০২:৩০ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ
                       

সামাজিকীকরণ কাকে বলে? সামাজিকীকরণের সংজ্ঞা, প্রক্রিয়া, বাহন ও নীতি কী?

ড. ইকবাল হুসাইন
  • প্রকাশ: ০৯:০৩:৪৭ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২২ ফেব্রুয়ারি ২০২২
  • / ৬৮০০১ বার পড়া হয়েছে

সামাজিকীকরণ এমন একটি প্রক্রিয়া যে প্রক্রিয়ার মাধ্যমে মানব শিশু সমাজের একজন কাঙ্ক্ষিত পূর্ণাঙ্গ সদস্য হিসেবে গড়ে ওঠে। সমাজবিজ্ঞানী কিংসলে ডেভিসের মতে, "সামাজিকীকরণ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ব্যক্তি পুরোপুরি সামাজিক মানুষে পরিণত হয়।" | ছবি: Larm Rmah/Unsplash

ব্যক্তির সামাজিকীকরণ (socialisation) একটি চলমান প্রক্রিয়া। এই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে একটি মানব শিশু যথার্থ সামাজিক জীবে পরিণত হয়। যথাযথ সামাজিকীকরণ না হলে শিশু মানসিক বিকাশে ব্যাঘাত ঘটতে পারে। সে ক্ষেত্রে অনেক অসামাজিক আচরণ করতে পারে। এ প্রক্রিয়া মানব শিশুর জন্মের পর থেকে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত চলতে থাকে। এ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে শিশু সমাজ ও সংস্কৃতির নানা বিষয়াদি, যেমন— সামাজিক রীতিনীতি, সামাজিক প্রতিবেশ, সামাজিক শৃংখলা, আচার-আচরণ, মূল্যবোধ ইত্যাদি বিষয় শেখার মাধ্যমে পরিপূর্ণ সামাজিক জীবে রূপান্তরিত হয়। ব্যক্তির সামাজিকীকরণ প্রক্রিয়ায় কোনো ধরনের অনিয়ম ঘটতে তা সমাজের উপর প্রভাব পড়ে। তখন অসংলগ্ন আচরণ করার জন্য আমরা ঐ ব্যক্তিতে ‘অসামাজিক’ বলে আখ্যায়িত করি। ব্যক্তির এ শিক্ষণ প্রক্রিয়ায় প্রথমে তার মা-বাবা, পরিবারের সদস্যরা, প্রতিবেশি, আত্মীয়-স্বজন এবং পরবর্তীতে তার শিক্ষক, সহযোগী, চেনা অচেনা অনেকেই খুব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকেন।

সামাজিকীকরণ কী? (What is Socialization?)

মানব শিশু ভূমিষ্ঠ হবার পর তাকে সামাজিক পরিবেশের সাথে খাপ খাইয়ে টিকে থাকার প্রয়োজনে অনেক কিছু শিখতে হয়। এ শিক্ষণ প্রক্রিয়া জন্মের পর থেকে শুরু হয় এবং তার জীবনব্যাপি চলতে থাকে। শিশুর এ শিক্ষণ প্রক্রিয়ায় প্রথমে তার মা-বাবা, পরিবারের সদস্যরা, প্রতিবেশি, আত্মীয়-স্বজন এবং পরবর্তীতে তার শিক্ষক, সহযোগী, চেনা অচেনা অনেকেই খুব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। এ শিক্ষণ প্রক্রিয়া মানব শিশুকে ভাষা, আচার আচরণ, প্রথা পদ্ধতি, মূল্যবোধ, আদব-কায়দা ইত্যাদি সম্পর্কে অবহিত করানোর মাধ্যমে তাকে সামাজিক মানুষ হয়ে উঠতে সহায়তা করে। জীবনব্যাপি চলতে থাকা এই শিক্ষণ প্রক্রিয়াকেই সামাজিকীকরণ বলে।

সামাজিকীকরণের সংজ্ঞা

সামাজিকীকরণ প্রক্রিয়ায় ব্যক্তি মূলত: সংস্কৃতি সম্পর্কে অবহিত হয়। 

  • সামাজিকীকরণ প্রসঙ্গে মনোবিজ্ঞানী বোগারডাস (Bogardus) বলেছেন, “সামাজিকীকরণ হচ্ছে এমন একটি প্রক্রিয়া, যার মাধ্যমে ব্যক্তি জনকল্যাণের নিমিত্তে একত্রে নির্ভরযোগ্য আচরণ করতে শেখে। এটি করতে গিয়ে সামাজিক আত্মনিয়ন্ত্রণ, দায়িত্ব ও সুসামঞ্জস্য ব্যক্তিত্বের অভিজ্ঞতা লাভ করে।”
  • Kingsley Davis তাঁর Human Society গ্রন্থে বলেছেন, “যে প্রণালীতে মানব শিশু পূর্ণাঙ্গ সামাজিক মানুষে পরিণত হয় তাই সামাজিকীকরণ।”
  • Ogburn and Nimkoff “যে পদ্ধতিতে ব্যক্তি নিজ নিজ মানবগোষ্ঠীর ব্যবহারিক মূল্যবোধের সাথে সামঞ্জস্য প্রতিষ্ঠায় সক্ষম হয়, তাই সামাজিকীকরণ।” তাদের মতে, সামাজিকীকরণ ব্যতীত সমাজে জীবন-যাপন করা সম্ভব নয়।

