০৭:৪৮ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ
                       

টেলিভিশনে ফিড এবং ক্লিন ফিড কী?

মু. মিজানুর রহমান মিজান
  • প্রকাশ: ০৪:০৩:৫৮ অপরাহ্ন, শনিবার, ২ অক্টোবর ২০২১
  • / ১৪৬৯৩ বার পড়া হয়েছে

টেলিভিশনে ফিড এবং ক্লিন ফিড কী?

ক্লিন ফিড (Clean Feed) ব্যবস্থা না থাকায় বাংলাদেশ সরকার বাংলাদেশে সম্প্রচার কার্যক্রম চালাচ্ছে এমন বিদেশি টেলিভিশন চ্যানেল (Foreign Television Channel) বন্ধ করে দিয়েছে। অক্টোবর ১, ২০২১ তারিখ থেকে ক্লিন ফিড বিহীন কোনো বিদেশি চ্যানেল বাংলাদেশে দেখানো হচ্ছে না। তবে বিদেশি চ্যানেল বাংলাদেশে নিষিদ্ধ করা হয়নি। বাংলাদেশের আইনে রয়েছে বিদেশি বিজ্ঞাপন প্রচার করা যাবে না। ভারত, পাকিস্তান, ব্রিটেনসহ বহু দেশে এই আইন রয়েছেন বলে তিনি উল্লেখ করেন। এই নিবন্ধে ক্লিন ফিড সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো সংক্ষেপে আলোচনা করা হলো।

ফিড কী?

টেলিভিশন (টিভি) প্রযুক্তিতে একটি টিভি স্টেশন থেকে গ্রাহকদের উদ্দেশ্যে যা কিছু সম্প্রচার বা ব্রডকাস্ট করা হয় তা হলো ফিড। টিভি ফিডে মূল কন্টেন্ট সম্প্রচারের পাশাপাশি অতিরিক্ত টেক্সট, ইমেজ বা ভিডিয়ো ব্রডকাস্ট করা হয়ে থাকে, যা সাধারণত বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যেই সম্পাদিত হয়। বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে প্রচারিত টেক্সট, ইমেজ বা ভিডিয়োকে বিজ্ঞাপন বলে চিহ্নিত করা হয়।

ক্লিন ফিড কী?

ক্লিন ফিড মানে হলো টেলিভিশন প্রযুক্তিতে মূল কন্টেন্ট বা ভিডিয়ো প্রচারের পাশাপাশি অতিরিক্ত টেক্সট, ইমেজ বা ভিডিয়ো প্রচার করা থেকে বিরত থাকা। টেলিভিশনে কোনো অতিরিক্ত গ্রাফিক্স, ক্ষেত্রবিশেষে বিজ্ঞাপন, বিহীন কন্টেন্ট সম্প্রচার করার নাম হলো ক্লিন ফিড।

ক্লিন ফিড নীতি কী?

বিশ্বের বেশিরভাগ দেশেই অন্য কোনো দেশের টিভি চ্যানেলের সম্প্রচার কার্যক্রম পরিচালনার অনুমতির ক্ষেত্রে শর্ত দেওয়া হয় যে, টেলিভিশন চ্যানেলটি কোনোভাবেই দেশের দর্শকদের জন্য বিজ্ঞাপন প্রচার করতে পারবে না। এর জন্য আলাদা আইন কিংবা নীতি প্রণয়ন করা হয়। দেশের দর্শকদের জন্য বিদেশি টেলিভিশন চ্যানেলের নিজেদের বা যেই দেশের চ্যানেল সেই দেশের বিজ্ঞাপনমুক্ত সম্প্রচার কার্যক্রমের যে নীতি কোনো দেশ গ্রহণ করে তাকে টেলিভিশন প্রযুক্তির ক্ষেত্রে ক্লিন ফিড নীতি বলে।

বাংলাদেশে ‘কেবল টেলিভিশন নেটওয়ার্ক পরিচালনা আইন, ২০০৬’ এর ১৯ ধারার ১৩ উপধারায় বাংলাদেশের দর্শকদের জন্য বিদেশি কোনো চ্যানেলের মাধ্যমে বিজ্ঞাপন প্রচারে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে।

ক্লিন ফিড মানে কি সত্যিই বিজ্ঞাপনমুক্ত সম্প্রচার কার্যক্রম?

