০৫:২৬ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ
                       

সমাজকল্যাণ কাকে বলে? সমাজকল্যাণের উৎপত্তি, সংজ্ঞা, বৈশিষ্ট্য ও উদ্দেশ্য কী?

ড. এ. এস. এম. আতীকুর রহমান
  • প্রকাশ: ১০:১৫:১৯ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২৯ ডিসেম্বর ২০২১
  • / ২২৬৭০ বার পড়া হয়েছে

সমাজকল্যাণ একটি ব্যাপক ধারণা

সমাজকল্যাণ হলো সমাজের সকল শ্রেণির মানুষের কল্যাণের জন্যে সকল মানুষের প্রচেষ্টা। ‘সমাজকল্যাণ’ শব্দের ইংরেজি প্রতিশব্দ হলো ‘Social welfare’ (সোশ্যাল ওয়েলফেয়ার)। সমাজকল্যাণ বলতে কী বুঝায়, সমাজকল্যানের সংজ্ঞা, বৈশিষ্ট্য, উদ্দেশ্য, প্রয়োজনীয়তা ও পরিধি সম্পর্কে এই নিবন্ধে জানা যাবে।

সমাজকল্যাণের উৎপত্তি

যখন সমাজ গড়ে উঠলো সামাজিকভাবে জীবন যাপন শুরু করলো সমাজকল্যাণের উৎপত্তিও ঠিক তখন থেকে। এর আগে মানুষ যখন একাকী কিংবা দল বা গোষ্ঠীগতভাবে বসবাস করতো তখনও মানুষ পরস্পর পরস্পরকে বিপদে-আপদে সাহায্য সহযোগিতা করতে। অর্থাৎ নিজের কল্যাণ ও উন্নয়ন সাধনের পাশাপাশি মানুষ সেই শুরু থেকেই অন্যের মঙ্গল বা কল্যাণ বিধানের চেষ্টা করে আসছে। অন্যের সমস্যায়, কষ্টে বা দুঃসময়ে এগিয়ে যাওয়া মানুষের যেন সহজাত প্রবৃত্তি। ব্যক্তি একজন মানুষ হিসেবে সহমর্মী হয়ে এবং হৃদয়ের ডাকে অন্যকে সাহায্য সহযোগিতা করে। দলীয় ও সমাজ জীবনেও মানুষ দলীয় ও সামাজিকভাবে অন্য মানুষের কল্যাণ বিধানে এগিয়ে যায়। আর এভাবেই মানুষেরসমাজে উদ্ভব ঘটে সমাজকল্যাণের।প্রাথমিক পর্যায়ে মানুষের সামাজিক জীবন ছিল বেশ সহজ-সরল প্রকৃতির। অনুভূত সমস্যাও তেমন জটিল ছিল না।

প্রাকৃতিক দুর্যোগ, মহামারী, দুর্ভিক্ষ, কাজও আয়ের অভাব, প্রতিবন্ধকতা, বার্ধক্য ইত্যাদিই ছিল সে সময়ের মানুষদেরপ্রধান সমস্যা। আর এ থেকে পরস্পরকে রক্ষা করতে সমাজকল্যাণের যে সকল ব্যবস্থা ছিল তার মধ্যে দান-খয়রাত, স্বেচ্ছাশ্রম, সহানুভূতি, সান্তনা, সাহায্য ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। এ পর্যায়ে সমাজকল্যাণের প্রকৃতি ছিল প্রধানতঃ তাৎক্ষনিক, আংশিক, অসংগঠিত এবং আবেগ নির্ভর।

পরবর্তী পর্যায়ে, বিশেষ করে ধর্মীয় অনুপ্রেরণা ও অনুশাসন সমাজকল্যাণমুলক কাজকে আরও গতিময় ও বিস্তৃত করে এ ধরনের কাজকে মানুষ একটি ধর্মীয় দায়িত্ব হিসেবে গ্রহণ করে। কিন্তু তা সত্ত্বেও সমাজকল্যাণ কর্মকান্ডের প্রকৃতি একইরকম ধারায় চলতে থাকে। একে বলা যায় সনাতনী সমাজকল্যাণ। কিন্তু শিল্প বিপ্লবের পরবর্তী সময়ে মানুষের উৎপাদন, ভোগ, যাতায়াত- যোগাযোগ, গতিশীলতা, চাহিদা যোগান ইত্যাদিতে ব্যাপক পরিবর্তন আসে। সেই সাথে জটিল আকারধারণ করে মানুষের অনুভূত সমস্যাবলি। সম্প্রতিকালের সমস্যা মোকাবেলায় সমাজকল্যাণ কর্মকান্ডে বেশ সংগঠিত ওদুরদৃষ্টি নিয়ে করা হচ্ছে। একে তাই বলা হয় আধুনিক সমাজকল্যাণ। দেশের বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থা (Non-government Organisation) বা এনজিও (NGO) এবং জাতিসংঘের বিভিন্ন এজেন্সি এ ধরনের সমাজকল্যাণমুলক কাজ পরিচালনা করে যাচ্ছে বেশ সাফল্যের সাথে।