উদাহরণ হিসেবে বলা যেতে পারে একটা মেয়ে শিশু তার মা দাদিমা কিংবা বোনকে অনুকরণ করে এবং কীভাবে কন্যা, বোন, বান্ধবী, স্ত্রী কিংবা মা হয়ে উঠবে সেটা ধীরে ধীরে রপ্ত করে। তার চারিপাশের ঘনিষ্ঠ জনও সেভাবেই তাকে বেড়ে উঠতে সহায়তা করে। যেমন— তার জন্মদিনে তাকে পুতুল কিংবা রান্নার খেলনা হাড়ি-পাতিল ইত্যাদি উপহার দেয়। 

পক্ষান্তরে, ছেলে শিশু অনুকরণ করে তার বাবাকে, ভাইকে কিংবা পরিবারের কোনো পুরুষ সদস্যকে এবং সে পুত্র, ভাই, বন্ধু, স্বামী কিংবা বাবা হয়ে উঠার প্রক্রিয়া ধীরে ধীরে রপ্ত করে। সে খেলনা হিসেবে পায় ফুটবল, রেসের গাড়ি-ঘোড়া, রোবোট মানব কিংবা পেশীবহুল পুরুষের প্রতিবিম্ব যা সমাজে তার ভূমিকা নির্ধারণ করতে উৎসাহিত করে।

সামাজিকীকরণ প্রক্রিয়া (Process of Socialisation)

মানুষের জীবন প্রক্রিয়া একই সাথে শারীরিক ও সামাজিক এবং প্রাকৃতিকভাবে গড়ে উঠে। শিশুরা যে পরিবেশ বেড়ে উঠে সেই পরিবেশের সংস্কৃতি ও মানুষের বিভিন্ন ধরনের ব্যবহার ও সামাজিকীকরণের ক্ষেত্রে আমৃত্যু জীবনের প্রতিটি পর্যায়ে কোনো না কোনো কিছু শিখছে। সামাজিকীকরণ একটি প্রক্রিয়া যা প্রতিটি পর্যায়ে চলতে থাকে।

উদাহরণ হিসেবে আমরা বলতে পারি বড়দের সালাম দেওয়া, শ্রেণিকক্ষে শিক্ষক আসলে দাঁড়ানো এগুলো আমরা জীবনের কোনো না কোনো পর্যায়ে শিখেছি আর তার প্রকাশ ঘটাচ্ছি। আনন্দ ও দুঃখের বহিঃপ্রকাশ প্রত্যেক সমাজ একই হলেও এক্ষেত্রে সামাজিকীকরণের ভূমিকা রয়েছে। 

শৈশবকাল 

শৈশবকাল জীবনের আলাদা ও পৃথক একটি অংশ। শিশুরা নবজাতক থেকে আলাদা, শৈশবকাল উঠতি বয়স (কৈশোর) ও শিশুদের মাঝে অবস্থিত। ফরাসি ইতিহাসবিদ ফিলিপ্পো আরাইস (Philippe Aries) ১৯৬৫ সালে মত প্রকাশ করেন যে শৈশব কাল জীবনের পৃথক ও উন্নতির একটা পর্যায়। শিশুরা আলাদা কিছু ব্যবহার ও কাজ করে থাকে। শিশুরা বড়দের সাথে একই ধরনের কাজে যোগদান করে। যদিও সেটা শৈশবকালীন ভূমিকা (Role Take) করাকে বোঝায় এই পৃথক কিছু কাজ বা ব্যবহার শিশুদের সবার থেকে আলাদা করে ।

কৈশোর কাল 

কিশোর বা কৈশোরকাল ধারণাটি আমাদের কাছে একজন ব্যক্তি নিজেস্ব যৌন বিষয়ে সক্ষম হয় একই সাথে জন্মদান এর ক্ষেত্রে এই বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ এ সময় কিশোররা একটা বড় পরিবর্তন (যেমন-শারীরিক ও মানসিক) এর ভেতর দিয়ে যায়। এ সময়ে অর্থাৎ কিশোররা প্রাপ্তবয়স্কদের বিভিন্ন বিষয়গুলোকে অনুকরণ করে কিন্তু তাদের আচরণে থাকে শিশুদের ছাপ আর তারা শিশুদের প্রচলিত আইনের আওতায় পরিগণিত হয় তারা বড়দের মতো কাজে যেতে ইচ্ছা পোষণ করে কিন্তু তারা অবস্থান করে বিদ্যালয়ে।

উঠতি প্রাপ্ত বয়স্ক

উঠতি প্রাপ্তবয়স্ক পর্যায় হলো আলাদা একটি পর্যায়। এসময়ে ব্যক্তিগত ও শারীরিক (যৌনতা) বিষয়ে উন্নতি হয়ে থাকে। বিভিন্ন দল ও মানুষের উপর পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায় যে মানুষ তার উঠতি বিশ বছরের প্রথমে বিভিন্ন স্থানে ঘুরে বেড়ানো এবং সেই সাথে, শারীরিক ও যৌনতা বিষয়ক, রাজনৈতিক এবং ধর্মীয় বিষয় এ জ্ঞান অন্বেষণ ও প্রকাশ করায় ইচ্ছুক থাকে।

