০৪:৪৮ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ
                       

অ্যান্টিবায়োটিক কেন দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে

ড. মুনীরউদ্দিন আহমদ
  • প্রকাশ: ১০:২৬:০০ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২ অগাস্ট ২০২১
  • / ৩২৬ বার পড়া হয়েছে

দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে অ্যান্টিবায়োটিক

সম্প্রতি এক মিডিয়া রিপোর্টে দেখলাম, হাসপাতালে এক নিউমোনিয়া রোগীর ক্ষেত্রে প্রদত্ত কোনো অ্যান্টিবায়োটিকই কাজ করছে না। এ নিয়ে চিকিৎসকরা চরম হতাশা ব্যক্ত করেছেন। এমন পরিস্থিতির যে উদ্ভব হবে, এ ধরনের পূর্বাভাস আমি আমার লেখায় বহু আগে থেকে দিয়ে আসছিলাম। মুশকিল হলো, অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্টের ভয়াবহতার কথা কেউ অনুমান করতে পারছে না। আর পারলেও কেউ তেমন গুরুত্ব দিচ্ছে না। করোনা সংকট সমস্যাটিকে আরও জটিল করে তুলেছে। করোনা শুরুর পর থেকে অ্যান্টিবায়োটিকের অপব্যবহার মারাত্মক পর্যায়ে পৌঁছেছে।

অ্যান্টিবায়োটিকের অপব্যবহার সম্পর্কে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা উদ্বেগজনক সংবাদ প্রচার করেই চলেছে। কেউ কান দিচ্ছে না। কিছুদিন আগে ‘The world is running out of antibiotics’ শিরোনামের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছিল, অতিদ্রুত পৃথিবী থেকে কার্যকর অ্যান্টিবায়োটিক নিঃশেষ হয়ে যাচ্ছে।

‘অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল এজেন্টস ইন ক্লিনিক্যাল ডেভেলপমেন্ট পাইপলাইন ইনক্লুডিং টিউবারকোলোসিস’ শীর্ষক বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার এক রিপোর্টে বলা হয়েছিল, বাজারে নতুন অ্যান্টিবায়োটিক আসা স্থবির হয়ে গেছে।

যেসব অ্যান্টিবায়োটিক প্রচলিত আছে, তার বেশিরভাগই এখন অকার্যকর হয়ে পড়েছে। যে হারে জীবাণুর বিরুদ্ধে অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্ট হয়ে যাচ্ছে সে হারে নতুন নতুন অ্যান্টিবায়োটিক আবিষ্কার হচ্ছে না।

যে গতিতে পৃথিবী থেকে কার্যকর অ্যান্টিবায়োটিক নিঃশেষ হয়ে যাচ্ছে, তাতে করে অচিরেই চিকিৎসকদের সংক্রামক রোগ চিকিৎসায় হাত গুটিয়ে বসে থাকতে হবে। রেজিস্ট্যান্ট জীবাণু সংক্রমণের ভয়ে অতি নগণ্য সার্জারি করতেও চিকিৎসকরা সাহস পাবে না।

বর্তমানে বাজারে যেসব অ্যান্টিবায়োটিক পাওয়া যাচ্ছে তা পুরোনো বা প্রচলিত অ্যান্টিবায়োটিকের সংক্ষিপ্ত রাসায়নিক রূপান্তর মাত্র। এসব অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহারে সাময়িক সুবিধা পাওয়া গেলেও দীর্ঘস্থায়ী সমস্যা সমাধানে এগুলো কোনো গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারছে না বা পারবে না।

বর্তমান বিশ্বে কয়েকটি জীবাণু অত্যন্ত ভয়ংকর রূপ ধারণ করেছে। এসব জীবাণুর মধ্যে রয়েছে ই. কোলি ও মাইকোব্যাকটেরিয়াম টিউবারকলোসিস। মূত্রনালি সংক্রমণ ও যক্ষ্মার জন্য এ দুটি জীবাণু মূলত দায়ী। মাল্টিড্রাগ রেজিস্ট্যান্ট টিউবারকোলোসিসের জন্য বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ১২ প্রজাতির জীবাণু শনাক্ত করেছে। এসব জীবাণুর কয়েকটি অতি সাধারণ নিউমোনিয়া ও মূত্রনালি সংক্রমণের জন্য দায়ী। এসব জীবাণুর বিরুদ্ধে ইদানীং কোনো অ্যান্টিবায়োটিক কাজ করছে না।

অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্স বিশ্বব্যাপী এক মহাসংকট সৃষ্টি করেছে যা আধুনিক ওষুধ ও চিকিৎসাব্যবস্থাকে বিপন্ন করে তুলছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মহাপরিচালক বলেন, অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্স ঠেকানোর জন্য নতুন নতুন কার্যকর ওষুধ আবিষ্কারে পর্যাপ্ত অর্থ বিনিয়োগ জরুরি হয়ে পড়েছে। নতুবা নতুন নতুন জীবাণু সংক্রমণ থেকে মানবসভ্যতাকে রক্ষা করা দুরূহ হয়ে পড়বে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ৫১টি পরীক্ষাধীন অ্যান্টিবায়োটিক চিহ্নিত করেছে যা অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্স ও যক্ষ্মার বিরুদ্ধে কার্যকর হবে বলে দাবি করা হয়েছে। তবে তার মধ্যে মাত্র আটটি সংক্রামক রোগ চিকিৎসায় উল্লেখযোগ্য অবদান রাখবে বলে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বিশ্বাস করে।

মাল্টিড্রাগ রেজিস্ট্যান্ট মাইকোব্যাকটেরিয়াম টিউবারকোলোসিস, গ্রাম নেগেটিভ প্যাথেজেন ক্লেবসিলা ও ই. কোলি চিকিৎসায় কার্যকর কোনো অপশন চিকিৎসকদের হাতে নেই। এসব জীবাণু সংক্রমণ অনেক সময় হাসপাতাল ও নার্সিং হোমগুলোতে মানুষের মৃত্যু ডেকে আনতে পারে। পাইপলাইনে খুব বেশি ওরাল বা মুখে খাওয়ার অ্যান্টিবায়োটিক নেই। ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানিগুলো ও গবেষকদের ভয়ংকর মরণঘাতী সংক্রামক রোগ চিকিৎসায় নতুন নতুন অ্যান্টিবায়োটিক আবিষ্কারের আহ্বান জানিয়েছেন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার অত্যাবশ্যকীয় ওষুধ বিভাগের পরিচালক ড. সুজান হিল। তিনি বলেন, এসব ভয়াবহ সংক্রমক রোগ থেকে মানুষকে রক্ষা করার মতো আমাদের তেমন কোনো প্রতিরক্ষাব্যূহ নেই।

