বৃহস্পতিবার, মার্চ ২৩, ২০২৩

বৃষ্টিপাত এবং বৃষ্টিপাতের প্রকাভেদ

বৃষ্টিপাত আবহাওয়ার খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি উপাদান। এখানে বৃষ্টিপাত কী অর্থাৎ বৃষ্টিপাতের সংজ্ঞা এবং বৃষ্টিপারের প্রকারভেদ উল্লেখ করা হলো।

আমরা জানি, কোনো অঞ্চলের প্রাত্যহিক বায়ুর তাপ, চাপ, আর্দ্রতা, বৃষ্টিপাত পাত, বায়ুপ্রবাহের গড় অবস্থাকে বলা হয় আবহাওয়া। বৃষ্টিপাত আবহাওয়ার খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি উপাদান। এখানে বৃষ্টিপাত কী অর্থাৎ বৃষ্টিপাতের সংজ্ঞা এবং বৃষ্টিপারের প্রকারভেদ উল্লেখ করা হলো।

বৃষ্টিপাত কী?

বৃষ্টিপাত হলো কোনো অঞ্চলের আবহাওয়ার একটি অবস্থা যা নানা ধরনের আবহাওয়ার উপাদানসমূহের উপর নির্ভরশীল। জলীয়বাষ্পপূর্ণ বায়ু উর্ধ্ব আকাশে ঠান্ডা ও ঘনীভূত হয়ে মেঘে পরিণত হয়। এই সকল মেঘের মধ্যে থাকে অসংখ্য পানিকণা ও বরফকণা। এই ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র পানি ও বরফকণা পরস্পরের সাথে মিলে বড় পানির কণায় পরিণত হয়। স্বাভাবিকভাবে মেঘ যখন আকাশে ভাসতে থাকে তখন তা ঘনীভূত হয়ে ফোঁটা ফোঁটা আকারে মাধ্যাকর্ষণ শক্তির টানে ভূ-পৃষ্ঠে পতিত হলে তাকে বলে বৃষ্টিপাত (Rainfall)।

বৃষ্টিপাত কীভাবে হয়?

সূর্যের তাপে যে জলীয়বাষ্প তৈরি হয় তা উপরের শীতল বায়ুর সংস্পর্শে আসলে তা সহজেই পরিপৃক্ত হয়। ঐ পরিপৃক্ত বায়ুই পরে ক্ষুদ্রাতি ক্ষুদ্র জলকণাতে পরিণত হয় এবং বায়ুমণ্ডলের ধূলিকণার সংস্পর্শে এসে জমাট বেঁধে মেঘের আকার ধারণ করে। এই মেঘ বাতাসে ভাসতে থাকে। বায়ুমণ্ডলের উষ্ণতা যদি হ্রাস পায় তবে ঐ ঘনীভূত মেঘ পানির কণা বা বরফকুচিরূপে মাধ্যাকর্ষণ শক্তির প্রভাবে পৃথিবীতে পতিত হয়। এই পদ্ধতিতেই বৃষ্টিপাত হয়।

বৃষ্টিপাতের প্রকারভেদ

মোট ৪টি উপায়ে জলীয়বাষ্পপূর্ণ বায়ু উর্ধ্বাকাশে উত্থিত হয়ে বৃষ্টিপাত ঘটায় বলে বৃষ্টিপাত প্রধানত ৪ প্রকার। বৃষ্টিপাতের এই ৪টি প্রকারভেদ হলো—

  1. পরিচলন বৃষ্টিপাত
  2. শৈলোৎক্ষপে বৃষ্টিপাত
  3. ঘূর্ণিবাত বৃষ্টিপাত
  4. সংঘর্ষ বৃষ্টিপাত।

