১২:৩৯ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
                       

যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ ভিয়েতনাম কীভাবে বদলে গেল

ফোরকান উদ্দিন আহাম্মদ
  • প্রকাশ: ০৭:০২:৫৭ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৯ মার্চ ২০২২
  • / ৮৮৯ বার পড়া হয়েছে

ভিয়েতনামের জাতীয় পতাকা

ভিয়েতনাম (ভিয়েতনামীয়: Việt Nam ভ়িয়েত্‌ নাম্‌), সরকারি নাম ভিয়েতনাম সমাজতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র, ইন্দো চীন উপদ্বীপের পূর্ব উপকূলে অবস্থিত একটি রাষ্ট্র। ভিয়েতনামের উত্তরে গণচীন, পশ্চিমে লাওস ও কম্বোডিয়া, দক্ষিণ ও পূর্বে দক্ষিণ চীন সাগর অবস্থিত। হ্যানয় ভিয়েতনামের রাজধানী। হো চি মিন সিটি হলো ভিয়েতনামের বৃহত্তম শহর।

ফরাসি ঔপনিবেশিক শাসনের সময় কৃষির আধিপত্য বজায় থাকলেও সাধারণ চাষাবাদের চেয়ে কৃষিদ্রব্য রপ্তানির ওপর জোর দেয়া হয়। এ কারণে ধানের পাশাপাশি কফি, চা, রবার এবং অন্যান্য ক্রান্তীয় শস্য উৎপাদন শুরু হয়। ব শহরগুলোতে ক্ষুদ্র শিল্প ও বাণিজ্য খাতের বিকাশ ঘটে কিন্তু ফ্রান্সের সঙ্গে প্রতিযোগিতার সৃষ্টি হবে বলে ফরাসি ঔপনিবেশিক শাসকেরা এগুলোকে তেমন উৎসাহিত করেননি। ১৯৫৪ সালের দেশ বিভাগের পর উত্তর ও দক্ষিণ ভিয়েতনামের সরকার নিজ নিজ অর্থনীতি বিকাশে আলাদাভাবে মনোযোগ দেয়। তারা পৃথক অর্থনৈতিক সম্পদের ওপর ভিত্তি করে পৃথক অর্থনৈতিক ব্যবস্থা ও বাণিজ্য অংশীদার নিয়ে যাত্রা শুরু করে।

বিশ্বমানচিত্রে ভিয়েতনামের অবস্থান।

উত্তর ভিয়েতনামে অত্যন্ত কেন্দ্রীভূত ও পরিকল্পিত অর্থনীতি বিরাজমান ছিল। অন্যদিকে দক্ষিণ ভিয়েতনামে মুক্ত বাজার অর্থনীতিকে উৎসাহ দেওয়া হয়। ১৯৭৬ সালে দুই ভিয়েতনাম একত্রিত হবার পর উত্তর ভিয়েতনাম ধীরে ধীরে তার পরিকল্পিত অর্থনৈতিক ব্যবস্থা গোটা ভিয়েতনামের ওপর প্রয়োগ করে। ১৯৮৬ সালে অবশ্য সরকার একটি সংস্কার প্রকল্প হাতে নেয়, যার কারণে দেশটি একটি মিশ্র অর্থনৈতিক ব্যবস্থায় রূপান্তরিত হয়। এর ফলে ভিয়েতনামে দ্রুত অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ঘটতে শুরু করে।

দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার একটি কৃষিপ্রধান দেশ ভিয়েতনাম। ভিয়েতনামের আয়তন প্রায় ১ লাখ ২৭ হাজার বর্গকিলোমিটার। দীর্ঘ প্রলম্বিত যুদ্ধে দেশটি বড়ো শোচনীয় অবস্থায় পড়েছিল। তবে এখন ভিয়েতনাম আর সেই যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ নেই। দেশটির মাথাপিছু আয় এখন প্রায় আড়াই হাজার মার্কিন ডলারের বেশি। জিডিপির প্রবৃদ্ধি ৭ শতাংশ ছাড়িয়ে যাবে বলে আশা করছে দেশটির সরকার। ছোটো এ দেশটিই এখন প্রযুক্তি খাতে ব্যাপক উন্নতি করেছে। ভিয়েতনামের বেসরকারি এক গবেষণায় দেখা গেছে, বর্তমানে ৬ কোটি ৪০ লাখ মানুষকে ইন্টারনেট সেবার আওতায় আনা গেছে। ২০১৭ সালের চেয়ে যা ২৮ শতাংশ বেশি। দেশটিতে মোবাইল সাবস্ক্রিপশনের সংখ্যা ১৫ কোটি। অর্থাৎ প্রতি একজনে ১ দশমিক ৫টি মোবাইল ফোন ব্যবহার করেন।

