১২:১৯ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
                       

আলোচনা পদ্ধতি কাকে বলে? আলোচনা পদ্ধতির বৈশিষ্ট্য, সুবিধা ও অসুবিধা কী?

বিশ্লেষণ সংকলন টিম
  • প্রকাশ: ০৭:৫৬:১৬ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৩ অক্টোবর ২০২১
  • / ১৯৮৯০ বার পড়া হয়েছে

আলোচনা পদ্ধতি কাকে বলে? আলোচনা পদ্ধতির বৈশিষ্ট্য, সুবিধা ও অসুবিধা কী?

শিখন শেখানো কার্যক্রমে বা শিক্ষাদানে শ্রেণিকক্ষে ব্যবহৃত বিভিন্ন পদ্ধতির মধ্যে আলোচনা পদ্ধতি বা ডিসকাশন মেথড (Discussion Method) গুরুত্বপূর্ণ অন্যতম। আলোচনা পদ্ধতিতে শিক্ষক শিক্ষার্থী উভয়ের সক্রিয় অংশগ্রহণ থাকে; এ কারণে  ‘আলোচনা পদ্ধতি’ বিশেষ কার্যকর হয় বলে মনে করা হয়। তবে শিক্ষকের মানসিক প্রস্তুতি তথা পূর্ব-প্রস্তুতি দুই ক্ষেত্রেই অত্যাবশ্যক।

আলোচনা পদ্ধতি কী? (What is Discussion Method?)

পাঠদানের যে পদ্ধতিতে শিক্ষক শিক্ষার্থীদের নিয়ে পারস্পরিক সহযোগিতায় কোনো বিশেষ সমস্যা বা বিষয় সম্পর্কে আলোচনা করেন তাকে আলোচনা পদ্ধতি বলে।  এই পদ্ধতিতে শিক্ষার্থীরা কয়েকটি দলে বিভক্ত হয়ে আলোচনায় অংশ নেয়। 

আলোচনা পদ্ধতি সুষ্ঠুভাবে বাস্তবায়নের জন্য এর কলা-কৌশল সম্পর্কে শিক্ষক শিক্ষার্থীদের প্রতি সংক্ষিপ্ত বক্তৃতা দিতে পারেন এবং এই পদ্ধতির সুবিধা অসুবিধাগুলো প্রশ্ন-উত্তরের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের কাছে তিনি উপস্থাপন করে নিতে পারেন।

দীর্ঘ কোনো পাঠ্য বিষয় কয়েকটি অংশে ভাগ করে আলোচনা পদ্ধতি বাস্তবায়ন করা যায়। আলোচনা পদ্ধতিতে শিক্ষার্থীদের নিজস্ব মতামত দানের সুযোগ ঘটে এবং নিজের চেষ্টায় জ্ঞান অর্জন করার ফলে তা স্থায়ী হয়।

আলোচনা পদ্ধতির বৈশিষ্ট্য 

আলোচনা পদ্ধতির কিছু বৈশিষ্ট্য নিচে উল্লেখ করা হলো:

