০৯:৫৪ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
                       

মোহর কী, মোহরের গুরুত্ব ও বাধ্যবাধকতা এবং নারীর অধিকার হিসেবে মোহর

মুফতী পিয়ার মাহমুদ
  • প্রকাশ: ১০:১৪:৩৫ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২৬ জুন ২০২২
  • / ২৪৫২ বার পড়া হয়েছে

ইসলামের যে বিধানগুলোর অন্যতম হলো স্ত্রীর মোহর। বিয়ের মাধ্যমে নারীর প্রতি সম্মানপ্রদর্শনের খাতিরে ইসলাম স্বামীর ওপর যে আর্থিক জিম্মাদারী আরোপ করেছেন তারই নাম মোহর। এই মোহর আদায় করা স্বামীর অবশ্য পালনীয় কর্তব্য এবং বিয়েতে স্ত্রীর জন্য মোহর নির্ধারণ এবং তাতে নারীর পূর্ণ মালিকানা প্রদান ইসলামি বিধানের এক অনন্য বৈশিষ্ট্য।

মোহরের প্রচলিত রূপ

মুসলমানের নৈতিক অবক্ষয় ও দিনদারীর অধঃপতনের এ যুগে মোহর মূলত দাম্পত্য রক্ষার বা নিরাপত্তার একটি হুমকিমূলক কাগুজে পদ্ধতি ও প্রথাগত বিষয়ে পরিণত হয়েছে। বাস্তবে যার কোনো কার্যকারিতা নেই।

বর-কনে উভয়পক্ষের সম্মতিতে স্বামীর আদায়ের সামর্থ্যরে বাইরে মোটা অংকের মোহর নির্ধারণ মুসলিম পরিবারগুলোর একটি ফ্যাশনে পরিণত হয়েছে। স্বামীর সামর্থ্য ও সাধ্যের চেয়ে অনেক বেশি মোহরধার্য করা হয়, শুধু সামাজিক মর্যাদা বৃদ্ধির জন্য।

বর-কনে উভয়পক্ষই ধরে রাখেন, এ মোহর পরিশোধের জন্য নয় বরং সামাজিকভাবে বড়ো ফিগারের মোহর জাহির করার জন্য। এসব প্রথাগত কাগুজে পদ্ধতির মারপ্যাঁচে পড়ে আর্থিক অপরিহার্য প্রাপ্য থেকে বঞ্চনার শিকার হয় নারী। তামাশায় পরিণত হয় মোহরের মতো ইসলামের গুরুত্বপূর্ণ বিধান ও আর্থিক অধিকার।

মোহর যে স্ত্রীর অপরিহার্য অধিকার এবং স্বামীর অবশ্য পালনীয় কর্তব্য তার কোনো চিন্তা বা গরজ কারও ভেতরই থাকে না। মোটা অংকের মোহর নির্ধারণের অর্থ স্বামী এটাই বোঝে যে, কখনও দাম্পত্য জীবন শেষ করতে চাইলে এই বিশাল অংকের মোহর তার পরিশোধ করতে হবে। অন্যথায় নয়।

অপরদিকে অপরিহার্য অধিকার মোহরের টাকা অপ্রাপ্তির মধ্য দিয়েই কাঙ্ক্ষিত দাম্পত্য জীবনে প্রবেশ করে মেয়েটি। আর শুরুতেই সে জেনে গেল এ টাকা মূলত পাওয়ার জন্য ধার্য হয়নি; বরং এ টাকা পাওয়ার মতো পরিস্থিতি অর্থাৎ তালাক না পড়ার আকাক্সক্ষাই তার মাঝে প্রবল থেকে প্রবলতর হয়ে ওঠে। এর সোজা অর্থ হলো অবলা মেয়েটি যে দাম্পত্য জীবনের একদম প্রথম প্রহরে স্বামীর মাফ চাওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে মাফ করেছিল, সেটা ছিল নিতান্তই নিরুপায় হয়ে এবং এক ধরনের চাপে পড়ে। আর এভাবে মাফ নিয়ে কি কারও টাকা ভোগ করার সুযোগ ইসলাম দিয়েছে? নবি করীম (সা.) বলেন, ‘সাবধান! জুলুম করো না। জেনে রেখো, কারও সম্পদ তার আন্তরিক সন্তুষ্টি ব্যতীত অন্যের জন্য ভোগ করা বৈধ নয়’ (মিশকাত: ২৫৫)।

