শুক্রবার, মার্চ ২৪, ২০২৩

যোগাযোগ কী এবং যোগাযোগের প্রকারভেদ

ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান বা ব্যবহারকারীর প্রয়োজন অনুযায়ী যোগযোগের ব্যক্তি ও ক্ষেত্র নির্ধারিত হয় এবং তথ্য ও সংবাদ আদান-প্রদানের জন্য বিভিন্ন প্রকার যোগাযোগ ব্যবস্থা ব্যবহার করা হয়।

বিশেষ কোন উদ্দেশ্য অর্জনের জন্য একজনের নিকট থেকে অন্য জনের নিকট তথ্য, ভাব, ধারণা, সংবাদ বা মতামত প্রেরণের প্রক্রিয়াই হলো যোগাযোগ। এটি মৌখিক হতে পারে, লিখিত হতে পারে, আকার-ইঙ্গিতে হতে পারে আবার প্রযুক্তির মাধ্যমেও হতে পারে।

যোগাযোগের প্রকারভেদ (Types of Communication)

ব্যক্তি জীবন থেকে শুরু করে রাষ্ট্র এবং আন্তর্জাতিক পর্যায়ে তথ্য বা ভাব বিনিময় ও সিদ্ধান্তগ্রহণে যোগাযোগ একটি অত্যাবশ্যক উপাদান হিসেবে বিবেচিত। ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান বা ব্যবহারকারীর প্রয়োজন অনুযায়ী যোগযোগের ব্যক্তি ও ক্ষেত্র নির্ধারিত হয় এবং তথ্য ও সংবাদ আদান-প্রদানের জন্য বিভিন্ন প্রকার যোগাযোগ ব্যবস্থা ব্যবহার করা হয়।

বিভিন্ন প্রকার যোগাযোগ ব্যবস্থা নিম্নে আলোচনা করা হলোঃ 

আনুষ্ঠানিকতার ভিত্তিতে যোগাযোগ (Classification on the basis of formality)

আনুষ্ঠানিকতার ভিত্তিতে যোগাযোগকে নিম্নোক্ত দুই ভাগে ভাগ করা যায়: 

১. আনুষ্ঠানিক যোগাযোগ (Formal Communication)

প্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠিত চ্যানেলের মাধ্যমে এবং অফিসিয়াল নিয়মানুযায়ী স্থাপিত যোগাযোগকে আনুষ্ঠানিক যোগাযোগ বলে। আনুষ্ঠানিক যোগাযোগের মূল উদ্দেশ্য হলো প্রাতিষ্ঠানিক উদ্দেশ্য অর্জনের জন্য পরিকল্পনা বাস্তবায়ন। কথোপকথন, রিপোর্ট, মেমোরেন্ডাম, বুলেটিন ইত্যাদি আনুষ্ঠানিক যোগাযোগের মাধ্যম। 

২. অনানুষ্ঠানিক যোগাযোগ (Informal Communication)

প্রতিষ্ঠিত নিয়ম-কানুন প্রতিপালন ব্যতিরেকে প্রতিষ্ঠানের অভ্যন্তরে বিভিন্ন পক্ষের মধ্যে যে যোগাযোগ স্থাপিত হয়, তাকে অনানুষ্ঠানিক যোগাযোগ বলে। 

সাধারণত কেন্টিনে, ক্লাবে, যাতায়াতকালীন গাড়িতে কিংবা অন্য কোথাও আলাপ-আলোচনার মধ্য দিয়ে এ জাতীয় যোগাযোগ সংঘটিত হয়। আনুষ্ঠানিক যোগাযোগের পাশাপাশি অনানুষ্ঠানিক যোগাযোগের অনেক গুরুত্ব রয়েছে। 

প্রতিষ্ঠানের পরিবেশভিত্তিক যোগাযোগ (Organisational environment-based communication)

প্রতিষ্ঠানের  পরিবেশের ভিত্তিতে যোগাযোগকে দুই ভাগে ভাগ করা যায়। যথা: 

১. অভ্যন্তরীণ যোগাযোগ (Internal communication)

