০৯:৩১ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
                       

সুইডেন ও ফিনল্যান্ডের ন্যাটোতে যোগ দেওয়ার সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত; ভেটো দিয়ে কী পেয়েছে তুরস্ক এবং রাশিয়ার পরবর্তী পদক্ষেপ কী হতে পারে?

মো. আসাদুল আমীন
  • প্রকাশ: ১১:৪৯:২৭ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ৫ জুলাই ২০২২
  • / ৬৬৬ বার পড়া হয়েছে

নর্থ আটলান্টিক ট্রিটি অরগানাইশন (নেটো) এর লোগো

সামরিক জোট ন্যাটোতে ফিনল্যান্ড (Finland) এবং সুইডেনের (Sweden) যোগদানের বিষয়ে সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করা হয় সম্মেলনে। এর আগে ন্যাটোতে যোগদানের বিষয়ে তুরস্ক ভেটো দিয়েছিল এবং তুরস্কের (Türkiye) ভেটো ক্ষমতা রয়েছে কারণ তুরস্ক ন্যাটোর সদস্য। আর ন্যাটোতে নতুন কোন দেশ যুক্ত করতে হলে ন্যাটোভুক্ত দেশগুলোর সমর্থন দরকার হয়। কিন্তু চলমান ন্যাটো সম্মেলনে এ সমস্যার সমাধান হয় এবং ন্যাটোতে যোগদানে সুইডেন এবং ফিনল্যান্ডের আর কোন বাধা থাকলো না। এ বছরের ন্যাটোর সম্মেলন হচ্ছে মাদ্রিদে যা গত ২৮ জুন শুরু হয় এবং ৩০ জুন পর্যন্ত চলে।

ন্যাটো (NATO) কী?

NATO-এর পূর্ণরূপ হলো North Atlantic Treaty Organization অর্থাৎ উত্তর আটলান্টিক চুক্তি প্রতিষ্ঠান যা একটি সামরিক জোট। এই সামরিক জোট প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯৪৯ সালের ৪ এপ্রিল এবং এর সদরদপ্তর বেলজিয়ামের ব্রাসেলসে। বর্তমানে ন্যাটোভুক্ত দেশের সংখ্যা বা ন্যাটোর সদস্য রাষ্ট্র ৩০ টি। 

কেন ন্যাটো প্রতিষ্ঠিত হয় বা এদের কাজ কী?

ন্যাটো প্রতিষ্ঠিত হওয়ার সময় যৌথ নিরাপত্তা চুক্তি হয় যেখানে পারস্পরিক সহযোগিতা প্রদানে অঙ্গীকারবদ্ধ ন্যাটোভুক্ত সদস্য দেশগুলো। ন্যাটোর সাথে রয়েছে এমন প্রত্যেকটি সদস্য রাষ্ট্র তাদের সামরিক বাহিনীকে যে কোনো পরিস্থিতি মোকাবেলায় প্রস্তুত রাখতে বদ্ধপরিকর।

কেন সুইডেন ও ফিনল্যান্ড ন্যাটোতে যোগ দেওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করে? 

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ চলমান যা ঘটছে মূলত ইউক্রেনের (Ukraine) ন্যাটোতে যুক্ত হওয়া নিয়ে। কিন্তু এই যুদ্ধের মধ্যেই ফিনল্যান্ড এবং সুইডেন ন্যাটোতে যোগদানের আগ্রহ প্রকাশ করে যদিও এর আগে ন্যাটোতে যোগ দেবে না বা যোগ দেওয়ার বিষয়ে আগ্রহী ছিল না উত্তর ইউরোপের এই দেশ দুটির।

রাশিয়া (Russia) বিভিন্ন সময়ে ইউক্রেনকে ভয়ভীতি দেখিয়েছে কিন্তু শেষ পর্যন্ত আক্রমনও করেছে এবং বর্তমানে যুদ্ধ চলমান তাই ফিনল্যান্ড এবং সুইডেনও তাদের নিরাপত্তা নিয়ে সাম্প্রতিক সময়ে খুব চিন্তিত বিশেষকরে ইউক্রেনে রাশিয়ার আক্রমনের পরে। তাছাড়া, ২০১৪ সালে রাশিয়ার বিমান বাহিনী সুইডেনের আকাশসীমায় প্রবেশ করেছিল এবং নানা হুমকি ধামকি দিয়ে থাকে বিভিন্ন সময়ে ফিনল্যান্ড এবং সুইডেনকে, তাই এই দেশ দুটি ন্যাটোতে যুক্ত হতে চায় যাতে করে তারা সহযোগিতা পায় এবং তাদের নিরাপত্তা নিয়ে সংশয় কমে যায়।

ন্যাটোতে যোগ দেওয়া নিয়ে তুরস্কের আপত্তি ছিল কেন?