ক্লিন ফিড মানে বিদেশি টিভি চ্যানেলগুলোর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত সম্প্রচার কার্যক্রম, এটি ঠিক আছে। তবে এই ক্ষেত্রে দুইটি প্রধান প্রশ্ন উঠতে পারে-

  • যদি বিদেশি চ্যানেল বিজ্ঞাপন প্রচার করতে না পারে তাহলে তাদের আয় কীভাবে হবে?
  • বিদেশি চ্যানেলে ৩০ মিনিটের একটি অনুষ্ঠানের মধ্যে ২০ মিনিট মূল কন্টেন্ট এবং ১০ মিনিট বিজ্ঞান প্রচার করা হলে, ক্লিন ফিড নীতির কারণে বিজ্ঞাপনের এই ১০ মিনিট সমন্বয় করা হবে কীভাবে?
ক্লিন ফিড মানে কি সত্যিই বিজ্ঞাপনমুক্ত সম্প্রচার কার্যক্রম?

যদি বিদেশি চ্যানেল বিজ্ঞাপন প্রচার করতে না পারে তাহলে তাদের আয় কীভাবে হবে?

টেলিভিশন চ্যানেলগুলোর আয়ের প্রধান উৎস হলো বিজ্ঞাপন। এই বিজ্ঞাপনের রাস্তা বন্ধ হয়ে গেলে তাদের পক্ষে আয় করার সবচেয়ে বড়ো খাতটিই নষ্ট হয়ে। টেলিভিশন চ্যানেলগুলো যেমন নিজেদের চ্যানেলে বিজ্ঞাপন ছাড়া কোনো কিছু সম্প্রচার করতে চায় রাজি নয়, তেমনই কোনো দেশের সরকারও চায় না কোনো চ্যানেলে বিজ্ঞাপন বন্ধ করতে। তাহলে এখানে ‘ক্লিন ফিড’ নীতি দিয়ে কী বোঝানো হচ্ছে? সহজ উত্তর: অন্য দেশের চ্যানেলে ক্লিন ফিড সম্প্রচার মানে হলো ওই দেশের বিজ্ঞাপন না দেখিয়ে নিজ দেশের বিজ্ঞাপন দেখানোর ব্যবস্থা নিশ্চিত করা।

উদাহরণ: যখন কোনো খেলা অনুষ্ঠিত হয় তখন ওই খেলা একই সাথে বিভিন্ন দেশের বিভিন্ন চ্যানেলের মাধ্যমে সম্প্রচার করা হয়। এখান একই খেলা একই সময়ে সম্প্রচারিত হলেও প্রতিটি চ্যানেলে আলাদা বিজ্ঞাপন দেখানো হয়। একই কন্টেন্ট একই সাথে সম্প্রচারিত হবার পরেও প্রতিটি ভিন্ন ভিন্ন চ্যানেল নিজেদের মতো করে বিজ্ঞাপন প্রচার করার সুযোগ পায়, এই ব্যবস্থাটিই হলো টেলিভিশন প্রযুক্তির ক্লিন ফিড পদ্ধতি।

বিদেশি চ্যানেলে ৩০ মিনিটের একটি অনুষ্ঠানের মধ্যে ২০ মিনিট মূল কন্টেন্ট এবং ১০ মিনিট বিজ্ঞান প্রচার করা হলে, ক্লিন ফিড নীতির কারণে বিজ্ঞাপনের এই ১০ মিনিট সমন্বয় করা হবে কীভাবে?

