০৩:৪০ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
                       

লেনদেন কাকে বলে এবং লেনদেনের বৈশিষ্ট্য কী কী?

হাসান মাহমুদ রি
  • প্রকাশ: ০১:৩৯:০৬ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১৭ অক্টোবর ২০২১
  • / ৩১৯২২ বার পড়া হয়েছে

লেনদেন কী?

মানুষের জীবনে প্রতিনিয়ত যে সমস্ত কর্মকাণ্ড ঘটছে তাকে ঘটনা বলে। ঘটনা হলো লেনদেনের ভিত্তি। ঘটনা লেনদেনের ভিত্তি হলেও সকল ঘটনা লেনদেন নয়। যে সমস্ত ঘটনা অর্থ দিয়ে পরিমাপ করা যায়, আর্থিক অবস্থার পরিবর্তন আনে এবং দুটি পক্ষের মধ্যে সংঘটিত হয় তাকে লেনদেন বলে। লেনদেন হিসাবের বইতে নিয়মানুযায়ী লিপিবদ্ধ করাই হিসাববিজ্ঞানের প্রাথমিক ও গুরুত্বপূর্ণ কাজ। এখানে লেনদেন কী বা লেনদেনের সংজ্ঞা এবং লেনদেনের বৈশিষ্ট্য উল্লেখ করা হলো।

লেনদেন ধারণার প্রাসঙ্গিক কিছু কথা

হিসাববিজ্ঞানের প্রধান কাজ ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের আর্থিক লেনদেনসমূহ হিসাবের বইতে সুষ্ঠুভাবে লিপিবদ্ধ করা এবং নির্দিষ্ট সময়ে শেষে কার্যফল ও আর্থিক অবস্থা নির্ণয় করা। হিসাববিজ্ঞানের কার্যক্রম শুরু হয় আর্থিক লেনদেন লিপিবদ্ধ করার মাধ্যমে। লেনদেন হলো হিসাববিজ্ঞানের প্রথম ও প্রধান উপাদান। হিসাবনিকা লেনদেন ছাড়া সম্পাদন করা সম্ভব নয়। সুতরাং লেনদেন সম্পর্কে সম্যক ধারণা অর্জন করা দরকার। লেনদেন সম্পর্কে বিস্তারিত জানার আগে লেনদেন যে ধারণা থেকে এসেছে সে সম্পর্কে অবগত হওয়া প্রয়োজন। লেনদেন হলো কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের আর্থিক ঘটনা। তাই লেনদেন সম্পর্কে জানতে হলে ঘটনা সম্পর্কে ধারণা লাভ করতে হবে।

ঘটনা (Event)

সাধারণভাবে কোনো কিছু সংঘটিত হওয়াকে ঘটনা বলে। মানুষের ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক, রাষ্ট্রীয় ও অর্থনৈতিক জীবনে প্রতিনিয়ত যে সমস্ত কর্মকান্ড সংঘটিত হচ্ছে সেগুলোর প্রতিটি এক একটি ঘটনা। প্রতিনিয়ত যে সমস্ত ঘটনা ঘটছে সেগুলোকে দুইভাগে ভাগ করা যায়।

১. অনার্থিক ঘটনা (Non-monetary Events)

যে সমস্ত ঘটনার সাথে অর্থের সংশিণ্ঢষ্টতা নেই বা যে সমস্ত ঘটনায় মানুষের আর্থিক অবস্থার পরিবর্তন হয় না তাকে অনার্থিক ঘটনা বলা যায়। যেমন খাওয়া, খুমানো, খেলায় জয়লাভ করা, সভায় বক্তৃতা দেওয়া, পণ্যক্রয়ের আদেশ দেওয়া ইত্যাদি।

২. আর্থিক ঘটনা (Monetary Events)

অর্থের সাথে সম্পর্কযুক্ত ঘটনা যা ঘটলে মানুষের আর্থিক অবস্থার পরিবর্তন হয় তাকে আর্থিক ঘটনা বলে। যেমন- কেনাকাটা, ভাড়া প্রদান, বিক্রয় করা ইত্যাদি।

