০৮:১৫ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
                       

তিনবিঘা করিডোর এবং তিনবিঘা করিডোরের ইতিহাস, নামকরণ ও যোগাযোগ ব্যবস্থা

আহমেদ মিন্টো
  • প্রকাশ: ১০:৫২:১৬ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০২২
  • / ১০৯৮৭ বার পড়া হয়েছে

দহগ্রাম, পাটগ্রাম এবং তিনবিঘা করিডোর | Map by Brendan Whyte

দহগ্রাম-আঙ্গরাপোতা ছিটমহলে যাতায়াতের সুবিধার্থে ভারত ২০১১ সালের সেপ্টেম্বর মাসে বাংলাদেশকে ইজারার মাধ্যমে তিনবিঘা করিডোর (the Tinbigha Corridor) ব্যবহারের সুযোগ করে দেয়। এই তিনবিঘা করিডোর আসলে কী, এটি কোথায় অবস্থিত এবং এই তিনবিঘা করিডোরের ইতিহাস সম্পর্কে সংক্ষেপে কিছু তথ্য তুলে ধরা হলো এখানে।

তিনবিঘা করিডোর কী এবং কোথায় অবস্থিত?

তিনবিঘা করিডোর হলো ভারতের মালিকানাধীন তিন বিঘা জমির মধ্যে অবস্থিত একটি স্বতন্ত্র ভূমি। এই তিনবিঘা করিডর ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের কোচবিহার (Cooch Behar) জেলার মেখলিগঞ্জ মহকুমা ও বাংলাদেশের লালমনিরহাটের পাটগ্রাম উপজেলার সীমান্তে অবস্থিত।

মূলত, তিনবিঘা করিডোর হলো ভারতের ভূমিতে তিনবিঘা আয়তনের জমিতে নির্মিত এমন একটি সরু পথ যা ভারতের অভ্যন্তরে অবস্থিত ‘দহগ্রাম-আঙ্গরপোতা’ নামে পরিচিত বাংলাদেশের একটি অংশে বা ছিটমহলে বাংলাদেশের মূল ভূখণ্ড থেকে বাধাহীন যোগাযোগের মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করা হয়। এই তিনবিঘা করিডোরটিতে রয়েছে কাঁটাতারের বেড়া।

তিনবিঘা করিডোরের ইতিহাস

মে ১৬, ১৯৭৪ সালে ‘ইন্দিরা গান্ধী-শেখ মুজিবুর রহমান চুক্তি’ অনুসারে ভারত ও বাংলাদেশ তিনবিঘা করিডোর সার্বভৌমত্ব পরস্পরের কাছে হস্তান্তর করে। এর ফলে উভয়দেশেই তাদের ছিটমহলে যথাক্রমে দহগ্রাম-আঙ্গরপোতা ও দক্ষিণ বেরুবাড়ীর যাতায়াত সুবিধা তৈরি হয়।

১৯৭৪ সালে বাংলাদেশ চুক্তি অনুসারে সাথে সাথেই দক্ষিণ বেরুবাড়ী ভারতের কাছে হস্তান্তর করে কিন্তু ওই সময় ভারত তিনবিঘা করিডোর বাংলাদেশের কাছে রাজনৈতিক কারণে হস্তান্তর করেনি।

পরবর্তীতে বাংলাদেশ সরকারের অনেক বিরোধিতার পর ২০১১ সালে ভারত পূর্ণভাবে তিনবিঘা করিডোর ব্যবহার করার সুযোগ দেয়। তবে এটি স্থায়ীভাবে ব্যবহারের কোনো সুযোগ নয় নয় বরং বাংলাদেশকে সরকারকে স্বীকার করতে হয়েছে যে, বাংলাদেশ এটি ইজারা হিসাবে নিয়েছে এবং সময়ে দক্ষিণ বেরুবাড়ি ভারতের নিয়ন্ত্রণেই থাকবে। তিনবিঘা করিডোর হস্তান্তর করা বা ইজারা প্রদান করার জন্য ভারতের সংবিধান পরিবর্তন করতে হয়েছিল।

১২ নং দক্ষিণ বেরুবাড়ী ইউনিয়নের মোট আয়তন ২২.৫৮ বর্গকিলোমিটার (৮.৭২ বর্গমাইল), যার ১১.২৯ বর্গকিলোমিটার (৪.৩৬ বর্গমাইল) বাংলাদেশ পেয়েছিল। এছাড়াও পূর্বের ভাগ অনুসারে কোচ বিহারের চারটি ছিটমহল বাংলাদেশে পড়েছিল যার আয়তন ৬.৮৪ বর্গকিলোমিটার (২.৬৪ বর্গমাইল), এভাবে মোট আয়তন ১৮.১৩ বর্গকিলোমিটার (৭.০০ বর্গমাইল) যা বাংলাদেশে স্থানান্তর হওয়ার কথা ছিল। 

