১২:৩২ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
                       

বই রিভিউ: যদ্যপি আমার গুরু

মু. মিজানুর রহমান মিজান
  • প্রকাশ: ০২:১৩:৫৬ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৫ জুন ২০২১
  • / ৪৩১৯ বার পড়া হয়েছে

আহমদ সফা রচিত 'যদ্যপি আমার গুরু' বইয়ের প্রচ্ছদ

বাংলা ভাষায় রচিত ‘যদ্যপি আমার গুরু’ পাঠকপ্রিয় একটি বই। প্রকাশের পর থেকে এই বইটি নিয়ে আলোচনা-পর্যালোচনা কম হয়নি। এই নিবন্ধে বইটি পড়ে আমার মনে যে প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে, তার কিছুটা এখানে প্রকাশ হলো।

‘যদ্যপি আমার গুরু’ পরিচিতি

বাংলাদেশের অন্যতম সেরা ও পাঠকপ্রিয় অগ্রণী চিন্তাবিদ, সুলেখক, কথাসাহিত্যিক আহমদ ছফা রচিত একটি স্মৃতিচারণমূলক বই হলো ‘যদ্যপি আমার গুরু’। লেখক আহমদ ছফাকে কেউ পছন্দ করুক আর না করুক, তাঁর রচিত ‘যদ্যপি আমার গুরু’ বইটি কারো অপছন্দ সেটি আমি এখনো শুনিনি। বাংলাদেশের শিক্ষিত সমাজে ‘যদ্যপি আমার গুরু’ বইটির নাম শুনেননি এ রকম খুব কম লোকই আছেন। শুধু বাংলাদেশ নয়, ভারতের পশ্চিম্বঙ্গের বাংলাভাষী অনেক মানুষের কাছেও এটি প্রিয় একটি বই।

‘যদ্যপি আমার গুরু’ বইটি কবে প্রকাশিত হয়?

আহমদ ছফার স্মৃতিকথামূলক বই ‘যধ্যপি আমার গুরু’ প্রথমে দৈনিক ‘বাংলাবাজার পত্রিকা’র সাহিত্য পাতায় প্রায় চারমাস ধরে প্রকাশিত হয় এবং পরবর্তিতে ১৯৯৮ সালে পুস্তক আকারে প্রকাশিত হয়। ১১০ পৃষ্ঠার এই বইটি প্রকাশ করে ঢাকার মাওলা ব্রাদার্স। চট্টগ্রামে জন্ম নেওয়া সুলেখক ও সাহিত্যিক আহমদ ছফার ‘যদ্যপি আমার গুরু বইয়ের প্রচ্ছদশিল্পি কাইয়ূম চৌধুরী। ‘যদ্যপি আমার গুরু’ বইয়ের মুখবন্ধ লেখেন আহমদ ছফা নিজেই, বাংলা বাজারের আজিজ সুপার মার্কেটে বসে।

এই বইটির চাহিদা এমনই যে, মূল বইটির পাশাপাশি বিভিন্ন মাধ্যমে এর পিডিএফ, ইপাব এবং অ্যান্ড্রয়েড অ্যাপ সংস্করণ ছড়িয়ে পড়ছে। অনেকেই এখন বইটি ইন্টারনেট থেকে ডাউনলোড করে পড়লেও আসল সংস্করণটিকে নিজের সংগ্রহে রাখার আগ্রহ বা লোভ ক্রমেক্রমে বাড়ছেই।

‘যদ্যপি আমার গুরু’ বইয়ে গুরু কে?

আহমদ ছফা বইটি তিনি লিখেছেন তাঁর সাথে একজন শিক্ষকের স্মৃতি নিয়ে। ‘যদ্যপি আমার গুরু’ বইটি যেই গুরুকে নিয়ে লেখা তিনি বাংলাদেশের একজন জাতীয় অধ্যাপক। আহমদ ছফার এই গুরুর নাম প্রফেসর আবদুর রাজ্জাক, যিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনা করেছেন। প্রফেসর আবদুর রাজ্জাক ছিলেন আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন একজন পণ্ডিত।

যদ্যপি আমার গুরু বইয়ে যা কিছু আছে

বইটতে লেখক আহমদ স্মরণ করেছেন বাংলাদশের একজন জাতীয় অধাপক, আবদুর রাজ্জাককে। প্রফেসর আবদুর রাজ্জাক লেখক আহমদ ছফার শ্রেণিকক্ষের শিক্ষক ছিলেন না বা আহমদ ছফার সাথে প্রফেসর আবদুর রাজ্জাকের পাঠদান কার্যক্রমের সম্পর্কের কারণে গুরুশিষ্য হয়ে ওঠা নয়। প্রফেসর আবদুর রাজ্জাককে সুপারভাইজার হিসেবে পছন্দ করেছিলেন আহমদ ছফা, বাংলা একাডেমি কর্তৃক পরিচালিত একটি পিএইচডি প্রোগ্রামে তাঁর গবেষণার জন্য। তবে প্রফেসর রাজ্জাককে লেখক ছফা আগে থেকে চিনতেন না, অনেকের পরামর্শে তাঁর দ্বারে পৌঁছান। এই কথাগুলো এই বইয়ের দ্বিতীয়ভাগে উল্লেখ করা আছে। প্রথমভাগে লেখা হয়েছে প্রফেসর রাজ্জাকের সাথে সাক্ষাৎ হওয়ার প্রেক্ষাপট, ড. মুনীর চৌধুরীর সাথে সম্পর্ক ও মন কষাকষি এবং অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ প্রসঙ্গে।