  • হিসাববিজ্ঞানের দৃষ্টিতে যে সমস্ত ঘটনা দ্বারা ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের আর্থিক অবস্থার পরিবর্তন ঘটে সেগুলোই ঘটনা বলে স্বীকৃত। অনার্থিক ঘটনা এখানে প্রযোজ্য নয়।
  • ঘটনা ও লেনদেনের মধ্যে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে। লেনদেনের উৎপত্তি হয় ঘটনা থেকে। ঘটনা সংঘটিত না হলে লেনদেন হতে পারে না। তাই সাধারণভাবে বলা যায় সকল লেনদেনই ঘটনা কিন্তু সকল ঘটনা লেনদেন নয়।

লেনদেন কাকে বলে? (What is Transaction?)

লেনদেন শব্দটির অভিধানগত অর্থ ‘গ্রহণ ও দান’। নেওয়া এবং দেওয়া শব্দ দুটো থেকে লেনদেন শব্দের উৎপত্তি। একে আদান-প্রদানও বলা যায়। অর্থাৎ সাধারণ অর্থে কোনো কিছুর আদান-প্রদানকে লেনদেন বলে। স্নেহ, ভালবাসার আদান-প্রদানকেও লেনদেন বলা চলে।

তবে সাধারণ দেওয়া ও নেওয়া অর্থের লেনদেন আর হিসাববিজ্ঞানের লেনদেন সম্পূর্ণ ভিন্ন বিষয়।

হিসাববিজ্ঞানে লেনদেন শব্দটি বিশেষ অর্থ বহন করে। একটি প্রতিষ্ঠানের দক্ষকর্মকর্তার হঠাৎ মৃত্যু প্রতিষ্ঠানটির জন্য অপরিহার্য ক্ষতি। কিন্তু ক্ষতির পরিমাণ পরিমাপ করা যায় না। এটি প্রতিষ্ঠানটির জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। আবার গুদামে আগুন লেগে ৫০০ টাকা মূল্যের পণ্য নষ্ট হয়ে গেল। এটাও একটি ঘটনা এবং টাকায় পরিমাপ করা যায়। তাছাড়া, প্রতিষ্ঠানটির আর্থিক অবস্থার পরিবর্তনও ঘটেছে। আর একটি ঘটনার কথা আমরা চিন্তা করি।

প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজার মেয়ের বিয়েতে ৫০,০০০ টাকা খরচ করলেন। এটি একটি ঘটনা এবং এটিকে অর্থের মাপকাঠিতে পরিমাপ করা যায়। অর্থাৎ এটি একটি আর্থিক ঘটনা। কিন্তু এতে প্রতিষ্ঠানের আর্থিক অবস্থার পরিবর্তন ঘটছে না। তবে তিনি যদি প্রতিষ্ঠান থেকে এ অর্থ গ্রহণ করেন তাহলে তাতে প্রতিষ্ঠানের আর্থিক অবস্থার পরিবর্তন ঘটছে।

এখানে উল্লেখ্য যে, সকল ঘটনাই লেনদেন নয়। এমনকি সকল আর্থিক ঘটনাও লেনদেন নয়।

  • Accounting Tools ওয়েবসাইট অনুসারে, “An accounting transaction is a business event having a monetary impact on the financial statements of a business”।
  • অর্থের মাপকাঠিতে পরিমাপযোগ্য কোনো দ্রব্য বা সেবার আদান-প্রদান দ্বারা কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের আর্থিক অবস্থার পরিবর্তন হলে ঘটনাকে লেনদেম বলে।

কোনো ঘটনাকে লেনদেন হতে হলে তার অবশ্যই নিচের বৈশিষ্ট্যগুলো থাকতে হবে।

লেনদেনের বৈশিষ্ট্য (Features of Transaction)

সকল ঘটনা লেন দেন নয়। কোনো ঘটনাকে লেনদেন হতে হলে নিুলিখিত বৈশিষ্ট্যগুলো থাকতে হবে –