১৯৬৭ সালের হিসেব অনুযায়ী এই ভূখণ্ডগুলোর মোট জনসংখ্যার ৯০% ছিল হিন্দু ধর্মাবলম্বী। পক্ষান্তরে বাংলাদেশের ছিটমহল দহগ্রাম-আঙ্গরপোতা ভারতে হস্তান্তরের কথা ছিল। যার মোট আয়তন ১৮.৬৮ বর্গকিলোমিটার (৭.২১ বর্গমাইল) ও ১৯৬৭ সালের হিসেব অনুযায়ী মোট জনসংখ্যার ৮০% ছিল মুসলমান। যদি এই হস্তান্তর সফল হতো তাহলে এটি জাতিগত দাঙ্গা সৃষ্টির সম্ভাবনা থাকত। ফলে তখন বেরুবাড়ীর জনগণ এই হস্তান্তরের বিরোধিতা করেছিল।

১৯৭১ সালের পর ভারত বাংলাদেশকে প্রস্তাব দেয়— বেরুবাড়ীর অর্ধাংশ ভারতের অধীন থাকবে এবং দহগ্রাম-আঙ্গরপোতা বাংলাদেশেই থাকবে। এই চুক্তি অনুসারে ভারত দহগ্রাম-আঙ্গরপোতাবাসীর বাংলাদেশের মূল ভূখন্ডের সাথে যোগাযোগ রক্ষার জন্য একটি তিনবিঘা আয়তনের জায়গা ইজারা হিসেবে দেওয়া হয়। তখন এটি বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক গৃহীত হয়েছিল এবং তিনবিঘার চারপাশে সতর্কতার সাথে বেষ্টনী দেওয়া হয়েছিল।

১৯৭৪ সালের মে মাসের ১৬ তারিখ ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী ও বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ মুজিবুর রহমানের মধ্যে একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়; সে চুক্তির‍ ১.১৪ ধারা অনুসারে বেরুবাড়ী বিরোধের অবসান ঘটে। চুক্তি অনুসারে, “ভারত দক্ষিণ বেরুবাড়ীর দক্ষিণাংশের অর্ধেক নিয়ন্ত্রণ করবে যার আনুমানিক আয়তন ৬.৮ বর্গকিলোমিটার (২.৬৪ বর্গমাইল) এবং বিনিময়ে বাংলাদেশ দহগ্রাম-আঙ্গরপোতা নিয়ন্ত্রণ করবে। ভারত দহগ্রাম-আঙ্গরপোতাবাসীদের বাংলাদেশের মূল ভূখন্ডের সাথে যোগাযোগ স্থাপনের জন্য ১৭৮ বাই ৮৫ মিটার (৫৮৪ ফুট × ২৭৯ ফুট) আয়তনের একটি ভূমি বাংলাদেশকে ইজারা হিসেবে দেবে।”

নাম কেন ‘তিনবিঘা’?

বাংলা আয়তন পরিমাপের একটি একক হলো ‘বিঘা’ এবং এই ভূমিটির মোট আয়তন ১,৫০০ থেকে ৬,৭৭১ বর্গমিটার (১৬,১৫০ থেকে ৭২,৮৮০ বর্গফুট) যা তিন বিঘা পরিমাপের সমান; এ থেকে ‘তিনবিঘা’ নামের উৎপত্তি।

তিনবিঘা করিডোরে প্রবেশ

পূর্বে করিডোরটি দিনের ১২ ঘণ্টা সময়ের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হত, এতে দহগ্রাম-আঙ্গরপোতার অধিবাসীদের কঠিন সমস্যার সম্মুখীন হতে হতো কারণ সে-সময় সেখানে কোনো হাসপাতাল ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ছিল না। ২০১১ সালের ৬ই সেপ্টেম্বর ঢাকায় বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রীর মনমোহন সিং-এর মধ্যকার একটি চুক্তি অনুযায়ী বর্তমানে করিডোরটি ২৪ ঘণ্টাই উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়েছে।

২০১১ সালের ১৯শে অক্টোবর বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আনুষ্ঠানিকভাবে করিডোরটি উন্মুক্ত ঘোষণা করেন।