মানচিত্রে ভিয়েতনাম ও এর পার্শ্ববর্তী অঞ্চলসমূহ।

দেশটির বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, ২০১৫ সালে দেশটির ডিজিটাল ইকোনমির বাজার ৩০০ কোটি ডলারের ছিল। ২০২১ সালে এসে তা ১০০০ কোটি ডলার ছাড়িয়েছে। ২০২৫ সাল নাগাদ তা ৩ হাজার বিলিয়ন ডলারে পৌঁছাবে বলে মনে করছে দেশটি। স্যামসাংয়ের মতো বড়ো ব প্রযুক্তি নির্মাতা প্রতিষ্ঠান তাদের কারখানা গড়ে তুলেছে ভিয়েতনামে। নিজেদের ডিজিটাল অর্থনীতির দেশ হিসেবে গড়ে তুলতে ব্যাপক অবকাঠামোগত উন্নয়ন করছে তারা। ভিয়েতনামের যে শ্রমিক শ্রেণি তাদের মজুরি বাংলাদেশের চেয়ে বেশি, আবার তাদের উৎপাদনশীলতাও বেশি। একটু যদি পেছনে যাওয়া যায় তাহলে বলতে হবে, কেন ভিয়েতনামের শ্রমিকরা বাংলাদেশের শ্রমিকদের থেকে বেশি উৎপাদনশীল? এর একটা বড় কারণ হলো বাংলাদেশের মানবসম্পদ উন্নয়নে সরকার যে টাকা ব্যয় করে তার থেকে অনেক বেশি টাকা ভিয়েতনাম ব্যয় করে। আর এ কারণে ভিয়েতনাম দক্ষ মানবসম্পদ উন্নয়নে অনেক দূর এগিয়ে আছে।

যুদ্ধে পরাজয়ের প্রতিশোধ নেয়ার জন্য স্বাধীন ভিয়েতনামকে আমেরিকানরা অর্থনৈতিক অবরোধ দিয়ে পঙ্গু রাখারও ব্যবস্থা করেছে দুই দশক। এতদ?সত্ত্বেও ভিয়েতনাম কখনোই কোনো দেশের কাছে মাথানত করেনি; ভিক্ষার জন্য হাত পাতেনি। এমনকি, অনুদান ও ‘সফট লোন’-এর আশায় জাতিসংঘের স্বল্পোন্নত দেশের ক্যাটেগরিতে অন্তর্ভুক্ত হতেও আবেদন করেনি। অথচ কী দারুণ কষ্টকর ছিল ১৯৭৫-পরবর্তী বছরগুলোতে ভিয়েতনামের জনগণের জীবন! ভিয়েতনামের জনগণের মাথাপিছু জিডিপি ১৯৭৪ সালে ছিল মাত্র ৬৫ ডলার, ১৯৮৫ সালে ছিল ২৮৫ ডলার। ২০১৭ সালে আইএমএফের প্রাক্কলন মোতাবেক ভিয়েতনামের মাথাপিছু নমিনাল জিডিপি ২৩৫৬ ডলারে পৌঁছে গেছে। আর উইকিপিডিয়া দেখাচ্ছে, ২০১৯ সালে ওই মাথাপিছু জিডিপি ২৭৮৮ ডলার হয়ে গেছে, যেটাকে ‘মিরাকল’ আখ্যায়িত করা হচ্ছে।

ক্রয়ক্ষমতার সমতা ভিত্তিতে ভিয়েতনামের মাথাপিছু জিডিপি ২০১৭ সালে ছিল ৬৭৭৫ পিপিপি ডলার, আর উইকিপিডিয়া মোতাবেক ২০১৯ সালে তা পৌঁছে গেছে ৮০৫৯ পিপিপি ডলারে। ভিয়েতনামের জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার ২০০৫ সালে সর্বোচ্চ ৮ দশমিক ৫ শতাংশে পৌঁছে গিয়েছিল। গত এক দশক ধরে তা ৬ দশমিক ৫-৭ দশমিক ৫ শতাংশের মধ্যে রয়ে গেছে। ২০১৯ সালে ভিয়েতনামের মাত্র ৮ দশমিক ৪ শতাংশ জনগণ দারিদ্র্যসীমার নিচে অবস্থান করছে বলে প্রাক্কলিত হয়েছে। ভিয়েতনাম সরকারের সংস্কার কার্যক্রম বাস্তবায়নেই তা সম্ভব হয়েছে।