সমাজকল্যাণের সংজ্ঞা

সমাজ বা জনসমষ্টির সার্বিক মঙ্গল সাধনই হচ্ছে এক কথায় সমাজকল্যাণ। সমাজকল্যাণ এমন কিছু সামাজিক প্রচেষ্টা, ব্যবস্থা, পদ্ধতি বা সংগঠিত কার্যাবলীর সমষ্টি যার মাধ্যমে সমাজের কল্যাণ বিধান হয়। আবার সমাজকল্যাণ বলতেসুসংঘবদ্ধ সামাজিক প্রচেষ্টার চূড়ান্ত লক্ষ্যকেও বুঝানো হয়।

সমাজকর্ম অভিধানে বরার্ট এল বার্ক তাঁর সমাজকল্যাণের সংজ্ঞায় বলেছেন যে, “মানুষের অপরিহার্য সামাজিক, অর্থনৈতিক শিক্ষা ও স্বাস্থ্যগত চাহিদা পূরণের লক্ষ্যে প্রচলিত কর্মসূচি,সুযোগ ও সেবা জাতীয় ব্যবস্থা।”

আবার ওয়াল্টার এ ফ্রিডল্যান্ডার উল্লেখ করেছেন যে, “সমাজকল্যাণ হলো সমাজসেবা ও প্রতিষ্ঠানের এমন এক সুসংগঠিত ব্যবস্থা যা ব্যক্তি ও দলকে সন্তোষজনক জীবনমান ও স্বাস্থ্য এবং ব্যক্তিগত ও সামাজিকসম্পর্ক লাভে সহায়তা করে যা তাদের ক্ষমতার পূর্ণ বিকাশে এবং তাদের পরিবার ও জনসমষ্টির চাহিদার সাথে সামঞ্জস্য রেখে উন্নতি বিধানে সহায়তা করে।” এক কথায়, সমাজকল্যাণ হচ্ছে জাতীয় পর্যায়ে গৃহীত ঐ সকল প্রচেষ্টা বা উদ্যোগযার মাধ্যমে মানুষ ব্যক্তিগত, দলীয়, পারিবারিক ও সামাজিক ভাবে সাচ্ছন্দময় ও মর্যাদাপূর্ণ জীবন যাপনের সুযোগ লাভ করে। 

সমাজকল্যাণের বৈশিষ্ট্য

বর্তমানে বিশ্বের সবখানে বিশেষ করে বাংলাদেশে সনাতনী ও আধুনিক উভয় প্রকার সমাজকল্যাণমুলক কর্মকান্ড প্রচলিতআছে। সনাতনী বলতে যেমন, ভিক্ষাদান, ব্যক্তিগত সান্তনা, সহমর্মিতা, স্বেচ্ছাশ্রম ইত্যাদিকে ধরা হয়। এগুলো প্রধানতঃ ব্যক্তিগত কিংবা পরিবার ভিত্তিতে পরিচালিত হয়। অন্যদিকে আধুনিক সমাজকল্যাণ তৎপরতা দেশের প্রচলিত আইনের আওতায়, সংগঠিত ভাবে এবং যতটা সম্ভব বিজ্ঞান ভিত্তিতে পরিচালিত হয়। বিভিন্ন সরকারি সংস্থা, বিশেষ করে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় এবং রেজিস্ট্রিভুক্ত বেসরকারি সংস্থা (Non-government Organisation) বা এনজিও (NGO) গুলোর তৎপরতা এর বাস্তব উদাহরণ। বর্তমানের ফরমাল বা আনুষ্ঠানিকসমাজের প্রেক্ষাপটে সমাজকল্যাণ বলতে আধুনিক সমাজকল্যাণ তৎপরতাকেই স্বীকৃতি দেয়া হয়।

আধুনিক সমাজকল্যাণের বেশ কিছু বৈশিষ্ট্য এর বিভিন্ন সংজ্ঞা হতে পাওয়া যায়। যেমন:

১. সুসংগঠিত ব্যবস্থা: বর্তমানে সমাজকল্যাণ কর্মসুচী গৃহীত ও বাস্তবায়িত হয় সংগঠনের মাধ্যমে। অর্থাৎ বিচ্ছিন্নভাবে নয় বরঞ্চ সুসংগঠিতভাবে সমাজকল্যাণমূলক তৎপরতা পরিচালনা করার জন্য কর্মীদের সচেষ্ট থাকতে হয়।

২. বিজ্ঞানভিত্তিক ও পরিকল্পিত: বর্তমানে সমাজকল্যাণ প্রচেষ্টা বিজ্ঞান ভিত্তিতে এবং সুপরিকল্পিতভাবে পরিচালনার চেষ্টাকরা হয়। প্রকল্প প্রণয়ন, বাস্তবায়ন ও মূল্যায়ন সবক্ষেত্রে বিজ্ঞানের আশ্রয় নেয়া হয়।