প্রাপ্ত বয়স্ক

প্রাপ্তবয়স্ক পর্যায়ে ব্যক্তি ভবিষৎ কিছু বিষয়ের জন্য নিজস্ব কিছু বিষয়ে পরিবর্তন এনে থাকে ভবিষ্যতকে নতুন ও সুন্দর মাত্রা দেওয়ার জন্য। মানুষ সাধারণত মোবাইল প্রযুক্তির বদৌলতে পিতামাতা ও অন্যান্যদের সাথে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রক্ষা করছে। আর কাজের বিষয়ে তারা পূর্বের প্রজন্মের মতোই অনুকরণ করছে। যেমন: বিবাহ, পারিবারিক জীবন এবং কিছু সামাজিক বিষয়ে সমস্যার সমাধান। শারীরিক ও বৈবাহিক সম্পর্ক স্থাপন করার ক্ষেত্রে বর্তমানে ব্যক্তির নিজস্ব অগ্রাধিকার বেশি। এটা অবশ্যই ব্যক্তির স্বাধীনতার সাথে সম্পর্কিত। 

বার্ধক্য

প্রত্যেক সমাজে বয়স্ক মানুষেরা বেশি সম্মান ও শ্রদ্ধার পাত্র হিসেব পরিগণিত হয়। বিভিন্ন দেশে বয়স্কদের সুবিধা ভালো থাকলেও চাকরি থেকে অব্যাহতির পরে তাদের জীবন পূর্বের থেকে কিছুটা দুর্বল হয়। এটা ভাবা হয় যে যারা বয়স্ক বয়সের সাথে তাল মিলিয়ে চলছে নিজের সমৃদ্ধ ভান্ডার নিয়ে তাদেরকে যদি স্বীকৃতির চেয়ে বেশি সামাজিক সুযোগ সুবিধা দেওয়া তাহলে সেটা অনেক ভালো হয়। আর যদি কোনো সমাজে স্বাস্থ্যবান বয়স্ক মানুষের সংখ্যা বেশি থাকে সেটা বহিঃস্থ ও অন্যান্য দৃষ্টিতে অনেক সুন্দর হিসেবে বিবেচিত হয়।

সামাজিকীকরণের ভূমিকা বা তাৎপর্য

সামাজিকীকরণ হলো একটি বিশেষ প্রক্রিয়া। প্রত্যেক মানব শিশু এই সামাজিকীকরণের ভেতর দিয়ে যায়। সামাজিকীকরণ একজন শিশুকে পারিপর্শ্বিক পরিবেশ, সংস্কৃতি ও সমাজের উপযোগী হয়ে উঠে। 

সামাজিকীকরণের মাধ্যমে শিশুর সামাজিক সত্ত্বার বিকাশ হয়ে থাকে। সামাজিকীকরণের ভেতর দিয়ে মানব শিশু আদব কায়দা, ব্যবহার, নৈতিকতা, মূল্যবোধ শিখে থাকে। ফলে মানব শিশু অথবা একজন ব্যক্তি তার ব্যক্তি সত্তার সাথে এবং সে গোষ্ঠী সত্ত্বার সাথে আবদ্ধ হয়ে থাকে। সামাজিকীকরণে পরিবার, সমাজ, বিদ্যালয়, প্রতিবেশি সাথী , ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের ভূমিকা রয়েছে। 

সামাজিক পরিবেশ ও বংশগতির প্রভাব মানব শিশুর সামাজিকীকরণে বড় ভূমিকা পালন করে থাকে। এখন আমরা সামাজিক পরিবেশ ও বংশগতির উপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করব।

সামাজিকীকরণের বাহনসমূহ (Agents of Socialization)

সামাজিকীকরণ হলো একটি চলমান প্রক্রিয়া । বিভিন্ন মাধ্যম ও প্রতিষ্ঠানসমূহ ব্যক্তির সামাজিকীকরণের ক্ষেত্রে বড় ধরনের ভূমিকা পালন করে থাকে।

পরিবার

মানুষের জীব সামগ্রিক জীবনের সামাজিকীকরণ প্রথমে পরিবার থেকে শুরু হয়। নবজাতক শোনা, দেখা, স্বাদ নেওয়া সহ বিভিন্ন বিষয় প্রথমে পরিবার থেকে শিখে থাকে। পরিবারের সদস্যরা সামাজিক পরিবেশের ক্ষেত্রে বড় ধরনের ভূমিকা পালন করে। সব সমাজ ও পরিবার সামাজিকীকরণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। বিভিন্ন ধরনের আদব কায়দা, নীতি নৈতিকতা এবং শিক্ষার প্রথম ধাপ পরিবার থেকে শিশু শিখে থাকে।

শিক্ষা প্রতিষ্ঠান

সামাজিকীকরণে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ভূমিকা রয়েছে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠার থেকে ব্যক্তি বিভিন্ন নৈতিক জ্ঞান লাভ করে। একজন দ্বান্বিক তাত্ত্বিক পর্যবেক্ষণ করেন যে, স্কুল কলেজ অর্থাৎ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কাজের পুরস্কার এবং শাস্তির বিষয়টা আছে সেটার প্রথম পরিচয় ঘটে থাকে। শিশুরা সময়ের সাথে সাথে বেশি বাস্তববাদী হয়ে উঠে সেটা শারীরিক মানবিক ও সামাজিক সক্ষমতাকেও বুঝিয়ে থাকে।

