গবেষণা হলো জ্ঞনার্জনের উদ্দেশ্যে পরিচালিত একটি সুশৃঙ্খল অনুসন্ধান প্রক্রিয়া যার মাধ্যমে কোনো বিষয় বা ঘটনা সম্পর্কে বস্তুনিষ্ট, সার্বিক ও যথাযথ সুস্পষ্ট ধারণা লাভ করা সম্ভব।
এই ওয়েবসাইটে গবেষণার সংজ্ঞা, ধারণা ও প্রকারভেদ, ধাপ ও সমস্যা নিয়ে বেশ কিছু নিবন্ধ আছে; প্রয়োজনে সেগুলো পড়া যেতে পারে।
এখানে সামাজিক গবেষণা (Social Research) ও সমাজকর্ম গবেষণার (Social Work Research) সংজ্ঞা প্রসঙ্গে সংক্ষিপ্ত আলোচনা করা হয়েছে।
সামাজিক গবেষণা কী?
সামাজিক বিষয়ের উপর ভিত্তি করে যে গবেষণা পরিচালিত হয় তাকে সামাজিক গবেষণা বলে।
আরেকটু স্পষ্ট করে বলা যায়: সামাজিক বিজ্ঞানসমূহের তত্ত্ব, গঠন, কোনো ঘটনা বা বিষয় এবং সামাজিক সমস্যার প্রকৃতি উদঘাটনের জন্য যেসব গবেষণাকর্ম পরিচালিত হয় তাই হলো সামাজিক গবেষণা।
সামাজিক গবেষণার মাধ্যমে সমাজজীবনের বিভিন্ন দিকের সঠিক চিত্র তুলে ধরা সম্ভব হয়। সমস্যার কারণ, সমস্যার বিশ্লেষণ, সমাধান ব্যবস্থা এমনকি সমস্যা সম্পর্কে মানুষের দৃষ্টিভঙ্গি, মনোভাব জানার ক্ষেত্রে সামাজিক গবেষণা সহায়তা করে।
সামাজিক গবেষণার সংজ্ঞায় কেনেথ ডি. বেইলি বলেন, “সামাজিক গবেষণা হচ্ছে তথ্য আহরণের সঙ্গে সংশিস্নষ্ট প্রয়াস, যা সমাজের বিভিন্ন দিক সম্পর্কিত প্রশ্নের উত্তর প্রদানে আমাদেরকে সহায়তা করে এবং সমাজ সম্পর্কে আমাদেরকে জ্ঞাত হতে সক্ষম করে তোলে।”
এনসাইক্লোপিডিয়া অব সোশ্যাল রিসার্চ (ভলিউম-১,১৯৯৭) এর ভাষ্য অনুযায়ী, সামাজিক গবেষণা সামাজিক প্রপঞ্চ নিয়ে অনুসন্ধান করে এটা সমাজের সদস্য হিসেবে মানুষের আচার-আচরণ, তাদের অনুভূতি, প্রতিক্রিয়া, দৃষ্টিভঙ্গি, জীবনযাপন প্রণালী ইত্যাদি বিভিন্ন আঙ্গিক জানার চেষ্টা করে।
পি. ভি ইয়ং মতে, “সামাজিক গবেষণাকে একটি বৈজ্ঞানিক উপলব্ধি হিসেবে সংজ্ঞায়িত করা যেতে পারে; যৌক্তিক ও নিয়মতান্ত্রিক কৌশল প্রয়োগের মধ্য দিয়ে যার লক্ষ্য হলো- ১. নতুন তথ্য উদঘাটন বা পুরাতন তথ্য যাচাই করা; ২. উপযুক্ত তাত্ত্বিক কাঠামো অনুসরণে এদের পারস্পরিক অনুক্রম, আত্মসম্পর্ক এবং কার্যকরণ সম্পর্ক ব্যাখ্যা করা; ৩. নির্ভরযোগ্য ও যথার্থ মানব আচরণ অধ্যয়নের সুবিধার্থে নতুন বৈজ্ঞানিক হাতিয়ার, প্রত্যয় ও তত্ত্ব উন্নয়ন করা।”
উপর্যুক্ত আলোচনার প্রেক্ষিতে বলা যায়, সামাজিক গবেষণা এমন একটি বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিনির্ভর অনুসন্ধান প্রক্রিয়া যার মাধ্যমে সুশৃঙ্খল ও যুক্তিসঙ্গতভাবে সমাজের নতুন কোনো তথ্য উদঘাটন, অতীত বিষয়ের সত্যতা নিরূপণ বা যাচাই এবং এগুলোর মধ্যকার পারস্পরিক সম্পর্ক ও কার্যকারণ সম্পর্ক বিশ্লেষণের মাধ্যমে মানুষের আচরণের সংশিস্নষ্টতা নিরূপণ করা হয়।
সমাজকর্ম গবেষণা কী?