নিম্নে এ সকল বৃষ্টিপাতের বৈশিষ্ট্য তুলে ধরা হলো—

পরিচলন বৃষ্টিপাত

ভূ-পৃষ্ঠের বায়ু উষ্ণ হলে প্রচুর জলীয়বাষ্প সম্পন্ন হালকা বায়ু উপরে উঠে যায়। এ সময়ে শীতল বায়ুর সংস্পর্শে এসে ঐ জলীয়বাষ্প প্রথমে মেঘ ও পরে বৃষ্টিতে পরিণত হয়ে সোজা নিচে নেমে আসে। এই বৃষ্টিপাতকে বলা হয় পরিচলন বৃষ্টি। পরিচলন বৃষ্টিতে বায়ুর তাপ হ্রাস পেয়ে যখন অতিরিক্ত জলীয়বাষ্প ঘনীভূত হয় তখন এই ধরনের বৃষ্টিপাত ঘটায়। নিরক্ষীয় নিম্নচাপ এলাকায় পরিচলন বৃষ্টিপাত বেশি হয় কারণ এই সব এলাকার উর্ধ্বগামী বায়ুতে প্রচুর জলীয়বাষ্পপূর্ণ বায়ু থাকে। নিরক্ষীয় এলাকায় স্থলভাগের থেকে জলভাগের বিস্তৃতি বেশি এবং এখানে লম্বভাবে সূর্যকিরণ পতিত হয়। এই অঞ্চলে হালকা জলীয়বাষ্পপূর্ণ বায়ু থাকে। হালকা জলীয়বাষ্পপূর্ণ বায়ু যখন শীতল বায়ুর সংস্পর্শে আসে 

তখন এই রকম পরিচলন বৃষ্টিপাত ঘটায়। নিরক্ষীয় অঞ্চলে প্রায় সারাবছরই সন্ধ্যা ও বিকালে এইরূপ বৃষ্টি হয়। নাতিশীতোষ্ণমণ্ডলে গ্রীষ্মকালের শুরূতে পরিচলন বৃষ্টিপাত হয়।

পরিচলন বৃষ্টিপাত তাই নিম্নলিখিত পর্যায় অনুসারে ঘটে থাকে—

  • প্রচুর সূর্যের তাপে ভূ-পৃষ্ঠ দ্রূত উত্তপ্ত হয়ে উঠে। 
  • ভূ-পৃষ্ঠের উপরে অবস্থিত উষ্ণ ও হালকা বায়ু উপরে উঠে গিয়ে পরিচলনের সৃষ্টি করে। 
  • উর্ধ্বমুখী বায়ু যখন শীতল হতে থাকে তখন বায়ুতে যথেষ্ট পরিমাণ জলীয়বাষ্পের উপস্থিতিতে ঘনীভবন হয়।
  • ঘণীভবনের ফলে মেঘ উপরের দিকে বহুদূর পর্যন্ত বিস্তৃত হয়ে ঝড়োপুঞ্জ মেঘের সৃষ্টি করে। এ ধরনের মেঘ থেকে ঝড়সহ মুষলধারে বৃষ্টি এবং কখনো কখনো শিলাবৃষ্টি ও বজ্রপাত হয়।

শৈলোৎক্ষপে বৃষ্টিপাত

জলীয়বাষ্পপূর্ণ উষ্ণ ও আর্দ্র বায়ু ভূ-পৃষ্ঠের উপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় সময় পর্বতে বাধাপ্রাপ্ত হলে তা পর্বতের ঢাল বেয়ে উপরের দিকে উঠে যায়। এই বায়ু শীতল হয়ে পর্বতের প্রতিবাত ঢালে যে বৃষ্টিপাত ঘটায় তাকে শৈলোৎক্ষপে বৃষ্টি বলে। দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ু মেঘালয় পাহাড়ে বাধা পাওয়ায় সিলেট এলাকায় প্রচুর শৈলোৎক্ষপে বৃষ্টি হয়। তবে পর্বত অতিক্রমকারী বায়ু যদি পর্বতের অপর পাশে অর্থাৎ অনুবাত ঢালে পৌঁছায় তখন ঐ বায়ুতে জলীয়বাষ্প কমে থাকে। ঐ বায়ু নিচে নামার ফলে আরও উষ্ণ এবং শুষ্ক হয়ে উঠে বলেই ঐ স্থানে বৃষ্টিপাত হয় না। এই বৃষ্টিহীন স্থানকে বলা হয় বৃষ্টিচ্ছায় অঞ্চল (Rain-Shadow region)।

ঘূর্ণিবাত বৃষ্টিপাত

ঘূর্ণিবাত কেন্দ্রের বায়ু যখন উপরে উঠে যায় তখন তাপমাত্রা হ্রাস পায় ও শীতল হয়। এ সময় বায়ুতে থাকা জলীয়বাষ্প অতিরিক্ত ঘণীভূত হয়ে ঘূর্ণিবাত বৃষ্টপাত ঘটায়।