ইসলামে মোহরের গুরুত্ব

যে মোহর আজকের মুসলমানদের কাছে খেল-তামাশা ও প্রথাগত পদ্ধতিতে পরিণত হয়েছে তার গুরুত্ব ইসলামে সীমাহীন। কোরআন মাজিদে এরশাদ হয়েছে, ‘তোমরা তোমাদের স্ত্রীদের মোহর দিয়ে দাও খুশিমনে। এরপর তারা যদি তোমাদের জন্য খুশি মনে মোহরের কিছু অংশ ছেড়ে দেয়, তাহলে তা ভোগ কর স্বাচ্ছন্দ্যে’ (নিসা: ৪)। মোহর স্ত্রীর অপরিহার্য অধিকার ও প্রাপ্য। তা আদায় করা স্বামীর ওপর ফরজ। এর নির্দেশদাতা স্বয়ং আল্লাহতায়ালা। স্ত্রীর স্বতঃস্ফূর্ত সম্মতি ছাড়া তাতে অন্যকারো হস্তক্ষেপের সুযোগ নেই। তাই প্রত্যেক মোমিন-মুসলমান স্বামীর অবশ্য কর্তব্য খুশি মনে স্বতঃপ্রবৃত্ত হয়ে স্ত্রীর মোহর আদায় করা।

কারও অনুরোধ-উপরোধ কিংবা জোর-জবরদস্তির অপেক্ষায় থাকা কোরআনের নির্দেশ পরিপন্থি ও জঘন্য অপরাধ এবং চাপ দিয়ে কিংবা কোনো কৌশলে পূর্ণ মোহর বা কিছু অংশ স্বামী মাফ করিয়ে নিলেও তা মাফ হবে না এবং পরিশোধ করার পর কোনো কায়দায় ফেলে তা ফেরতও নিতে পারবে না। এভাবে মা-বাবা, ভাই-বোন বা অন্য কেউ স্বীয় মেয়ে, বোন বা আত্মীয়ের মোহর তার স্বতঃস্ফূর্ত সম্মতি ছাড়া নিতেও পারবে না, মাফও করাতে পারবে না। নিলে তা হবে আত্মসাতের শামিল। তবে স্ত্রী যদি স্বেচ্ছায় হৃষ্টচিত্তে মোহরের অংশ বিশেষ বা পূর্ণ মোহর মাফ করে দেয় কিংবা পুরোপুরি বুঝে নিয়ে অংশ বিশেষ বা পূর্ণ মোহরই ফিরিয়ে দেয়, তবে তার ব্যবহার বৈধ হবে। (আহকামুল কোরআন, জাসসাস: ২/৫৭-৫৮; ইবনে কাসীর: ১/৪৪২; বয়ানুল কোরআন: ২/৯৩; তাফসিরে ওসমানী: ১০০)।

অন্য আয়াতে আল্লাহতায়ালা এরশাদ করেন, ‘উল্লেখিত মাহরাম নারীরা ছাড়া অন্যদের তোমাদের জন্য হালাল করা হয়েছে এ শর্তে যে, তোমরা তাদের স্বীয় সম্পদের বিনিময়ে তলব করবে বিয়ে করার জন্য; ব্যভিচারের জন্য নয়। অতএব, তাদের তোমরা যে উপভোগ করেছ এ কারণে তাদের প্রাপ্য ও ধার্যকৃত বিনিময় (মোহর) তাদের প্রদান কর। আর মোহর নির্ধারিত থাকার পরও তোমরা পরস্পরে কোনো বিষয়ে সম্মত হলে তাতে তোমাদের কোনো গোনাহ হবে না। নিশ্চয় আল্লাহতায়ালা সর্বজ্ঞ ও প্রজ্ঞাময়।’ (সুরা নিসা-২৪)।

এই আয়াতে এ কথা অকাট্যভাবে প্রমাণিত যে, মোহর ইসলামের অতি গুরুত্বপূর্ণ ফরজ এবং বিয়ের অপরিহার্য অনুষঙ্গ এবং মোহর এমন কিছু হতে হবে যা শরিয়তে সম্পদ বলে গণ্য। বিয়ের সময় মোহরের কথা উল্লেখ না করলেও কিংবা না দেওয়ার শর্ত করলেও তা বাতিল হয় না; বরং স্বামীর জিম্মায় যথানিয়মে বাকি থাকে। তাই স্বামীর অবশ্য কর্তব্য যথাযথভাবে স্ত্রীর মোহর পরিশোধ করা।

প্রিয়নবি (সা.) এরশাদ করেন, ‘মোহর আদায় না করার নিয়তে কেউ যদি কোনো নারীকে বিয়ে করে আল্লাহতায়ালা খুব ভালো করেই জানেন যে, তার মোহর আদায়ের নিয়ত নেই। তাহলে সে স্বয়ং আল্লাহকে ধোঁকা দেওয়ার স্পর্ধা দেখাল এবং অন্যায়ভাবে নারীকে উপভোগ করল। কেয়ামতের দিন সে ব্যভিচারীরূপে আল্লাহর দরবারে উপস্থিত হবে। মাজমাউয যাওয়ায়েদ: ৪/৫২২-৫২৩ )।

মোহর কখন আদায় করতে হয়?