ফিনল্যান্ড এবং সুইডেন ন্যাটোতে যোগ দেওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করলে ফিনল্যান্ডে রাশিয়ার সরবরাহ করা বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দিতে দেখা যায়। তবে এই দুই দেশের ন্যাটোতে যোগ দেওয়ার ক্ষেত্রে বড়ো সমস্যা ছিল তুরস্কের আপত্তি। তুরস্কের প্রসিডেন্ট এরদোয়ান সুইডেন এবং ফিনল্যান্ডের ন্যাটো সামরিক জোটে যোগদানে আপত্তি এবং ভেটো প্রদান করে। ন্যাটোভুক্ত অন্য দেশগুলোর সমর্থন ছিল কিন্তু তুরস্ক এখানে বাধা দেয়। কারণ যদি এই দুই দেশ ন্যাটোতে যোগ দেয় তাহলে তা তুরস্কের নিরাপত্তার জন্য হুমকি মনে করে তুরস্ক।

তুরস্কে বসবাসকারী কুর্দিদের উপর সুইডেন এবং ফিনল্যান্ডের সমর্থন রয়েছে। কুর্দিরা একটি স্বাধীন রাষ্ট্র দাবি করে এবং বিভিন্ন সামরিক অভিযান, ধর্মঘট করে যেখানে সুইডেন এবং ফিনল্যান্ডের সমর্থন রয়েছে বলে তুরস্ক মনে করা হয়। পুরো স্ক্যান্ডিনেভিয়ান অঞ্চল সন্ত্রাসী সংগঠনগুলোর অতিথিশালা। এ অবস্থায় সুইডেন এবং ফিনল্যান্ড যদি সন্ত্রাসী সংগঠনগুলোর বিষয়ে অবস্থান পরিষ্কার না করে তবে তুরস্ক ন্যাটোতে যোগদানে সমর্থন করবে না এমনটি বলা হয়। নিষিদ্ধ কুর্দিস্তান ওয়ার্কার্স পার্টি বা পিকেকে, বামপন্থি, চরমপন্থি গোষ্ঠী ডিএইচকেপি-সি ও যুক্তরাষ্ট্রে স্বেচ্ছা নির্বাসিত ধর্মীয় নেতা ফেতুল্লাহ গুলেনের অনুসারীদের সমর্থন করে আসছে সুইডেন ও ফিনল্যান্ড।

২০১৬ সালে তুরস্কে এরদোয়ানের বিরুদ্ধে ব্যর্থ সামরিক অভ্যুত্থানের পিছনে ছিলেন নেতা ফেতুল্লাহ। এছাড়া, ২০১৯ সালে সিরিয়ার উত্তরাঞ্চলে তুরস্কের সামরিক অভিযানের পর ইইউ সদস্য দেশগুলো তুরস্কের বিরুদ্ধে অস্ত্র নিষেধাজ্ঞা দেয়। সেই তালিকায় সুইডেন-ফিনল্যান্ডও ছিল। তাই তুরস্ক এই নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার এবং কুর্দিস্তান ওয়ার্কার্স পার্টিকে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে অ্যাখ্যা দিতে দাবি করে। এর আগে ১৯৮০ সালে তুরস্ক ন্যাটোতে গ্রিসকে অন্তর্ভুক্ত করতে সম্মত হয় এবং পরে ন্যাটোর সহযোগিতা নিয়ে তুরস্কবিরোধী হয় গ্রিস এবং সে ধরনের ভুল তুরস্ক করতে চান না।

ফিনল্যান্ড ও সুইডেনকে অফিসিয়ালি আমন্ত্রণ জানিয়েছে ন্যাটো (NATO)

ফিনল্যান্ড ও সুইডেনকে ন্যাটোতে যোগ দেওয়ার সম্মতি দেওয়ায় কী পেয়েছে তুরস্ক?

