সোমবার, জুন ৫, ২০২৩

মনোক্লোনাল অ্যান্টিবডি কী এবং মানবদেহে রোগ প্ররিরোধে এর ব্যবহার

স্তন ক্যান্সার চিকিৎসায় মনোক্লোনাল অ্যান্টিবডি ব্যবহার এক অসাধারণ সাফল্য এনে দিয়েছে।

দেহে বহিরাগত পদার্থ বা প্রতিরক্ষা-উদ্দীপকের (অ্যান্টিজেন) উপস্থিতির কারণে দেহের অনাক্রম্যতন্ত্র বা ইমিউন সিস্টেম (Immune System) এক ধরণের প্রতিরক্ষামূলক প্রোটিন তৈরী করে যাকে অ্যান্টিবডি বা ইমিউনোগ্লোবুলিন বলে। ইমিউনোগ্লোবুলিনের (Immunoglobulin) সংক্ষিপ্ত রূপ হলো ‘Ig’।

অ্যান্টিবডিগুলিকে পাঁচটি শ্রেণিতে বিভক্ত করা হয়েছে, যথা:  IgG, IgM, IgA, IgD, এবং IgE। এই প্রোটিনগুলির মূল কাঠামোতে থাকে দুই জোড়া পলিপেপটাইড  (অ্যামিনো অ্যাসিডের সমন্বয়) শৃঙ্খল যেগুলি দেখতে ইংরেজি ওয়াই (Y) আকৃতির মত। সবচেয়ে সহজপ্রাপ্য অ্যান্টিবডি বা প্রতিরক্ষিকা হলো IgG, যা প্রধানত রক্তে ও কলারসে অবস্থান করে। নবজাতকদের দেহে প্রথমে IgM তৈরি হয়।

ব্যাকটেরিয়া ও ভাইরাসের আবরণীপৃষ্ঠে অবস্থিত প্রোটিন (অ্যান্টিজেন) উপাদানগুলি সাধারণত প্রতিরক্ষা-উদ্দীপকের ভূমিকা পালন করে। যেমন- করোনাভাইরাসের স্পাইক (Spike) প্রোটিন। মানবদেহের প্রতিরোধ ব্যবস্থা বা ইমিউন সিস্টেমের “বি-লসিকাকোষ (B Lymphocyte)” নামক এক বিশেষ ধরনের শ্বেত রক্তকণিকা অ্যান্টিবডি তৈরী করে। পরিপক্ব একগুচ্ছ অভিন্নরূপী লসিকাকোষকে ‘ক্লোন’ (Clone) বলা হয়।

কার্যতঃ দেহে দুই ধরণের অ্যান্টিবডি তৈরী হয়: ‘মনোক্লোনাল’ বা ‘পলিক্লোনাল’ অ্যান্টিবডি। “পলিক্লোনাল অ্যান্টিবডি” বি-লিম্ফোসাইট’ বা লসিকাকোষের বিভিন্ন গৌত্র থেকে তৈরী হয়ে আসে, ফলে তা বহিরাগত একটি অ্যান্টিজেন বা জীবাণুর প্রোটিনগুলির একাধিক প্রতিরক্ষা-উদ্দীপক নির্ধারক বা এপিটোপে (epitope) সংযুক্ত হতে পারে। পক্ষান্তরে, একক-অনুকৃতি প্রতিরক্ষিকা বা মনোক্লোনাল অ্যান্টিবডি বি-লিম্ফোসাইট’ কোষের একই গৌত্র থেকে তৈরী হয়, ফলে অ্যান্টিবডি একটি বহিরাগত অ্যান্টিজেন বা ভাইরাসের বিশেষ কোনো প্রোটিনের নির্দিষ্ট একটি এপিটোপ বা জায়গাকে শনাক্ত করতে সক্ষম।

অপরপক্ষে, এক বিশেষ জৈব-প্রযুক্তি বা ‘হাইব্রিডোমা’ (Hybridoma) আবিষ্কারের মাধ্যমে মনোক্লোনাল অ্যান্টিবডি সৃষ্টিকারী বি-লিম্ফোসাইটকে বাছাই ক’রে হাইব্রিডোমা প্রযুক্তিতে একটি সুনির্দিষ্ট ‘মনোক্লোনাল অ্যান্টিবডি’ উৎপাদন করা হয় যা নির্বাচিত কোনও বহিরাগত ক্ষতিকারক অ্যান্টিজেন বা প্রোটিনের নির্দিষ্ট কোনো এপিটোপের সাথে সংযুক্ত হয়ে অ্যান্টিজেনটির কার্যক্ষমতা নষ্ট করতে সক্ষম।