আর্থিক অবস্থার পরিবর্তন (Change in Financial Position)

কোনো ঘটনা লেনদেন হতে হলে অবশ্যই প্রতিষ্ঠানের আর্থিক অবস্থার পরিবর্তন হতে হবে। প্রতিষ্ঠানের দক্ষতা বৃদ্ধিকল্পে একজন গইঅ-কে ব্যবস্থাপক নিযুক্ত করা হল। ঘটনাটি উল্লেখযোগ্য হলেও এর ফলে প্রতিষ্ঠানের আর্থিক অবস্থার কোনো পরিবর্তন হয়নি বিধায় এটি লেনদেন নয়। আর্থিক অবস্থার পরিবর্তন দু’ভাবে হতে পারে

i. পরিমাণগত বা নীট পরিবর্তন (Quantitative or Net Change)

যে পরিবর্তন দ্বারা মোট সম্পত্তি ও মোট ব্যয়ের হ্রাস-বৃদ্ধি ঘটে তাকে পরিমাণগত বা নীট পরিবর্তন বলে। যেমন-ধারে ১০,০০০ টাকার যন্ত্রপাতি ক্রয় করা হলো। এক্ষেত্রে একদিকে ১০,০০০ টাকার সম্পত্তি (যন্ত্রপাতি) বৃদ্ধি পেল। অন্যদিকে ১০,০০০ টাকার দায় (পাওনাদার) বৃদ্ধি পেল।

ii. কাঠামোগত বা গুণগত পরিবর্তন (Structural or Qualitative change)

যে পরিবর্তন দ্বারা মোট সম্পত্তি ও দায়ের পরিমাণ না হয়ে সম্পত্তি ও দায়ের উপাদানগুলোর মধ্যে পরিবর্তন সাধিত হয় তাকে কাঠামোগত বা গুণগত পরিবর্তন বলে। যেমন-দেনাদারের কাছ থেকে ২০,০০০ টাকা আদায় করা হলো। এক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠানের মোট সম্পত্তির পরিবর্তন হবে না। শুধু দেনাদার কমবে এবং নগদ অর্থ বাড়বে।

লেনদেন হিসেবে গণ্য হওয়ার শর্ত হলো অর্থের মাধ্যমে পরিমাপযোগ্য এবং দুইটি পক্ষ থাকতে হবে।

অর্থের মাধ্যমে পরিমাপযোগ্য (Measurable in terms of money)

যে-কোনো ঘটনাকে লেনদেন হতে হলে তা অবশ্যই অর্থের মাপকাঠিতে পরিমাপযোগ্য হতে হবে। পণ্য বিক্রয় করা হল, এটা কোনো লেনদেন হবে না। কিন্তু যদি বলা হয় ২০,০০০ টাকার পণ্য বিক্রয় করা হলো তবে সেটা লেনদেন হবে।

দ্বৈতসত্তা বা দুটোপক্ষ (Dual Aspect)

কোনো ঘটনা লেনদেন হতে হলে ইহা একই সময়ে পৃথক পৃথক অন্তত দুটো পক্ষবা হিসাবখাতকে প্রভাবিত করবে। একে লেনদেনের দ্বৈত সত্তা বলা হয়। যেমন: নগদ টাকায় মেশিন কয় করা হলো। এক্ষেত্রে নগদ একটি এবং মেশিন আর একটি পক্ষবা হিসাব খাত একই সাথে প্রভাবিত হচ্ছে।

স্বয়ংসম্পূর্ণ ও স্বাতন্ত্র্য (Self-sufficient and Independent)

কোনো ঘটনা লেনদেন হতে হলে স্বয়ংসম্পূর্ণ ও স্বতন্ত্র হতে হবে। যেমন, সকালে ধারে বিক্রয় বিকালে টাকা পেলেও দুটো পৃথক ঘটনা হিসেবে দুটি লেনদেন সংঘটিত হয়েছে বলে বিবেচিত হবে। 