প্রথম প্রশ্নটির উত্তরেই এই প্রশ্নের উত্তর রয়েছে। তবুও সহজ করে বলছি: ধরুন, আপনি ভারতের নিক (Nickelodeon) চ্যানেলে কোনো একটি কার্টুন দেখছেন; এখানে ওই কার্টুন চলাকালে সেখানে যে যে সময়ে এবং যতটুকু সময় ধরে বিজ্ঞাপন দেখানো হয় সে নির্দিষ্ট সময়ে ভারতীয় বিজ্ঞাপন না দেখিয়ে বাংলাদেশের বিজ্ঞাপন দেখানো হবে।

অর্থাৎ, চ্যানেল অন্য দেশের; বিজ্ঞাপন আমাদের দেশের।

বিজ্ঞাপনের জন্য বরাদ্দকৃত ওই ১০ মিনিট (নির্দিষ্ট সময়) চ্যানেল কর্তৃপক্ষ চাইলেই দেশের (চ্যানেলের নিজ দেশের নয় এমন) বিজ্ঞাপন দেখাতে পারে।

অনেক টেলিভিশন কর্তৃপক্ষ বিভিন্ন দেশে ক্লিন ফিড পাঠায় বিজ্ঞাপনের ওই সময়টুকু ফাঁকা রেখে বা নির্ধারিত ওই সময়ে টেলিভিশন বা সামাজিক প্রচারণামূলক বার্তা যুক্ত করে। কোনো টেলিভিশন কর্তৃপক্ষ যদি বাণিজ্যিক দিকটিকে গুরুত্ব না দেয়, তাহলে তারা বিজ্ঞাপনের ওই সময়ে নিজেদের অন্যান্য অনুষ্ঠান সূচি অথবা সামাজিক উন্নয়নমূলক প্রচারণা করতে পারে।

ক্লিন ফিড না থাকলে দেশের কী ধরনের ক্ষতি হয় বা অপকারিতা কী?

সরকার প্রতি বছর মোটা অঙ্কের রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হয়। দেশের বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান বা দেশে ব্যবসায় করছে এমন বিদেশি বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান দেশের চ্যানেলগুলো রেখে বিদেশি চ্যানেলে বিজ্ঞাপন দেখানোর জন্য বেশি আগ্রহী হয় বা বাধ্য হয় যেহেতু বেশিরভাগ সময়ে মানুষ বিভিন্ন কারণে বিদেশি চ্যানেল দেখতে পছন্দ করে। এতে সরকার যেমন রাজস্ব পায় না, তেমনই দেশের টেলিভিশন চ্যানেলগুলোতে বিজ্ঞাপন এবং বিজ্ঞাপন দর কমে যায় যার কারণে চ্যানেলগুলো অস্তিত্ব সংকটে পতিত হয় এবং টেলিভিশন কর্মীদের জীবনমানও ঝুঁকির মধ্যে পড়ে।

ক্লিন ফিড সুবিধা না থাকলে দেশে নিষিদ্ধ, দেশের সংস্কৃতির সাথে সাংঘর্ষিক, অপ্রয়োজনীয় এবং অনাকাঙ্ক্ষিত পণ্য বা পরিষেবার বিজ্ঞাপন মানুষ দেখতে বাধ্য হয়।

ক্লিন ফিড থাকলে দেশের কী ধরনের লাভ হয় বা উপকারিতা কী?

সরকার প্রতি বছর মোটা অঙ্কের রাজস্ব  পায় যার মাধ্যমে দেশের অনেক উন্নয়নমূলক কাজ করা যায়। দেশের বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান বা দেশে ব্যবসায় করছে এমন বিদেশি বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান দেশের চ্যানেলগুলোতে বিজ্ঞাপন দিলেও সেখান থেকে দেশের সরকার রাজস্ব পাবে কারণ এই বিজ্ঞাপন প্রদর্শন ও নিয়ন্ত্রণ করা হবে  দেশ থেকেই।

ক্লিন ফিড সুবিধা না থাকলে দেশে নিষিদ্ধ, দেশের সংস্কৃতির সাথে সাংঘর্ষিক, অপ্রয়োজনীয় এবং অনাকাঙ্ক্ষিত পণ্য বা পরিষেবার বিজ্ঞাপন মানুষ আর দেখবে না।

দেশের টেলিভিশন চ্যানেলগুলোতে বিজ্ঞাপন এবং বিজ্ঞাপন দর বাড়বে কি না সেটি নিয়ে অনুমান না করা গেলেও অন্তত এগুলো একটি সুস্থ ও বৈধ প্রতিযোগিতার মধ্যে থাকবে।

(প্রযুক্তিগত দিক থেকে ক্লিন ফিডকে আরও বিস্তারিতভাবে আলোচনা করা সম্ভব, তবে এখানে সাধারণ দিক এবং পাঠক চাহিদার কথা বিবেচনায় এভাবে আলোচনা করা হলো। আপনি চাইলে বিষয়টির ওপর আরও স্পষ্ট করে লিখতে পারেন এই ওয়েবসাইটের জন্য)

শেয়ার করুন

11 thoughts on “টেলিভিশনে ফিড এবং ক্লিন ফিড কী?