তুরস্ক তার যে দাবি দাওয়া ছিল তা ন্যাটো সম্মেলনের মধ্যে দিয়ে ফিরে পেলো এবং চূড়ান্ত হলো সুইডেন এবং ফিনল্যান্ডের ন্যাটোতে যুক্ত হওয়া। তুরস্কের কুর্দিদের সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে স্বীকৃতি দেবে সুইডেন এবং ফিনল্যান্ড সহ ন্যাটোভুক্ত দেশগুলো। এছাড়া সিরিয়া যুদ্ধের সময় দেওয়া অস্ত্র নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করা হবে। এর ফলে তুরস্ক তার দাবি-দাওয়া পূরণে সক্ষম হলো।

রাশিয়ার পরবর্তী পদক্ষেপ কী হতে পারে? 

রাশিয়া ইউক্রেনে হামলা চালালেও সুইডেন এবং ফিনল্যান্ডে হামলা চালানোর বিষয়ে ভাববে। আর ইউক্রেন ছিল সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়ন ভুক্ত রাষ্ট্র এবং ইউক্রেনের সাথে রাশিয়ার রয়েছে অনেক বড়ো সীমান্ত যা ফিনল্যান্ডের তুলনায় বেশি। তাই সুইডেন বা ফিনল্যান্ডে হয়তো আক্রমন করবে না। তবে পুতিন ইতোমধ্যে ঘোষণা দিয়েছেন যদি ন্যাটোর সেনা মোতায়েন করা হয় এই দুই দেশে এবং সামরিক শক্তি বৃদ্ধি করা বা কোন সেনা ঘাঁটি তৈরি করা হয় তাহলে রাশিয়া তার জবাব দেবে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ইতোমধ্যে ইউক্রেনে রাশিয়াকে যুদ্ধের মধ্যে রেখেছে এবং ইউক্রেনে যেভাবে রাশিয়া হামলা করছে ঠিক তেমনি কম হলেও রাশিয়া পাল্টা আক্রমণের স্বীকার হচ্ছেন। আর এখানে পশ্চিমারা ইউক্রেনকে সহযোগিতা করে যাচ্ছে যদিও সরাসরি যুদ্ধে জড়ায়নি। এতে রাশিয়ার অর্থনীতি যে ক্ষতিগ্রস্ত হবে তা নিশ্চিত।

করোনাভাইরাস মহামারী পরবর্তী সময়ে এর প্রভাব এবং রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ রাশিয়ার অর্থনৈতিক ক্ষয়ক্ষতি এবং অর্থনীতিকে বাধাগ্রস্ত করবে। এর মধ্যে সুইডেন এবং ফিনল্যান্ডকে ন্যাটোতে যুক্ত করা নিয়ে যদি রাশিয়া কোনভাবে যুদ্ধ জড়িয়ে যায় তবে তা পশ্চিমাদের পাতা আরেকটি ফাঁদে রাশিয়া পা দেবে এমনটাও হতে পারে। তবে ইউক্রেনের মতো এখানে রাশিয়ার ততটা সমস্যা নেই। কারণ ইউক্রেনের সাথে দীর্ঘ সীমান্তের পাশাপাশি কৃষ্ণসাগরের মাধ্যমে রাশিয়া তাদের ব্যবসা-বাণিজ্য করে থাকে বিভিন্ন বন্দর ব্যবহারের মাধ্যমে।

ইউক্রেনকে ন্যাটোতে যুক্ত করার মধ্যে দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সাথে ইউক্রেনের সম্পর্ক বৃদ্ধি এবং এখানে এসে আমেরিকা রাশিয়ার বাণিজ্যিক বিষয়ে প্রভাব ফেলতে পারে। তাই ইউক্রেনকে ন্যাটোতে যুক্ত হওয়ার ক্ষেত্রে রাশিয়া আক্রমণের পথ বেছে নিয়েছে। এছাড়া, ইউক্রেনের একটা গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চল ক্রিমিয়া ২০১৪ সালে রাশিয়া ক্রিমিয়া (Crimea) যুদ্ধে জড়িয়ে দখল করে নেয়। যার জন্য জি-৭ জোট থেকে বের করে দেওয়া হয় রাশিয়াকে।

শেয়ার করুন

মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার তথ্য সংরক্ষিত রাখুন

লেখকতথ্য

মো. আসাদুল আমীন

শিক্ষার্থী, অর্থনীতি বিভাগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়

ওয়েবসাইটটির সার্বিক উন্নতির জন্য বাংলাদেশের বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানসমূহের মধ্য থেকে স্পনসর খোঁজা হচ্ছে।

সুইডেন ও ফিনল্যান্ডের ন্যাটোতে যোগ দেওয়ার সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত; ভেটো দিয়ে কী পেয়েছে তুরস্ক এবং রাশিয়ার পরবর্তী পদক্ষেপ কী হতে পারে?