যক্ষ্মার ওপর গবেষণায় খুব বেশি পুঁজি বিনিয়োগ হচ্ছে না। ড্রাগ রেজিস্ট্যান্ট যক্ষ্মার চিকিৎসায় গত ৭০ বছরে মাত্র দুটি ওষুধ বাজারে এসেছে। যক্ষ্মাকে সমূলে বিনাশ করার জন্য এবং যক্ষ্মা চিকিৎসার ওষুধ উদ্ভাবনে কম করে হলেও ৮০০ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করা প্রয়োজন। অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্ট মোকাবিলায় নতুন ওষুধ বা চিকিৎসা এককভাবে কার্যকর হবে না। চিকিৎসার সঙ্গে সংক্রমক রোগ প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। তারপর রয়েছে অ্যান্টিবায়োটিকের যুক্তিসঙ্গত ব্যবহার। এ যুক্তিসঙ্গত ব্যবহার শুধু মানুষের ক্ষেত্রে সীমাবদ্ধ রাখলে চলবে না। পশু ও কৃষি সেক্টরেও অ্যান্টিবায়োটিকের এ যুক্তিসঙ্গত ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে।

এর আগেও অনলাইনে প্রকাশিত বিশ্বখ্যাত ল্যানসেট জার্নালে ‘অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্স-নিড ফর গ্লোবাল সলিউশন’ শীর্ষক একটি বিশ্লেষণধর্মী দীর্ঘ বৈজ্ঞানিক প্রবন্ধ ছাপা হয়েছিল। বিশ্বের ২৬ জন বিশিষ্ট বিজ্ঞানী, চিকিৎসক ও ওষুধ বিশেষজ্ঞ প্রবন্ধে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেছিলেন, অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্স যে হারে বাড়ছে, তাতে করে হয়তো দুই থেকে তিন দশকের মধ্যে মানুষ সংক্রামক রোগে অসহায়ভাবে মৃত্যুবরণ করবে। ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণজনিত মৃত্যুহার বিংশ শতাব্দীর পূর্বাবস্থায় ফিরে যাওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে, যখন মানুষের হাতে কোনো কার্যকর অ্যান্টিবায়োটিক ছিল না। কার্যকর অ্যান্টিবায়োটিকের অভাবে অতি সাধারণ সার্জারি বা অস্ত্রোপচার অসম্ভব হয়ে দাঁড়াবে। প্রবন্ধটি প্রকাশিত হওয়ার পর বিশ্বব্যাপী চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হলেও অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্স ঠেকানোর ব্যাপারে বিশ্বে, বিশেষ করে তৃতীয় বিশ্বে তেমন কোনো অগ্রগতি সাধিত হয়নি।

কয়েকদিন আমার হাতে একটি নামকরা হাসপাতালের জীবাণু কালচারের রিপোর্ট এসেছিল। এক রোগীর ঘায়ের পুঁজ কালচার করে কুখ্যাত ই. কোলির উপস্থিতি পাওয়া গেছে। জীবাণু কালচার করে দেখা গেছে, ই. কোলির বিরুদ্ধে বহুল ব্যবহৃত সব অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্ট। এসব রেজিস্ট্যান্ট অ্যান্টিবায়োটিকের মধ্যে রয়েছে-অ্যামোক্সিসিলিন, সেপ্টাজিডিম, জেন্টামাইসিন, কোট্রাইমোক্সাজল, অ্যামিকাসিন, ন্যালিডিক্সিক অ্যাসিড, সেফুরক্সিম, সেফোটেক্সামিন, সিপ্রোফ্লক্সাসিন, অ্যাজট্রিওনাম, নেটিলমাইসিন এবং সেফট্রিয়াক্সন। শুধু একটি অ্যান্টিবায়োটিক কার্যকর বলে পরীক্ষায় দেখা গেছে আর তা হলো মেরোপেনেম। আমি রিপোর্টটি দেখে বিস্ময়ে হতভম্ব হয়ে গেছি। ১৩টি অ্যান্টিবায়োটিকের মধ্যে শুধু একটি অ্যান্টিবায়োটিক ই. কোলি জীবাণুর বিরুদ্ধে কার্যকর আর বাকি বারোটিই রেজিস্ট্যান্ট! এ রিপোর্ট যদি সত্যি হয় তাহলে আমরা সমূহ বিপদে আছি, যার ভয়াবহতা আমাদের কল্পনা শক্তির বাইরে।

বিশেষ কোনো এনজাইম অ্যান্টিবায়োটিকের গাঠনিক সংকেতে (structure) এমন কোনো রাসায়নিক পরিবর্তন নিয়ে আসতে পারে যার কারণে অ্যান্টিবায়োটিক অকার্যকর হয়ে পড়ে। দ্বিতীয়ত, অনেক সময় জীবাণু এমন সব এনজাইম তৈরি করে যা অ্যান্টিবায়োটিকের গাঠনিক সংকেতকে ভেঙে দিতে সক্ষম। অ্যান্টিবায়োটিকের গাঠনিক সংকেত ভেঙে গেলে অ্যান্টিবায়োটিক নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়ে। তৃতীয়ত, কোনো কোনো জীবাণু আছে যেগুলো জন্মগতভাবে অ্যান্টিবায়োটিকের প্রতি সংবেদনশীল নয়। যেমন গ্রাম নেগেটিভ জীবাণুগুলোর কোষ প্রাচীর এমন জটিলভাবে তৈরি, যার প্রতিবন্ধকতার বিরুদ্ধে অসংখ্য অ্যান্টিবায়োটিক কোনোভাবেই কার্যকর প্রভাব ফেলতে পারে না। চতুর্থত, জেনেটিক মিউটেশনের (জিনের রাসায়নিক পরিবর্তন) মাধ্যমে অনেক জীবাণু অ্যান্টিবায়োটিকের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ ক্ষমতা অর্জন করে ফেলে। কোটি কোটি জীবাণুর মধ্যে যে-কোনো একটি যদি মিউটেশনের মাধ্যমে পরিবর্তিত হয়ে যায়, সেই জীবাণু পরে বংশবৃদ্ধি ও বিস্তারের মাধ্যমে সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ে। এসব জীবাণু পরিবর্তিত জিনকে অন্য জীবাণুতে ট্রান্সফার করার মাধ্যমে রেজিস্ট্যান্ট জীবাণুর ব্যাপক বিস্তার ঘটায়। এসব জীবাণু দ্বারা আক্রান্ত কোনো রোগী তখন কোনো অ্যান্টিবায়োটিকের দ্বারা সংক্রমণমুক্ত হয়ে আরোগ্য লাভ করে না। ফলে রোগীর ভোগান্তি বাড়ে নতুবা কার্যকর অ্যান্টিবায়োটিকের অভাবে অসহায়ভাবে মৃত্যুবরণ করে।