  1. যেসব নাটকের চ্যানেল (হিন্দী অথবা বাংলা ) আছে সেগুলো বন্ধ করে দেওয়া হোক।

  2. দেশীয় সংস্কৃতি রক্ষার সার্থে, এবং দেশের ছায়াছবি, নাটক, ফিল্ম বাঁচাতে হলে বিদেশি নাটক, সিনেমা, সম্প্রচারকারী টিভি চ্যানেল বন্ধ থাকাটাই যুক্তিযুক্ত।

  3. ভাই প্রথম এই ওয়েবসাইটে প্রবেশ করলাম; যা বিশ্লেষণ করলেন তা যথেষ্ট। সত্যিই আমি অনুপ্রাণিত।

  4. বিষয়টি দারুন লেগেছে

    “যখন কোনো খেলা অনুষ্ঠিত হয় তখন ওই খেলা একই সাথে বিভিন্ন দেশের বিভিন্ন চ্যানেলের মাধ্যমে সম্প্রচার করা হয়। এখান একই খেলা একই সময়ে সম্প্রচারিত হলেও প্রতিটি চ্যানেলে আলাদা বিজ্ঞাপন দেখানো হয়। একই কন্টেন্ট একই সাথে সম্প্রচারিত হবার পরেও প্রতিটি ভিন্ন ভিন্ন চ্যানেল নিজেদের মতো করে বিজ্ঞাপন প্রচার করার সুযোগ পায়, এই ব্যবস্থাটিই হলো টেলিভিশন প্রযুক্তির ক্লিন ফিড পদ্ধতি”

  5. আবার কবে থেকে চ্যানেলগুলো সম্প্রচার শুরু করবে? খেলার চ্যানেলগুলো চালু করা উচিৎ।

      1. সরকার যা করেছে ঠিক করেছে। সাধুবাদ জানাই সরকারকে। দেশের স্বার্থে সাময়িক আসুবিধা জনগনকে মেনে নেওয়া উচিৎ।

  6. বিদেশি টেলিভিশন চ্যানেল বাংলাদেশে সম্প্রচার শুরু কবে থেকে?

    1. ক্লিন ফিড যারা পাঠাবে তাদের সম্প্রচার চলবে। ১৭ টি চ্যানেল আগে থেকেই ক্লিন ফিড পাঠাচ্ছে, কারিগরি ত্রুটির কারণে (বা অন্য ইস্যু) আপাতত ওইগুলোও বন্ধ রয়েছে।

মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার তথ্য সংরক্ষিত রাখুন

লেখকতথ্য

মু. মিজানুর রহমান মিজান

মু. মিজানুর রহমান মিজান একজন স্বাধীন শিক্ষামূলক লেখক। তিনি শিক্ষা গবেষণায় বেশ আগ্রহী। যৌথভাবে কিছু গবেষণায়ও অংশ নিয়েছেন।
তাহসান খান এবং মুনজেরিন শহীদের দুটি প্রফেশনাল কমিউনিকেশন কোর্স করুন ২৮% ছাড়ে
তাহসান খান এবং মুনজেরিন শহীদের দুটি প্রফেশনাল কমিউনিকেশন কোর্স করুন ২৮% ছাড়ে

২৮℅ ছাড় পেতে ৩০/০৬/২০২৪ তারিখের মধ্যে প্রোমো কোড “professional10” ব্যবহার করুন। বিস্তারিত জানতে ও ভর্তি হতে ক্লিক করুন এখানে

টেলিভিশনে ফিড এবং ক্লিন ফিড কী?

