০৬:৫২ অপরাহ্ন, শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
                       

ব্যবস্থাপনা সংগঠন কাকে বলে এবং ব্যবস্থাপনা সংগঠনের গুরুত্ব বা প্রয়োজনীয়তা কী?

প্রফেসর এম এ মাননান
  • প্রকাশ: ০৬:৩৮:৫৬ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৪ নভেম্বর ২০২১
  • / ১১৩২৬ বার পড়া হয়েছে

সংগঠন সদস্যদের মধ্যে কর্তত্ব ও দায়িত্ব সুষ্ঠুভাবে বন্টন করে কার্যের নির্দিষ্টতা নিশ্চিত করে ফলে সহেজই প্রতিষ্ঠানের উদ্দেশ্য অর্জিত হয়

সংগঠন হচ্ছে ব্যবস্থাপনার দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ কাজ। প্রতিষ্ঠানের পরিকল্পনা প্রণয়ন করার পর ব্যবস্থাপকের উপর যে দায়িত্বটি পড়ে সেটা হচ্ছে এই পরিকল্পনাকে কার্যকরী করা। আর এই পরিকল্পনাকে কার্যকরী বা বাস্তবায়নের জন্য বিভিন্ন ধরনের বস্তুগত ও অবস্থাগত উপকরণের প্রয়োজন হয়। এই উপকরণগুলো সঠিকভাবে ব্যবহার করার জন্য বিভিন্ন ধরনের কাজ সম্পাদন করতে হয যা একজনের পক্ষে সম্পাদন করা সম্ভব নয়। এজন্য, প্রতিষ্ঠানের পরিকল্পনা বাস্তবায়নে কোন কোন কাজ সম্পাদন করা প্রয়োজন তা সনাক্ত করে বৈশিষ্ট্য অনুসারে কাজগুলো বিভিন্ন শ্রেণিতে বিভক্ত করা (যেমন: ক্রয় বিভাগ, বিক্রয় বিভাগ, হিসাব বিভাগ, জন সম্পদ ইত্যাদি) এবং বিভিন্ন দক্ষতাসম্পন্ন যোগ্য লোককে এই বিভিন্ন বিভাগের কাজকে বুঝিয়ে দিয়ে তাদের মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্ক সৃষ্টি করা এবং তাদেরকে প্রয়োজনীয় দায়িত্ব ও ক্ষমতা অর্পন করার প্রক্রিয়াকে ব্যবস্থাপনা সংগঠন বলে। তাই বলা যায় যে, একটি প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক থেকে শুরু করে সর্বন স্তরের কর্মী পর্যন্ত প্রত্যেকের কাজ ও দায়িত্ব কি হবে, এদের ভেতরকার সম্পর্ক কতটুকু দায়িত্ব ও ক্ষমতা থাকবে, কার কি পদ বা পদমর্যাদা হবে তা সবকিছুই নির্ধারণ করার জন্য ব্যবস্থাপনা সংগঠনের সৃষ্টি হয়েছে।

ব্যবস্থাপনা সংগঠন এর সংজ্ঞা 

‘Organising’ শব্দটি ‘Organism’ থেকে এসেছে। এর অন্তর্নিহিত অর্থ হচ্ছে কতগুলো পৃথক অংশকে এমনভাবে সমন্বিত করা যার কারণে প্রত্যেকটি অংশের পারস্পরিক সম্পর্কের মধ্য দিয়ে সামগ্রিকভাবে কোন কিছুর সৃষ্টি হয়। সাধারণভাবে দুই বা ততোধিক ব্যক্তির সহযোগিতার ভিত্তিতে কাজ করার একটি প্রণালীকে সংগঠন বলা যায়। 