৩. সামগ্রীক, সার্বজনীন ও দূরদৃষ্টিসম্পন্ন: আধুনিক সমাজকল্যাণ কর্মসূচি সেবা গ্রহীতার বিশেষ কোন দিক নয় বরঞ্চ সকল দিককে কেন্দ্র করে পরিচালিত হয়। এবং বিশেষ কোন শ্রেণিকে নয় বরঞ্চ ধনী- দরিদ্র, ধর্ম-বর্ণ-গোত্র, গ্রামীণশহরে নির্বিশেষে দুঃস্থ মানুষের সেবায় সমাজকল্যাণ সমানভাবে তা থাকে। তাছাড়া বিপদ আসার পরে বা তাৎক্ষণিকভাবে নয়, দূর্যোগ ঘটার আগে থেকেই তা মোকাবেলার জন্য প্রস্তুতি থাকা আধুনিক সমাজকল্যাণের একটি অন্যতম বৈশিষ্ট্য।

৪. সক্ষমকারী ও স্বাবলম্বীকরণ ব্যবস্থা: আধুনিক সমাজকল্যাণ মানুষকে এমনভাবে সহায়তা করে যাতে তারা সক্ষম ও স্বাবলম্বী হয়ে উঠতে পারে। তারা যাতে তাদের সম্পদের সদ্ব্যবহার করে নিজেদের উদ্যোগে উন্নয়নমুলক কাজকরতে এগিয়ে আসে সে ব্যাপারে সমাজকল্যাণ সমস্যাগ্রস্থ মানুষকে উদ্বুদ্ধ করে।

৫. সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগ: আধুনিক সমাজকল্যাণ সরকারী অথবা বেসরকারী যে কোন উদ্যোগেই পরিচালিতহচ্ছে। তবে স্বেচ্ছামূলক বা বেসরকারি সংগঠনের (এনজিও) মাধ্যমে কাজ করতে হলে সরকারি রেজিষ্ট্রেশন নিয়ে কাজ করতে হয়।

৬. জনগণের অংশগ্রহণের মাধ্যমে উন্নয়ন: বর্তমানে সমাজকল্যাণমূলক কাজে সংশ্লিষ্ট সমস্যাগ্রস্থ বা সেবাগ্রহীতাদেরকেজড়িত করা হয়। অর্থাৎ যাদের জন্যে কর্মসুচি হাতে নেয়া হয়েছে বা যাদেরকে সেবাদেয়া হবে তাদেরকে ঐ সেবামূলক কাজে অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা প্রয়োজন। এতে করে উন্নয়ন স্থায়ী ও কার্যকর হয়।

৭. বিশেষ নীতিমালাও পদ্ধতি: আধুনিক সমাজকল্যাণ বিশেষ কিছু নীতিমালা অনুসরণ করে কাজ করে। জাতীয় নীতি, সামাজিক আইন ইত্যাদির কথা এখানে উল্লেখ করা যেতে পারে। তাছাড়া সেবাদান পর্যায়ে বিজ্ঞানভিত্তিক পদ্ধতিও প্রয়োগ করে থাকে।

সমাজকল্যাণের উদ্দেশ্য

সমাজকল্যাণের উদ্দেশ্য হলো সমাজের মানুষের সবধরনের কল্যাণ বা মঙ্গল সাধন করা। সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগে সমাজের সকল মানুষের সামাজিক, অর্থনৈতিক, স্বাস্থ্যগত ও চিত্ত-বিনোদনের চাহিদা পুরণে সহায়তা করাই সমাজকল্যাণেরমূল উদ্দেশ্য বা লক্ষ্য। সমাজকল্যাণের প্রধান প্রধান উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য হলো:

১. মৌলিক মানবিক চাহিদা পূরণ: বিভিন্ন সমাজেই অনেক মানুষের মৌলিক মানবিক চাহিদা পূরণ হয় না। সমাজকল্যাণের অন্যতম লক্ষ্য হলো মানুষের খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা, চিকিৎসা, চিত্তবিনোদন, নিরাপত্তা ইত্যাদি মৌলিক মানবিক চাহিদা পূরণে সাহায্য করা। 

২. দু:স্থ, অসহায় ও আর্তমানবতার সেবা: বিভিন্ন কারণে এবং বিভিন্ন সময়ে মানুষ নানাধরনের সমস্যার মধ্যে পতিত হয়। দারিদ্র, দুর্ভিক্ষ, মহামারী, ঝড়-বন্যা-জলোচ্ছাস, খরা ইত্যাদি যখন সমাজে অসহায় করে ফেলে; সমাজকল্যাণের মূল তৎপরতা সে সময় মানুষকে দরকারী সেবা প্রদান করে।

