০৫:৪৪ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১৭ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
                       

ভারতের সবচেয়ে বড়ো জাদুঘর ভারতীয় জাদুঘরের ইতিহাস

আহমেদ মিন্টো
  • প্রকাশ: ০৯:১৭:৪৪ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৩ জানুয়ারি ২০২২
  • / ১৪০৩৯ বার পড়া হয়েছে

ভারতীয় জাদুঘরের সংগ্রাহকরা ছিলেন ইউরোপীয় এবং একমাত্র ভারতীয় সংগ্রাহক ছিলেন বাবু রামকমল সেন।

পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের মধ্য কলকাতায় অবস্থিত ভারতীয় জাদুঘর (The Indian Museum) হলো ভারতের বৃহত্তম জাদুঘর। ১৮১৪ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় ভারতীয় জাদুঘর এবং জাদুঘরের প্রতিষ্ঠাতা কিউরেটর ছিলেন ড্যানিশ উদ্ভিদতত্ত্ববিদ বা বোটানিস্ট ড. নাথানিয়েল ওলফ ওয়ালিচ (Nathaniel Wolff Wallich)। ভারতীয় জাদুঘর বিশ্বের অন্যতম প্রাচীন জাদুঘর।

কলকাতা শহরের জওহরলাল নেহরু সড়কে অবস্থিত ভারতীয় জাদুঘর হলো প্রধানত সাংস্কৃতিক ও বিজ্ঞান বিষয়ক জাদুঘর। এই জাদুঘরটির মোট ছয়টি বিভাগ রয়েছে। ভারতীয় জাদুঘরের বিভাগগুলো হলো

  • শিল্পকলা বিভাগ
  • পুরাতত্ত্ব বিভাগ
  • নৃতত্ত্ব বিভাগ
  • ভূতত্ত্ব বিভাগ
  • প্রাণীতত্ত্ব বিভাগ
  • অর্থনৈতিক উদ্ভিজ্জ বিভাগ।

ভারতীয় সংবিধানের সপ্তম তফসিলে ভারতীয় জাদুঘরকে ‘জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান’-এর মর্যাদা দেওয়া হয়েছে এবং এটি ভারত সরকারের সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের পরিচালনাধীন। জাদুঘরটির ওয়েবসাইট https://www.indianmuseumkolkata.org/। 

ভারতীয় জাদুঘরের ইতিহাস

এশিয়াটিক সোসাইটি প্রতিষ্ঠা ও জমি

স্যার উইলিয়াম জোন্স (Sir William Jones) ১৭৮৪ সালে এশিয়াটিক সোসাইটি অব বেঙ্গল (The Asiatic Society of Bengal) প্রতিষ্ঠা করেন। ১৭৯৬ সালে এই সোসাইটির সদস্যরা মানুষের তৈরি বস্তু ও প্রাকৃতিক সামগ্রী নিয়ে একটি জাদুঘর স্থাপনের সিদ্ধান্ত নেন। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ১৮০৮ সালে জাদুঘর তৈরির কাজ শুরু হয়; একই বছরে জাদুঘর তৈরির জন্য ভারত সরকার সোসাইটিকে চৌরঙ্গী অঞ্চলে জন্য জমি দেয়।

ড. নাথানিয়েল ওয়ালিচের চিঠি

এশিয়াটিক সোসাইটির সদস্যরা যে জাদুঘর প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নিয়েছিলেন তার সমর্থন জানিয়ে ১৮১৪ সালের ২ ফেব্রুয়ারি সোসাইটির প্রতি ডাচ উদ্ভিদতত্ত্ববিদ ড. নাথানিয়েল ওয়ালিচ একটি চিঠি লেখেন। চিঠিতে ওয়ালিচ জাদুঘরে দুটি বিভাগ থাকা উচিত বলে নিজের মতামত জানান, এটিকে এক ধরনের সুপারিশও বলা যায়। ড. ওয়ালিচ যে বিভাগের কথা বলেন সেগুলোর একটি ‘পুরাতাত্ত্বিক, নৃতাত্ত্বিক ও প্রযুক্তিগত’ এবং অপরটি ‘ভূতাত্ত্বিক ও প্রাণিতাত্ত্বিক’। ড. ওয়ালিচ তাঁর নেই নিজের সংগ্রহের কিছু সামগ্রীও জাদুঘরে দান করার ইচ্ছে ব্যক্ত করেছিলেন। সোসাইটি ড. ওয়ালিচের এই প্রস্তাব গ্রহণ করেছিল।