প্রফেসর রাজ্জাকের সাথে লেখক ছফার প্রথম সাক্ষাত থেকে শুরু করে যতদিন তিনি তাঁর সান্নিধ্যে ছিলেন ততদিনের গুরুর সাথে নিজের অভিজ্ঞতা সুনিপুনভাবে উল্লেখ করেছেন। লেখক বলতে ভুলে যাননি যে, গুরুর সাথে নিজের প্রথম দিনের সাক্ষাৎ খুব একটা ভালো অভিজ্ঞতার ছিল না। আবার অকপটেই বইটিতে স্বীকার করে গেছেন যে, দিন যত যেতে থাকে, প্রফেসর আবদুর রাজ্জাকের প্রতি আহমদ ছফার আগ্রহ ক্রমে ক্রমে বাড়তেই ছিল। বইটিতে যা আছে তা হলো- জাতীয় অধ্যাপক আবদুর রাজ্জাককে ঘিরে বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক ও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন প্রসঙ্গ এবং প্রফেসর আবদুর রাজ্জাকের জবানিতে বর্ণিত সমকালীন ও প্রায়-সমকালীন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিবর্গের সংক্ষিপ্ত আলোচনা। বইটিতে আহমদ ছফা প্রয়োজনীয় বিভিন্ন প্রসঙ্গ টেনে গুরু অধ্যাপক আবদুর রাজ্জাকের জ্ঞান, দর্শন, দূরদর্শী চিন্তাভাবনা, সমাজচেতনা, সাংস্কৃতিক মন, আঞ্চলিকতা, বৈশ্বিক জ্ঞান, জনপ্রিয়তা, গহনযোগ্যতা ইত্যাদি প্রসঙ্গে মানুষকে একটি স্বচ্ছ ধারণা প্রদান করতে চেয়েছেন।

আহমদ ছফার বর্ণনা মতে, প্রফেসর রাজ্জাক শুধু একজন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকই ছিলেন না, ছিলেন একটি বিশ্বকোষস্বরূপ। প্রফেসর রাজ্জাকের সাথে তৎকালীন বিভিন্ন দেশের শিক্ষক ও পণ্ডিততের সাথে যোগাযোগ ছিল। যদ্যপি আমার গুরু বইটি এমন একটি বই যার পর্যালোচনা করা খুব সহজ কোনো বিষয় নয়। এরকম একটি বইয়ের সমালোচনা করার মতো যোগ্যতা আমার আছে কি না, সে ব্যপারেও আমি সন্দিহান।

বিশেষ ভক্তি নিয়ে লেখা আহমদ ছফা তাঁর এই বইয়ে যেমন অকপট ছিলেন, তেমনই স্বাভাবিক ছন্দে সহজ-সরল ভাষায় লিখে গেছেন গুরুকে নিয়ে। গুরুর সাথে প্রথম দিনের সাক্ষাতের অভিজ্ঞতা থেকে শুরু করে শেষ যেদিন দেখা হয়েছিল সে পর্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অনেক কথাই ফুটিয়ে তুলেছেন লেখক ছফা। লিখতে গিয়ে লেখককে পাঠকের মনস্তত্ত্ব নিয়েও ভাবতে হয়েছে। যেমন, তিনি বইয়ের প্রথম দিকেই উল্লেখ করেছেন যে, যা কিছু তিনি লিখেছেন তার ভুল ব্যাখ্যা করতে পারেন অনেকে। এমন কি প্রফেসর রাজ্জাক যে সব মন্তব্য তিনি বইটিতে স্থান দিয়েছেন সেসব নিয়েও নানান জনে নানান মত দিতে পারেন সেটিও তিনি জানতেন।

যারাই এই বইটি নিয়ে বলেছেন, লিখেছেন বা পর্যালোচনা বা রিভিউ করছেন, তাঁদের বেশিরভাগ মানুষই মূল আলোচনার বিষয় ‘বই’ থেকে বের হয়ে গিয়ে ‘যদ্যপি আমার গুরু’র আলোকে প্রফেসর রাজ্জাকের জ্ঞান, গভীরতা, মনস্তত্ত্ব, বিশ্বাস, দূরদৃষ্টি ইত্যাদি নিয়ে কথা বলেছেন। আমিও বসলাম এখানে ‘যদ্যপি আমার গুরু’ বই নিয়ে লিখতে, তবে আমার যা কিছু বক্তব্য থাকবে তা বই এবং লেখককে নিয়েই থাকবে।