  • আলোচনা পদ্ধতিতে শিক্ষক নির্দিষ্ট বিষয়বস্তু সহজবোধ্য করার জন্য শিক্ষার্থীদের সাথে আলোচনায় বসেন।
  • ব্যক্তি কেন্দ্রিক শিক্ষণে আলোচনা পদ্ধতির বিশেষ কোনো গুরুত্ব নেই, কেননা আলোচনাই এখানে এক ধরনের দলগত পদ্ধতি।
  • আলোচনা পদ্ধতিতে পাঠদান করতে হলে শিক্ষার্থীদেরকে একাধিক দলে বিভক্ত করতে হয়। প্রতি দলে এক জন করে নেতা থাকবে।
  • আলোচনার বিষয়বস্তু পাঠ্য বিষয়ের অংশভিত্তিক হতে পারে অথবা সমস্যামূলক হতে পারে।
  • আলোচনার জন্য শিক্ষক ও শিক্ষার্থী উভয়েরই পূর্ব-প্রস্তুতি প্রয়োজন।
  • আলোচিতব্য বিষয় বা সমস্যা সম্পর্কে শিক্ষার্থীদের কোনো ধারণা না থাকলে স্বভাবতঃই তারা আলোচনায় সক্রিয় অংশগ্রহণ করতে পারবে না। শিক্ষকও নির্ধারিত বিষয়ে অবগত না থাকলে তাঁর পক্ষেও আলোচনা সঠিক পথে পরিচালনা করা সম্ভব হবে না। এ কারণে আলোচনার বিষয়বস্তু সম্পর্কে শিক্ষক ও শিক্ষার্থী, উভয়েরই ন্যূনতম পূর্বধারণা প্রয়োজন।
  • শিক্ষক সব সময় নিজের মতামত শিক্ষার্থীদের ওপর চাপিয়ে দেবেন না, বরং আলোচনা শিক্ষক কর্তৃক যতটা কম প্রভাবিত হবে শিক্ষণ ততই বেশি কার্যকর হবে।
  • শিক্ষক আলোচনার শুরুটা করে শুধু সূত্রটা ধরিয়ে দেন, আলোচনা দিকভ্রষ্ট হতে চায় তখন শিক্ষক শুধরে দেন।
  • আলোচনা পদ্ধতির আলোচনায় শিক্ষকের নেতৃত্ব সব সময় পরোক্ষ ভাবে থাকবে।
  • আলোচনা পদ্ধতিতে পাঠ পরিচালনা করার সময় প্রত্যেক শিক্ষার্থী যাতে অংশগ্রহণ করতে পারে সে দিকেও নজর রাখতে হয়। যে শিক্ষার্থী আলোচনায় অংশগ্রহণ করছে না, তার সামনে কিছু সমস্যা তুলে ধরে তাকে উদ্বুদ্ধ করতে হয়।
  • বিষয়বস্তুর প্রকৃতি বিবেচনায় সময়সীমা হবে সুনির্দিষ্ট।
  • মুক্ত আলোচনার মাধ্যমে পাঠদানের জন্য নির্ধারিত বিষয়ে শিক্ষক অনেক নতুন তথ্য যোগ করার সুযোগ পেয়ে থাকেন।
  • আলোচনা কালে শিক্ষককে সতর্কতা অবলম্বন করতে হয় যেন আলোচ্য বিষয়বস্তু তার অখণ্ডতা না হারায়।

আলোচনা পদ্ধতির সুবিধা বা উপযোগিতা

আলোচনা পদ্ধতিতে পাঠদান করলে শিক্ষার অনুকূল কিছু সুবিধা পাওয়া যায় বলে শিক্ষণ পদ্ধতি হিসেবে আলোচনাকে বর্তমানে বিশেষ গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। আলোচনা পদ্ধতির সুবিধাগুলো নিম্নরূপ :