সাধারণভাবে বলা যায়, সমাজে বিরাজমান বিভিন্ন সমস্যার স্বরূপ, প্রকৃতি, কারণ নির্ণয় এবং সমাধানের জন্য সেবার মাত্রা নির্ধারণ, প্রদত্ত সেবার যথার্থতা যাচাই, এমনকি সমাজকর্মে ব্যবহৃত বিভিন্ন পদ্ধতি ও কৌশলের কার্যকারিতা পরীক্ষা ও যাচাইয়ের লক্ষ্যে বিজ্ঞানভিত্তিক ও পদ্ধতিগত অনুসন্ধান প্রক্রিয়া হলো সমাজকর্ম গবেষণা।
সমাজকর্ম গবেষণা বিভিন্নরকম সামাজিক সমস্যা শনাক্তকরণ, সেগুলো ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ ও সমাধানের প্রক্রিয়া উদ্ভাবন, বাস্তবায়ন এবং মূল্যায়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে; এ কারণে সমাজকর্ম গবেষণা সমাজকর্মের গুরুত্বপূর্ণ সহায়ক পদ্ধতি।
ওয়াল্টার এ. ফ্রিডল্যান্ডার সমাজকর্ম গবেষণার সংজ্ঞায় বলেন, “সমাজকর্ম গবেষণা হলো সমাজকর্মের জ্ঞান ও দক্ষতা, প্রত্যয় এবং তত্ত্বের যাচাই, সাধারণীকরণ এবং প্রসারের লক্ষ্যে সমাজকর্ম সংগঠন, কার্যক্রম এবং পদ্ধতির যথার্থতা নির্ণয়ের বিজ্ঞানভিত্তিক ও পর্যালোচনামূলক অনুসন্ধান।”
এনসাইক্লোপিডিয়া অব সোশ্যাল ওয়ার্ক ইন ইয়া (ভলিউম-৩.১৯৮৭) এর ভাষ্যানুযায়ী, “সমাজকর্ম গবেষণা হচ্ছে জ্ঞান এবং বিকল্প অনুশীলিত জ্ঞান সমৃদ্ধকরণে ব্যবহৃত বিজ্ঞানভিত্তিক অনুসন্ধান প্রক্রিয়া যা পেশাগত সমাজকর্মে সরাসরি প্রয়োগের জন্য বিভিন্ন কৌশল উদ্ভাবন করে এবং যা সমাজকর্ম পদ্ধতিসমূহকে অনুশীলনের ক্ষেত্র আরও সমৃদ্ধ করে।
আরনেস্ট গ্রিনউড এর মতে, “সমাজকর্ম গবেষণা হচ্ছে সমাজকল্যাণক্ষেত্রে বিদ্যমান বিভিন্ন প্রশ্নের এমন এক সুশৃঙ্খল অনুসন্ধান যার উদ্দেশ্য হচ্ছে সমাজকর্মের সমস্যাবলীর উত্তর খুঁজে বের করা এবং সমাজকর্মের জ্ঞান ও ধারণাসমূহের সম্প্রসারণ ও সাধারণীকরণ করা।”
উপর্যুক্ত সংজ্ঞাগুলো বিশেস্নষণের প্রেক্ষিতে বলা যায় যে, সমাজকর্ম গবেষণা হলো সমাজকর্মে ব্যবহৃত জ্ঞান, কৌশল ও পদ্ধতিসমূহের ধারণা সাধারণীকরণের লক্ষ্যে এদের যথার্থতা ও কার্যকারিতা নির্ণয়ের বিজ্ঞানভিত্তিক অনুসন্ধান প্রক্রিয়া যা সমাজের ব্যক্তি, দল ও সমষ্টিকেন্দ্রিক সমস্যাবলীর কারণ ও প্রকৃতি নির্ণয়ের মাধ্যমে সমাধান ব্যবস্থায় যথাযথভাবে প্রয়োগ করা যেতে পারে।