তাই বলা যায়, প্রতিষ্ঠানের পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য প্রয়োজনীয় কার্যাবলী চিহ্নিতকরণ, কার্যাবলী শ্রেণিবদ্ধকরণ উপকরণসমূহ একত্রীকরণ, শ্রেণিবদ্ধ প্রত্যেক কাজের বা বিভাগের জন্য দায়িত্ব ও কর্তৃব্য নির্ধারণ ও প্রত্যেক বিভাগীয় ব্যক্তির মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্ক নির্ধারণের প্রক্রিয়াকে ব্যবস্থাপনা সংগঠন বলে। নিম্নে ব্যবস্থাপনা বিশারদদের কিছু উল্লেখযোগ্য সংজ্ঞা প্রদান করা হলো-

  • কুঞ্জ এবং উইরিচ (Koontz and Weihrich) বলেন, “সংগঠন হচ্ছে (১) প্রয়োজনীয় কাজ চিহ্নিতকরণ ও শ্রেণিবিভাগ করা, (২) কাজকে উদ্দেশ্য অর্জনের জন্য প্রয়োজনীয় ভাগে ভাগ করা, (৩) প্রত্যেকটি ভাগকে একজন ব্যবস্থাপকের অধীনে তত্ত্বাবধান করার মত কর্তৃত্ব সহযোগে অর্পন করা ও (৪) সংগঠন কাঠামোর মধ্যে সমান্তরাল ও ঘাড়াখাড়ি ভাবে সমন্বয়ের আব্যবস্থা করা।”
  • টেরি ও ফ্রাংকলিন এর মতে (Terry and Franklin), “সংগঠন হলো প্রতিষ্ঠানে নিয়োজিত ব্যক্তিবর্গের মধ্যে উত্তম আচরণগত সম্পর্ক প্রতিষ্ঠা করা, যাতে উক্ত ব্যক্তিবর্গ মিলে-মিশে সন্তুষ্টি সহকারে দক্ষতার সঙ্গে কতিপয় পূর্বনির্ধারিত লক্ষ্য বা উদ্দেশ্য অর্জনের জন্য কাজ করতে পারে।” 

উপরের আলোচনা থেকে বরা যায় যে, সংগঠন হলো ব্যবস্থাপনা কার্যাবলীর মধ্যে এমন একটি কার্যপ্রক্রিয়া যা প্রতিষ্ঠানের উদ্দেশ্য বা লক্ষ্য বাস্তবায়নের জন্য প্রয়োজনীয় কার্যাবলী ও উপকরণাদি সনাক্তকরণ, এসব উপকরণ ও কাজকে বিভিন্ন বিভাগে বিভক্ত করণ, উক্ত বিভিন্ন বিভাগের কর্মীদের উপর দায়িত্ব ক্ষমতাও ও কর্তৃত্ব অর্পন এবং এদের মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্ক নির্ধারণ করার প্রক্রিয়াকে বুঝায়। 

সংগঠনের গুরুত্ব বা প্রয়োজনীয়তা

নিচে ব্যবস্থাপনা সংগঠনের গুরুত্ব বা প্রয়োজনীয়তা বর্ণনা করা হলো-

১. উদ্দেশ্য অর্জনে সহযোগীতা

সংগঠনের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন কার্যাবলী এদের প্রকৃতি অনুসারে বিভিন্ন শ্রেণিতে ভাগ করে প্রতি বিভাগের দায়িত্ব একজন কর্মকর্তা বা নির্বাহীর ওপর অর্পন করা হয়। শুধু বিভাগ নয়, প্রতিষ্ঠানের উদ্দেশ্য অর্জনের জন্য প্রতিষ্ঠানের প্রত্যেক স্তরে সৃষ্ট উপবিভাগের দায়িত্ব ও কর্তব্য ও পৃথক করে দেয়া হয়। এতে প্রতিষ্ঠানের যাবতীয় কার্যাবলী ও উদ্দেশ্য অর্জন সহজতর হয়। 

২. বিশেষীকরণে সহায়তা (Aid to specialisation)

একটি প্রয়োগযোগ্য ও কার্যকর ব্যবস্থাপনা সংগঠন বিশেষজ্ঞতা ও শ্রমবিভাগের নীতির ওপর গড়ে ওঠে। এর ফলে দক্ষতা, মিতব্যয়িতা ও সফলতার সাথে প্রতিষ্ঠানের কার্য সম্পাদন করা সম্ভব হয়। ফলে প্রত্যেক বিভাগ, উপবিভাগ এবং কর্মী তাদের ওপর অর্পিত দায়িত্ব সব সময়ই পালন করে থাকে। এ কারণে বিশেষজ্ঞতার গুণ প্রত্যেকেই অর্জন করতে পারে। 

