিন সংকট ও দক্ষিণ আফ্রিকার বর্ণবাদী শাসন বিষয়গুলো সব সময় তুলে ধরেন এবং এগুলোর অবসানের জন্য দাবি জানিয়েছেন, কাজ করেছেন। বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক জীবনের শুরু থেকেই বৈষম্য ও সাম্রাজ্যবাদী ব্যবস্থার বিরুদ্ধে লড়াই করেছেন দেশে ও বিদেশে, ১৯৫২ সালে চীন সফরের সময় বঙ্গবন্ধু তার বক্তৃতায় উচ্চারণ করেন-‘পুঁজিপতিরা নিজেদের স্বার্থে যুদ্ধ লাগাতে বদ্ধপরিকর। নতুন স্বাধীনতাপ্রাপ্ত জনগণের কর্তব্য বিশ্ব শান্তির জন্য সংঘবদ্ধভাবে চেষ্টা করা।’ এখানে উল্লেখ্য, বঙ্গবন্ধু এ বিষয়গুলো এতটাই গুরুত্বপূর্ণ মনে করতেন, যেজন্য তিনি বাংলাদেশের সংবিধানে (১৯৭২) পররাষ্ট্রনীতিকে সম্পর্কের মূলভিত্তি হিসাবে স্থান দিয়েছেন, যা একটি বিরল দৃষ্টান্ত।

নয়া আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থা : বঙ্গবন্ধুর কূটনৈতিক চিন্তাধারায় একটি শোষণমুক্ত, সুন্দর শান্তিপূর্ণ বিশ্বের স্বপ্ন ছিল। অর্থনৈতিক ন্যায়বিচার, মানুষের অর্থনৈতিক কষ্ট লাঘব, মূল্যবৃদ্ধি রোধ ও বৈশ্বিক বৈষম্য অবসানের জন্য তিনি নয়া আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থার একনিষ্ঠ সমর্থক ছিলেন। এ বিষয়ে বঙ্গবন্ধুর ভাবনা ছিল গভীর ও শক্তিশালী, তিনি মনে করতেন জাতিসংঘের একটি প্রধান দায়িত্ব হচ্ছে আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থা পরিবর্তনের জন্য কাজ করে যাওয়া। একটি স্থিতিশীল ও ন্যায়ভিত্তিক ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা, যেখানে রাষ্ট্রের সার্বভৌমত্ব যেমন লঙ্ঘিত হবে না, অন্যদিকে সহযোগিতার ভিত্তিতে একযোগে কাজ করে যাবে।

জাতিগত আত্মমর্যাদা প্রতিষ্ঠা

বঙ্গবন্ধু সব সময় জাতিগত আত্মমর্যাদার ওপর গুরুত্ব দিয়েছেন। শুধু বাঙালির নয়, সমগ্র বিশ্বে সব জাতির জন্য তা ভেবেছেন। বিশেষ করে তৎকালীন তৃতীয় বিশ্বের স্বাধীনতাকামী মানুষের জন্য বিশেষ প্রযোজ্য ছিল। বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতা ও আত্মমর্যাদাকে একসঙ্গে বিবেচনা করতেন। টাইম ম্যাগাজিনের সাংবাদিক স্টুওয়ার্টকে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক প্রসঙ্গে বলেছিলেন, ‘কিন্তু তাদেরকে (যুক্তরাষ্ট্র) প্রথমে এগিয়ে আসতে হবে। আমি স্বীকৃতি চাই এবং যদি সম্পর্ক আরও উন্নত করতে হয় তাহলে মার্কিন সরকারকে বাস্তবতা স্বীকার করতে হবে। মার্কিন জনগণের বিরুদ্ধে আমার কোনো ক্ষোভ নেই। আমি সাহায্য চাই, কিন্তু কোনো শর্তযুক্ত থাকবে না।’ তাছাড়া সৌদি বাদশাহ ফয়সালকে উদ্দেশ করে বলেছিলেন, আপনার দেশটির নামের সঙ্গে ইসলামিক শব্দটি নেই, তাহলে বাংলাদেশকে কেন তা ব্যবহার করতে হবে। ১৯৭২ সালের ৮ জানুয়ারি তারিখে লন্ডনে যাত্রাবিরতিকালে বঙ্গবন্ধুর সংবাদ সম্মেলনের বক্তব্য ও বিশ্ব গণমাধ্যমের বিখ্যাত সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরগুলো পর্যবেক্ষণ করলে দেখা যাবে তিনি আত্মমর্যাদার বিষয়টি কত উঁচুতে বিবেচনা করতেন। বাংলাদেশের কূটনীতির জন্য এটি একটি অন্যতম নিয়ামক।