জন হপকিনস বিশ্ববিদ্যালয়ের স্কুল অব মেডিসিন বিভাগের ক্লিনিক্যাল ডাইরেক্টর ড. পাউল আউওয়েটার প্রতিদিন এ সংকটের মুখোমুখি হচ্ছেন। সংকটের বর্তমান পরিস্থিতি উল্লেখ করতে গিয়ে তিনি বলেন, রোগী দিন দিন আরাও বেশি রোগাক্রান্ত হয়ে পড়ছে। এ কারণে আমাদের ব্যাপকভাবে অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার করতে হচ্ছে। ফলে জীবাণু নিজেদের অবয়ব বা কাঠামো পরিবর্তন করে ফেলছে। অন্যদিকে আমরা এসব জীবাণু মোকাবিলায় নতুন নতুন অ্যান্টিবায়োটিক উদ্ভাবন বা আবিষ্কারে উৎসাহ ও উদ্দীপনা হারিয়ে ফেলছি। সাধারণ মানুষের মধ্যে এ নিয়ে তেমন কোনো প্রতিক্রিয়া বা দুশ্চিন্তা নেই। কেননা, তারা মনে করে, অতীতের মতো চিকিৎসাবিজ্ঞানীরা পর্যাপ্ত কার্যকর অ্যান্টিবায়োটিক আবিষ্কার করে সংকট মোকাবিলায় যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন। ওষুধ কোম্পানিগুলোই তাদের স্বার্থে এ ধরনের আবিষ্কারে এগিয়ে আসবে, যেমন অন্যান্য রোগের বেলায় অতীতে এসেছে। কিন্তু আমরা বুঝতে পারছি না অ্যান্টিবায়োটিকের ক্ষেত্রে প্রেক্ষাপট ভিন্ন।

গ্রেফেন স্কুল অব মেডিসিনের জেনারেল ইন্টারন্যাল মেডিসিনের অ্যাসোসিয়েট প্রফেসর নেবার্গ বলেন, আমাদের বুঝতে হবে, অ্যান্টিবায়োটিকের এমন কতগুলো অনন্য বৈশিষ্ট্য রয়েছে, যা অন্যান্য ওষুধের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়। আজ যে অ্যান্টিবায়োটিক কার্যকারিতা প্রদর্শন করছে, তা পরবর্তী ১০ থেকে ১৫ বছর পর অকার্যকর হয়ে পড়তে পারে। অন্যান্য ওষুধের ক্ষেত্রে এমনটি ঘটে না। আর তাই জনস্বাস্থ্যের কথা বিবেচনা করে সংক্রামক রোগ মোকাবিলায় নতুন নতুন অ্যান্টিবায়োটিক আবিষ্কার অব্যাহত রাখা প্রয়োজন। অর্থনৈতিক মন্দা আর কঠোর নিয়ন্ত্রণের কারণে পরিস্থিতি এমনভাবে পরিবর্তন হয়ে গেছে যে, ওষুধ কোম্পানিগুলো নতুন নতুন অ্যান্টিবায়োটিক উদ্ভাবনে আগ্রহ হারিয়ে ফেলছে। আমরা নতুন অ্যান্টিবায়োটিক চাই, নতুন ওষুধ চাই বলে চিৎকার করছি। কিন্তু নতুন ওষুধ আসছে না।

ইতোমধ্যে আমরা প্রায় সব অ্যান্টিবায়োটিকের বিরুদ্ধে রেজিস্ট্যান্ট ব্যাকটেরিয়ার উৎপত্তি লক্ষ করছি। কিন্তু সে হারে নতুন অ্যান্টিবায়োটিক বাজারে আসছে না। রেজিস্ট্যান্ট সংক্রামক ব্যাধির সংখ্যা আগামী পাঁচ বছরে জ্যামিতিক হারে বৃদ্ধি পাবে। আমরা যে একদম অ্যান্টিবায়োটিক পাচ্ছি না, তা নয়; কিছু অ্যান্টিবায়োটিক বাজারে আসছে। কিন্তু সেসব অ্যান্টিবায়োটিক গ্রাম-নেগেটিভ সংক্রামক রোগের ক্ষেত্রে কার্যকর হচ্ছে না।

আমাদের অভাব হলো গ্রাম-নেগেটিভ ব্যাকটেরিয়ার বিরুদ্ধে কার্যকর অ্যান্টিবায়োটিকের। নতুন অ্যান্টিবায়োটিক উদ্ভাবনে ওষুধ কোম্পানিগুলোর অনীহার কারণ নিয়ে একটু আলোচনা করা যেতে পারে। মিলিয়ন মিলিয়ন ডলার পুঁজি বিনিয়োগ করে একটি অ্যান্টিবায়োটিক উদ্ভাবন করে বেশি মুনাফা করা যায় না। কোম্পানিগুলোর মতে, মানুষ অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার করে অল্প কয়েক দিনের জন্য। ডায়াবেটিস বা উচ্চরক্তচাপের মতো রোগের ক্ষেত্রে যেমন রোগীকে আজীবন ওষুধ গ্রহণ করতে হয়, অ্যান্টিবায়োটিকের ক্ষেত্রে তেমন হয় না। দ্বিতীয়ত, একটি অ্যান্টিবায়োটিক আবিষ্কৃত হওয়ার পর যদি অল্প কয়েক বছরে রেজিস্ট্যান্ট হয়ে যায়, তাহলে ওষুধ কোম্পানির পুঁজিও উঠে আসে না, মুনাফা তো দূরের কথা। এ ছাড়া উদ্ভাবনের পর কোনো অ্যান্টিবায়োটিকের অনুমোদন পেতে কোম্পানিগুলোকে অনেক ঝক্কি-ঝামেলা পোহাতে হয়। অনেক ক্ষেত্রে অনুমোদন পাওয়াও যায় না। এসব কারণে ওষুধ কোম্পানিগুলো অ্যান্টিবায়োটিক উদ্ভাবনে পুঁজি বিনিয়োগে আজকাল আর আগ্রহ দেখাচ্ছে না। ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে রোগী, জয়ী হচ্ছে রেজিস্ট্যান্ট ব্যাকটেরিয়া। এ অশনিসংকেত বারবার উচ্চারিত হওয়ার পরও সবাই নির্বিকার। বিশ্বের কোটি কোটি মানুষের কথা বাদই দিলাম, ওষুধ কোম্পানির মালিকরা কি জানেন, কোনো না কোনো সময় তারাও রেজিস্ট্যান্ট ব্যাকটেরিয়ার শিকার হতে পারেন এবং কার্যকর অ্যান্টিবায়োটিকের অভাবে তাদেরও করুণ পরিণতি হতে পারে?