৩. বিশৃঙ্খলা দূরীকরণ (Removal of indiscipline)

সংগঠনের মাধ্যমে প্রত্যেকটি কাজ ও দায়িত্বকে সংজ্ঞায়িত করাহয়। ফলে কেউ কাজ বা দাযিত্ব এড়িয়ে চলতে পারে না। তাছাড়াও বিভিন্ন বিভাগ, কর্মী, কাজের মধ্যে যোগসূত্র স্থাপন করা হয়। এতে কাজের মধ্যে কোন বিশৃক্মখলা থাকে না। 

৪. মানব-শক্তির যথাযথ ব্যবহার (Effective utilisation of Human Resources)

আদর্শ সংগঠন কাঠামোতে প্রতিষ্ঠানের জনশক্তির কাম্য ও যথাযথ ব্যবহারের উপায় নির্দেশ করা থাকে। এর মাধ্যমে প্রতিটি কাজের ধরন নির্ধারণ করে যে ব্যক্তি যে কাজের যোগ্য, তাকে সেই কাজের জন্য নিয়োগ করা হয় এবং প্রয়োজনীয় দায়িত্ব ও ক্ষমতা অর্পন করে তার জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা হয়। এর ফলে কর্মীবাহিনীর সামর্থ পুরোপুরি ব্যবহার করে প্রতিষ্ঠানের সাফল্য অর্জন করা সম্ভব হয়। 

৫. সৃজনশীলতার বিকাশ (Development of creativity)

সংগঠন কর্মী ও কর্মকর্তাদের প্রতিভা বিকাশের মাধ্যমে নতুন নতুন পন্থা পদ্ধতি, সূত্র, নিয়ম অথবা উৎপাদন সম্পর্কিত বিষয় উন্নয়নে ও প্রয়োগে যথেষ্ট সুযোগ সৃষ্টি করে থাকে। যেমনঃ কর্মীগণ একই কাজ সব সময় করার ফলে ঐ কাজ যাতে আরও সহজভাবে কিভাবে করা যায় তা কর্মীরা তাদের উদ্ভাবনী শক্তির দ্বারা উদ্ভাবন করতে পারে। আর সংগঠনিক কাঠামোর দ্বারা তা সম্ভব হয়। 

৬. সহজ সমন্বয় (Easy co-ordination)

সংগঠনের একটি কাজ হলো বিভিন্ন বিভাগ, কাজও কর্মীদের মাঝে পারস্পরিক সম্পর্ক সৃষ্টি। এজন্য সংগঠনে নিয়োজিত প্রত্যেক কর্মী তার কার্য, ক্ষমতা ও দায়িত্ব সম্পর্কে পূর্ণ সচেতন থাকে। এছাড়াও প্রত্যেকে তার উর্ধ্বতন ও অর্ধস্তন সম্পর্কে এবং পার্শ্ববর্তী বিভিন্ন বিভাগ ও তাদের কাজ সম্পর্কে জানতে পারে। এতে বিভিন্ন কর্মী ও বিভাগের মধ্যে সমন্বয় সাধন সম্ভব হয়। 

সংগঠন সদস্যদের মধ্যে কর্তত্ব ও দায়িত্ব সুষ্ঠুভাবে বন্টন করে কার্যের নির্দিষ্টতা নিশ্চিত করে ফলে সহেজই প্রতিষ্ঠানের উদ্দেশ্য অর্জিত হয়
সংগঠন সদস্যদের মধ্যে কর্তত্ব ও দায়িত্ব সুষ্ঠুভাবে বন্টন করে কার্যের নির্দিষ্টতা নিশ্চিত করে ফলে সহেজই প্রতিষ্ঠানের উদ্দেশ্য অর্জিত হয় | ছবি: Unsplash