হ্যানয় শহর, ভিয়েতনাম।

বাংলাদেশ আর ভিয়েতনামের যাত্রা শুরু হয়েছিল কাছাকাছি সময়েই। আজ দুই দেশের মধ্যে ব্যবধান যোজন-যোজন। ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর ঢাকায় ৯৩ হাজার পাকিস্তানি সৈন্য যৌথ বাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ করে। আর ১৯৭৫ সালের ৩০ এপ্রিল পলায়নরত মার্কিন সৈন্যদের শেষ দলটি যুক্তরাষ্ট্রের উদ্দেশ্যে জাহাজে চড়ে বসে। একই দিন উত্তর ভিয়েতনামের যোদ্ধাদের ট্যাংক হো চি মিন সিটির প্রেসিডেনশিয়াল প্যালেসের সদর দরজা গুঁড়িয়ে ভেতরে প্রবেশ করে। তখন মার্কিন সমর্থিত দক্ষিণ ভিয়েতনাম সরকারের প্রেসিডেন্ট বেরিয়ে এসে বলেন, তিনি ক্ষমতা ছাড়তে প্রস্তুত। উত্তরের বিজয়ীরা উত্তরে বলেছিলেন, ‘যা আপনার হাতে নেই, তা আপনি ছাড়বেন কী করে?’

১৯৭৭ সালে দুই ভিয়েতনাম এক হয়। পরিকল্পনা, কৌশল আর সংস্কার আজকে ভিয়েতনামকে একটি শক্তিশালী অর্থনীতির দেশে পরিণত করেছে। শুধু একটা উদাহরণ দিই, বিশ্বব্যাংকের সহজে ব্যবসা সূচক বা ইজ অব ডুয়িং বিজনেসে ভিয়েতনামের অবস্থান ৬৯তম, বাংলাদেশ ১৬৮। ভিয়েতনাম সম্পর্কে এত কিছুর অবতারণা এ জন্য যে বহুজাতিক কোম্পানিগুলো চীনের পরে এখন ভিয়েতনামকে তাদের পণ্য উৎপাদনের কেন্দ্র হিসেবে বেছে নিচ্ছে। বাণিজ্যযুদ্ধ, করোনাভাইরাস, উৎপাদন খরচ বেড়ে যাওয়া এবং ঝুঁকি কমাতে চীন থেকে উৎপাদন ক্ষমতার একাংশ নিয়ে যে সম্মিলিত প্রস্থান শুরু হয়েছে, তাতে সবচেয়ে লাভবান ভিয়েতনাম।

১৯৯৫ সালে ভিয়েতনাম আসিয়ানের সদস্য হয়েছে, একদা চরম শত্রু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ২০০০ সালে এবং পরবর্তী সময়ে গণচীন, ভারত, জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়ার সঙ্গে ‘মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি’ করেছে। এমনকি যুক্তরাষ্ট্রের কিছু জায়গায় ভিয়েতনাম কমিউনিটির সাংগঠনিক দক্ষতার ভিত্তিতে আমেরিকার অর্থনীতিতে অবদান রেখে যাচ্ছে। বিশ্ববাণিজ্য সংস্থার সদস্য হতে ২০০৭ সাল পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়েছে ভিয়েতনামকে। বৈদেশিক বিনিয়োগকে প্রবলভাবে উৎসাহিত করছে ভিয়েতনাম। স্যামসাং, এলজি, অলিম্পাস, পাইওনিয়ার-এসব কোম্পানির দক্ষিণ-পূর্ব এশীয় হাব এখন ভিয়েতনামে। ভিয়েতনামে বার্ষিক বৈদেশিক বিনিয়োগপ্রবাহ ২০-২৫ বিলিয়ন ডলার, যেখানে বাংলাদেশে বৈদেশিক বিনিয়োগ এখনো তিন বিলিয়ন ডলারের নিচে। ভিয়েতনামের ব্যাংকিং ব্যবস্থা রাষ্ট্রীয় মালিকানায় রয়েছে, কিন্তু উৎপাদনকারীদের কাছে এবং বিশেষত ছোটো ও মাঝারি প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছে সুলভে ব্যাংকঋণের অভিগম্যতায় ভিয়েতনাম অনুকরণীয় নজির সৃষ্টি করেছে।