কোরআন-হাদিসের ভাষ্যমতে, বিয়ের সঙ্গে সঙ্গে মেলামেশার আগেই পূর্ণ মোহর আদায় করা উচিত। সম্ভব না হলে অন্তত কিছু হলেও আদায় করে দেওয়া উচিত। এ ব্যাপারে মহানবি (সা.) যথেষ্ট তাকিদ দিয়েছেন। হজরত আলী (রা.)-এর সঙ্গে ফাতিমা (রা.)-এর বিয়ে সম্পাদিত হলে রাসুলুল্লাহ (সা.) হজরত আলীকে বলেলেন, হে আলী, মেলামেশার আগেই তুমি তোমার স্ত্রীকে কিছু মোহর দাও। হজরত আলী (রা.) জানালেন যে তার কাছে কিছু নেই। তখন মহানবি (সা.) বললেন, তোমার বর্মটি মোহর হিসেবে দাও। আলী (রা.) তাঁর বর্মটি মোহর হিসাবে দিয়ে ফাতিমার সঙ্গে মিলিত হলেন। (আবু দাউদ: ১/২৮৯-২৯০)।

এভাবে জনৈক আনসারী সাহাবি এক নারীকে বিয়ের আগ্রহ প্রকাশ করলে নবিজি (সা.) তাকে জিজ্ঞেস করলেন, ‘মোহর আদায় করার জন্য তোমার কাছে কি আছে?’ তিনি কিছুই নেই জানালে রাসুলুল্লাহ (সা.) বললেন, ‘যাও মোহরের জন্য একটি লোহার আংটি হলেও জোগাড় করে নিয়ে আস।’ (বোখারি: ২ ; আবু দাউদ: ১/২৮৭)। তবে যদি অনিবার্য কারণে বিয়ের সময় বা মেলামেশার আগে পূর্ণ মোহর বা কিছু অংশও আদায় করা সম্ভব না হয়, তাহলে কবে নাগাদ তা আদায় করা হবে তার তারিখ নির্ধারণ করে নিতে হবে। পরিষ্কারভাবে মোহর আদায়ের তারিখ নির্ধারণ না করে শুধু মৌখিকভাবে কাগজে-কলমে প্রথাগত পদ্ধতিতে মোহর নির্ধারণ করে সারা জীবন তা আদায় না করা বা স্ত্রীর কাছ থেকে বেহায়ার মতো মাফ করিয়ে নেওয়া কিংবা আদায় না করে স্ত্রীর দেনা কাঁধে নিয়ে মৃত্যুবরণ করা শুধু ইসলামের বিধানমতে কঠিন অন্যায়ই নয়; সুস্থ বিবেক ও রুচির বিচারেও নিতান্ত হীন ও কাপুরুষোচিত কাজও বটে।

মোহর তলব করার অধিকার স্ত্রীর রয়েছে

এ কথা ঠিক যে, মোহর নগদ আদায় না করলেও বিয়ে শুদ্ধ হয়ে যাবে; কিন্তু তা আদায়ের তারিখ নির্ধারণ করে নিতে হবে। স্বামী যদি তাও না করে তাহলে ইসলাম স্ত্রীকে এই অধিকার দিয়েছে যে, মোহর উসূল না হওয়া পর্যন্ত সে নিজেকে স্বামীর কাছে সোপর্দ করা হতে বিরত থাকতে পারবে এবং স্বামীকে শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন এমনকি চুম্বন-আলিঙ্গন ইত্যাদি থেকেও বাধা দিতে পারবে ও স্বামীর সঙ্গে কোথাও সফরে যেতে অস্বীকার করতে পারবে। স্বামী এগুলোতে তাকে বাধ্য করতে পারবে না। এই অবস্থাতেও স্ত্রী মোহর তো পাবেই; স্ত্রীর ন্যায়সঙ্গত ভরণ-পোষণও স্বামীর নিয়মিত দিতে হবে। (শামী, হেদায়া: ভরণ-পোষণ অধ্যায়)

বিয়েতে ইসলাম ধর্মে মোহরের পরিমাণ কত?

মোহরের সর্বোচ্চ পরিমাণ ইসলামে নির্ধারিত নেই। তবে সর্বনিম্ন পরিমাণটি নির্ধারিত রয়েছে। হানাফি মাযহাব মতে সর্বনিম্ন মোহর দশ দেরহাম; যার পরিমাণ বর্তমান হিসাবে পৌনে তিন ভরি খাঁটি রুপা। (নিসা: ২০; বাদায়ে: ২/২৭৫)।

এই সর্বনিম্ন মোহর নির্ধারিত থাকার উদ্দেশ্য এই নয় যে, এত সামান্য পরিমাণ মোহর নির্ধারণ করা শরিআতে প্রশংসনীয়; বরং উদ্দেশ্য হলো— এর চেয়ে কম মোহর নির্ধারণ করা শরিয়তসম্মত নয় যদিও স্ত্রী রাজি থাকে। এর চেয়ে কম নির্ধারিত হলে মোহরের মূল উদ্দেশ্য পূরণ হয় না। তাছাড়া মোহরের এই সর্বনিম্ন পরিমাণও রাখা হয়েছে মূলত আর্থিকভাবে অসচ্ছল লোকদের কথা বিবেচনা করে। যেন তারা নারীর সম্মতির শর্তে এই পরিমাণ অর্থ দিয়ে বিয়ে করতে পারে।