৭. কর্তৃত্ব ও দায়িত্ব বন্টন (Distribution of Authority and Responsibility)

সংগঠন সদস্যদের মধ্যে কর্তত্ব ও দায়িত্ব সুষ্ঠুভাবে বন্টন করে কার্যের নির্দিষ্টতা নিশ্চিত করে ফলে সহেজই প্রতিষ্ঠানের উদ্দেশ্য অর্জিত হয়। 

৮. প্রশাসনিক কার্যে সহায়তা (Help in Administrative task)

সুসংঘবদ্ধ ও শক্তিশালী কাঠামো প্রশাসনের ভিতশক্ত করে। প্রশাসনিক দুর্বলতা ও বিচ্যুত অপসারিত হয় এবং কর্তৃত্ব সুষমভাবে বণ্টিত হয়। এর ফলে প্রশাসকগণ নিয়মতান্ত্রিকভাবে প্রশাসনকে উন্নয়নের দিকে ধাবিত করতে পারে। 

৯. সহজ নিয়ন্ত্রণ (Easy control)

সংগঠন কাঠামোতে প্রতিটি বিভাগ ও কর্মীর কার্য, কর্তৃত্ব, ক্ষমতা ও দায়িত্বের স্পষ্ট ব্যাখ্যা থকায় তাদের কার্যাবলী সহজেই নিয়ন্ত্রণ করা যায়। এছাড়া কে, কাকে, কিভাবে নিয়ন্ত্রণ করবে তারও দিক নির্দেশনা সংগঠন কাঠামো হতেই পাওয়া যায়। 

১০. সম্প্রসারণ ও পরিবর্তনে সহায়তা (Facilities in expansion and alteration)

প্রযুক্তিগত পরিবর্তনের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে না পারলে বর্তমান প্রতিযোগিতামূলক বাজারে ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানের সাফল্য সুদূর পরাহত হয়। প্রতিষ্ঠানের সম্প্রসারণ ও পরিবর্তন সংগঠন কাঠামোর উপর নির্ভরশীল। এজন্য দূর দর্শিতা ও প্রজ্ঞার সঙ্গে সংগঠন কাঠামো তৈরী করা হলে ভবিষ্যত সম্ভাব্য সম্প্রসারণ ও প্রযুক্তিগত উন্নয়নে এই সংগঠন কাঠামোত অত্যন্ত সহায়ক হয়। 

১১. ব্যবসায়ের উন্নয়ন (Development of business)

বর্তমান যুগে নতুন প্রযুক্তি ও যন্ত্রপাতি উদ্ভাবন এবং আধুনিক উৎপাদন ও বন্টন পদ্ধতির উদ্ভাবন ঘটেছে। এ সব নতুন প্রযুক্তি ও পদ্ধতির সদ্ব্যবহারের মাধ্যমে ব্যবসায়ের উন্নয়ন সাধন একমাত্র উত্তম সংগঠন কাঠামোর মাধ্যমেই সম্ভব। এজন্যই শক্তিশালী ব্যবস্থাপনা সংগঠন প্রতিষ্ঠার ওপর বর্তমান কালে এত বেশি গুরুত্বারোপ করা হয়।

সারসংক্ষেপ 

Organising শব্দটি ‘Organism’ হতে এসেছে। সাধারণভাবে দুই বা ততোধিক ব্যক্তির সহযোগীতার ভিত্তিতে কাজ করার একটি প্রণালীকে সংগঠন বলা যায়। একটি প্রয়োগযোগ্য ও কার্যকর ব্যবস্থাপনা সংগঠন বিশেষজ্ঞতা ও শ্রমবিভাগের নীতির উপর গড়ে ওঠে। সংগঠন সদস্যদের মধ্যে কর্তৃত্ব ও দায়িত্ব সুষ্ঠুভাবে বন্টন করে কার্যের নির্দিষ্টতা নিশ্চিত করে।

বিষয়:

শেয়ার করুন

মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার তথ্য সংরক্ষিত রাখুন

তাহসান খান এবং মুনজেরিন শহীদের দুটি প্রফেশনাল কমিউনিকেশন কোর্স করুন ২৮% ছাড়ে
তাহসান খান এবং মুনজেরিন শহীদের দুটি প্রফেশনাল কমিউনিকেশন কোর্স করুন ২৮% ছাড়ে

২৮℅ ছাড় পেতে ৩০/০৬/২০২৪ তারিখের মধ্যে প্রোমো কোড “professional10” ব্যবহার করুন। বিস্তারিত জানতে ও ভর্তি হতে ক্লিক করুন এখানে

ব্যবস্থাপনা সংগঠন কাকে বলে এবং ব্যবস্থাপনা সংগঠনের গুরুত্ব বা প্রয়োজনীয়তা কী?

প্রকাশ: ০৬:৩৮:৫৬ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৪ নভেম্বর ২০২১

সংগঠন হচ্ছে ব্যবস্থাপনার দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ কাজ। প্রতিষ্ঠানের পরিকল্পনা প্রণয়ন করার পর ব্যবস্থাপকের উপর যে দায়িত্বটি পড়ে সেটা হচ্ছে এই পরিকল্পনাকে কার্যকরী করা। আর এই পরিকল্পনাকে কার্যকরী বা বাস্তবায়নের জন্য বিভিন্ন ধরনের বস্তুগত ও অবস্থাগত উপকরণের প্রয়োজন হয়। এই উপকরণগুলো সঠিকভাবে ব্যবহার করার জন্য বিভিন্ন ধরনের কাজ সম্পাদন করতে হয যা একজনের পক্ষে সম্পাদন করা সম্ভব নয়। এজন্য, প্রতিষ্ঠানের পরিকল্পনা বাস্তবায়নে কোন কোন কাজ সম্পাদন করা প্রয়োজন তা সনাক্ত করে বৈশিষ্ট্য অনুসারে কাজগুলো বিভিন্ন শ্রেণিতে বিভক্ত করা (যেমন: ক্রয় বিভাগ, বিক্রয় বিভাগ, হিসাব বিভাগ, জন সম্পদ ইত্যাদি) এবং বিভিন্ন দক্ষতাসম্পন্ন যোগ্য লোককে এই বিভিন্ন বিভাগের কাজকে বুঝিয়ে দিয়ে তাদের মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্ক সৃষ্টি করা এবং তাদেরকে প্রয়োজনীয় দায়িত্ব ও ক্ষমতা অর্পন করার প্রক্রিয়াকে ব্যবস্থাপনা সংগঠন বলে। তাই বলা যায় যে, একটি প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক থেকে শুরু করে সর্বন স্তরের কর্মী পর্যন্ত প্রত্যেকের কাজ ও দায়িত্ব কি হবে, এদের ভেতরকার সম্পর্ক কতটুকু দায়িত্ব ও ক্ষমতা থাকবে, কার কি পদ বা পদমর্যাদা হবে তা সবকিছুই নির্ধারণ করার জন্য ব্যবস্থাপনা সংগঠনের সৃষ্টি হয়েছে।

ব্যবস্থাপনা সংগঠন এর সংজ্ঞা 

‘Organising’ শব্দটি ‘Organism’ থেকে এসেছে। এর অন্তর্নিহিত অর্থ হচ্ছে কতগুলো পৃথক অংশকে এমনভাবে সমন্বিত করা যার কারণে প্রত্যেকটি অংশের পারস্পরিক সম্পর্কের মধ্য দিয়ে সামগ্রিকভাবে কোন কিছুর সৃষ্টি হয়। সাধারণভাবে দুই বা ততোধিক ব্যক্তির সহযোগিতার ভিত্তিতে কাজ করার একটি প্রণালীকে সংগঠন বলা যায়। 