  • এই পদ্ধতির প্রধান সুবিধা হলো এখানে শিক্ষার্থীরা সক্রিয়ভাবে শিক্ষণে অংশগ্রহণের সুযোগ পায়। তারা নিজেরাই বিষয়বস্তুর আলোচনায় এগিয়ে যায়; ফলে শিক্ষণ অনেকাংশে শিক্ষার্থীর প্রচেষ্টার মাধ্যমে সম্পন্ন হয়।
  • এরূপ শিক্ষণ পদ্ধতিতে পাঠ পরিচালনা করলে শিক্ষর্থীদের ভেতরে এক বিশেষ ধরনের সামাজিক বন্ধুত্ব সুলভ পরিবেশ তৈরি হয়। এই ভাবে সৃষ্ট পরিবেশ একদিকে যেমন বিষয় কেন্দ্রিক শিখনে সহায়তা করে অন্যদিকে শিক্ষার্থীদের নানা রকমের সামাজিক গুণ বিকাশে সহায়তা করে।
  • আলোচনা পদ্ধতিতে শিক্ষার্থীরা স্বাধীনভাবে নিজেদের মতামত ব্যক্ত করার সুযোগ পায়, তাদের ব্যক্তিত্ব গড়ে ওঠে, আত্মনির্ভরতা সৃষ্টি হয়, তাদের আত্মবিশ্বাস বাড়ে, তাদের চিন্তন ক্ষমতারও বিকাশ ঘটে।
  • শিক্ষার্থীরা এই পদ্ধতিতে নিজস্ব মতামত ব্যক্ত করার সুযোগ পায় বলে তাদের শিখনও পরিপূর্ণতা পায়। তারা তাদের নিজেদের অসুবিধা দূর করতে পারে। আলোচনা পদ্ধতিতে শিক্ষণ এবং সংশোধনমূলক কাজ একই সাথে সম্পাদিত হয়।
  • আলোচনা পদ্ধতিতে পাঠ পরিচালনার সময় শিক্ষার্থী-শিক্ষার্থী সম্পর্ক এবং শিক্ষার্থী-শিক্ষক সম্পর্ক আদর্শস্থানীয় হয়। সম্পর্ক ঘনিষ্ঠ হয় বলে শিক্ষার্থীরা নিঃসংকোচে পাঠ গ্রহণ করতে পারে। তারা স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে নিজেদের অসুবিধার কথা ব্যক্ত করতে পারে বলে বিষয়কেন্দ্রিক জ্ঞান পরিপূর্ণতা লাভ করে।
  • প্রত্যেক আলোচনা কৌশলের নির্ধারিত কিছু নিয়ম থাকে। আলোচনার সময় শিক্ষার্থীরা সে  নিয়মগুলো মেনে চলে। ফলে শ্রেণিকক্ষে শৃঙ্খলা রক্ষার জন্য শিক্ষককে অতিরিক্ত কোনো কৌশল প্রয়োগ করতে হয় না। এখানে শ্রেণিকক্ষের শৃঙ্খলা স্বতঃস্ফূর্তভাবে আসে।
  • আলোচনা সঠিকভাবে পরিচালিত হলে শিক্ষার্থীদের স্থায়ীভাবে চারিত্রিক পরিবর্তন আনা সম্ভব হয়। তাদের বিভিন্ন ঘটনার প্রতি স্থায়ী মনোভাব গঠন করতে এবং জীবনাদর্শ গড়ে তুলতে এই আলোচনা পদ্ধতি বিশেষভাবে সহায়তা করে।
শিখন শেখানো কার্যক্রমে আলোচনা পদ্ধতি শিক্ষার্থীদের আত্মবিশ্বাস বাড়ায়

আলোচনা পদ্ধতি অসুবিধা বা সমস্যা 

আলোচনা পদ্ধতির বেশ কিছু সুবিধা থাকা সত্ত্বেও এটির পরিচালনায় কতগুলো অসুবিধাও আছে। পদ্ধতির প্রয়োগে এই সব অসুবিধা পূর্ব-ধারণা হিসেবে অবশ্যই শিক্ষকের থাকতে হবে। মনে রাখতে হবে যে –