৩. মানব সম্পদের উন্নয়ন ও স্বাবলম্বী মনোভাব গড়ে তোলা: বাংলাদেশের মতো সমাজে বহুমানুষ তাদের মেধা-শ্রম-দক্ষতা বিকাশের সুযোগ পায় না। তারা পরমুখাপেক্ষী হয়ে পড়ে। নিজেদের মানবীয় সম্পদ অব্যবহৃত অবস্থায় থাকে। সমাজকল্যাণ বিভিন্ন শিক্ষা-প্রশিক্ষণ-কর্মসুচির মাধ্যমে ঐ সকল মানুষকে তাদের মানবীয় সম্পদ ব্যবহারের সুযোগ করে দেয়। এতে করে মানুষ স্বাবলম্বী হয়ে ওঠে।

৪. স্থানীয় সম্পদের সদ্ব্যবহার ও জন অংশগ্রহণ বৃদ্ধি: সমাজের প্রচুর সম্পদ অব্যবহৃত হয়ে পড়ে থাকে কিংবা সঠিকভাবে কাজে লাগানো হয় না। তাছাড়া বিভিন্ন সরকারী-বেসরকারী উন্নয়ন কর্মকান্ড স্থানীয় জনগণ অংশগ্রহণ করতে আগ্রহী হয় না। সমাজকল্যাণের অন্যতম একটি উদ্দেশ্য হলো স্থানীয় সম্পদের সর্বোত্তম ব্যবহার ও উন্নয়ন কর্মসুচিতে জনগণের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণের মাত্রা বৃদ্ধির উদ্যোগ নেওয়া।

৫. দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন ও পারস্পারিক সম্পদের উন্নয়ন: আধুনিক কালে সমাজকল্যাণের বিশেষ একটি উদ্দেশ্য হচ্ছে সমাজের মানুষের মধ্যে ইতিবাচক ও পারস্পারিক সহযোগিতামূলক সম্পর্কের উন্নয়ন সাধন করা। সমাজ সদস্যদেরকে তাদের নিজ নিজ দায়িত্ব ও কর্তব্য সম্পর্কে সজাগ করাও সমাজকল্যাণের লক্ষ্য।

৬. জনগণকে সচেতন ও সংগঠিত করা: সমাজকল্যাণ যেহেতু সকল মানুষের জন্য সকল মানুষের সংগঠিত প্রচেষ্টা; তাই সমাজের মানুষের অসময়ে অন্যান্য সমাজবাসীকে সচেতন করা, সংগঠিত করা ও উদ্যোগী করাও সমাজ কল্যাণের অন্যতম লক্ষ্য। বিশেষ করে গ্রামীণ সমাজের জন্যেও উদ্দেশ্যটি বেশী প্রযোজ্য হয়ে থাকে।

৭. সামাজিক সংস্কার সাধন ও নিরাপত্তা বিধান: বর্তমান সমাজের বিভিন্ন রীতি-নীতি বা আচার-অনুষ্ঠান যদি মানুষের সত্যিকার কল্যাণ বিধানের পরিপন্থি হয় সেক্ষেত্রে সমাজকল্যাণ তার সংস্কার সাধনে আগ্রহী হয়। সমাজে একটি সুখ ও স্বস্তিদায়ক অবস্থা প্রতিষ্ঠাও বজায় রাখতে সমাজকল্যাণ বিশেষভাবে তৎপরতা চালিয়ে থাকে। পাশাপাশি, বাংলাদেশর মতো দরিদ্র দুঃস্থ মানুষের দুঃসময়ের নিরাপত্তা ও সহযোগিতা দানে সমাজকল্যাণ অগ্রণী ভূমিকা গ্রহণ করে।

শেষকথা

সমাজকল্যাণ সমাজের সকল শ্রেণির মানুষের কল্যাণের জন্যে সকল মানুষের প্রচেষ্টা। সনাতনী আধুনিক, আনুষ্ঠানিক অনানুষ্ঠানিক, সরকারি-বেসরকারি ইত্যাদি ধারায় সমাজ কল্যাণমূলক কর্মসূচি বিশ্ব সমাজে বহুদিন ধরে প্রচলিত আছে। তবে বর্তমানে বিজ্ঞান ভিত্তিতেও আনুষ্ঠানিক ভাবে সমাজকল্যাণ কর্মকান্ড পরিচালিত হচ্ছে। সমাজকল্যাণের মূল লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য হলো সামাজিক মানুষকে স্বাবলম্বী করার জন্য দরকারী সাহায্য সহযোগিতা ও নিরাপত্তা বিধান করা এবং স্থানীয় সম্পদ ব্যবহারের মাধ্যমে সকল মানুষকে তাদের দাযিত্ব ও কর্তব্য সম্পর্কে সচেতন করা ও উন্নয়ন কাজে সকলকে জড়িত করা।

এ. টি. এম. হানিফ কর্তৃক সম্পাদিত ও বাউবি কর্তৃক প্রকাশিত ‘সমাজকল্যান দ্বিতীয় পত্র’ পাঠ্যবই অনুকরণ করে লিখিত।

শেয়ার করুন

মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার তথ্য সংরক্ষিত রাখুন

তাহসান খান এবং মুনজেরিন শহীদের দুটি প্রফেশনাল কমিউনিকেশন কোর্স করুন ২৮% ছাড়ে
তাহসান খান এবং মুনজেরিন শহীদের দুটি প্রফেশনাল কমিউনিকেশন কোর্স করুন ২৮% ছাড়ে

২৮℅ ছাড় পেতে ৩০/০৬/২০২৪ তারিখের মধ্যে প্রোমো কোড “professional10” ব্যবহার করুন। বিস্তারিত জানতে ও ভর্তি হতে ক্লিক করুন এখানে

সমাজকল্যাণ কাকে বলে? সমাজকল্যাণের উৎপত্তি, সংজ্ঞা, বৈশিষ্ট্য ও উদ্দেশ্য কী?

