০১:৫৮ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
                       

বায়ুমণ্ডল, বায়ুমণ্ডলের স্তর ও বায়ুমণ্ডলের গুরুত্ব

বিশ্লেষণ সংকলন টিম
  • প্রকাশ: ০৮:৩৪:৩৮ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১১ জুলাই ২০২২
  • / ৮২৯৭ বার পড়া হয়েছে

ভূ-পৃষ্ঠের চারপাশ যে বায়বীয় আবরণ দ্বারা বেষ্টিত রয়েছে তাকেই সহজ ভাষায় বলা হয় বায়ুমণ্ডল।

সৌরজগতের সব থেকে আদর্শ ও বাসযোগ্য গ্রহ হলো পৃথিবী এবং বায়ুমণ্ডল এই গ্রহে জীবজগতের বেঁচে থাকার জন্য সবচেয়ে গুরূত্বপূর্ণ অঞ্চল। এখানে আলোচনা করা হলো বায়ুমণ্ডল শব্দের ইংরেজি প্রতিশব্দ Atmosphere-এর উৎপত্তি, বায়ুমণ্ডলের সংজ্ঞা, বায়ুমণ্ডলের স্তর এবং বায়ুমণ্ডলের গুরুত্ব প্রসঙ্গে। বায়ুমণ্ডলের উপাদান সম্পর্কে পড়ার জন্য এখানে ক্লিক করুন

বায়ুমণ্ডল কী?

বায়ুমণ্ডল শব্দের ইংরেজি প্রতিশব্দ হলো Atmosphere। এই Atmosphere শব্দটি এসেছে গ্রিক শব্দ ἀτμός (অ্যাটমোস) এবং σφαῖρα (স্ফাইরা) থেকে। এখানে অ্যাটমোস শব্দের অর্থ হলো ‘গ্যাস’, এবং স্ফাইরা শব্দের অর্থ হলো ‘বল’ বা ‘বলয়’।

বায়ুমণ্ডল হলো কোনো গ্রহ বা পর্যাপ্ত ভরসম্পন্ন কোনো কঠিন পদার্থের চারদিকে বেষ্টন করে থাকা গ্যাসের এক বা একাধিক স্তর, যা বস্তুটি তার মহাকর্ষ শক্তি দ্বারা ধরে রাখে। বস্তুর মহাকর্ষ যদি যথেষ্ট বেশি হয় এবং বায়ুমণ্ডলের তাপমাত্রা যদি কম থাকে তাহলে এই বায়ুমণ্ডল অনেকদিন টিকে থাকতে পারে।

  • পৃথিবির চারিদিকে বাতাসের যে ঘন স্তর তাকে পৃথিবীর বায়ুমণ্ডল বলে।
  • ভূ-পৃষ্ঠ ও তার আশেপাশে যে বায়বীয় মণ্ডল আবর্তিত আছে তাকে বায়ুমণ্ডল বলে।
  • পৃথিবীর বায়ুমণ্ডল বলতে পৃথিবীর চারপাশে ঘিরে থাকা বিভিন্ন গ্যাস মিশ্রিত স্তরকে বোঝায়, যা পৃথিবী তার মধ্যাকর্ষণ শক্তি দ্বারা ধরে রাখে। একে আবহমণ্ডল-ও বলা হয়। এটি সূর্য থেকে আগত অতিবেগুনি রশ্মি শোষণ করে পৃথিবীতে জীবের অস্তিত্ব রক্ষা করে।

বায়ুমণ্ডলের স্তরসমূহ

বায়ুমণ্ডল নানাপ্রকার গ্যাসীয় উপাদান, জলীয়বাষ্প, ধূলিকণা ও কনিকা দ্বারা গঠিত। এই সকল গঠনকারী উপাদানের নানা বৈশিষ্ট্য লক্ষ্য করা যায়। মূলত বায়ুমণ্ডলের গঠনকারী উপাদানসমূহের প্রকৃতি, উষ্ণতার পার্থক্য অর্থাৎ অন্যান্য সকল বৈশিষ্ট্যের তারতম্যের জন্য বায়ুমণ্ডলকে নানা স্তরে ভাগ করা যায়।

বায়ুমণ্ডলের স্তর

মূলত ভূ-পৃষ্ঠ হতে উপরের দিকে বায়ুমণ্ডলের মোট পাঁচটি স্তর বা পর্যায়ে রয়েছে। বায়ুমণ্ডলের এই ৫ টি স্তর হলো—

  1. ট্রপোমণ্ডল
  2. স্ট্রাটোমণ্ডল
  3. মেসোমণ্ডল
  4. তাপমণ্ডল
  5. এক্সোমণ্ডল

বায়ুমণ্ডলের উপর্যুক্ত ৫ টি স্তরকে প্রধানত দুইটি স্তরে ভাগ করা হয়—

যথা—

  1. সমমণ্ডল বা হোমোস্ফিয়ার (Homosphere)
  2. বিষমমণ্ডল বা হেটেরোস্ফিয়ার (Heterosphere)

সমমণ্ডল ও বিষমমণ্ডল

সমমণ্ডল (Homosphere)

সমমণ্ডল বা হোমোস্ফিয়ার এর বৈশিষ্ট্য হলো যে এই মণ্ডলে ভূ-পৃষ্ঠ হতে প্রায় ৮০ কিলোমিটার পর্যন্ত বায়ুস্তরে বিভিন্ন গ্যাসের অনুপাত প্রায় সমান থাকে। এই সমমণ্ডলের মধ্যেই বায়ুমণ্ডলের প্রথম তিনটি স্তর অর্থাৎ ট্রপোমণ্ডল, স্ট্রাটোমণ্ডল ও মেসোমণ্ডল অন্তর্ভুক্ত।

বিষমমণ্ডল (Heterosphere)

