শুক্রবার, জুন ৯, ২০২৩

বয়ঃসন্ধিকাল কাকে বলে? বয়ঃসন্ধিকালে পরিবর্তন ও পরিবর্তিত পরিস্থিতির সাথে খাপ খাওয়ানোর উপায় কী?

মেয়েদের বয়ঃসন্ধিকাল ১০/১১ বছর থেকে ১৮/১৯ বছর পর্যন্ত এবং ছেলেদের বয়ঃসন্ধিকাল ১২/১৩ বছর হতে ১৮/১৯ বছর পর্যন্ত স্থায়ী হয়।

মানুষের জীবন বিকাশের বিভিন্ন বয়সভিত্তিক পর্যায় বা সময়কাল আছে। বিজ্ঞানীরা এ পর্যায়গুলোকে ভিন্ন ভিন্ন নামে ভাগ করেছেন বা অভিহিত করেছেন। এই ভাগগুলো হলো- শৈশবকাল, বাল্যকাল, কৈশোরকাল, যৌবনকাল, প্রৌঢ়ত্ব, বার্ধক্য ইত্যাদি। এদের মধ্যে মূলত কৈশোরকালের একটি বড়ো অংশকে বয়ঃসন্ধিকাল (puberty) বলা হয়।

বয়ঃসন্ধিকাল কী?

জীবনের যে পর্যায়ে একটি শিশু একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ হয়ে ওঠে এবং তার মধ্যে প্রজনন ক্ষমতা তৈরি হয় তাকে বয়ঃসন্ধিকাল বলে। বয়ঃসন্ধিকালে মেয়েদের কিশোরী এবং ছেলেদের কিশোর বলা হয়। মেয়েদের বয়ঃসন্ধিকাল ছেলেদের তুলনায় আগে শুরু হয়। মেয়েদের বয়ঃসন্ধিকাল ১০/১১ বছর থেকে ১৮/১৯ বছর পর্যন্ত এবং ছেলেদের বয়ঃসন্ধিকাল ১২/১৩ বছর হতে ১৮/১৯ বছর পর্যন্ত স্থায়ী হয়।

বয়ঃসন্ধিকালের পরিবর্তন

বিকাশমূলক কিছু বৈশিষ্ট্য ও পরিবর্তনের কারণে বয়ঃসন্ধিকাল জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ পর্যায়। এটি এমন একটি পর্যায় যখন শৈশবের শেষ পর্যায় এবং যৌবনের শুরুর একটি ক্রান্তিকাল অতিক্রম করতে হয়। বয়ঃসন্ধিতে কিশোর-কিশোরীদের মাঝে উল্লেখযোগ্য কিছু পরিবর্তন চোখে পড়ে।

বয়ঃসন্ধিকালে যে সব পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায়, সেগুলো হলো:

  • ১. শারীরিক পরিবর্তন
  • ২. মানসিক পরিবর্তন
  • ৩. আচরণিক পরিবর্তন

১. শারীরিক পরিবর্তন

বয়ঃসন্ধিকালে ছেলে মেয়েরা আকস্মিক কিছু দৈহিক পরিবর্তনের মুখোমুখি হয়। ছেলে এবং মেয়েদের মধ্যে এ পরিবর্তনগুলো আলাদা হয়।

বয়ঃসন্ধিকালে কিশোরদের শারীরিক পরিবর্তন

বয়ঃসন্ধিকালে কিশোরদের শারীরিক পরিবর্তনগুলো হলো:

  • উচ্চতা ও ওজন বৃদ্ধি পায়।
  • পেশি দৃঢ় হয়, বুক ও কাঁধ চওড়া হয়।
  • দাড়ি, গোঁফ গজায়।
  • গলার স্বর ভাঙ্গে ও স্বর ভারী হয়।
  • বীর্যপাত ঘটে।
মেয়েদের বয়ঃসন্ধিকাল ১০/১১ বছর থেকে ১৮/১৯ বছর পর্যন্ত এবং ছেলেদের বয়ঃসন্ধিকাল ১২/১৩ বছর হতে ১৮/১৯ বছর পর্যন্ত স্থায়ী হয়।
মেয়েদের বয়ঃসন্ধিকাল ১০/১১ বছর থেকে ১৮/১৯ বছর পর্যন্ত এবং ছেলেদের বয়ঃসন্ধিকাল ১২/১৩ বছর হতে ১৮/১৯ বছর পর্যন্ত স্থায়ী হয়।