যদ্যপি আমার গুরু বইটিতে ফুটে উঠেছে প্রফেসর আবদুর রাজ্জাক কেমন প্রকৃতির মানুষ ছিলেন তা। কিন্তু এর থেকেও বড়ো কথা হলো আহমদ ছফা কতটা ফুটিয়ে তুলতে পেরেছেন। দীর্ঘ রচনা পড়ে ভেবে নিতে পারি যে, লেখক ছফা নিজের গুরুকে ফুটিয়ে তুলতে যেমন কার্পণ্য করেননি, তেমনই অতিরিক্ত বা প্রয়োজনের চেয়ে বেশি বলে ফেলেছেন তেমনটি ভাবারও বিশেষ কারণ নেই; এটা লেখনি থেকে বোঝা যায়। আমরা যখনই আমাদের কোনো গুরুকে নিয়ে বলতে চাই, আর সেই গুরুর যদি গুনমুগ্ধ হয়ে পড়ি তবে সে গুরুর ইতিবাচক দিক ছাড়া নেতিবাচক দিক আমাদের চোখে পড়বে না, চোখে পড়লেও লিখতে চাইব না। এই মানবিক ত্রুটিটি ভালোভাবেই এড়িয়ে গেছেন লেখক ছফা।

প্রফেসর রাজ্জাক সবসময়ই সমাজ ও মানুষকে বুঝতে চাইতেন। এর প্রমাণ হিসেবে ছফা উল্লেখ করেছেন- প্রফেসর রাজ্জাক লেখক ছফাকে পরামর্শ দিয়েছিলেন যে, তিনি কোথাও বেড়াতে গেলে সেখানের বাজার এবং বইয়ের দোকানে গিয়ে খোঁজ নিতে; এতে যেমন ওখানকার মানুষের খাদ্যাভ্যাস ও আগ্রহ সম্পর্কে জানা যাবে তেমনই ওই সমাজ ও মানুষের সম্পর্কেও একটি ধারণা পাওয়া যাবে। এছাড়া আরও অনেক পরামর্শ, যা দিয়েছেন প্রফেসর রাজ্জাক, তা লেখক উল্লেখ করেছেন বইতে।

আমাদের সবার পক্ষেই একটি কঠিন কাজ হলো লম্বা সময় ধরে কারও গুণমুগ্ধ হয়ে থাকা বা কাউকে গুণমুগ্ধ করে রাখা। কিন্তু এই কঠিন কাজটিকেই কেমন যেন সহজ মনে হয়েছে ‘যদ্যপি আমার গুরু’ বইয়ে অধ্যাপক রাজ্জাক এবং লেখক ছফার সম্পর্কে জেনে। সুদীর্ঘ ২৩ টি বছর আহমদ ছফা অধ্যাপক আবদুর রাজ্জাকের সান্নিধ্য পেয়েছেন, আহমদ ছফার লেখা সাক্ষ্য দেয়- এই গুরু-শিষ্য জুটির একে অপরকে মোটামুটি ভালোই বুঝতেন এবং তাঁদের মধ্য একের প্রতি আরেকজনের সম্মানের জায়গাটা ক্ষুণ্ণ হয়নি।

বইটি পড়ে বোঝা গেল রাজ্জাকের সাথে তৎকালীন জাতীয় পর্যায়ের ব্যক্তিবর্গ যেমন- কবি, লেখক, পণ্ডিত, শিল্পি, রাজনীতিক, সমাজসেবক প্রমুখের সাথে বেশ ভালো সম্পর্ক ছিল। প্রায় জনের সাথেই তিনি উঠতেন-বসতেন, আবার যাদের সাথে ওঠা-বসার সম্পর্ক ছিল না তাঁরাও বিভিন্ন সময়ে প্রফেসর রাজ্জাকের থেকে পরামর্শ নিতেন। সেকালের মাথাতোলা মানুষদের মধ্যে বিশেষ প্রভাব বিস্তার করে ছিলেন তিনি। লুঙ্গি ও ফতুয়া পরা হালকা পাতলা যে মানুষটি দেশের বিভিন্ন সেক্টরে মাথাতোলা মানুষদের ছাড়িয়েও আন্তর্জাতিক পর্যায়ের সম্মান অর্জন করা ভিনদেশের হ্যারল্ড লাস্কি কিংবা হেনরি কিসিঞ্জারের মনে বিশেষ জায়গা করে নিতে পারেন, তিনি নিশ্চয়ই সাধারণ মানুষ নন; এটিই বোঝাতে চেয়েছেন আহমদ ফা।

