০৫:৪৩ অপরাহ্ন, শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
                       

অর্থায়ন বা ফিন্যান্স কী? অর্থায়নের সংজ্ঞা, ধারণা ও শ্রেণিবিভাগ আলোচনা

আহমেদ মিন্টো
  • প্রকাশ: ০১:৫২:১৫ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১১ সেপ্টেম্বর ২০২১
  • / ২৪৭৬৮ বার পড়া হয়েছে

অর্থায়ন কেন গুরুত্বপূর্ণ?

একটি ব্যবসায়- প্রতিষ্ঠান গঠন ও পরিচালনার জন্য কি পরিমাণ মুলধন প্রয়োজন, মূলধন সংগ্রহের জন্যে সুবিধাজনক উৎস চিহ্নিত করণ ও উপযুক্ত সময়ে অর্থ সংগ্রহ, সংগৃহীত অর্থ লাভজনক খাতে বিনিয়োগ নিশ্চিত করণ ও অর্থের আগমন নির্গমন নিয়ন্ত্রের মাধ্যমে অর্থের ব্যবহার নিশ্চিত করে ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানের লক্ষ্য অর্জনের সামগ্রিক প্রচেষ্ঠাকে অর্থায়ন বা ফিন্যান্স (Finance)  বলে।

অর্থায়নের ধারণা

অর্থায়ন প্রক্রিয়া ব্যবসায়ী ও অব্যবসায়ী সকল প্রতিষ্ঠানের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। অর্থায়ন হলো অর্থনীতির একটি গুরুত্বপূর্ণ শাখা। অর্থায়ন অর্থ ও আর্থিক বাজার সম্পর্কিত বিষয় নিয়ে কাজ করে। সম্পদ সংগ্রহ, তহবিল ব্যবস্থাপনা, বণ্টন ও তহবিল বিনিয়োগের মতো কাজ অর্থায়নের আওতাভুক্ত।

একটি ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান সঠিকভাবে পরিচালনার জন্য কী পরিমাণ মূলধন প্রয়োজন, আয়ের উৎস নির্ধারণ, অপেক্ষাকৃত কম ব্যয়ের খাত চিহ্নিতকরণ, কোনো নির্দিষ্টি পরিমাণের অর্থ সংগ্রহের পর তা কোন খাতে বা প্রকল্পে কী পরিমাণে বিনিয়োগ করলে তা থেকে কেমন ফলাফল পাওয়া যেতে পারে বা ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানের সর্বোচ্চ মুনাফা অর্জন ও সম্পদ সর্বাধিকরণ সম্ভবপর হবে, সে সকল বিষয়ের কর্ম পরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন কর্মপ্রচেষ্টা কে অর্থায়ন বলা হয়। এই কারণেই অর্থায়নকে ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানের চালিকা শক্তি বা জীবনী শক্তি (life blood) বলা হয়। অর্থায়ন বলতে কম ব্যয়ের উৎস হতে তহবিল সংগ্রহ এবং এর ব্যবহার সংক্রান্ত কার্যাবলিকে বোঝায়।

অর্থায়নের ধারণাকে আমরা ব্যবসায়ের প্রকারভেদ, যেমন- এক মালিকানা, অংশিদারি, যৌথমূলধনী ব্যবসায়, পারিবারিক কিংবা সেবা ধর্মী প্রতিষ্ঠান যেমন- হাসপাতাল ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ইত্যাদি দৃষ্টিকোণ থেকে আলোচনা করতে পারি।

অর্থায়নের সংজ্ঞা

ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার জন্য কি পরিমাণ মূলধন প্রয়োজন, কোন কোন উৎস হতে মূলধন সংগ্রহ করা হলে ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানের জন্য লাভজনক এবং কোন প্রকল্প বা সম্পদে বিনিয়োগ করলে ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানের সবচেয়ে বেশি লাভজনক হবে, সে সকল বিষয়ের কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের যে কার্যাবলী তাকেই অর্থায়ন বলে (তাজুল ইসলাম ও মো. মিজানুর রহমান)।

নিচে অর্থায়নের কতিপয় সংজ্ঞা উল্লেখ করা হলো:

  • আর. এ. স্টিভেনসন (R. A. Stevenson) এর মতে “অর্থায়ন বলতে সেই উপায়কে বুঝায় যার মাধ্যমে তহবিল সংগ্রহ করা যায় এবং তহবিলের ব্যবস্থাপনা ও বন্টন সম্ভবপর হয়।”
  • শ্যাল ও হ্যালির (Schall and Halley) মতে, “ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান ও সরকারের মাধ্যমে অর্থ সংগ্রহ ও এর ব্যবহারের সাথে সংশ্লিষ্ট বিষয়, নীতিমালা ও তত্ত্বাবলিসমূহকে অর্থায়ন বলে।’
  • লরেন্স জে. গিটম্যানের (Lawrence J. Gitman) মতে “অর্থায়ন হলো অর্থ ব্যবস্থাপনার বিজ্ঞান ও কলা। এটি বিভিন্ন ব্যক্তি, ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানসমূহ এবং সরকারর মধ্যে অর্থ হস্তান্তর তথা আর্থিক লেনদেনের সাথে সংশ্লিষ্ট প্রক্রিয়া, প্রতিষ্ঠান, বাজার ও আর্থিক হাতিয়ারের সাথে সম্পৃক্ত।”

অর্থায়নের শ্রেণি বিভাগ

অর্থায়ন বা ফিন্যান্সকে বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে শ্রেণিবিভাগ করা সম্ভব। কারণ অর্থায়ন ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক, ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান ও রাষ্ট্রীয় কাজকর্মে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করে। প্রতিষ্ঠানের ধরন অনুযায়ী অর্থায়ন বিভিন্ন রকম হয়ে থাকে।

অর্থায়নের ৫ টি শ্রেণিবিভাগ হলো: i. পারিবারিক অর্থায়ন, ii. সরকারি অর্থায়ন. iii. অব্যবসায়ি প্রতিষ্ঠানের অর্থায়ন, iv. ব্যবসায় অর্থায়ন এবং v. আন্তর্জাতিক অর্থায়ন।

নিচে অর্থায়নের শ্রেণিবিভাগ আলোচনা করা হলো:

i. পারিবারিক অর্থায়ন

পরিবারের আয়ের উৎস ও পরিমাণ নির্ধারণ করা এবং সেই আয় কীভাবে ব্যয় করলে পরিবারেরর সদস্যদের সার্বিক কল্যাণ হয় তা নির্ধারণ করার প্রক্রিয়াকে পারিবারিক অর্থায়ন বলা হয়।

পরিবারের প্রয়োজন মেটানোর জন্য সংগ্রহীত তহবিল সীমিত হওয়ার কারণে এর উপযুক্ত ব্যবহার নিশ্চিত করা একান্ত প্রয়োজন। যদি দেখা যায় পরিবারের আয় ও সংগৃহীত তহবিল প্রয়োজনীয় ব্যয়ের তুলনায় অধিক, সেক্ষেত্রে ওই অতিরিক্ত তহবিল ভবিষ্যতে ব্যবহারের জন্য সঞ্চয় করা হয় বা অন্য কোন সম্পদে বিনিয়োগ করা হয়। আর যদি আয়ের চেয়ে ব্যয়ের খাত কোনো সময় কোনোক্রমে বড়ো বা বেশি হয় তাহলে অর্থ সংগ্রহের জন্য ঋণের প্রয়োজন হয়। অনেক পরিবারের ক্ষেত্রে দেখা যায়, ঋণ না করে বরং নির্দিষ্ট চাহিদা বা প্রয়োজন মেটানো থেকে বিরত থাকে যদি সম্ভব হয়।

ii. সরকারি অর্থায়ন

সরকারের বার্ষিক আয় কোন উৎস হতে কী পরিমাণ সংগ্রহ করা হবে এবং বার্ষিক ব্যয় কোন খাতে কী পরিমাণে করা হবে তা নির্ধারণ করাকে সরকারি অর্থায়ন বুঝায়।