উদাহরণ হিসেবে বলা যায় যুক্তরাষ্ট্রে উচ্চ শিক্ষা গ্রহণ অনেক ব্যয়বহুল তার পরেও সেখানে দেখা যায় যে মেধাবী শিক্ষার্থীরা এক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশিক্ষণ ও অন্যান্য সুবিধা পেয়ে থাকে। একই সাথে কম দক্ষ শিক্ষার্থীরা এই সব সুযোগ সুবিধা থেকে বঞ্চিত হয়। 

সঙ্গী ও সহপাঠী

সামাজিকীকরণে পরিবারের এর সাথে সাথে সঙ্গী ও সহপাঠীরাও ভূমিকা পালন করে থাকে। পরিবার থেকে বেরিয়ে শিশুরা একই বয়সী শিশুর সাথে একই সামাজিক যোগ্যতা ভাগ করে । এক অপরের সাথে মিথষ্ক্রিয়ার ফলে ব্যবহার আচরণে পরিবর্তন আসে।

গণমাধ্যম ও প্রযুক্তি

গণমাধ্যম ও প্রযুক্তি শিশুর সামাজিকীকরণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। রেডিও, টেলিভিশন, রেকর্ডগান এবং ইন্টারনেরট এগুলো সামাজিকীকরণের সাথে জড়িত। বর্তমানে ইন্টারনেট টেলিভিশনের থেকে বেশি সামাজিকীকরণে ভূমিকা পালন করছে। বিভিন্ন ধরনের টেলিভিশন অনুষ্ঠান এমনকি ব্যবসায়িক অনুষ্ঠান উঠতি বয়সীদের সাথে বিভিন্ন অপরিচিত সংস্কৃতি ও জীবনযাপন এর ধরনের সাথে পরিচয় করিয়ে দেয়।

কর্মক্ষেত্র

একটি পেশায় কী ধরনের ব্যবহার যথাপোযুক্ত সেটা মানবিক সামাজিকীকরণের গুরুত্বপূর্ণ একটি পর্যায়। সহকর্মীর কাছে থেকেও বিভিন্ন বিষয় আদান প্রদান হয়ে থাকে। যখন একটা পেশা থেকে আরেকটি পেশায় কেউ যোগদান করে পেশাগত সামাজিকীকরণ প্রত্যেকের কর্মক্ষেত্র বড় পরিবর্তন আনে ও চলতে থাকে। প্রযুক্তিগত দক্ষতাও সামাজিকীকরণে ভূমিকা পালন করছে।

ধর্ম

ধর্ম পারিবারিক বন্ধন সুদৃঢ় করার ক্ষেত্রে চালিকা শক্তি হিসেবে কাজ করে। সমাজের মানুষের ধর্মীয় আদর্শ, বিশ্বাস ও জীবনধারার উপর ধর্ম ভূমিকা পালন করে থাকে। সঠিক জীবনধারার লক্ষে ধর্মের গুরুত্ব অপরিসীম।

রাষ্ট্র ও সরকার ব্যবস্থা

রাষ্ট্র ও প্রচলিত সরকার ব্যবস্থা সামাজিকীকরণের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। রাষ্ট্র একটি কর্তৃত্বমূলক প্রতিষ্ঠান। রাষ্ট্রের বিভিন্ন সুনির্দিষ্ট নিয়মনীতি থাকে যা রাষ্ট্রের সদস্য বা জনগণকে মেনে চলতে হয়। অন্যথায় শাস্তির ব্যবস্থা থাকে। শিশু ছোটবেলা থেকে এই সমস্ত শাস্তির বিষয় ও জীবনযাপনের নিয়মের সাথে পরিচালিত হয়ে উঠে। সবশেষে এটাই প্রতীয়মান যে, রাষ্ট্র ও সরকার ব্যবস্থা শিশুর সামাজিকীকরণে ভূমিকা পালন করে।

সামাজিক নীতি ও সামাজিকীকরণ

শিশুর সামাজিকীকরণের ক্ষেত্রে সামাজিক নীতি বিভিন্ন ভূমিকা পালন করে থাকে। বহির্বিশ্বে বিশেষ শিশু প্রতিপালনের ক্ষেত্রে উন্নত দেশগুলো বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করে থাকে। শিশুর সামাজিকীকরণ হলো খুবই প্রয়োজনীয় এবং অত্যবশ্যকীয়। সে জন্য সরকার সিদ্ধান্ত নেয় কোন কোন পদক্ষেপ শিশুর সামাজিকীকরণে অবদান রাখবে। ডেনমার্ক ও সুইডেনে দেশের এক তৃতীয়াংশ শিশুর প্রতিপালনে সরকার বিভিন্ন নীতিমালা গ্রহণ করেছে। অনুন্নত ও উন্নয়নশীল দেশগুলো শিশুর প্রতিপালনে বিভিন্ন পদক্ষেপ নিলেও দুর্বল অর্থনৈতিক ব্যবস্থার কারণে পদক্ষেপগুলো বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ফলপ্রসূ হয় না।

হুসাইন, ই., সাত্তার, মো. আ., রিপন, আ. রা. মু., সরকার, ম. (২০১৭). সমাজবিজ্ঞান: ১ম পত্র. বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়।