একই প্রতিষ্ঠানের ভিতরে বিভিন্ন পক্ষের মধ্যে তথ্য বা ভাবের বিনিময়কে অভ্যন্তরীণ যোগাযোগ বলে। প্রতিষ্ঠানের অভ্যন্তরে কর্মরত কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের মধ্যে এ জাতীয় যোগাযোগ সংঘটিত হয়। অভ্যন্তরীণ যোগাযোগ প্রতিষ্ঠানের কর্মকাণ্ডকে গতিশীল রাখে। প্রাতিষ্ঠানিক কর্মকাণ্ডের দক্ষতা এবং সাফল্য অভ্যন্তরীণ যোগাযোগের উপর অনেকাংশে নির্ভরশীল। 

২. বাহ্যিক যোগাযোগ (External communication)

প্রতিষ্ঠানের বাইরে কোন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের সাথে যে যোগাযোগ সংঘটিত হয় তাকে বহিস্থঃযোগাযোগ বা বাহ্যিক যোগাযোগ বলে। প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন প্রয়োজনে অন্যান্য প্রতিষ্ঠান, সরকার, দেনাদার, পাওনাদার, গ্রাহক, ব্যাংকার, বীমাকারী, শেয়ারহোল্ডার প্রভৃতি বিভিন্ন পক্ষের সাথে যোগাযোগ রক্ষা করতে হয়। বিভিন্ন পক্ষের সাথে যে যোগাযোগ স্থাপিত হয়, তাই-ই হলো বাহ্যিক যোগাযোগ। 

তথ্য প্রবাহের ভিত্তিতে যোগাযোগ (Communication on the basis of flow of message)

তথ্য প্রবাহের ভিত্তিতে যোগাযোগকে নিম্নোক্ত চারভাগে ভাগ করা যেতে পারে:

১. নিম্নগামী যোগাযোগ (Downward communication)

সংগঠনের উপরের স্তরের কর্মরত নির্বাহীদের নিকট থেকে বার্তা নিচের স্তরে কর্মরত ব্যক্তিদের নিকট প্রেরিত হলে তাকে নিম্নগামী যোগাযোগ নামে অভিহিত করা হয়। এ জাতীয় যোগাযোগ ব্যবস্থায় উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ অধস্তনদের নিকট প্রয়োজনীয় আদেশ-নির্দেশ, কর্মসূচি ইত্যাদি প্রেরণ করে।

২. উর্ধ্বগামী যোগাযোগ (Upward communication)

অধস্তন কর্মীরা উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের প্রেরিত বার্তার ফলাবর্তন হিসেবে, অভাব-অভিযোগ জ্ঞাপনের লক্ষে, প্রয়োজনীয় পরামর্শ অথবা আদেশ-নির্দেশ পাওয়ার জন্য উর্ধ্বতন নির্বাহীদের সাথে যে যোগাযোগ করে থাকে, তাকে উর্ধ্বগামী যোগাযোগ বলে। 

৩. সমান্তরাল যোগাযোগ (Horizontal communication)

কোনো প্রতিষ্ঠানে উর্ধ্বতন থেকে অধস্তন এবং অধস্তন থেকে উর্ধ্বতনের মধ্যেই যোগাযোগ সীমাবদ্ধ থাকে না। সমপদে অধিষ্ঠিত এবং সমপর্যায়ের ব্যক্তি ও কর্তৃপক্ষের মধ্যেও যোগাযোগ স্থাপিত হয়। সমপর্যায়ের বা সমপদে অধিষ্ঠিত ব্যক্তিদের মধ্যে স্থাপিত যোগযোগকে সমান্তরাল যোগাযোগ বলে। 

৪. কৌণিক যোগাযোগ (Diagonal communication)

কৌণিক যোগাযোগ হলো এমন এক ধরনের যোগাযোগ যেখানে তথ্যের প্রবাহ খাড়াখাড়ি কিংবা সমান্তরাল কোনোভাবে না হয়ে আঁকাবাঁকা ভাবে হয়ে থাকে। এ জাতীয় যোগাযোগ খুব বেশি ব্যবহৃত হয় না। তবে জরুরী পরিস্থিতিতে কিংবা দ্রুত কোনো তথ্য বা সংবাদ আদান-প্রদানের ক্ষেত্রে এ জাতীয় যোগাযোগ খুবই কার্যকর। উদাহরণ হিসেবে বলা যায় যে, হিসাব বিভাগের ক্যাশিয়ারের নিকট থেকে যদি প্রশাসন বিভাগের ম্যানেজার ক্যাশ সংক্রান্ত কোনো তথ্য জানতে চান এবং ক্যাশিয়ার যদি যথাযথ চ্যানেলে তথ্য না পাঠিয়ে প্রশাসনের নিকট সরাসরি তথ্য প্রেরণ করে, তাহলে এরূপ তথ্য প্রবাহকে কৌণিক যোগাযোগ নামে অভিহিত করা হয়। 