আবু সালামা ইবনে আব্দুর রহমান (রহ.) বলেন, ‘আমি উম্মুল মুমিনীন আয়েশা (রা.) কে জিজ্ঞাসা করলাম যে, নবি (সা.) কি পরিমাণ মোহর দিয়েছেন? জবাবে তিনি বললেন নবি (সা.) তার স্ত্রীদের ১২ উকিয়া অর্থাৎ পাঁচ শ দিরহাম মোহর দিয়েছেন।’ (মুসলিম: ১৪২৬; আবু দাউদ: ২১০৫; নাসায়ি: ৬/১১৬-১১৭)। আবু হুরাইয়া (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর যুগে আমাদের মোহর ছিল দশ উকিয়া অর্থাৎ ৪০০ দেরহাম। (নাসায়ি: ৬/১১৭)।

মোহরের কিছু বিধান

বিয়ের সময় কোনো কারণে মোহর নির্ধারণ না করা হলেও বিয়ে বৈধ হয়ে যাবে। এক্ষেত্রে যদি মেলামেশা কিংবা বাধামুক্ত নির্জনবাস সম্পাদিত হয় অথবা স্বামী মারা যায়, তাহলে স্ত্রীকে মোহরে মিছিল দেওয়া ওয়াজিব।

শরিয়তের দৃষ্টিতে মোহরে মিছিল হলো, স্ত্রীর খান্দানের সেই সব নারীদের অনুরূপ মোহর যারা বয়স, বিত্ত, রূপসৌন্দর্য, জ্ঞানবুদ্ধি, শিক্ষাদীক্ষা, আখলাক-চরিত্র ইত্যাদিতে ঠিক তারই মতো (সুরা নিসা: ৪; আবু দাউদ: রদ্দুল মুহতার: ২৮১-২৮৩, হিদায়া ২/৩২৩-৩২৬)।

স্ত্রী ইচ্ছে করলে ধার্যকৃত মোহর থেকে কিছু ছেড়ে দিতে পারে। এভাবে স্বামীও ইচ্ছে করলে কিছু বেশি দিতে পারে। সেচ্ছায় ও আগ্রহের সঙ্গে হলে এতে দোষের কিছু নেই। (আহকামুল কোরআন, জাসসাস: ২/১৪০-১৪৬; আহকামুল কোরআন, ইবনুল আরাবী: ১/৩৮৪-৩৯০; তাফসিরে ওসমানী: ১০৫)।

আর যদি নির্জনবাস কিংবা মেলামেশার আগেই তালাক ঘটে যায়, তাহলে স্ত্রীকে মুতআ দেওয়া ওয়াজিব। স্ত্রীকে প্রদত্ত খরচকে মুতআ বলে। মুতআর পরিমাণ হলো এক জোড়া কাপড় অর্থাৎ একটি জামা, একটি পায়জামা ও একটি ওড়না বা ছোটো চাদর। অথবা একটি শাড়ি ও একটি বড়ো  চাদর যার দ্বারা পুরো দেহ আবৃত করা যায়। তবে কেউ এর চেয়ে বেশি দিলে তাতেও কোনো অসুবিধা নেই (বাকারা: ২৩৬; হিদায়া; ২/৩২৫; রদ্দুল মুহতার: ৪/২৪২-২৪৪)।

আর যদি বিয়ের সময় মোহর নির্ধারিত হয়ে থাকে, তবে অবস্থাভেদে এর হুকুমও বিভিন্ন রকম হয়ে থাকে। যেমন: স্ত্রীর সঙ্গে যদি নির্জনবাস বা মেলামেশা হয়, তাহলে নির্ধারিত পূর্ণ মোহর দেওয়া ওয়াজিব। আর যদি মেলামেশা বা নির্জনবাসের আগেই বিচ্ছেদ ঘটে, তাহলে নির্ধারিত মোহরের অর্ধেক দেওয়া ওয়াজিব। (বাকারা: ২৩৭; রদ্দুল মুহতার: ৪/২৩৩-২৩৬; হেদায়া: ২/৩২৪)। মোহরের সব সামাজিক মেকি প্রথা ও পোশাকি রেওয়াজ থেকে আল্লাহতায়ালা আমাদের ও আমাদের সমাজকে রক্ষা করুন। আমিন।

আলোকিত বাংলাদেশ সংবাদপত্রের সৌজন্যে প্রকাশিত।

শেয়ার করুন

মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার তথ্য সংরক্ষিত রাখুন

লেখকতথ্য

মুফতী পিয়ার মাহমুদ

সিনিয়র মুহাদ্দিস, জামিয়া মিফতাহুল উলূম মাদরাসা
তাহসান খান এবং মুনজেরিন শহীদের দুটি প্রফেশনাল কমিউনিকেশন কোর্স করুন ২৮% ছাড়ে
তাহসান খান এবং মুনজেরিন শহীদের দুটি প্রফেশনাল কমিউনিকেশন কোর্স করুন ২৮% ছাড়ে

