১২:৩৭ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
                       

প্রেষণা: কর্মীদের প্রেষণাদানের উপায় বা পদ্ধতি

শেহনাজ ইসলাম মুক্তি
  • প্রকাশ: ০২:১৪:০৬ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ৪ ডিসেম্বর ২০২১
  • / ৮১৭২ বার পড়া হয়েছে

কর্মীদেরকে উৎসাহ-উদ্দীপনা তথা প্রণোদনা দানের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানের কাজে উদ্বুদ্ধ করার এ প্রক্রিয়াকে প্রেষণা বলা হয়। | ছবি: Unsplash

কর্মীদের প্রেষণাদানের উপায় বা কৌশল (Ways or Techniques of Motivation)

যে-কোনো প্রতিষ্ঠানের উৎপাদনের চাকাকে সচল রাখার ক্ষেত্রে প্রেষণার গুরুত্ব অপরিসীম। কর্মীদেরকে প্রেষণা দানের জন্য বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান বিভিন্ন উপায় বা পদ্ধতি ব্যবহার করে থাকে। এগুলোকে প্রেষণার উদ্দীপক বা উপাদানও বলা হয়। প্রতিষ্ঠান ভেদে এ উদ্দীপক ভিন্ন ভিন্ন রকমের হতে পারে। মানুষের আচরণগত বৈশিষ্ট্য, প্রতিষ্ঠানের সামর্থ্য এবং পরিবেশ-পরিস্থিতির উপরে ভিত্তি করে প্রেষণাদানের উপায় নির্ধারণ করা হয়।

সাধারণত কর্মীদের প্রেষণা দানের জন্য দুই ধরনের উপায় বা পদ্ধতি ব্যবহৃত হয়ে থাকে, যথা-

  • আর্থিক প্রেষণা
  • অনার্থিক প্রেষণা

আর্থিক প্রেষণা (Financial motivation) 

আর্থিক প্রেষণার উপাদান (Elements of Financial motivation)

অর্থের মাধ্যমে যখন কর্মীদের প্রেষণা দেয়া হয় তখন তা আর্থিক প্রেষণা হিসেবে গণ্য হয়। যেসব আর্থিক উপায়ে কর্মীদের প্রেষিত করা হয় সেগুলো নিম্নোক্ত আলোচনায় তুলে ধরা হলো:

  • ন্যায্য বেতন (Fair Salary): কর্মীদের প্রথম ও প্রধান চাহিদা হচ্ছে তাদের কাজের বিনিময়ে উপযুক্ত বেতন বা পারিশ্রমিক। এ পারিশ্রমিকই তাদেরকে প্রতিষ্ঠানের কর্মে একনিষ্ঠ হতে উদ্বুদ্ধ করে। কর্মীদেরকে উপযুক্ত বেতন না দেয়া হলে প্রতিষ্ঠানের কাজের প্রতি তারা আগ্রহ হারিয়ে ফেলে।
  • বোনাস (Bonus): উপযুক্ত বেতনের পাশাপাশি বোনাস প্রদান করেও কর্মীদেরকে প্রেষিত করা যায়। সাধারণত ধর্মীয় ও রাষ্টীয় উৎসবে কর্মীদের জন্য বোনাসের ব্যবস্থা করা হয়ে থাকে। 
  • মুনাফার অংশ প্রদান (Profit Sharing): প্রতিষ্ঠানের কাজে কর্মীদের উৎসাহিত করার জন্য মুনাফার অংশ প্রদান করা যেতে পারে। মুনাফার অংশবিশেষ যদি কর্মীদের মধ্যে বন্টন করা হয় তাহলে তারা কাজের প্রতি উৎসাহিত হয় এবং প্রতিষ্ঠানের মুনাফা বৃদ্ধিতে সচেষ্ট থাকে। 
  • পদোন্নতি (Profit Sharing): কর্মীদের প্রেষিত করার আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হচ্ছে পদোন্নতি। দক্ষ ও যোগ্য কর্মীদের পদোন্নতি দানের মাধ্যমে তাদের ভবিষ্যৎ সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচিত হয়। 
  • চিকিৎসা সুবিধা (Medicare Facilities): শ্রমিককর্মীদের সুচিকিৎসা প্রদান করা অত্যাবশ্যক। অর্থাৎ প্রতিষ্ঠানের প্রয়োজনে কর্মীদের স্বাস্থ্য সংরক্ষণ করার জন্য বিনামূল্যে কর্মীদের ও তাদের পরিবার পরিজনদের চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হলে তারা কাজে উৎসাহ খুঁজে পায়। অবশ্য এক্ষেত্রে চিকিৎসা ভাতাও দেয়া যেতে পারে। 
  • বাসস্থানের ব্যবস্থাকরণ (Acommodation facilities): বাসস্থান সুবিধা মানুষের একটি মৌলিক চাহিদা। এ সুবিধা প্রদান করেও কর্মীদের প্রণোদিত করা যায়। তবে বাসস্থানের পরিবর্তে কর্মীদের বাসস্থান ভাতাও দেয়া যেতে পারে। 
  • পরিবহন সুবিধা (Transport facilities): কর্মচারীদের যাতায়াত সমস্যা একটি বড় ধরনের সমস্যা। এ সমস্যা সমাধানের জন্য যদি প্রতিষ্ঠানের পক্ষ হতে পরিবহনের ব্যবস্থা করা হয়, তাহলে কর্মীরা কাজে উৎসাহিত হয়। 
  • পুরস্কার (Rewards): কর্মীদের যদি ভাল কাজের পুরস্কার দেয়ার ব্যবস্থা করা যায়, তাহলে তাদের কাছ থেকে সৃষ্টিশীল কাজ আদায় করা সম্ভব। কেননা এতে তারা কাজের স্বীকৃতি পায়। 
  • রেশন সুবিধা (Ration facilities): নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের অস্বাভাবিক মূল্য বৃদ্ধির হাত থেকে কর্মীদেরকে বাঁচানোর জন্য নির্দিষ্ট সময়ান্তে কমমূল্যে দ্রব্যাদি সরবরাহ করা হয়। এতে কর্মীরা কাজে উদ্দীপ্ত হয়। 
  • ক্যান্টিন সাবসিডি (Canteen Subsidy): প্রতিষ্ঠানে কার্যরত অবস্থায় শ্রমিক-কর্মীদের নাস্তা ও অন্যান্য খাবারের ব্যবস্থা করা যেতে পারে। এতে কর্মীরা স্বল্পমূল্যে ও সময়মত আহার গ্রহণ করতে পারে।
  • অন্যান্য আর্থিক সুবিধা (Others Financial facilities): উল্লিখিত বিষয়গুলো ছাড়া প্রেষণাদানের আরও কয়েকটি উপাদান রয়েছে যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে প্রভিডেন্ট ফান্ড, গ্র্যাচুইটি, পেনশন ইত্যাদি। বর্তমান বেতনের বিপরীতে কর্মীদেরকে ঋণ বা অগ্রিমও প্রদান করে হয়ে থাকে। 
প্রেষণা প্রতিষ্ঠানের চাকাকে সজল রাখে, কর্ম-উদ্দীপনার পরিবেশ সৃষ্টি করে, শিল্প সম্পর্ক গতিশীল রাখে এবং সর্বোপরি প্রাতিষ্ঠানিক জীবনে সজীবতা আনে।
প্রেষণা প্রতিষ্ঠানের চাকাকে সজল রাখে, কর্ম-উদ্দীপনার পরিবেশ সৃষ্টি করে, শিল্প সম্পর্ক গতিশীল রাখে এবং সর্বোপরি প্রাতিষ্ঠানিক জীবনে সজীবতা আনে। | ছবি: Unsplash

অনার্থিক প্রেষণা (Non-financial Motivation) 

প্রেষণার অনার্থিক উপাদান (Non- Financial Elements of Motivation): আর্থিক উপাদান ছাড়াও কর্মীদের প্রেষণাদানের জন্য অন্যান্য যেসব সুযোগ-সুবিধা দেয়া হয় তা-ই অনার্থিক প্রেষণা। নিম্নেসে উপাদানগুলো উল্লেখ করা হলো:

  • সুষ্ঠু কার্য পরিবেশ (Fair working environment): প্রতিষ্ঠানের অভ্যন্তরে কাজের সুষ্ঠু পরিবেশ বজায় থাকা আবশ্যক। কারখানার অভ্যন্তরে খোলামেলা, পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন, আলো-বাতাস চলাচলকারী ও কোলাহল মুক্ত পরিবেশে কর্মীরা কাজ করতে অধিক উৎসাহিত হয়। 
  • প্রশংসা ও স্বীকৃতি (Appreciation and recognition): কৃত কর্মের প্রশংসা সব মানুষই কামনা করে। কাজেই প্রতিষ্ঠানের শ্রমিক-কর্মীদের যদি ভাল কাজের জন্য প্রশংসা ও স্বীকৃতি প্রদান করা হয়, তাহলে তাদের নিকট থেকে উন্নতমানের কাজ আশা করা যায়। 
  • নিরাপত্তা (Security): চাকুরিক্ষেত্রে নিরাপত্তা না থাকলে কোনো কর্মী আন্তরিকতার সাথে কার্যে মনোনিবেশ করতে পারে না। ঠিক তেমনি ব্যক্তিগত জীবনেও নিরাপত্তা একান্ত অপরিহার্য। এ গুলোর অভাব প্রতিষ্ঠানের কার্য সম্পাদনে কর্মীদেরকে পরিপূর্ণভাবে একাত্ম হতে নিরূৎসাহিত করে। 
  • আকর্ষণীয় কাজ (Fair work): কর্মীদের কাজ যদি অত্যন্ত আকর্ষণীয় ও আনন্দদায়ক হয় তবে কর্মীরা উৎসাহের সাথে কার্য সম্পাদন করে থাকে। 
  • অধিকার ও ক্ষমতা (Rights and power): কাজের ক্ষেত্রে যদি কর্মীদের অধিকার এবং পূর্ণ মাত্রায় ক্ষমতা দেয়া হয় তাহলে তারা স্বাচ্ছন্দ্যে তাদের কাজ চালিয়ে যেতে পারে। তাই প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে শ্রমিক কর্মীদেরকে অধিকার ও ব্যক্তিগত ক্ষমতা প্রয়োগ করার সুযোগ দিতে হবে। 
  • ন্যায়বিচার (Fair justice): প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের অনেক সময়ই নানারকম অভাব অভিযোগ থাকতে পারে। প্রতিষ্ঠান যদি এ ব্যাপারে ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে পারে তবেই কর্মীরা উৎসাহ উদ্দীপনা নিয়ে কাজ করে। 
  • ভাল ব্যবহার (Good behaviour): অধস্তনদের নিকট থেকে স্বতঃস্ফূর্তভাবে কাজ আদায় করার আরেকটি উপায় হচ্ছে তাদের সাথে উত্তম বা সদয় আচরণ করা। এতে একদিকে যেমন অর্থ খরচ করতে হয় না, তেমনি এর মাধ্যমে উর্ধ্বতন ও অধস্তনের সাথে সুসম্পর্ক সৃষ্টি হয় যা প্রতিষ্ঠানের উৎপাদন বৃদ্ধির সহায়ক। 
  • প্রশিক্ষণ সুবিধা (Training facilities): প্রশিক্ষণ কর্মীদের মনোবল ও দক্ষতা বৃদ্ধির সহায়ক। তাই প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের যোগ্য ও দক্ষ করে গড়ে তোলার জন্য প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা আবশ্যক। 
  • সিদ্ধান্তে অংশগ্রহণ (Participation in Decision Making): ব্যবস্থাপকীয় সিদ্ধান্তে যদি কর্মীদের প্রত্যক্ষ অংশগ্রহণ ও সিদ্ধান্ত গ্রহণের অধিকার থাকে, তাহলে কর্মীরা তাদের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে সদা তৎপর থাকে। তাই মাঝে মাঝে কর্মীদের সিদ্ধান্তে অংশগ্রহণের সুযোগ দিয়ে তাদের উৎসাহিত করা যেতে পারে। 
  • শ্রমিক-সংঘ করার সুযোগ দান (Granting union right): বর্তমানকালে শ্রমিকসংঘ করার অধিকার কর্মীদের একটি গণতান্ত্রিক অধিকার হিসেবে বিবেচিত। কর্মীদেরকে শ্রমিকসংঘ গঠন করার সুযোগ দিয়ে তাদের অধিকার সম্পর্কে সচেতন করে তোলা যায়। এতে তারা অনুপ্রেষিত হয়। 
  • প্রতিষ্ঠানের সুনাম ((Goodwill of the organisation): প্রতিষ্ঠানের সুনাম কর্মীদের কাজে প্রেরণা যোগায়। অর্থাৎ সুপ্রতিষ্ঠিত ও খ্যাতনামা প্রতিষ্ঠানে কাজ করতে কর্মীরা গর্ববোধ করে। 
  • শিক্ষার সুযোগ (Education facilities): প্রতিষ্ঠানে নিয়োজিত কর্মীদের সন্তানদের লেখাপড়ার সুযোগ দেয়া হলে কর্মীরা উৎসাহিত হবে। 
  • সঠিক তত্ত্বাবধান (Effective supervision): সুষ্ঠু ও সঠিক তত্ত্বাবধানের মাধ্যমে কর্মীকে যথাযথ মূল্যায়ন করে স্বীকৃতি দেয়া যায়। সঠিক তত্ত্বাবধান কর্মীদের কাজে অনুপ্রাণিত করে এবং এতে কর্মীরা আগ্রহ ভরে কাজ করার সুযোগ পায়। 

