০৫:৩৫ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
                       

কর্মী ব্যবস্থাপনা ও মানব সম্পদ ব্যবস্থাপনার মধ্যে পার্থক্য কী?

আহমেদ মিন্টো
  • প্রকাশ: ০১:২৫:৪৮ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ৭ সেপ্টেম্বর ২০২১
  • / ৯৫৭৪ বার পড়া হয়েছে

যে-কোনো প্রতিষ্ঠানের জন্যই মানব সম্পদ ব্যবস্থাপনা খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি মৌলিক কাজ | ছবি: সেবাস্তিয়ান হারম্যান

ইংল্যান্ডের কৃষি বিপ্লব ও শিল্প বিপ্লবের পরপরই সারা পৃথিবীতে কর্মক্ষেত্রে ব্যাপক পরিবর্তন হয়। স্বাবাবিকভাবেই কাজের কলেবর ও জটিলতা বৃদ্ধি পেতে থাকে। ফলে শিল্প কারখানার কাজের বাস্তবতার সাথে সামঞ্জস্যতা রেখে মৌলিক ব্যবস্থাপনায় নতুন ধারণা সংযোজন করা হয় যা ব্যবস্থাপনার আধুনিক ধারণা নামে পরিচিতি পায়। সে সময় মৌলিক ব্যবস্থাপনার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হিসেবে কর্মী ব্যবস্থাপনার উদ্ভব হয়। পরবর্তীতে এই কর্মী ব্যবস্থাপনা নামক বিষয়টিকে বিংশ শতাব্দীতে মানব সম্পদ ব্যবস্থাপনা নামে নামকরণ করা হয়।

কর্মী ব্যবস্থাপনা থেকে মানব সম্পদ ব্যবস্থাপনা নামকরণ করা হয় কারণ তখন কর্মী ব্যবস্থাপনার আওতা বা পরিধি বৃদ্ধি পাচ্ছিল যা তৎকালীন গবেষক, পণ্ডিত, উৎপাদকদের চিন্তার জগতে নতুন ও বিস্তৃত ধারণার জন্ম দেয়।

কাজের প্রকৃতির দিক থেকে কর্মী ব্যবস্থাপনা ও মানব সম্পদ ব্যবস্থাপনার মধ্যে সুনির্দিষ্ট কিছু পার্থক্য পরিলক্ষিত হয়। এই পার্থক্যগুলো নিচে উল্লেখ করা হলো-

১. কর্মী ব্যবস্থাপনা মৌলিক ব্যবস্থাপনার অংশ হিসেবে সংযোজন হয়ে উনবিংশ শতাব্দীর শেষ পর্যন্ত পরিচিতি লাভ করে। একে অনেকটা মধ্যযুগীয় মতবাদ হিসেবে বলা যায়। অন্যদিকে মানব সম্পদ ব্যবস্থাপনা কর্মী ব্যবস্থাপনার আধুনিক মতবাদ হিসেবে বিংশ শতাব্দী থেকে আত্মপ্রকাশ ঘটে।

২. কর্মী ব্যবস্থাপনা সংকীর্ণ অর্থে ব্যবহৃত হয়। অন্যদিকে মানব সম্পদ ব্যবস্থাপনা ব্যাপক অর্থে ব্যবহৃত হয়।

৩. কর্মী ব্যবস্থাপনা কর্মীদের কল্যাণকল্পে মধ্যস্থতাকারী ও সমাধানকারী হিসেবে কাজ করে। অন্যদিকে মানব সম্পদ ব্যবস্থাপনা মধ্যস্থতাকারী হিসেবে নয় বরং নির্বাহী হিসেবে জনশক্তির সঠিক পরিকল্পনা, নির্দেশনা ও নিয়ন্ত্রণের উপর গুরুত্ব প্রদান করে।

