শুক্রবার, জুন ৯, ২০২৩

বাংলাদেশ বনাম অস্ট্রেলিয়া: অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে বাংলাদেশের প্রথম টানা জয়

এই ম্যাচে দুর্দান্ত ইনিংস খেলে জয় নিশ্চিত করে আসা আফিফ হোসেন ধ্রুব পান ম্যাচ সেরার পুরস্কার।

প্রথম টি টোয়েন্টিতে (টি২০) জেতার পরে দ্বিতীয় টি টোয়েন্টিতেও বাংলাদেশ জিতল অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে। এটাই বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের জন্য অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ক্রিকেটের যে-কোনো সংস্করণে  প্রথম টানা (successive) জয়। টানা দুই ম্যাচের জয়ের মাধ্যমে ৫ ম্যাচের সিরিজে বাংলাদেশ এগিয়ে যায় ২-০ ব্যবধানে।

বাংলাদেশের স্ট্রাইকিং প্রান্তে থাকা আফিফ হোসেন ধ্রুব যখন জশ হ্যাজলউডের বাউন্সারকে স্কুপ করে চার হাকিয়ে নিজেদের জয় নিশ্চিত করল, স্টেডিয়ামের বাইরে কোনো একটি উঁচু দালানের ছাদ থেকে কিছু সমর্থক বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা ওড়ানো শুরু করল। উল্লেখ্য মাঠে কোনো সাধারণ দর্শক ছিল না কোভিড-১৯ মহামারির কারণে।

বলার অপেক্ষা রাখে না যে, বাংলাদেশের এই জয় ক্রিকেট সমর্থকরা ভালোই উপভোগ করেছেন।

আফিফ হোসেন ধ্রুব ও নুরুল হাসান সোহানের ম্যাচ জেতানো জুটির আগে মাত্র ৯ রানের ব্যবধানে সাকিব আল হাসান, মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ এবং মাহেদি হাসানের উইকেট পতন কিছুটা হলে ভয় জাগিয়েছিল বাংলাদেশ শিবিরে। কিন্তু ভয়ের কাছে কাবু না হয়ে স্বাভাবিক গতিতে রানের চাকা চালু রাখেন আফিফ এবং সোহান। এরা দুইজনই অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে প্রথম টানা জয়ের শেষের তারকা।

টসে অস্ট্রেলিয়া জিতলে, সে দলের অধিনায়ক ম্যাথু ওয়েড ব্যাট করার সিদ্ধান্ত নিয়ে বাংলাদেশ দলকে বোলিংয়ে পাঠান। কিন্তু অস্ট্রেলিয়ার ব্যাটিংয়ের সিদ্ধান্ত যে সঠিক ছিল না সেটা প্রমাণ করে দেখান বাংলাদেশের বোলাররা। অস্ট্রেলিয়াকে মাত্র ১২১ রানে থামিয়ে দেয় বাংলাদেশ।

এই ম্যাচে মোস্তাফিজুর রহমান ৪ ওভারে ২৩ রান দিয়ে ৩ টি উইকেট তুলে নেন এবং শরিফুল ৪ ওভারে ২৭ রান খরচ করে নেন ২ উইকেট। সাকিব এবং মাহেদি নেন ১ টি করে উইকেট।

অস্ট্রেলিয়ার পক্ষে এই দিন সর্বোচ্চ রান করেন মিচেল মার্শ। মার্শ ৪২ বল খেলে ৪৫ রান করেন। শরিফুল ইসলামের বলে উইকেট কিপার নুরুল হাসান সোহানের হাতে ক্যাচ দিয়ে প্যাভিলয়েন ফিরেন ১৬.১ ওভারে। তখন অস্ট্রেলিয়ার সংগ্রহ ৯৯। অস্ট্রেলিয়ার পক্ষে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক ছিলন মইজেস হেনরিক্স, তিনি ২৫ বল খেলে ৩০ রান করে সাকিব আল হাসানের বলে বোল্ড হয়ে যান। তিনি যখন ফিরেন তখন রান ছিল ৮৮।