ভিয়েতনামের সবচেয়ে বড়ো শহর হো চি মিন।

ভিয়েতনামে দুর্নীতির প্রকোপ অনেক কম। ভিয়েতনামের শ্রমশক্তি ও মানবপুঁজি বাংলাদেশের চেয়ে শিক্ষিত, দক্ষ এবং পরিশ্রমী। ভিয়েতনামের ভৌত অবকাঠামো উন্নয়ন চমকপ্রদ। নন-ট্রেডিশনাল তৈরি পোশাক রপ্তানিতে ভিয়েতনাম বাংলাদেশকে হটিয়ে মাঝেমধ্যে গণচীনের পর বিশ্বের দ্বিতীয় অবস্থানে চলে যাচ্ছে। ইলেকট্রনিক পণ্য রপ্তানিতে সিঙ্গাপুরের পর ভিয়েতনাম দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় দ্বিতীয় অবস্থানে। চাল রপ্তানিতে থাইল্যান্ডকে হটিয়ে ভিয়েতনাম ভারতের পর বিশ্বের দ্বিতীয় অবস্থানে উঠে এসেছে। কফি রপ্তানিতে ব্রাজিলের পর ভিয়েতনাম বিশ্বে দ্বিতীয় স্থানে। সাড়ে ৯ কোটি জনসংখ্যার দেশ ভিয়েতনামের রপ্তানি আয় ২০১৮ সালে ছিল ২৪৩.৪৮ বিলিয়ন ডলার, আমদানি ব্যয় ২৩৬.৬৯ বিলিয়ন ডলার। বর্তমানে তা আরও বৃদ্ধি পেয়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে গণচীনের চলমান বাণিজ্যযুদ্ধের কারণে গণচীনের অনেক শিল্পকারখানা ভিয়েতনামে সরিয়ে নেয়া হচ্ছে। ক্রমবর্ধমান অর্থনৈতিক গতিশীলতার পেছনের চাবিকাঠি হলো ভিয়েতনামে দুর্নীতির প্রকোপ অনেক কম। ভিয়েতনামের শ্রমশক্তি ও মানবপুঁজি বাংলাদেশের চেয়ে অনেক শিক্ষিত, দক্ষ ও পরিশ্রমী। ভিয়েতনামের ভৌত অবকাঠামো উন্নয়ন চমকপ্রদ। বন্দর, মহাসড়ক ও সুলভ গণপরিবহনের ক্ষেত্রে ভিয়েতনাম দ্রুত আধুনিকায়নে সফল একটি দেশ।

গত ৩০ বছরে মানবসম্পদ উন্নয়ন ও অবকাঠামোগত উন্নয়নে ব্যাপক বিনিয়োগ করেছে ভিয়েতনাম। দ্রুত বর্ধমান জনসংখ্যার মুখোমুখি হয়ে বর্তমানে ভিয়েতনামের জনসংখ্যা সাড়ে ৯ কোটি। যার অর্ধেকই ৩৫ বছরের কম বয়সী। ১৯৮৬ সালে দেশটির জনসংখ্যা ছিল ৬ কোটি। বলা হয়, যত বেশি জনসংখ্যা, তত বেশি কর্মসংস্থানের চাহিদা। তবে ভিয়েতনাম অবকাঠামো খাতে প্রচুর পরিমাণে বিনিয়োগ করেছে। ফলে জনসংখ্যা কোনো সমস্যা হয়ে দাঁড়ায়নি দেশটির জন্য। জনসাধারণের জন্য ইন্টারনেট সস্তা হয়েছে। চতুর্থ শিল্পবিপ্লব দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশটির দরজায় কড়া নাড়ছে এবং সেই লক্ষ্যে পৌঁছাতে আইটি অবকাঠামো স্থাপনের জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নিচ্ছে তারা। প্রয়োজনীয় অবকাঠামো এবং বাজারবান্ধব নীতির কারণে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় বিদেশি বিনিয়োগ এবং উৎপাদনকেন্দ্র হিসেবে পরিণত হয়েছে ভিয়েতনাম। তৈরি পোশাক খাতের পাশাপাশি ইলেকট্রনিকস পণ্য তৈরির বড়ো বড়ো কোম্পানিও ভিয়েতনামে কারখানা প্রতিষ্ঠা করেছে।

বিশ্বের কাছে ইকোনমিক মিরাকল নামে খ্যাত ভিয়েতনাম উন্নয়ন আজ আমাদের জন্য অনুসরণীয় ও শিক্ষণীয়। মিশ্র সমাজতান্ত্রিক বাজার অর্থনীতি, বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ সৃষ্টি ও সুষ্ঠু পরিকল্পনা মাপিক দূরন্ত গতিতে এগিয়ে চলা ভিয়েতনামের উন্নয়ন দেখে আমরা অনেক কিছু শিখতে পারি, জানতে পারি। উৎপাদনশীলতা ও কর্মদক্ষতায় ভিয়েতনামকে আজ এ পর্যায়ে নিয়ে গেছে। ভিয়েতনামে ঈর্ষণীয় অর্থনীতি উত্থান বিশ্বকে হতবাক করে দিয়েছে। মানবসম্পদ উন্নয়ন ভিয়েতনামের অর্থনীতির ভিতকে মজুবত করেছে। বিশ্বের বহুজাতিক কোম্পানিগুলো ভিয়েতনামমুখী করেছে, অধিকন্তু দুর্নীতিমুক্ত ভিয়েতনামের এ উন্নয়ন মডেল বিশ্বের কাছে গ্রহণযোগ্যতা লাভ করেছে এবং তা বিশ্বনন্দিত হয়েছে।

সৌজন্যে— সংবাদ

বিষয়:

শেয়ার করুন

মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার তথ্য সংরক্ষিত রাখুন

লেখকতথ্য

ফোরকান উদ্দিন আহাম্মদ

সাবেক উপমহাপরিচালক, বাংলাদেশ আনসার ও ভিডিপি

ওয়েবসাইটটির সার্বিক উন্নতির জন্য বাংলাদেশের বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানসমূহের মধ্য থেকে স্পনসর খোঁজা হচ্ছে।

যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ ভিয়েতনাম কীভাবে বদলে গেল

প্রকাশ: ০৭:০২:৫৭ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৯ মার্চ ২০২২
ভিয়েতনাম (ভিয়েতনামীয়: Việt Nam ভ়িয়েত্‌ নাম্‌), সরকারি নাম ভিয়েতনাম সমাজতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র, ইন্দো চীন উপদ্বীপের পূর্ব উপকূলে অবস্থিত একটি রাষ্ট্র। ভিয়েতনামের উত্তরে গণচীন, পশ্চিমে লাওস ও কম্বোডিয়া, দক্ষিণ ও পূর্বে দক্ষিণ চীন সাগর অবস্থিত। হ্যানয় ভিয়েতনামের রাজধানী। হো চি মিন সিটি হলো ভিয়েতনামের বৃহত্তম শহর।

ফরাসি ঔপনিবেশিক শাসনের সময় কৃষির আধিপত্য বজায় থাকলেও সাধারণ চাষাবাদের চেয়ে কৃষিদ্রব্য রপ্তানির ওপর জোর দেয়া হয়। এ কারণে ধানের পাশাপাশি কফি, চা, রবার এবং অন্যান্য ক্রান্তীয় শস্য উৎপাদন শুরু হয়। ব শহরগুলোতে ক্ষুদ্র শিল্প ও বাণিজ্য খাতের বিকাশ ঘটে কিন্তু ফ্রান্সের সঙ্গে প্রতিযোগিতার সৃষ্টি হবে বলে ফরাসি ঔপনিবেশিক শাসকেরা এগুলোকে তেমন উৎসাহিত করেননি। ১৯৫৪ সালের দেশ বিভাগের পর উত্তর ও দক্ষিণ ভিয়েতনামের সরকার নিজ নিজ অর্থনীতি বিকাশে আলাদাভাবে মনোযোগ দেয়। তারা পৃথক অর্থনৈতিক সম্পদের ওপর ভিত্তি করে পৃথক অর্থনৈতিক ব্যবস্থা ও বাণিজ্য অংশীদার নিয়ে যাত্রা শুরু করে।

বিশ্বমানচিত্রে ভিয়েতনামের অবস্থান।

উত্তর ভিয়েতনামে অত্যন্ত কেন্দ্রীভূত ও পরিকল্পিত অর্থনীতি বিরাজমান ছিল। অন্যদিকে দক্ষিণ ভিয়েতনামে মুক্ত বাজার অর্থনীতিকে উৎসাহ দেওয়া হয়। ১৯৭৬ সালে দুই ভিয়েতনাম একত্রিত হবার পর উত্তর ভিয়েতনাম ধীরে ধীরে তার পরিকল্পিত অর্থনৈতিক ব্যবস্থা গোটা ভিয়েতনামের ওপর প্রয়োগ করে। ১৯৮৬ সালে অবশ্য সরকার একটি সংস্কার প্রকল্প হাতে নেয়, যার কারণে দেশটি একটি মিশ্র অর্থনৈতিক ব্যবস্থায় রূপান্তরিত হয়। এর ফলে ভিয়েতনামে দ্রুত অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ঘটতে শুরু করে।

দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার একটি কৃষিপ্রধান দেশ ভিয়েতনাম। ভিয়েতনামের আয়তন প্রায় ১ লাখ ২৭ হাজার বর্গকিলোমিটার। দীর্ঘ প্রলম্বিত যুদ্ধে দেশটি বড়ো শোচনীয় অবস্থায় পড়েছিল। তবে এখন ভিয়েতনাম আর সেই যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ নেই। দেশটির মাথাপিছু আয় এখন প্রায় আড়াই হাজার মার্কিন ডলারের বেশি। জিডিপির প্রবৃদ্ধি ৭ শতাংশ ছাড়িয়ে যাবে বলে আশা করছে দেশটির সরকার। ছোটো এ দেশটিই এখন প্রযুক্তি খাতে ব্যাপক উন্নতি করেছে। ভিয়েতনামের বেসরকারি এক গবেষণায় দেখা গেছে, বর্তমানে ৬ কোটি ৪০ লাখ মানুষকে ইন্টারনেট সেবার আওতায় আনা গেছে। ২০১৭ সালের চেয়ে যা ২৮ শতাংশ বেশি। দেশটিতে মোবাইল সাবস্ক্রিপশনের সংখ্যা ১৫ কোটি। অর্থাৎ প্রতি একজনে ১ দশমিক ৫টি মোবাইল ফোন ব্যবহার করেন।