উল্লিখিত আলোচনা থেকে আমরা বলতে পারি, কর্মীদের প্রেষণাদানের ক্ষেত্রে আর্থিক ও অনার্থিক উভয় উপাদানই সমান গুরুত্ব বহন করে। কেননা, অর্থ মানুষের মৌলিক প্রয়োজন হলেও উপরিউক্ত অনার্থিক উপাদানগুলোও মানব হৃদয়ে প্রশান্তি আনে, জীবনকে করে পরিতৃপ্ত।

শেয়ার করুন

মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার তথ্য সংরক্ষিত রাখুন

তাহসান খান এবং মুনজেরিন শহীদের দুটি প্রফেশনাল কমিউনিকেশন কোর্স করুন ২৮% ছাড়ে
তাহসান খান এবং মুনজেরিন শহীদের দুটি প্রফেশনাল কমিউনিকেশন কোর্স করুন ২৮% ছাড়ে

২৮℅ ছাড় পেতে ৩০/০৬/২০২৪ তারিখের মধ্যে প্রোমো কোড “professional10” ব্যবহার করুন। বিস্তারিত জানতে ও ভর্তি হতে ক্লিক করুন এখানে

প্রেষণা: কর্মীদের প্রেষণাদানের উপায় বা পদ্ধতি

প্রকাশ: ০২:১৪:০৬ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ৪ ডিসেম্বর ২০২১

কর্মীদের প্রেষণাদানের উপায় বা কৌশল (Ways or Techniques of Motivation)

যে-কোনো প্রতিষ্ঠানের উৎপাদনের চাকাকে সচল রাখার ক্ষেত্রে প্রেষণার গুরুত্ব অপরিসীম। কর্মীদেরকে প্রেষণা দানের জন্য বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান বিভিন্ন উপায় বা পদ্ধতি ব্যবহার করে থাকে। এগুলোকে প্রেষণার উদ্দীপক বা উপাদানও বলা হয়। প্রতিষ্ঠান ভেদে এ উদ্দীপক ভিন্ন ভিন্ন রকমের হতে পারে। মানুষের আচরণগত বৈশিষ্ট্য, প্রতিষ্ঠানের সামর্থ্য এবং পরিবেশ-পরিস্থিতির উপরে ভিত্তি করে প্রেষণাদানের উপায় নির্ধারণ করা হয়।

সাধারণত কর্মীদের প্রেষণা দানের জন্য দুই ধরনের উপায় বা পদ্ধতি ব্যবহৃত হয়ে থাকে, যথা-

  • আর্থিক প্রেষণা
  • অনার্থিক প্রেষণা

আর্থিক প্রেষণা (Financial motivation) 

আর্থিক প্রেষণার উপাদান (Elements of Financial motivation)