২৮℅ ছাড় পেতে ৩০/০৬/২০২৪ তারিখের মধ্যে প্রোমো কোড “professional10” ব্যবহার করুন। বিস্তারিত জানতে ও ভর্তি হতে ক্লিক করুন এখানে

মোহর কী, মোহরের গুরুত্ব ও বাধ্যবাধকতা এবং নারীর অধিকার হিসেবে মোহর

প্রকাশ: ১০:১৪:৩৫ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২৬ জুন ২০২২

ইসলামের যে বিধানগুলোর অন্যতম হলো স্ত্রীর মোহর। বিয়ের মাধ্যমে নারীর প্রতি সম্মানপ্রদর্শনের খাতিরে ইসলাম স্বামীর ওপর যে আর্থিক জিম্মাদারী আরোপ করেছেন তারই নাম মোহর। এই মোহর আদায় করা স্বামীর অবশ্য পালনীয় কর্তব্য এবং বিয়েতে স্ত্রীর জন্য মোহর নির্ধারণ এবং তাতে নারীর পূর্ণ মালিকানা প্রদান ইসলামি বিধানের এক অনন্য বৈশিষ্ট্য।

মোহরের প্রচলিত রূপ

মুসলমানের নৈতিক অবক্ষয় ও দিনদারীর অধঃপতনের এ যুগে মোহর মূলত দাম্পত্য রক্ষার বা নিরাপত্তার একটি হুমকিমূলক কাগুজে পদ্ধতি ও প্রথাগত বিষয়ে পরিণত হয়েছে। বাস্তবে যার কোনো কার্যকারিতা নেই।

বর-কনে উভয়পক্ষের সম্মতিতে স্বামীর আদায়ের সামর্থ্যরে বাইরে মোটা অংকের মোহর নির্ধারণ মুসলিম পরিবারগুলোর একটি ফ্যাশনে পরিণত হয়েছে। স্বামীর সামর্থ্য ও সাধ্যের চেয়ে অনেক বেশি মোহরধার্য করা হয়, শুধু সামাজিক মর্যাদা বৃদ্ধির জন্য।

বর-কনে উভয়পক্ষই ধরে রাখেন, এ মোহর পরিশোধের জন্য নয় বরং সামাজিকভাবে বড়ো ফিগারের মোহর জাহির করার জন্য। এসব প্রথাগত কাগুজে পদ্ধতির মারপ্যাঁচে পড়ে আর্থিক অপরিহার্য প্রাপ্য থেকে বঞ্চনার শিকার হয় নারী। তামাশায় পরিণত হয় মোহরের মতো ইসলামের গুরুত্বপূর্ণ বিধান ও আর্থিক অধিকার।

মোহর যে স্ত্রীর অপরিহার্য অধিকার এবং স্বামীর অবশ্য পালনীয় কর্তব্য তার কোনো চিন্তা বা গরজ কারও ভেতরই থাকে না। মোটা অংকের মোহর নির্ধারণের অর্থ স্বামী এটাই বোঝে যে, কখনও দাম্পত্য জীবন শেষ করতে চাইলে এই বিশাল অংকের মোহর তার পরিশোধ করতে হবে। অন্যথায় নয়।

অপরদিকে অপরিহার্য অধিকার মোহরের টাকা অপ্রাপ্তির মধ্য দিয়েই কাঙ্ক্ষিত দাম্পত্য জীবনে প্রবেশ করে মেয়েটি। আর শুরুতেই সে জেনে গেল এ টাকা মূলত পাওয়ার জন্য ধার্য হয়নি; বরং এ টাকা পাওয়ার মতো পরিস্থিতি অর্থাৎ তালাক না পড়ার আকাক্সক্ষাই তার মাঝে প্রবল থেকে প্রবলতর হয়ে ওঠে। এর সোজা অর্থ হলো অবলা মেয়েটি যে দাম্পত্য জীবনের একদম প্রথম প্রহরে স্বামীর মাফ চাওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে মাফ করেছিল, সেটা ছিল নিতান্তই নিরুপায় হয়ে এবং এক ধরনের চাপে পড়ে। আর এভাবে মাফ নিয়ে কি কারও টাকা ভোগ করার সুযোগ ইসলাম দিয়েছে? নবি করীম (সা.) বলেন, ‘সাবধান! জুলুম করো না। জেনে রেখো, কারও সম্পদ তার আন্তরিক সন্তুষ্টি ব্যতীত অন্যের জন্য ভোগ করা বৈধ নয়’ (মিশকাত: ২৫৫)।