সংঘর্ষ বৃষ্টিপাত

শীতল ও উষ্ণ বায়ুপুঞ্জ যখন মুখোমুখি হয় তখন শীতল বায়ুর সংস্পর্শে উষ্ণ বায়ুর তাপমাত্রা হ্রাস পায় এবং শিশিরাঙ্কে পোঁছায়। আরও ঘনীভূত হয়ে বায়ুপুঞ্জের সংযোগস্থলে বৃষ্টিপাত ঘটায়। এই প্রকার বৃষ্টি নাতিশীতোষ্ণ বৃষ্টিপাত নামে পরিচিত। এই ধরনের বৃষ্টি নাতিশীতোষ্ণ অঞ্চলে দেখা যায়।

সারাংশ

জলীয়বাষ্পপূর্ণ বায়ু উর্ধ্বাকাশে ঘনীভূত হয়ে মেঘে পরিণত হয় যাতে অসংখ্য ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র পানির কণা থাকে। মাধ্যাকর্ষণের টানে এই ঘনীভূত মেঘ পানির আকারে ভূ-পৃষ্টে পতিত হলে তাকে বৃষ্টিপাত বলে। বৃষ্টিপাত মূলত চার প্রকার। যথা- পরিচলন বৃষ্টিপাত, শৈলোৎক্ষপে বৃষ্টিপাত, ঘূর্ণিবাত বৃষ্টিপাত ও সংঘর্ষ বৃষ্টিপাত। জলীয়বাষ্প সম্পন্ন হালকা বায়ু উপরে উঠে শীতল বায়ুর সংস্পর্শে প্রথমে মেঘ ও পরে পরিচলন বৃষ্টিপাত হয়। জলীয়বাষ্প সম্পন্ন বায়ু ভূ-পৃষ্ঠের উপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ার সময় তা পর্বতে বাধাপ্রাপ্ত হয়। এই বায়ু পর্বতের প্রতিবাত ঢাল বেয়ে উপরে উঠে যায় এবং শীতল হয়ে শৈলোৎক্ষপে বৃষ্টিপাত ঘটায়।

বাংলাদেশি বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানসমূহের মধ্য থেকে 'বিশ্লেষণ'-এর জন্য স্পনসরশিপ খোঁজা হচ্ছে। আগ্রহীদের যোগাযোগ করার জন্য অনুরোধ করা হলো। ইমেইল: contact.bishleshon@gmail.com

এ বিষয়ের আরও নিবন্ধ

কে২: বিশ্বের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ পর্বতশৃঙ্গ

কে২ বা কেটু (K2) এভারেস্ট পর্বতের পর বিশ্বের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ পর্বত শৃঙ্গ। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে এর উচ্চতা ৮,৬১১ মিটার (২৮,২৫১ ফুট)। হিমালয় পর্বতমালার...

পানিচক্র কী এবং পানিচক্রের প্রক্রিয়া কেমন?

পানির অপর নাম জীবন। পানি ছাড়া মানুষ, উদ্ভিদ ও প্রাণি জীবনধারণ করতে পারে না। পানি না থাকলে ভূ-পৃষ্ঠ ও তার চারপাশের নানা...

বায়ু প্রবাহের সংজ্ঞা এবং বায়ু প্রবাহের প্রকারভেদ

এখানে বায়ু প্রবাহের সংজ্ঞা এবং বায়ু প্রবাহের প্রকারভেদ সম্পর্কে উল্লেখ করা হলো। এখানে যা আছেবায়ুপ্রবাহ কাকে বলে?বিভিন্ন প্রকারের বায়ু...