শেয়ার করুন

মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার তথ্য সংরক্ষিত রাখুন

তাহসান খান এবং মুনজেরিন শহীদের দুটি প্রফেশনাল কমিউনিকেশন কোর্স করুন ২৮% ছাড়ে
তাহসান খান এবং মুনজেরিন শহীদের দুটি প্রফেশনাল কমিউনিকেশন কোর্স করুন ২৮% ছাড়ে

২৮℅ ছাড় পেতে ৩০/০৬/২০২৪ তারিখের মধ্যে প্রোমো কোড “professional10” ব্যবহার করুন। বিস্তারিত জানতে ও ভর্তি হতে ক্লিক করুন এখানে

সামাজিকীকরণ কাকে বলে? সামাজিকীকরণের সংজ্ঞা, প্রক্রিয়া, বাহন ও নীতি কী?

প্রকাশ: ০৯:০৩:৪৭ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২২ ফেব্রুয়ারি ২০২২

ব্যক্তির সামাজিকীকরণ (socialisation) একটি চলমান প্রক্রিয়া। এই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে একটি মানব শিশু যথার্থ সামাজিক জীবে পরিণত হয়। যথাযথ সামাজিকীকরণ না হলে শিশু মানসিক বিকাশে ব্যাঘাত ঘটতে পারে। সে ক্ষেত্রে অনেক অসামাজিক আচরণ করতে পারে। এ প্রক্রিয়া মানব শিশুর জন্মের পর থেকে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত চলতে থাকে। এ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে শিশু সমাজ ও সংস্কৃতির নানা বিষয়াদি, যেমন— সামাজিক রীতিনীতি, সামাজিক প্রতিবেশ, সামাজিক শৃংখলা, আচার-আচরণ, মূল্যবোধ ইত্যাদি বিষয় শেখার মাধ্যমে পরিপূর্ণ সামাজিক জীবে রূপান্তরিত হয়। ব্যক্তির সামাজিকীকরণ প্রক্রিয়ায় কোনো ধরনের অনিয়ম ঘটতে তা সমাজের উপর প্রভাব পড়ে। তখন অসংলগ্ন আচরণ করার জন্য আমরা ঐ ব্যক্তিতে ‘অসামাজিক’ বলে আখ্যায়িত করি। ব্যক্তির এ শিক্ষণ প্রক্রিয়ায় প্রথমে তার মা-বাবা, পরিবারের সদস্যরা, প্রতিবেশি, আত্মীয়-স্বজন এবং পরবর্তীতে তার শিক্ষক, সহযোগী, চেনা অচেনা অনেকেই খুব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকেন।

সামাজিকীকরণ কী? (What is Socialization?)

মানব শিশু ভূমিষ্ঠ হবার পর তাকে সামাজিক পরিবেশের সাথে খাপ খাইয়ে টিকে থাকার প্রয়োজনে অনেক কিছু শিখতে হয়। এ শিক্ষণ প্রক্রিয়া জন্মের পর থেকে শুরু হয় এবং তার জীবনব্যাপি চলতে থাকে। শিশুর এ শিক্ষণ প্রক্রিয়ায় প্রথমে তার মা-বাবা, পরিবারের সদস্যরা, প্রতিবেশি, আত্মীয়-স্বজন এবং পরবর্তীতে তার শিক্ষক, সহযোগী, চেনা অচেনা অনেকেই খুব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। এ শিক্ষণ প্রক্রিয়া মানব শিশুকে ভাষা, আচার আচরণ, প্রথা পদ্ধতি, মূল্যবোধ, আদব-কায়দা ইত্যাদি সম্পর্কে অবহিত করানোর মাধ্যমে তাকে সামাজিক মানুষ হয়ে উঠতে সহায়তা করে। জীবনব্যাপি চলতে থাকা এই শিক্ষণ প্রক্রিয়াকেই সামাজিকীকরণ বলে।

সামাজিকীকরণের সংজ্ঞা

সামাজিকীকরণ প্রক্রিয়ায় ব্যক্তি মূলত: সংস্কৃতি সম্পর্কে অবহিত হয়। 

  • সামাজিকীকরণ প্রসঙ্গে মনোবিজ্ঞানী বোগারডাস (Bogardus) বলেছেন, “সামাজিকীকরণ হচ্ছে এমন একটি প্রক্রিয়া, যার মাধ্যমে ব্যক্তি জনকল্যাণের নিমিত্তে একত্রে নির্ভরযোগ্য আচরণ করতে শেখে। এটি করতে গিয়ে সামাজিক আত্মনিয়ন্ত্রণ, দায়িত্ব ও সুসামঞ্জস্য ব্যক্তিত্বের অভিজ্ঞতা লাভ করে।”
  • Kingsley Davis তাঁর Human Society গ্রন্থে বলেছেন, “যে প্রণালীতে মানব শিশু পূর্ণাঙ্গ সামাজিক মানুষে পরিণত হয় তাই সামাজিকীকরণ।”
  • Ogburn and Nimkoff “যে পদ্ধতিতে ব্যক্তি নিজ নিজ মানবগোষ্ঠীর ব্যবহারিক মূল্যবোধের সাথে সামঞ্জস্য প্রতিষ্ঠায় সক্ষম হয়, তাই সামাজিকীকরণ।” তাদের মতে, সামাজিকীকরণ ব্যতীত সমাজে জীবন-যাপন করা সম্ভব নয়।