প্রকাশ: ১০:১৫:১৯ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২৯ ডিসেম্বর ২০২১

সমাজকল্যাণ হলো সমাজের সকল শ্রেণির মানুষের কল্যাণের জন্যে সকল মানুষের প্রচেষ্টা। ‘সমাজকল্যাণ’ শব্দের ইংরেজি প্রতিশব্দ হলো ‘Social welfare’ (সোশ্যাল ওয়েলফেয়ার)। সমাজকল্যাণ বলতে কী বুঝায়, সমাজকল্যানের সংজ্ঞা, বৈশিষ্ট্য, উদ্দেশ্য, প্রয়োজনীয়তা ও পরিধি সম্পর্কে এই নিবন্ধে জানা যাবে।

সমাজকল্যাণের উৎপত্তি

যখন সমাজ গড়ে উঠলো সামাজিকভাবে জীবন যাপন শুরু করলো সমাজকল্যাণের উৎপত্তিও ঠিক তখন থেকে। এর আগে মানুষ যখন একাকী কিংবা দল বা গোষ্ঠীগতভাবে বসবাস করতো তখনও মানুষ পরস্পর পরস্পরকে বিপদে-আপদে সাহায্য সহযোগিতা করতে। অর্থাৎ নিজের কল্যাণ ও উন্নয়ন সাধনের পাশাপাশি মানুষ সেই শুরু থেকেই অন্যের মঙ্গল বা কল্যাণ বিধানের চেষ্টা করে আসছে। অন্যের সমস্যায়, কষ্টে বা দুঃসময়ে এগিয়ে যাওয়া মানুষের যেন সহজাত প্রবৃত্তি। ব্যক্তি একজন মানুষ হিসেবে সহমর্মী হয়ে এবং হৃদয়ের ডাকে অন্যকে সাহায্য সহযোগিতা করে। দলীয় ও সমাজ জীবনেও মানুষ দলীয় ও সামাজিকভাবে অন্য মানুষের কল্যাণ বিধানে এগিয়ে যায়। আর এভাবেই মানুষেরসমাজে উদ্ভব ঘটে সমাজকল্যাণের।প্রাথমিক পর্যায়ে মানুষের সামাজিক জীবন ছিল বেশ সহজ-সরল প্রকৃতির। অনুভূত সমস্যাও তেমন জটিল ছিল না।

প্রাকৃতিক দুর্যোগ, মহামারী, দুর্ভিক্ষ, কাজও আয়ের অভাব, প্রতিবন্ধকতা, বার্ধক্য ইত্যাদিই ছিল সে সময়ের মানুষদেরপ্রধান সমস্যা। আর এ থেকে পরস্পরকে রক্ষা করতে সমাজকল্যাণের যে সকল ব্যবস্থা ছিল তার মধ্যে দান-খয়রাত, স্বেচ্ছাশ্রম, সহানুভূতি, সান্তনা, সাহায্য ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। এ পর্যায়ে সমাজকল্যাণের প্রকৃতি ছিল প্রধানতঃ তাৎক্ষনিক, আংশিক, অসংগঠিত এবং আবেগ নির্ভর।

পরবর্তী পর্যায়ে, বিশেষ করে ধর্মীয় অনুপ্রেরণা ও অনুশাসন সমাজকল্যাণমুলক কাজকে আরও গতিময় ও বিস্তৃত করে এ ধরনের কাজকে মানুষ একটি ধর্মীয় দায়িত্ব হিসেবে গ্রহণ করে। কিন্তু তা সত্ত্বেও সমাজকল্যাণ কর্মকান্ডের প্রকৃতি একইরকম ধারায় চলতে থাকে। একে বলা যায় সনাতনী সমাজকল্যাণ। কিন্তু শিল্প বিপ্লবের পরবর্তী সময়ে মানুষের উৎপাদন, ভোগ, যাতায়াত- যোগাযোগ, গতিশীলতা, চাহিদা যোগান ইত্যাদিতে ব্যাপক পরিবর্তন আসে। সেই সাথে জটিল আকারধারণ করে মানুষের অনুভূত সমস্যাবলি। সম্প্রতিকালের সমস্যা মোকাবেলায় সমাজকল্যাণ কর্মকান্ডে বেশ সংগঠিত ওদুরদৃষ্টি নিয়ে করা হচ্ছে। একে তাই বলা হয় আধুনিক সমাজকল্যাণ। দেশের বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থা (Non-government Organisation) বা এনজিও (NGO) এবং জাতিসংঘের বিভিন্ন এজেন্সি এ ধরনের সমাজকল্যাণমুলক কাজ পরিচালনা করে যাচ্ছে বেশ সাফল্যের সাথে।