তাই বলা যায়, প্রতিষ্ঠানের পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য প্রয়োজনীয় কার্যাবলী চিহ্নিতকরণ, কার্যাবলী শ্রেণিবদ্ধকরণ উপকরণসমূহ একত্রীকরণ, শ্রেণিবদ্ধ প্রত্যেক কাজের বা বিভাগের জন্য দায়িত্ব ও কর্তৃব্য নির্ধারণ ও প্রত্যেক বিভাগীয় ব্যক্তির মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্ক নির্ধারণের প্রক্রিয়াকে ব্যবস্থাপনা সংগঠন বলে। নিম্নে ব্যবস্থাপনা বিশারদদের কিছু উল্লেখযোগ্য সংজ্ঞা প্রদান করা হলো-

  • কুঞ্জ এবং উইরিচ (Koontz and Weihrich) বলেন, “সংগঠন হচ্ছে (১) প্রয়োজনীয় কাজ চিহ্নিতকরণ ও শ্রেণিবিভাগ করা, (২) কাজকে উদ্দেশ্য অর্জনের জন্য প্রয়োজনীয় ভাগে ভাগ করা, (৩) প্রত্যেকটি ভাগকে একজন ব্যবস্থাপকের অধীনে তত্ত্বাবধান করার মত কর্তৃত্ব সহযোগে অর্পন করা ও (৪) সংগঠন কাঠামোর মধ্যে সমান্তরাল ও ঘাড়াখাড়ি ভাবে সমন্বয়ের আব্যবস্থা করা।”
  • টেরি ও ফ্রাংকলিন এর মতে (Terry and Franklin), “সংগঠন হলো প্রতিষ্ঠানে নিয়োজিত ব্যক্তিবর্গের মধ্যে উত্তম আচরণগত সম্পর্ক প্রতিষ্ঠা করা, যাতে উক্ত ব্যক্তিবর্গ মিলে-মিশে সন্তুষ্টি সহকারে দক্ষতার সঙ্গে কতিপয় পূর্বনির্ধারিত লক্ষ্য বা উদ্দেশ্য অর্জনের জন্য কাজ করতে পারে।” 

উপরের আলোচনা থেকে বরা যায় যে, সংগঠন হলো ব্যবস্থাপনা কার্যাবলীর মধ্যে এমন একটি কার্যপ্রক্রিয়া যা প্রতিষ্ঠানের উদ্দেশ্য বা লক্ষ্য বাস্তবায়নের জন্য প্রয়োজনীয় কার্যাবলী ও উপকরণাদি সনাক্তকরণ, এসব উপকরণ ও কাজকে বিভিন্ন বিভাগে বিভক্ত করণ, উক্ত বিভিন্ন বিভাগের কর্মীদের উপর দায়িত্ব ক্ষমতাও ও কর্তৃত্ব অর্পন এবং এদের মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্ক নির্ধারণ করার প্রক্রিয়াকে বুঝায়। 

সংগঠনের গুরুত্ব বা প্রয়োজনীয়তা

নিচে ব্যবস্থাপনা সংগঠনের গুরুত্ব বা প্রয়োজনীয়তা বর্ণনা করা হলো-

১. উদ্দেশ্য অর্জনে সহযোগীতা

সংগঠনের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন কার্যাবলী এদের প্রকৃতি অনুসারে বিভিন্ন শ্রেণিতে ভাগ করে প্রতি বিভাগের দায়িত্ব একজন কর্মকর্তা বা নির্বাহীর ওপর অর্পন করা হয়। শুধু বিভাগ নয়, প্রতিষ্ঠানের উদ্দেশ্য অর্জনের জন্য প্রতিষ্ঠানের প্রত্যেক স্তরে সৃষ্ট উপবিভাগের দায়িত্ব ও কর্তব্য ও পৃথক করে দেয়া হয়। এতে প্রতিষ্ঠানের যাবতীয় কার্যাবলী ও উদ্দেশ্য অর্জন সহজতর হয়। 

২. বিশেষীকরণে সহায়তা (Aid to specialisation)