অর্থের মাধ্যমে যখন কর্মীদের প্রেষণা দেয়া হয় তখন তা আর্থিক প্রেষণা হিসেবে গণ্য হয়। যেসব আর্থিক উপায়ে কর্মীদের প্রেষিত করা হয় সেগুলো নিম্নোক্ত আলোচনায় তুলে ধরা হলো:

  • ন্যায্য বেতন (Fair Salary): কর্মীদের প্রথম ও প্রধান চাহিদা হচ্ছে তাদের কাজের বিনিময়ে উপযুক্ত বেতন বা পারিশ্রমিক। এ পারিশ্রমিকই তাদেরকে প্রতিষ্ঠানের কর্মে একনিষ্ঠ হতে উদ্বুদ্ধ করে। কর্মীদেরকে উপযুক্ত বেতন না দেয়া হলে প্রতিষ্ঠানের কাজের প্রতি তারা আগ্রহ হারিয়ে ফেলে।
  • বোনাস (Bonus): উপযুক্ত বেতনের পাশাপাশি বোনাস প্রদান করেও কর্মীদেরকে প্রেষিত করা যায়। সাধারণত ধর্মীয় ও রাষ্টীয় উৎসবে কর্মীদের জন্য বোনাসের ব্যবস্থা করা হয়ে থাকে। 
  • মুনাফার অংশ প্রদান (Profit Sharing): প্রতিষ্ঠানের কাজে কর্মীদের উৎসাহিত করার জন্য মুনাফার অংশ প্রদান করা যেতে পারে। মুনাফার অংশবিশেষ যদি কর্মীদের মধ্যে বন্টন করা হয় তাহলে তারা কাজের প্রতি উৎসাহিত হয় এবং প্রতিষ্ঠানের মুনাফা বৃদ্ধিতে সচেষ্ট থাকে। 
  • পদোন্নতি (Profit Sharing): কর্মীদের প্রেষিত করার আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হচ্ছে পদোন্নতি। দক্ষ ও যোগ্য কর্মীদের পদোন্নতি দানের মাধ্যমে তাদের ভবিষ্যৎ সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচিত হয়। 
  • চিকিৎসা সুবিধা (Medicare Facilities): শ্রমিককর্মীদের সুচিকিৎসা প্রদান করা অত্যাবশ্যক। অর্থাৎ প্রতিষ্ঠানের প্রয়োজনে কর্মীদের স্বাস্থ্য সংরক্ষণ করার জন্য বিনামূল্যে কর্মীদের ও তাদের পরিবার পরিজনদের চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হলে তারা কাজে উৎসাহ খুঁজে পায়। অবশ্য এক্ষেত্রে চিকিৎসা ভাতাও দেয়া যেতে পারে। 
  • বাসস্থানের ব্যবস্থাকরণ (Acommodation facilities): বাসস্থান সুবিধা মানুষের একটি মৌলিক চাহিদা। এ সুবিধা প্রদান করেও কর্মীদের প্রণোদিত করা যায়। তবে বাসস্থানের পরিবর্তে কর্মীদের বাসস্থান ভাতাও দেয়া যেতে পারে। 
  • পরিবহন সুবিধা (Transport facilities): কর্মচারীদের যাতায়াত সমস্যা একটি বড় ধরনের সমস্যা। এ সমস্যা সমাধানের জন্য যদি প্রতিষ্ঠানের পক্ষ হতে পরিবহনের ব্যবস্থা করা হয়, তাহলে কর্মীরা কাজে উৎসাহিত হয়। 
  • পুরস্কার (Rewards): কর্মীদের যদি ভাল কাজের পুরস্কার দেয়ার ব্যবস্থা করা যায়, তাহলে তাদের কাছ থেকে সৃষ্টিশীল কাজ আদায় করা সম্ভব। কেননা এতে তারা কাজের স্বীকৃতি পায়। 
  • রেশন সুবিধা (Ration facilities): নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের অস্বাভাবিক মূল্য বৃদ্ধির হাত থেকে কর্মীদেরকে বাঁচানোর জন্য নির্দিষ্ট সময়ান্তে কমমূল্যে দ্রব্যাদি সরবরাহ করা হয়। এতে কর্মীরা কাজে উদ্দীপ্ত হয়। 
  • ক্যান্টিন সাবসিডি (Canteen Subsidy): প্রতিষ্ঠানে কার্যরত অবস্থায় শ্রমিক-কর্মীদের নাস্তা ও অন্যান্য খাবারের ব্যবস্থা করা যেতে পারে। এতে কর্মীরা স্বল্পমূল্যে ও সময়মত আহার গ্রহণ করতে পারে।
  • অন্যান্য আর্থিক সুবিধা (Others Financial facilities): উল্লিখিত বিষয়গুলো ছাড়া প্রেষণাদানের আরও কয়েকটি উপাদান রয়েছে যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে প্রভিডেন্ট ফান্ড, গ্র্যাচুইটি, পেনশন ইত্যাদি। বর্তমান বেতনের বিপরীতে কর্মীদেরকে ঋণ বা অগ্রিমও প্রদান করে হয়ে থাকে। 
প্রেষণা প্রতিষ্ঠানের চাকাকে সজল রাখে, কর্ম-উদ্দীপনার পরিবেশ সৃষ্টি করে, শিল্প সম্পর্ক গতিশীল রাখে এবং সর্বোপরি প্রাতিষ্ঠানিক জীবনে সজীবতা আনে।
প্রেষণা প্রতিষ্ঠানের চাকাকে সজল রাখে, কর্ম-উদ্দীপনার পরিবেশ সৃষ্টি করে, শিল্প সম্পর্ক গতিশীল রাখে এবং সর্বোপরি প্রাতিষ্ঠানিক জীবনে সজীবতা আনে। | ছবি: Unsplash