‘যদ্যপি আমার গুরু’ রচনায় উঠে এসেছে যে, প্রফেসর রাজ্জাক ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর, পল্লী কবি জসীমউদ্দীন, কাজী নজরুল ইসলাম, অধাপক মুনীর চৌধুরী প্রমুখ ব্যক্তিদের অকুণ্ঠচিত্তে প্রশংসা করলেও অন্যদের ক্ষেত্রে কিছুটা ‘যদি-কিন্তু’ এঁকে দিয়েছেন।  বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় সাহিত্যকর্মকে প্রফেসর রাজ্জাক আধুনিক ঠিকই মনে করতেন, কিন্তু সেগুলো তাঁর মতে মধ্যযুগীয় ধর্ম কেন্দ্রিক ছিল। আবার রাজা রামমোহন রায়কেও তিনি বড়ো কোনো সমাজ সংস্কারক বলে রায় দেননি। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর যত বড় লেখক ছিলেন, ততো বড়ো ছিলেন না বলে মনে করতেন আবদুর রাজ্জাক। প্রফেসর রাজ্জাকের প্রশংসা পেয়ছেন শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদীন এবং শিল্পী এস এম সুলতান। বাংলাদেশের গ্রান্ডমাস্টার নিয়াজ মোর্শেদের দাবারু হতে নানাভাবে সাহায্য করেছেন। অবশ্য আবেদীন, সুলতান এবং মোর্শেদের সাথে প্রফেসর রাজ্জাকের ব্যক্তিগত জানাশোনা ছিল।

আহমদ ছফার রচনা থেকে জানা যায়, অধ্যাপক আবদুর রাজ্জাক বিশ্বাস করতেন বাঙালি মুসলিমদের শিক্ষা, সংস্কৃতি ও সাহিত্যেভাবনায় সংস্কার জরুরি। ইসলাম ধর্মকে অধ্যাপক রাজ্জাক শুধু পরকাল সর্বস্ব ধর্ম হিসেবে নয় বরং এর প্রয়োজনীয়তা পার্থিব জীবনেও রয়েছে।

আমি আবদুর রাজ্জাক কিংবা আহমদ ছফা, দুই জনের একজনকেও দেখিনি। তবে আহমদ ছফার ১১০ পৃষ্ঠার রচনায় স্পষ্টভাবে ফুটে উঠেছে যে, প্রফেসর রাজ্জাক ছিলেন এমন একজন মানুষ যিনি প্রত্যন্ত অঞ্চলের জমির আইল থেকে শুরু করে আন্তর্জাতিক সীমায় পর্যন্ত খুবই তীক্ষ্ণতার সাথে পর্যবেক্ষণ করেছেন।

‘যদ্যপি আমার গুরু’ এমন একটি বই যে বইটির কোনো নেতিবাচক দিক অন্তত আমার চোখে পড়েনি। আমি আমার জায়গা থেকে বলতে পারি, এই বইটি কোনো সাধারণ বই নয়। কিন্তু আহমদ ছফা বেশ সহজ সরল ভাষায় গুরুকে নিয়ে স্মৃতিচারণ করে গেছেন। গুরুকে সেরা প্রমাণ করতে আহমদ ছফা বিশেষ উপমারও ব্যবহার করেননি। যে কেউ চাইলেই তাঁর গুরুকে নিয়ে বা তিনি যার গুনমুগ্ধ তাকে নিয়ে লিখতেই পারেন, কিন্তু আহমদ ছফার মতো এতটা সহজ-সরল-সৎ হয়ে লেখা অনেকাংশেই সম্ভব হবে না।

‘যদ্যপি আমার গুরু’ নিয়ে শেষ কথা

রিভিউ বা পর্যালোচনা বলতে আমরা যে বিশেষ রচনাকে বুঝি যেমন- ইতিবাচক-নেতিবাচক-ইতিবাচক প্যাটার্ন অনুসরণ করে যা কিছু রচনা করা হয় তা এই বইটির ক্ষেত্রে আমি পারলাম না। আমি যতটাই লিখব তার সবই প্রশংসা হবে। প্রতি বাক্যে ‘যদ্যপি আমার গুরু’ বইয়ের লেখক আহমদ ফা সম্পর্কে ভালো ভালো কথা লিখে যাব। তবে এই বই রিভিউ (প্রশংসা) আর না বাড়িয়ে এখানেই সমাপ্ত করছি। আর আপনি যদি দুর্ভাগ্যক্রমে বইটি না পড়েই আমার এই বই রিভিউয়ের নামে বই-প্রশংসাটি পড়ে ফেলেন তাহলে অনুরোধ থাকবে বইটি পড়ার।