সমাজকল্যাণের সংজ্ঞা

সমাজ বা জনসমষ্টির সার্বিক মঙ্গল সাধনই হচ্ছে এক কথায় সমাজকল্যাণ। সমাজকল্যাণ এমন কিছু সামাজিক প্রচেষ্টা, ব্যবস্থা, পদ্ধতি বা সংগঠিত কার্যাবলীর সমষ্টি যার মাধ্যমে সমাজের কল্যাণ বিধান হয়। আবার সমাজকল্যাণ বলতেসুসংঘবদ্ধ সামাজিক প্রচেষ্টার চূড়ান্ত লক্ষ্যকেও বুঝানো হয়।

সমাজকর্ম অভিধানে বরার্ট এল বার্ক তাঁর সমাজকল্যাণের সংজ্ঞায় বলেছেন যে, “মানুষের অপরিহার্য সামাজিক, অর্থনৈতিক শিক্ষা ও স্বাস্থ্যগত চাহিদা পূরণের লক্ষ্যে প্রচলিত কর্মসূচি,সুযোগ ও সেবা জাতীয় ব্যবস্থা।”

আবার ওয়াল্টার এ ফ্রিডল্যান্ডার উল্লেখ করেছেন যে, “সমাজকল্যাণ হলো সমাজসেবা ও প্রতিষ্ঠানের এমন এক সুসংগঠিত ব্যবস্থা যা ব্যক্তি ও দলকে সন্তোষজনক জীবনমান ও স্বাস্থ্য এবং ব্যক্তিগত ও সামাজিকসম্পর্ক লাভে সহায়তা করে যা তাদের ক্ষমতার পূর্ণ বিকাশে এবং তাদের পরিবার ও জনসমষ্টির চাহিদার সাথে সামঞ্জস্য রেখে উন্নতি বিধানে সহায়তা করে।” এক কথায়, সমাজকল্যাণ হচ্ছে জাতীয় পর্যায়ে গৃহীত ঐ সকল প্রচেষ্টা বা উদ্যোগযার মাধ্যমে মানুষ ব্যক্তিগত, দলীয়, পারিবারিক ও সামাজিক ভাবে সাচ্ছন্দময় ও মর্যাদাপূর্ণ জীবন যাপনের সুযোগ লাভ করে। 

সমাজকল্যাণের বৈশিষ্ট্য

বর্তমানে বিশ্বের সবখানে বিশেষ করে বাংলাদেশে সনাতনী ও আধুনিক উভয় প্রকার সমাজকল্যাণমুলক কর্মকান্ড প্রচলিতআছে। সনাতনী বলতে যেমন, ভিক্ষাদান, ব্যক্তিগত সান্তনা, সহমর্মিতা, স্বেচ্ছাশ্রম ইত্যাদিকে ধরা হয়। এগুলো প্রধানতঃ ব্যক্তিগত কিংবা পরিবার ভিত্তিতে পরিচালিত হয়। অন্যদিকে আধুনিক সমাজকল্যাণ তৎপরতা দেশের প্রচলিত আইনের আওতায়, সংগঠিত ভাবে এবং যতটা সম্ভব বিজ্ঞান ভিত্তিতে পরিচালিত হয়। বিভিন্ন সরকারি সংস্থা, বিশেষ করে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় এবং রেজিস্ট্রিভুক্ত বেসরকারি সংস্থা (Non-government Organisation) বা এনজিও (NGO) গুলোর তৎপরতা এর বাস্তব উদাহরণ। বর্তমানের ফরমাল বা আনুষ্ঠানিকসমাজের প্রেক্ষাপটে সমাজকল্যাণ বলতে আধুনিক সমাজকল্যাণ তৎপরতাকেই স্বীকৃতি দেয়া হয়।

আধুনিক সমাজকল্যাণের বেশ কিছু বৈশিষ্ট্য এর বিভিন্ন সংজ্ঞা হতে পাওয়া যায়। যেমন:

১. সুসংগঠিত ব্যবস্থা: বর্তমানে সমাজকল্যাণ কর্মসুচী গৃহীত ও বাস্তবায়িত হয় সংগঠনের মাধ্যমে। অর্থাৎ বিচ্ছিন্নভাবে নয় বরঞ্চ সুসংগঠিতভাবে সমাজকল্যাণমূলক তৎপরতা পরিচালনা করার জন্য কর্মীদের সচেষ্ট থাকতে হয়।

২. বিজ্ঞানভিত্তিক ও পরিকল্পিত: বর্তমানে সমাজকল্যাণ প্রচেষ্টা বিজ্ঞান ভিত্তিতে এবং সুপরিকল্পিতভাবে পরিচালনার চেষ্টাকরা হয়। প্রকল্প প্রণয়ন, বাস্তবায়ন ও মূল্যায়ন সবক্ষেত্রে বিজ্ঞানের আশ্রয় নেয়া হয়।