প্রতিটি সরকারের একটি সুনির্দিষ্ট অর্থ ব্যবস্থাপনা আছে। সরকারের আয়ের ও ব্যয়ের বিভিন্ন খাত রয়েছে। সরকারি অর্থায়নে প্রথমে ব্যয়ের পরিমাণ নির্ধারণ করা হয় এবং সে অনুযায়ী বিভিন্ন উৎস থেকে তহবিল সংগ্রহ করা হয়। সরকারি অর্থায়নে ক্ষেত্রে বিভিন্ন আয়ের ও ব্যয়ের খাত বাজেটের মাধ্যমে সুনির্দিষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়।

যখন সরকারি অর্থায়নের ক্ষেত্রে আয় অপেক্ষা ব্যয় বেশি হয় তখন তাকে ঘাটতি বাজেট বলে। আবার সরকারি অর্থায়নের ক্ষেত্রে ব্যয় অপেক্ষা আয় বেশি হয় তখন তাকে তখন তাকে উদ্ধৃত্ত বাজেট বলে।

সরকারি অর্থায়নের মূল লক্ষ্য হলো সমাজকল্যাণ। একটি দেশের সরকারকে দেশের সার্বিক উন্নয়নে সাধারণত সরকারি অর্থায়ন অলাভজনক হয়ে থাকে কারণ সরকারি অর্থ উন্নয়নমূলক কর্মকান্ডে ব্যয় করা হয়। সরকারি অর্থায়নের ব্যয়, আয় অপেক্ষা বেশি হতে পারে। সরকারি মালিকানার বেশ কিছু ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান থাকে, যা অপেক্ষা কম লাভজনকও হতে পারে। যদি সরকারের বাজেট হতে সম্পূর্ণ অর্থের সংস্থান করা হয় তাহলে অনেক সময় সরকারের সামজিক ও রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তাজনিত ব্যয়ের জন্য অর্থের সংকট সৃষ্টি হতে পারে, তাই সরকারকে বিভিন্ন উৎস হতে বৈদেশিক ঋণ গ্রহণ করতে হয়। বর্তমানে সরকারি বেসরকারি যৌথ অংশীদারত্ব বা পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপ (Public Private Partnership – PPP) এর মাধ্যমেও সরকারি বড়ো বড়ো প্রকল্পে অর্থায়ন করা হয়।

iii. অব্যবসায়ি প্রতিষ্ঠানের অর্থায়ন

যে সকল প্রতিষ্ঠান মানব কল্যাণ, দরিদ্র এবং বঞ্চিত মানুষের সেবায় নিয়োজিত থাকে সে ধরনের প্রতিষ্ঠানকে অব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান বলে। যে সকল প্রতিষ্ঠানের প্রধান লক্ষ্য হলো সেবা প্রদান, মুনাফা অর্জন নয় সে সব প্রতিষ্ঠানের জন্য তহবিল সংগ্রহ ও এর সুষ্ঠু ব্যবহার করার প্রক্রিয়াকে অব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানের অর্থায়ন বলে। এ ক্ষেত্রে অর্থায়নের ভুমিকা হলো অর্থ সংগ্রহের জন্য সর্বোত্তম উৎস চিহ্নিত করা এবং সুষ্ঠু ব্যবহারের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানের সেবামূলক উদ্দেশ্য অর্জন করা। বিভিন্ন ধরনের দান ও অনুদান সংগ্রহের মাধ্যমে এরা অর্থ সংগ্রহ করে। সংগৃহীত অর্থ ব্যয় করা হয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও হাসপাতালের বিভিন্ন ধরনের উন্নয়নমূলক কর্মকান্ডে।

অব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানের অর্থায়নের মূল কাজ হলো অর্থের উৎস চিহ্নিতকরণ এবং সর্বোত্তম সেবা প্রদানের উদ্দেশ্যে এর যথাযযোগ্য ব্যবহার নিশ্চিত করা।

iv. ব্যবসায় অর্থায়ন

ব্যবসায় অর্থায়ন বলতে একটি ব্যবসায় সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা করার জন্য কী পরিমাণ অর্থের প্রয়োজন, কোন কোন উৎস হতে সে অর্থ সংগ্রহ করা হবে এবং সংগৃহীত অর্থ কোন কোন খাতে তা বিনিয়োগ করা হবে তাকে বুঝায়। অর্থায়নের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ধারণা হচ্ছে ব্যবসায় অর্থায়ন।

ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান বলতে মুনাফা অর্জনের উদ্দেশ্য লাভ বা ক্ষতির ঝুঁকি নিয়ে গঠিত প্রতিষ্ঠানকে বুঝায়। ফলে একটি ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান প্রয়োজনীয় তহবিল সংগ্রহ ও বিনিয়োগের জন্য যে অর্থায়ন প্রক্রিয়া ব্যবহার করে, তাকে ব্যবসায় অর্থায়ন বলে।

ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানের প্রধান লক্ষ্য অর্জনের জন্য তহবিল সংগ্রহ ও লাভজনক খাতে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে একটি ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করে।

ব্যবসায় অর্থায়ন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে তহবিলের সংগ্রহ ও এর যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিত করা হয় যাতে প্রতিষ্ঠানের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য অর্জন করা সহজ হয়।

সাধারনত ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানগুলোকে ৩ ভাগে ভাগ করা হয়, যথা- ১. একমালিকানা ব্যবসায়, ২. অংশীদারী ব্যবসায় ও ৩. যৌথ মূলধনী ব্যবসায় । এই তিন প্রকার ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানেরই অর্থায়নের সাধারণ বৈশিষ্ট্য হলো বিনিয়োগের জন্য অর্থ সংগ্রহ ও অর্থ ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে মুনাফা অর্জন করা ।

v. আন্তর্জাতিক অর্থায়ন

সাধারনত আন্তর্জাতিক অর্থায়নে সরকার ও বিভিন্ন বেসরকারি প্রতিষ্ঠান যারা আন্তর্জাতিক মূলধন বাজার থেকে তহবিল সংগ্রহ করে এবং একটি দেশের আমদানি ও রপ্তানি, বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময় হার, বৈদেশিক বিনিয়োগ ইত্যাদি অন্তর্ভুক্ত। আন্তর্জাতিক অর্থায়নে বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময় হার উঠানামার কারণে প্রতিষ্ঠানের যে ঝুঁকির সৃষ্টি হয় তা কীভাবে ব্যবস্থাপনা করা যায় তা আর্ন্তজাতিক অর্থায়নে আলোচনা করা হয়।

বিষয়:

শেয়ার করুন

3 thoughts on “অর্থায়ন বা ফিন্যান্স কী? অর্থায়নের সংজ্ঞা, ধারণা ও শ্রেণিবিভাগ আলোচনা

  1. সাধারনত আন্তর্জাতিক অর্থায়নে সরকার ও বিভিন্ন বেসরকারি প্রতিষ্ঠান যারা আন্তর্জাতিক মূলধন বাজার থেকে তহবিল সংগ্রহ করে এবং একটি দেশের আমদানি ও রপ্তানি, বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময় হার, বৈদেশিক বিনিয়োগ ইত্যাদি অন্তর্ভুক্ত। আন্তর্জাতিক অর্থায়নে বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময় হার উঠানামার কারণে প্রতিষ্ঠানের যে ঝুঁকির সৃষ্টি হয় তা কীভাবে ব্যবস্থাপনা করা যায় তা আর্ন্তজাতিক অর্থায়নে আলোচনা করা হয়।

  2. সরকারের বার্ষিক আয় কোন উৎস হতে কী পরিমাণ সংগ্রহ করা হবে এবং বার্ষিক ব্যয় কোন খাতে কী পরিমাণে করা হবে তা নির্ধারণ করাকে সরকারি অর্থায়ন বুঝায়।

    প্রতিটি সরকারের একটি সুনির্দিষ্ট অর্থ ব্যবস্থাপনা আছে। সরকারের আয়ের ও ব্যয়ের বিভিন্ন খাত রয়েছে। সরকারি অর্থায়নে প্রথমে ব্যয়ের পরিমাণ নির্ধারণ করা হয় এবং সে অনুযায়ী বিভিন্ন উৎস থেকে তহবিল সংগ্রহ করা হয়। সরকারি অর্থায়নে ক্ষেত্রে বিভিন্ন আয়ের ও ব্যয়ের খাত বাজেটের মাধ্যমে সুনির্দিষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়।