প্রকাশ: ০৪:০৩:৫৮ অপরাহ্ন, শনিবার, ২ অক্টোবর ২০২১

ক্লিন ফিড (Clean Feed) ব্যবস্থা না থাকায় বাংলাদেশ সরকার বাংলাদেশে সম্প্রচার কার্যক্রম চালাচ্ছে এমন বিদেশি টেলিভিশন চ্যানেল (Foreign Television Channel) বন্ধ করে দিয়েছে। অক্টোবর ১, ২০২১ তারিখ থেকে ক্লিন ফিড বিহীন কোনো বিদেশি চ্যানেল বাংলাদেশে দেখানো হচ্ছে না। তবে বিদেশি চ্যানেল বাংলাদেশে নিষিদ্ধ করা হয়নি। বাংলাদেশের আইনে রয়েছে বিদেশি বিজ্ঞাপন প্রচার করা যাবে না। ভারত, পাকিস্তান, ব্রিটেনসহ বহু দেশে এই আইন রয়েছেন বলে তিনি উল্লেখ করেন। এই নিবন্ধে ক্লিন ফিড সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো সংক্ষেপে আলোচনা করা হলো।

ফিড কী?

টেলিভিশন (টিভি) প্রযুক্তিতে একটি টিভি স্টেশন থেকে গ্রাহকদের উদ্দেশ্যে যা কিছু সম্প্রচার বা ব্রডকাস্ট করা হয় তা হলো ফিড। টিভি ফিডে মূল কন্টেন্ট সম্প্রচারের পাশাপাশি অতিরিক্ত টেক্সট, ইমেজ বা ভিডিয়ো ব্রডকাস্ট করা হয়ে থাকে, যা সাধারণত বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যেই সম্পাদিত হয়। বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে প্রচারিত টেক্সট, ইমেজ বা ভিডিয়োকে বিজ্ঞাপন বলে চিহ্নিত করা হয়।

ক্লিন ফিড কী?

ক্লিন ফিড মানে হলো টেলিভিশন প্রযুক্তিতে মূল কন্টেন্ট বা ভিডিয়ো প্রচারের পাশাপাশি অতিরিক্ত টেক্সট, ইমেজ বা ভিডিয়ো প্রচার করা থেকে বিরত থাকা। টেলিভিশনে কোনো অতিরিক্ত গ্রাফিক্স, ক্ষেত্রবিশেষে বিজ্ঞাপন, বিহীন কন্টেন্ট সম্প্রচার করার নাম হলো ক্লিন ফিড।

ক্লিন ফিড নীতি কী?

বিশ্বের বেশিরভাগ দেশেই অন্য কোনো দেশের টিভি চ্যানেলের সম্প্রচার কার্যক্রম পরিচালনার অনুমতির ক্ষেত্রে শর্ত দেওয়া হয় যে, টেলিভিশন চ্যানেলটি কোনোভাবেই দেশের দর্শকদের জন্য বিজ্ঞাপন প্রচার করতে পারবে না। এর জন্য আলাদা আইন কিংবা নীতি প্রণয়ন করা হয়। দেশের দর্শকদের জন্য বিদেশি টেলিভিশন চ্যানেলের নিজেদের বা যেই দেশের চ্যানেল সেই দেশের বিজ্ঞাপনমুক্ত সম্প্রচার কার্যক্রমের যে নীতি কোনো দেশ গ্রহণ করে তাকে টেলিভিশন প্রযুক্তির ক্ষেত্রে ক্লিন ফিড নীতি বলে।

বাংলাদেশে ‘কেবল টেলিভিশন নেটওয়ার্ক পরিচালনা আইন, ২০০৬’ এর ১৯ ধারার ১৩ উপধারায় বাংলাদেশের দর্শকদের জন্য বিদেশি কোনো চ্যানেলের মাধ্যমে বিজ্ঞাপন প্রচারে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে।

ক্লিন ফিড মানে কি সত্যিই বিজ্ঞাপনমুক্ত সম্প্রচার কার্যক্রম?