দহগ্রাম ইউনিয়নকে অনেকেই বলে থাকেন, ‘ভারতের বুকে একটুকরো বাংলাদেশ’। দহগ্রাম হলো ২০১৫ সালে ছিটমহল বিনিময়ের পরে ভারতের মধ্যে থেকে যাওয়া বাংলাদেশের একমাত্র ছিটমহল।

যোগাযোগ ব্যবস্থা

তিনবিঘা করিডোর এবং দহগ্রাম ইউনিয়নে লালমনিরহাট জেলা হতে সড়ক ও রেল-পথে এবং পাটগ্রাম উপজেলা হতে সড়ক পথে যাতায়াত করা যায়। সম্পূর্ণ পথ পাকা রাস্তা। পিচঢালা পথে পাটগ্রাম উপজেলা সদর হতে তিনবিঘা করিডোরের সড়ক পথে দূরত্ব প্রায় ১০ কিলোমিটার এবং লালমনিরহাট বাস স্ট্যান্ড হতে সড়ক পথে দূরত্ব প্রায় ৮৮ কিলোমিটার। ঢাকা (জিরো পয়েন্ট) থেকে তিনবিঘা করিডোরের দূরত্ব সড়ক পথে ৪০৫ কিলোমিটার। 

শেয়ার করুন

3 thoughts on “তিনবিঘা করিডোর এবং তিনবিঘা করিডোরের ইতিহাস, নামকরণ ও যোগাযোগ ব্যবস্থা

  1. ভারত এবং বাংলাদেশের মধ্যে সম্পাদিত তিন বিঘা চুক্তিটি ১৯৯২ খ্রিস্টাব্দের ২৬ শে জুন বাস্তবায়িত হয়। এই চুক্তি বাস্তবায়নের সময় আমি আনন্দবাজার পত্রিকার প্রতিনিধি হিসেবে তিনবিঘাতে উপস্থিত ছিলাম। আপনাদের সংবাদে কোথাও সে কোথায় উল্লেখ নেই। তিন বিঘা চুক্তি বাস্তবায়নের যে তথ্য আপনারা দিয়েছেন সেটা সঠিক নয়। আশা করি জনস্বার্থে সংশোধন করে নেবেন।

    1. আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ, মিস্টার ভট্টাচার্য। আপনার হাতে যদি পর্যাপ্ত সময় থাকে তাহলে বিশ্লেষণ-এর জন্য এ নিয়ে লেখার জন্য অনুরোধ করা হলো। বিশ্লেষণে প্রকাশিত এ নিবন্ধটির অনেক সীমাবদ্ধতা আছে তা স্বীকার করছি। আপনার জন্য শুভকামনা।

  2. Teen bigha agreement between India and Bangladesh was implemented on 26th June, 1992.
    Please rectify your news. I was personally present at the time of implementation of the agreement at teen bigha under mekliganj subdivision of Cooch Behar district as a correspondent of Anandabazar Patrika.

মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার তথ্য সংরক্ষিত রাখুন

লেখকতথ্য

আহমেদ মিন্টো

মিন্টো একজন ফ্রিল্যান্স লেখক এবং বিশ্লেষণ'র কন্ট্রিবিউটর।
তাহসান খান এবং মুনজেরিন শহীদের দুটি প্রফেশনাল কমিউনিকেশন কোর্স করুন ২৮% ছাড়ে
তাহসান খান এবং মুনজেরিন শহীদের দুটি প্রফেশনাল কমিউনিকেশন কোর্স করুন ২৮% ছাড়ে

২৮℅ ছাড় পেতে ৩০/০৬/২০২৪ তারিখের মধ্যে প্রোমো কোড “professional10” ব্যবহার করুন। বিস্তারিত জানতে ও ভর্তি হতে ক্লিক করুন এখানে

তিনবিঘা করিডোর এবং তিনবিঘা করিডোরের ইতিহাস, নামকরণ ও যোগাযোগ ব্যবস্থা

প্রকাশ: ১০:৫২:১৬ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০২২

দহগ্রাম-আঙ্গরাপোতা ছিটমহলে যাতায়াতের সুবিধার্থে ভারত ২০১১ সালের সেপ্টেম্বর মাসে বাংলাদেশকে ইজারার মাধ্যমে তিনবিঘা করিডোর (the Tinbigha Corridor) ব্যবহারের সুযোগ করে দেয়। এই তিনবিঘা করিডোর আসলে কী, এটি কোথায় অবস্থিত এবং এই তিনবিঘা করিডোরের ইতিহাস সম্পর্কে সংক্ষেপে কিছু তথ্য তুলে ধরা হলো এখানে।

তিনবিঘা করিডোর কী এবং কোথায় অবস্থিত?