শেয়ার করুন

One thought on “বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কূটনৈতিক চিন্তাধারাই আমাদের পররাষ্ট্রনীতির মূলভিত্তি

মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার তথ্য সংরক্ষিত রাখুন

লেখকতথ্য

ড. দেলোয়ার হোসেন

অধ্যাপক, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়; সদস্য, সরকারি কর্ম কমিশন

ওয়েবসাইটটির সার্বিক উন্নতির জন্য বাংলাদেশের বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানসমূহের মধ্য থেকে স্পনসর খোঁজা হচ্ছে।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কূটনৈতিক চিন্তাধারাই আমাদের পররাষ্ট্রনীতির মূলভিত্তি

প্রকাশ: ১২:১৫:১৭ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৫ অগাস্ট ২০২২


আন্তর্জাতিক সম্পর্কের কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে কূটনীতি। আধুনিক বিশ্বে একটি জাতি বিনির্মাণ, একটি রাষ্ট্র সৃষ্টি ও বিকাশের পেছনে রয়েছে কূটনীতির অসাধারণ ভূমিকা। মহান মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে ১৯৭১ সালের ১৭ এপ্রিল প্রতিষ্ঠিত ঐতিহাসিক মুজিবনগর সরকার বাংলাদেশের মুক্তি ও স্বাধীনতার প্রশ্নে বিশ্বব্যাপী ব্যাপক কূটনৈতিক তৎপরতা চালিয়েছিল। স্বাধীনতার স্থপতি ও জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের রাজনৈতিক, দার্শনিক ও মতাদর্শিক দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে ব্যাপক বিশ্লেষণ ও গবেষণা হলেও বঙ্গবন্ধুর কূটনৈতিক ভাবনা ও দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে ততটা গবেষণা হয়নি। অনস্বীকার্যভাবে বঙ্গবন্ধুর কূটনৈতিক চিন্তাধারা ছিল গভীর, অনন্য ও অসাধারণ। বাংলা একাডেমি কর্তৃক প্রকাশিত বঙ্গবন্ধু রচিত ‘আমার দেখা নয়াচীন’ (২০২০) একটি অসামান্য দলিল। বঙ্গবন্ধু রচিত অন্য দুটি গ্রন্থে অসমাপ্ত আত্মজীবনী (২০১২) ও কারাগারের রোজনামচায় (২০১৭) বঙ্গবন্ধুর বিশ্বদর্শন ও পররাষ্ট্র চিন্তার দুর্লভ প্রমাণ রয়েছে। এগুলো গবেষকদের জন্য বিশেষ গুরুত্ব বহন করে। প্রচলিত অর্থে বঙ্গবন্ধুর বক্তৃতা, সাক্ষাৎকার, বিবৃতি, সরকার ও রাষ্ট্রপ্রধান হিসাবে নানাবিধ সিদ্ধান্ত ও দিকনির্দেশনা বঙ্গবন্ধুর কূটনৈতিক চিন্তাধারার অন্যতম উৎস হিসাবে বিবেচিত।

