শিক্ষামূলক সমাজবিজ্ঞান কৃষ্টির ধারাবাহিকতা ও সামাজিক অগ্রগতির একটি মাধ্যম। মানব পরিবেশ কার্যত একটি সামাজিক পরিবেশ। শিক্ষামূলক সমাজবিজ্ঞানটির চিন্তাধারার উপর ভিত্তি করেই গড়ে ওঠে শিক্ষার উদ্দেশ্য, শিক্ষার পাঠক্রম, শিক্ষার পদ্ধতি ইত্যাদি। শিক্ষাগত সমাজবিজ্ঞানের অন্তর্নিহিত মূল ধারণাটি হলো এমন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রভাব বর্ণনা করা যা তাদের প্রভাবের মধ্যে যারা আসে তাদের সামাজিক ব্যক্তিত্ব নির্ধারণ করে। তাই শিক্ষাগত এবং সমাজবিজ্ঞান উভয়ই একটি সম্পূর্ণ শিক্ষামূলক প্রক্রিয়া হিসাবে একত্রে বিবেচিত হয়।
শিক্ষাশ্রয়ী সমাজবিজ্ঞানের সংজ্ঞা
সমাজবিদ্যা বা সমাজবিজ্ঞানের একটি প্রয়োগমূলক শাখা হলো শিক্ষাশ্রয়ী সমাজবিজ্ঞান। ‘শিক্ষাশ্রয়ী সমাজবিজ্ঞান’-এর ইংরেজি হলো ‘Educational Sociology’
- George Payne বলেছেন “Educational Sociology is the applied science in the field of sociology”
- Ottaway বলেছেন শিক্ষাশ্রয়ী সমাজবিজ্ঞান হলো শিক্ষা এবং সমাজের মধ্যে সম্পর্কের বৈজ্ঞানিক আলোচনা।
- এফ জে ব্রাউন বলেছেন শিক্ষাগত সমাজবিজ্ঞান একটি ব্যক্তি এবং তার Bos পরিবেশের সমীক্ষার সংমিশ্রণ, যেখানে সামাজিক দলগুলিকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে’
- Robinson Smith বলেছেন “শিক্ষাশ্রয়ী সমাজবিজ্ঞান হলো শিক্ষাক্ষেত্রে সমাজবিদ্যার নীতি ও বৈজ্ঞানিক পদ্ধতির প্রয়োগ।”
- Cook and Cook বলেছেন “শিক্ষাশ্রয়ী সমাজবিজ্ঞান হলো শিক্ষামূলক প্রক্রিয়ায় মানবিক উপাদানগুলির অধ্যয়ন, যার লক্ষ্যটি সমস্ত ধরনের শিক্ষাব্যবস্থায় শিক্ষাদান এবং শেখার উন্নতি করে।”
শিক্ষাশ্রয়ী সমাজবিজ্ঞানের প্রকৃতি বা বৈশিষ্ট্য
শিক্ষাশ্রয়ী সমাজবিদ্যার যে সকল প্রকৃতি পরিলক্ষিত হয়, তা নিম্নরূপ আলোচনা করা হলো:
- শিক্ষাশ্রয়ী সমাজবিদ্যার প্রকৃতি সমাজের অগ্রগতির সঙ্গে সঙ্গে সাজের উন্নয়ন ও শিক্ষার অগ্রগতি ঘটানো ।
- শিক্ষাশ্রয়ী সমাজবিজ্ঞান হলো সমাজবিজ্ঞানের একটি প্রয়োগমূলক শাখা। তাই শিক্ষাক্ষেত্রে শিক্ষাশ্রয়ী সমাজবিজ্ঞানের নীতি ও পদ্ধতির বৈজ্ঞানিক প্রয়োগ ঘটে।
- ব্যক্তি ও সমাজের মধ্যে সুসংগতিপূর্ণ সম্পর্ক স্থাপিত হয় শিক্ষাশ্রয়ী সমাজবিজ্ঞানের প্রকৃতির মাধ্যমে।
- সমাজের অগ্রগতি ও শিক্ষাশ্রয়ী সমাজবিদ্যার প্রকৃতি হলো শিক্ষার মাধ্যমে সমাজের উন্নয়ন ও অগ্রগতি ঘটানো ।