ইসলামে মোহরের গুরুত্ব

যে মোহর আজকের মুসলমানদের কাছে খেল-তামাশা ও প্রথাগত পদ্ধতিতে পরিণত হয়েছে তার গুরুত্ব ইসলামে সীমাহীন। কোরআন মাজিদে এরশাদ হয়েছে, ‘তোমরা তোমাদের স্ত্রীদের মোহর দিয়ে দাও খুশিমনে। এরপর তারা যদি তোমাদের জন্য খুশি মনে মোহরের কিছু অংশ ছেড়ে দেয়, তাহলে তা ভোগ কর স্বাচ্ছন্দ্যে’ (নিসা: ৪)। মোহর স্ত্রীর অপরিহার্য অধিকার ও প্রাপ্য। তা আদায় করা স্বামীর ওপর ফরজ। এর নির্দেশদাতা স্বয়ং আল্লাহতায়ালা। স্ত্রীর স্বতঃস্ফূর্ত সম্মতি ছাড়া তাতে অন্যকারো হস্তক্ষেপের সুযোগ নেই। তাই প্রত্যেক মোমিন-মুসলমান স্বামীর অবশ্য কর্তব্য খুশি মনে স্বতঃপ্রবৃত্ত হয়ে স্ত্রীর মোহর আদায় করা।

কারও অনুরোধ-উপরোধ কিংবা জোর-জবরদস্তির অপেক্ষায় থাকা কোরআনের নির্দেশ পরিপন্থি ও জঘন্য অপরাধ এবং চাপ দিয়ে কিংবা কোনো কৌশলে পূর্ণ মোহর বা কিছু অংশ স্বামী মাফ করিয়ে নিলেও তা মাফ হবে না এবং পরিশোধ করার পর কোনো কায়দায় ফেলে তা ফেরতও নিতে পারবে না। এভাবে মা-বাবা, ভাই-বোন বা অন্য কেউ স্বীয় মেয়ে, বোন বা আত্মীয়ের মোহর তার স্বতঃস্ফূর্ত সম্মতি ছাড়া নিতেও পারবে না, মাফও করাতে পারবে না। নিলে তা হবে আত্মসাতের শামিল। তবে স্ত্রী যদি স্বেচ্ছায় হৃষ্টচিত্তে মোহরের অংশ বিশেষ বা পূর্ণ মোহর মাফ করে দেয় কিংবা পুরোপুরি বুঝে নিয়ে অংশ বিশেষ বা পূর্ণ মোহরই ফিরিয়ে দেয়, তবে তার ব্যবহার বৈধ হবে। (আহকামুল কোরআন, জাসসাস: ২/৫৭-৫৮; ইবনে কাসীর: ১/৪৪২; বয়ানুল কোরআন: ২/৯৩; তাফসিরে ওসমানী: ১০০)।

অন্য আয়াতে আল্লাহতায়ালা এরশাদ করেন, ‘উল্লেখিত মাহরাম নারীরা ছাড়া অন্যদের তোমাদের জন্য হালাল করা হয়েছে এ শর্তে যে, তোমরা তাদের স্বীয় সম্পদের বিনিময়ে তলব করবে বিয়ে করার জন্য; ব্যভিচারের জন্য নয়। অতএব, তাদের তোমরা যে উপভোগ করেছ এ কারণে তাদের প্রাপ্য ও ধার্যকৃত বিনিময় (মোহর) তাদের প্রদান কর। আর মোহর নির্ধারিত থাকার পরও তোমরা পরস্পরে কোনো বিষয়ে সম্মত হলে তাতে তোমাদের কোনো গোনাহ হবে না। নিশ্চয় আল্লাহতায়ালা সর্বজ্ঞ ও প্রজ্ঞাময়।’ (সুরা নিসা-২৪)।

এই আয়াতে এ কথা অকাট্যভাবে প্রমাণিত যে, মোহর ইসলামের অতি গুরুত্বপূর্ণ ফরজ এবং বিয়ের অপরিহার্য অনুষঙ্গ এবং মোহর এমন কিছু হতে হবে যা শরিয়তে সম্পদ বলে গণ্য। বিয়ের সময় মোহরের কথা উল্লেখ না করলেও কিংবা না দেওয়ার শর্ত করলেও তা বাতিল হয় না; বরং স্বামীর জিম্মায় যথানিয়মে বাকি থাকে। তাই স্বামীর অবশ্য কর্তব্য যথাযথভাবে স্ত্রীর মোহর পরিশোধ করা।

প্রিয়নবি (সা.) এরশাদ করেন, ‘মোহর আদায় না করার নিয়তে কেউ যদি কোনো নারীকে বিয়ে করে আল্লাহতায়ালা খুব ভালো করেই জানেন যে, তার মোহর আদায়ের নিয়ত নেই। তাহলে সে স্বয়ং আল্লাহকে ধোঁকা দেওয়ার স্পর্ধা দেখাল এবং অন্যায়ভাবে নারীকে উপভোগ করল। কেয়ামতের দিন সে ব্যভিচারীরূপে আল্লাহর দরবারে উপস্থিত হবে। মাজমাউয যাওয়ায়েদ: ৪/৫২২-৫২৩ )।

মোহর কখন আদায় করতে হয়?