অনার্থিক প্রেষণা (Non-financial Motivation) 

প্রেষণার অনার্থিক উপাদান (Non- Financial Elements of Motivation): আর্থিক উপাদান ছাড়াও কর্মীদের প্রেষণাদানের জন্য অন্যান্য যেসব সুযোগ-সুবিধা দেয়া হয় তা-ই অনার্থিক প্রেষণা। নিম্নেসে উপাদানগুলো উল্লেখ করা হলো:

  • সুষ্ঠু কার্য পরিবেশ (Fair working environment): প্রতিষ্ঠানের অভ্যন্তরে কাজের সুষ্ঠু পরিবেশ বজায় থাকা আবশ্যক। কারখানার অভ্যন্তরে খোলামেলা, পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন, আলো-বাতাস চলাচলকারী ও কোলাহল মুক্ত পরিবেশে কর্মীরা কাজ করতে অধিক উৎসাহিত হয়। 
  • প্রশংসা ও স্বীকৃতি (Appreciation and recognition): কৃত কর্মের প্রশংসা সব মানুষই কামনা করে। কাজেই প্রতিষ্ঠানের শ্রমিক-কর্মীদের যদি ভাল কাজের জন্য প্রশংসা ও স্বীকৃতি প্রদান করা হয়, তাহলে তাদের নিকট থেকে উন্নতমানের কাজ আশা করা যায়। 
  • নিরাপত্তা (Security): চাকুরিক্ষেত্রে নিরাপত্তা না থাকলে কোনো কর্মী আন্তরিকতার সাথে কার্যে মনোনিবেশ করতে পারে না। ঠিক তেমনি ব্যক্তিগত জীবনেও নিরাপত্তা একান্ত অপরিহার্য। এ গুলোর অভাব প্রতিষ্ঠানের কার্য সম্পাদনে কর্মীদেরকে পরিপূর্ণভাবে একাত্ম হতে নিরূৎসাহিত করে। 
  • আকর্ষণীয় কাজ (Fair work): কর্মীদের কাজ যদি অত্যন্ত আকর্ষণীয় ও আনন্দদায়ক হয় তবে কর্মীরা উৎসাহের সাথে কার্য সম্পাদন করে থাকে। 
  • অধিকার ও ক্ষমতা (Rights and power): কাজের ক্ষেত্রে যদি কর্মীদের অধিকার এবং পূর্ণ মাত্রায় ক্ষমতা দেয়া হয় তাহলে তারা স্বাচ্ছন্দ্যে তাদের কাজ চালিয়ে যেতে পারে। তাই প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে শ্রমিক কর্মীদেরকে অধিকার ও ব্যক্তিগত ক্ষমতা প্রয়োগ করার সুযোগ দিতে হবে। 
  • ন্যায়বিচার (Fair justice): প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের অনেক সময়ই নানারকম অভাব অভিযোগ থাকতে পারে। প্রতিষ্ঠান যদি এ ব্যাপারে ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে পারে তবেই কর্মীরা উৎসাহ উদ্দীপনা নিয়ে কাজ করে। 