২০১৪ সালের ৩০ এপ্রিল বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ১১৪টি দেশে পরিচালিত গবেষণার ফলাফলের ওপর ভিত্তি করে অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্স সম্পর্কে তাদের সর্বশেষ প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। এতে বলা হয়েছে, অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্স থেকে সৃষ্ট মহাবিপর্যয় এখন আর কোনো ভবিষ্যৎ সম্ভাবনার ব্যাপার নয়। এখনই এ মুহূর্তে বিশ্বের প্রতিটি দেশের প্রতিটি অঞ্চলে সব বয়সের সব মানুষ অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্সের শিকার হওয়ার প্রবল হুমকির মধ্যে রয়েছে।

‘অ্যান্টিমাইক্রোবায়াল রেজিস্ট্যান্স: গ্লোবাল রিপোর্ট অন সার্ভেইলেন্স’ (জীবাণুর প্রতিরোধ ক্ষমতা অর্জন: কড়া নজরদারির ওপর বিশ্ব প্রতিবেদন) শীর্ষক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, অসংখ্য সংক্রামক রোগ সৃষ্টিকারী অসংখ্য জীবাণু বেশিরভাগ অ্যান্টিবায়োটিকের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ ক্ষমতা অর্জন করে ফেলেছে। প্রতিবেদনে ডায়রিয়া, কলেরা, নিউমোনিয়া, মূত্রনালির সংক্রমণ, গনোরিয়া, সেপসিসের (রক্তের সংক্রমণ) মতো সাধারণ থেকে শুরু করে মারাত্মক সংক্রামক রোগ সৃষ্টিকারী জীবাণুর ওপর অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্সের ফলাফল প্রকাশ করা হয়। প্রতিবেদনে প্রকাশিত ফলাফল খুব উদ্বেগ ও আতঙ্কজনক। কারণ প্রতিরোধ ক্ষমতা অর্জনকারী বহু জীবাণুর বিরুদ্ধে শেষ অবলম্বন হিসাবে বিবেচিত খুব কার্যকর অ্যান্টিবায়োটিকগুলোও এখন কার্যকারিতা হারাতে বসেছে।

কার্বাপেনেমকে এতদিন একমাত্র নন-রেজিস্ট্যান্ট শতভাগ কার্যকর শেষ অবলম্বন অ্যান্টিবায়োটিক হিসাবে গণ্য করা হতো। জীবন বিপন্নকারী অন্ত্রের জীবাণু ক্লেবসিলা নিউমোনি কার্বাপেনেমের কার্যকারিতাকে ব্যর্থ করে দিয়ে সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়েছে। ক্লেবসিলা নিউমোনি হাসপাতালে নিউমোনিয়া, সেপসিস, নবজাতকের সংক্রমণ এবং জরুরি বিভাগে চিকিৎসারত বিপন্ন রোগীদের মধ্যে সংক্রমণ ছড়ানোর মূল কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বহু দেশ রেজিস্ট্যান্সের কারণে কার্বাপেনেম ক্লেবসিলা নিউমোনিতে আক্রান্ত ৫০ শতাংশ রোগীকে সুস্থ করে তুলতে ব্যর্থ হচ্ছে। মূত্রনালির সংক্রমণের জন্য দায়ী গ্রাম নেগেটিভ জীবাণু ই. কোলাইয়ের বিরুদ্ধে বহুল পরিচিত সিপ্রোগ্রুপের (ফ্লোরোকুনোলন) অ্যান্টিবায়োটিকগুলো অধিকাংশ ক্ষেত্রেই এখন আর কাজ করছে না।

১৯৮০ সালে বাজারে আসা সিপ্রোগ্রুপের ওষুধগুলোর বিরুদ্ধে জীবাণুর প্রতিরোধ ক্ষমতা অর্জনের পরিমাণ ছিল শূন্য। এখন পৃথিবীর অধিকাংশ দেশেই সংক্রামক রোগ চিকিৎসায় সিপ্রোগ্রুপের ওষুধগুলোর কার্যকারিতা ৬০ শতাংশেরও নিচে নেমে গেছে। গনোরিয়া চিকিৎসায় শেষ অবলম্বন হিসাবে পরিচিত তৃতীয় প্রজন্মের সেফালোস্পোরিন গ্রুপের ওষুধগুলো এখন অস্ট্রেলিয়া, অস্ট্রিয়া, কানাডা, ফ্রান্স, জাপান, নরওয়ে, স্লোভেনিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকা, সুইডেন এবং যুক্তরাজ্যের গনোরিয়ায় আক্রান্ত রোগীর চিকিৎসায় অকার্যকর হয়ে পড়েছে। প্রতিদিন সারা বিশ্বে ১০ লাখ মানুষ গনোরিয়ায় আক্রান্ত হয়।

অ্যান্টিবায়োটিক-সম্পর্কিত সংকট নিয়ে মানুষ এখনো পুরোপুরি অবহিত ও সচেতন হচ্ছে না। যখন পুরোপুরি অবহিত হবে, তখন সম্ভবত অনেক দেরি হয়ে যাবে। অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্ট সংক্রামক রোগ মানবসভ্যতার জন্য এক ভয়াবহ বিপর্যয় ডেকে আনতে যাচ্ছে। এ বিপর্যয়ের মাত্রা অনিশ্চিত, ভেদাভেদ অনির্ধারিত, ধনী-গরিব, শিশু-বয়স্ক, সুস্থ, প্রতিরোধ ক্ষমতাবিহীন রোগী কেউই এ বিপর্যয় থেকে রক্ষা পাবে না। তখন বুক চাপড়ানো ছাড়া আমাদের আর কোনো গত্যন্তর থাকবে না।

শেয়ার করুন

মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার তথ্য সংরক্ষিত রাখুন

লেখকতথ্য

ড. মুনীরউদ্দিন আহমদ

অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান, ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি এবং সাবেক অধ্যাপক ও ডিন, ক্লিনিক্যাল ফার্মেসি অ্যান্ড ফার্মাকোলজি ডিপার্টমেন্ট, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
তাহসান খান এবং মুনজেরিন শহীদের দুটি প্রফেশনাল কমিউনিকেশন কোর্স করুন ২৮% ছাড়ে
তাহসান খান এবং মুনজেরিন শহীদের দুটি প্রফেশনাল কমিউনিকেশন কোর্স করুন ২৮% ছাড়ে