উদাহরণ হিসেবে বলা যেতে পারে একটা মেয়ে শিশু তার মা দাদিমা কিংবা বোনকে অনুকরণ করে এবং কীভাবে কন্যা, বোন, বান্ধবী, স্ত্রী কিংবা মা হয়ে উঠবে সেটা ধীরে ধীরে রপ্ত করে। তার চারিপাশের ঘনিষ্ঠ জনও সেভাবেই তাকে বেড়ে উঠতে সহায়তা করে। যেমন— তার জন্মদিনে তাকে পুতুল কিংবা রান্নার খেলনা হাড়ি-পাতিল ইত্যাদি উপহার দেয়। 

পক্ষান্তরে, ছেলে শিশু অনুকরণ করে তার বাবাকে, ভাইকে কিংবা পরিবারের কোনো পুরুষ সদস্যকে এবং সে পুত্র, ভাই, বন্ধু, স্বামী কিংবা বাবা হয়ে উঠার প্রক্রিয়া ধীরে ধীরে রপ্ত করে। সে খেলনা হিসেবে পায় ফুটবল, রেসের গাড়ি-ঘোড়া, রোবোট মানব কিংবা পেশীবহুল পুরুষের প্রতিবিম্ব যা সমাজে তার ভূমিকা নির্ধারণ করতে উৎসাহিত করে।

সামাজিকীকরণ প্রক্রিয়া (Process of Socialisation)

মানুষের জীবন প্রক্রিয়া একই সাথে শারীরিক ও সামাজিক এবং প্রাকৃতিকভাবে গড়ে উঠে। শিশুরা যে পরিবেশ বেড়ে উঠে সেই পরিবেশের সংস্কৃতি ও মানুষের বিভিন্ন ধরনের ব্যবহার ও সামাজিকীকরণের ক্ষেত্রে আমৃত্যু জীবনের প্রতিটি পর্যায়ে কোনো না কোনো কিছু শিখছে। সামাজিকীকরণ একটি প্রক্রিয়া যা প্রতিটি পর্যায়ে চলতে থাকে।

উদাহরণ হিসেবে আমরা বলতে পারি বড়দের সালাম দেওয়া, শ্রেণিকক্ষে শিক্ষক আসলে দাঁড়ানো এগুলো আমরা জীবনের কোনো না কোনো পর্যায়ে শিখেছি আর তার প্রকাশ ঘটাচ্ছি। আনন্দ ও দুঃখের বহিঃপ্রকাশ প্রত্যেক সমাজ একই হলেও এক্ষেত্রে সামাজিকীকরণের ভূমিকা রয়েছে। 

শৈশবকাল 

শৈশবকাল জীবনের আলাদা ও পৃথক একটি অংশ। শিশুরা নবজাতক থেকে আলাদা, শৈশবকাল উঠতি বয়স (কৈশোর) ও শিশুদের মাঝে অবস্থিত। ফরাসি ইতিহাসবিদ ফিলিপ্পো আরাইস (Philippe Aries) ১৯৬৫ সালে মত প্রকাশ করেন যে শৈশব কাল জীবনের পৃথক ও উন্নতির একটা পর্যায়। শিশুরা আলাদা কিছু ব্যবহার ও কাজ করে থাকে। শিশুরা বড়দের সাথে একই ধরনের কাজে যোগদান করে। যদিও সেটা শৈশবকালীন ভূমিকা (Role Take) করাকে বোঝায় এই পৃথক কিছু কাজ বা ব্যবহার শিশুদের সবার থেকে আলাদা করে ।

কৈশোর কাল 

কিশোর বা কৈশোরকাল ধারণাটি আমাদের কাছে একজন ব্যক্তি নিজেস্ব যৌন বিষয়ে সক্ষম হয় একই সাথে জন্মদান এর ক্ষেত্রে এই বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ এ সময় কিশোররা একটা বড় পরিবর্তন (যেমন-শারীরিক ও মানসিক) এর ভেতর দিয়ে যায়। এ সময়ে অর্থাৎ কিশোররা প্রাপ্তবয়স্কদের বিভিন্ন বিষয়গুলোকে অনুকরণ করে কিন্তু তাদের আচরণে থাকে শিশুদের ছাপ আর তারা শিশুদের প্রচলিত আইনের আওতায় পরিগণিত হয় তারা বড়দের মতো কাজে যেতে ইচ্ছা পোষণ করে কিন্তু তারা অবস্থান করে বিদ্যালয়ে।

উঠতি প্রাপ্ত বয়স্ক

উঠতি প্রাপ্তবয়স্ক পর্যায় হলো আলাদা একটি পর্যায়। এসময়ে ব্যক্তিগত ও শারীরিক (যৌনতা) বিষয়ে উন্নতি হয়ে থাকে। বিভিন্ন দল ও মানুষের উপর পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায় যে মানুষ তার উঠতি বিশ বছরের প্রথমে বিভিন্ন স্থানে ঘুরে বেড়ানো এবং সেই সাথে, শারীরিক ও যৌনতা বিষয়ক, রাজনৈতিক এবং ধর্মীয় বিষয় এ জ্ঞান অন্বেষণ ও প্রকাশ করায় ইচ্ছুক থাকে।