দৃশ্যমান বা অদৃশ্যমান ঘটনা

দৃশ্যমান বা অদৃশ্যমান ঘটনা লেনদেন হতে পারে। যেমন- ৫,০০০ টাকায় আসবাবপত্র ক্রয় একটি দৃশ্যমান ঘটনা হিসেবে লেনদেন। আবার ঐ আসবাবপত্র সারা বছর ব্যবহারের জন্য ১০% অবচয় ধার্য হলে তা অদৃশ্যমান ঘটনা হিসেবে লেনদেন হবে।

অতীত বা ভবিষ্যতের ঘটনা (Past and Future Event)

সাধারণত কোনো আর্থিক ঘটনা সংঘটিত হবার পরে একে আমরা লেনদেন বলি এবং হিসাবভুক্ত করি। অর্থাৎ আগে লেনদেনভুক্ত হয় পরেও হিসাব করা হয়। যেমন, ৪০,০০০ টাকার পণ্য ক্রয়। কিন্তু ভবিষ্যতে ঘটতে পারে এমন ঘটনা দ্বারাও আর্থিক অবস্থার পরিবর্তন হতে পারে। তাই ভবিষ্যতে ঘটতে পারে এমন ঘটনাও লেনদেন হতে পারে। যেমন- অনাদায়ী দেনা সঞ্চিতি।

সুতরাং সেই ঘটনাকে লেনদেন বলা হয় যা প্রতিষ্ঠানের আর্থিক অবস্থার পরিবর্তন আনে। অর্থের মাপকাঠিতে পরিমাপযোগ্য, দুই পক্ষের মধ্যে সংঘটিত স্বয়ংসম্পূর্ণ, দৃশ্যমান বা অদৃশ্যমান এবং অতীত বা ভবিষ্যৎ ঘটনা হলো লেনদেন। 

বিষয়:

শেয়ার করুন

2 thoughts on “লেনদেন কাকে বলে এবং লেনদেনের বৈশিষ্ট্য কী কী?

মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার তথ্য সংরক্ষিত রাখুন

তাহসান খান এবং মুনজেরিন শহীদের দুটি প্রফেশনাল কমিউনিকেশন কোর্স করুন ২৮% ছাড়ে
তাহসান খান এবং মুনজেরিন শহীদের দুটি প্রফেশনাল কমিউনিকেশন কোর্স করুন ২৮% ছাড়ে

২৮℅ ছাড় পেতে ৩০/০৬/২০২৪ তারিখের মধ্যে প্রোমো কোড “professional10” ব্যবহার করুন। বিস্তারিত জানতে ও ভর্তি হতে ক্লিক করুন এখানে

লেনদেন কাকে বলে এবং লেনদেনের বৈশিষ্ট্য কী কী?

প্রকাশ: ০১:৩৯:০৬ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১৭ অক্টোবর ২০২১

মানুষের জীবনে প্রতিনিয়ত যে সমস্ত কর্মকাণ্ড ঘটছে তাকে ঘটনা বলে। ঘটনা হলো লেনদেনের ভিত্তি। ঘটনা লেনদেনের ভিত্তি হলেও সকল ঘটনা লেনদেন নয়। যে সমস্ত ঘটনা অর্থ দিয়ে পরিমাপ করা যায়, আর্থিক অবস্থার পরিবর্তন আনে এবং দুটি পক্ষের মধ্যে সংঘটিত হয় তাকে লেনদেন বলে। লেনদেন হিসাবের বইতে নিয়মানুযায়ী লিপিবদ্ধ করাই হিসাববিজ্ঞানের প্রাথমিক ও গুরুত্বপূর্ণ কাজ। এখানে লেনদেন কী বা লেনদেনের সংজ্ঞা এবং লেনদেনের বৈশিষ্ট্য উল্লেখ করা হলো।