উদাহরণস্বরূপ, করোনাভাইরাসের স্পাইক প্রোটিন ইঁদুরের ভিতর প্রবেশ করিয়ে তার প্লীহা থেকে সৃষ্ট নির্দিষ্ট বি-লিম্ফোসাইটগুলিকে ‘মায়েলেমা’ (Myeloma) টিউমার কোষের সাথে সংযুক্তি ঘটিয়ে হাইব্রিডোমা প্রযুক্তির মাধ্যমে একটি অমর্ত্য হাইব্রিডোমা সঙ্কর সেল-লাইন সৃষ্টি করা হয়, যেখান থেকে স্পাইক প্রোটিনের বিপরীতে ‘মনোক্লোনাল অ্যান্টিবডি’ তৈরী করা হয়। উল্লেখ্য, এখানে ব্যবহৃত পদ ‘মায়েলেমা’ হলো রক্তের প্লাজমাকোষের এক প্রকার ক্যান্সার।

১৯৮৪ সালে ‘মনোক্লোনাল অ্যান্টিবডি’ তৈরির জনক তাদের সাফল্যে জার্মান বিজ্ঞানী জর্জ কেহলারসহ তিনজন বিজ্ঞানী নোবেল পুরস্কারে ভূষিত হন। ১৯৭৫ সালে জর্জ কেহলার এবং মিলস্টাইন যুক্তরাজ্যের কেমব্রিজে মেডিকেল রিসার্চ কাউন্সিল (MRC) ল্যাবরেটরি অব মলিকুলার বায়োলজিতে “হাইব্রিডোমা” প্রযুক্তি আবিষ্কার করেছিলেন। 

মনোক্লোনাল অ্যান্টিবডির ব্যবহার

চিকিৎসাবিজ্ঞানে মনোক্লোনাল অ্যান্টিবডি (Monoclonal Antibody) বা একক-অনুকৃতি প্রতিরক্ষিকাগুলির ব্যবহার উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। বর্তমানে হাইব্রিডোমা প্রযুক্তির ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে এবং মনোক্লোনাল অ্যান্টিবডি উৎপাদনে শিল্পায়নের ফলে বর্তমানে বিভিন্ন ধরণের ক্যান্সার, আরথ্রাইটিস ও জীবাণু-প্রতিরোধী মনোক্লোনাল অ্যান্টিবডি তৈরি করা সম্ভব হয়েছে।

মনোক্লোনাল অ্যান্টিবডি

ক্যান্সার রোগের, বিশেষ করে স্তন ক্যান্সার চিকিৎসায় মনোক্লোনাল অ্যান্টিবডির ব্যবহার এক অসাধারণ সাফল্য এনে দিয়েছে। এছাড়াও, কোভিড-১৯ চিকিৎসায় মনোক্লোনাল অ্যান্টিবডির সাম্প্রতিক ব্যবহারে আশাতীত সাফল্য অর্জন করেছে। এছাড়াও, মনোক্লোনাল অ্যান্টিবডি ব্যবহারের মাধ্যমে এই ধরণের ইমিউনোথেরাপি HIV (Human Immunodeficiency Virus), ইবোলা এবং RSV (Respiratory Syncytial virus) ভাইরাস দমনে সাফল্য অর্জন করেছে। 

যুক্তরাষ্ট্রের ‘রিজেনেরন’ (Regeneron) কোম্পানির তৈরী ‘রিজেন-কোভি’ হচ্ছে কোভিড-১৯ চিকিৎসায় যৌথভাবে প্রয়োগযোগ্য দুইটি মনোক্লোনাল অ্যান্টিবডির (ক্যাসিরিভিম্যব-Casirivimab এবং ইমডেভিম্যব-Imdevimab) সম্মিশ্রিত একটি কার্যকর প্রতিরোধক। এছাড়া আরও দুইটি মনোক্লোনাল অ্যান্টিবডি- যুক্তরাষ্ট্রের ‘এলি-লিলি’ কোম্পানির ব্যামলানিভিম্যাব (Bamlanivimab)/এটেসিভিম্যাব (Etesevimab) ককটেল এবং যুক্তরাজ্যের গ্লাক্সোস্মিথক্লাইন কোম্পানির অ্যান্টিবডি ‘সটরোভিম্যাব’ (Sotrovimab) কোভিড-১৯ রোগের প্রাথমিক চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়। একটি গবেষণায় দেখা গেছে, এলি-লিলির দু’টি অ্যান্টিবডি সমন্বিত থেরাপি, ব্যামলানিভিম্যব এবং এটেসিভিম্যব, কোভিড-১৯ রোগীদের হাসপাতালে ভর্তির হার এবং মৃত্যুর ঝুঁকি ৭০% হ্রাস করতে সহায়তা করেছে (www.reuters.com/January 26, 2021)। অন্যান্য সমীক্ষায় আরও দেখা গেছে যে, কোন রোগীকে যদি করোনাভাইরাসে সংক্রমিত হওয়ার ঠিক পরপরই ‘রিজেন-কোভি’ এন্টিবডি-ককটেল প্রয়োগ করা হয়, তাহলে সেই অ্যান্টিবডিগুলি রোগীদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে তুলতে পারে।