বলাবাহুল্য, বঙ্গবন্ধুর কূটনৈতিক চিন্তাধারাই স্বাধীন বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতি ও আন্তর্জাতিক সম্পর্কের মূলভিত্তি রচনা করেছে। ১৯৭১ সারের ২৬ মার্চ হানাদার পাকিস্তান শাসকগোষ্ঠী কর্তৃক গ্রেফতার ও পরে পাকিস্তানের রাওয়ালপিন্ডির মিয়ানওয়ালি কারাগারে অন্তরিন অবস্থা থেকে ৮ জানুয়ারি ১৯৭২ সালে মুক্তিলাভের পর থেকে প্রতিটি মুহূর্তে বঙ্গবন্ধু গভীর কূটনৈতিক চিন্তাধারার প্রতিফলন তুলে ধরেন। ৮ থেকে ১০ জানুয়ারি ১৯৭২ ঐতিহাসিক স্বদেশ প্রত্যাবর্তনকালেই বঙ্গবন্ধু বিস্ময়করভাবে এক মহান কূটনীতিকের ভূমিকায় অবতীর্ণ হন। বাঙালির মুক্তিসংগ্রামের অগ্রদূত বঙ্গবন্ধু পাকিস্তানের কারাপ্রকোষ্ঠ থেকে মুক্তিলাভের পর লন্ডনে যাত্রাবিরতি করে দিল্লি বিমানবন্দরে ভারতীয় সরকার ও জনগণ কর্তৃক সংবর্ধনা গ্রহণ করে লাখ লাখ অপেক্ষমাণ বাঙালির মাঝে আবহমান বাংলার মাটিতে পদার্পণের যাত্রাকালটি একটি দুর্লভ আন্তর্জাতিক ঘটনা, যা সদ্যস্বাধীন বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ পররাষ্ট্রনীতির জন্য বিশেষ তাৎপর্য বহন করে। লন্ডন ও দিল্লিতে বঙ্গবন্ধুকে দেওয়া হয় সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে উষ্ণ অভ্যর্থনা। যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী অ্যাডওয়ার্ড হিথ ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী শ্রীমতী ইন্ধিরা গান্ধী কর্তৃক বঙ্গবন্ধুকে সাদরে গ্রহণ বিশ্বপরিমণ্ডলে সদ্যস্বাধীন বাংলাদেশকে অনেক উঁচুতে তুলে ধরে।

বিশেষভাবে উল্লেখ করা যেতে পারে, বঙ্গবন্ধুর কূটনৈতিক চিন্তাধারার অসাধারণ ও বিস্ময়কর প্রতিফলন ঘটে ১৯৭২ সালের ৮ জানুয়ারি লন্ডনের সংবাদ সম্মেলনে। বঙ্গবন্ধুর প্রতিটি শব্দ হয়ে ওঠে বিশ্বনেতার বক্তব্য। সদ্যস্বাধীন জাতির মুক্তিপাগল মানুষের হৃদয়ের কথা। বিশ্বের নিপীড়িত অসহায় মানুষের আর্তনাদের বিরুদ্ধে সোচ্চার প্রতিবাদ। পৃথিবীর অগণিত শান্তিকামী মানুষের বক্তব্যের প্রতিধ্বনি সংবাদ সম্মেলনে বঙ্গবন্ধুর বক্তব্য ও বিশ্বনেতাসুলভ আচরণ বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতির গতিপ্রকৃতি নির্ধারণ করে। বঙ্গবন্ধুর আত্মবিশ্বাস, সাহস, দৃঢ়তা, বিচক্ষণতা ও বাঙালি জাতির প্রতি সীমাহীন ভালোবাসা পরবর্তীকালে প্রতিটি কূটনৈতিক ঘটনায় প্রতিফলিত হয়েছে। সংবাদ সম্মেলনে বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সহায়তাকারী রাষ্ট্রগুলো, যেমন ভারত ও তদানীন্তন সোভিয়েত ইউনিয়নের পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স ও পশ্চিম জার্মানির জনগণকে অভিনন্দন ও ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন। প্রায় নয় মাস কারাবন্দি ও প্রতিমুহূর্তে মৃত্যুর সামনে দাঁড়িয়ে থাকা মানুষের পক্ষে যুক্তরাষ্ট্র কিংবা গ্রেট ব্রিটেনের জনগণকে ধন্যবাদ জানানো একটি সাহসী ও কঠিন পদক্ষেপ। কারণ এ দেশগুলোর সরকার বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতা করেছিল। বিশ্বের কাছে বঙ্গবন্ধুর চাওয়া ছিল সার্বভৌম বাংলাদেশকে দ্রুত স্বীকৃতি প্রদান। পাশাপাশি যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশটির মানুষের পাশে দাঁড়ানোর আহ্বানও ছিল, যা তিনি মানবতার দায়িত্ব হিসাবে আখ্যায়িত করেন। লন্ডনের হোটেল ক্লারিজে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনের আগে বঙ্গবন্ধু ১০নং ডাউনিং স্ট্রিটে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী অ্যাডওয়ার্ড হিথের সঙ্গে দেখা করেন। হিথের সঙ্গে বৈঠকে বঙ্গবন্ধু ব্রিটিশ সরকারের সমর্থন অর্জন করতে সক্ষম হন। বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে আলাপের এক পর্যায়ে হিথ বলেন, ‘আপনার জন্য আমরা আর কী করতে পারি?’ সদ্য কারামুক্ত এবং কঠিন আন্তর্জাতিক পরিস্থিতিতে বঙ্গবন্ধুর প্রতি ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর এ সৌহার্দপূর্ণ আচরণ অতুলনীয়।