২৮℅ ছাড় পেতে ৩০/০৬/২০২৪ তারিখের মধ্যে প্রোমো কোড “professional10” ব্যবহার করুন। বিস্তারিত জানতে ও ভর্তি হতে ক্লিক করুন এখানে

অ্যান্টিবায়োটিক কেন দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে

প্রকাশ: ১০:২৬:০০ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২ অগাস্ট ২০২১

সম্প্রতি এক মিডিয়া রিপোর্টে দেখলাম, হাসপাতালে এক নিউমোনিয়া রোগীর ক্ষেত্রে প্রদত্ত কোনো অ্যান্টিবায়োটিকই কাজ করছে না। এ নিয়ে চিকিৎসকরা চরম হতাশা ব্যক্ত করেছেন। এমন পরিস্থিতির যে উদ্ভব হবে, এ ধরনের পূর্বাভাস আমি আমার লেখায় বহু আগে থেকে দিয়ে আসছিলাম। মুশকিল হলো, অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্টের ভয়াবহতার কথা কেউ অনুমান করতে পারছে না। আর পারলেও কেউ তেমন গুরুত্ব দিচ্ছে না। করোনা সংকট সমস্যাটিকে আরও জটিল করে তুলেছে। করোনা শুরুর পর থেকে অ্যান্টিবায়োটিকের অপব্যবহার মারাত্মক পর্যায়ে পৌঁছেছে।

অ্যান্টিবায়োটিকের অপব্যবহার সম্পর্কে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা উদ্বেগজনক সংবাদ প্রচার করেই চলেছে। কেউ কান দিচ্ছে না। কিছুদিন আগে ‘The world is running out of antibiotics’ শিরোনামের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছিল, অতিদ্রুত পৃথিবী থেকে কার্যকর অ্যান্টিবায়োটিক নিঃশেষ হয়ে যাচ্ছে।

‘অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল এজেন্টস ইন ক্লিনিক্যাল ডেভেলপমেন্ট পাইপলাইন ইনক্লুডিং টিউবারকোলোসিস’ শীর্ষক বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার এক রিপোর্টে বলা হয়েছিল, বাজারে নতুন অ্যান্টিবায়োটিক আসা স্থবির হয়ে গেছে।

যেসব অ্যান্টিবায়োটিক প্রচলিত আছে, তার বেশিরভাগই এখন অকার্যকর হয়ে পড়েছে। যে হারে জীবাণুর বিরুদ্ধে অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্ট হয়ে যাচ্ছে সে হারে নতুন নতুন অ্যান্টিবায়োটিক আবিষ্কার হচ্ছে না।

যে গতিতে পৃথিবী থেকে কার্যকর অ্যান্টিবায়োটিক নিঃশেষ হয়ে যাচ্ছে, তাতে করে অচিরেই চিকিৎসকদের সংক্রামক রোগ চিকিৎসায় হাত গুটিয়ে বসে থাকতে হবে। রেজিস্ট্যান্ট জীবাণু সংক্রমণের ভয়ে অতি নগণ্য সার্জারি করতেও চিকিৎসকরা সাহস পাবে না।

বর্তমানে বাজারে যেসব অ্যান্টিবায়োটিক পাওয়া যাচ্ছে তা পুরোনো বা প্রচলিত অ্যান্টিবায়োটিকের সংক্ষিপ্ত রাসায়নিক রূপান্তর মাত্র। এসব অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহারে সাময়িক সুবিধা পাওয়া গেলেও দীর্ঘস্থায়ী সমস্যা সমাধানে এগুলো কোনো গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারছে না বা পারবে না।

বর্তমান বিশ্বে কয়েকটি জীবাণু অত্যন্ত ভয়ংকর রূপ ধারণ করেছে। এসব জীবাণুর মধ্যে রয়েছে ই. কোলি ও মাইকোব্যাকটেরিয়াম টিউবারকলোসিস। মূত্রনালি সংক্রমণ ও যক্ষ্মার জন্য এ দুটি জীবাণু মূলত দায়ী। মাল্টিড্রাগ রেজিস্ট্যান্ট টিউবারকোলোসিসের জন্য বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ১২ প্রজাতির জীবাণু শনাক্ত করেছে। এসব জীবাণুর কয়েকটি অতি সাধারণ নিউমোনিয়া ও মূত্রনালি সংক্রমণের জন্য দায়ী। এসব জীবাণুর বিরুদ্ধে ইদানীং কোনো অ্যান্টিবায়োটিক কাজ করছে না।

অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্স বিশ্বব্যাপী এক মহাসংকট সৃষ্টি করেছে যা আধুনিক ওষুধ ও চিকিৎসাব্যবস্থাকে বিপন্ন করে তুলছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মহাপরিচালক বলেন, অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্স ঠেকানোর জন্য নতুন নতুন কার্যকর ওষুধ আবিষ্কারে পর্যাপ্ত অর্থ বিনিয়োগ জরুরি হয়ে পড়েছে। নতুবা নতুন নতুন জীবাণু সংক্রমণ থেকে মানবসভ্যতাকে রক্ষা করা দুরূহ হয়ে পড়বে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ৫১টি পরীক্ষাধীন অ্যান্টিবায়োটিক চিহ্নিত করেছে যা অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্স ও যক্ষ্মার বিরুদ্ধে কার্যকর হবে বলে দাবি করা হয়েছে। তবে তার মধ্যে মাত্র আটটি সংক্রামক রোগ চিকিৎসায় উল্লেখযোগ্য অবদান রাখবে বলে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বিশ্বাস করে।

মাল্টিড্রাগ রেজিস্ট্যান্ট মাইকোব্যাকটেরিয়াম টিউবারকোলোসিস, গ্রাম নেগেটিভ প্যাথেজেন ক্লেবসিলা ও ই. কোলি চিকিৎসায় কার্যকর কোনো অপশন চিকিৎসকদের হাতে নেই। এসব জীবাণু সংক্রমণ অনেক সময় হাসপাতাল ও নার্সিং হোমগুলোতে মানুষের মৃত্যু ডেকে আনতে পারে। পাইপলাইনে খুব বেশি ওরাল বা মুখে খাওয়ার অ্যান্টিবায়োটিক নেই। ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানিগুলো ও গবেষকদের ভয়ংকর মরণঘাতী সংক্রামক রোগ চিকিৎসায় নতুন নতুন অ্যান্টিবায়োটিক আবিষ্কারের আহ্বান জানিয়েছেন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার অত্যাবশ্যকীয় ওষুধ বিভাগের পরিচালক ড. সুজান হিল। তিনি বলেন, এসব ভয়াবহ সংক্রমক রোগ থেকে মানুষকে রক্ষা করার মতো আমাদের তেমন কোনো প্রতিরক্ষাব্যূহ নেই।

