শুক্রবার, জুন ৯, ২০২৩

যেসব ইবাদত অন্তরের সাথে সম্পৃক্ত

বান্দার অন্যতম অন্তরের ইবাদত হলো- আল্লাহর প্রতি ভালোবাসা স্থাপন করা

মহান আল্লাহ মানুষকে তাঁর ইবাদত করার জন্য সৃষ্টি করেছেন। পবিত্র কুরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘আর জিন ও মানুষকে শুধু আমার ইবাদতের জন্য সৃষ্টি করেছি।’ (সুরা জারিয়াত, আয়াত ৫৬)

ইবাদতের মধ্যে কিছু আছে শারীরিক ইবাদত, যেমন- নামাজ ও রোজা। কিছু আছে আর্থিক ইবাদত, যেমন- হজ, যাকাত, কুরবানি ইত্যাদি। আবার কিছু ইবাদত এমন, যে-গুলো অন্তরের সঙ্গে সম্পৃক্ত। কারণ মন আমাদের সমস্ত অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের নিয়ন্ত্রক। যখন মন ঠিক পরিশুদ্ধ হয়ে যায়, তখন অন্য সব অঙ্গ-প্রত্যঙ্গও ঠিক হয়ে যায়। পাশাপাশি সেগুলোর ইবাদতও যথার্থ হতে থাকে। তার সঙ্গে তাল মিলিয়ে আর্থিক ইবাদতগুলো প্রাণ ফিরে পায়। হাদিস শরিফে ইরশাদ হয়েছে, ‘জেনে রেখো, শরীরের মধ্যে একটি গোশতের টুকরা আছে, তা যখন ঠিক হয়ে যায়, গোটা শরীরই ঠিক হয়ে যায়। আর যখন তা খারাপ হয়ে যায়, গোটা শরীর খারাপ হয়ে যায়। জেনে রেখো, ওই গোশতের টুকরা হলো কলব (অন্তর)।’ (বুখারি, হাদিস ৫২)

অতএব অন্তরের ইবাদতগুলোর মাধ্যমে অন্তরকে পরিশুদ্ধ করা গেলে, অন্য ইবাদত আপনা-আপনি ঠিক হয়ে যাবে। আজকে আমরা আলোচনা করব, এমন কিছু ইবাদত নিয়ে, যেগুলো অন্তরের সঙ্গে সম্পৃক্ত।

আল্লাহর প্রতি ভালোবাসা

ইমানের পর বান্দার অন্যতম অন্তরের ইবাদত হলো- আল্লাহর প্রতি ভালোবাসা স্থাপন করা। কারণ যতক্ষণ পর্যন্ত অন্তরে আল্লাহর প্রতি দৃঢ় ভালোবাসা জন্ম নেবে না, ততক্ষণ বান্দা ইবাদতের স্বাদ পাবে না। ইমানে পূর্ণতা আসবে না। এ কারণে মহান আল্লাহ বলেছেন, ‘আর যারা ইমান এনেছে, তারা আল্লাহর জন্য ভালোবাসায় দৃঢ়তর।’ (সুরা বাকারা, আয়াত ১৬৫)

আল্লাহর রহমতের আশা করা

অন্তরের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত হলো, আল্লাহর রহমতের আশা করা। আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হয়ে আমল ছেড়ে দেওয়ার সুযোগ নেই। আল্লাহর রহমত থেকে নৈরাশ হয়ে যাওয়া পথভ্রষ্টতার লক্ষণ। পবিত্র কুরআনে এসেছে, ‘তিনি (আল্লাহ) বলেন, যারা পথভ্রষ্ট, তারা ছাড়া আর কে তার রবের অনুগ্রহ থেকে হতাশ হয়?’ (সুরা হিজর, আয়াত ৫৬)

তাই গুনাহ হয়ে গেলে তাওবা করে আল্লাহর রাস্তায় ফিরে আসতে হবে। এবং আল্লাহর রহমতের আশা করতে হবে। আশা করা যায়, আল্লাহ মাফ করে দেবেন

 আল্লাহকে ভয় করা

আল্লাহর ইবাদত করতে হবে আশা ও ভয় নিয়ে। আল্লাহর ভয়ে সব ধরনের গুনাহ থেকে নিজেকে বিরত রাখার চেষ্টা করতে হবে। আল্লাহর রহমতের আশা রাখতে হবে মানে এই নয় যে বেপরোয়া হয়ে উঠবে। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘তারা কি আল্লাহর কৌশল থেকেও নিরাপদ হয়ে গেছে? বস্তুত ক্ষতিগ্রস্ত সম্প্রদায় ছাড়া কেউ আল্লাহর কৌশলকে নিরাপদ মনে করে না।’ (সুরা আরাফ, আয়াত ৯৯)