লন্ডন থেকে বঙ্গবন্ধু ব্রিটিশ রয়েল এয়ারফোর্সের কমেট বিমানে চড়ে ঢাকা বিমানবন্দর পৌঁছে সরাসরি রেসকোর্স ময়দানে জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেন। এ ভাষণে বঙ্গবন্ধু আবার ধন্যবাদ জানালেন সব রাষ্ট্র ও সরকারকে যারা মুক্তিযুদ্ধের সময় বাংলাদেশের পাশে ছিল। অন্যদিকে বিরোধিতাকারী রাষ্ট্রগুলো যেমন-যুক্তরাষ্ট্র ও অন্যান্য দেশের জনগণ, রাজনীতিবিদ ও নাগরিক সমাজকেও ধন্যবাদ জানান। প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব গ্রহণ করে বঙ্গবন্ধু প্রথম সংবাদ সম্মেলন করেন ১৯৭২ সালের ১৩ জানুয়ারি। এই সংবাদ সম্মেলনে বঙ্গবন্ধু ইঙ্গিত দিলেন ভবিষ্যতে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র সম্পর্কের মূলনীতি ও কূটনৈতিক কাঠামো সম্পর্কে। বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমকে উদ্দেশ করে বলেন, বাংলাদেশ হবে ‘এশিয়ার সুইজারল্যান্ড’। শান্তি ও মানবতাবোধ দ্বারা পরিচালিত হবে বাংলাদেশের কূটনীতি। বঙ্গবন্ধু বিষয়টিকে আরও পরিষ্কার ও দৃঢ়তার সঙ্গে বিশ্বকে জানিয়ে দিলেন-‘আমাদের পররাষ্ট্রনীতি অত্যন্ত পরিষ্কার। সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব কারও সঙ্গে বৈরিতা নয়।’ বঙ্গবন্ধুর অনুসৃত কূটনীতির কাঠামো ধরেই বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত এক দশকে বাংলাদেশের বৈশ্বিক অবস্থান করেছেন শক্তিশালী ও আত্মমর্যাদাসম্পন্ন। এ প্রসঙ্গে বঙ্গবন্ধুর কূটনৈতিক চিন্তাধারার উৎস বিবেচনা করলে দেখা যায়, পঞ্চাশের দশকের স্নায়ুযুদ্ধের প্রেক্ষাপটে বঙ্গবন্ধুর কূটনৈতিক দর্শনের বিকাশ ঘটে। যেমন-পঞ্চাশের দশকে পাকিস্তান জোটনিরপেক্ষ নীতি অনুসরণ না করে CENTO ও SEATO সামরিক চুক্তিতে যুক্ত হয়ে পড়ে। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক সামরিক চুক্তি স্বাক্ষর করে। বঙ্গবন্ধু এ নীতির তীব্র বিরোধিতা করেন।

লাহোরে ছয় দফা ঘোষণা করেন শেখ মুজিবুর রহমান
লাহোরে ছয় দফা ঘোষণা করেন শেখ মুজিবুর রহমান