প্রকাশ: ১১:৪৯:২৭ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ৫ জুলাই ২০২২

সামরিক জোট ন্যাটোতে ফিনল্যান্ড (Finland) এবং সুইডেনের (Sweden) যোগদানের বিষয়ে সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করা হয় সম্মেলনে। এর আগে ন্যাটোতে যোগদানের বিষয়ে তুরস্ক ভেটো দিয়েছিল এবং তুরস্কের (Türkiye) ভেটো ক্ষমতা রয়েছে কারণ তুরস্ক ন্যাটোর সদস্য। আর ন্যাটোতে নতুন কোন দেশ যুক্ত করতে হলে ন্যাটোভুক্ত দেশগুলোর সমর্থন দরকার হয়। কিন্তু চলমান ন্যাটো সম্মেলনে এ সমস্যার সমাধান হয় এবং ন্যাটোতে যোগদানে সুইডেন এবং ফিনল্যান্ডের আর কোন বাধা থাকলো না। এ বছরের ন্যাটোর সম্মেলন হচ্ছে মাদ্রিদে যা গত ২৮ জুন শুরু হয় এবং ৩০ জুন পর্যন্ত চলে।

ন্যাটো (NATO) কী?

NATO-এর পূর্ণরূপ হলো North Atlantic Treaty Organization অর্থাৎ উত্তর আটলান্টিক চুক্তি প্রতিষ্ঠান যা একটি সামরিক জোট। এই সামরিক জোট প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯৪৯ সালের ৪ এপ্রিল এবং এর সদরদপ্তর বেলজিয়ামের ব্রাসেলসে। বর্তমানে ন্যাটোভুক্ত দেশের সংখ্যা বা ন্যাটোর সদস্য রাষ্ট্র ৩০ টি। 

কেন ন্যাটো প্রতিষ্ঠিত হয় বা এদের কাজ কী?

ন্যাটো প্রতিষ্ঠিত হওয়ার সময় যৌথ নিরাপত্তা চুক্তি হয় যেখানে পারস্পরিক সহযোগিতা প্রদানে অঙ্গীকারবদ্ধ ন্যাটোভুক্ত সদস্য দেশগুলো। ন্যাটোর সাথে রয়েছে এমন প্রত্যেকটি সদস্য রাষ্ট্র তাদের সামরিক বাহিনীকে যে কোনো পরিস্থিতি মোকাবেলায় প্রস্তুত রাখতে বদ্ধপরিকর।

কেন সুইডেন ও ফিনল্যান্ড ন্যাটোতে যোগ দেওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করে? 

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ চলমান যা ঘটছে মূলত ইউক্রেনের (Ukraine) ন্যাটোতে যুক্ত হওয়া নিয়ে। কিন্তু এই যুদ্ধের মধ্যেই ফিনল্যান্ড এবং সুইডেন ন্যাটোতে যোগদানের আগ্রহ প্রকাশ করে যদিও এর আগে ন্যাটোতে যোগ দেবে না বা যোগ দেওয়ার বিষয়ে আগ্রহী ছিল না উত্তর ইউরোপের এই দেশ দুটির।

রাশিয়া (Russia) বিভিন্ন সময়ে ইউক্রেনকে ভয়ভীতি দেখিয়েছে কিন্তু শেষ পর্যন্ত আক্রমনও করেছে এবং বর্তমানে যুদ্ধ চলমান তাই ফিনল্যান্ড এবং সুইডেনও তাদের নিরাপত্তা নিয়ে সাম্প্রতিক সময়ে খুব চিন্তিত বিশেষকরে ইউক্রেনে রাশিয়ার আক্রমনের পরে। তাছাড়া, ২০১৪ সালে রাশিয়ার বিমান বাহিনী সুইডেনের আকাশসীমায় প্রবেশ করেছিল এবং নানা হুমকি ধামকি দিয়ে থাকে বিভিন্ন সময়ে ফিনল্যান্ড এবং সুইডেনকে, তাই এই দেশ দুটি ন্যাটোতে যুক্ত হতে চায় যাতে করে তারা সহযোগিতা পায় এবং তাদের নিরাপত্তা নিয়ে সংশয় কমে যায়।

ন্যাটোতে যোগ দেওয়া নিয়ে তুরস্কের আপত্তি ছিল কেন?