শেয়ার করুন

মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার তথ্য সংরক্ষিত রাখুন

লেখকতথ্য

মু. মিজানুর রহমান মিজান

মু. মিজানুর রহমান মিজান একজন স্বাধীন শিক্ষামূলক লেখক। তিনি শিক্ষা গবেষণায় বেশ আগ্রহী। যৌথভাবে কিছু গবেষণায়ও অংশ নিয়েছেন।

ওয়েবসাইটটির সার্বিক উন্নতির জন্য বাংলাদেশের বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানসমূহের মধ্য থেকে স্পনসর খোঁজা হচ্ছে।

বই রিভিউ: যদ্যপি আমার গুরু

প্রকাশ: ০২:১৩:৫৬ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৫ জুন ২০২১

বাংলা ভাষায় রচিত ‘যদ্যপি আমার গুরু’ পাঠকপ্রিয় একটি বই। প্রকাশের পর থেকে এই বইটি নিয়ে আলোচনা-পর্যালোচনা কম হয়নি। এই নিবন্ধে বইটি পড়ে আমার মনে যে প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে, তার কিছুটা এখানে প্রকাশ হলো।

‘যদ্যপি আমার গুরু’ পরিচিতি

বাংলাদেশের অন্যতম সেরা ও পাঠকপ্রিয় অগ্রণী চিন্তাবিদ, সুলেখক, কথাসাহিত্যিক আহমদ ছফা রচিত একটি স্মৃতিচারণমূলক বই হলো ‘যদ্যপি আমার গুরু’। লেখক আহমদ ছফাকে কেউ পছন্দ করুক আর না করুক, তাঁর রচিত ‘যদ্যপি আমার গুরু’ বইটি কারো অপছন্দ সেটি আমি এখনো শুনিনি। বাংলাদেশের শিক্ষিত সমাজে ‘যদ্যপি আমার গুরু’ বইটির নাম শুনেননি এ রকম খুব কম লোকই আছেন। শুধু বাংলাদেশ নয়, ভারতের পশ্চিম্বঙ্গের বাংলাভাষী অনেক মানুষের কাছেও এটি প্রিয় একটি বই।

‘যদ্যপি আমার গুরু’ বইটি কবে প্রকাশিত হয়?

আহমদ ছফার স্মৃতিকথামূলক বই ‘যধ্যপি আমার গুরু’ প্রথমে দৈনিক ‘বাংলাবাজার পত্রিকা’র সাহিত্য পাতায় প্রায় চারমাস ধরে প্রকাশিত হয় এবং পরবর্তিতে ১৯৯৮ সালে পুস্তক আকারে প্রকাশিত হয়। ১১০ পৃষ্ঠার এই বইটি প্রকাশ করে ঢাকার মাওলা ব্রাদার্স। চট্টগ্রামে জন্ম নেওয়া সুলেখক ও সাহিত্যিক আহমদ ছফার ‘যদ্যপি আমার গুরু বইয়ের প্রচ্ছদশিল্পি কাইয়ূম চৌধুরী। ‘যদ্যপি আমার গুরু’ বইয়ের মুখবন্ধ লেখেন আহমদ ছফা নিজেই, বাংলা বাজারের আজিজ সুপার মার্কেটে বসে।

এই বইটির চাহিদা এমনই যে, মূল বইটির পাশাপাশি বিভিন্ন মাধ্যমে এর পিডিএফ, ইপাব এবং অ্যান্ড্রয়েড অ্যাপ সংস্করণ ছড়িয়ে পড়ছে। অনেকেই এখন বইটি ইন্টারনেট থেকে ডাউনলোড করে পড়লেও আসল সংস্করণটিকে নিজের সংগ্রহে রাখার আগ্রহ বা লোভ ক্রমেক্রমে বাড়ছেই।

‘যদ্যপি আমার গুরু’ বইয়ে গুরু কে?

আহমদ ছফা বইটি তিনি লিখেছেন তাঁর সাথে একজন শিক্ষকের স্মৃতি নিয়ে। ‘যদ্যপি আমার গুরু’ বইটি যেই গুরুকে নিয়ে লেখা তিনি বাংলাদেশের একজন জাতীয় অধ্যাপক। আহমদ ছফার এই গুরুর নাম প্রফেসর আবদুর রাজ্জাক, যিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনা করেছেন। প্রফেসর আবদুর রাজ্জাক ছিলেন আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন একজন পণ্ডিত।