কোরআন-হাদিসের ভাষ্যমতে, বিয়ের সঙ্গে সঙ্গে মেলামেশার আগেই পূর্ণ মোহর আদায় করা উচিত। সম্ভব না হলে অন্তত কিছু হলেও আদায় করে দেওয়া উচিত। এ ব্যাপারে মহানবি (সা.) যথেষ্ট তাকিদ দিয়েছেন। হজরত আলী (রা.)-এর সঙ্গে ফাতিমা (রা.)-এর বিয়ে সম্পাদিত হলে রাসুলুল্লাহ (সা.) হজরত আলীকে বলেলেন, হে আলী, মেলামেশার আগেই তুমি তোমার স্ত্রীকে কিছু মোহর দাও। হজরত আলী (রা.) জানালেন যে তার কাছে কিছু নেই। তখন মহানবি (সা.) বললেন, তোমার বর্মটি মোহর হিসেবে দাও। আলী (রা.) তাঁর বর্মটি মোহর হিসাবে দিয়ে ফাতিমার সঙ্গে মিলিত হলেন। (আবু দাউদ: ১/২৮৯-২৯০)।

এভাবে জনৈক আনসারী সাহাবি এক নারীকে বিয়ের আগ্রহ প্রকাশ করলে নবিজি (সা.) তাকে জিজ্ঞেস করলেন, ‘মোহর আদায় করার জন্য তোমার কাছে কি আছে?’ তিনি কিছুই নেই জানালে রাসুলুল্লাহ (সা.) বললেন, ‘যাও মোহরের জন্য একটি লোহার আংটি হলেও জোগাড় করে নিয়ে আস।’ (বোখারি: ২ ; আবু দাউদ: ১/২৮৭)। তবে যদি অনিবার্য কারণে বিয়ের সময় বা মেলামেশার আগে পূর্ণ মোহর বা কিছু অংশও আদায় করা সম্ভব না হয়, তাহলে কবে নাগাদ তা আদায় করা হবে তার তারিখ নির্ধারণ করে নিতে হবে। পরিষ্কারভাবে মোহর আদায়ের তারিখ নির্ধারণ না করে শুধু মৌখিকভাবে কাগজে-কলমে প্রথাগত পদ্ধতিতে মোহর নির্ধারণ করে সারা জীবন তা আদায় না করা বা স্ত্রীর কাছ থেকে বেহায়ার মতো মাফ করিয়ে নেওয়া কিংবা আদায় না করে স্ত্রীর দেনা কাঁধে নিয়ে মৃত্যুবরণ করা শুধু ইসলামের বিধানমতে কঠিন অন্যায়ই নয়; সুস্থ বিবেক ও রুচির বিচারেও নিতান্ত হীন ও কাপুরুষোচিত কাজও বটে।

মোহর তলব করার অধিকার স্ত্রীর রয়েছে

এ কথা ঠিক যে, মোহর নগদ আদায় না করলেও বিয়ে শুদ্ধ হয়ে যাবে; কিন্তু তা আদায়ের তারিখ নির্ধারণ করে নিতে হবে। স্বামী যদি তাও না করে তাহলে ইসলাম স্ত্রীকে এই অধিকার দিয়েছে যে, মোহর উসূল না হওয়া পর্যন্ত সে নিজেকে স্বামীর কাছে সোপর্দ করা হতে বিরত থাকতে পারবে এবং স্বামীকে শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন এমনকি চুম্বন-আলিঙ্গন ইত্যাদি থেকেও বাধা দিতে পারবে ও স্বামীর সঙ্গে কোথাও সফরে যেতে অস্বীকার করতে পারবে। স্বামী এগুলোতে তাকে বাধ্য করতে পারবে না। এই অবস্থাতেও স্ত্রী মোহর তো পাবেই; স্ত্রীর ন্যায়সঙ্গত ভরণ-পোষণও স্বামীর নিয়মিত দিতে হবে। (শামী, হেদায়া: ভরণ-পোষণ অধ্যায়)

বিয়েতে ইসলাম ধর্মে মোহরের পরিমাণ কত?

মোহরের সর্বোচ্চ পরিমাণ ইসলামে নির্ধারিত নেই। তবে সর্বনিম্ন পরিমাণটি নির্ধারিত রয়েছে। হানাফি মাযহাব মতে সর্বনিম্ন মোহর দশ দেরহাম; যার পরিমাণ বর্তমান হিসাবে পৌনে তিন ভরি খাঁটি রুপা। (নিসা: ২০; বাদায়ে: ২/২৭৫)।