প্রাপ্ত বয়স্ক

প্রাপ্তবয়স্ক পর্যায়ে ব্যক্তি ভবিষৎ কিছু বিষয়ের জন্য নিজস্ব কিছু বিষয়ে পরিবর্তন এনে থাকে ভবিষ্যতকে নতুন ও সুন্দর মাত্রা দেওয়ার জন্য। মানুষ সাধারণত মোবাইল প্রযুক্তির বদৌলতে পিতামাতা ও অন্যান্যদের সাথে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রক্ষা করছে। আর কাজের বিষয়ে তারা পূর্বের প্রজন্মের মতোই অনুকরণ করছে। যেমন: বিবাহ, পারিবারিক জীবন এবং কিছু সামাজিক বিষয়ে সমস্যার সমাধান। শারীরিক ও বৈবাহিক সম্পর্ক স্থাপন করার ক্ষেত্রে বর্তমানে ব্যক্তির নিজস্ব অগ্রাধিকার বেশি। এটা অবশ্যই ব্যক্তির স্বাধীনতার সাথে সম্পর্কিত। 

বার্ধক্য

প্রত্যেক সমাজে বয়স্ক মানুষেরা বেশি সম্মান ও শ্রদ্ধার পাত্র হিসেব পরিগণিত হয়। বিভিন্ন দেশে বয়স্কদের সুবিধা ভালো থাকলেও চাকরি থেকে অব্যাহতির পরে তাদের জীবন পূর্বের থেকে কিছুটা দুর্বল হয়। এটা ভাবা হয় যে যারা বয়স্ক বয়সের সাথে তাল মিলিয়ে চলছে নিজের সমৃদ্ধ ভান্ডার নিয়ে তাদেরকে যদি স্বীকৃতির চেয়ে বেশি সামাজিক সুযোগ সুবিধা দেওয়া তাহলে সেটা অনেক ভালো হয়। আর যদি কোনো সমাজে স্বাস্থ্যবান বয়স্ক মানুষের সংখ্যা বেশি থাকে সেটা বহিঃস্থ ও অন্যান্য দৃষ্টিতে অনেক সুন্দর হিসেবে বিবেচিত হয়।

সামাজিকীকরণের ভূমিকা বা তাৎপর্য

সামাজিকীকরণ হলো একটি বিশেষ প্রক্রিয়া। প্রত্যেক মানব শিশু এই সামাজিকীকরণের ভেতর দিয়ে যায়। সামাজিকীকরণ একজন শিশুকে পারিপর্শ্বিক পরিবেশ, সংস্কৃতি ও সমাজের উপযোগী হয়ে উঠে। 

সামাজিকীকরণের মাধ্যমে শিশুর সামাজিক সত্ত্বার বিকাশ হয়ে থাকে। সামাজিকীকরণের ভেতর দিয়ে মানব শিশু আদব কায়দা, ব্যবহার, নৈতিকতা, মূল্যবোধ শিখে থাকে। ফলে মানব শিশু অথবা একজন ব্যক্তি তার ব্যক্তি সত্তার সাথে এবং সে গোষ্ঠী সত্ত্বার সাথে আবদ্ধ হয়ে থাকে। সামাজিকীকরণে পরিবার, সমাজ, বিদ্যালয়, প্রতিবেশি সাথী , ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের ভূমিকা রয়েছে। 

সামাজিক পরিবেশ ও বংশগতির প্রভাব মানব শিশুর সামাজিকীকরণে বড় ভূমিকা পালন করে থাকে। এখন আমরা সামাজিক পরিবেশ ও বংশগতির উপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করব।

সামাজিকীকরণের বাহনসমূহ (Agents of Socialization)

সামাজিকীকরণ হলো একটি চলমান প্রক্রিয়া । বিভিন্ন মাধ্যম ও প্রতিষ্ঠানসমূহ ব্যক্তির সামাজিকীকরণের ক্ষেত্রে বড় ধরনের ভূমিকা পালন করে থাকে।

পরিবার

মানুষের জীব সামগ্রিক জীবনের সামাজিকীকরণ প্রথমে পরিবার থেকে শুরু হয়। নবজাতক শোনা, দেখা, স্বাদ নেওয়া সহ বিভিন্ন বিষয় প্রথমে পরিবার থেকে শিখে থাকে। পরিবারের সদস্যরা সামাজিক পরিবেশের ক্ষেত্রে বড় ধরনের ভূমিকা পালন করে। সব সমাজ ও পরিবার সামাজিকীকরণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। বিভিন্ন ধরনের আদব কায়দা, নীতি নৈতিকতা এবং শিক্ষার প্রথম ধাপ পরিবার থেকে শিশু শিখে থাকে।

শিক্ষা প্রতিষ্ঠান

সামাজিকীকরণে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ভূমিকা রয়েছে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠার থেকে ব্যক্তি বিভিন্ন নৈতিক জ্ঞান লাভ করে। একজন দ্বান্বিক তাত্ত্বিক পর্যবেক্ষণ করেন যে, স্কুল কলেজ অর্থাৎ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কাজের পুরস্কার এবং শাস্তির বিষয়টা আছে সেটার প্রথম পরিচয় ঘটে থাকে। শিশুরা সময়ের সাথে সাথে বেশি বাস্তববাদী হয়ে উঠে সেটা শারীরিক মানবিক ও সামাজিক সক্ষমতাকেও বুঝিয়ে থাকে।