যক্ষ্মার ওপর গবেষণায় খুব বেশি পুঁজি বিনিয়োগ হচ্ছে না। ড্রাগ রেজিস্ট্যান্ট যক্ষ্মার চিকিৎসায় গত ৭০ বছরে মাত্র দুটি ওষুধ বাজারে এসেছে। যক্ষ্মাকে সমূলে বিনাশ করার জন্য এবং যক্ষ্মা চিকিৎসার ওষুধ উদ্ভাবনে কম করে হলেও ৮০০ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করা প্রয়োজন। অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্ট মোকাবিলায় নতুন ওষুধ বা চিকিৎসা এককভাবে কার্যকর হবে না। চিকিৎসার সঙ্গে সংক্রমক রোগ প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। তারপর রয়েছে অ্যান্টিবায়োটিকের যুক্তিসঙ্গত ব্যবহার। এ যুক্তিসঙ্গত ব্যবহার শুধু মানুষের ক্ষেত্রে সীমাবদ্ধ রাখলে চলবে না। পশু ও কৃষি সেক্টরেও অ্যান্টিবায়োটিকের এ যুক্তিসঙ্গত ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে।

এর আগেও অনলাইনে প্রকাশিত বিশ্বখ্যাত ল্যানসেট জার্নালে ‘অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্স-নিড ফর গ্লোবাল সলিউশন’ শীর্ষক একটি বিশ্লেষণধর্মী দীর্ঘ বৈজ্ঞানিক প্রবন্ধ ছাপা হয়েছিল। বিশ্বের ২৬ জন বিশিষ্ট বিজ্ঞানী, চিকিৎসক ও ওষুধ বিশেষজ্ঞ প্রবন্ধে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেছিলেন, অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্স যে হারে বাড়ছে, তাতে করে হয়তো দুই থেকে তিন দশকের মধ্যে মানুষ সংক্রামক রোগে অসহায়ভাবে মৃত্যুবরণ করবে। ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণজনিত মৃত্যুহার বিংশ শতাব্দীর পূর্বাবস্থায় ফিরে যাওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে, যখন মানুষের হাতে কোনো কার্যকর অ্যান্টিবায়োটিক ছিল না। কার্যকর অ্যান্টিবায়োটিকের অভাবে অতি সাধারণ সার্জারি বা অস্ত্রোপচার অসম্ভব হয়ে দাঁড়াবে। প্রবন্ধটি প্রকাশিত হওয়ার পর বিশ্বব্যাপী চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হলেও অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্স ঠেকানোর ব্যাপারে বিশ্বে, বিশেষ করে তৃতীয় বিশ্বে তেমন কোনো অগ্রগতি সাধিত হয়নি।

কয়েকদিন আমার হাতে একটি নামকরা হাসপাতালের জীবাণু কালচারের রিপোর্ট এসেছিল। এক রোগীর ঘায়ের পুঁজ কালচার করে কুখ্যাত ই. কোলির উপস্থিতি পাওয়া গেছে। জীবাণু কালচার করে দেখা গেছে, ই. কোলির বিরুদ্ধে বহুল ব্যবহৃত সব অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্ট। এসব রেজিস্ট্যান্ট অ্যান্টিবায়োটিকের মধ্যে রয়েছে-অ্যামোক্সিসিলিন, সেপ্টাজিডিম, জেন্টামাইসিন, কোট্রাইমোক্সাজল, অ্যামিকাসিন, ন্যালিডিক্সিক অ্যাসিড, সেফুরক্সিম, সেফোটেক্সামিন, সিপ্রোফ্লক্সাসিন, অ্যাজট্রিওনাম, নেটিলমাইসিন এবং সেফট্রিয়াক্সন। শুধু একটি অ্যান্টিবায়োটিক কার্যকর বলে পরীক্ষায় দেখা গেছে আর তা হলো মেরোপেনেম। আমি রিপোর্টটি দেখে বিস্ময়ে হতভম্ব হয়ে গেছি। ১৩টি অ্যান্টিবায়োটিকের মধ্যে শুধু একটি অ্যান্টিবায়োটিক ই. কোলি জীবাণুর বিরুদ্ধে কার্যকর আর বাকি বারোটিই রেজিস্ট্যান্ট! এ রিপোর্ট যদি সত্যি হয় তাহলে আমরা সমূহ বিপদে আছি, যার ভয়াবহতা আমাদের কল্পনা শক্তির বাইরে।

বিশেষ কোনো এনজাইম অ্যান্টিবায়োটিকের গাঠনিক সংকেতে (structure) এমন কোনো রাসায়নিক পরিবর্তন নিয়ে আসতে পারে যার কারণে অ্যান্টিবায়োটিক অকার্যকর হয়ে পড়ে। দ্বিতীয়ত, অনেক সময় জীবাণু এমন সব এনজাইম তৈরি করে যা অ্যান্টিবায়োটিকের গাঠনিক সংকেতকে ভেঙে দিতে সক্ষম। অ্যান্টিবায়োটিকের গাঠনিক সংকেত ভেঙে গেলে অ্যান্টিবায়োটিক নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়ে। তৃতীয়ত, কোনো কোনো জীবাণু আছে যেগুলো জন্মগতভাবে অ্যান্টিবায়োটিকের প্রতি সংবেদনশীল নয়। যেমন গ্রাম নেগেটিভ জীবাণুগুলোর কোষ প্রাচীর এমন জটিলভাবে তৈরি, যার প্রতিবন্ধকতার বিরুদ্ধে অসংখ্য অ্যান্টিবায়োটিক কোনোভাবেই কার্যকর প্রভাব ফেলতে পারে না। চতুর্থত, জেনেটিক মিউটেশনের (জিনের রাসায়নিক পরিবর্তন) মাধ্যমে অনেক জীবাণু অ্যান্টিবায়োটিকের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ ক্ষমতা অর্জন করে ফেলে। কোটি কোটি জীবাণুর মধ্যে যে-কোনো একটি যদি মিউটেশনের মাধ্যমে পরিবর্তিত হয়ে যায়, সেই জীবাণু পরে বংশবৃদ্ধি ও বিস্তারের মাধ্যমে সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ে। এসব জীবাণু পরিবর্তিত জিনকে অন্য জীবাণুতে ট্রান্সফার করার মাধ্যমে রেজিস্ট্যান্ট জীবাণুর ব্যাপক বিস্তার ঘটায়। এসব জীবাণু দ্বারা আক্রান্ত কোনো রোগী তখন কোনো অ্যান্টিবায়োটিকের দ্বারা সংক্রমণমুক্ত হয়ে আরোগ্য লাভ করে না। ফলে রোগীর ভোগান্তি বাড়ে নতুবা কার্যকর অ্যান্টিবায়োটিকের অভাবে অসহায়ভাবে মৃত্যুবরণ করে।