মানচিত্রে ভিয়েতনাম ও এর পার্শ্ববর্তী অঞ্চলসমূহ।

দেশটির বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, ২০১৫ সালে দেশটির ডিজিটাল ইকোনমির বাজার ৩০০ কোটি ডলারের ছিল। ২০২১ সালে এসে তা ১০০০ কোটি ডলার ছাড়িয়েছে। ২০২৫ সাল নাগাদ তা ৩ হাজার বিলিয়ন ডলারে পৌঁছাবে বলে মনে করছে দেশটি। স্যামসাংয়ের মতো বড়ো ব প্রযুক্তি নির্মাতা প্রতিষ্ঠান তাদের কারখানা গড়ে তুলেছে ভিয়েতনামে। নিজেদের ডিজিটাল অর্থনীতির দেশ হিসেবে গড়ে তুলতে ব্যাপক অবকাঠামোগত উন্নয়ন করছে তারা। ভিয়েতনামের যে শ্রমিক শ্রেণি তাদের মজুরি বাংলাদেশের চেয়ে বেশি, আবার তাদের উৎপাদনশীলতাও বেশি। একটু যদি পেছনে যাওয়া যায় তাহলে বলতে হবে, কেন ভিয়েতনামের শ্রমিকরা বাংলাদেশের শ্রমিকদের থেকে বেশি উৎপাদনশীল? এর একটা বড় কারণ হলো বাংলাদেশের মানবসম্পদ উন্নয়নে সরকার যে টাকা ব্যয় করে তার থেকে অনেক বেশি টাকা ভিয়েতনাম ব্যয় করে। আর এ কারণে ভিয়েতনাম দক্ষ মানবসম্পদ উন্নয়নে অনেক দূর এগিয়ে আছে।

যুদ্ধে পরাজয়ের প্রতিশোধ নেয়ার জন্য স্বাধীন ভিয়েতনামকে আমেরিকানরা অর্থনৈতিক অবরোধ দিয়ে পঙ্গু রাখারও ব্যবস্থা করেছে দুই দশক। এতদ?সত্ত্বেও ভিয়েতনাম কখনোই কোনো দেশের কাছে মাথানত করেনি; ভিক্ষার জন্য হাত পাতেনি। এমনকি, অনুদান ও ‘সফট লোন’-এর আশায় জাতিসংঘের স্বল্পোন্নত দেশের ক্যাটেগরিতে অন্তর্ভুক্ত হতেও আবেদন করেনি। অথচ কী দারুণ কষ্টকর ছিল ১৯৭৫-পরবর্তী বছরগুলোতে ভিয়েতনামের জনগণের জীবন! ভিয়েতনামের জনগণের মাথাপিছু জিডিপি ১৯৭৪ সালে ছিল মাত্র ৬৫ ডলার, ১৯৮৫ সালে ছিল ২৮৫ ডলার। ২০১৭ সালে আইএমএফের প্রাক্কলন মোতাবেক ভিয়েতনামের মাথাপিছু নমিনাল জিডিপি ২৩৫৬ ডলারে পৌঁছে গেছে। আর উইকিপিডিয়া দেখাচ্ছে, ২০১৯ সালে ওই মাথাপিছু জিডিপি ২৭৮৮ ডলার হয়ে গেছে, যেটাকে ‘মিরাকল’ আখ্যায়িত করা হচ্ছে।

ক্রয়ক্ষমতার সমতা ভিত্তিতে ভিয়েতনামের মাথাপিছু জিডিপি ২০১৭ সালে ছিল ৬৭৭৫ পিপিপি ডলার, আর উইকিপিডিয়া মোতাবেক ২০১৯ সালে তা পৌঁছে গেছে ৮০৫৯ পিপিপি ডলারে। ভিয়েতনামের জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার ২০০৫ সালে সর্বোচ্চ ৮ দশমিক ৫ শতাংশে পৌঁছে গিয়েছিল। গত এক দশক ধরে তা ৬ দশমিক ৫-৭ দশমিক ৫ শতাংশের মধ্যে রয়ে গেছে। ২০১৯ সালে ভিয়েতনামের মাত্র ৮ দশমিক ৪ শতাংশ জনগণ দারিদ্র্যসীমার নিচে অবস্থান করছে বলে প্রাক্কলিত হয়েছে। ভিয়েতনাম সরকারের সংস্কার কার্যক্রম বাস্তবায়নেই তা সম্ভব হয়েছে।