এই সর্বনিম্ন মোহর নির্ধারিত থাকার উদ্দেশ্য এই নয় যে, এত সামান্য পরিমাণ মোহর নির্ধারণ করা শরিআতে প্রশংসনীয়; বরং উদ্দেশ্য হলো— এর চেয়ে কম মোহর নির্ধারণ করা শরিয়তসম্মত নয় যদিও স্ত্রী রাজি থাকে। এর চেয়ে কম নির্ধারিত হলে মোহরের মূল উদ্দেশ্য পূরণ হয় না। তাছাড়া মোহরের এই সর্বনিম্ন পরিমাণও রাখা হয়েছে মূলত আর্থিকভাবে অসচ্ছল লোকদের কথা বিবেচনা করে। যেন তারা নারীর সম্মতির শর্তে এই পরিমাণ অর্থ দিয়ে বিয়ে করতে পারে।

আবু সালামা ইবনে আব্দুর রহমান (রহ.) বলেন, ‘আমি উম্মুল মুমিনীন আয়েশা (রা.) কে জিজ্ঞাসা করলাম যে, নবি (সা.) কি পরিমাণ মোহর দিয়েছেন? জবাবে তিনি বললেন নবি (সা.) তার স্ত্রীদের ১২ উকিয়া অর্থাৎ পাঁচ শ দিরহাম মোহর দিয়েছেন।’ (মুসলিম: ১৪২৬; আবু দাউদ: ২১০৫; নাসায়ি: ৬/১১৬-১১৭)। আবু হুরাইয়া (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর যুগে আমাদের মোহর ছিল দশ উকিয়া অর্থাৎ ৪০০ দেরহাম। (নাসায়ি: ৬/১১৭)।

মোহরের কিছু বিধান

বিয়ের সময় কোনো কারণে মোহর নির্ধারণ না করা হলেও বিয়ে বৈধ হয়ে যাবে। এক্ষেত্রে যদি মেলামেশা কিংবা বাধামুক্ত নির্জনবাস সম্পাদিত হয় অথবা স্বামী মারা যায়, তাহলে স্ত্রীকে মোহরে মিছিল দেওয়া ওয়াজিব।

শরিয়তের দৃষ্টিতে মোহরে মিছিল হলো, স্ত্রীর খান্দানের সেই সব নারীদের অনুরূপ মোহর যারা বয়স, বিত্ত, রূপসৌন্দর্য, জ্ঞানবুদ্ধি, শিক্ষাদীক্ষা, আখলাক-চরিত্র ইত্যাদিতে ঠিক তারই মতো (সুরা নিসা: ৪; আবু দাউদ: রদ্দুল মুহতার: ২৮১-২৮৩, হিদায়া ২/৩২৩-৩২৬)।

স্ত্রী ইচ্ছে করলে ধার্যকৃত মোহর থেকে কিছু ছেড়ে দিতে পারে। এভাবে স্বামীও ইচ্ছে করলে কিছু বেশি দিতে পারে। সেচ্ছায় ও আগ্রহের সঙ্গে হলে এতে দোষের কিছু নেই। (আহকামুল কোরআন, জাসসাস: ২/১৪০-১৪৬; আহকামুল কোরআন, ইবনুল আরাবী: ১/৩৮৪-৩৯০; তাফসিরে ওসমানী: ১০৫)।

আর যদি নির্জনবাস কিংবা মেলামেশার আগেই তালাক ঘটে যায়, তাহলে স্ত্রীকে মুতআ দেওয়া ওয়াজিব। স্ত্রীকে প্রদত্ত খরচকে মুতআ বলে। মুতআর পরিমাণ হলো এক জোড়া কাপড় অর্থাৎ একটি জামা, একটি পায়জামা ও একটি ওড়না বা ছোটো চাদর। অথবা একটি শাড়ি ও একটি বড়ো  চাদর যার দ্বারা পুরো দেহ আবৃত করা যায়। তবে কেউ এর চেয়ে বেশি দিলে তাতেও কোনো অসুবিধা নেই (বাকারা: ২৩৬; হিদায়া; ২/৩২৫; রদ্দুল মুহতার: ৪/২৪২-২৪৪)।

আর যদি বিয়ের সময় মোহর নির্ধারিত হয়ে থাকে, তবে অবস্থাভেদে এর হুকুমও বিভিন্ন রকম হয়ে থাকে। যেমন: স্ত্রীর সঙ্গে যদি নির্জনবাস বা মেলামেশা হয়, তাহলে নির্ধারিত পূর্ণ মোহর দেওয়া ওয়াজিব। আর যদি মেলামেশা বা নির্জনবাসের আগেই বিচ্ছেদ ঘটে, তাহলে নির্ধারিত মোহরের অর্ধেক দেওয়া ওয়াজিব। (বাকারা: ২৩৭; রদ্দুল মুহতার: ৪/২৩৩-২৩৬; হেদায়া: ২/৩২৪)। মোহরের সব সামাজিক মেকি প্রথা ও পোশাকি রেওয়াজ থেকে আল্লাহতায়ালা আমাদের ও আমাদের সমাজকে রক্ষা করুন। আমিন।

আলোকিত বাংলাদেশ সংবাদপত্রের সৌজন্যে প্রকাশিত।