একটি প্রয়োগযোগ্য ও কার্যকর ব্যবস্থাপনা সংগঠন বিশেষজ্ঞতা ও শ্রমবিভাগের নীতির ওপর গড়ে ওঠে। এর ফলে দক্ষতা, মিতব্যয়িতা ও সফলতার সাথে প্রতিষ্ঠানের কার্য সম্পাদন করা সম্ভব হয়। ফলে প্রত্যেক বিভাগ, উপবিভাগ এবং কর্মী তাদের ওপর অর্পিত দায়িত্ব সব সময়ই পালন করে থাকে। এ কারণে বিশেষজ্ঞতার গুণ প্রত্যেকেই অর্জন করতে পারে। 

৩. বিশৃঙ্খলা দূরীকরণ (Removal of indiscipline)

সংগঠনের মাধ্যমে প্রত্যেকটি কাজ ও দায়িত্বকে সংজ্ঞায়িত করাহয়। ফলে কেউ কাজ বা দাযিত্ব এড়িয়ে চলতে পারে না। তাছাড়াও বিভিন্ন বিভাগ, কর্মী, কাজের মধ্যে যোগসূত্র স্থাপন করা হয়। এতে কাজের মধ্যে কোন বিশৃক্মখলা থাকে না। 

৪. মানব-শক্তির যথাযথ ব্যবহার (Effective utilisation of Human Resources)

আদর্শ সংগঠন কাঠামোতে প্রতিষ্ঠানের জনশক্তির কাম্য ও যথাযথ ব্যবহারের উপায় নির্দেশ করা থাকে। এর মাধ্যমে প্রতিটি কাজের ধরন নির্ধারণ করে যে ব্যক্তি যে কাজের যোগ্য, তাকে সেই কাজের জন্য নিয়োগ করা হয় এবং প্রয়োজনীয় দায়িত্ব ও ক্ষমতা অর্পন করে তার জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা হয়। এর ফলে কর্মীবাহিনীর সামর্থ পুরোপুরি ব্যবহার করে প্রতিষ্ঠানের সাফল্য অর্জন করা সম্ভব হয়। 

৫. সৃজনশীলতার বিকাশ (Development of creativity)

সংগঠন কর্মী ও কর্মকর্তাদের প্রতিভা বিকাশের মাধ্যমে নতুন নতুন পন্থা পদ্ধতি, সূত্র, নিয়ম অথবা উৎপাদন সম্পর্কিত বিষয় উন্নয়নে ও প্রয়োগে যথেষ্ট সুযোগ সৃষ্টি করে থাকে। যেমনঃ কর্মীগণ একই কাজ সব সময় করার ফলে ঐ কাজ যাতে আরও সহজভাবে কিভাবে করা যায় তা কর্মীরা তাদের উদ্ভাবনী শক্তির দ্বারা উদ্ভাবন করতে পারে। আর সংগঠনিক কাঠামোর দ্বারা তা সম্ভব হয়। 

৬. সহজ সমন্বয় (Easy co-ordination)

সংগঠনের একটি কাজ হলো বিভিন্ন বিভাগ, কাজও কর্মীদের মাঝে পারস্পরিক সম্পর্ক সৃষ্টি। এজন্য সংগঠনে নিয়োজিত প্রত্যেক কর্মী তার কার্য, ক্ষমতা ও দায়িত্ব সম্পর্কে পূর্ণ সচেতন থাকে। এছাড়াও প্রত্যেকে তার উর্ধ্বতন ও অর্ধস্তন সম্পর্কে এবং পার্শ্ববর্তী বিভিন্ন বিভাগ ও তাদের কাজ সম্পর্কে জানতে পারে। এতে বিভিন্ন কর্মী ও বিভাগের মধ্যে সমন্বয় সাধন সম্ভব হয়। 

সংগঠন সদস্যদের মধ্যে কর্তত্ব ও দায়িত্ব সুষ্ঠুভাবে বন্টন করে কার্যের নির্দিষ্টতা নিশ্চিত করে ফলে সহেজই প্রতিষ্ঠানের উদ্দেশ্য অর্জিত হয়
সংগঠন সদস্যদের মধ্যে কর্তত্ব ও দায়িত্ব সুষ্ঠুভাবে বন্টন করে কার্যের নির্দিষ্টতা নিশ্চিত করে ফলে সহেজই প্রতিষ্ঠানের উদ্দেশ্য অর্জিত হয় | ছবি: Unsplash