বিষমমণ্ডলের মধ্যে বায়ুমণ্ডলের বাকি দুইটি স্তর অন্তর্ভুক্ত। এ স্তর দুটি হলো তাপমণ্ডল ও এক্সোমণ্ডল। মূলত এই মণ্ডলটি সমমণ্ডলের উপরে অবস্থিত। সমমণ্ডলের উপরের স্তরে বিভিন্ন গ্যাসের অনুপাত অসমান থাকে বলেই একে বিষমমণ্ডল বলা হয়। বিষমমণ্ডল প্রায় ১০,০০০ কিলোমিটার পর্যন্ত বিস্তৃত।

ট্রপোমণ্ডল (Troposphere)

বায়ুমণ্ডলের যে স্তরটি ভূ-ত্বকের সব থেকে নিচের স্তরে অবস্থিত সেটি হলো ট্রপোমণ্ডল বা ট্রপোস্ফিয়ার (Troposphere)। অর্থাৎ, বায়ুমণ্ডলের প্রথম স্তর হলো ট্রপোমণ্ডল এই স্তরে বায়ুপ্রবাহ, ঝড়, মেঘ, বৃষ্টি, কুয়াশা, তুষারপাত, শিশির ইত্যাদির সৃষ্টি হয়। ট্রপোমণ্ডলের শেষ প্রান্তের অংশের নাম ট্রপোবিরতি বা ট্রপোপজ (Tropopause)।

ট্রপোবিরতি এলাকায় তাপমাত্রা ৫৪০ সেলসিয়াসের নিচে থাকে। ট্রপোমণ্ডলের গভীরতা পৃথিবীর চারিদিকে সবসময় সমান থাকে না। ভিন্ন ভিন্ন অক্ষাংশে ও ঋতুভেদে এই গভীরতার পার্থক্য হয়। ট্রপোমণ্ডলের বৈশিষ্ট্যগুলো এখানে তুলে ধরা হলো—

ট্রপোমণ্ডলের বৈশিষ্ট্য

  • ট্রপোমণ্ডল ভূ-পৃষ্ঠ হতে নিরক্ষীয় অঞ্চলে প্রায় ১৬-১৯ কিলোমিটার এবং মেরূ অঞ্চলে প্রায় ৮ কিলোমিটার পর্যন্ত বিস্তৃত।
  • ট্রপোস্ফিয়ারের উর্ধ্বসীমাকে ট্রপোপজ বলে যার গভীরতা অনেক কম।
  • ট্রপোমণ্ডল স্তরে উচ্চতা যত বাড়তে থাকে বায়ুর ঘনত্ব ও উষ্ণতা ততই কমতে থাকে। এই উচ্চতা বৃদ্ধির সাথে তাপ কমে যাওয়ার প্রবনতাকে বলা হয় স্বাভাবিক তাপ হ্রাস।
  • ট্রপোমণ্ডলে সাধারণত প্রতি ১,০০০ মিটার উচ্চতায় ৬০ সেলসিয়াস তাপমাত্রা কমে যায়।
  • ট্রপোমণ্ডলের উচ্চতা বৃদ্ধির ফলে বাতাসের গতিবেগ বেড়ে যায় ও নিচের দিকের বাতাসে জলীয়বাষ্পের উপস্থিতি বেশি পাওয়া যায়।
  • ট্রপোমণ্ডল স্তরে আবহাওয়া ও জলবায়ুজনিত সকল প্রক্রিয়া সাধারণত ঘটে।
  • ট্রপোমণ্ডলে ধূলিকণা থাকে এবং বায়ুমণ্ডলের ওজোনের শতকরা ৭৫ ভাগ এই স্তর বহন করে।

স্ট্রাটোমণ্ডল (Stratosphere)

বায়ুমণ্ডলের দ্বিতীয় স্তর হলো স্ট্রাটোমণ্ডল বা স্ট্রাটোস্ফিয়ার (Stratosphere)। স্ট্রাটোমণ্ডল উর্ধ্বে ৫০ কিলোমিটার পর্যন্ত বিস্তৃত।

স্ট্রাটোমণ্ডল হলো জলীয়বাষ্পবিহীন স্তর। স্ট্রাটোমণ্ডল ও মেসোমণ্ডলের মধ্যবর্তী অঞ্চলে তাপমাত্রার স্থিতাবস্থাকে বলা হয় স্ট্রাটোবিরতি বা স্ট্রাটোপস (Stratopause)।

স্ট্রাটোমণ্ডলের বৈশিষ্ট্য

এ স্তরের বৈশিষ্ট্যগুলো নিম্নরূপ—

  • স্ট্রাটোমণ্ডলে বায়ুর ঘনত্ব ও চাপ অনেক কম।
  • স্ট্রাটোমণ্ডল স্তরে ওজোন (O3) গ্যাসের পরিমাণ বেশি থাকে, তাই সূর্য হতে আগত অতিবেগুনী রশ্মি এই ওজোন স্তর শুষে নেয়।
  • স্ট্রাটোমণ্ডল স্তরের নিম্নে উষ্ণতার তেমন পরিবর্তন না হলেও ১০ কিলোমিটার থেকে ধীরে ধীরে উষ্ণতা বাড়তে বা ওজোনোস্ফিয়ার থাকে। এই উষ্ণতা বৃদ্ধি উচ্চ স্ট্রাটোমণ্ডলে ৫০ কিলোমিটার পর্যন্ত অব্যাহত থাকে।
  • পৃথিবীতে প্রাণিজগতের বসবাসের উপকারী পরিবেশ তৈরিতে স্ট্রাটোমণ্ডল স্তরের ভূমিকা রয়েছে।
  • স্ট্রাটোমণ্ডল স্তরেই সূর্যের ক্ষতিকর অতিবেগুনী রশ্মি শোষণ করে নেওয়া হয়।
  • স্ট্রাটোমণ্ডলে ধূলিকণার পরিমাণ নগন্য এবং মেঘ দেখাই যায় না।
  • স্ট্রাটোমণ্ডল স্তরে আবহাওয়া শুষ্ক ও শান্ত থাকে। সাধারণত জেট বিমানগুলো এই স্তর দিয়ে চলাফেরা করতে পারে কারণ ঝড়-বৃষ্টি থাকে না।
  • প্রায় ৫০ কিলোমিটার উচ্চতায় তাপমাত্রা ধীরে ধীরে কমে যেতে থাকে এবং তা স্ট্রাটোমণ্ডলের শেষ প্রান্ত পর্যন্তপৌছায়।