যদ্যপি আমার গুরু বইয়ে যা কিছু আছে

বইটতে লেখক আহমদ স্মরণ করেছেন বাংলাদশের একজন জাতীয় অধাপক, আবদুর রাজ্জাককে। প্রফেসর আবদুর রাজ্জাক লেখক আহমদ ছফার শ্রেণিকক্ষের শিক্ষক ছিলেন না বা আহমদ ছফার সাথে প্রফেসর আবদুর রাজ্জাকের পাঠদান কার্যক্রমের সম্পর্কের কারণে গুরুশিষ্য হয়ে ওঠা নয়। প্রফেসর আবদুর রাজ্জাককে সুপারভাইজার হিসেবে পছন্দ করেছিলেন আহমদ ছফা, বাংলা একাডেমি কর্তৃক পরিচালিত একটি পিএইচডি প্রোগ্রামে তাঁর গবেষণার জন্য। তবে প্রফেসর রাজ্জাককে লেখক ছফা আগে থেকে চিনতেন না, অনেকের পরামর্শে তাঁর দ্বারে পৌঁছান। এই কথাগুলো এই বইয়ের দ্বিতীয়ভাগে উল্লেখ করা আছে। প্রথমভাগে লেখা হয়েছে প্রফেসর রাজ্জাকের সাথে সাক্ষাৎ হওয়ার প্রেক্ষাপট, ড. মুনীর চৌধুরীর সাথে সম্পর্ক ও মন কষাকষি এবং অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ প্রসঙ্গে।

প্রফেসর রাজ্জাকের সাথে লেখক ছফার প্রথম সাক্ষাত থেকে শুরু করে যতদিন তিনি তাঁর সান্নিধ্যে ছিলেন ততদিনের গুরুর সাথে নিজের অভিজ্ঞতা সুনিপুনভাবে উল্লেখ করেছেন। লেখক বলতে ভুলে যাননি যে, গুরুর সাথে নিজের প্রথম দিনের সাক্ষাৎ খুব একটা ভালো অভিজ্ঞতার ছিল না। আবার অকপটেই বইটিতে স্বীকার করে গেছেন যে, দিন যত যেতে থাকে, প্রফেসর আবদুর রাজ্জাকের প্রতি আহমদ ছফার আগ্রহ ক্রমে ক্রমে বাড়তেই ছিল। বইটিতে যা আছে তা হলো- জাতীয় অধ্যাপক আবদুর রাজ্জাককে ঘিরে বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক ও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন প্রসঙ্গ এবং প্রফেসর আবদুর রাজ্জাকের জবানিতে বর্ণিত সমকালীন ও প্রায়-সমকালীন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিবর্গের সংক্ষিপ্ত আলোচনা। বইটিতে আহমদ ছফা প্রয়োজনীয় বিভিন্ন প্রসঙ্গ টেনে গুরু অধ্যাপক আবদুর রাজ্জাকের জ্ঞান, দর্শন, দূরদর্শী চিন্তাভাবনা, সমাজচেতনা, সাংস্কৃতিক মন, আঞ্চলিকতা, বৈশ্বিক জ্ঞান, জনপ্রিয়তা, গহনযোগ্যতা ইত্যাদি প্রসঙ্গে মানুষকে একটি স্বচ্ছ ধারণা প্রদান করতে চেয়েছেন।

আহমদ ছফার বর্ণনা মতে, প্রফেসর রাজ্জাক শুধু একজন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকই ছিলেন না, ছিলেন একটি বিশ্বকোষস্বরূপ। প্রফেসর রাজ্জাকের সাথে তৎকালীন বিভিন্ন দেশের শিক্ষক ও পণ্ডিততের সাথে যোগাযোগ ছিল। যদ্যপি আমার গুরু বইটি এমন একটি বই যার পর্যালোচনা করা খুব সহজ কোনো বিষয় নয়। এরকম একটি বইয়ের সমালোচনা করার মতো যোগ্যতা আমার আছে কি না, সে ব্যপারেও আমি সন্দিহান।

বিশেষ ভক্তি নিয়ে লেখা আহমদ ছফা তাঁর এই বইয়ে যেমন অকপট ছিলেন, তেমনই স্বাভাবিক ছন্দে সহজ-সরল ভাষায় লিখে গেছেন গুরুকে নিয়ে। গুরুর সাথে প্রথম দিনের সাক্ষাতের অভিজ্ঞতা থেকে শুরু করে শেষ যেদিন দেখা হয়েছিল সে পর্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অনেক কথাই ফুটিয়ে তুলেছেন লেখক ছফা। লিখতে গিয়ে লেখককে পাঠকের মনস্তত্ত্ব নিয়েও ভাবতে হয়েছে। যেমন, তিনি বইয়ের প্রথম দিকেই উল্লেখ করেছেন যে, যা কিছু তিনি লিখেছেন তার ভুল ব্যাখ্যা করতে পারেন অনেকে। এমন কি প্রফেসর রাজ্জাক যে সব মন্তব্য তিনি বইটিতে স্থান দিয়েছেন সেসব নিয়েও নানান জনে নানান মত দিতে পারেন সেটিও তিনি জানতেন।