তিনবিঘা করিডোর হলো ভারতের মালিকানাধীন তিন বিঘা জমির মধ্যে অবস্থিত একটি স্বতন্ত্র ভূমি। এই তিনবিঘা করিডর ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের কোচবিহার (Cooch Behar) জেলার মেখলিগঞ্জ মহকুমা ও বাংলাদেশের লালমনিরহাটের পাটগ্রাম উপজেলার সীমান্তে অবস্থিত।

মূলত, তিনবিঘা করিডোর হলো ভারতের ভূমিতে তিনবিঘা আয়তনের জমিতে নির্মিত এমন একটি সরু পথ যা ভারতের অভ্যন্তরে অবস্থিত ‘দহগ্রাম-আঙ্গরপোতা’ নামে পরিচিত বাংলাদেশের একটি অংশে বা ছিটমহলে বাংলাদেশের মূল ভূখণ্ড থেকে বাধাহীন যোগাযোগের মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করা হয়। এই তিনবিঘা করিডোরটিতে রয়েছে কাঁটাতারের বেড়া।

তিনবিঘা করিডোরের ইতিহাস

মে ১৬, ১৯৭৪ সালে ‘ইন্দিরা গান্ধী-শেখ মুজিবুর রহমান চুক্তি’ অনুসারে ভারত ও বাংলাদেশ তিনবিঘা করিডোর সার্বভৌমত্ব পরস্পরের কাছে হস্তান্তর করে। এর ফলে উভয়দেশেই তাদের ছিটমহলে যথাক্রমে দহগ্রাম-আঙ্গরপোতা ও দক্ষিণ বেরুবাড়ীর যাতায়াত সুবিধা তৈরি হয়।

১৯৭৪ সালে বাংলাদেশ চুক্তি অনুসারে সাথে সাথেই দক্ষিণ বেরুবাড়ী ভারতের কাছে হস্তান্তর করে কিন্তু ওই সময় ভারত তিনবিঘা করিডোর বাংলাদেশের কাছে রাজনৈতিক কারণে হস্তান্তর করেনি।

পরবর্তীতে বাংলাদেশ সরকারের অনেক বিরোধিতার পর ২০১১ সালে ভারত পূর্ণভাবে তিনবিঘা করিডোর ব্যবহার করার সুযোগ দেয়। তবে এটি স্থায়ীভাবে ব্যবহারের কোনো সুযোগ নয় নয় বরং বাংলাদেশকে সরকারকে স্বীকার করতে হয়েছে যে, বাংলাদেশ এটি ইজারা হিসাবে নিয়েছে এবং সময়ে দক্ষিণ বেরুবাড়ি ভারতের নিয়ন্ত্রণেই থাকবে। তিনবিঘা করিডোর হস্তান্তর করা বা ইজারা প্রদান করার জন্য ভারতের সংবিধান পরিবর্তন করতে হয়েছিল।

১২ নং দক্ষিণ বেরুবাড়ী ইউনিয়নের মোট আয়তন ২২.৫৮ বর্গকিলোমিটার (৮.৭২ বর্গমাইল), যার ১১.২৯ বর্গকিলোমিটার (৪.৩৬ বর্গমাইল) বাংলাদেশ পেয়েছিল। এছাড়াও পূর্বের ভাগ অনুসারে কোচ বিহারের চারটি ছিটমহল বাংলাদেশে পড়েছিল যার আয়তন ৬.৮৪ বর্গকিলোমিটার (২.৬৪ বর্গমাইল), এভাবে মোট আয়তন ১৮.১৩ বর্গকিলোমিটার (৭.০০ বর্গমাইল) যা বাংলাদেশে স্থানান্তর হওয়ার কথা ছিল। 

১৯৬৭ সালের হিসেব অনুযায়ী এই ভূখণ্ডগুলোর মোট জনসংখ্যার ৯০% ছিল হিন্দু ধর্মাবলম্বী। পক্ষান্তরে বাংলাদেশের ছিটমহল দহগ্রাম-আঙ্গরপোতা ভারতে হস্তান্তরের কথা ছিল। যার মোট আয়তন ১৮.৬৮ বর্গকিলোমিটার (৭.২১ বর্গমাইল) ও ১৯৬৭ সালের হিসেব অনুযায়ী মোট জনসংখ্যার ৮০% ছিল মুসলমান। যদি এই হস্তান্তর সফল হতো তাহলে এটি জাতিগত দাঙ্গা সৃষ্টির সম্ভাবনা থাকত। ফলে তখন বেরুবাড়ীর জনগণ এই হস্তান্তরের বিরোধিতা করেছিল।