বঙ্গবন্ধুর কূটনৈতিক চিন্তাধারা বিশ্লেষণ করলে আরও কয়েকটি বিষয় আমাদের সামনে চলে আসে। প্রথমত, এটি অনস্বীকার্য যে, বঙ্গবন্ধু তার অল্প সময়ের শাসনামলে নজিরবিহীন কূটনৈতিক সাফল্য অর্জন করেছেন। ১৯৭২ সালের ৮ জানুয়ারি কারামুক্তির লগ্ন থেকেই বঙ্গবন্ধুকে কূটনৈতিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হয়েছিল। পাকিস্তানের নতুন শাসক জুলফিকার আলী ভুট্টো বঙ্গবন্ধুকে ইরানের রাজধানী তেহরান হয়ে বাংলাদেশে পৌঁছার অনুরোধ করেন, যা বঙ্গবন্ধু প্রত্যাখ্যান করেন এবং এরপর শুরু হলো বঙ্গবন্ধুর কূটনৈতিক নেতৃত্বের এক নতুন যুগ। বঙ্গবন্ধুর কূটনৈতিক বিজয়ের কয়েকটি বড় ঘটনা উল্লেখ করা যেতে পারে। প্রথমত বঙ্গবন্ধুর ব্যক্তিগত প্রচেষ্টায় বিশ্ব ইতিহাসে নজিরবিহীন দ্রুততায় ১৯৭২ সালের ১২ মার্চ ভারতীয় মিত্রবাহিনীর সব সদস্য বাংলাদেশ ত্যাগ করেন। ভারতীয় সৈন্য প্রত্যাহারের এ সিদ্ধান্ত বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতির সর্বকালের অর্জনের একটি। দ্বিতীয়ত, বঙ্গবন্ধু সরকারের সঙ্গে নিক্সন প্রশাসনের যোগাযোগ, যার ফলে ১৯৭২ সালে এপ্রিলের মধ্যে অবিশ্বাস্য দ্রুততায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বাংলাদেশকে স্বীকৃতি প্রদান। ইতিহাস সাক্ষ্য দেয়, বাংলাদেশের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের কূটনৈতিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার প্রস্তাব নিক্সন প্রশাসনকেই দিতে হয়েছিল বঙ্গবন্ধুর ইচ্ছায়। তৃতীয়ত, ৬ সেপ্টেম্বর ১৯৭৩ বঙ্গবন্ধু জোটনিরপেক্ষ আন্দোলনের শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দেওয়ার জন্য আলজেরিয়া সফর করেন। এ সফরটি তৃতীয় বিশ্বে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্ব যেমন প্রতিষ্ঠিত হয়, তেমনই বাংলাদেশের স্বীকৃতিপ্রাপ্তির সুযোগ বৃদ্ধি পায়। উল্লেখ্য, ১৯৭৩ সালের সেপ্টেম্বরের মধ্যেই বিশ্বের ১০০ রাষ্ট্র বাংলাদেশকে স্বীকৃতি প্রদান করেছিল। জোটনিরপেক্ষ আন্দোলন, কমনওয়েলথ, আইএলও, আইএমএফ, আইবিআরডি, ইউনেস্কোসহ সাতাশটি আন্তর্জাতিক সংস্থা বাংলাদেশকে সদস্য হিসাবে গ্রহণ করে।

বঙ্গবন্ধুর কূটনীতির আরেকটি বিজয় পাকিস্তান রাষ্ট্রের বাংলাদেশকে স্বীকৃতি প্রদান। ১৯৭৪ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি পাকিস্তান বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেয় এবং ২৩ ফেব্রুয়ারি বঙ্গবন্ধু ইসলামি সম্মেলন সংস্থার চতুর্থ শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দেওয়ার জন্য পাকিস্তান সফর করেন। পঞ্চমত, ১৯৭৪ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘের সদস্যপদপ্রাপ্তি বাংলাদেশের একটি বড় কূটনৈতিক অর্জন। ষষ্ঠত, ১৯৭৪ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর বঙ্গবন্ধু জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে বাংলা ভাষায় ঐতিহাসিক ভাষণ দেন। এ ভাষণটি বাংলাদেশের কূটনীতির একটি দার্শনিক ভিত্তি দেয়। এমনকি এ ভাষণটি আন্তর্জাতিক সম্পর্কে মানবতাবাদের গুরুত্ব প্রদানের একটি ঐতিহাসিক দলিল। তাছাড়া ভারতের সঙ্গে স্বাক্ষরিত ১৯৭২ সালের বাংলাদেশ-ভারত বন্ধুত্ব সহযোগিতা ও শান্তিচুক্তি, ১৯৭৪ সালের বাংলাদেশ-ভারত স্থলসীমান্ত চুক্তি বঙ্গবন্ধুর গুরুত্বপূর্ণ কূটনৈতিক অর্জন। এ সিদ্ধান্তগুলোর পেছনে রয়েছে বঙ্গবন্ধুর কূটনৈতিক চিন্তাধারার বাস্তব প্রতিফলন। বাংলাদেশ, বাঙালি জাতির কল্যাণ ও জাতীয় স্বার্থের ভাবনার পাশাপাশি মানবজাতির মঙ্গলের কথা ভেবেছেন তিনি। বঙ্গবন্ধুর কূটনৈতিক চিন্তাধারায় এর প্রতিফলন ঘটেছে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্নভাবে। এ পর্যায়ে কয়েকটি বিশেষ ক্ষেত্র উল্লেখ করা যেতে পারে।