জন হপকিনস বিশ্ববিদ্যালয়ের স্কুল অব মেডিসিন বিভাগের ক্লিনিক্যাল ডাইরেক্টর ড. পাউল আউওয়েটার প্রতিদিন এ সংকটের মুখোমুখি হচ্ছেন। সংকটের বর্তমান পরিস্থিতি উল্লেখ করতে গিয়ে তিনি বলেন, রোগী দিন দিন আরাও বেশি রোগাক্রান্ত হয়ে পড়ছে। এ কারণে আমাদের ব্যাপকভাবে অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার করতে হচ্ছে। ফলে জীবাণু নিজেদের অবয়ব বা কাঠামো পরিবর্তন করে ফেলছে। অন্যদিকে আমরা এসব জীবাণু মোকাবিলায় নতুন নতুন অ্যান্টিবায়োটিক উদ্ভাবন বা আবিষ্কারে উৎসাহ ও উদ্দীপনা হারিয়ে ফেলছি। সাধারণ মানুষের মধ্যে এ নিয়ে তেমন কোনো প্রতিক্রিয়া বা দুশ্চিন্তা নেই। কেননা, তারা মনে করে, অতীতের মতো চিকিৎসাবিজ্ঞানীরা পর্যাপ্ত কার্যকর অ্যান্টিবায়োটিক আবিষ্কার করে সংকট মোকাবিলায় যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন। ওষুধ কোম্পানিগুলোই তাদের স্বার্থে এ ধরনের আবিষ্কারে এগিয়ে আসবে, যেমন অন্যান্য রোগের বেলায় অতীতে এসেছে। কিন্তু আমরা বুঝতে পারছি না অ্যান্টিবায়োটিকের ক্ষেত্রে প্রেক্ষাপট ভিন্ন।

গ্রেফেন স্কুল অব মেডিসিনের জেনারেল ইন্টারন্যাল মেডিসিনের অ্যাসোসিয়েট প্রফেসর নেবার্গ বলেন, আমাদের বুঝতে হবে, অ্যান্টিবায়োটিকের এমন কতগুলো অনন্য বৈশিষ্ট্য রয়েছে, যা অন্যান্য ওষুধের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়। আজ যে অ্যান্টিবায়োটিক কার্যকারিতা প্রদর্শন করছে, তা পরবর্তী ১০ থেকে ১৫ বছর পর অকার্যকর হয়ে পড়তে পারে। অন্যান্য ওষুধের ক্ষেত্রে এমনটি ঘটে না। আর তাই জনস্বাস্থ্যের কথা বিবেচনা করে সংক্রামক রোগ মোকাবিলায় নতুন নতুন অ্যান্টিবায়োটিক আবিষ্কার অব্যাহত রাখা প্রয়োজন। অর্থনৈতিক মন্দা আর কঠোর নিয়ন্ত্রণের কারণে পরিস্থিতি এমনভাবে পরিবর্তন হয়ে গেছে যে, ওষুধ কোম্পানিগুলো নতুন নতুন অ্যান্টিবায়োটিক উদ্ভাবনে আগ্রহ হারিয়ে ফেলছে। আমরা নতুন অ্যান্টিবায়োটিক চাই, নতুন ওষুধ চাই বলে চিৎকার করছি। কিন্তু নতুন ওষুধ আসছে না।

ইতোমধ্যে আমরা প্রায় সব অ্যান্টিবায়োটিকের বিরুদ্ধে রেজিস্ট্যান্ট ব্যাকটেরিয়ার উৎপত্তি লক্ষ করছি। কিন্তু সে হারে নতুন অ্যান্টিবায়োটিক বাজারে আসছে না। রেজিস্ট্যান্ট সংক্রামক ব্যাধির সংখ্যা আগামী পাঁচ বছরে জ্যামিতিক হারে বৃদ্ধি পাবে। আমরা যে একদম অ্যান্টিবায়োটিক পাচ্ছি না, তা নয়; কিছু অ্যান্টিবায়োটিক বাজারে আসছে। কিন্তু সেসব অ্যান্টিবায়োটিক গ্রাম-নেগেটিভ সংক্রামক রোগের ক্ষেত্রে কার্যকর হচ্ছে না।

আমাদের অভাব হলো গ্রাম-নেগেটিভ ব্যাকটেরিয়ার বিরুদ্ধে কার্যকর অ্যান্টিবায়োটিকের। নতুন অ্যান্টিবায়োটিক উদ্ভাবনে ওষুধ কোম্পানিগুলোর অনীহার কারণ নিয়ে একটু আলোচনা করা যেতে পারে। মিলিয়ন মিলিয়ন ডলার পুঁজি বিনিয়োগ করে একটি অ্যান্টিবায়োটিক উদ্ভাবন করে বেশি মুনাফা করা যায় না। কোম্পানিগুলোর মতে, মানুষ অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার করে অল্প কয়েক দিনের জন্য। ডায়াবেটিস বা উচ্চরক্তচাপের মতো রোগের ক্ষেত্রে যেমন রোগীকে আজীবন ওষুধ গ্রহণ করতে হয়, অ্যান্টিবায়োটিকের ক্ষেত্রে তেমন হয় না। দ্বিতীয়ত, একটি অ্যান্টিবায়োটিক আবিষ্কৃত হওয়ার পর যদি অল্প কয়েক বছরে রেজিস্ট্যান্ট হয়ে যায়, তাহলে ওষুধ কোম্পানির পুঁজিও উঠে আসে না, মুনাফা তো দূরের কথা। এ ছাড়া উদ্ভাবনের পর কোনো অ্যান্টিবায়োটিকের অনুমোদন পেতে কোম্পানিগুলোকে অনেক ঝক্কি-ঝামেলা পোহাতে হয়। অনেক ক্ষেত্রে অনুমোদন পাওয়াও যায় না। এসব কারণে ওষুধ কোম্পানিগুলো অ্যান্টিবায়োটিক উদ্ভাবনে পুঁজি বিনিয়োগে আজকাল আর আগ্রহ দেখাচ্ছে না। ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে রোগী, জয়ী হচ্ছে রেজিস্ট্যান্ট ব্যাকটেরিয়া। এ অশনিসংকেত বারবার উচ্চারিত হওয়ার পরও সবাই নির্বিকার। বিশ্বের কোটি কোটি মানুষের কথা বাদই দিলাম, ওষুধ কোম্পানির মালিকরা কি জানেন, কোনো না কোনো সময় তারাও রেজিস্ট্যান্ট ব্যাকটেরিয়ার শিকার হতে পারেন এবং কার্যকর অ্যান্টিবায়োটিকের অভাবে তাদেরও করুণ পরিণতি হতে পারে?