৪. কর্মী ব্যবস্থাপনা অস্তিত্ব টিকে রাখার জন্য সাংগঠনিক দক্ষতার সহায়ক শক্তি হিসেবে কাজ করে। অন্যদিকে মানব সম্পদ ব্যবস্থাপনা সংগঠনের মূল শক্তি হিসেবে প্রতিষ্ঠানে জনশক্তির প্রয়োজনীয়তার প্রতি গুরুত্বারোপ করে।

৫. কর্মী ব্যবস্থাপনা কর্মীদের উৎপাদনের একটি উপকরণ হিসেবে বিবেচনা করে। অন্যদিকে মানব সম্পদ ব্যবস্থাপনায় কর্মরত কর্মীদের সম্পদ ও সামাজিক পুঁজি হিসেবে বিবেচনা করে।

৬. কর্মী ব্যবস্থাপনা পারস্পরিক সম্পর্ক নির্দেশিত বিষয়। অন্যদিকে মানব সম্পদ ব্যবস্থাপনা উন্নয়ন লক্ষ্য নির্দেশিত।

৭. কর্মী ব্যবস্থাপনা কর্মীদের আনুগত্যশীল রেখে তাদের বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা প্রদান করে। অন্যদিকে মানব সম্পদ ব্যবস্থাপনা কর্মীদের ক্ষমতায়ন ও প্রতিশ্রতিবদ্ধতার প্রতি গুরুত্বারোপ করে।

ব্যাবহারিক বা সাধারণ অর্থে কর্মী বলতে যারা সংগঠনের শুধুই সর্বনিম্নস্তরে অবস্থান করে কাজ করে তাদেরকে বুঝায়; আর মানব সম্পদ ব্যবস্থাপনায় সংগঠনের শীর্ষ স্তরীয় নির্বাহী থেকে শুরু করে সর্বনিম্ন স্তরে নিয়োজিত শ্রমিক কর্মীকে বুঝায় যারা সংগঠনের উদ্দেশ্য অর্জনে একত্রে লিপ্ত থেকে কাজ করে।

(বাউবি মডিউল অনুকরণ করা হয়েছে)

শেয়ার করুন

মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার তথ্য সংরক্ষিত রাখুন

লেখকতথ্য

আহমেদ মিন্টো

মিন্টো একজন ফ্রিল্যান্স লেখক এবং বিশ্লেষণ'র কন্ট্রিবিউটর।

ওয়েবসাইটটির সার্বিক উন্নতির জন্য বাংলাদেশের বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানসমূহের মধ্য থেকে স্পনসর খোঁজা হচ্ছে।

কর্মী ব্যবস্থাপনা ও মানব সম্পদ ব্যবস্থাপনার মধ্যে পার্থক্য কী?

প্রকাশ: ০১:২৫:৪৮ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ৭ সেপ্টেম্বর ২০২১

ইংল্যান্ডের কৃষি বিপ্লব ও শিল্প বিপ্লবের পরপরই সারা পৃথিবীতে কর্মক্ষেত্রে ব্যাপক পরিবর্তন হয়। স্বাবাবিকভাবেই কাজের কলেবর ও জটিলতা বৃদ্ধি পেতে থাকে। ফলে শিল্প কারখানার কাজের বাস্তবতার সাথে সামঞ্জস্যতা রেখে মৌলিক ব্যবস্থাপনায় নতুন ধারণা সংযোজন করা হয় যা ব্যবস্থাপনার আধুনিক ধারণা নামে পরিচিতি পায়। সে সময় মৌলিক ব্যবস্থাপনার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হিসেবে কর্মী ব্যবস্থাপনার উদ্ভব হয়। পরবর্তীতে এই কর্মী ব্যবস্থাপনা নামক বিষয়টিকে বিংশ শতাব্দীতে মানব সম্পদ ব্যবস্থাপনা নামে নামকরণ করা হয়।

কর্মী ব্যবস্থাপনা থেকে মানব সম্পদ ব্যবস্থাপনা নামকরণ করা হয় কারণ তখন কর্মী ব্যবস্থাপনার আওতা বা পরিধি বৃদ্ধি পাচ্ছিল যা তৎকালীন গবেষক, পণ্ডিত, উৎপাদকদের চিন্তার জগতে নতুন ও বিস্তৃত ধারণার জন্ম দেয়।

