শুক্রবার, মার্চ ২৪, ২০২৩

হাইড্রোজেন পার অক্সাইড কী, হাইড্রোজেন পার অক্সাইড কী কী কাজে ব্যবহার করা যায় এবং এটি আগুনের মাত্রা কীভাবে বাড়ায়?

হাইড্রোজেন পার অক্সাইড কোনো দাহ্য পদার্থ নয় তবে এটি একটি অক্সিডাইজিং এজেন্ট।

হাইড্রোজেন পার অক্সাইড কী, হাইড্রোজেন পার অক্সাইড কী কী কাজে ব্যবহার করা যায় এবং এটি আগুনের মাত্রা কীভাবে বাড়ায়; এ নিয়ে সাজানো হয়েছে এই নিবন্ধ

হাইড্রোজেন পার অক্সাইড কী?

হাইড্রোজনের পার অক্সাইড (Hydrogen peroxide) একটি রাসায়নিক যৌগ। এটি একটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি ইন্ডাস্ট্রিয়াল কেমিক্যাল।

হাইড্রোজেন পার অক্সাইডের রাসায়নিক সংকেত H2O2 এবং এই হাইড্রোজেন পার অক্সাইড বিশুদ্ধ অবস্থায় বর্ণহীন তরল।

হাইড্রোজেন পার অক্সাইড কোনো দাহ্য পদার্থ নয় তবে এটি একটি অক্সিডাইজিং এজেন্ট।

হাইড্রোজেন পার অক্সাইডকে বিশেষজ্ঞরা বর্ণনা করেন অক্সিডাইজিং এজেন্ট হিসেবে; সাধারণভাবে একে বলা যায় ব্লিচিং এজেন্ট। সরাসরি হাইড্রোজেন পার-অক্সাইড ব্যবহার বিপজ্জনক। তাই নিরাপত্তাজনিত কারণে সবসময় এর জলীয় দ্রবণ পরিমিত পরিমাণে ব্যবহার করা হয়। এটি নিজে দাহ্য পদার্থ না হলেও আগুন বা দাহ্য পদার্থের আশেপাশে রাখলে বিপজ্জনক পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে বলে জানাচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা।

হাইড্রোজেন পার অক্সাইড কোথায় ব্যবহৃত হয় বা কী কী কাজে ব্যবহৃত হয়?

বাংলাদেশে অনেক কোম্পানি এখন হাইড্রোজেন পার অক্সাইড উৎপাদন করে। ইন্ডাস্ট্রিয়াল পর্যায়ে এর ব্যবহার আছে।

যে সকল ক্ষেত্রে হাইড্রোজেন পার অক্সাইডের ব্যবহার লক্ষ্য করা যায় সেগুলো হলো—

  • ব্লিচিংয়ের জন্য টেক্সটাইল ইন্ডাস্ট্রি বিশেষ করে ডাইং ইন্ডাস্ট্রিতে ব্যবহার করা হয়।
  • অ্যাভিয়েশন ইন্ডাস্ট্রিতে বহুল ব্যবহৃত হয় হাইড্রোজেন পার অক্সাইড।
  • লেদার ইন্ডাস্ট্রি বা চামড়া শিল্পে হাইড্রোজেন পার অক্সাইড ব্যবহার করা হয়।
  • ওয়াটার ট্রিটমেন্টে ব্যবহার করা সহ বিভিন্ন ইন্ডাস্ট্রির কাজে ব্যবহৃত হয়।
  • বাথরুম ও টয়লেট পরিষ্কার, কাপড় ধোয়াসহ বিভিন্ন প্রয়োজনীয় পণ্যেও ব্যবহৃত হয় হাইড্রোজেন পার অক্সাইড।

কতটা বিপজ্জনক হাইড্রোজেন পার অক্সাইড?