ফিনল্যান্ড এবং সুইডেন ন্যাটোতে যোগ দেওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করলে ফিনল্যান্ডে রাশিয়ার সরবরাহ করা বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দিতে দেখা যায়। তবে এই দুই দেশের ন্যাটোতে যোগ দেওয়ার ক্ষেত্রে বড়ো সমস্যা ছিল তুরস্কের আপত্তি। তুরস্কের প্রসিডেন্ট এরদোয়ান সুইডেন এবং ফিনল্যান্ডের ন্যাটো সামরিক জোটে যোগদানে আপত্তি এবং ভেটো প্রদান করে। ন্যাটোভুক্ত অন্য দেশগুলোর সমর্থন ছিল কিন্তু তুরস্ক এখানে বাধা দেয়। কারণ যদি এই দুই দেশ ন্যাটোতে যোগ দেয় তাহলে তা তুরস্কের নিরাপত্তার জন্য হুমকি মনে করে তুরস্ক।

তুরস্কে বসবাসকারী কুর্দিদের উপর সুইডেন এবং ফিনল্যান্ডের সমর্থন রয়েছে। কুর্দিরা একটি স্বাধীন রাষ্ট্র দাবি করে এবং বিভিন্ন সামরিক অভিযান, ধর্মঘট করে যেখানে সুইডেন এবং ফিনল্যান্ডের সমর্থন রয়েছে বলে তুরস্ক মনে করা হয়। পুরো স্ক্যান্ডিনেভিয়ান অঞ্চল সন্ত্রাসী সংগঠনগুলোর অতিথিশালা। এ অবস্থায় সুইডেন এবং ফিনল্যান্ড যদি সন্ত্রাসী সংগঠনগুলোর বিষয়ে অবস্থান পরিষ্কার না করে তবে তুরস্ক ন্যাটোতে যোগদানে সমর্থন করবে না এমনটি বলা হয়। নিষিদ্ধ কুর্দিস্তান ওয়ার্কার্স পার্টি বা পিকেকে, বামপন্থি, চরমপন্থি গোষ্ঠী ডিএইচকেপি-সি ও যুক্তরাষ্ট্রে স্বেচ্ছা নির্বাসিত ধর্মীয় নেতা ফেতুল্লাহ গুলেনের অনুসারীদের সমর্থন করে আসছে সুইডেন ও ফিনল্যান্ড।

২০১৬ সালে তুরস্কে এরদোয়ানের বিরুদ্ধে ব্যর্থ সামরিক অভ্যুত্থানের পিছনে ছিলেন নেতা ফেতুল্লাহ। এছাড়া, ২০১৯ সালে সিরিয়ার উত্তরাঞ্চলে তুরস্কের সামরিক অভিযানের পর ইইউ সদস্য দেশগুলো তুরস্কের বিরুদ্ধে অস্ত্র নিষেধাজ্ঞা দেয়। সেই তালিকায় সুইডেন-ফিনল্যান্ডও ছিল। তাই তুরস্ক এই নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার এবং কুর্দিস্তান ওয়ার্কার্স পার্টিকে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে অ্যাখ্যা দিতে দাবি করে। এর আগে ১৯৮০ সালে তুরস্ক ন্যাটোতে গ্রিসকে অন্তর্ভুক্ত করতে সম্মত হয় এবং পরে ন্যাটোর সহযোগিতা নিয়ে তুরস্কবিরোধী হয় গ্রিস এবং সে ধরনের ভুল তুরস্ক করতে চান না।

ফিনল্যান্ড ও সুইডেনকে অফিসিয়ালি আমন্ত্রণ জানিয়েছে ন্যাটো (NATO)

ফিনল্যান্ড ও সুইডেনকে ন্যাটোতে যোগ দেওয়ার সম্মতি দেওয়ায় কী পেয়েছে তুরস্ক?