বায়ু প্রবাহ, বায়ু প্রবাহের নিয়ম এবং বায়ু প্রবাহের প্রভাব

উচ্চচাপ থেকে নিম্নচাপের দিকে বায়ুর নিয়মিত চলাচলকে বায়ুপ্রবাহ বলে। এখানে বায়ু প্রবাহের সংজ্ঞা, নিয়ম ও বায়ু প্রবাহের প্রভাব সম্পর্কে উল্লেখ করা হলো।

অভিজ্ঞতাভিত্তিক শিক্ষার যুগে বাংলাদেশ

যেহেতু অভিজ্ঞতাভিত্তিক শিক্ষা একটি নতুন ধারণা, তাই বাস্তবায়নের জন্য এমন একটি কমিটি থাকা উচিত যারা ধারাবাহিকভাবে পর্যবেক্ষণ করবে পাঠ্যক্রমটি সঠিকভাবে বাস্তবায়ন হচ্ছে কি না। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো শিক্ষার্থীদের কার্যক্রম রেকর্ড করার জন্য কোন পদ্ধতি অবলম্বন করবে তাও স্পষ্ট করতে হবে। কারণ মূল্যায়নের ন্যায্যতা প্রমাণের জন্য অভিজ্ঞতার রেকর্ড সংরক্ষণের প্রয়োজন হবে।

যুগে যুগে মুসলমানদের বিরুদ্ধে ধর্মযুদ্ধ

ইউরোপে মুসলিম বিদ্বেষিতা নতুন কিছু নয়। মধ্যযুগ থেকে এর সূত্রপাত। মধ্যযুগে খ্রিষ্টানদের কাছে জেরুজালেম শহরটি ছিল তাদের ধর্মীয় প্রেরণার প্রধান কেন্দ্র। তাদের...

হোয়াইট কলার বা ভদ্রবেশী  অপরাধ কী এবং বাংলাদেশে ভদ্রবেশী অপরাধের সংঘটন

হোয়াইট কলার অপরাধ। এর কোনো আইনগত সংজ্ঞা নেই। বাংলা শব্দে এটা ‘ভদ্রবেশী অপরাধ।’ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে এর উৎপত্তি হলেও ক্রমে তা বিভিন্ন রাষ্ট্রে...
আরও পড়তে পারেন

শিরক কী, মানুষ কীভাবে শিরকে লিপ্ত হয়

ইসলাম একমাত্র ধর্ম যেখানে স্রষ্টা তার কোনো ক্ষমতাতেই কাউকে অংশীদার সাব্যস্ত করেননি। অর্থাৎ আল্লাহই একমাত্র একক ইলাহ যিনি সমস্ত ক্ষমতার অধিকারী। সৃষ্টির...

মানব সম্পদ ব্যবস্থাপনা বা হিউম্যান রিসোর্স ম্যানেজমেন্ট বলতে কী বোঝায়

মানব সম্পদ ব্যবস্থাপনা বা হিউম্যান রিসোর্স ম্যানেজমেন্ট (Human Resource management) হলো একই সঙ্গে একটি অধ্যয়নের বিষয় ও ব্যবস্থাপনা কৌশল যা একটি প্রতিষ্ঠানের...

টপ্পা গান কী, টপ্পা গানের উৎপত্তি, বাংলায় টপ্পা গান ও এর বিশেষত্ব

টপ্পা গান এক ধরনের লোকিক গান বা লোকগীতি যা ভারত ও বাংলাদেশের বাংলা ভাষাভাষী মানুষের কাছে খুবই প্রিয়। এই টপ্পা গান বলতে...

রাষ্ট্রবিজ্ঞান বলতে কী বোঝায় এবং ভারতীয় উপমহাদেশে রাজনীতি বা রাষ্ট্রচিন্তা

রাষ্ট্রবিজ্ঞান (Political Science) সমাজবিজ্ঞানের একটি শাখাবিশেষ যেখানে পরিচালন প্রক্রিয়া, রাষ্ট্র, সরকার এবং রাজনীতি সম্পর্কীয় বিষয়াবলী নিয়ে আলোকপাত করা হয়।  এরিস্টটল রাষ্ট্রবিজ্ঞানকে রাষ্ট্র...

গণতন্ত্রের সংজ্ঞা কী বা গণতন্ত্র বলতে কী বোঝায়

গণতন্ত্র বলতে কোনো জাতিরাষ্ট্রের অথবা কোনো সংগঠনের এমন একটি শাসনব্যবস্থাকে বা পরিচালনাব্যবস্থাকে বোঝায় যেখানে নীতিনির্ধারণ বা সরকারি প্রতিনিধি নির্বাচনের ক্ষেত্রে প্রত্যেক নাগরিক...

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here