নানা কাজে এই হাইড্রোজেন পার অক্সাইড ব্যবহার করা হলেও সঠিকভাবে সঠিক তাপমাত্রায় এটি ব্যবহার না করলে বিপজ্জনক হতে পারে।

  • শ্বাসপ্রশ্বাসের মাধ্যমে হাইড্রোজেন পার অক্সাইড প্রবেশ করলে মাথাব্যথা, নাক জ্বলা বা বমিও হতে পারে।
  • হাইড্রোজেন পার অক্সাইডের স্ফুটনাঙ্ক পানির তুলনায় ৫০ ডিগ্রি বেশি, সে কারণে বেশি তাপমাত্রায় এটা বিপজ্জনক হতে পারে।
  • হাইড্রোজেন পার অক্সাইডের উচ্চ ঘনত্ব বেশ বিপজ্জনক।
  • হাইড্রোজেন পার অক্সাইড ত্বক ও চোখের সংস্পর্শে আনা উচিত নয়, এ থেকে সতর্ক থাকা উচিত। এটি ত্বকের ক্ষতি করতে পারে। ত্বকে ও চোখে জ্বালাপোড়া হতে পারে। সে কারণে চোখ বা ত্বকের সংস্পর্শে আসলে তাড়াতাড়ি পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলতে হবে। প্রয়োজনে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
  • অতিরিক্ত হাইড্রোজেন পার অক্সাইড ফুসফুসেও সমস্যা তৈরি করতে পারে।

হাইড্রোজেন পার অক্সাইড নিয়ে সতর্কতা

বিশেষজ্ঞরা পরামর্শ দেন এটা শীতল, শুষ্ক, ভালোভাবে বাতাস চলাচল করে এরকম জায়গায় সংরক্ষণ করা উচিত। বিশেষ করে ফ্লেমেবল কেমিক্যাল অর্থাৎ দাহ্য পদার্থের সংস্পর্শে এটা রাখা বিপজ্জনক।

দাহ্য পদার্থ থেকে দূরে এটাকে সংরক্ষণ করা উচিত। কারণ কোন দাহ্য পদার্থের কাছে থাকলে বা আগুন লাগার জায়গায় হাইড্রোজেন পার অক্সাইড থাকলে আগুন বিপজ্জনক পর্যায়ে চলে যেতে পারে, বিস্ফোরণও ঘটতে পারে।

হাইড্রোজেন পার অক্সাইড হলো এমন এক ধরনের ইন্ডাস্ট্রিয়াল কেমিক্যাল যা খুব সাবধানে ব্যবহার করতে হয়। এটা রাখার জন্য কনটেইনার আছে আলাদা। আলাদাভাবে রাখতে হলে বিশেষ ব্যবস্থায় রাখতে হবে।

হাইড্রোজেন পার অক্সাইড আগুনের মাত্রা কীভাবে বাড়ায় এবং পানি দিয়ে এর আগুন নেভানো যায় না কেন?

পারিপার্শ্বিক অনেকগুলো অবস্থার উপর নির্ভর করে হাইড্রোজেন পার অক্সাইড বিস্ফোরিত হবে কিনা।  রাসায়নিক সংরক্ষণের বৈশ্বিক নিয়ম ‘ম্যাটারিয়াল সেইফটি ডেটাশিট’ অনুযায়ী হাইড্রোজেন পার অক্সাইড রাখতে হবে গ্লাস, স্টেইনলেস স্টিল, অ্যালুমিনিয়াম অথবা প্লাসিক কনটেইনারে। অন্য কোনো ধাতুর সংস্পর্শ পেলে এটা বিক্রিয়া করে।

হাইড্রোজেন পার অক্সাইড যেখানে রাখা হয় তার আশেপাশে কী আছে, কতদিন ধরে কীভাবে রাখা আছে— এসব অনেক কিছুর ওপর নির্ভর করে এর আচরণ।

উচ্চ তাপে হাইড্রোজেন পার অক্সাইড বিস্ফোরক আচরণ করতে পারে। এটা দাহ্য পদার্থ না হলেও এটা অক্সিডাইজিং এজেন্ট। অর্থাৎ এই রাসায়নিক যৌগটি অক্সিডাইজার হিসেবে কাজ করে। আর অক্সিডাইজারে অক্সিজেন বা ফ্লোরিন বা ক্লোরিনের মতো পদার্থ যুক্ত থাকে যা দাহ্য পদার্থের মতো আচরণ করতে পারে। তার মানে হলো আগুন লাগলে তার আশেপাশে কোন অক্সিডাইজিং এজেন্ট থাকলে সেটি আগুনের মাত্রাকে আরও বাড়িয়ে দেয়, পর্যাপ্ত তাপ ও জ্বালানি পেলেই আগুনের তীব্রতা বাড়ে এবং এই তীব্রতায় বিস্ফোরণও ঘটতে পারে।