দেখা গেছে, করোনাভাইরাস সংক্রমণের প্রাথমিক উপসর্গের ১০ দিনের মধ্যে রিজেন-কোভি ককটেল প্রয়োগ করার ফলে রোগীদের হাসপাতালে ভর্তি এবং মৃত্যুর হার ও  প্রায় ৭০% কমে এসেছে। ভ্যাকসিনের পাশাপাশি একটি সম্পূরক মনোক্লোনাল এন্টিবডি ভাইরাস নিধন ও কোভিড-১৯ প্রতিরোধে সক্রিয় ভূমিকা রাখতে সম্ভব। মনোক্লোনাল অ্যান্টিবডিগুলি ভাইরাসের ‘স্পাইক (Spike) প্রোটিনের সাথে আবদ্ধ হয়ে মানবকোষে ভাইরাস প্রবেশ প্রতিহত করে। 

কোভিড-১৯ চিকিৎসায় ভ্যাকসিনের কোনো বিকল্প নেই। এ যাবৎ, যুক্তরাষ্ট্রে  ওষুধ নিয়ন্ত্রণ সংস্থা এফডিএ (FDA) কোভিড-১৯ প্রতিরোধের জন্য মোট তিনটি টিকা অনুমোদন করেছে: ফাইজার-বায়োএনটেক ও অক্সফোর্ড–অ্যাস্ট্রাজেনেকা, মডার্না এবং জনসন-জনসন। এছাড়াও চীন দেশের সাইনোভ্যাক, রাশিয়ার স্পুটনিক-ফাইভ টিকা কোভিড-১৯ প্রতিরোধে কার্যকর ভূমিকা রেখেছে। বর্তমানে, প্রচলিত কোভিড-১৯ প্রতিরোধী সমস্ত টিকা সার্স-কোভি-২ (SARS-CoV-2) ভাইরাসের (Wuhan-Hu-1) রেফারেন্স জিনোমের স্পাইক প্রোটিনের উপর ভিত্তি করে তৈরী।

প্রচলিত সবগুলি করোনা-ভ্যাকসিন ভাইরাসের আলফা, বেটা, গামা, এবং ডেল্টা ভ্যারিয়ান্টকে বিভিন্ন মাত্রায় নিষ্ক্রিয় ও প্রতিহত করতে সক্ষম (রাশিদুল হক,  যুগান্তর, ২৩ আগস্ট, ২০২১)।

টিকার স্বল্পতার কারণে টিকা কর্মসূচীর পাশাপাশি প্রাথমিকভাবে কোভিড-১৯ প্রতিরোধে ‘মনোক্লোনাল অ্যান্টিবডি’সহ  অন্যান্য  কার্যকর ভাইরাস নিরোধক ওষুধের (Antiviral drug) ওপরও বিশেষভাবে মনোযোগ দেয়া প্রয়োজন (হক ও নাজ, যুগান্তর ৯ জুলাই, ২০২১)। যুক্তরাষ্ট্রের মার্ক ওষুধ কোম্পানী দ্বারা তৈরি একটি পরীক্ষামূলক জীবাণু নিরোধক ক্যাপসুল ‘মোলনুপিরভিয়ার’ (যা করোনাভাইরাসের জেনেটিক কোডে ত্রুটি প্রবর্তনের জন্য ডিজাইন করা হয়েছে) কোভিড -১৯ রোগীদের হাসপাতালে ভর্তি বা মৃত্যুর ঝুঁকি অর্ধেকে কমিয়ে এনেছে।  

বাংলাদেশে করোনা সংক্রমণের হার বাড়ছে এবং তার সাথে মৃত্যুর সংখ্যাও বাড়ছে। তাছাড়া, কোভিড-১৯-এর সবচেয়ে সংক্রমণশীল ধরন ‘ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট’ ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়েছে। রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট  (আইইডিসিআর)-এর তথ্য অনুযায়ী দেশে করোনাভাইরাস সংক্রমিত বিভিন্ন এলাকায় করোনাভাইরাসের চারটি উদ্বেগজনক ভ্যারিয়েন্টের মধ্যে ৮০ শতাংশই ভারতীয় ধরন বা ‘ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট’ (যুগান্তর, জুন ১২, ২০২১)।