বিশ্ব শান্তি প্রতিষ্ঠা

বঙ্গবন্ধুর বিশ্বদীক্ষায় শান্তি প্রতিষ্ঠার বিষয়টি সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার পেয়েছে। আন্তর্জাতিক সম্পর্কের জন্য কূটনীতি প্রয়োজন আর কূটনীতির প্রধান উপলক্ষ্য হচ্ছে শান্তি। সম্প্রতি প্রকাশিত বঙ্গবন্ধু রচিত গ্রন্থে আমার দেখা নয়াচীন-এ শান্তির বিষয়টি গুরুত্ব পেয়েছে। ১৯৫২ সালে বঙ্গবন্ধু পিকিং সফর করেছিলেন দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় দেশগুলোর শান্তি সম্মেলনে যোগ দেওয়ার জন্য। ১৯৭৪ সালে বঙ্গবন্ধুর জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে প্রদত্ত ভাষণে শান্তির বিষয়টি কেন্দ্রবিন্দুতে ছিল। বঙ্গবন্ধুর ভাষায়-‘মানবজাতির অস্তিত্ব নির্ভর করে শান্তির ওপর। সমগ্র বিশ্বে মানুষের গভীরতম আকাঙ্ক্ষা হচ্ছে শান্তি। শান্তি স্থায়ী হতে পারে কেবল ন্যায়বিচারের ওপর ভিত্তি করে।’ বঙ্গবন্ধু যুদ্ধবিধ্বস্ত ধ্বংসস্তূপের মধ্যে দাঁড়িয়ে সহাবস্থানের কথা বলেছেন। বঙ্গবন্ধু বলেন, ‘আমি সমগ্র পৃথিবীকে দেখাতে চাই যে, বাঙালি শুধু রক্ত দিতে জানে না, শান্তিকামী বাঙালি জানে কীভাবে শান্তি বজায় রাখতে হয়।’

মানবতাবাদ

বঙ্গবন্ধুর কূটনৈতিক ভাবনাজুড়ে ছিল মানবতাবাদ। রাজনীতিবিদ বঙ্গবন্ধু যেভাবে সাধারণ মানুষের, কৃষক ও শ্রমজীবীদের কথা ভেবেছেন, একইভাবে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে তিনি মানবজাতির কথা ভেবেছেন। বিশেষ করে বিশ্বের অগণিত নির্যাতিত ও নিপীড়িত মানুষের জীবন নিয়ে ভেবেছেন। আলজিয়ার্সে জোটনিরপেক্ষ সম্মেলনে পৃথিবীর ক্ষুধা, দারিদ্র্য ও ঔপনিবেশিক শোষণের জাঁতাকলে পিষ্ট লক্ষ-কোটি মানুষের কথা ভাবতে গিয়ে বঙ্গবন্ধু বলেন, পৃথিবী আজ দুভাগে বিভক্ত-শোষক ও শোষিত এবং আমি শোষিতের পক্ষে। মানবতাবাদের এ রকম শক্ত ঘোষণা বিশ্ব ইতহাসে বিরল। ১৯৭৪ সালে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে প্রদত্ত ভাষণে বঙ্গবন্ধু জাতিসংঘকে আখ্যায়িত করেন মানবজাতির সংসদ হিসাবে, যা একটি ব্যতিক্রমধর্মী অভিধা। বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক দর্শনে যেমন মানবতা সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ, তেমনই বঙ্গবন্ধুর কূটনৈতিক দর্শনে মাবনতার ধারণা সমুজ্জ্বল।