প্রথম কিউরেটর ড. ওয়ালিচ

ড. নাথানিয়েল ওয়ালিচ ছিলেন ভারতীয় জাদুঘরের প্রথম সাম্মানিক পরিচালক (কিউরেটর) নিযুক্ত করা হয়।  জুন ১, ১৮১৪ তারিখ ড. ওয়ালিচ ভারতীয় জাদুঘরের দায়িত্ব গ্রহণ করেন; এর পূর্বে তিনি এশিয়াটিক সোসাইটির প্রাচ্য জাদুঘরের সুপারিনটেন্ডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করতেন।

জাদুঘর প্রতিষ্ঠার পর থেকে ড. ওয়ালিচের  উৎসাহেই জাদুঘরের আকার দ্রুত বৃদ্ধি পেতে থাকে এবং তাঁর জন্যেই এই জাদুঘর আজ এত বড়ো হয়েছে বলে বেশিরভাগ লোকের মত।

ভারতীয় জাদুঘরের সংগ্রাহক

ভারতীয় জাদুঘরের সংগ্রাহকরা ছিলেন ইউরোপীয় এবং একমাত্র ভারতীয় সংগ্রাহক ছিলেন বাবু রামকমল সেন। বাবু রামকমল সেন পরবর্তীতে এশিয়াটিক সোসাইটি অব বেঙ্গলের ভারতীয় সচিব হয়েছিলেন।

ড. নাথানিয়েল ওয়ালিচ ভারতীয় জাদুঘর প্রতিষ্ঠার সময় জাদুঘরকে সবচেয়ে বেশি সামগ্রী দান করেছিলেন।

১৮১৬ সাল পর্যন্ত জাদুঘরে দান করা ৭৪টি সামগ্রীর মধ্যে ৪২টি ছিল উদ্দিজ্জ।

বেতনে কিউরেটর নিয়োগ ও সরকারি অনুদান

ড. ওয়ালিচ পদত্যাগ করার পর মাসিক ৫০ থেকে ১০০ টাকা বেতনে কিউরেটর নিয়োগ শুরু হয়। ১৮৩৬ সাল পর্যন্ত এশিয়াটিক সোসাইটি এই বেতন দিত। এরপর সোসাইটির ব্যাংকার ‘পামার অ্যান্ড কোম্পানি’ দেউলিয়া হয়ে গেলে তৎকালীন ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি কর্তৃক পরিচালিত সরকার বেতন দিতে শুরু করে।

জাদুঘর ও গ্রন্থাগারের রক্ষনাবেক্ষণের জন্য মাসিক ২০০ টাকা অনুদান দেওয়া শুরু হয়। ১৮৪০ সালে সরকার জাদুঘর ভূতাত্ত্বিক ও খনিজ সংগ্রহ বিভাগ চালুর ব্যাপারে আগ্রহী হয়ে আরও ২৫০ টাকা মাসিক অনুদান দিতে শুরু করে শুধু ভূতত্ত্ব বিভাগের জন্য। 

ভারতীয় জাদুঘরের নতুন স্থাপনা

যেহেতু জাদুঘরের সামগ্রী দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছিল সেহেতু এর জন্য একটি নতুন স্থাপনার প্রয়োজন হয়। ১৮৭৫ সালে ১,৪০,০০০ টাকা ব্যয়ে এই নতুন স্থাপনার তৈরি হয়। স্যার টম হল্যান্ডের (Sir Tom Holland) পরামর্শে ভারতীয় জাদুঘরের এই স্থাপনার নকশা করেন ওয়াল্টার এল. গ্র্যানভিল (W L Granville)। ১৮৭৯ সালে সাউথ কেনসিংটনের ইন্ডিয়ান মিউজিয়ামের সংগ্রহের একাংশ এই জাদুঘরে আসে।

১৯১৬ সালে জুওলজিক্যাল সার্ভে অফ ইন্ডিয়ার অনুদানে জাদুঘরে প্রাণিতত্ত্ব এবং ১৯৪৫ সালে অ্যানথ্রোপোলজিক্যাল সার্ভে অব ইন্ডিয়ার অনুদানে নৃতাত্ত্বিক বিভাগ চালু হয়।