  • আলোচনা পদ্ধতির পাঠ পরিচালনার জন্য প্রথমেই দরকার সুপরিকল্পনার, যা সকল শিক্ষকের পক্ষে তৈরি করা সম্ভব হয় না। আর সেটি না হলে সম্পূর্ণ আলোচনাই ব্যর্থ হতে পারে। অপরিকল্পিত আলোচনায় শিক্ষার্থীদের মধ্যে অনভিপ্রেত অভ্যাস গড়ে ওঠার ঝুঁকি থাকে।
  • এই পদ্ধতিতে শিক্ষার্থীদের আলোচনা যেমন গতি নেবে, সে অনুযায়ী তাঁকে প্রতিক্রিয়া করতে হবে। তাই এখানে শিক্ষকের বিস্তৃত ক্ষেত্রে প্রস্তুতি থাকা জরুরি, কেননা তাঁর পক্ষেপূর্ব-নির্ধারিত পদ্ধতিতে সব সময় পাঠ পরিচালনা করা সম্ভব নয়। বরং শিক্ষার্থীদের যে কোনো ধরনের সমস্যা বা প্রশ্নের সমাধান করার মত তাঁর তরিৎ ও তাৎক্ষণিক প্রস্তুতি থাকা একান্তভাবে প্রয়োজন। আলোচনা সঠিক সরণীতে পরিচালনা ও নিয়ন্ত্রণ-দক্ষতা প্রশিক্ষণ সাপেক্ষ; সবার তা থাকে না বা সবাই তা রপ্তও করতে পারেন না।
  • আলোচনা পদ্ধতিতে শিক্ষার্থীদের প্রক্ষোভিক (ভাবগত ভাবে) প্রতিক্রিয়াকে সব সময় নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব নয়, ফলে শিক্ষাক্ষেত্রে অস্বাভাবিক মনোভাব গড়ে উঠতে পারে। কোনো বিশেষ মতবাদের সাথে তারা তাদের প্রক্ষোভিক অনুভূতিকে মিশিয়ে ফেলে। তার বিরুদ্ধাচরণ করলে তারা ক্ষুন্ন হয়। ফলে শিক্ষাক্ষেত্রে যথাযোগ্য প্রেষণা গড়ে উঠতে পারে না। এই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ সহজ নয়।
  • এই ধরনের দলগত আলোচনা পদ্ধতির প্রভাবে অনেক সময় শিক্ষার্থীদের মধ্যে অবাঞ্ছিত প্রতিযোগিতার মনোভাব দেখা দেয়, পরস্পরে ঈর্ষার ভাব জাগ্রত হয়। এরকম অবস্থায় এই পদ্ধতিতে শিক্ষকের শ্রেণি পাঠদান ও সার্বিক শৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণসহ সমমনোভাব সম্পন্ন পরিবেশ বজায় রাখা কঠিন হয়ে পড়ে।
  • আলোচনা পদ্ধতিতে দল গঠনের সময় সাধারণত শ্রেণির অপেক্ষাকৃত ভাল শিক্ষার্থীদের নির্বাচন করা হয়। এর ফলে শ্রেণির অন্যান্যদের মধ্যে হীনমন্যতার ভাব জাগতে পারে। আলোচনার সময় শিক্ষক স্বাভাবিক ভাবে ভালদের মতামতের ওপর গুরুত্ব দিয়ে থাকেন, কারণ তারাই বেশিরভাগ ক্ষেত্রে সঠিক মতবাদ/মতামত/জবাব দিয়ে থাকে। এই ধরনের অবস্থা সব সময় নিয়ন্ত্রণ করা যায় না।

শেয়ার করুন

মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার তথ্য সংরক্ষিত রাখুন

তাহসান খান এবং মুনজেরিন শহীদের দুটি প্রফেশনাল কমিউনিকেশন কোর্স করুন ২৮% ছাড়ে
তাহসান খান এবং মুনজেরিন শহীদের দুটি প্রফেশনাল কমিউনিকেশন কোর্স করুন ২৮% ছাড়ে

২৮℅ ছাড় পেতে ৩০/০৬/২০২৪ তারিখের মধ্যে প্রোমো কোড “professional10” ব্যবহার করুন। বিস্তারিত জানতে ও ভর্তি হতে ক্লিক করুন এখানে

আলোচনা পদ্ধতি কাকে বলে? আলোচনা পদ্ধতির বৈশিষ্ট্য, সুবিধা ও অসুবিধা কী?

প্রকাশ: ০৭:৫৬:১৬ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৩ অক্টোবর ২০২১

শিখন শেখানো কার্যক্রমে বা শিক্ষাদানে শ্রেণিকক্ষে ব্যবহৃত বিভিন্ন পদ্ধতির মধ্যে আলোচনা পদ্ধতি বা ডিসকাশন মেথড (Discussion Method) গুরুত্বপূর্ণ অন্যতম। আলোচনা পদ্ধতিতে শিক্ষক শিক্ষার্থী উভয়ের সক্রিয় অংশগ্রহণ থাকে; এ কারণে  ‘আলোচনা পদ্ধতি’ বিশেষ কার্যকর হয় বলে মনে করা হয়। তবে শিক্ষকের মানসিক প্রস্তুতি তথা পূর্ব-প্রস্তুতি দুই ক্ষেত্রেই অত্যাবশ্যক।

আলোচনা পদ্ধতি কী? (What is Discussion Method?)