    যখন সরকারি অর্থায়নের ক্ষেত্রে আয় অপেক্ষা ব্যয় বেশি হয় তখন তাকে ঘাটতি বাজেট বলে। আবার সরকারি অর্থায়নের ক্ষেত্রে ব্যয় অপেক্ষা আয় বেশি হয় তখন তাকে তখন তাকে উদ্ধৃত্ত বাজেট বলে।

  3. একটি ব্যবসায়- প্রতিষ্ঠান গঠন ও পরিচালনার জন্য কি পরিমাণ মুলধন প্রয়োজন, মূলধন সংগ্রহের জন্যে সুবিধাজনক উৎস চিহ্নিত করণ ও উপযুক্ত সময়ে অর্থ সংগ্রহ, সংগৃহীত অর্থ লাভজনক খাতে বিনিয়োগ নিশ্চিত করণ ও অর্থের আগমন নির্গমন নিয়ন্ত্রের মাধ্যমে অর্থের ব্যবহার নিশ্চিত করে ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানের লক্ষ্য অর্জনের সামগ্রিক প্রচেষ্ঠাকে অর্থায়ন বা ফিন্যান্স (Finance) বলে।

মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার তথ্য সংরক্ষিত রাখুন

লেখকতথ্য

আহমেদ মিন্টো

মিন্টো একজন ফ্রিল্যান্স লেখক এবং বিশ্লেষণ'র কন্ট্রিবিউটর।
তাহসান খান এবং মুনজেরিন শহীদের দুটি প্রফেশনাল কমিউনিকেশন কোর্স করুন ২৮% ছাড়ে
তাহসান খান এবং মুনজেরিন শহীদের দুটি প্রফেশনাল কমিউনিকেশন কোর্স করুন ২৮% ছাড়ে

২৮℅ ছাড় পেতে ৩০/০৬/২০২৪ তারিখের মধ্যে প্রোমো কোড “professional10” ব্যবহার করুন। বিস্তারিত জানতে ও ভর্তি হতে ক্লিক করুন এখানে

অর্থায়ন বা ফিন্যান্স কী? অর্থায়নের সংজ্ঞা, ধারণা ও শ্রেণিবিভাগ আলোচনা

প্রকাশ: ০১:৫২:১৫ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১১ সেপ্টেম্বর ২০২১

একটি ব্যবসায়- প্রতিষ্ঠান গঠন ও পরিচালনার জন্য কি পরিমাণ মুলধন প্রয়োজন, মূলধন সংগ্রহের জন্যে সুবিধাজনক উৎস চিহ্নিত করণ ও উপযুক্ত সময়ে অর্থ সংগ্রহ, সংগৃহীত অর্থ লাভজনক খাতে বিনিয়োগ নিশ্চিত করণ ও অর্থের আগমন নির্গমন নিয়ন্ত্রের মাধ্যমে অর্থের ব্যবহার নিশ্চিত করে ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানের লক্ষ্য অর্জনের সামগ্রিক প্রচেষ্ঠাকে অর্থায়ন বা ফিন্যান্স (Finance)  বলে।

অর্থায়নের ধারণা

অর্থায়ন প্রক্রিয়া ব্যবসায়ী ও অব্যবসায়ী সকল প্রতিষ্ঠানের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। অর্থায়ন হলো অর্থনীতির একটি গুরুত্বপূর্ণ শাখা। অর্থায়ন অর্থ ও আর্থিক বাজার সম্পর্কিত বিষয় নিয়ে কাজ করে। সম্পদ সংগ্রহ, তহবিল ব্যবস্থাপনা, বণ্টন ও তহবিল বিনিয়োগের মতো কাজ অর্থায়নের আওতাভুক্ত।