বয়ঃসন্ধিকালে কিশোরীদের শারীরিক পরিবর্তন

বয়ঃসন্ধিকালে কিশোরীদের শারীরিক পরিবর্তনগুলো হলো:

  • উচ্চতা ও ওজন বৃদ্ধি পায়।
  • শরীর ভারী হয়, হাড় চওড়া ও দৃঢ় হয়।
  • দেহে চর্বির আধিক্য হতে পারে।
  • ঋতুস্রাব শুরু হয়।
  • রক্তস্বল্পতা হতে পারে।

ব্যক্তি বিশেষে এসব পরিবর্তন আগে বা পরে হতে পারে। পরিবর্তনের পরিমাণ এবং অনুপাতও একেক জনের ক্ষেত্রে একেক রকম হতে পারে। এ সময় দেহ অভ্যন্তরের বিভিন্ন গ্রন্থি হতে হরমোন নিঃসরণ শুরু হয় বলেই পরিবর্তনগুলো ঘটে।

কোন হরমোনের কারণে বয়ঃসন্ধিকালে শারীরিক ও মানসিক পরিবর্তন হয়?

মেয়েদের শারীরিক ও মানসিক পরিবর্তনের জন্য এস্ট্রোজেন (Estrogen or oestrogen) ও প্রজেস্টেরন (Progesterone) হরমোন দুইটি এবং ছেলের শারীরিক ও মানসিক পরিবর্তনের জন্য টেস্টোস্টেরন (Testosterone) হরমোন (একটি) কাজ করে।

২. বয়ঃসন্ধিকালে মানসিক পরিবর্তন

বয়ঃসন্ধিকালে ছেলেমেয়েরা যৌন ক্ষমতা অর্জন করে। দেহের আকস্মিক পরিবর্তন তার মনোজগতের ওপর ব্যাপক প্রভাব ফেলে। তাই, কিশোর-কিশোরীদের মনে এক ধরনের আলোড়ন সৃষ্টি হয়।

বয়ঃসন্ধিতে মানসিক পরিবর্তনগুলো হলো:

  • অজানাকে জানার আগ্রহ তৈরি হয়।
  • আকস্মিক শারীরিক পরিবর্তনের কারণে দ্বিধা-দ্বন্দ্ব ও লজ্জা কাজ করে।
  • স্বাধীনভাবে চলাফেরার আকাঙ্ক্ষা তৈরি হয়।
  • আপনজনদের কাছে স্নেহ ও ভালোবাসা পাওয়ার তীব্র ইচ্ছা জন্মে।
  • সহজেই আবেগতাড়িত হয়।
  • মানসিক পরিপক্বতা হতে শুরু করে।

৩. আচরণিক পরিবর্তন

বয়ঃসন্ধিকালে আশেপাশের পরিচিত বা অপরিচিত মানুষ হঠাৎ করেই কিশোর-কিশোরীদের বড়ো ভাবতে শুরু করে। আবার, একই সঙ্গে বড়োদের মতো আচরণ করলে সেটাও ভালো চোখে দেখে না; পাকামি বলে মনে করে। বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তাই এ সময়কে ‘বিপত্তি’ বলে আখ্যা দিয়েছেন।

বয়ঃসন্ধিকালে হঠাৎ করেই নিজের মধ্যে নতুন নতুন পরিবর্তনের কারণে তাদের আচরণেও পরিবর্তন সাধিত হয়, যেমন:

  • এ সময় কিশোর-কিশোরীরা বড়োদের মতো আচরণ করতে চায়।
  • নিজেকে স্বতন্ত্র পরিচয়ে প্রকাশ করতে চায়।
  • নিজস্ব মতামত প্রতিষ্ঠা করার চেষ্টা করে।
  • আবেগময় আচরণ করে।
  • বীরত্বপূর্ণ ও ঝুঁকিপূর্ণ কাজে আগ্রহ বাড়ে ইত্যাদি।