করোনাভাইরাস সংক্রমণ প্রতিরোধে ‘হার্ড ইমিউনিটি’ (Herd Immunity) অর্জন করতে হলে কমপক্ষে মোট জনসংখ্যার ৭০ শতাংশ জনগণের দুই ডোজের টিকা প্রয়োজন। কাজেই দেশের নিজস্ব টিকা উৎপাদন ছাড়া ব্যাপক ভিত্তিতে সবার জন্য টিকার ব্যবস্থা করা অনিশ্চিত। ভ্যাকসিনের এই সংকটকালে ‘মনোক্লোনাল অ্যান্টিবডি’ প্রাণঘাতী করোনার বিপরীতে খুব গুরুত্বপূর্ণ একটি নিরোধক ওষুধ হতে পারে (Haque and Naz, Daily Sun, October 13, 2021)। 

বর্তমানে, বেশিরভাগ বাণিজ্যিক মানবমনোক্লোনাল অ্যান্টিবডি উৎপাদিত হয় স্তন্যপায়ী চীনা হ্যামস্টার (Rodents) ওভারি (CHO) কোষে। তবে সনাতনী এই পদ্ধতিতে মনোক্লোনাল অ্যান্টিবডি উৎপাদন ব্যায়বহুল হওয়ায়, বিশেষত: নিম্ন- ও মধ্যম-আয়ের দেশগুলিতে, কিভাবে স্বল্পখরচে অ্যান্টিবডি উৎপাদন করা যায় সেই লক্ষ্যে বিকল্প প্ল্যাটফর্ম বিকাশের প্রচেষ্টা চলছে যা উন্নয়নশীল বিশ্বে এই প্রযুক্তি স্থানান্তরের জন্য উপযুক্ত। বিশেষ করে, মনোক্লোনাল অ্যান্টিবডি উৎপাদনে মনুষ্যোচিত ট্রান্সজেনিক-উদ্ভিদের ব্যবহার আশা জাগিয়েছে যাতে ক’রে সর্বত্র মনোক্লোনাল অ্যান্টিবডির  উৎপাদন আরও ব্যাপকভাবে সৃষ্টি করা যায়।

এই উদ্ভাবিত নতুন প্রযুক্তি কাজে লাগিয়ে জলাতঙ্ক (Rabies) ও ইবোলা রোগ প্রতিরোধে ট্রান্সজেনিক তামাক গাছ থেকে মনোক্লোনাল অ্যান্টিবডি উৎপাদন করে বিশ্বব্যাপী সাড়া জাগিয়েছিল (Both L et al., The FASEB J, 27, 2013; Qiu X et al., Nature, 514, 2014)। এছাড়া, খামি, ছত্রাক, এবং শেওলাকেও মনুষ্য-মনোক্লোনাল অ্যান্টিবডি উৎপাদনের বিকল্প প্ল্যাটফর্ম হিসেবে ভাবা হচ্ছে।

আমাদের প্রত্যাশা, বাংলাদেশের প্রথম সারির ঔষধ কোম্পানিগুলো হাইব্রিডোমা প্রযুক্তিসহ গবেষণা কর্মকান্ডকে অন্তর্ভুক্ত করে রিকম্বিন্যান্ট (Recombinant) মানবঅ্যান্টিবডি উৎপাদনে বিকল্প প্লাটফর্মগুলিকে কাজে লাগিয়ে স্বল্প খরচে কোভিড-১৯ প্রতিরোধ ও চিকিৎসায় জরুরি ভিত্তিতে মনোক্লোনাল অ্যান্টিবডির নিজস্ব উৎপাদনের ক্ষেত্র সৃষ্টি করবে।

প্রফেসর ড. রাশিদুল হক
প্রফেসর ড. রাশিদুল হক
সাবেক উপ-উপাচার্য, বরেন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী, এবং সাবেক অধ্যাপক, এমোরি বিশ্ববিদ্যালয়, আটলান্টা, যুক্তরাষ্ট্র, ও প্রাণিবিদ্যা বিভাগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ।

For all latest articles, follow on Google News

বাংলাদেশি বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানসমূহের মধ্য থেকে 'বিশ্লেষণ'-এর জন্য স্পনসরশিপ খোঁজা হচ্ছে। আগ্রহীদের যোগাযোগ করার জন্য অনুরোধ করা হলো। ইমেইল: contact.bishleshon@gmail.com

এ বিষয়ের আরও নিবন্ধ
আরও পড়তে পারেন

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here