পাঠদানের যে পদ্ধতিতে শিক্ষক শিক্ষার্থীদের নিয়ে পারস্পরিক সহযোগিতায় কোনো বিশেষ সমস্যা বা বিষয় সম্পর্কে আলোচনা করেন তাকে আলোচনা পদ্ধতি বলে।  এই পদ্ধতিতে শিক্ষার্থীরা কয়েকটি দলে বিভক্ত হয়ে আলোচনায় অংশ নেয়। 

আলোচনা পদ্ধতি সুষ্ঠুভাবে বাস্তবায়নের জন্য এর কলা-কৌশল সম্পর্কে শিক্ষক শিক্ষার্থীদের প্রতি সংক্ষিপ্ত বক্তৃতা দিতে পারেন এবং এই পদ্ধতির সুবিধা অসুবিধাগুলো প্রশ্ন-উত্তরের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের কাছে তিনি উপস্থাপন করে নিতে পারেন।

দীর্ঘ কোনো পাঠ্য বিষয় কয়েকটি অংশে ভাগ করে আলোচনা পদ্ধতি বাস্তবায়ন করা যায়। আলোচনা পদ্ধতিতে শিক্ষার্থীদের নিজস্ব মতামত দানের সুযোগ ঘটে এবং নিজের চেষ্টায় জ্ঞান অর্জন করার ফলে তা স্থায়ী হয়।

আলোচনা পদ্ধতির বৈশিষ্ট্য 

আলোচনা পদ্ধতির কিছু বৈশিষ্ট্য নিচে উল্লেখ করা হলো:

  • আলোচনা পদ্ধতিতে শিক্ষক নির্দিষ্ট বিষয়বস্তু সহজবোধ্য করার জন্য শিক্ষার্থীদের সাথে আলোচনায় বসেন।
  • ব্যক্তি কেন্দ্রিক শিক্ষণে আলোচনা পদ্ধতির বিশেষ কোনো গুরুত্ব নেই, কেননা আলোচনাই এখানে এক ধরনের দলগত পদ্ধতি।
  • আলোচনা পদ্ধতিতে পাঠদান করতে হলে শিক্ষার্থীদেরকে একাধিক দলে বিভক্ত করতে হয়। প্রতি দলে এক জন করে নেতা থাকবে।
  • আলোচনার বিষয়বস্তু পাঠ্য বিষয়ের অংশভিত্তিক হতে পারে অথবা সমস্যামূলক হতে পারে।
  • আলোচনার জন্য শিক্ষক ও শিক্ষার্থী উভয়েরই পূর্ব-প্রস্তুতি প্রয়োজন।
  • আলোচিতব্য বিষয় বা সমস্যা সম্পর্কে শিক্ষার্থীদের কোনো ধারণা না থাকলে স্বভাবতঃই তারা আলোচনায় সক্রিয় অংশগ্রহণ করতে পারবে না। শিক্ষকও নির্ধারিত বিষয়ে অবগত না থাকলে তাঁর পক্ষেও আলোচনা সঠিক পথে পরিচালনা করা সম্ভব হবে না। এ কারণে আলোচনার বিষয়বস্তু সম্পর্কে শিক্ষক ও শিক্ষার্থী, উভয়েরই ন্যূনতম পূর্বধারণা প্রয়োজন।
  • শিক্ষক সব সময় নিজের মতামত শিক্ষার্থীদের ওপর চাপিয়ে দেবেন না, বরং আলোচনা শিক্ষক কর্তৃক যতটা কম প্রভাবিত হবে শিক্ষণ ততই বেশি কার্যকর হবে।
  • শিক্ষক আলোচনার শুরুটা করে শুধু সূত্রটা ধরিয়ে দেন, আলোচনা দিকভ্রষ্ট হতে চায় তখন শিক্ষক শুধরে দেন।
  • আলোচনা পদ্ধতির আলোচনায় শিক্ষকের নেতৃত্ব সব সময় পরোক্ষ ভাবে থাকবে।
  • আলোচনা পদ্ধতিতে পাঠ পরিচালনা করার সময় প্রত্যেক শিক্ষার্থী যাতে অংশগ্রহণ করতে পারে সে দিকেও নজর রাখতে হয়। যে শিক্ষার্থী আলোচনায় অংশগ্রহণ করছে না, তার সামনে কিছু সমস্যা তুলে ধরে তাকে উদ্বুদ্ধ করতে হয়।
  • বিষয়বস্তুর প্রকৃতি বিবেচনায় সময়সীমা হবে সুনির্দিষ্ট।
  • মুক্ত আলোচনার মাধ্যমে পাঠদানের জন্য নির্ধারিত বিষয়ে শিক্ষক অনেক নতুন তথ্য যোগ করার সুযোগ পেয়ে থাকেন।
  • আলোচনা কালে শিক্ষককে সতর্কতা অবলম্বন করতে হয় যেন আলোচ্য বিষয়বস্তু তার অখণ্ডতা না হারায়।