লেনদেন ধারণার প্রাসঙ্গিক কিছু কথা

হিসাববিজ্ঞানের প্রধান কাজ ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের আর্থিক লেনদেনসমূহ হিসাবের বইতে সুষ্ঠুভাবে লিপিবদ্ধ করা এবং নির্দিষ্ট সময়ে শেষে কার্যফল ও আর্থিক অবস্থা নির্ণয় করা। হিসাববিজ্ঞানের কার্যক্রম শুরু হয় আর্থিক লেনদেন লিপিবদ্ধ করার মাধ্যমে। লেনদেন হলো হিসাববিজ্ঞানের প্রথম ও প্রধান উপাদান। হিসাবনিকা লেনদেন ছাড়া সম্পাদন করা সম্ভব নয়। সুতরাং লেনদেন সম্পর্কে সম্যক ধারণা অর্জন করা দরকার। লেনদেন সম্পর্কে বিস্তারিত জানার আগে লেনদেন যে ধারণা থেকে এসেছে সে সম্পর্কে অবগত হওয়া প্রয়োজন। লেনদেন হলো কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের আর্থিক ঘটনা। তাই লেনদেন সম্পর্কে জানতে হলে ঘটনা সম্পর্কে ধারণা লাভ করতে হবে।

ঘটনা (Event)

সাধারণভাবে কোনো কিছু সংঘটিত হওয়াকে ঘটনা বলে। মানুষের ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক, রাষ্ট্রীয় ও অর্থনৈতিক জীবনে প্রতিনিয়ত যে সমস্ত কর্মকান্ড সংঘটিত হচ্ছে সেগুলোর প্রতিটি এক একটি ঘটনা। প্রতিনিয়ত যে সমস্ত ঘটনা ঘটছে সেগুলোকে দুইভাগে ভাগ করা যায়।

১. অনার্থিক ঘটনা (Non-monetary Events)

যে সমস্ত ঘটনার সাথে অর্থের সংশিণ্ঢষ্টতা নেই বা যে সমস্ত ঘটনায় মানুষের আর্থিক অবস্থার পরিবর্তন হয় না তাকে অনার্থিক ঘটনা বলা যায়। যেমন খাওয়া, খুমানো, খেলায় জয়লাভ করা, সভায় বক্তৃতা দেওয়া, পণ্যক্রয়ের আদেশ দেওয়া ইত্যাদি।

২. আর্থিক ঘটনা (Monetary Events)

অর্থের সাথে সম্পর্কযুক্ত ঘটনা যা ঘটলে মানুষের আর্থিক অবস্থার পরিবর্তন হয় তাকে আর্থিক ঘটনা বলে। যেমন- কেনাকাটা, ভাড়া প্রদান, বিক্রয় করা ইত্যাদি।

  • হিসাববিজ্ঞানের দৃষ্টিতে যে সমস্ত ঘটনা দ্বারা ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের আর্থিক অবস্থার পরিবর্তন ঘটে সেগুলোই ঘটনা বলে স্বীকৃত। অনার্থিক ঘটনা এখানে প্রযোজ্য নয়।
  • ঘটনা ও লেনদেনের মধ্যে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে। লেনদেনের উৎপত্তি হয় ঘটনা থেকে। ঘটনা সংঘটিত না হলে লেনদেন হতে পারে না। তাই সাধারণভাবে বলা যায় সকল লেনদেনই ঘটনা কিন্তু সকল ঘটনা লেনদেন নয়।

লেনদেন কাকে বলে? (What is Transaction?)

লেনদেন শব্দটির অভিধানগত অর্থ ‘গ্রহণ ও দান’। নেওয়া এবং দেওয়া শব্দ দুটো থেকে লেনদেন শব্দের উৎপত্তি। একে আদান-প্রদানও বলা যায়। অর্থাৎ সাধারণ অর্থে কোনো কিছুর আদান-প্রদানকে লেনদেন বলে। স্নেহ, ভালবাসার আদান-প্রদানকেও লেনদেন বলা চলে।

তবে সাধারণ দেওয়া ও নেওয়া অর্থের লেনদেন আর হিসাববিজ্ঞানের লেনদেন সম্পূর্ণ ভিন্ন বিষয়।