৩. সামগ্রীক, সার্বজনীন ও দূরদৃষ্টিসম্পন্ন: আধুনিক সমাজকল্যাণ কর্মসূচি সেবা গ্রহীতার বিশেষ কোন দিক নয় বরঞ্চ সকল দিককে কেন্দ্র করে পরিচালিত হয়। এবং বিশেষ কোন শ্রেণিকে নয় বরঞ্চ ধনী- দরিদ্র, ধর্ম-বর্ণ-গোত্র, গ্রামীণশহরে নির্বিশেষে দুঃস্থ মানুষের সেবায় সমাজকল্যাণ সমানভাবে তা থাকে। তাছাড়া বিপদ আসার পরে বা তাৎক্ষণিকভাবে নয়, দূর্যোগ ঘটার আগে থেকেই তা মোকাবেলার জন্য প্রস্তুতি থাকা আধুনিক সমাজকল্যাণের একটি অন্যতম বৈশিষ্ট্য।

৪. সক্ষমকারী ও স্বাবলম্বীকরণ ব্যবস্থা: আধুনিক সমাজকল্যাণ মানুষকে এমনভাবে সহায়তা করে যাতে তারা সক্ষম ও স্বাবলম্বী হয়ে উঠতে পারে। তারা যাতে তাদের সম্পদের সদ্ব্যবহার করে নিজেদের উদ্যোগে উন্নয়নমুলক কাজকরতে এগিয়ে আসে সে ব্যাপারে সমাজকল্যাণ সমস্যাগ্রস্থ মানুষকে উদ্বুদ্ধ করে।

৫. সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগ: আধুনিক সমাজকল্যাণ সরকারী অথবা বেসরকারী যে কোন উদ্যোগেই পরিচালিতহচ্ছে। তবে স্বেচ্ছামূলক বা বেসরকারি সংগঠনের (এনজিও) মাধ্যমে কাজ করতে হলে সরকারি রেজিষ্ট্রেশন নিয়ে কাজ করতে হয়।

৬. জনগণের অংশগ্রহণের মাধ্যমে উন্নয়ন: বর্তমানে সমাজকল্যাণমূলক কাজে সংশ্লিষ্ট সমস্যাগ্রস্থ বা সেবাগ্রহীতাদেরকেজড়িত করা হয়। অর্থাৎ যাদের জন্যে কর্মসুচি হাতে নেয়া হয়েছে বা যাদেরকে সেবাদেয়া হবে তাদেরকে ঐ সেবামূলক কাজে অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা প্রয়োজন। এতে করে উন্নয়ন স্থায়ী ও কার্যকর হয়।

৭. বিশেষ নীতিমালাও পদ্ধতি: আধুনিক সমাজকল্যাণ বিশেষ কিছু নীতিমালা অনুসরণ করে কাজ করে। জাতীয় নীতি, সামাজিক আইন ইত্যাদির কথা এখানে উল্লেখ করা যেতে পারে। তাছাড়া সেবাদান পর্যায়ে বিজ্ঞানভিত্তিক পদ্ধতিও প্রয়োগ করে থাকে।

সমাজকল্যাণের উদ্দেশ্য

সমাজকল্যাণের উদ্দেশ্য হলো সমাজের মানুষের সবধরনের কল্যাণ বা মঙ্গল সাধন করা। সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগে সমাজের সকল মানুষের সামাজিক, অর্থনৈতিক, স্বাস্থ্যগত ও চিত্ত-বিনোদনের চাহিদা পুরণে সহায়তা করাই সমাজকল্যাণেরমূল উদ্দেশ্য বা লক্ষ্য। সমাজকল্যাণের প্রধান প্রধান উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য হলো:

১. মৌলিক মানবিক চাহিদা পূরণ: বিভিন্ন সমাজেই অনেক মানুষের মৌলিক মানবিক চাহিদা পূরণ হয় না। সমাজকল্যাণের অন্যতম লক্ষ্য হলো মানুষের খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা, চিকিৎসা, চিত্তবিনোদন, নিরাপত্তা ইত্যাদি মৌলিক মানবিক চাহিদা পূরণে সাহায্য করা। 

২. দু:স্থ, অসহায় ও আর্তমানবতার সেবা: বিভিন্ন কারণে এবং বিভিন্ন সময়ে মানুষ নানাধরনের সমস্যার মধ্যে পতিত হয়। দারিদ্র, দুর্ভিক্ষ, মহামারী, ঝড়-বন্যা-জলোচ্ছাস, খরা ইত্যাদি যখন সমাজে অসহায় করে ফেলে; সমাজকল্যাণের মূল তৎপরতা সে সময় মানুষকে দরকারী সেবা প্রদান করে।