বৈষম্য ও সাম্রাজ্যবাদবিরোধী মনোভাব

বঙ্গবন্ধু বিশ্বব্যাপী বৈষম্য ও সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে সোচ্চার ছিলেন। জোটনিরপেক্ষ আন্দোলন, জাতিসংঘসহ অন্যান্য ফোরামে বিশ্বে বিরাজমান নির্যাতন, নিপীড়ন, শোষণ, বঞ্চনা, অধিকারহীনতা ও পরাধীনতার বিরুদ্ধে কথা বলেছেন। এ প্রসঙ্গে বঙ্গবন্ধু ফিলিস্তিন সংকট ও দক্ষিণ আফ্রিকার বর্ণবাদী শাসন বিষয়গুলো সব সময় তুলে ধরেন এবং এগুলোর অবসানের জন্য দাবি জানিয়েছেন, কাজ করেছেন। বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক জীবনের শুরু থেকেই বৈষম্য ও সাম্রাজ্যবাদী ব্যবস্থার বিরুদ্ধে লড়াই করেছেন দেশে ও বিদেশে, ১৯৫২ সালে চীন সফরের সময় বঙ্গবন্ধু তার বক্তৃতায় উচ্চারণ করেন-‘পুঁজিপতিরা নিজেদের স্বার্থে যুদ্ধ লাগাতে বদ্ধপরিকর। নতুন স্বাধীনতাপ্রাপ্ত জনগণের কর্তব্য বিশ্ব শান্তির জন্য সংঘবদ্ধভাবে চেষ্টা করা।’ এখানে উল্লেখ্য, বঙ্গবন্ধু এ বিষয়গুলো এতটাই গুরুত্বপূর্ণ মনে করতেন, যেজন্য তিনি বাংলাদেশের সংবিধানে (১৯৭২) পররাষ্ট্রনীতিকে সম্পর্কের মূলভিত্তি হিসাবে স্থান দিয়েছেন, যা একটি বিরল দৃষ্টান্ত।

নয়া আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থা : বঙ্গবন্ধুর কূটনৈতিক চিন্তাধারায় একটি শোষণমুক্ত, সুন্দর শান্তিপূর্ণ বিশ্বের স্বপ্ন ছিল। অর্থনৈতিক ন্যায়বিচার, মানুষের অর্থনৈতিক কষ্ট লাঘব, মূল্যবৃদ্ধি রোধ ও বৈশ্বিক বৈষম্য অবসানের জন্য তিনি নয়া আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থার একনিষ্ঠ সমর্থক ছিলেন। এ বিষয়ে বঙ্গবন্ধুর ভাবনা ছিল গভীর ও শক্তিশালী, তিনি মনে করতেন জাতিসংঘের একটি প্রধান দায়িত্ব হচ্ছে আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থা পরিবর্তনের জন্য কাজ করে যাওয়া। একটি স্থিতিশীল ও ন্যায়ভিত্তিক ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা, যেখানে রাষ্ট্রের সার্বভৌমত্ব যেমন লঙ্ঘিত হবে না, অন্যদিকে সহযোগিতার ভিত্তিতে একযোগে কাজ করে যাবে।

জাতিগত আত্মমর্যাদা প্রতিষ্ঠা

বঙ্গবন্ধু সব সময় জাতিগত আত্মমর্যাদার ওপর গুরুত্ব দিয়েছেন। শুধু বাঙালির নয়, সমগ্র বিশ্বে সব জাতির জন্য তা ভেবেছেন। বিশেষ করে তৎকালীন তৃতীয় বিশ্বের স্বাধীনতাকামী মানুষের জন্য বিশেষ প্রযোজ্য ছিল। বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতা ও আত্মমর্যাদাকে একসঙ্গে বিবেচনা করতেন। টাইম ম্যাগাজিনের সাংবাদিক স্টুওয়ার্টকে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক প্রসঙ্গে বলেছিলেন, ‘কিন্তু তাদেরকে (যুক্তরাষ্ট্র) প্রথমে এগিয়ে আসতে হবে। আমি স্বীকৃতি চাই এবং যদি সম্পর্ক আরও উন্নত করতে হয় তাহলে মার্কিন সরকারকে বাস্তবতা স্বীকার করতে হবে। মার্কিন জনগণের বিরুদ্ধে আমার কোনো ক্ষোভ নেই। আমি সাহায্য চাই, কিন্তু কোনো শর্তযুক্ত থাকবে না।’ তাছাড়া সৌদি বাদশাহ ফয়সালকে উদ্দেশ করে বলেছিলেন, আপনার দেশটির নামের সঙ্গে ইসলামিক শব্দটি নেই, তাহলে বাংলাদেশকে কেন তা ব্যবহার করতে হবে। ১৯৭২ সালের ৮ জানুয়ারি তারিখে লন্ডনে যাত্রাবিরতিকালে বঙ্গবন্ধুর সংবাদ সম্মেলনের বক্তব্য ও বিশ্ব গণমাধ্যমের বিখ্যাত সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরগুলো পর্যবেক্ষণ করলে দেখা যাবে তিনি আত্মমর্যাদার বিষয়টি কত উঁচুতে বিবেচনা করতেন। বাংলাদেশের কূটনীতির জন্য এটি একটি অন্যতম নিয়ামক।