হ্যানয় শহর, ভিয়েতনাম।

বাংলাদেশ আর ভিয়েতনামের যাত্রা শুরু হয়েছিল কাছাকাছি সময়েই। আজ দুই দেশের মধ্যে ব্যবধান যোজন-যোজন। ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর ঢাকায় ৯৩ হাজার পাকিস্তানি সৈন্য যৌথ বাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ করে। আর ১৯৭৫ সালের ৩০ এপ্রিল পলায়নরত মার্কিন সৈন্যদের শেষ দলটি যুক্তরাষ্ট্রের উদ্দেশ্যে জাহাজে চড়ে বসে। একই দিন উত্তর ভিয়েতনামের যোদ্ধাদের ট্যাংক হো চি মিন সিটির প্রেসিডেনশিয়াল প্যালেসের সদর দরজা গুঁড়িয়ে ভেতরে প্রবেশ করে। তখন মার্কিন সমর্থিত দক্ষিণ ভিয়েতনাম সরকারের প্রেসিডেন্ট বেরিয়ে এসে বলেন, তিনি ক্ষমতা ছাড়তে প্রস্তুত। উত্তরের বিজয়ীরা উত্তরে বলেছিলেন, ‘যা আপনার হাতে নেই, তা আপনি ছাড়বেন কী করে?’

১৯৭৭ সালে দুই ভিয়েতনাম এক হয়। পরিকল্পনা, কৌশল আর সংস্কার আজকে ভিয়েতনামকে একটি শক্তিশালী অর্থনীতির দেশে পরিণত করেছে। শুধু একটা উদাহরণ দিই, বিশ্বব্যাংকের সহজে ব্যবসা সূচক বা ইজ অব ডুয়িং বিজনেসে ভিয়েতনামের অবস্থান ৬৯তম, বাংলাদেশ ১৬৮। ভিয়েতনাম সম্পর্কে এত কিছুর অবতারণা এ জন্য যে বহুজাতিক কোম্পানিগুলো চীনের পরে এখন ভিয়েতনামকে তাদের পণ্য উৎপাদনের কেন্দ্র হিসেবে বেছে নিচ্ছে। বাণিজ্যযুদ্ধ, করোনাভাইরাস, উৎপাদন খরচ বেড়ে যাওয়া এবং ঝুঁকি কমাতে চীন থেকে উৎপাদন ক্ষমতার একাংশ নিয়ে যে সম্মিলিত প্রস্থান শুরু হয়েছে, তাতে সবচেয়ে লাভবান ভিয়েতনাম।

১৯৯৫ সালে ভিয়েতনাম আসিয়ানের সদস্য হয়েছে, একদা চরম শত্রু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ২০০০ সালে এবং পরবর্তী সময়ে গণচীন, ভারত, জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়ার সঙ্গে ‘মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি’ করেছে। এমনকি যুক্তরাষ্ট্রের কিছু জায়গায় ভিয়েতনাম কমিউনিটির সাংগঠনিক দক্ষতার ভিত্তিতে আমেরিকার অর্থনীতিতে অবদান রেখে যাচ্ছে। বিশ্ববাণিজ্য সংস্থার সদস্য হতে ২০০৭ সাল পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়েছে ভিয়েতনামকে। বৈদেশিক বিনিয়োগকে প্রবলভাবে উৎসাহিত করছে ভিয়েতনাম। স্যামসাং, এলজি, অলিম্পাস, পাইওনিয়ার-এসব কোম্পানির দক্ষিণ-পূর্ব এশীয় হাব এখন ভিয়েতনামে। ভিয়েতনামে বার্ষিক বৈদেশিক বিনিয়োগপ্রবাহ ২০-২৫ বিলিয়ন ডলার, যেখানে বাংলাদেশে বৈদেশিক বিনিয়োগ এখনো তিন বিলিয়ন ডলারের নিচে। ভিয়েতনামের ব্যাংকিং ব্যবস্থা রাষ্ট্রীয় মালিকানায় রয়েছে, কিন্তু উৎপাদনকারীদের কাছে এবং বিশেষত ছোটো ও মাঝারি প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছে সুলভে ব্যাংকঋণের অভিগম্যতায় ভিয়েতনাম অনুকরণীয় নজির সৃষ্টি করেছে।