৩. মানব সম্পদের উন্নয়ন ও স্বাবলম্বী মনোভাব গড়ে তোলা: বাংলাদেশের মতো সমাজে বহুমানুষ তাদের মেধা-শ্রম-দক্ষতা বিকাশের সুযোগ পায় না। তারা পরমুখাপেক্ষী হয়ে পড়ে। নিজেদের মানবীয় সম্পদ অব্যবহৃত অবস্থায় থাকে। সমাজকল্যাণ বিভিন্ন শিক্ষা-প্রশিক্ষণ-কর্মসুচির মাধ্যমে ঐ সকল মানুষকে তাদের মানবীয় সম্পদ ব্যবহারের সুযোগ করে দেয়। এতে করে মানুষ স্বাবলম্বী হয়ে ওঠে।

৪. স্থানীয় সম্পদের সদ্ব্যবহার ও জন অংশগ্রহণ বৃদ্ধি: সমাজের প্রচুর সম্পদ অব্যবহৃত হয়ে পড়ে থাকে কিংবা সঠিকভাবে কাজে লাগানো হয় না। তাছাড়া বিভিন্ন সরকারী-বেসরকারী উন্নয়ন কর্মকান্ড স্থানীয় জনগণ অংশগ্রহণ করতে আগ্রহী হয় না। সমাজকল্যাণের অন্যতম একটি উদ্দেশ্য হলো স্থানীয় সম্পদের সর্বোত্তম ব্যবহার ও উন্নয়ন কর্মসুচিতে জনগণের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণের মাত্রা বৃদ্ধির উদ্যোগ নেওয়া।

৫. দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন ও পারস্পারিক সম্পদের উন্নয়ন: আধুনিক কালে সমাজকল্যাণের বিশেষ একটি উদ্দেশ্য হচ্ছে সমাজের মানুষের মধ্যে ইতিবাচক ও পারস্পারিক সহযোগিতামূলক সম্পর্কের উন্নয়ন সাধন করা। সমাজ সদস্যদেরকে তাদের নিজ নিজ দায়িত্ব ও কর্তব্য সম্পর্কে সজাগ করাও সমাজকল্যাণের লক্ষ্য।

৬. জনগণকে সচেতন ও সংগঠিত করা: সমাজকল্যাণ যেহেতু সকল মানুষের জন্য সকল মানুষের সংগঠিত প্রচেষ্টা; তাই সমাজের মানুষের অসময়ে অন্যান্য সমাজবাসীকে সচেতন করা, সংগঠিত করা ও উদ্যোগী করাও সমাজ কল্যাণের অন্যতম লক্ষ্য। বিশেষ করে গ্রামীণ সমাজের জন্যেও উদ্দেশ্যটি বেশী প্রযোজ্য হয়ে থাকে।

৭. সামাজিক সংস্কার সাধন ও নিরাপত্তা বিধান: বর্তমান সমাজের বিভিন্ন রীতি-নীতি বা আচার-অনুষ্ঠান যদি মানুষের সত্যিকার কল্যাণ বিধানের পরিপন্থি হয় সেক্ষেত্রে সমাজকল্যাণ তার সংস্কার সাধনে আগ্রহী হয়। সমাজে একটি সুখ ও স্বস্তিদায়ক অবস্থা প্রতিষ্ঠাও বজায় রাখতে সমাজকল্যাণ বিশেষভাবে তৎপরতা চালিয়ে থাকে। পাশাপাশি, বাংলাদেশর মতো দরিদ্র দুঃস্থ মানুষের দুঃসময়ের নিরাপত্তা ও সহযোগিতা দানে সমাজকল্যাণ অগ্রণী ভূমিকা গ্রহণ করে।

শেষকথা

সমাজকল্যাণ সমাজের সকল শ্রেণির মানুষের কল্যাণের জন্যে সকল মানুষের প্রচেষ্টা। সনাতনী আধুনিক, আনুষ্ঠানিক অনানুষ্ঠানিক, সরকারি-বেসরকারি ইত্যাদি ধারায় সমাজ কল্যাণমূলক কর্মসূচি বিশ্ব সমাজে বহুদিন ধরে প্রচলিত আছে। তবে বর্তমানে বিজ্ঞান ভিত্তিতেও আনুষ্ঠানিক ভাবে সমাজকল্যাণ কর্মকান্ড পরিচালিত হচ্ছে। সমাজকল্যাণের মূল লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য হলো সামাজিক মানুষকে স্বাবলম্বী করার জন্য দরকারী সাহায্য সহযোগিতা ও নিরাপত্তা বিধান করা এবং স্থানীয় সম্পদ ব্যবহারের মাধ্যমে সকল মানুষকে তাদের দাযিত্ব ও কর্তব্য সম্পর্কে সচেতন করা ও উন্নয়ন কাজে সকলকে জড়িত করা।

এ. টি. এম. হানিফ কর্তৃক সম্পাদিত ও বাউবি কর্তৃক প্রকাশিত ‘সমাজকল্যান দ্বিতীয় পত্র’ পাঠ্যবই অনুকরণ করে লিখিত।