তুরস্ক তার যে দাবি দাওয়া ছিল তা ন্যাটো সম্মেলনের মধ্যে দিয়ে ফিরে পেলো এবং চূড়ান্ত হলো সুইডেন এবং ফিনল্যান্ডের ন্যাটোতে যুক্ত হওয়া। তুরস্কের কুর্দিদের সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে স্বীকৃতি দেবে সুইডেন এবং ফিনল্যান্ড সহ ন্যাটোভুক্ত দেশগুলো। এছাড়া সিরিয়া যুদ্ধের সময় দেওয়া অস্ত্র নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করা হবে। এর ফলে তুরস্ক তার দাবি-দাওয়া পূরণে সক্ষম হলো।

রাশিয়ার পরবর্তী পদক্ষেপ কী হতে পারে? 

রাশিয়া ইউক্রেনে হামলা চালালেও সুইডেন এবং ফিনল্যান্ডে হামলা চালানোর বিষয়ে ভাববে। আর ইউক্রেন ছিল সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়ন ভুক্ত রাষ্ট্র এবং ইউক্রেনের সাথে রাশিয়ার রয়েছে অনেক বড়ো সীমান্ত যা ফিনল্যান্ডের তুলনায় বেশি। তাই সুইডেন বা ফিনল্যান্ডে হয়তো আক্রমন করবে না। তবে পুতিন ইতোমধ্যে ঘোষণা দিয়েছেন যদি ন্যাটোর সেনা মোতায়েন করা হয় এই দুই দেশে এবং সামরিক শক্তি বৃদ্ধি করা বা কোন সেনা ঘাঁটি তৈরি করা হয় তাহলে রাশিয়া তার জবাব দেবে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ইতোমধ্যে ইউক্রেনে রাশিয়াকে যুদ্ধের মধ্যে রেখেছে এবং ইউক্রেনে যেভাবে রাশিয়া হামলা করছে ঠিক তেমনি কম হলেও রাশিয়া পাল্টা আক্রমণের স্বীকার হচ্ছেন। আর এখানে পশ্চিমারা ইউক্রেনকে সহযোগিতা করে যাচ্ছে যদিও সরাসরি যুদ্ধে জড়ায়নি। এতে রাশিয়ার অর্থনীতি যে ক্ষতিগ্রস্ত হবে তা নিশ্চিত।

করোনাভাইরাস মহামারী পরবর্তী সময়ে এর প্রভাব এবং রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ রাশিয়ার অর্থনৈতিক ক্ষয়ক্ষতি এবং অর্থনীতিকে বাধাগ্রস্ত করবে। এর মধ্যে সুইডেন এবং ফিনল্যান্ডকে ন্যাটোতে যুক্ত করা নিয়ে যদি রাশিয়া কোনভাবে যুদ্ধ জড়িয়ে যায় তবে তা পশ্চিমাদের পাতা আরেকটি ফাঁদে রাশিয়া পা দেবে এমনটাও হতে পারে। তবে ইউক্রেনের মতো এখানে রাশিয়ার ততটা সমস্যা নেই। কারণ ইউক্রেনের সাথে দীর্ঘ সীমান্তের পাশাপাশি কৃষ্ণসাগরের মাধ্যমে রাশিয়া তাদের ব্যবসা-বাণিজ্য করে থাকে বিভিন্ন বন্দর ব্যবহারের মাধ্যমে।

ইউক্রেনকে ন্যাটোতে যুক্ত করার মধ্যে দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সাথে ইউক্রেনের সম্পর্ক বৃদ্ধি এবং এখানে এসে আমেরিকা রাশিয়ার বাণিজ্যিক বিষয়ে প্রভাব ফেলতে পারে। তাই ইউক্রেনকে ন্যাটোতে যুক্ত হওয়ার ক্ষেত্রে রাশিয়া আক্রমণের পথ বেছে নিয়েছে। এছাড়া, ইউক্রেনের একটা গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চল ক্রিমিয়া ২০১৪ সালে রাশিয়া ক্রিমিয়া (Crimea) যুদ্ধে জড়িয়ে দখল করে নেয়। যার জন্য জি-৭ জোট থেকে বের করে দেওয়া হয় রাশিয়াকে।