অন্য আয়াতে ইরশাদ হয়েছে, ‘সে তো শয়তান। সে তোমাদের তার বন্ধুদের ভয় দেখায়। তোমরা তাদের ভয় করো না; বরং আমাকে ভয় করো, যদি তোমরা মুমিন হও।’ (সুরা আলে ইমরান, আয়াত ১৭৫)

রাসুল (সা.)-এর ভাষ্যমতে, সাত শ্রেণির মানুষ কঠিন কিয়ামতের দিন আল্লাহর আরশের ছায়ায় আশ্রয় পাবে। তাদের অন্যতম হল, ‘যে ব্যক্তি নির্জনে আল্লাহকে স্মরণ করে এবং আল্লাহর ভয়ে তার চোখ থেকে অশ্রু বের হয়ে পড়ে।’ (বুখারি, হাদিস ১৪২৩)

ইখলাস

ইখলাস হল আমল ও ইবাদতের প্রাণ। এর সম্পর্ক অন্তরের সঙ্গে। তাই পবিত্র কুরআনে ইখলাসের প্রতি বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। মহান আল্লাহ বলেন, ‘তাদের এ ছাড়া আর কোনো নির্দেশ দেওয়া হয়নি যে তারা খাঁটি মনে একনিষ্ঠভাবে আল্লাহর ইবাদত করবে।’ (সুরা বাইয়্যিনাহ, আয়াত ৫)

আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, মহানবি (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘আল্লাহ তাআলা তোমাদের শরীর ও অবয়বের দিকে তাকান না; বরং তিনি তোমাদের অন্তর ও আমলের দিকে লক্ষ করেন।’ (মুসলিম, হাদিস ৬৪৩৬)

রাসুল (সা.)-কে ভালোবাসা

প্রকৃত ইমানদার হতে হলে রাসুল (সা.)-কে ভালোবাসতে হবে। রাসুল (সা).-এর প্রতি দৃঢ় ভালোবাসা অন্তরের সঙ্গে সম্পৃক্ত। আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘তিনটি গুণ যার মধ্যে আছে, সে ইমানের স্বাদ আস্বাদন করতে পারে।

১. আল্লাহ ও তাঁর রাসুল তার কাছে অন্য সব কিছু থেকে বেশি প্রিয় হওয়া;

২. কাউকে একমাত্র আল্লাহর জন্যই ভালোবাসা;

৩. কুফরিতে ফিরে যাওয়া আগুনে নিক্ষিপ্ত হওয়ার মতো অপছ¨ করা।’ (বুখারি, হাদিস ৬০৪১)

আল্লাহর জন্য কাউকে ভালোবাসা 

অন্তরের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত হল, কাউকে একমাত্র আল্লাহর জন্য ভালোবাসা; নিঃস্বার্থ ভালোবাসা। এর প্রতিদানস্বরূপ মহান আল্লাহ কিয়ামতের দিন বিশেষ সংবর্ধনা দেবেন। উমর ইবনুল খাত্তাব (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহর বান্দাদের মধ্যে এমন কিছু মানুষ আছেন, যাঁরা নবি নন এবং শহিদও নন। কিয়ামতের দিন মহান আল্লাহর দরবারে তাঁদের মর্যাদার কারণে নবিরা ও শহিদরা তাঁদের প্রতি ঈর্ষান্বিত হবেন। সাহাবিরা বলেন, হে আল্লাহর রাসুল, আমাদের অবহিত করুন, তাঁরা কারা? তিনি বলেন, তাঁরা ওই সব মানুষ, যাঁরা আল্লাহর মহানুভবতায় পরস্পরকে ভালোবাসেন, অথচ তাঁরা পরস্পর আত্মীয়ও নন এবং পরস্পরকে সম্পদও দেননি। আল্লাহর শপথ! তাঁদের মুখমণ্ডল যেন নুর এবং তাঁরা নুরের আসনে উপবেশন করবেন। তাঁরা ভীত হবেন না, যখন মানুষ ভীত থাকবে। তাঁরা দুশ্চিন্তায় পড়বেন না, যখন মানুষ দুশ্চিন্তায় থাকবে। অতঃপর তিনি এ আয়াত তিলাওয়াত করলেন, ‘জেনে রেখো! আল্লাহর বন্ধুদের কোনো ভয় নেই এবং তাঁরা দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হবে না।’ (সুরা ইউনুস, আয়াত ৬২) (আবু দাউদ, হাদিস ৩৫২৭)

মহান আল্লাহ আমাদের সবার অন্তর পরিশুদ্ধ করুন। অন্তরের পাশাপাশি আমাদের সব ইবাদত কবুল করুন। আমিন।

For all latest articles, follow on Google News

বাংলাদেশি বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানসমূহের মধ্য থেকে 'বিশ্লেষণ'-এর জন্য স্পনসরশিপ খোঁজা হচ্ছে। আগ্রহীদের যোগাযোগ করার জন্য অনুরোধ করা হলো। ইমেইল: contact.bishleshon@gmail.com

এ বিষয়ের আরও নিবন্ধ
আরও পড়তে পারেন

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here