৭. কর্তৃত্ব ও দায়িত্ব বন্টন (Distribution of Authority and Responsibility)

সংগঠন সদস্যদের মধ্যে কর্তত্ব ও দায়িত্ব সুষ্ঠুভাবে বন্টন করে কার্যের নির্দিষ্টতা নিশ্চিত করে ফলে সহেজই প্রতিষ্ঠানের উদ্দেশ্য অর্জিত হয়। 

৮. প্রশাসনিক কার্যে সহায়তা (Help in Administrative task)

সুসংঘবদ্ধ ও শক্তিশালী কাঠামো প্রশাসনের ভিতশক্ত করে। প্রশাসনিক দুর্বলতা ও বিচ্যুত অপসারিত হয় এবং কর্তৃত্ব সুষমভাবে বণ্টিত হয়। এর ফলে প্রশাসকগণ নিয়মতান্ত্রিকভাবে প্রশাসনকে উন্নয়নের দিকে ধাবিত করতে পারে। 

৯. সহজ নিয়ন্ত্রণ (Easy control)

সংগঠন কাঠামোতে প্রতিটি বিভাগ ও কর্মীর কার্য, কর্তৃত্ব, ক্ষমতা ও দায়িত্বের স্পষ্ট ব্যাখ্যা থকায় তাদের কার্যাবলী সহজেই নিয়ন্ত্রণ করা যায়। এছাড়া কে, কাকে, কিভাবে নিয়ন্ত্রণ করবে তারও দিক নির্দেশনা সংগঠন কাঠামো হতেই পাওয়া যায়। 

১০. সম্প্রসারণ ও পরিবর্তনে সহায়তা (Facilities in expansion and alteration)

প্রযুক্তিগত পরিবর্তনের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে না পারলে বর্তমান প্রতিযোগিতামূলক বাজারে ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানের সাফল্য সুদূর পরাহত হয়। প্রতিষ্ঠানের সম্প্রসারণ ও পরিবর্তন সংগঠন কাঠামোর উপর নির্ভরশীল। এজন্য দূর দর্শিতা ও প্রজ্ঞার সঙ্গে সংগঠন কাঠামো তৈরী করা হলে ভবিষ্যত সম্ভাব্য সম্প্রসারণ ও প্রযুক্তিগত উন্নয়নে এই সংগঠন কাঠামোত অত্যন্ত সহায়ক হয়। 

১১. ব্যবসায়ের উন্নয়ন (Development of business)

বর্তমান যুগে নতুন প্রযুক্তি ও যন্ত্রপাতি উদ্ভাবন এবং আধুনিক উৎপাদন ও বন্টন পদ্ধতির উদ্ভাবন ঘটেছে। এ সব নতুন প্রযুক্তি ও পদ্ধতির সদ্ব্যবহারের মাধ্যমে ব্যবসায়ের উন্নয়ন সাধন একমাত্র উত্তম সংগঠন কাঠামোর মাধ্যমেই সম্ভব। এজন্যই শক্তিশালী ব্যবস্থাপনা সংগঠন প্রতিষ্ঠার ওপর বর্তমান কালে এত বেশি গুরুত্বারোপ করা হয়।

সারসংক্ষেপ 

Organising শব্দটি ‘Organism’ হতে এসেছে। সাধারণভাবে দুই বা ততোধিক ব্যক্তির সহযোগীতার ভিত্তিতে কাজ করার একটি প্রণালীকে সংগঠন বলা যায়। একটি প্রয়োগযোগ্য ও কার্যকর ব্যবস্থাপনা সংগঠন বিশেষজ্ঞতা ও শ্রমবিভাগের নীতির উপর গড়ে ওঠে। সংগঠন সদস্যদের মধ্যে কর্তৃত্ব ও দায়িত্ব সুষ্ঠুভাবে বন্টন করে কার্যের নির্দিষ্টতা নিশ্চিত করে।