উদাহরণ হিসেবে বলা যায় যুক্তরাষ্ট্রে উচ্চ শিক্ষা গ্রহণ অনেক ব্যয়বহুল তার পরেও সেখানে দেখা যায় যে মেধাবী শিক্ষার্থীরা এক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশিক্ষণ ও অন্যান্য সুবিধা পেয়ে থাকে। একই সাথে কম দক্ষ শিক্ষার্থীরা এই সব সুযোগ সুবিধা থেকে বঞ্চিত হয়। 

সঙ্গী ও সহপাঠী

সামাজিকীকরণে পরিবারের এর সাথে সাথে সঙ্গী ও সহপাঠীরাও ভূমিকা পালন করে থাকে। পরিবার থেকে বেরিয়ে শিশুরা একই বয়সী শিশুর সাথে একই সামাজিক যোগ্যতা ভাগ করে । এক অপরের সাথে মিথষ্ক্রিয়ার ফলে ব্যবহার আচরণে পরিবর্তন আসে।

গণমাধ্যম ও প্রযুক্তি

গণমাধ্যম ও প্রযুক্তি শিশুর সামাজিকীকরণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। রেডিও, টেলিভিশন, রেকর্ডগান এবং ইন্টারনেরট এগুলো সামাজিকীকরণের সাথে জড়িত। বর্তমানে ইন্টারনেট টেলিভিশনের থেকে বেশি সামাজিকীকরণে ভূমিকা পালন করছে। বিভিন্ন ধরনের টেলিভিশন অনুষ্ঠান এমনকি ব্যবসায়িক অনুষ্ঠান উঠতি বয়সীদের সাথে বিভিন্ন অপরিচিত সংস্কৃতি ও জীবনযাপন এর ধরনের সাথে পরিচয় করিয়ে দেয়।

কর্মক্ষেত্র

একটি পেশায় কী ধরনের ব্যবহার যথাপোযুক্ত সেটা মানবিক সামাজিকীকরণের গুরুত্বপূর্ণ একটি পর্যায়। সহকর্মীর কাছে থেকেও বিভিন্ন বিষয় আদান প্রদান হয়ে থাকে। যখন একটা পেশা থেকে আরেকটি পেশায় কেউ যোগদান করে পেশাগত সামাজিকীকরণ প্রত্যেকের কর্মক্ষেত্র বড় পরিবর্তন আনে ও চলতে থাকে। প্রযুক্তিগত দক্ষতাও সামাজিকীকরণে ভূমিকা পালন করছে।

ধর্ম

ধর্ম পারিবারিক বন্ধন সুদৃঢ় করার ক্ষেত্রে চালিকা শক্তি হিসেবে কাজ করে। সমাজের মানুষের ধর্মীয় আদর্শ, বিশ্বাস ও জীবনধারার উপর ধর্ম ভূমিকা পালন করে থাকে। সঠিক জীবনধারার লক্ষে ধর্মের গুরুত্ব অপরিসীম।

রাষ্ট্র ও সরকার ব্যবস্থা

রাষ্ট্র ও প্রচলিত সরকার ব্যবস্থা সামাজিকীকরণের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। রাষ্ট্র একটি কর্তৃত্বমূলক প্রতিষ্ঠান। রাষ্ট্রের বিভিন্ন সুনির্দিষ্ট নিয়মনীতি থাকে যা রাষ্ট্রের সদস্য বা জনগণকে মেনে চলতে হয়। অন্যথায় শাস্তির ব্যবস্থা থাকে। শিশু ছোটবেলা থেকে এই সমস্ত শাস্তির বিষয় ও জীবনযাপনের নিয়মের সাথে পরিচালিত হয়ে উঠে। সবশেষে এটাই প্রতীয়মান যে, রাষ্ট্র ও সরকার ব্যবস্থা শিশুর সামাজিকীকরণে ভূমিকা পালন করে।

সামাজিক নীতি ও সামাজিকীকরণ

শিশুর সামাজিকীকরণের ক্ষেত্রে সামাজিক নীতি বিভিন্ন ভূমিকা পালন করে থাকে। বহির্বিশ্বে বিশেষ শিশু প্রতিপালনের ক্ষেত্রে উন্নত দেশগুলো বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করে থাকে। শিশুর সামাজিকীকরণ হলো খুবই প্রয়োজনীয় এবং অত্যবশ্যকীয়। সে জন্য সরকার সিদ্ধান্ত নেয় কোন কোন পদক্ষেপ শিশুর সামাজিকীকরণে অবদান রাখবে। ডেনমার্ক ও সুইডেনে দেশের এক তৃতীয়াংশ শিশুর প্রতিপালনে সরকার বিভিন্ন নীতিমালা গ্রহণ করেছে। অনুন্নত ও উন্নয়নশীল দেশগুলো শিশুর প্রতিপালনে বিভিন্ন পদক্ষেপ নিলেও দুর্বল অর্থনৈতিক ব্যবস্থার কারণে পদক্ষেপগুলো বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ফলপ্রসূ হয় না।

হুসাইন, ই., সাত্তার, মো. আ., রিপন, আ. রা. মু., সরকার, ম. (২০১৭). সমাজবিজ্ঞান: ১ম পত্র. বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়।