শেয়ার করুন

লেখকতথ্য

আহমেদ মিন্টো

মিন্টো একজন ফ্রিল্যান্স লেখক এবং বিশ্লেষণ'র কন্ট্রিবিউটর।
তাহসান খান এবং মুনজেরিন শহীদের দুটি প্রফেশনাল কমিউনিকেশন কোর্স করুন ২৮% ছাড়ে
তাহসান খান এবং মুনজেরিন শহীদের দুটি প্রফেশনাল কমিউনিকেশন কোর্স করুন ২৮% ছাড়ে

২৮℅ ছাড় পেতে ৩০/০৬/২০২৪ তারিখের মধ্যে প্রোমো কোড “professional10” ব্যবহার করুন। বিস্তারিত জানতে ও ভর্তি হতে ক্লিক করুন এখানে

ভারতের সবচেয়ে বড়ো জাদুঘর ভারতীয় জাদুঘরের ইতিহাস

প্রকাশ: ০৯:১৭:৪৪ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৩ জানুয়ারি ২০২২

পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের মধ্য কলকাতায় অবস্থিত ভারতীয় জাদুঘর (The Indian Museum) হলো ভারতের বৃহত্তম জাদুঘর। ১৮১৪ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় ভারতীয় জাদুঘর এবং জাদুঘরের প্রতিষ্ঠাতা কিউরেটর ছিলেন ড্যানিশ উদ্ভিদতত্ত্ববিদ বা বোটানিস্ট ড. নাথানিয়েল ওলফ ওয়ালিচ (Nathaniel Wolff Wallich)। ভারতীয় জাদুঘর বিশ্বের অন্যতম প্রাচীন জাদুঘর।

কলকাতা শহরের জওহরলাল নেহরু সড়কে অবস্থিত ভারতীয় জাদুঘর হলো প্রধানত সাংস্কৃতিক ও বিজ্ঞান বিষয়ক জাদুঘর। এই জাদুঘরটির মোট ছয়টি বিভাগ রয়েছে। ভারতীয় জাদুঘরের বিভাগগুলো হলো

  • শিল্পকলা বিভাগ
  • পুরাতত্ত্ব বিভাগ
  • নৃতত্ত্ব বিভাগ
  • ভূতত্ত্ব বিভাগ
  • প্রাণীতত্ত্ব বিভাগ
  • অর্থনৈতিক উদ্ভিজ্জ বিভাগ।

ভারতীয় সংবিধানের সপ্তম তফসিলে ভারতীয় জাদুঘরকে ‘জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান’-এর মর্যাদা দেওয়া হয়েছে এবং এটি ভারত সরকারের সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের পরিচালনাধীন। জাদুঘরটির ওয়েবসাইট https://www.indianmuseumkolkata.org/। 

ভারতীয় জাদুঘরের ইতিহাস

এশিয়াটিক সোসাইটি প্রতিষ্ঠা ও জমি

স্যার উইলিয়াম জোন্স (Sir William Jones) ১৭৮৪ সালে এশিয়াটিক সোসাইটি অব বেঙ্গল (The Asiatic Society of Bengal) প্রতিষ্ঠা করেন। ১৭৯৬ সালে এই সোসাইটির সদস্যরা মানুষের তৈরি বস্তু ও প্রাকৃতিক সামগ্রী নিয়ে একটি জাদুঘর স্থাপনের সিদ্ধান্ত নেন। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ১৮০৮ সালে জাদুঘর তৈরির কাজ শুরু হয়; একই বছরে জাদুঘর তৈরির জন্য ভারত সরকার সোসাইটিকে চৌরঙ্গী অঞ্চলে জন্য জমি দেয়।

ড. নাথানিয়েল ওয়ালিচের চিঠি

এশিয়াটিক সোসাইটির সদস্যরা যে জাদুঘর প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নিয়েছিলেন তার সমর্থন জানিয়ে ১৮১৪ সালের ২ ফেব্রুয়ারি সোসাইটির প্রতি ডাচ উদ্ভিদতত্ত্ববিদ ড. নাথানিয়েল ওয়ালিচ একটি চিঠি লেখেন। চিঠিতে ওয়ালিচ জাদুঘরে দুটি বিভাগ থাকা উচিত বলে নিজের মতামত জানান, এটিকে এক ধরনের সুপারিশও বলা যায়। ড. ওয়ালিচ যে বিভাগের কথা বলেন সেগুলোর একটি ‘পুরাতাত্ত্বিক, নৃতাত্ত্বিক ও প্রযুক্তিগত’ এবং অপরটি ‘ভূতাত্ত্বিক ও প্রাণিতাত্ত্বিক’। ড. ওয়ালিচ তাঁর নেই নিজের সংগ্রহের কিছু সামগ্রীও জাদুঘরে দান করার ইচ্ছে ব্যক্ত করেছিলেন। সোসাইটি ড. ওয়ালিচের এই প্রস্তাব গ্রহণ করেছিল।