হিসাববিজ্ঞানে লেনদেন শব্দটি বিশেষ অর্থ বহন করে। একটি প্রতিষ্ঠানের দক্ষকর্মকর্তার হঠাৎ মৃত্যু প্রতিষ্ঠানটির জন্য অপরিহার্য ক্ষতি। কিন্তু ক্ষতির পরিমাণ পরিমাপ করা যায় না। এটি প্রতিষ্ঠানটির জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। আবার গুদামে আগুন লেগে ৫০০ টাকা মূল্যের পণ্য নষ্ট হয়ে গেল। এটাও একটি ঘটনা এবং টাকায় পরিমাপ করা যায়। তাছাড়া, প্রতিষ্ঠানটির আর্থিক অবস্থার পরিবর্তনও ঘটেছে। আর একটি ঘটনার কথা আমরা চিন্তা করি।

প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজার মেয়ের বিয়েতে ৫০,০০০ টাকা খরচ করলেন। এটি একটি ঘটনা এবং এটিকে অর্থের মাপকাঠিতে পরিমাপ করা যায়। অর্থাৎ এটি একটি আর্থিক ঘটনা। কিন্তু এতে প্রতিষ্ঠানের আর্থিক অবস্থার পরিবর্তন ঘটছে না। তবে তিনি যদি প্রতিষ্ঠান থেকে এ অর্থ গ্রহণ করেন তাহলে তাতে প্রতিষ্ঠানের আর্থিক অবস্থার পরিবর্তন ঘটছে।

এখানে উল্লেখ্য যে, সকল ঘটনাই লেনদেন নয়। এমনকি সকল আর্থিক ঘটনাও লেনদেন নয়।

  • Accounting Tools ওয়েবসাইট অনুসারে, “An accounting transaction is a business event having a monetary impact on the financial statements of a business”।
  • অর্থের মাপকাঠিতে পরিমাপযোগ্য কোনো দ্রব্য বা সেবার আদান-প্রদান দ্বারা কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের আর্থিক অবস্থার পরিবর্তন হলে ঘটনাকে লেনদেম বলে।

কোনো ঘটনাকে লেনদেন হতে হলে তার অবশ্যই নিচের বৈশিষ্ট্যগুলো থাকতে হবে।

লেনদেনের বৈশিষ্ট্য (Features of Transaction)

সকল ঘটনা লেন দেন নয়। কোনো ঘটনাকে লেনদেন হতে হলে নিুলিখিত বৈশিষ্ট্যগুলো থাকতে হবে –

আর্থিক অবস্থার পরিবর্তন (Change in Financial Position)

কোনো ঘটনা লেনদেন হতে হলে অবশ্যই প্রতিষ্ঠানের আর্থিক অবস্থার পরিবর্তন হতে হবে। প্রতিষ্ঠানের দক্ষতা বৃদ্ধিকল্পে একজন গইঅ-কে ব্যবস্থাপক নিযুক্ত করা হল। ঘটনাটি উল্লেখযোগ্য হলেও এর ফলে প্রতিষ্ঠানের আর্থিক অবস্থার কোনো পরিবর্তন হয়নি বিধায় এটি লেনদেন নয়। আর্থিক অবস্থার পরিবর্তন দু’ভাবে হতে পারে

i. পরিমাণগত বা নীট পরিবর্তন (Quantitative or Net Change)

যে পরিবর্তন দ্বারা মোট সম্পত্তি ও মোট ব্যয়ের হ্রাস-বৃদ্ধি ঘটে তাকে পরিমাণগত বা নীট পরিবর্তন বলে। যেমন-ধারে ১০,০০০ টাকার যন্ত্রপাতি ক্রয় করা হলো। এক্ষেত্রে একদিকে ১০,০০০ টাকার সম্পত্তি (যন্ত্রপাতি) বৃদ্ধি পেল। অন্যদিকে ১০,০০০ টাকার দায় (পাওনাদার) বৃদ্ধি পেল।

ii. কাঠামোগত বা গুণগত পরিবর্তন (Structural or Qualitative change)