কার্যভিত্তিক যোগাযোগ ((Communication on the basis of function)

প্রতিষ্ঠানে বিভিন্ন বিভাগে নানাবিধ কার্য সম্পাদিত হয়। কোনো প্রতিষ্ঠানের বিভাগগুলোর মধ্যে বিভিন্ন কার্য সম্পাদন করতে গিয়ে যে যোগাযোগ করার প্রয়োজন পড়ে, তাকেই কার্যভিত্তিক যোগাযোগ বলে। কার্যভিত্তিক যোগাযোগের ভিত্তিতে যোগাযোগকে নিম্নোক্ত কয়েকভাগে ভাগ করা যায়:

১. সাংগঠনিক যোগাযোগ (Organizational communication)

প্রাতিষ্ঠানিক দলিলপত্র প্রণয়ন, উদ্দেশ্য/লক্ষ্য নির্ধারণ, পলিসি প্রণয়ন, নির্দেশ প্রদান ও নির্দেশ বাস্তবায়ন ইত্যাদি সাংগঠনিক প্রয়োজনে সংঘটিত যোগাযোগ হলো সাংগঠনিক যোগাযোগ।

২. নৈমিত্তিক বা রুটিন যোগাযোগ ((Routine communication)

কোনো প্রতিষ্ঠান পরিচালনার জন্য প্রতিনিয়ত যেসব তথ্যাদি বিনিময় হয়, সেগুলো রুটিন যোগাযোগ। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো চিঠিপত্র লেখা, টেলিফোন করা, ফাইল ওয়ার্ক, নির্দেশ প্রদান ইত্যাদি।

৩. বিশেষায়িত বিভাগীয় যোগাযোগ (Specialized departmental communication)

প্রতিষ্ঠানের অন্তর্গত বিভাগগুলোতে তাদের নিজস্ব লিখিত স্মারক, রিপোর্ট ও চিঠিপত্রকে বিশষায়িত যোগাযোগ বলে। 

৪. উন্নয়নমূলক যোগাযোগ (Development-oriented communication)

ব্যবসায়ের উন্নতির জন্য যে সব বিষয়ে আনুষ্ঠানিক যোগাযোগ সংঘটিত হয়, সেগুলোকে উন্নয়মূলক যোগাযোগ বলে।

বাংলাদেশি বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানসমূহের মধ্য থেকে 'বিশ্লেষণ'-এর জন্য স্পনসরশিপ খোঁজা হচ্ছে। আগ্রহীদের যোগাযোগ করার জন্য অনুরোধ করা হলো। ইমেইল: contact.bishleshon@gmail.com

এ বিষয়ের আরও নিবন্ধ

মানব সম্পদ ব্যবস্থাপনা বা হিউম্যান রিসোর্স ম্যানেজমেন্ট বলতে কী বোঝায়

মানব সম্পদ ব্যবস্থাপনা বা হিউম্যান রিসোর্স ম্যানেজমেন্ট (Human Resource management) হলো একই সঙ্গে একটি অধ্যয়নের বিষয় ও ব্যবস্থাপনা কৌশল যা একটি প্রতিষ্ঠানের...

ডিজিটাল লোন: ডিজিটাল লোন অ্যাপ কী এবং এর সুবিধা ও অসুবিধা

কার অর্থের প্রয়োজন নেই? মাঝেমধ্যেই আমাদের জীবনে এমন কিছু ঘটনা ঘটে যার কারণে প্রায়শই বিভিন্ন খাতে খরচ করতে হয়। সব সময় যে...

প্রশাসন এবং ব্যবস্থাপনার ধারণা, পরিসর ও পার্থক্য

কোনো প্রতিষ্ঠান পরিচালনার জন্য নীতি প্রণয়ন করা প্রশাসনের কাজ এবং সে নীতিগুলো সুষ্ঠুভাবে বাস্তবায়িত হচ্ছে কিনা তা দেখাশোনা ও তদারকি করার দায়িত্ব...

Banking: বাংলাদেশে কি টাকার তুলনায় ব্যাংকের সংখ্যা বেশি?