মেসোমণ্ডল (Mesosphere)

স্ট্রাটোবিরতির উপরে প্রায় ৮০ কিলোমিটার পর্যন্ত যে স্তর রয়েছে তাকে মেসোমণ্ডল বা মেসোস্ফিয়ার বলে। স্ট্রাটো মণ্ডলের প্রায় ৮০ কিলোমিটার পর্যন্ত উষ্ণতা দ্রূত কমতে থাকে। ৮০ কিলোমিটারের পরে উষ্ণতা বৃদ্ধি পাওয়া শুরূ করে এবং এই অংশকে বলে মেসোপস বা মেসোবিরতি (Mesopause)।

মেসোমণ্ডলে বৈশিষ্ট্যসমূহ

মেসোমণ্ডলের বৈশিষ্ট্যগুলো তুলে ধরা হলো—

  • মেসোমণ্ডলের উর্ধ্বসীমায় বায়ুর তাপমাত্রা প্রায় ৬৫.৫ সেলসিয়াস।
  • মেসোমণ্ডলে বায়ুচাপ খুব কম।
  • মেসোমণ্ডল বায়ুমণ্ডলের সবচেয়ে শীতলতম তাপমাত্রা ধারন করে।
  • সাধারণত যে সব উল্কা মহাকাশ থেকে পৃথিবীর দিকে ছুটে আসে সেগুলো এই স্তরে এসে পড়ে যায়। উল্কাপতন এলাকাটি ভূ-পৃষ্ঠ থেকে উপরের দিকে প্রায় ৫০০ কিলোমিটার পর্যন্ত বিস্তৃত।

তাপমণ্ডল (Thermosphere)

মেসোবিরতির উপরে প্রায় ৫০০ কিলোমিটার পর্যন্ত বিস্তৃত বায়ুস্তরকে বলে তাপমণ্ডল বা থার্মোস্ফিয়ার (Thermosphere)। তাপমণ্ডলকে আয়নমণ্ডল বা আয়নোস্ফিয়ার বলা হয়। তাপমণ্ডল বা আয়নমণ্ডলে বেতার তরঙ্গ প্রতিফলিত হয়।

তাপমণ্ডলের বৈশিষ্ট্য

তাপমণ্ডলের বৈশিষ্ট্য নিম্নে তুলে ধরা হলো-

  • তাপমণ্ডলের বায়ু খুব হালকা এবং এখানে তাপের পরিবহনও নগণ্য।
  • তীব্র সৌর বিকিরনে রঞ্জন রশ্মি ও অতিবেগুনী রশ্মির সংঘাতে এই অংশে বায়ু আয়নযুক্ত হয়। এই জন্য একে আয়নমণ্ডল বা আয়নোস্ফিয়ার বলা হয়।
  • পৃথিবীপৃষ্ঠ থেকে যে বেতার তরঙ্গ পাঠানো হয় তা এই স্তরের মধ্য দিয়ে প্রতিফলিত হয়ে আবার পৃথিবীতে ফিরে আসে।
  • তাপমণ্ডলের স্তরে বায়ুমণ্ডলের তাপমাত্রা অত্যন্ত দ্রূত হারে বৃদ্ধি পেয়ে ১৪৮০০ সেলসিয়াসে এসে পোঁছায়।

এক্সোমণ্ডল (Exosphere)

এক্সোমণ্ডল বা এক্সোস্ফিয়ার বায়ুমণ্ডলের এমনই একটি স্তর যার অবস্থান পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলের বাইরের স্তরে। থার্মোস্ফিয়ার বা তাপমণ্ডলের উপরে প্রায় ৯৬০ কিলোমিটার পর্যন্ত এই এক্সোমণ্ডলের বিস্তার। এই স্তরের তাপমাত্রা প্রায় ৩০০০ সেলসিয়াস থেকে ১৬৫০০

সেলসিয়াস পর্যন্ত হয়।

এক্সোমণ্ডল হলো পৃথিবীর বাইরের বায়ুমণ্ডল।

এক্সোমণ্ডলের বৈশিষ্ট্য 

এক্সোমণ্ডলের বৈশিষ্ট্যগুলো নিম্নরূপ—

  • এক্সোমণ্ডলের পরই বিষমমণ্ডল শুরূ হয়।
  • আয়নমণ্ডলের বহিঃসীমাই হলো এক্সোমণ্ডল যেখানে হাইড্রোজেন গ্যাসের উপস্থিতি বেশি পাওয়া যায়।
  • এক্সোমণ্ডলের মধ্যে বিভিন্ন গ্যাসীয় উপাদান যেমন— খুব সামান্য পরিমানে আর্গন, হিলিয়াম, অক্সিজেন, নাইট্রোজেন পাওয়া যায়।
  • এক্সোমণ্ডলে মাধ্যাকর্ষণের ঘাটতির কারণে গ্যাস অণু বা কণাগুলো সহজে মহাকাশে ছড়িয়ে পড়ে।

বায়ুমণ্ডলের গুরূত্ব

সৌরজগতের সব থেকে আদর্শ ও বাসযোগ্য গ্রহ হলো পৃথিবী এবং বায়ুমণ্ডল এই গ্রহে জীবজগতের বেঁচে থাকার জন্য সবচেয়ে গুরূত্বপূর্ণ অঞ্চল। বায়ুমণ্ডলের বিভিন্ন স্তরে নানা রকম গ্যাসীয় উপাদান, জলীয়বাষ্প ও ধূলিকণার উপস্থিতির জন্য স্তরভেদে নানা পার্থক্য দেখা যায়।