পানির সংস্পর্শে এলেও বিস্ফোরক আচরণ করতে পারে হাইড্রোজেন পার অক্সাইড। হাইড্রোজেন পার অক্সাইড একটি রাসায়নিক যৌগ সেই কারণে এই যৌগের প্রভাবে আগুন আগুন লাগলে বা আগুনের পরিসর বৃদ্ধি পেলে তা পানি দিয়ে নেভানো যায় না।

হাইড্রোজেন পার অক্সাইডের আগুন নেভানোর কৌশল কী?

এ ধরনের আগুন নেভাতে হয় অন্য কৌশলে; ফগ সিস্টেমে এ ধরনের আগুন নেভানো সম্ভব। এছাড়া ফোম বা ড্রাই পাউডার জাতীয় অগ্নি নির্বাপন যন্ত্র দিয়ে এমন আগুন নেভাতে হয়।

বিবিসি’র একটি রিপোর্ট থেকে প্রয়োজনীয় অংশ সংকলন করা হয়েছে। এতে প্রয়োজনীয় সম্পাদনার মাধ্যমে সংযোজন ও বিয়োজন করেছে বিশ্লেষণ সংকলন টিম

বাংলাদেশি বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানসমূহের মধ্য থেকে 'বিশ্লেষণ'-এর জন্য স্পনসরশিপ খোঁজা হচ্ছে। আগ্রহীদের যোগাযোগ করার জন্য অনুরোধ করা হলো। ইমেইল: contact.bishleshon@gmail.com

এ বিষয়ের আরও নিবন্ধ

রেটিনার অবক্ষয়জনিত দৃষ্টিহীনতা এবং প্লুরিপোটেন্টস্টেম কোষ থেরাপি

মানুষের স্বাভাবিক দৃষ্টিশক্তি বা দৃষ্টিসূক্ষ্মতা হলো ২০/২০। অর্থাৎ, এ ধরণের দৃষ্টির সংজ্ঞা হচ্ছে ২০ ফুট দূর থেকে একটি বস্তুকে স্পষ্টভাবে দেখার ক্ষমতা।...

ক্রমহ্রাসমান মানব Y (ওয়াই)-ক্রোমোজোম নিয়ে নানা উদ্বেগ ও জেন্ডার সমতায় দৃষ্টিপাত

যে প্রক্রিয়াটির মাধ্যমে নর ও নারী তাদের স্বতন্ত্র শারীরবৃত্তীয়তা অর্জন করে, তার মুলে রয়েছে নারী-পুরুষের সেক্স ক্রোমোজোমের ভিন্নতা। মানুষের ২৩ জোড়া ক্রোমোজোমের...

কোলেস্টেরল সম্পর্কে ভুল ধারণা

কয়েক দশক ধরে আমাদের চিকিৎসকরা বলে আসছেন, কোলেস্টেরল স্ট্রোক ও হৃদরোগের মূল কারণ এবং এসব রোগ থেকে বাঁচতে হলে আমাদের রক্তে কোলেস্টেরলের...

বিটামিন বি ১২ কেন প্রয়োজন বা গুরুত্বপূর্ণ

দেহের জন্য প্রয়োজনীয় ছয়টি উপকরণের অন্যতম ভিটামিন। ভিটামিনেরও আছে রকমফের। শুধু শাকসবজি, ফলমূলেই ভিটামিন সীমাবদ্ধ নয়, কিছু ভিটামিন প্রাণিজ উৎসেও পাওয়া যায়।...