যে পরিবর্তন দ্বারা মোট সম্পত্তি ও দায়ের পরিমাণ না হয়ে সম্পত্তি ও দায়ের উপাদানগুলোর মধ্যে পরিবর্তন সাধিত হয় তাকে কাঠামোগত বা গুণগত পরিবর্তন বলে। যেমন-দেনাদারের কাছ থেকে ২০,০০০ টাকা আদায় করা হলো। এক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠানের মোট সম্পত্তির পরিবর্তন হবে না। শুধু দেনাদার কমবে এবং নগদ অর্থ বাড়বে।

লেনদেন হিসেবে গণ্য হওয়ার শর্ত হলো অর্থের মাধ্যমে পরিমাপযোগ্য এবং দুইটি পক্ষ থাকতে হবে।

অর্থের মাধ্যমে পরিমাপযোগ্য (Measurable in terms of money)

যে-কোনো ঘটনাকে লেনদেন হতে হলে তা অবশ্যই অর্থের মাপকাঠিতে পরিমাপযোগ্য হতে হবে। পণ্য বিক্রয় করা হল, এটা কোনো লেনদেন হবে না। কিন্তু যদি বলা হয় ২০,০০০ টাকার পণ্য বিক্রয় করা হলো তবে সেটা লেনদেন হবে।

দ্বৈতসত্তা বা দুটোপক্ষ (Dual Aspect)

কোনো ঘটনা লেনদেন হতে হলে ইহা একই সময়ে পৃথক পৃথক অন্তত দুটো পক্ষবা হিসাবখাতকে প্রভাবিত করবে। একে লেনদেনের দ্বৈত সত্তা বলা হয়। যেমন: নগদ টাকায় মেশিন কয় করা হলো। এক্ষেত্রে নগদ একটি এবং মেশিন আর একটি পক্ষবা হিসাব খাত একই সাথে প্রভাবিত হচ্ছে।

স্বয়ংসম্পূর্ণ ও স্বাতন্ত্র্য (Self-sufficient and Independent)

কোনো ঘটনা লেনদেন হতে হলে স্বয়ংসম্পূর্ণ ও স্বতন্ত্র হতে হবে। যেমন, সকালে ধারে বিক্রয় বিকালে টাকা পেলেও দুটো পৃথক ঘটনা হিসেবে দুটি লেনদেন সংঘটিত হয়েছে বলে বিবেচিত হবে। 

দৃশ্যমান বা অদৃশ্যমান ঘটনা

দৃশ্যমান বা অদৃশ্যমান ঘটনা লেনদেন হতে পারে। যেমন- ৫,০০০ টাকায় আসবাবপত্র ক্রয় একটি দৃশ্যমান ঘটনা হিসেবে লেনদেন। আবার ঐ আসবাবপত্র সারা বছর ব্যবহারের জন্য ১০% অবচয় ধার্য হলে তা অদৃশ্যমান ঘটনা হিসেবে লেনদেন হবে।

অতীত বা ভবিষ্যতের ঘটনা (Past and Future Event)

সাধারণত কোনো আর্থিক ঘটনা সংঘটিত হবার পরে একে আমরা লেনদেন বলি এবং হিসাবভুক্ত করি। অর্থাৎ আগে লেনদেনভুক্ত হয় পরেও হিসাব করা হয়। যেমন, ৪০,০০০ টাকার পণ্য ক্রয়। কিন্তু ভবিষ্যতে ঘটতে পারে এমন ঘটনা দ্বারাও আর্থিক অবস্থার পরিবর্তন হতে পারে। তাই ভবিষ্যতে ঘটতে পারে এমন ঘটনাও লেনদেন হতে পারে। যেমন- অনাদায়ী দেনা সঞ্চিতি।

সুতরাং সেই ঘটনাকে লেনদেন বলা হয় যা প্রতিষ্ঠানের আর্থিক অবস্থার পরিবর্তন আনে। অর্থের মাপকাঠিতে পরিমাপযোগ্য, দুই পক্ষের মধ্যে সংঘটিত স্বয়ংসম্পূর্ণ, দৃশ্যমান বা অদৃশ্যমান এবং অতীত বা ভবিষ্যৎ ঘটনা হলো লেনদেন।