বায়ুমণ্ডলের গুরূত্বসমূহ এখানে আলোচনা করা হলো—

  • বায়ুমণ্ডল প্রধানত উদ্ভিদ ও প্রাণিকূলের জীবন রক্ষায় গুরূত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। সূর্যের ক্ষতিকর রশ্মি শুষে নিয়ে এবং এর বিভিন্ন গ্যাসীয় উপাদান যেমন-অক্সিজেন ও কার্বন ডাই-অক্সাইড উদ্ভিদ ও প্রাণিকে বাঁচিয়ে রাখতে সাহায্য করে।
  • বায়ুমণ্ডলে জলীয়বাষ্প আছে বলেই মেঘ সৃষ্টি হতে পারে। ফলে বৃষ্টি হয় এবং জীবজগৎ রক্ষা পায়।
  • মানুষ তার নানা প্রয়োজনে প্রকৃতিকে ব্যবহার করতে গিয়ে পরিবেশের ক্ষতি করছে। যেমন— প্রচুর পরিমানে গাছ-পালা ও বন-জঙ্গল নিধন, প্রাকৃতিক গ্যাস, কয়লা ইত্যাদি পোড়ানো এবং তা থেকে নির্গত কালো ধোঁয়া, যানবাহনের কালো ধোঁয়া ও বিষাক্ত গ্যাস বায়ুমণ্ডলের জন্য ক্ষতিকর। তাই প্রাকৃতিক পরিবেশ অর্থাৎ জীবজগতের বেঁচে থাকার জন্য বায়ুমণ্ডলের বিশুদ্ধতা বজায় রাখা জরুরি।
  • বায়ুমণ্ডলকে বিশুদ্ধ না রাখলে উদ্ভিদ ও প্রাণির জীবন বিপর্যস্ত হবে এবং সেই সাথে ভবিষ্যতের প্রাকৃতিক পরিবেশ হুমকির সম্মুখীন হবে।
  • বায়ুর নানা গ্যাসীয় উপাদান যেমন— কার্বন ডাই-অক্সাইড এর সাহায্যে উদ্ভিদ খাদ্য প্রস্তুত করে, জলীয়বাষ্প নিয়ন্ত্রণ করে। এছাড়াও চুনা জাতীয় খনিজ পদার্থ গঠন ও পৃথিবীতে তাপের বণ্টন ও প্রতিফলনের ক্ষেেত্র গুরূত্বপূর্ণ অবদান রাখে।
  • বায়ুমণ্ডল না থাকলে কোনো শব্দতরঙ্গ স্থানান্তরিত হয় না। কারণ পৃথিবী হতে পাঠানো বেতার তরঙ্গ আয়নমণ্ডলে বাধাপ্রাপ্ত হয়ে ফিরে আসে।
  • বায়ুমণ্ডলের নানা স্তরে বায়ুর চাপের পার্থক্য দেখা যায়। তাই বায়ুমণ্ডলে বায়ুর ওজন ও চাপ এর ভারসাম্য সঠিক না হলে আমরা চলাফেরা করা বা দাঁড়াতে পারতাম না।
  • বায়ুমণ্ডলের মধ্যে ওজোন স্তর আছে বলে সূর্য হতে আগত অতিবেগুনী রশ্মির হাত হতে পৃথিবীর জীবজগৎ রক্ষা পায়।
  • বায়ুমণ্ডলের স্তরে উল্কাপিন্ড বিদ্ধস্ত না হলে তা সরাসরি পৃথিবীতে আঘাত হানতো।
  • বায়ুমণ্ডল মূলত একটি তাপনিরোধক আবরণ যা জীবজগৎকে সৌরতাপ শক্তি হতে রক্ষা করে।
  • বায়ুমণ্ডলে নাইট্রোজেনের মাত্রা বেশি থাকায় এর দ্বারা উদ্ভিদজগৎ প্রোটিন জাতীয় খাদ্য প্রস্তুত করে এবং জীবজগৎ ঐ উদ্ভিদ থেকে প্রয়োজনীয় প্রোটিন গ্রহণ করতে পারে।
  • ট্রপোমণ্ডল না থাকলে আবহাওয়া সৃষ্টি হতো না এবং মেঘ-বৃষ্টি, তুষার, কুয়াশা ইত্যাদি না থাকলে শস্য ও বনভূমির জন্য বৃষ্টিপাত পাওয়া যেত না।

সারসংক্ষেপ

বায়ুমণ্ডলের গঠনকারী উপাদানসমূহের প্রকৃতি, উষ্ণতার পার্থক্য ও অন্যান্য গ্যাসীয় উপাদানের তারতম্যের জন্য বায়ুমণ্ডলকে ৫ টি স্তরে ভাগ করা যায়। ভূ-পৃষ্ঠ হতে উপরের দিকে পর্যায়ক্রমে এই পাঁচটি স্তর হলো- ট্রপোমণ্ডল, স্ট্রাটোমণ্ডল,মেসোমণ্ডল, তাপমণ্ডল ও এক্সোমণ্ডল। ভূ-পৃষ্ঠ হতে ৮০ কিলোমিটারর মধ্যে সমমণ্ডল অবস্থিত যা তিনটি স্তর অর্থাৎ ট্রপোমণ্ডল, স্ট্রাটোমণ্ডল ও মেসোমণ্ডল নিয়ে গঠিত। বিষমমণ্ডল প্রায় ১০,০০০ কিলোমিটার পর্যন্ত বিস্তৃত যা ২টি স্তর নিয়ে গঠিত। এগুলো হলো- তাপমণ্ডল ও এক্সোমণ্ডল। ট্রপোমণ্ডল এমন একটি স্তর যেখানে বৃষ্টি, মেঘ, তুষার, শিশির, ঝড় ইত্যাদি আবহাওয়াজনিত প্রভাব লক্ষ্য করা যায়।