যারাই এই বইটি নিয়ে বলেছেন, লিখেছেন বা পর্যালোচনা বা রিভিউ করছেন, তাঁদের বেশিরভাগ মানুষই মূল আলোচনার বিষয় ‘বই’ থেকে বের হয়ে গিয়ে ‘যদ্যপি আমার গুরু’র আলোকে প্রফেসর রাজ্জাকের জ্ঞান, গভীরতা, মনস্তত্ত্ব, বিশ্বাস, দূরদৃষ্টি ইত্যাদি নিয়ে কথা বলেছেন। আমিও বসলাম এখানে ‘যদ্যপি আমার গুরু’ বই নিয়ে লিখতে, তবে আমার যা কিছু বক্তব্য থাকবে তা বই এবং লেখককে নিয়েই থাকবে।

যদ্যপি আমার গুরু বইটিতে ফুটে উঠেছে প্রফেসর আবদুর রাজ্জাক কেমন প্রকৃতির মানুষ ছিলেন তা। কিন্তু এর থেকেও বড়ো কথা হলো আহমদ ছফা কতটা ফুটিয়ে তুলতে পেরেছেন। দীর্ঘ রচনা পড়ে ভেবে নিতে পারি যে, লেখক ছফা নিজের গুরুকে ফুটিয়ে তুলতে যেমন কার্পণ্য করেননি, তেমনই অতিরিক্ত বা প্রয়োজনের চেয়ে বেশি বলে ফেলেছেন তেমনটি ভাবারও বিশেষ কারণ নেই; এটা লেখনি থেকে বোঝা যায়। আমরা যখনই আমাদের কোনো গুরুকে নিয়ে বলতে চাই, আর সেই গুরুর যদি গুনমুগ্ধ হয়ে পড়ি তবে সে গুরুর ইতিবাচক দিক ছাড়া নেতিবাচক দিক আমাদের চোখে পড়বে না, চোখে পড়লেও লিখতে চাইব না। এই মানবিক ত্রুটিটি ভালোভাবেই এড়িয়ে গেছেন লেখক ছফা।

প্রফেসর রাজ্জাক সবসময়ই সমাজ ও মানুষকে বুঝতে চাইতেন। এর প্রমাণ হিসেবে ছফা উল্লেখ করেছেন- প্রফেসর রাজ্জাক লেখক ছফাকে পরামর্শ দিয়েছিলেন যে, তিনি কোথাও বেড়াতে গেলে সেখানের বাজার এবং বইয়ের দোকানে গিয়ে খোঁজ নিতে; এতে যেমন ওখানকার মানুষের খাদ্যাভ্যাস ও আগ্রহ সম্পর্কে জানা যাবে তেমনই ওই সমাজ ও মানুষের সম্পর্কেও একটি ধারণা পাওয়া যাবে। এছাড়া আরও অনেক পরামর্শ, যা দিয়েছেন প্রফেসর রাজ্জাক, তা লেখক উল্লেখ করেছেন বইতে।

আমাদের সবার পক্ষেই একটি কঠিন কাজ হলো লম্বা সময় ধরে কারও গুণমুগ্ধ হয়ে থাকা বা কাউকে গুণমুগ্ধ করে রাখা। কিন্তু এই কঠিন কাজটিকেই কেমন যেন সহজ মনে হয়েছে ‘যদ্যপি আমার গুরু’ বইয়ে অধ্যাপক রাজ্জাক এবং লেখক ছফার সম্পর্কে জেনে। সুদীর্ঘ ২৩ টি বছর আহমদ ছফা অধ্যাপক আবদুর রাজ্জাকের সান্নিধ্য পেয়েছেন, আহমদ ছফার লেখা সাক্ষ্য দেয়- এই গুরু-শিষ্য জুটির একে অপরকে মোটামুটি ভালোই বুঝতেন এবং তাঁদের মধ্য একের প্রতি আরেকজনের সম্মানের জায়গাটা ক্ষুণ্ণ হয়নি।

বইটি পড়ে বোঝা গেল রাজ্জাকের সাথে তৎকালীন জাতীয় পর্যায়ের ব্যক্তিবর্গ যেমন- কবি, লেখক, পণ্ডিত, শিল্পি, রাজনীতিক, সমাজসেবক প্রমুখের সাথে বেশ ভালো সম্পর্ক ছিল। প্রায় জনের সাথেই তিনি উঠতেন-বসতেন, আবার যাদের সাথে ওঠা-বসার সম্পর্ক ছিল না তাঁরাও বিভিন্ন সময়ে প্রফেসর রাজ্জাকের থেকে পরামর্শ নিতেন। সেকালের মাথাতোলা মানুষদের মধ্যে বিশেষ প্রভাব বিস্তার করে ছিলেন তিনি। লুঙ্গি ও ফতুয়া পরা হালকা পাতলা যে মানুষটি দেশের বিভিন্ন সেক্টরে মাথাতোলা মানুষদের ছাড়িয়েও আন্তর্জাতিক পর্যায়ের সম্মান অর্জন করা ভিনদেশের হ্যারল্ড লাস্কি কিংবা হেনরি কিসিঞ্জারের মনে বিশেষ জায়গা করে নিতে পারেন, তিনি নিশ্চয়ই সাধারণ মানুষ নন; এটিই বোঝাতে চেয়েছেন আহমদ ফা।