অভিজ্ঞতাভিত্তিক শিক্ষার যুগে বাংলাদেশ

যেহেতু অভিজ্ঞতাভিত্তিক শিক্ষা একটি নতুন ধারণা, তাই বাস্তবায়নের জন্য এমন একটি কমিটি থাকা উচিত যারা ধারাবাহিকভাবে পর্যবেক্ষণ করবে পাঠ্যক্রমটি সঠিকভাবে বাস্তবায়ন হচ্ছে কি না। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো শিক্ষার্থীদের কার্যক্রম রেকর্ড করার জন্য কোন পদ্ধতি অবলম্বন করবে তাও স্পষ্ট করতে হবে। কারণ মূল্যায়নের ন্যায্যতা প্রমাণের জন্য অভিজ্ঞতার রেকর্ড সংরক্ষণের প্রয়োজন হবে।

যুগে যুগে মুসলমানদের বিরুদ্ধে ধর্মযুদ্ধ

ইউরোপে মুসলিম বিদ্বেষিতা নতুন কিছু নয়। মধ্যযুগ থেকে এর সূত্রপাত। মধ্যযুগে খ্রিষ্টানদের কাছে জেরুজালেম শহরটি ছিল তাদের ধর্মীয় প্রেরণার প্রধান কেন্দ্র। তাদের...

হোয়াইট কলার বা ভদ্রবেশী  অপরাধ কী এবং বাংলাদেশে ভদ্রবেশী অপরাধের সংঘটন

হোয়াইট কলার অপরাধ। এর কোনো আইনগত সংজ্ঞা নেই। বাংলা শব্দে এটা ‘ভদ্রবেশী অপরাধ।’ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে এর উৎপত্তি হলেও ক্রমে তা বিভিন্ন রাষ্ট্রে...
আরও পড়তে পারেন

শিরক কী, মানুষ কীভাবে শিরকে লিপ্ত হয়

ইসলাম একমাত্র ধর্ম যেখানে স্রষ্টা তার কোনো ক্ষমতাতেই কাউকে অংশীদার সাব্যস্ত করেননি। অর্থাৎ আল্লাহই একমাত্র একক ইলাহ যিনি সমস্ত ক্ষমতার অধিকারী। সৃষ্টির...

মানব সম্পদ ব্যবস্থাপনা বা হিউম্যান রিসোর্স ম্যানেজমেন্ট বলতে কী বোঝায়

মানব সম্পদ ব্যবস্থাপনা বা হিউম্যান রিসোর্স ম্যানেজমেন্ট (Human Resource management) হলো একই সঙ্গে একটি অধ্যয়নের বিষয় ও ব্যবস্থাপনা কৌশল যা একটি প্রতিষ্ঠানের...

টপ্পা গান কী, টপ্পা গানের উৎপত্তি, বাংলায় টপ্পা গান ও এর বিশেষত্ব

টপ্পা গান এক ধরনের লোকিক গান বা লোকগীতি যা ভারত ও বাংলাদেশের বাংলা ভাষাভাষী মানুষের কাছে খুবই প্রিয়। এই টপ্পা গান বলতে...

রাষ্ট্রবিজ্ঞান বলতে কী বোঝায় এবং ভারতীয় উপমহাদেশে রাজনীতি বা রাষ্ট্রচিন্তা

রাষ্ট্রবিজ্ঞান (Political Science) সমাজবিজ্ঞানের একটি শাখাবিশেষ যেখানে পরিচালন প্রক্রিয়া, রাষ্ট্র, সরকার এবং রাজনীতি সম্পর্কীয় বিষয়াবলী নিয়ে আলোকপাত করা হয়।  এরিস্টটল রাষ্ট্রবিজ্ঞানকে রাষ্ট্র...

গণতন্ত্রের সংজ্ঞা কী বা গণতন্ত্র বলতে কী বোঝায়

গণতন্ত্র বলতে কোনো জাতিরাষ্ট্রের অথবা কোনো সংগঠনের এমন একটি শাসনব্যবস্থাকে বা পরিচালনাব্যবস্থাকে বোঝায় যেখানে নীতিনির্ধারণ বা সরকারি প্রতিনিধি নির্বাচনের ক্ষেত্রে প্রত্যেক নাগরিক...

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here