আলোচনা পদ্ধতির সুবিধা বা উপযোগিতা

আলোচনা পদ্ধতিতে পাঠদান করলে শিক্ষার অনুকূল কিছু সুবিধা পাওয়া যায় বলে শিক্ষণ পদ্ধতি হিসেবে আলোচনাকে বর্তমানে বিশেষ গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। আলোচনা পদ্ধতির সুবিধাগুলো নিম্নরূপ :

  • এই পদ্ধতির প্রধান সুবিধা হলো এখানে শিক্ষার্থীরা সক্রিয়ভাবে শিক্ষণে অংশগ্রহণের সুযোগ পায়। তারা নিজেরাই বিষয়বস্তুর আলোচনায় এগিয়ে যায়; ফলে শিক্ষণ অনেকাংশে শিক্ষার্থীর প্রচেষ্টার মাধ্যমে সম্পন্ন হয়।
  • এরূপ শিক্ষণ পদ্ধতিতে পাঠ পরিচালনা করলে শিক্ষর্থীদের ভেতরে এক বিশেষ ধরনের সামাজিক বন্ধুত্ব সুলভ পরিবেশ তৈরি হয়। এই ভাবে সৃষ্ট পরিবেশ একদিকে যেমন বিষয় কেন্দ্রিক শিখনে সহায়তা করে অন্যদিকে শিক্ষার্থীদের নানা রকমের সামাজিক গুণ বিকাশে সহায়তা করে।
  • আলোচনা পদ্ধতিতে শিক্ষার্থীরা স্বাধীনভাবে নিজেদের মতামত ব্যক্ত করার সুযোগ পায়, তাদের ব্যক্তিত্ব গড়ে ওঠে, আত্মনির্ভরতা সৃষ্টি হয়, তাদের আত্মবিশ্বাস বাড়ে, তাদের চিন্তন ক্ষমতারও বিকাশ ঘটে।
  • শিক্ষার্থীরা এই পদ্ধতিতে নিজস্ব মতামত ব্যক্ত করার সুযোগ পায় বলে তাদের শিখনও পরিপূর্ণতা পায়। তারা তাদের নিজেদের অসুবিধা দূর করতে পারে। আলোচনা পদ্ধতিতে শিক্ষণ এবং সংশোধনমূলক কাজ একই সাথে সম্পাদিত হয়।
  • আলোচনা পদ্ধতিতে পাঠ পরিচালনার সময় শিক্ষার্থী-শিক্ষার্থী সম্পর্ক এবং শিক্ষার্থী-শিক্ষক সম্পর্ক আদর্শস্থানীয় হয়। সম্পর্ক ঘনিষ্ঠ হয় বলে শিক্ষার্থীরা নিঃসংকোচে পাঠ গ্রহণ করতে পারে। তারা স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে নিজেদের অসুবিধার কথা ব্যক্ত করতে পারে বলে বিষয়কেন্দ্রিক জ্ঞান পরিপূর্ণতা লাভ করে।
  • প্রত্যেক আলোচনা কৌশলের নির্ধারিত কিছু নিয়ম থাকে। আলোচনার সময় শিক্ষার্থীরা সে  নিয়মগুলো মেনে চলে। ফলে শ্রেণিকক্ষে শৃঙ্খলা রক্ষার জন্য শিক্ষককে অতিরিক্ত কোনো কৌশল প্রয়োগ করতে হয় না। এখানে শ্রেণিকক্ষের শৃঙ্খলা স্বতঃস্ফূর্তভাবে আসে।
  • আলোচনা সঠিকভাবে পরিচালিত হলে শিক্ষার্থীদের স্থায়ীভাবে চারিত্রিক পরিবর্তন আনা সম্ভব হয়। তাদের বিভিন্ন ঘটনার প্রতি স্থায়ী মনোভাব গঠন করতে এবং জীবনাদর্শ গড়ে তুলতে এই আলোচনা পদ্ধতি বিশেষভাবে সহায়তা করে।
শিখন শেখানো কার্যক্রমে আলোচনা পদ্ধতি শিক্ষার্থীদের আত্মবিশ্বাস বাড়ায়