‘যদ্যপি আমার গুরু’ রচনায় উঠে এসেছে যে, প্রফেসর রাজ্জাক ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর, পল্লী কবি জসীমউদ্দীন, কাজী নজরুল ইসলাম, অধাপক মুনীর চৌধুরী প্রমুখ ব্যক্তিদের অকুণ্ঠচিত্তে প্রশংসা করলেও অন্যদের ক্ষেত্রে কিছুটা ‘যদি-কিন্তু’ এঁকে দিয়েছেন।  বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় সাহিত্যকর্মকে প্রফেসর রাজ্জাক আধুনিক ঠিকই মনে করতেন, কিন্তু সেগুলো তাঁর মতে মধ্যযুগীয় ধর্ম কেন্দ্রিক ছিল। আবার রাজা রামমোহন রায়কেও তিনি বড়ো কোনো সমাজ সংস্কারক বলে রায় দেননি। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর যত বড় লেখক ছিলেন, ততো বড়ো ছিলেন না বলে মনে করতেন আবদুর রাজ্জাক। প্রফেসর রাজ্জাকের প্রশংসা পেয়ছেন শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদীন এবং শিল্পী এস এম সুলতান। বাংলাদেশের গ্রান্ডমাস্টার নিয়াজ মোর্শেদের দাবারু হতে নানাভাবে সাহায্য করেছেন। অবশ্য আবেদীন, সুলতান এবং মোর্শেদের সাথে প্রফেসর রাজ্জাকের ব্যক্তিগত জানাশোনা ছিল।

আহমদ ছফার রচনা থেকে জানা যায়, অধ্যাপক আবদুর রাজ্জাক বিশ্বাস করতেন বাঙালি মুসলিমদের শিক্ষা, সংস্কৃতি ও সাহিত্যেভাবনায় সংস্কার জরুরি। ইসলাম ধর্মকে অধ্যাপক রাজ্জাক শুধু পরকাল সর্বস্ব ধর্ম হিসেবে নয় বরং এর প্রয়োজনীয়তা পার্থিব জীবনেও রয়েছে।

আমি আবদুর রাজ্জাক কিংবা আহমদ ছফা, দুই জনের একজনকেও দেখিনি। তবে আহমদ ছফার ১১০ পৃষ্ঠার রচনায় স্পষ্টভাবে ফুটে উঠেছে যে, প্রফেসর রাজ্জাক ছিলেন এমন একজন মানুষ যিনি প্রত্যন্ত অঞ্চলের জমির আইল থেকে শুরু করে আন্তর্জাতিক সীমায় পর্যন্ত খুবই তীক্ষ্ণতার সাথে পর্যবেক্ষণ করেছেন।

‘যদ্যপি আমার গুরু’ এমন একটি বই যে বইটির কোনো নেতিবাচক দিক অন্তত আমার চোখে পড়েনি। আমি আমার জায়গা থেকে বলতে পারি, এই বইটি কোনো সাধারণ বই নয়। কিন্তু আহমদ ছফা বেশ সহজ সরল ভাষায় গুরুকে নিয়ে স্মৃতিচারণ করে গেছেন। গুরুকে সেরা প্রমাণ করতে আহমদ ছফা বিশেষ উপমারও ব্যবহার করেননি। যে কেউ চাইলেই তাঁর গুরুকে নিয়ে বা তিনি যার গুনমুগ্ধ তাকে নিয়ে লিখতেই পারেন, কিন্তু আহমদ ছফার মতো এতটা সহজ-সরল-সৎ হয়ে লেখা অনেকাংশেই সম্ভব হবে না।

‘যদ্যপি আমার গুরু’ নিয়ে শেষ কথা

রিভিউ বা পর্যালোচনা বলতে আমরা যে বিশেষ রচনাকে বুঝি যেমন- ইতিবাচক-নেতিবাচক-ইতিবাচক প্যাটার্ন অনুসরণ করে যা কিছু রচনা করা হয় তা এই বইটির ক্ষেত্রে আমি পারলাম না। আমি যতটাই লিখব তার সবই প্রশংসা হবে। প্রতি বাক্যে ‘যদ্যপি আমার গুরু’ বইয়ের লেখক আহমদ ফা সম্পর্কে ভালো ভালো কথা লিখে যাব। তবে এই বই রিভিউ (প্রশংসা) আর না বাড়িয়ে এখানেই সমাপ্ত করছি। আর আপনি যদি দুর্ভাগ্যক্রমে বইটি না পড়েই আমার এই বই রিভিউয়ের নামে বই-প্রশংসাটি পড়ে ফেলেন তাহলে অনুরোধ থাকবে বইটি পড়ার।