শেয়ার করুন

মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার তথ্য সংরক্ষিত রাখুন

তাহসান খান এবং মুনজেরিন শহীদের দুটি প্রফেশনাল কমিউনিকেশন কোর্স করুন ২৮% ছাড়ে
তাহসান খান এবং মুনজেরিন শহীদের দুটি প্রফেশনাল কমিউনিকেশন কোর্স করুন ২৮% ছাড়ে

২৮℅ ছাড় পেতে ৩০/০৬/২০২৪ তারিখের মধ্যে প্রোমো কোড “professional10” ব্যবহার করুন। বিস্তারিত জানতে ও ভর্তি হতে ক্লিক করুন এখানে

বায়ুমণ্ডল, বায়ুমণ্ডলের স্তর ও বায়ুমণ্ডলের গুরুত্ব

প্রকাশ: ০৮:৩৪:৩৮ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১১ জুলাই ২০২২

সৌরজগতের সব থেকে আদর্শ ও বাসযোগ্য গ্রহ হলো পৃথিবী এবং বায়ুমণ্ডল এই গ্রহে জীবজগতের বেঁচে থাকার জন্য সবচেয়ে গুরূত্বপূর্ণ অঞ্চল। এখানে আলোচনা করা হলো বায়ুমণ্ডল শব্দের ইংরেজি প্রতিশব্দ Atmosphere-এর উৎপত্তি, বায়ুমণ্ডলের সংজ্ঞা, বায়ুমণ্ডলের স্তর এবং বায়ুমণ্ডলের গুরুত্ব প্রসঙ্গে। বায়ুমণ্ডলের উপাদান সম্পর্কে পড়ার জন্য এখানে ক্লিক করুন

বায়ুমণ্ডল কী?

বায়ুমণ্ডল শব্দের ইংরেজি প্রতিশব্দ হলো Atmosphere। এই Atmosphere শব্দটি এসেছে গ্রিক শব্দ ἀτμός (অ্যাটমোস) এবং σφαῖρα (স্ফাইরা) থেকে। এখানে অ্যাটমোস শব্দের অর্থ হলো ‘গ্যাস’, এবং স্ফাইরা শব্দের অর্থ হলো ‘বল’ বা ‘বলয়’।

বায়ুমণ্ডল হলো কোনো গ্রহ বা পর্যাপ্ত ভরসম্পন্ন কোনো কঠিন পদার্থের চারদিকে বেষ্টন করে থাকা গ্যাসের এক বা একাধিক স্তর, যা বস্তুটি তার মহাকর্ষ শক্তি দ্বারা ধরে রাখে। বস্তুর মহাকর্ষ যদি যথেষ্ট বেশি হয় এবং বায়ুমণ্ডলের তাপমাত্রা যদি কম থাকে তাহলে এই বায়ুমণ্ডল অনেকদিন টিকে থাকতে পারে।

  • পৃথিবির চারিদিকে বাতাসের যে ঘন স্তর তাকে পৃথিবীর বায়ুমণ্ডল বলে।
  • ভূ-পৃষ্ঠ ও তার আশেপাশে যে বায়বীয় মণ্ডল আবর্তিত আছে তাকে বায়ুমণ্ডল বলে।
  • পৃথিবীর বায়ুমণ্ডল বলতে পৃথিবীর চারপাশে ঘিরে থাকা বিভিন্ন গ্যাস মিশ্রিত স্তরকে বোঝায়, যা পৃথিবী তার মধ্যাকর্ষণ শক্তি দ্বারা ধরে রাখে। একে আবহমণ্ডল-ও বলা হয়। এটি সূর্য থেকে আগত অতিবেগুনি রশ্মি শোষণ করে পৃথিবীতে জীবের অস্তিত্ব রক্ষা করে।

বায়ুমণ্ডলের স্তরসমূহ

বায়ুমণ্ডল নানাপ্রকার গ্যাসীয় উপাদান, জলীয়বাষ্প, ধূলিকণা ও কনিকা দ্বারা গঠিত। এই সকল গঠনকারী উপাদানের নানা বৈশিষ্ট্য লক্ষ্য করা যায়। মূলত বায়ুমণ্ডলের গঠনকারী উপাদানসমূহের প্রকৃতি, উষ্ণতার পার্থক্য অর্থাৎ অন্যান্য সকল বৈশিষ্ট্যের তারতম্যের জন্য বায়ুমণ্ডলকে নানা স্তরে ভাগ করা যায়।

বায়ুমণ্ডলের স্তর

মূলত ভূ-পৃষ্ঠ হতে উপরের দিকে বায়ুমণ্ডলের মোট পাঁচটি স্তর বা পর্যায়ে রয়েছে। বায়ুমণ্ডলের এই ৫ টি স্তর হলো—

  1. ট্রপোমণ্ডল
  2. স্ট্রাটোমণ্ডল
  3. মেসোমণ্ডল
  4. তাপমণ্ডল
  5. এক্সোমণ্ডল

বায়ুমণ্ডলের উপর্যুক্ত ৫ টি স্তরকে প্রধানত দুইটি স্তরে ভাগ করা হয়—

যথা—

  1. সমমণ্ডল বা হোমোস্ফিয়ার (Homosphere)
  2. বিষমমণ্ডল বা হেটেরোস্ফিয়ার (Heterosphere)

সমমণ্ডল ও বিষমমণ্ডল

সমমণ্ডল (Homosphere)

সমমণ্ডল বা হোমোস্ফিয়ার এর বৈশিষ্ট্য হলো যে এই মণ্ডলে ভূ-পৃষ্ঠ হতে প্রায় ৮০ কিলোমিটার পর্যন্ত বায়ুস্তরে বিভিন্ন গ্যাসের অনুপাত প্রায় সমান থাকে। এই সমমণ্ডলের মধ্যেই বায়ুমণ্ডলের প্রথম তিনটি স্তর অর্থাৎ ট্রপোমণ্ডল, স্ট্রাটোমণ্ডল ও মেসোমণ্ডল অন্তর্ভুক্ত।

বিষমমণ্ডল (Heterosphere)