একটি ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান সঠিকভাবে পরিচালনার জন্য কী পরিমাণ মূলধন প্রয়োজন, আয়ের উৎস নির্ধারণ, অপেক্ষাকৃত কম ব্যয়ের খাত চিহ্নিতকরণ, কোনো নির্দিষ্টি পরিমাণের অর্থ সংগ্রহের পর তা কোন খাতে বা প্রকল্পে কী পরিমাণে বিনিয়োগ করলে তা থেকে কেমন ফলাফল পাওয়া যেতে পারে বা ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানের সর্বোচ্চ মুনাফা অর্জন ও সম্পদ সর্বাধিকরণ সম্ভবপর হবে, সে সকল বিষয়ের কর্ম পরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন কর্মপ্রচেষ্টা কে অর্থায়ন বলা হয়। এই কারণেই অর্থায়নকে ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানের চালিকা শক্তি বা জীবনী শক্তি (life blood) বলা হয়। অর্থায়ন বলতে কম ব্যয়ের উৎস হতে তহবিল সংগ্রহ এবং এর ব্যবহার সংক্রান্ত কার্যাবলিকে বোঝায়।

অর্থায়নের ধারণাকে আমরা ব্যবসায়ের প্রকারভেদ, যেমন- এক মালিকানা, অংশিদারি, যৌথমূলধনী ব্যবসায়, পারিবারিক কিংবা সেবা ধর্মী প্রতিষ্ঠান যেমন- হাসপাতাল ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ইত্যাদি দৃষ্টিকোণ থেকে আলোচনা করতে পারি।

অর্থায়নের সংজ্ঞা

ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার জন্য কি পরিমাণ মূলধন প্রয়োজন, কোন কোন উৎস হতে মূলধন সংগ্রহ করা হলে ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানের জন্য লাভজনক এবং কোন প্রকল্প বা সম্পদে বিনিয়োগ করলে ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানের সবচেয়ে বেশি লাভজনক হবে, সে সকল বিষয়ের কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের যে কার্যাবলী তাকেই অর্থায়ন বলে (তাজুল ইসলাম ও মো. মিজানুর রহমান)।

নিচে অর্থায়নের কতিপয় সংজ্ঞা উল্লেখ করা হলো:

  • আর. এ. স্টিভেনসন (R. A. Stevenson) এর মতে “অর্থায়ন বলতে সেই উপায়কে বুঝায় যার মাধ্যমে তহবিল সংগ্রহ করা যায় এবং তহবিলের ব্যবস্থাপনা ও বন্টন সম্ভবপর হয়।”
  • শ্যাল ও হ্যালির (Schall and Halley) মতে, “ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান ও সরকারের মাধ্যমে অর্থ সংগ্রহ ও এর ব্যবহারের সাথে সংশ্লিষ্ট বিষয়, নীতিমালা ও তত্ত্বাবলিসমূহকে অর্থায়ন বলে।’
  • লরেন্স জে. গিটম্যানের (Lawrence J. Gitman) মতে “অর্থায়ন হলো অর্থ ব্যবস্থাপনার বিজ্ঞান ও কলা। এটি বিভিন্ন ব্যক্তি, ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানসমূহ এবং সরকারর মধ্যে অর্থ হস্তান্তর তথা আর্থিক লেনদেনের সাথে সংশ্লিষ্ট প্রক্রিয়া, প্রতিষ্ঠান, বাজার ও আর্থিক হাতিয়ারের সাথে সম্পৃক্ত।”

অর্থায়নের শ্রেণি বিভাগ

অর্থায়ন বা ফিন্যান্সকে বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে শ্রেণিবিভাগ করা সম্ভব। কারণ অর্থায়ন ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক, ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান ও রাষ্ট্রীয় কাজকর্মে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করে। প্রতিষ্ঠানের ধরন অনুযায়ী অর্থায়ন বিভিন্ন রকম হয়ে থাকে।

অর্থায়নের ৫ টি শ্রেণিবিভাগ হলো: i. পারিবারিক অর্থায়ন, ii. সরকারি অর্থায়ন. iii. অব্যবসায়ি প্রতিষ্ঠানের অর্থায়ন, iv. ব্যবসায় অর্থায়ন এবং v. আন্তর্জাতিক অর্থায়ন।