কাজের প্রকৃতির দিক থেকে কর্মী ব্যবস্থাপনা ও মানব সম্পদ ব্যবস্থাপনার মধ্যে সুনির্দিষ্ট কিছু পার্থক্য পরিলক্ষিত হয়। এই পার্থক্যগুলো নিচে উল্লেখ করা হলো-

১. কর্মী ব্যবস্থাপনা মৌলিক ব্যবস্থাপনার অংশ হিসেবে সংযোজন হয়ে উনবিংশ শতাব্দীর শেষ পর্যন্ত পরিচিতি লাভ করে। একে অনেকটা মধ্যযুগীয় মতবাদ হিসেবে বলা যায়। অন্যদিকে মানব সম্পদ ব্যবস্থাপনা কর্মী ব্যবস্থাপনার আধুনিক মতবাদ হিসেবে বিংশ শতাব্দী থেকে আত্মপ্রকাশ ঘটে।

২. কর্মী ব্যবস্থাপনা সংকীর্ণ অর্থে ব্যবহৃত হয়। অন্যদিকে মানব সম্পদ ব্যবস্থাপনা ব্যাপক অর্থে ব্যবহৃত হয়।

৩. কর্মী ব্যবস্থাপনা কর্মীদের কল্যাণকল্পে মধ্যস্থতাকারী ও সমাধানকারী হিসেবে কাজ করে। অন্যদিকে মানব সম্পদ ব্যবস্থাপনা মধ্যস্থতাকারী হিসেবে নয় বরং নির্বাহী হিসেবে জনশক্তির সঠিক পরিকল্পনা, নির্দেশনা ও নিয়ন্ত্রণের উপর গুরুত্ব প্রদান করে।

৪. কর্মী ব্যবস্থাপনা অস্তিত্ব টিকে রাখার জন্য সাংগঠনিক দক্ষতার সহায়ক শক্তি হিসেবে কাজ করে। অন্যদিকে মানব সম্পদ ব্যবস্থাপনা সংগঠনের মূল শক্তি হিসেবে প্রতিষ্ঠানে জনশক্তির প্রয়োজনীয়তার প্রতি গুরুত্বারোপ করে।

৫. কর্মী ব্যবস্থাপনা কর্মীদের উৎপাদনের একটি উপকরণ হিসেবে বিবেচনা করে। অন্যদিকে মানব সম্পদ ব্যবস্থাপনায় কর্মরত কর্মীদের সম্পদ ও সামাজিক পুঁজি হিসেবে বিবেচনা করে।

৬. কর্মী ব্যবস্থাপনা পারস্পরিক সম্পর্ক নির্দেশিত বিষয়। অন্যদিকে মানব সম্পদ ব্যবস্থাপনা উন্নয়ন লক্ষ্য নির্দেশিত।

৭. কর্মী ব্যবস্থাপনা কর্মীদের আনুগত্যশীল রেখে তাদের বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা প্রদান করে। অন্যদিকে মানব সম্পদ ব্যবস্থাপনা কর্মীদের ক্ষমতায়ন ও প্রতিশ্রতিবদ্ধতার প্রতি গুরুত্বারোপ করে।

ব্যাবহারিক বা সাধারণ অর্থে কর্মী বলতে যারা সংগঠনের শুধুই সর্বনিম্নস্তরে অবস্থান করে কাজ করে তাদেরকে বুঝায়; আর মানব সম্পদ ব্যবস্থাপনায় সংগঠনের শীর্ষ স্তরীয় নির্বাহী থেকে শুরু করে সর্বনিম্ন স্তরে নিয়োজিত শ্রমিক কর্মীকে বুঝায় যারা সংগঠনের উদ্দেশ্য অর্জনে একত্রে লিপ্ত থেকে কাজ করে।

(বাউবি মডিউল অনুকরণ করা হয়েছে)