ব্যাংকিং খাতকে অর্থনীতির চালিকাশক্তি বলা হয়। ব্যাংকের অন্যতম কাজ হলো দেশের অর্থনীতি ও ব্যবসার চাকা সচল রাখতে ঋণ দেয়া এবং সময়মতো সে...

অভিজ্ঞতাভিত্তিক শিক্ষার যুগে বাংলাদেশ

যেহেতু অভিজ্ঞতাভিত্তিক শিক্ষা একটি নতুন ধারণা, তাই বাস্তবায়নের জন্য এমন একটি কমিটি থাকা উচিত যারা ধারাবাহিকভাবে পর্যবেক্ষণ করবে পাঠ্যক্রমটি সঠিকভাবে বাস্তবায়ন হচ্ছে কি না। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো শিক্ষার্থীদের কার্যক্রম রেকর্ড করার জন্য কোন পদ্ধতি অবলম্বন করবে তাও স্পষ্ট করতে হবে। কারণ মূল্যায়নের ন্যায্যতা প্রমাণের জন্য অভিজ্ঞতার রেকর্ড সংরক্ষণের প্রয়োজন হবে।

যুগে যুগে মুসলমানদের বিরুদ্ধে ধর্মযুদ্ধ

ইউরোপে মুসলিম বিদ্বেষিতা নতুন কিছু নয়। মধ্যযুগ থেকে এর সূত্রপাত। মধ্যযুগে খ্রিষ্টানদের কাছে জেরুজালেম শহরটি ছিল তাদের ধর্মীয় প্রেরণার প্রধান কেন্দ্র। তাদের...

হোয়াইট কলার বা ভদ্রবেশী  অপরাধ কী এবং বাংলাদেশে ভদ্রবেশী অপরাধের সংঘটন

হোয়াইট কলার অপরাধ। এর কোনো আইনগত সংজ্ঞা নেই। বাংলা শব্দে এটা ‘ভদ্রবেশী অপরাধ।’ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে এর উৎপত্তি হলেও ক্রমে তা বিভিন্ন রাষ্ট্রে...
আরও পড়তে পারেন

শিরক কী, মানুষ কীভাবে শিরকে লিপ্ত হয়

ইসলাম একমাত্র ধর্ম যেখানে স্রষ্টা তার কোনো ক্ষমতাতেই কাউকে অংশীদার সাব্যস্ত করেননি। অর্থাৎ আল্লাহই একমাত্র একক ইলাহ যিনি সমস্ত ক্ষমতার অধিকারী। সৃষ্টির...

মানব সম্পদ ব্যবস্থাপনা বা হিউম্যান রিসোর্স ম্যানেজমেন্ট বলতে কী বোঝায়

মানব সম্পদ ব্যবস্থাপনা বা হিউম্যান রিসোর্স ম্যানেজমেন্ট (Human Resource management) হলো একই সঙ্গে একটি অধ্যয়নের বিষয় ও ব্যবস্থাপনা কৌশল যা একটি প্রতিষ্ঠানের...

টপ্পা গান কী, টপ্পা গানের উৎপত্তি, বাংলায় টপ্পা গান ও এর বিশেষত্ব

টপ্পা গান এক ধরনের লোকিক গান বা লোকগীতি যা ভারত ও বাংলাদেশের বাংলা ভাষাভাষী মানুষের কাছে খুবই প্রিয়। এই টপ্পা গান বলতে...

রাষ্ট্রবিজ্ঞান বলতে কী বোঝায় এবং ভারতীয় উপমহাদেশে রাজনীতি বা রাষ্ট্রচিন্তা

রাষ্ট্রবিজ্ঞান (Political Science) সমাজবিজ্ঞানের একটি শাখাবিশেষ যেখানে পরিচালন প্রক্রিয়া, রাষ্ট্র, সরকার এবং রাজনীতি সম্পর্কীয় বিষয়াবলী নিয়ে আলোকপাত করা হয়।  এরিস্টটল রাষ্ট্রবিজ্ঞানকে রাষ্ট্র...

গণতন্ত্রের সংজ্ঞা কী বা গণতন্ত্র বলতে কী বোঝায়

গণতন্ত্র বলতে কোনো জাতিরাষ্ট্রের অথবা কোনো সংগঠনের এমন একটি শাসনব্যবস্থাকে বা পরিচালনাব্যবস্থাকে বোঝায় যেখানে নীতিনির্ধারণ বা সরকারি প্রতিনিধি নির্বাচনের ক্ষেত্রে প্রত্যেক নাগরিক...

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here