বিষমমণ্ডলের মধ্যে বায়ুমণ্ডলের বাকি দুইটি স্তর অন্তর্ভুক্ত। এ স্তর দুটি হলো তাপমণ্ডল ও এক্সোমণ্ডল। মূলত এই মণ্ডলটি সমমণ্ডলের উপরে অবস্থিত। সমমণ্ডলের উপরের স্তরে বিভিন্ন গ্যাসের অনুপাত অসমান থাকে বলেই একে বিষমমণ্ডল বলা হয়। বিষমমণ্ডল প্রায় ১০,০০০ কিলোমিটার পর্যন্ত বিস্তৃত।

ট্রপোমণ্ডল (Troposphere)

বায়ুমণ্ডলের যে স্তরটি ভূ-ত্বকের সব থেকে নিচের স্তরে অবস্থিত সেটি হলো ট্রপোমণ্ডল বা ট্রপোস্ফিয়ার (Troposphere)। অর্থাৎ, বায়ুমণ্ডলের প্রথম স্তর হলো ট্রপোমণ্ডল এই স্তরে বায়ুপ্রবাহ, ঝড়, মেঘ, বৃষ্টি, কুয়াশা, তুষারপাত, শিশির ইত্যাদির সৃষ্টি হয়। ট্রপোমণ্ডলের শেষ প্রান্তের অংশের নাম ট্রপোবিরতি বা ট্রপোপজ (Tropopause)।

ট্রপোবিরতি এলাকায় তাপমাত্রা ৫৪০ সেলসিয়াসের নিচে থাকে। ট্রপোমণ্ডলের গভীরতা পৃথিবীর চারিদিকে সবসময় সমান থাকে না। ভিন্ন ভিন্ন অক্ষাংশে ও ঋতুভেদে এই গভীরতার পার্থক্য হয়। ট্রপোমণ্ডলের বৈশিষ্ট্যগুলো এখানে তুলে ধরা হলো—

ট্রপোমণ্ডলের বৈশিষ্ট্য

  • ট্রপোমণ্ডল ভূ-পৃষ্ঠ হতে নিরক্ষীয় অঞ্চলে প্রায় ১৬-১৯ কিলোমিটার এবং মেরূ অঞ্চলে প্রায় ৮ কিলোমিটার পর্যন্ত বিস্তৃত।
  • ট্রপোস্ফিয়ারের উর্ধ্বসীমাকে ট্রপোপজ বলে যার গভীরতা অনেক কম।
  • ট্রপোমণ্ডল স্তরে উচ্চতা যত বাড়তে থাকে বায়ুর ঘনত্ব ও উষ্ণতা ততই কমতে থাকে। এই উচ্চতা বৃদ্ধির সাথে তাপ কমে যাওয়ার প্রবনতাকে বলা হয় স্বাভাবিক তাপ হ্রাস।
  • ট্রপোমণ্ডলে সাধারণত প্রতি ১,০০০ মিটার উচ্চতায় ৬০ সেলসিয়াস তাপমাত্রা কমে যায়।
  • ট্রপোমণ্ডলের উচ্চতা বৃদ্ধির ফলে বাতাসের গতিবেগ বেড়ে যায় ও নিচের দিকের বাতাসে জলীয়বাষ্পের উপস্থিতি বেশি পাওয়া যায়।
  • ট্রপোমণ্ডল স্তরে আবহাওয়া ও জলবায়ুজনিত সকল প্রক্রিয়া সাধারণত ঘটে।
  • ট্রপোমণ্ডলে ধূলিকণা থাকে এবং বায়ুমণ্ডলের ওজোনের শতকরা ৭৫ ভাগ এই স্তর বহন করে।

স্ট্রাটোমণ্ডল (Stratosphere)

বায়ুমণ্ডলের দ্বিতীয় স্তর হলো স্ট্রাটোমণ্ডল বা স্ট্রাটোস্ফিয়ার (Stratosphere)। স্ট্রাটোমণ্ডল উর্ধ্বে ৫০ কিলোমিটার পর্যন্ত বিস্তৃত।

স্ট্রাটোমণ্ডল হলো জলীয়বাষ্পবিহীন স্তর। স্ট্রাটোমণ্ডল ও মেসোমণ্ডলের মধ্যবর্তী অঞ্চলে তাপমাত্রার স্থিতাবস্থাকে বলা হয় স্ট্রাটোবিরতি বা স্ট্রাটোপস (Stratopause)।

স্ট্রাটোমণ্ডলের বৈশিষ্ট্য

এ স্তরের বৈশিষ্ট্যগুলো নিম্নরূপ—

  • স্ট্রাটোমণ্ডলে বায়ুর ঘনত্ব ও চাপ অনেক কম।
  • স্ট্রাটোমণ্ডল স্তরে ওজোন (O3) গ্যাসের পরিমাণ বেশি থাকে, তাই সূর্য হতে আগত অতিবেগুনী রশ্মি এই ওজোন স্তর শুষে নেয়।
  • স্ট্রাটোমণ্ডল স্তরের নিম্নে উষ্ণতার তেমন পরিবর্তন না হলেও ১০ কিলোমিটার থেকে ধীরে ধীরে উষ্ণতা বাড়তে বা ওজোনোস্ফিয়ার থাকে। এই উষ্ণতা বৃদ্ধি উচ্চ স্ট্রাটোমণ্ডলে ৫০ কিলোমিটার পর্যন্ত অব্যাহত থাকে।
  • পৃথিবীতে প্রাণিজগতের বসবাসের উপকারী পরিবেশ তৈরিতে স্ট্রাটোমণ্ডল স্তরের ভূমিকা রয়েছে।
  • স্ট্রাটোমণ্ডল স্তরেই সূর্যের ক্ষতিকর অতিবেগুনী রশ্মি শোষণ করে নেওয়া হয়।
  • স্ট্রাটোমণ্ডলে ধূলিকণার পরিমাণ নগন্য এবং মেঘ দেখাই যায় না।
  • স্ট্রাটোমণ্ডল স্তরে আবহাওয়া শুষ্ক ও শান্ত থাকে। সাধারণত জেট বিমানগুলো এই স্তর দিয়ে চলাফেরা করতে পারে কারণ ঝড়-বৃষ্টি থাকে না।
  • প্রায় ৫০ কিলোমিটার উচ্চতায় তাপমাত্রা ধীরে ধীরে কমে যেতে থাকে এবং তা স্ট্রাটোমণ্ডলের শেষ প্রান্ত পর্যন্তপৌছায়।