প্রথম কিউরেটর ড. ওয়ালিচ

ড. নাথানিয়েল ওয়ালিচ ছিলেন ভারতীয় জাদুঘরের প্রথম সাম্মানিক পরিচালক (কিউরেটর) নিযুক্ত করা হয়।  জুন ১, ১৮১৪ তারিখ ড. ওয়ালিচ ভারতীয় জাদুঘরের দায়িত্ব গ্রহণ করেন; এর পূর্বে তিনি এশিয়াটিক সোসাইটির প্রাচ্য জাদুঘরের সুপারিনটেন্ডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করতেন।

জাদুঘর প্রতিষ্ঠার পর থেকে ড. ওয়ালিচের  উৎসাহেই জাদুঘরের আকার দ্রুত বৃদ্ধি পেতে থাকে এবং তাঁর জন্যেই এই জাদুঘর আজ এত বড়ো হয়েছে বলে বেশিরভাগ লোকের মত।

ভারতীয় জাদুঘরের সংগ্রাহক

ভারতীয় জাদুঘরের সংগ্রাহকরা ছিলেন ইউরোপীয় এবং একমাত্র ভারতীয় সংগ্রাহক ছিলেন বাবু রামকমল সেন। বাবু রামকমল সেন পরবর্তীতে এশিয়াটিক সোসাইটি অব বেঙ্গলের ভারতীয় সচিব হয়েছিলেন।

ড. নাথানিয়েল ওয়ালিচ ভারতীয় জাদুঘর প্রতিষ্ঠার সময় জাদুঘরকে সবচেয়ে বেশি সামগ্রী দান করেছিলেন।

১৮১৬ সাল পর্যন্ত জাদুঘরে দান করা ৭৪টি সামগ্রীর মধ্যে ৪২টি ছিল উদ্দিজ্জ।

বেতনে কিউরেটর নিয়োগ ও সরকারি অনুদান

ড. ওয়ালিচ পদত্যাগ করার পর মাসিক ৫০ থেকে ১০০ টাকা বেতনে কিউরেটর নিয়োগ শুরু হয়। ১৮৩৬ সাল পর্যন্ত এশিয়াটিক সোসাইটি এই বেতন দিত। এরপর সোসাইটির ব্যাংকার ‘পামার অ্যান্ড কোম্পানি’ দেউলিয়া হয়ে গেলে তৎকালীন ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি কর্তৃক পরিচালিত সরকার বেতন দিতে শুরু করে।

জাদুঘর ও গ্রন্থাগারের রক্ষনাবেক্ষণের জন্য মাসিক ২০০ টাকা অনুদান দেওয়া শুরু হয়। ১৮৪০ সালে সরকার জাদুঘর ভূতাত্ত্বিক ও খনিজ সংগ্রহ বিভাগ চালুর ব্যাপারে আগ্রহী হয়ে আরও ২৫০ টাকা মাসিক অনুদান দিতে শুরু করে শুধু ভূতত্ত্ব বিভাগের জন্য। 

ভারতীয় জাদুঘরের নতুন স্থাপনা

যেহেতু জাদুঘরের সামগ্রী দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছিল সেহেতু এর জন্য একটি নতুন স্থাপনার প্রয়োজন হয়। ১৮৭৫ সালে ১,৪০,০০০ টাকা ব্যয়ে এই নতুন স্থাপনার তৈরি হয়। স্যার টম হল্যান্ডের (Sir Tom Holland) পরামর্শে ভারতীয় জাদুঘরের এই স্থাপনার নকশা করেন ওয়াল্টার এল. গ্র্যানভিল (W L Granville)। ১৮৭৯ সালে সাউথ কেনসিংটনের ইন্ডিয়ান মিউজিয়ামের সংগ্রহের একাংশ এই জাদুঘরে আসে।

১৯১৬ সালে জুওলজিক্যাল সার্ভে অফ ইন্ডিয়ার অনুদানে জাদুঘরে প্রাণিতত্ত্ব এবং ১৯৪৫ সালে অ্যানথ্রোপোলজিক্যাল সার্ভে অব ইন্ডিয়ার অনুদানে নৃতাত্ত্বিক বিভাগ চালু হয়।