২০১৪ সালের ৩০ এপ্রিল বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ১১৪টি দেশে পরিচালিত গবেষণার ফলাফলের ওপর ভিত্তি করে অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্স সম্পর্কে তাদের সর্বশেষ প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। এতে বলা হয়েছে, অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্স থেকে সৃষ্ট মহাবিপর্যয় এখন আর কোনো ভবিষ্যৎ সম্ভাবনার ব্যাপার নয়। এখনই এ মুহূর্তে বিশ্বের প্রতিটি দেশের প্রতিটি অঞ্চলে সব বয়সের সব মানুষ অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্সের শিকার হওয়ার প্রবল হুমকির মধ্যে রয়েছে।

‘অ্যান্টিমাইক্রোবায়াল রেজিস্ট্যান্স: গ্লোবাল রিপোর্ট অন সার্ভেইলেন্স’ (জীবাণুর প্রতিরোধ ক্ষমতা অর্জন: কড়া নজরদারির ওপর বিশ্ব প্রতিবেদন) শীর্ষক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, অসংখ্য সংক্রামক রোগ সৃষ্টিকারী অসংখ্য জীবাণু বেশিরভাগ অ্যান্টিবায়োটিকের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ ক্ষমতা অর্জন করে ফেলেছে। প্রতিবেদনে ডায়রিয়া, কলেরা, নিউমোনিয়া, মূত্রনালির সংক্রমণ, গনোরিয়া, সেপসিসের (রক্তের সংক্রমণ) মতো সাধারণ থেকে শুরু করে মারাত্মক সংক্রামক রোগ সৃষ্টিকারী জীবাণুর ওপর অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্সের ফলাফল প্রকাশ করা হয়। প্রতিবেদনে প্রকাশিত ফলাফল খুব উদ্বেগ ও আতঙ্কজনক। কারণ প্রতিরোধ ক্ষমতা অর্জনকারী বহু জীবাণুর বিরুদ্ধে শেষ অবলম্বন হিসাবে বিবেচিত খুব কার্যকর অ্যান্টিবায়োটিকগুলোও এখন কার্যকারিতা হারাতে বসেছে।

কার্বাপেনেমকে এতদিন একমাত্র নন-রেজিস্ট্যান্ট শতভাগ কার্যকর শেষ অবলম্বন অ্যান্টিবায়োটিক হিসাবে গণ্য করা হতো। জীবন বিপন্নকারী অন্ত্রের জীবাণু ক্লেবসিলা নিউমোনি কার্বাপেনেমের কার্যকারিতাকে ব্যর্থ করে দিয়ে সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়েছে। ক্লেবসিলা নিউমোনি হাসপাতালে নিউমোনিয়া, সেপসিস, নবজাতকের সংক্রমণ এবং জরুরি বিভাগে চিকিৎসারত বিপন্ন রোগীদের মধ্যে সংক্রমণ ছড়ানোর মূল কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বহু দেশ রেজিস্ট্যান্সের কারণে কার্বাপেনেম ক্লেবসিলা নিউমোনিতে আক্রান্ত ৫০ শতাংশ রোগীকে সুস্থ করে তুলতে ব্যর্থ হচ্ছে। মূত্রনালির সংক্রমণের জন্য দায়ী গ্রাম নেগেটিভ জীবাণু ই. কোলাইয়ের বিরুদ্ধে বহুল পরিচিত সিপ্রোগ্রুপের (ফ্লোরোকুনোলন) অ্যান্টিবায়োটিকগুলো অধিকাংশ ক্ষেত্রেই এখন আর কাজ করছে না।

১৯৮০ সালে বাজারে আসা সিপ্রোগ্রুপের ওষুধগুলোর বিরুদ্ধে জীবাণুর প্রতিরোধ ক্ষমতা অর্জনের পরিমাণ ছিল শূন্য। এখন পৃথিবীর অধিকাংশ দেশেই সংক্রামক রোগ চিকিৎসায় সিপ্রোগ্রুপের ওষুধগুলোর কার্যকারিতা ৬০ শতাংশেরও নিচে নেমে গেছে। গনোরিয়া চিকিৎসায় শেষ অবলম্বন হিসাবে পরিচিত তৃতীয় প্রজন্মের সেফালোস্পোরিন গ্রুপের ওষুধগুলো এখন অস্ট্রেলিয়া, অস্ট্রিয়া, কানাডা, ফ্রান্স, জাপান, নরওয়ে, স্লোভেনিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকা, সুইডেন এবং যুক্তরাজ্যের গনোরিয়ায় আক্রান্ত রোগীর চিকিৎসায় অকার্যকর হয়ে পড়েছে। প্রতিদিন সারা বিশ্বে ১০ লাখ মানুষ গনোরিয়ায় আক্রান্ত হয়।

অ্যান্টিবায়োটিক-সম্পর্কিত সংকট নিয়ে মানুষ এখনো পুরোপুরি অবহিত ও সচেতন হচ্ছে না। যখন পুরোপুরি অবহিত হবে, তখন সম্ভবত অনেক দেরি হয়ে যাবে। অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্ট সংক্রামক রোগ মানবসভ্যতার জন্য এক ভয়াবহ বিপর্যয় ডেকে আনতে যাচ্ছে। এ বিপর্যয়ের মাত্রা অনিশ্চিত, ভেদাভেদ অনির্ধারিত, ধনী-গরিব, শিশু-বয়স্ক, সুস্থ, প্রতিরোধ ক্ষমতাবিহীন রোগী কেউই এ বিপর্যয় থেকে রক্ষা পাবে না। তখন বুক চাপড়ানো ছাড়া আমাদের আর কোনো গত্যন্তর থাকবে না।