ক্লিন ফিড মানে বিদেশি টিভি চ্যানেলগুলোর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত সম্প্রচার কার্যক্রম, এটি ঠিক আছে। তবে এই ক্ষেত্রে দুইটি প্রধান প্রশ্ন উঠতে পারে-

  • যদি বিদেশি চ্যানেল বিজ্ঞাপন প্রচার করতে না পারে তাহলে তাদের আয় কীভাবে হবে?
  • বিদেশি চ্যানেলে ৩০ মিনিটের একটি অনুষ্ঠানের মধ্যে ২০ মিনিট মূল কন্টেন্ট এবং ১০ মিনিট বিজ্ঞান প্রচার করা হলে, ক্লিন ফিড নীতির কারণে বিজ্ঞাপনের এই ১০ মিনিট সমন্বয় করা হবে কীভাবে?
ক্লিন ফিড মানে কি সত্যিই বিজ্ঞাপনমুক্ত সম্প্রচার কার্যক্রম?

যদি বিদেশি চ্যানেল বিজ্ঞাপন প্রচার করতে না পারে তাহলে তাদের আয় কীভাবে হবে?

টেলিভিশন চ্যানেলগুলোর আয়ের প্রধান উৎস হলো বিজ্ঞাপন। এই বিজ্ঞাপনের রাস্তা বন্ধ হয়ে গেলে তাদের পক্ষে আয় করার সবচেয়ে বড়ো খাতটিই নষ্ট হয়ে। টেলিভিশন চ্যানেলগুলো যেমন নিজেদের চ্যানেলে বিজ্ঞাপন ছাড়া কোনো কিছু সম্প্রচার করতে চায় রাজি নয়, তেমনই কোনো দেশের সরকারও চায় না কোনো চ্যানেলে বিজ্ঞাপন বন্ধ করতে। তাহলে এখানে ‘ক্লিন ফিড’ নীতি দিয়ে কী বোঝানো হচ্ছে? সহজ উত্তর: অন্য দেশের চ্যানেলে ক্লিন ফিড সম্প্রচার মানে হলো ওই দেশের বিজ্ঞাপন না দেখিয়ে নিজ দেশের বিজ্ঞাপন দেখানোর ব্যবস্থা নিশ্চিত করা।

উদাহরণ: যখন কোনো খেলা অনুষ্ঠিত হয় তখন ওই খেলা একই সাথে বিভিন্ন দেশের বিভিন্ন চ্যানেলের মাধ্যমে সম্প্রচার করা হয়। এখান একই খেলা একই সময়ে সম্প্রচারিত হলেও প্রতিটি চ্যানেলে আলাদা বিজ্ঞাপন দেখানো হয়। একই কন্টেন্ট একই সাথে সম্প্রচারিত হবার পরেও প্রতিটি ভিন্ন ভিন্ন চ্যানেল নিজেদের মতো করে বিজ্ঞাপন প্রচার করার সুযোগ পায়, এই ব্যবস্থাটিই হলো টেলিভিশন প্রযুক্তির ক্লিন ফিড পদ্ধতি।

বিদেশি চ্যানেলে ৩০ মিনিটের একটি অনুষ্ঠানের মধ্যে ২০ মিনিট মূল কন্টেন্ট এবং ১০ মিনিট বিজ্ঞান প্রচার করা হলে, ক্লিন ফিড নীতির কারণে বিজ্ঞাপনের এই ১০ মিনিট সমন্বয় করা হবে কীভাবে?

প্রথম প্রশ্নটির উত্তরেই এই প্রশ্নের উত্তর রয়েছে। তবুও সহজ করে বলছি: ধরুন, আপনি ভারতের নিক (Nickelodeon) চ্যানেলে কোনো একটি কার্টুন দেখছেন; এখানে ওই কার্টুন চলাকালে সেখানে যে যে সময়ে এবং যতটুকু সময় ধরে বিজ্ঞাপন দেখানো হয় সে নির্দিষ্ট সময়ে ভারতীয় বিজ্ঞাপন না দেখিয়ে বাংলাদেশের বিজ্ঞাপন দেখানো হবে।

অর্থাৎ, চ্যানেল অন্য দেশের; বিজ্ঞাপন আমাদের দেশের।

বিজ্ঞাপনের জন্য বরাদ্দকৃত ওই ১০ মিনিট (নির্দিষ্ট সময়) চ্যানেল কর্তৃপক্ষ চাইলেই দেশের (চ্যানেলের নিজ দেশের নয় এমন) বিজ্ঞাপন দেখাতে পারে।