নিচে অর্থায়নের শ্রেণিবিভাগ আলোচনা করা হলো:

i. পারিবারিক অর্থায়ন

পরিবারের আয়ের উৎস ও পরিমাণ নির্ধারণ করা এবং সেই আয় কীভাবে ব্যয় করলে পরিবারেরর সদস্যদের সার্বিক কল্যাণ হয় তা নির্ধারণ করার প্রক্রিয়াকে পারিবারিক অর্থায়ন বলা হয়।

পরিবারের প্রয়োজন মেটানোর জন্য সংগ্রহীত তহবিল সীমিত হওয়ার কারণে এর উপযুক্ত ব্যবহার নিশ্চিত করা একান্ত প্রয়োজন। যদি দেখা যায় পরিবারের আয় ও সংগৃহীত তহবিল প্রয়োজনীয় ব্যয়ের তুলনায় অধিক, সেক্ষেত্রে ওই অতিরিক্ত তহবিল ভবিষ্যতে ব্যবহারের জন্য সঞ্চয় করা হয় বা অন্য কোন সম্পদে বিনিয়োগ করা হয়। আর যদি আয়ের চেয়ে ব্যয়ের খাত কোনো সময় কোনোক্রমে বড়ো বা বেশি হয় তাহলে অর্থ সংগ্রহের জন্য ঋণের প্রয়োজন হয়। অনেক পরিবারের ক্ষেত্রে দেখা যায়, ঋণ না করে বরং নির্দিষ্ট চাহিদা বা প্রয়োজন মেটানো থেকে বিরত থাকে যদি সম্ভব হয়।

ii. সরকারি অর্থায়ন

সরকারের বার্ষিক আয় কোন উৎস হতে কী পরিমাণ সংগ্রহ করা হবে এবং বার্ষিক ব্যয় কোন খাতে কী পরিমাণে করা হবে তা নির্ধারণ করাকে সরকারি অর্থায়ন বুঝায়।

প্রতিটি সরকারের একটি সুনির্দিষ্ট অর্থ ব্যবস্থাপনা আছে। সরকারের আয়ের ও ব্যয়ের বিভিন্ন খাত রয়েছে। সরকারি অর্থায়নে প্রথমে ব্যয়ের পরিমাণ নির্ধারণ করা হয় এবং সে অনুযায়ী বিভিন্ন উৎস থেকে তহবিল সংগ্রহ করা হয়। সরকারি অর্থায়নে ক্ষেত্রে বিভিন্ন আয়ের ও ব্যয়ের খাত বাজেটের মাধ্যমে সুনির্দিষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়।

যখন সরকারি অর্থায়নের ক্ষেত্রে আয় অপেক্ষা ব্যয় বেশি হয় তখন তাকে ঘাটতি বাজেট বলে। আবার সরকারি অর্থায়নের ক্ষেত্রে ব্যয় অপেক্ষা আয় বেশি হয় তখন তাকে তখন তাকে উদ্ধৃত্ত বাজেট বলে।

সরকারি অর্থায়নের মূল লক্ষ্য হলো সমাজকল্যাণ। একটি দেশের সরকারকে দেশের সার্বিক উন্নয়নে সাধারণত সরকারি অর্থায়ন অলাভজনক হয়ে থাকে কারণ সরকারি অর্থ উন্নয়নমূলক কর্মকান্ডে ব্যয় করা হয়। সরকারি অর্থায়নের ব্যয়, আয় অপেক্ষা বেশি হতে পারে। সরকারি মালিকানার বেশ কিছু ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান থাকে, যা অপেক্ষা কম লাভজনকও হতে পারে। যদি সরকারের বাজেট হতে সম্পূর্ণ অর্থের সংস্থান করা হয় তাহলে অনেক সময় সরকারের সামজিক ও রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তাজনিত ব্যয়ের জন্য অর্থের সংকট সৃষ্টি হতে পারে, তাই সরকারকে বিভিন্ন উৎস হতে বৈদেশিক ঋণ গ্রহণ করতে হয়। বর্তমানে সরকারি বেসরকারি যৌথ অংশীদারত্ব বা পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপ (Public Private Partnership – PPP) এর মাধ্যমেও সরকারি বড়ো বড়ো প্রকল্পে অর্থায়ন করা হয়।