নিয়মিত বিরতিতে অস্ট্রেলিয়ার উইকেটের পতন ঘটতে থাকে। মাত্র ১৩ রানে অ্যালেক্স কেরিকে ক্যাচ আউট করর অস্ট্রেলিয়ার প্রথম উইকেটের পতন ঘটান মাহেদি হাসান। দ্বিতীয় উইকেটের (ফিলিও) পতন হয় ৩১ রানে। তৃতীয় উইকেট ৮৮ রানে (হেনরিক্স), চতুর্থ উইকেট ৯৯ রানে (মার্শ), পঞ্চম উইকেট ১০৩ রানে (ওয়েড), ষষ্ঠ উইকেট ১০৩ রানে (অ্যাগার), ৭ম উইকেট ১০৬ রানে (টার্নার)।

অস্ট্রেলিয়া ২০ ওভার খেলে ৭ উইকেট হারিয়ে রান তোলে ১২১।

জবাবে ব্যাট করতে নেমে বিপদে সম্মুখীন হয় বাংলাদেশ। সোম্য সরকার কোনো রান না করেই দুই বল খেলে মিচেল স্টার্কের বলে বোল্ড হন। দলের তখন ২ ওভার ২ বলে সংগ্রহ মাত্র ৯। ২১ রানের মাথায় ছন্দে থাকা মোহাম্মদ নাইমকেও হারায় বাংলাদেশ। অবশ্য দুই ব্যাটসম্যানের চলে যাওয়া নিয়ে খুব একটা চিন্তিত হতে দেননি তিন নম্বর ব্যাটসম্যান হিসেবে আসা সাকিব আল হাসান এবং চার নম্বর ব্যাটসম্যান মাহেদি হাসান, যদিও মাহেদির কিছু ভুল শট ছিল।

এই ম্যাচে সাকিব আলা হাসান ১৭ বলে ২৬ রানের একটি কার্যকর ইনিংস খেলেন। এই ইনিংস খেলার শুরুতেই সাকিব আল হাসান মিচেল স্টাররকে পরপর ৩ চার মেরে বোলারের আত্মবিশ্বাস নষ্ট করে দেন। এই ওভারে স্টার্ক দেন ১৩ রান এবং তুলে নিয়েছিলন মোহাম্মদ নাইমের উইকেট। মনে হয় এই ওভারটিই বাংলাদেশের আত্মবিশ্বাস বাড়িয়ে দেয়।

দলের ৫ উইকেট পতন হবার পর নুরুল হাসান সোহান আসেন ক্রিজে, সেখানে আগে থেকেই ছিলেন আফিফ হোসেন ধ্রুব। দুইজনের পঞ্চাশোর্ধ জুটিতে প্রত্যাশিত জয় পায় বাংলাদেশ। আফিফ হোসেন করেব ৩১ বলে ৩৭ এবং নুরুল হাসান করেন ২১ বলে ২২ রান। 

অস্ট্রেলিয়ার বোলাররা মোটেই খারাপ করেননি। অ্যাগার, জাম্পা, হ্যাজলউড, প্রত্যেকেই দারুণ করেছিলেন। কিন্তু রান কম হওয়ার কারণে ম্যাচ নিজেদের পকেটে রাখতে পারেননি অস্ট্রেলিয়ার বোলাররা।

অস্ট্রেলিয়ার পক্ষে একমাত্র মিচেল মার্শ ছাড়া প্রত্যেকেই ১ টি করে উইকেট শিকার করেন। অস্ট্রেলিয়ানদের যে সব বলে বাংলাদেশি ব্যাটসম্যানরা আউট হয়েছিলেন তা ছিল দুর্দান্ত সব ডেলিভারি। এই ম্যাচে বাংলাদেশিদের কেউ ক্যাচ আউট হননি।

এই ম্যাচে দুর্দান্ত ইনিংস খেলে জয় নিশ্চিত করে আসা আফিফ হোসেন ধ্রুব পান ম্যাচ সেরার পুরস্কার।

বাংলাদেশের সাথে প্রথম টি২০ সিরিজে এভাবে নাকানিচুবানি খাবে অস্ট্রেলিয়া সে কথা কেউ ভেবে ছিলেন?

মনির হোসেন
মনির হোসেন
কন্ট্রিবিউটর, বিশ্লেষণ

For all latest articles, follow on Google News

বাংলাদেশি বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানসমূহের মধ্য থেকে 'বিশ্লেষণ'-এর জন্য স্পনসরশিপ খোঁজা হচ্ছে। আগ্রহীদের যোগাযোগ করার জন্য অনুরোধ করা হলো। ইমেইল: contact.bishleshon@gmail.com

এ বিষয়ের আরও নিবন্ধ
আরও পড়তে পারেন

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here