মেসোমণ্ডল (Mesosphere)

স্ট্রাটোবিরতির উপরে প্রায় ৮০ কিলোমিটার পর্যন্ত যে স্তর রয়েছে তাকে মেসোমণ্ডল বা মেসোস্ফিয়ার বলে। স্ট্রাটো মণ্ডলের প্রায় ৮০ কিলোমিটার পর্যন্ত উষ্ণতা দ্রূত কমতে থাকে। ৮০ কিলোমিটারের পরে উষ্ণতা বৃদ্ধি পাওয়া শুরূ করে এবং এই অংশকে বলে মেসোপস বা মেসোবিরতি (Mesopause)।

মেসোমণ্ডলে বৈশিষ্ট্যসমূহ

মেসোমণ্ডলের বৈশিষ্ট্যগুলো তুলে ধরা হলো—

  • মেসোমণ্ডলের উর্ধ্বসীমায় বায়ুর তাপমাত্রা প্রায় ৬৫.৫ সেলসিয়াস।
  • মেসোমণ্ডলে বায়ুচাপ খুব কম।
  • মেসোমণ্ডল বায়ুমণ্ডলের সবচেয়ে শীতলতম তাপমাত্রা ধারন করে।
  • সাধারণত যে সব উল্কা মহাকাশ থেকে পৃথিবীর দিকে ছুটে আসে সেগুলো এই স্তরে এসে পড়ে যায়। উল্কাপতন এলাকাটি ভূ-পৃষ্ঠ থেকে উপরের দিকে প্রায় ৫০০ কিলোমিটার পর্যন্ত বিস্তৃত।

তাপমণ্ডল (Thermosphere)

মেসোবিরতির উপরে প্রায় ৫০০ কিলোমিটার পর্যন্ত বিস্তৃত বায়ুস্তরকে বলে তাপমণ্ডল বা থার্মোস্ফিয়ার (Thermosphere)। তাপমণ্ডলকে আয়নমণ্ডল বা আয়নোস্ফিয়ার বলা হয়। তাপমণ্ডল বা আয়নমণ্ডলে বেতার তরঙ্গ প্রতিফলিত হয়।

তাপমণ্ডলের বৈশিষ্ট্য

তাপমণ্ডলের বৈশিষ্ট্য নিম্নে তুলে ধরা হলো-

  • তাপমণ্ডলের বায়ু খুব হালকা এবং এখানে তাপের পরিবহনও নগণ্য।
  • তীব্র সৌর বিকিরনে রঞ্জন রশ্মি ও অতিবেগুনী রশ্মির সংঘাতে এই অংশে বায়ু আয়নযুক্ত হয়। এই জন্য একে আয়নমণ্ডল বা আয়নোস্ফিয়ার বলা হয়।
  • পৃথিবীপৃষ্ঠ থেকে যে বেতার তরঙ্গ পাঠানো হয় তা এই স্তরের মধ্য দিয়ে প্রতিফলিত হয়ে আবার পৃথিবীতে ফিরে আসে।
  • তাপমণ্ডলের স্তরে বায়ুমণ্ডলের তাপমাত্রা অত্যন্ত দ্রূত হারে বৃদ্ধি পেয়ে ১৪৮০০ সেলসিয়াসে এসে পোঁছায়।

এক্সোমণ্ডল (Exosphere)

এক্সোমণ্ডল বা এক্সোস্ফিয়ার বায়ুমণ্ডলের এমনই একটি স্তর যার অবস্থান পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলের বাইরের স্তরে। থার্মোস্ফিয়ার বা তাপমণ্ডলের উপরে প্রায় ৯৬০ কিলোমিটার পর্যন্ত এই এক্সোমণ্ডলের বিস্তার। এই স্তরের তাপমাত্রা প্রায় ৩০০০ সেলসিয়াস থেকে ১৬৫০০

সেলসিয়াস পর্যন্ত হয়।

এক্সোমণ্ডল হলো পৃথিবীর বাইরের বায়ুমণ্ডল।

এক্সোমণ্ডলের বৈশিষ্ট্য 

এক্সোমণ্ডলের বৈশিষ্ট্যগুলো নিম্নরূপ—

  • এক্সোমণ্ডলের পরই বিষমমণ্ডল শুরূ হয়।
  • আয়নমণ্ডলের বহিঃসীমাই হলো এক্সোমণ্ডল যেখানে হাইড্রোজেন গ্যাসের উপস্থিতি বেশি পাওয়া যায়।
  • এক্সোমণ্ডলের মধ্যে বিভিন্ন গ্যাসীয় উপাদান যেমন— খুব সামান্য পরিমানে আর্গন, হিলিয়াম, অক্সিজেন, নাইট্রোজেন পাওয়া যায়।
  • এক্সোমণ্ডলে মাধ্যাকর্ষণের ঘাটতির কারণে গ্যাস অণু বা কণাগুলো সহজে মহাকাশে ছড়িয়ে পড়ে।

বায়ুমণ্ডলের গুরূত্ব

সৌরজগতের সব থেকে আদর্শ ও বাসযোগ্য গ্রহ হলো পৃথিবী এবং বায়ুমণ্ডল এই গ্রহে জীবজগতের বেঁচে থাকার জন্য সবচেয়ে গুরূত্বপূর্ণ অঞ্চল। বায়ুমণ্ডলের বিভিন্ন স্তরে নানা রকম গ্যাসীয় উপাদান, জলীয়বাষ্প ও ধূলিকণার উপস্থিতির জন্য স্তরভেদে নানা পার্থক্য দেখা যায়।