  • ভাল ব্যবহার (Good behaviour): অধস্তনদের নিকট থেকে স্বতঃস্ফূর্তভাবে কাজ আদায় করার আরেকটি উপায় হচ্ছে তাদের সাথে উত্তম বা সদয় আচরণ করা। এতে একদিকে যেমন অর্থ খরচ করতে হয় না, তেমনি এর মাধ্যমে উর্ধ্বতন ও অধস্তনের সাথে সুসম্পর্ক সৃষ্টি হয় যা প্রতিষ্ঠানের উৎপাদন বৃদ্ধির সহায়ক। 
  • প্রশিক্ষণ সুবিধা (Training facilities): প্রশিক্ষণ কর্মীদের মনোবল ও দক্ষতা বৃদ্ধির সহায়ক। তাই প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের যোগ্য ও দক্ষ করে গড়ে তোলার জন্য প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা আবশ্যক। 
  • সিদ্ধান্তে অংশগ্রহণ (Participation in Decision Making): ব্যবস্থাপকীয় সিদ্ধান্তে যদি কর্মীদের প্রত্যক্ষ অংশগ্রহণ ও সিদ্ধান্ত গ্রহণের অধিকার থাকে, তাহলে কর্মীরা তাদের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে সদা তৎপর থাকে। তাই মাঝে মাঝে কর্মীদের সিদ্ধান্তে অংশগ্রহণের সুযোগ দিয়ে তাদের উৎসাহিত করা যেতে পারে। 
  • শ্রমিক-সংঘ করার সুযোগ দান (Granting union right): বর্তমানকালে শ্রমিকসংঘ করার অধিকার কর্মীদের একটি গণতান্ত্রিক অধিকার হিসেবে বিবেচিত। কর্মীদেরকে শ্রমিকসংঘ গঠন করার সুযোগ দিয়ে তাদের অধিকার সম্পর্কে সচেতন করে তোলা যায়। এতে তারা অনুপ্রেষিত হয়। 
  • প্রতিষ্ঠানের সুনাম ((Goodwill of the organisation): প্রতিষ্ঠানের সুনাম কর্মীদের কাজে প্রেরণা যোগায়। অর্থাৎ সুপ্রতিষ্ঠিত ও খ্যাতনামা প্রতিষ্ঠানে কাজ করতে কর্মীরা গর্ববোধ করে। 
  • শিক্ষার সুযোগ (Education facilities): প্রতিষ্ঠানে নিয়োজিত কর্মীদের সন্তানদের লেখাপড়ার সুযোগ দেয়া হলে কর্মীরা উৎসাহিত হবে। 
  • সঠিক তত্ত্বাবধান (Effective supervision): সুষ্ঠু ও সঠিক তত্ত্বাবধানের মাধ্যমে কর্মীকে যথাযথ মূল্যায়ন করে স্বীকৃতি দেয়া যায়। সঠিক তত্ত্বাবধান কর্মীদের কাজে অনুপ্রাণিত করে এবং এতে কর্মীরা আগ্রহ ভরে কাজ করার সুযোগ পায়। 

উল্লিখিত আলোচনা থেকে আমরা বলতে পারি, কর্মীদের প্রেষণাদানের ক্ষেত্রে আর্থিক ও অনার্থিক উভয় উপাদানই সমান গুরুত্ব বহন করে। কেননা, অর্থ মানুষের মৌলিক প্রয়োজন হলেও উপরিউক্ত অনার্থিক উপাদানগুলোও মানব হৃদয়ে প্রশান্তি আনে, জীবনকে করে পরিতৃপ্ত।