বয়ঃসন্ধিকালে খানিকটা আকস্মিকভাবেই কিশোর কিশোরীদের জীবনে পরিবর্তন আসে। একই সঙ্গে শারীরিক ও মানসিক পরিবর্তনের সাথে অভ্যস্ত হতে হয়। উপরন্তু, পারিবারিক ও সামাজিকভাবেও তারা ভিন্ন রকম পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়। কারণ শৈশবের শেষে এবং যৌবনের প্রারম্ভের এই সময়টাতে পরিবার ও সমাজ তাদের কাছে অধিকাংশ ক্ষেত্রে কোনো সুস্পষ্ট আচরণ প্রত্যাশা করে না। কখনো কখনো তাদের থেকে বালক-বালিকার মত আচরণ প্রত্যাশা করে আবার কখনও প্রাপ্তবয়স্ক কোনো ব্যক্তির মতো পরিপক্বতা আশা করে। এ ধরনের পরিস্থিতিতে তারা প্রায়শই মানসিক চাপের মধ্যে পড়ে। শারীরিক, মানসিক, আচরণিক, সামাজিক, পারিবারিক এ পরিবর্তনের সাথে তাদের পরিচয় না থাকায় তারা অনেক সময় আতংকিত ও বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে। অনেকে বিরক্তি প্রকাশ করে ও খিটখিটে মেজাজের হয়ে যায়। আবার প্রত্যাশা পূরণ করতে না পারলে অপরাধবোধ জন্মে। এ অবস্থায় তারা মানসিক চাপের সম্মুখীন হয়। এতে তাদের পড়াশোনা ও নিজস্ব কাজ বিঘ্নিত হতে পারে। আবার অনেকে শারীরিক পরিবর্তনসমূহের কারণে কুণ্ঠিত ও দ্বিধাগ্রস্থ থাকে। সমাজ থেকে নিজেকে দূরে বা আড়ালে রাখতে চেষ্টা করে। সব কিছু মিলিয়ে বয়ঃসন্ধিকালে কিশোর-কিশোরীরা জীবনের এক নতুন ও অপরিচিত পর্যায়ে প্রবেশ করে।

বয়ঃসন্ধিকালে সংঘটিত পরিবর্তিত পরিস্থিতির সাথে খাপ খাওয়ানোর উপায়

বয়ঃসন্ধিকালে খাপ খাওয়ানো বয়ঃসন্ধিকালে সংঘটিত পরিবর্তনসমূহ জীবনের অত্যন্ত স্বাভাবিক কিছু ঘটনা। এ সম্পর্কে সঠিক তথ্য ও করণীয় সম্পর্কে জানা থাকলে এ বিশেষ সময়কাল বা পর্যায়কে সহজভাবে গ্রহণ করা সম্ভব হয়। এ সম্পর্কে জ্ঞান থাকলে মানসিক প্রস্তুতি নেয়া যায়। এতে স্বাভাবিক জীবনযাপন ব্যাহত হয় না।

বয়ঃসন্ধিকালের যাবতীয় পরিবর্তন ও পরিবর্তিত পরিস্থিতির সাথে খাপ খাওয়ানোর জন্য করণীয়গুলো হলো:

  • মা-বাবা, বড়ো ভাই-বোন বা কাছের মানুষের সাথে আলোচনা করে উদ্ভূত পরিস্থিতি মোকাবেলার জন্য পরামর্শ ও সাহায্য নেয়া যেতে পারে। এতে প্রাথমিক সংকোচ কেটে যাবে এবং পরিবর্তনসমূহকে স্বাভাবিকভাবে গ্রহণ করার মানসিকতা তৈরি হবে।
  • বয়ঃসন্ধিতে তীব্র আবেগ কাজ করে। অভিভাবকদেরও এ ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে। পরিবার আত্মীয়-স্বজনদেরও সহযোগিতা প্রদান করতে হবে। সেই সাথে কিশোর-কিশোরীদেরও নিজের আবেগ ও খিটখিটেভাব নিয়ন্ত্রণে রাখার চেষ্টা করতে হবে।
  • বয়ঃসন্ধিকাল এমন একটা সময় যে সময় কিশোর-কিশোরীরা সহজেই অসৎ সঙ্গে জড়িয়ে যেতে পারে। কারণ এ সময় পরিবারের মানুষের চেয়ে অনেকসময় পরিচিত অপরিচিত বন্ধু-বান্ধবকে বেশি বিশ্বাসযোগ্য মনে হয়। তাই, নিজেকে সঠিক ও সুন্দরভাবে চালিত করার জন্য ভালো ভালো বই পড়া, গান শোনা, সিনেমা দেখা, বিভিন্ন ধরনের খেলাধুলা করার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে। এতে মন প্রফুল্ল থাকবে ও মানসিক চাপ প্রশমিত হবে।

For all latest articles, follow on Google News

বাংলাদেশি বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানসমূহের মধ্য থেকে 'বিশ্লেষণ'-এর জন্য স্পনসরশিপ খোঁজা হচ্ছে। আগ্রহীদের যোগাযোগ করার জন্য অনুরোধ করা হলো। ইমেইল: contact.bishleshon@gmail.com

এ বিষয়ের আরও নিবন্ধ
আরও পড়তে পারেন

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here