- শিক্ষাশ্রয়ী সমাজবিজ্ঞানের সাহায্যে শিক্ষায় যথাযথভাবে সামাজিক প্রক্রিয়াগুলির সঠিক প্রয়োগ সম্ভব হয় ।
- শিক্ষাশ্রয়ী সমাজবিজ্ঞানের প্রকৃতির সাহায্যে সামাজিক প্রক্রিয়ার সঠিক প্রয়োগ সম্ভব হয়।
পরিশেষে বলা যায় যে, শিক্ষাশ্রয়ী সমাজবিদ্যা পদ্ধতি ও নীতির বৈজ্ঞানিক প্রয়োগ ঘটে। ফলে ব্যক্তি ও সমাজের মধ্যে সুসংগতিপূর্ণ সম্পর্ক, উন্নয়ন ও অগ্রগতি ঘটে।
শিক্ষাশ্রয়ী সমাজবিজ্ঞান শিক্ষার লক্ষ্য
শিক্ষাশ্রয়ী সমাজবিজ্ঞানের পরিধি শিক্ষার লক্ষ্য নিধারনে বিশেষ ভূমিকা পালন করে এবং শিক্ষার লক্ষ্যের দিক গুলি সম্পর্কে আলোচনা করে থাকে।
- শিক্ষার পদ্ধতি: শিক্ষাশ্রয়ী সমাজবিজ্ঞান শিক্ষার পদ্ধতি কী হবে এবং শিক্ষার্থীদের কোন পদ্ধতিতে শিক্ষা দেওয়া হবে সে সম্পর্কে বিশেষ ভাবে আলোচনা করা হয়ে।
- পাঠক্রম: শিক্ষাশ্রয়ী সমাজবিজ্ঞানের পরিধির অন্তর্গত বিষয় হলো পাঠক্রম। এখানে শিক্ষার্থীদের ওপর গুরুত্ব দিয়ে পাঠক্রমের বিষয়বস্তু নিহারন করা হয়।
- শিক্ষকের কার্যাবলি: শিক্ষাশ্রয়ী সমাজবিজ্ঞানের পরিধির অন্তর্গতআধুনিক শিক্ষায় শিক্ষকের কার্যাবলি সম্পর্কে আলোচনা করা হয়।
- শৃঙ্খলা: শিক্ষাশ্রয়ী সমাজবিজ্ঞানে শৃঙ্খলা একটি গুরুত্বপূর্ণ আলোচ্য বিষয় ।শিক্ষার্থীদের মূল্যবোধের মাধ্যমে শৃঙ্খলা স্থাপন করে শিক্ষাশ্রয়ী সমাজবিদ্যায়।
শিক্ষাশ্রয়ী সমাজবিজ্ঞানের অন্যান্য দিক
- মানুষ সমাজবদ্ধজীব সমাজের মধ্যে মানুষের বসবাস করে একে অপরের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখে। ফলে দলীয় গতিশীলতা দেখা যায় যা শিক্ষাশ্রয়ী সমাজবিজ্ঞানের অন্তভুক্ত বিষয়টি।
- একটি সমাজে মানুষ বিভিন্ন সামাজিক এজেন্সির সাথে মতবিনিময় করে যেমন বাড়ি, পিয়ার গ্রুপ, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ইত্যাদি যা সমাজের মূল্যবোধ, একীভূত করে, স্থানান্তর করে এবং পাস করে। পরিবার হলো প্রথম সামাজিক সংস্থা যার সাথে কোনও সন্তানের সংস্পর্শে আসে।
- একজন ব্যক্তির মধ্যে একটি সংশোধন নিয়ে আসে যাতে সে তার নিজের মতো করে থাকা সমাজের সাথে খাপ খাইয়ে নিতে এবং সামঞ্জস্য করতে সক্ষম হয়।
- শিক্ষাশ্রয়ী সমাজবিজ্ঞানের পরিধি কতকগুলি বিষয়ের দ্বারা সমাজের অগ্রগতি ঘটে, সেগুলিকে সামাজিক নির্ধারক বলে । যেমন জাতি, শ্রেণি, ধর্ম, সংস্কৃতি ইত্যাদি।
- সমাজ প্রতিনিয়ত পরিবর্তনশীল, পরিবর্তনশীলতায় প্রকৃতি নিয়ম তাই পরিবর্তনশীলতা শিক্ষাশ্রয়ী সমাজবিজ্ঞানের আলোচ্য বিষয়।