আলোচনা পদ্ধতি অসুবিধা বা সমস্যা 

আলোচনা পদ্ধতির বেশ কিছু সুবিধা থাকা সত্ত্বেও এটির পরিচালনায় কতগুলো অসুবিধাও আছে। পদ্ধতির প্রয়োগে এই সব অসুবিধা পূর্ব-ধারণা হিসেবে অবশ্যই শিক্ষকের থাকতে হবে। মনে রাখতে হবে যে –

  • আলোচনা পদ্ধতির পাঠ পরিচালনার জন্য প্রথমেই দরকার সুপরিকল্পনার, যা সকল শিক্ষকের পক্ষে তৈরি করা সম্ভব হয় না। আর সেটি না হলে সম্পূর্ণ আলোচনাই ব্যর্থ হতে পারে। অপরিকল্পিত আলোচনায় শিক্ষার্থীদের মধ্যে অনভিপ্রেত অভ্যাস গড়ে ওঠার ঝুঁকি থাকে।
  • এই পদ্ধতিতে শিক্ষার্থীদের আলোচনা যেমন গতি নেবে, সে অনুযায়ী তাঁকে প্রতিক্রিয়া করতে হবে। তাই এখানে শিক্ষকের বিস্তৃত ক্ষেত্রে প্রস্তুতি থাকা জরুরি, কেননা তাঁর পক্ষেপূর্ব-নির্ধারিত পদ্ধতিতে সব সময় পাঠ পরিচালনা করা সম্ভব নয়। বরং শিক্ষার্থীদের যে কোনো ধরনের সমস্যা বা প্রশ্নের সমাধান করার মত তাঁর তরিৎ ও তাৎক্ষণিক প্রস্তুতি থাকা একান্তভাবে প্রয়োজন। আলোচনা সঠিক সরণীতে পরিচালনা ও নিয়ন্ত্রণ-দক্ষতা প্রশিক্ষণ সাপেক্ষ; সবার তা থাকে না বা সবাই তা রপ্তও করতে পারেন না।
  • আলোচনা পদ্ধতিতে শিক্ষার্থীদের প্রক্ষোভিক (ভাবগত ভাবে) প্রতিক্রিয়াকে সব সময় নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব নয়, ফলে শিক্ষাক্ষেত্রে অস্বাভাবিক মনোভাব গড়ে উঠতে পারে। কোনো বিশেষ মতবাদের সাথে তারা তাদের প্রক্ষোভিক অনুভূতিকে মিশিয়ে ফেলে। তার বিরুদ্ধাচরণ করলে তারা ক্ষুন্ন হয়। ফলে শিক্ষাক্ষেত্রে যথাযোগ্য প্রেষণা গড়ে উঠতে পারে না। এই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ সহজ নয়।
  • এই ধরনের দলগত আলোচনা পদ্ধতির প্রভাবে অনেক সময় শিক্ষার্থীদের মধ্যে অবাঞ্ছিত প্রতিযোগিতার মনোভাব দেখা দেয়, পরস্পরে ঈর্ষার ভাব জাগ্রত হয়। এরকম অবস্থায় এই পদ্ধতিতে শিক্ষকের শ্রেণি পাঠদান ও সার্বিক শৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণসহ সমমনোভাব সম্পন্ন পরিবেশ বজায় রাখা কঠিন হয়ে পড়ে।
  • আলোচনা পদ্ধতিতে দল গঠনের সময় সাধারণত শ্রেণির অপেক্ষাকৃত ভাল শিক্ষার্থীদের নির্বাচন করা হয়। এর ফলে শ্রেণির অন্যান্যদের মধ্যে হীনমন্যতার ভাব জাগতে পারে। আলোচনার সময় শিক্ষক স্বাভাবিক ভাবে ভালদের মতামতের ওপর গুরুত্ব দিয়ে থাকেন, কারণ তারাই বেশিরভাগ ক্ষেত্রে সঠিক মতবাদ/মতামত/জবাব দিয়ে থাকে। এই ধরনের অবস্থা সব সময় নিয়ন্ত্রণ করা যায় না।