অনেক টেলিভিশন কর্তৃপক্ষ বিভিন্ন দেশে ক্লিন ফিড পাঠায় বিজ্ঞাপনের ওই সময়টুকু ফাঁকা রেখে বা নির্ধারিত ওই সময়ে টেলিভিশন বা সামাজিক প্রচারণামূলক বার্তা যুক্ত করে। কোনো টেলিভিশন কর্তৃপক্ষ যদি বাণিজ্যিক দিকটিকে গুরুত্ব না দেয়, তাহলে তারা বিজ্ঞাপনের ওই সময়ে নিজেদের অন্যান্য অনুষ্ঠান সূচি অথবা সামাজিক উন্নয়নমূলক প্রচারণা করতে পারে।

ক্লিন ফিড না থাকলে দেশের কী ধরনের ক্ষতি হয় বা অপকারিতা কী?

সরকার প্রতি বছর মোটা অঙ্কের রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হয়। দেশের বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান বা দেশে ব্যবসায় করছে এমন বিদেশি বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান দেশের চ্যানেলগুলো রেখে বিদেশি চ্যানেলে বিজ্ঞাপন দেখানোর জন্য বেশি আগ্রহী হয় বা বাধ্য হয় যেহেতু বেশিরভাগ সময়ে মানুষ বিভিন্ন কারণে বিদেশি চ্যানেল দেখতে পছন্দ করে। এতে সরকার যেমন রাজস্ব পায় না, তেমনই দেশের টেলিভিশন চ্যানেলগুলোতে বিজ্ঞাপন এবং বিজ্ঞাপন দর কমে যায় যার কারণে চ্যানেলগুলো অস্তিত্ব সংকটে পতিত হয় এবং টেলিভিশন কর্মীদের জীবনমানও ঝুঁকির মধ্যে পড়ে।

ক্লিন ফিড সুবিধা না থাকলে দেশে নিষিদ্ধ, দেশের সংস্কৃতির সাথে সাংঘর্ষিক, অপ্রয়োজনীয় এবং অনাকাঙ্ক্ষিত পণ্য বা পরিষেবার বিজ্ঞাপন মানুষ দেখতে বাধ্য হয়।

ক্লিন ফিড থাকলে দেশের কী ধরনের লাভ হয় বা উপকারিতা কী?

সরকার প্রতি বছর মোটা অঙ্কের রাজস্ব  পায় যার মাধ্যমে দেশের অনেক উন্নয়নমূলক কাজ করা যায়। দেশের বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান বা দেশে ব্যবসায় করছে এমন বিদেশি বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান দেশের চ্যানেলগুলোতে বিজ্ঞাপন দিলেও সেখান থেকে দেশের সরকার রাজস্ব পাবে কারণ এই বিজ্ঞাপন প্রদর্শন ও নিয়ন্ত্রণ করা হবে  দেশ থেকেই।

ক্লিন ফিড সুবিধা না থাকলে দেশে নিষিদ্ধ, দেশের সংস্কৃতির সাথে সাংঘর্ষিক, অপ্রয়োজনীয় এবং অনাকাঙ্ক্ষিত পণ্য বা পরিষেবার বিজ্ঞাপন মানুষ আর দেখবে না।

দেশের টেলিভিশন চ্যানেলগুলোতে বিজ্ঞাপন এবং বিজ্ঞাপন দর বাড়বে কি না সেটি নিয়ে অনুমান না করা গেলেও অন্তত এগুলো একটি সুস্থ ও বৈধ প্রতিযোগিতার মধ্যে থাকবে।

(প্রযুক্তিগত দিক থেকে ক্লিন ফিডকে আরও বিস্তারিতভাবে আলোচনা করা সম্ভব, তবে এখানে সাধারণ দিক এবং পাঠক চাহিদার কথা বিবেচনায় এভাবে আলোচনা করা হলো। আপনি চাইলে বিষয়টির ওপর আরও স্পষ্ট করে লিখতে পারেন এই ওয়েবসাইটের জন্য)