ভিয়েতনামের সবচেয়ে বড়ো শহর হো চি মিন।

ভিয়েতনামে দুর্নীতির প্রকোপ অনেক কম। ভিয়েতনামের শ্রমশক্তি ও মানবপুঁজি বাংলাদেশের চেয়ে শিক্ষিত, দক্ষ এবং পরিশ্রমী। ভিয়েতনামের ভৌত অবকাঠামো উন্নয়ন চমকপ্রদ। নন-ট্রেডিশনাল তৈরি পোশাক রপ্তানিতে ভিয়েতনাম বাংলাদেশকে হটিয়ে মাঝেমধ্যে গণচীনের পর বিশ্বের দ্বিতীয় অবস্থানে চলে যাচ্ছে। ইলেকট্রনিক পণ্য রপ্তানিতে সিঙ্গাপুরের পর ভিয়েতনাম দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় দ্বিতীয় অবস্থানে। চাল রপ্তানিতে থাইল্যান্ডকে হটিয়ে ভিয়েতনাম ভারতের পর বিশ্বের দ্বিতীয় অবস্থানে উঠে এসেছে। কফি রপ্তানিতে ব্রাজিলের পর ভিয়েতনাম বিশ্বে দ্বিতীয় স্থানে। সাড়ে ৯ কোটি জনসংখ্যার দেশ ভিয়েতনামের রপ্তানি আয় ২০১৮ সালে ছিল ২৪৩.৪৮ বিলিয়ন ডলার, আমদানি ব্যয় ২৩৬.৬৯ বিলিয়ন ডলার। বর্তমানে তা আরও বৃদ্ধি পেয়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে গণচীনের চলমান বাণিজ্যযুদ্ধের কারণে গণচীনের অনেক শিল্পকারখানা ভিয়েতনামে সরিয়ে নেয়া হচ্ছে। ক্রমবর্ধমান অর্থনৈতিক গতিশীলতার পেছনের চাবিকাঠি হলো ভিয়েতনামে দুর্নীতির প্রকোপ অনেক কম। ভিয়েতনামের শ্রমশক্তি ও মানবপুঁজি বাংলাদেশের চেয়ে অনেক শিক্ষিত, দক্ষ ও পরিশ্রমী। ভিয়েতনামের ভৌত অবকাঠামো উন্নয়ন চমকপ্রদ। বন্দর, মহাসড়ক ও সুলভ গণপরিবহনের ক্ষেত্রে ভিয়েতনাম দ্রুত আধুনিকায়নে সফল একটি দেশ।

গত ৩০ বছরে মানবসম্পদ উন্নয়ন ও অবকাঠামোগত উন্নয়নে ব্যাপক বিনিয়োগ করেছে ভিয়েতনাম। দ্রুত বর্ধমান জনসংখ্যার মুখোমুখি হয়ে বর্তমানে ভিয়েতনামের জনসংখ্যা সাড়ে ৯ কোটি। যার অর্ধেকই ৩৫ বছরের কম বয়সী। ১৯৮৬ সালে দেশটির জনসংখ্যা ছিল ৬ কোটি। বলা হয়, যত বেশি জনসংখ্যা, তত বেশি কর্মসংস্থানের চাহিদা। তবে ভিয়েতনাম অবকাঠামো খাতে প্রচুর পরিমাণে বিনিয়োগ করেছে। ফলে জনসংখ্যা কোনো সমস্যা হয়ে দাঁড়ায়নি দেশটির জন্য। জনসাধারণের জন্য ইন্টারনেট সস্তা হয়েছে। চতুর্থ শিল্পবিপ্লব দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশটির দরজায় কড়া নাড়ছে এবং সেই লক্ষ্যে পৌঁছাতে আইটি অবকাঠামো স্থাপনের জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নিচ্ছে তারা। প্রয়োজনীয় অবকাঠামো এবং বাজারবান্ধব নীতির কারণে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় বিদেশি বিনিয়োগ এবং উৎপাদনকেন্দ্র হিসেবে পরিণত হয়েছে ভিয়েতনাম। তৈরি পোশাক খাতের পাশাপাশি ইলেকট্রনিকস পণ্য তৈরির বড়ো বড়ো কোম্পানিও ভিয়েতনামে কারখানা প্রতিষ্ঠা করেছে।

বিশ্বের কাছে ইকোনমিক মিরাকল নামে খ্যাত ভিয়েতনাম উন্নয়ন আজ আমাদের জন্য অনুসরণীয় ও শিক্ষণীয়। মিশ্র সমাজতান্ত্রিক বাজার অর্থনীতি, বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ সৃষ্টি ও সুষ্ঠু পরিকল্পনা মাপিক দূরন্ত গতিতে এগিয়ে চলা ভিয়েতনামের উন্নয়ন দেখে আমরা অনেক কিছু শিখতে পারি, জানতে পারি। উৎপাদনশীলতা ও কর্মদক্ষতায় ভিয়েতনামকে আজ এ পর্যায়ে নিয়ে গেছে। ভিয়েতনামে ঈর্ষণীয় অর্থনীতি উত্থান বিশ্বকে হতবাক করে দিয়েছে। মানবসম্পদ উন্নয়ন ভিয়েতনামের অর্থনীতির ভিতকে মজুবত করেছে। বিশ্বের বহুজাতিক কোম্পানিগুলো ভিয়েতনামমুখী করেছে, অধিকন্তু দুর্নীতিমুক্ত ভিয়েতনামের এ উন্নয়ন মডেল বিশ্বের কাছে গ্রহণযোগ্যতা লাভ করেছে এবং তা বিশ্বনন্দিত হয়েছে।

সৌজন্যে— সংবাদ