iii. অব্যবসায়ি প্রতিষ্ঠানের অর্থায়ন

যে সকল প্রতিষ্ঠান মানব কল্যাণ, দরিদ্র এবং বঞ্চিত মানুষের সেবায় নিয়োজিত থাকে সে ধরনের প্রতিষ্ঠানকে অব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান বলে। যে সকল প্রতিষ্ঠানের প্রধান লক্ষ্য হলো সেবা প্রদান, মুনাফা অর্জন নয় সে সব প্রতিষ্ঠানের জন্য তহবিল সংগ্রহ ও এর সুষ্ঠু ব্যবহার করার প্রক্রিয়াকে অব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানের অর্থায়ন বলে। এ ক্ষেত্রে অর্থায়নের ভুমিকা হলো অর্থ সংগ্রহের জন্য সর্বোত্তম উৎস চিহ্নিত করা এবং সুষ্ঠু ব্যবহারের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানের সেবামূলক উদ্দেশ্য অর্জন করা। বিভিন্ন ধরনের দান ও অনুদান সংগ্রহের মাধ্যমে এরা অর্থ সংগ্রহ করে। সংগৃহীত অর্থ ব্যয় করা হয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও হাসপাতালের বিভিন্ন ধরনের উন্নয়নমূলক কর্মকান্ডে।

অব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানের অর্থায়নের মূল কাজ হলো অর্থের উৎস চিহ্নিতকরণ এবং সর্বোত্তম সেবা প্রদানের উদ্দেশ্যে এর যথাযযোগ্য ব্যবহার নিশ্চিত করা।

iv. ব্যবসায় অর্থায়ন

ব্যবসায় অর্থায়ন বলতে একটি ব্যবসায় সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা করার জন্য কী পরিমাণ অর্থের প্রয়োজন, কোন কোন উৎস হতে সে অর্থ সংগ্রহ করা হবে এবং সংগৃহীত অর্থ কোন কোন খাতে তা বিনিয়োগ করা হবে তাকে বুঝায়। অর্থায়নের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ধারণা হচ্ছে ব্যবসায় অর্থায়ন।

ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান বলতে মুনাফা অর্জনের উদ্দেশ্য লাভ বা ক্ষতির ঝুঁকি নিয়ে গঠিত প্রতিষ্ঠানকে বুঝায়। ফলে একটি ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান প্রয়োজনীয় তহবিল সংগ্রহ ও বিনিয়োগের জন্য যে অর্থায়ন প্রক্রিয়া ব্যবহার করে, তাকে ব্যবসায় অর্থায়ন বলে।

ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানের প্রধান লক্ষ্য অর্জনের জন্য তহবিল সংগ্রহ ও লাভজনক খাতে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে একটি ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করে।

ব্যবসায় অর্থায়ন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে তহবিলের সংগ্রহ ও এর যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিত করা হয় যাতে প্রতিষ্ঠানের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য অর্জন করা সহজ হয়।

সাধারনত ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানগুলোকে ৩ ভাগে ভাগ করা হয়, যথা- ১. একমালিকানা ব্যবসায়, ২. অংশীদারী ব্যবসায় ও ৩. যৌথ মূলধনী ব্যবসায় । এই তিন প্রকার ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানেরই অর্থায়নের সাধারণ বৈশিষ্ট্য হলো বিনিয়োগের জন্য অর্থ সংগ্রহ ও অর্থ ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে মুনাফা অর্জন করা ।

v. আন্তর্জাতিক অর্থায়ন

সাধারনত আন্তর্জাতিক অর্থায়নে সরকার ও বিভিন্ন বেসরকারি প্রতিষ্ঠান যারা আন্তর্জাতিক মূলধন বাজার থেকে তহবিল সংগ্রহ করে এবং একটি দেশের আমদানি ও রপ্তানি, বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময় হার, বৈদেশিক বিনিয়োগ ইত্যাদি অন্তর্ভুক্ত। আন্তর্জাতিক অর্থায়নে বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময় হার উঠানামার কারণে প্রতিষ্ঠানের যে ঝুঁকির সৃষ্টি হয় তা কীভাবে ব্যবস্থাপনা করা যায় তা আর্ন্তজাতিক অর্থায়নে আলোচনা করা হয়।