বায়ুমণ্ডলের গুরূত্বসমূহ এখানে আলোচনা করা হলো—

  • বায়ুমণ্ডল প্রধানত উদ্ভিদ ও প্রাণিকূলের জীবন রক্ষায় গুরূত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। সূর্যের ক্ষতিকর রশ্মি শুষে নিয়ে এবং এর বিভিন্ন গ্যাসীয় উপাদান যেমন-অক্সিজেন ও কার্বন ডাই-অক্সাইড উদ্ভিদ ও প্রাণিকে বাঁচিয়ে রাখতে সাহায্য করে।
  • বায়ুমণ্ডলে জলীয়বাষ্প আছে বলেই মেঘ সৃষ্টি হতে পারে। ফলে বৃষ্টি হয় এবং জীবজগৎ রক্ষা পায়।
  • মানুষ তার নানা প্রয়োজনে প্রকৃতিকে ব্যবহার করতে গিয়ে পরিবেশের ক্ষতি করছে। যেমন— প্রচুর পরিমানে গাছ-পালা ও বন-জঙ্গল নিধন, প্রাকৃতিক গ্যাস, কয়লা ইত্যাদি পোড়ানো এবং তা থেকে নির্গত কালো ধোঁয়া, যানবাহনের কালো ধোঁয়া ও বিষাক্ত গ্যাস বায়ুমণ্ডলের জন্য ক্ষতিকর। তাই প্রাকৃতিক পরিবেশ অর্থাৎ জীবজগতের বেঁচে থাকার জন্য বায়ুমণ্ডলের বিশুদ্ধতা বজায় রাখা জরুরি।
  • বায়ুমণ্ডলকে বিশুদ্ধ না রাখলে উদ্ভিদ ও প্রাণির জীবন বিপর্যস্ত হবে এবং সেই সাথে ভবিষ্যতের প্রাকৃতিক পরিবেশ হুমকির সম্মুখীন হবে।
  • বায়ুর নানা গ্যাসীয় উপাদান যেমন— কার্বন ডাই-অক্সাইড এর সাহায্যে উদ্ভিদ খাদ্য প্রস্তুত করে, জলীয়বাষ্প নিয়ন্ত্রণ করে। এছাড়াও চুনা জাতীয় খনিজ পদার্থ গঠন ও পৃথিবীতে তাপের বণ্টন ও প্রতিফলনের ক্ষেেত্র গুরূত্বপূর্ণ অবদান রাখে।
  • বায়ুমণ্ডল না থাকলে কোনো শব্দতরঙ্গ স্থানান্তরিত হয় না। কারণ পৃথিবী হতে পাঠানো বেতার তরঙ্গ আয়নমণ্ডলে বাধাপ্রাপ্ত হয়ে ফিরে আসে।
  • বায়ুমণ্ডলের নানা স্তরে বায়ুর চাপের পার্থক্য দেখা যায়। তাই বায়ুমণ্ডলে বায়ুর ওজন ও চাপ এর ভারসাম্য সঠিক না হলে আমরা চলাফেরা করা বা দাঁড়াতে পারতাম না।
  • বায়ুমণ্ডলের মধ্যে ওজোন স্তর আছে বলে সূর্য হতে আগত অতিবেগুনী রশ্মির হাত হতে পৃথিবীর জীবজগৎ রক্ষা পায়।
  • বায়ুমণ্ডলের স্তরে উল্কাপিন্ড বিদ্ধস্ত না হলে তা সরাসরি পৃথিবীতে আঘাত হানতো।
  • বায়ুমণ্ডল মূলত একটি তাপনিরোধক আবরণ যা জীবজগৎকে সৌরতাপ শক্তি হতে রক্ষা করে।
  • বায়ুমণ্ডলে নাইট্রোজেনের মাত্রা বেশি থাকায় এর দ্বারা উদ্ভিদজগৎ প্রোটিন জাতীয় খাদ্য প্রস্তুত করে এবং জীবজগৎ ঐ উদ্ভিদ থেকে প্রয়োজনীয় প্রোটিন গ্রহণ করতে পারে।
  • ট্রপোমণ্ডল না থাকলে আবহাওয়া সৃষ্টি হতো না এবং মেঘ-বৃষ্টি, তুষার, কুয়াশা ইত্যাদি না থাকলে শস্য ও বনভূমির জন্য বৃষ্টিপাত পাওয়া যেত না।

সারসংক্ষেপ

বায়ুমণ্ডলের গঠনকারী উপাদানসমূহের প্রকৃতি, উষ্ণতার পার্থক্য ও অন্যান্য গ্যাসীয় উপাদানের তারতম্যের জন্য বায়ুমণ্ডলকে ৫ টি স্তরে ভাগ করা যায়। ভূ-পৃষ্ঠ হতে উপরের দিকে পর্যায়ক্রমে এই পাঁচটি স্তর হলো- ট্রপোমণ্ডল, স্ট্রাটোমণ্ডল,মেসোমণ্ডল, তাপমণ্ডল ও এক্সোমণ্ডল। ভূ-পৃষ্ঠ হতে ৮০ কিলোমিটারর মধ্যে সমমণ্ডল অবস্থিত যা তিনটি স্তর অর্থাৎ ট্রপোমণ্ডল, স্ট্রাটোমণ্ডল ও মেসোমণ্ডল নিয়ে গঠিত। বিষমমণ্ডল প্রায় ১০,০০০ কিলোমিটার পর্যন্ত বিস্তৃত যা ২টি স্তর নিয়ে গঠিত। এগুলো হলো- তাপমণ্ডল ও এক্সোমণ্ডল। ট্রপোমণ্ডল এমন একটি স্তর যেখানে বৃষ্টি, মেঘ, তুষার, শিশির, ঝড় ইত্যাদি আবহাওয়াজনিত প্রভাব লক্ষ্য করা যায়।