১৯৭১ সালের পর ভারত বাংলাদেশকে প্রস্তাব দেয়— বেরুবাড়ীর অর্ধাংশ ভারতের অধীন থাকবে এবং দহগ্রাম-আঙ্গরপোতা বাংলাদেশেই থাকবে। এই চুক্তি অনুসারে ভারত দহগ্রাম-আঙ্গরপোতাবাসীর বাংলাদেশের মূল ভূখন্ডের সাথে যোগাযোগ রক্ষার জন্য একটি তিনবিঘা আয়তনের জায়গা ইজারা হিসেবে দেওয়া হয়। তখন এটি বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক গৃহীত হয়েছিল এবং তিনবিঘার চারপাশে সতর্কতার সাথে বেষ্টনী দেওয়া হয়েছিল।

১৯৭৪ সালের মে মাসের ১৬ তারিখ ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী ও বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ মুজিবুর রহমানের মধ্যে একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়; সে চুক্তির‍ ১.১৪ ধারা অনুসারে বেরুবাড়ী বিরোধের অবসান ঘটে। চুক্তি অনুসারে, “ভারত দক্ষিণ বেরুবাড়ীর দক্ষিণাংশের অর্ধেক নিয়ন্ত্রণ করবে যার আনুমানিক আয়তন ৬.৮ বর্গকিলোমিটার (২.৬৪ বর্গমাইল) এবং বিনিময়ে বাংলাদেশ দহগ্রাম-আঙ্গরপোতা নিয়ন্ত্রণ করবে। ভারত দহগ্রাম-আঙ্গরপোতাবাসীদের বাংলাদেশের মূল ভূখন্ডের সাথে যোগাযোগ স্থাপনের জন্য ১৭৮ বাই ৮৫ মিটার (৫৮৪ ফুট × ২৭৯ ফুট) আয়তনের একটি ভূমি বাংলাদেশকে ইজারা হিসেবে দেবে।”

নাম কেন ‘তিনবিঘা’?

বাংলা আয়তন পরিমাপের একটি একক হলো ‘বিঘা’ এবং এই ভূমিটির মোট আয়তন ১,৫০০ থেকে ৬,৭৭১ বর্গমিটার (১৬,১৫০ থেকে ৭২,৮৮০ বর্গফুট) যা তিন বিঘা পরিমাপের সমান; এ থেকে ‘তিনবিঘা’ নামের উৎপত্তি।

তিনবিঘা করিডোরে প্রবেশ

পূর্বে করিডোরটি দিনের ১২ ঘণ্টা সময়ের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হত, এতে দহগ্রাম-আঙ্গরপোতার অধিবাসীদের কঠিন সমস্যার সম্মুখীন হতে হতো কারণ সে-সময় সেখানে কোনো হাসপাতাল ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ছিল না। ২০১১ সালের ৬ই সেপ্টেম্বর ঢাকায় বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রীর মনমোহন সিং-এর মধ্যকার একটি চুক্তি অনুযায়ী বর্তমানে করিডোরটি ২৪ ঘণ্টাই উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়েছে।

২০১১ সালের ১৯শে অক্টোবর বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আনুষ্ঠানিকভাবে করিডোরটি উন্মুক্ত ঘোষণা করেন।

দহগ্রাম ইউনিয়নকে অনেকেই বলে থাকেন, ‘ভারতের বুকে একটুকরো বাংলাদেশ’। দহগ্রাম হলো ২০১৫ সালে ছিটমহল বিনিময়ের পরে ভারতের মধ্যে থেকে যাওয়া বাংলাদেশের একমাত্র ছিটমহল।

যোগাযোগ ব্যবস্থা

তিনবিঘা করিডোর এবং দহগ্রাম ইউনিয়নে লালমনিরহাট জেলা হতে সড়ক ও রেল-পথে এবং পাটগ্রাম উপজেলা হতে সড়ক পথে যাতায়াত করা যায়। সম্পূর্ণ পথ পাকা রাস্তা। পিচঢালা পথে পাটগ্রাম উপজেলা সদর হতে তিনবিঘা করিডোরের সড়ক পথে দূরত্ব প্রায় ১০ কিলোমিটার এবং লালমনিরহাট বাস স্ট্যান্ড হতে সড়ক পথে দূরত্ব প্রায় ৮৮ কিলোমিটার। ঢাকা (জিরো পয়েন্ট) থেকে তিনবিঘা করিডোরের দূরত্ব সড়ক পথে ৪০৫ কিলোমিটার।