০২:১১ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
                       

জায়োনিজম কী ও জায়োনিস্ট কারা, ইতিহাসে ইহুদি জাতি এবং থিওডর হার্জলের অনুসারী জায়োনিস্টদের ঐতিহাসিক পটভূমি কী?

মু. মিজানুর রহমান মিজান
  • প্রকাশ: ০৮:২২:১৩ অপরাহ্ন, সোমবার, ৭ জুন ২০২১
  • / ১১৬৫৫ বার পড়া হয়েছে

জেরুসালেম মুসলমান, খ্রিস্টান ও ইহুদি সবার কাছে গুরত্বপূর্ণ ভূমি | Photo by Sander Crombach on Unsplash

মানুষের কাছে ইহুদিদের সম্পর্কে জানার আগ্রহ আজ নতুন নয়। কিন্তু কতটুকু জানা গেছে এদের সম্পর্কে আবার যা জানা গেল তার কতটুকু সত্য সেটি এখনো প্রশ্নবোধক হয়ে আছে সবার কাছে। পৃথিবীর ইতিহাসে সম্ভবত ইহুদিরাই সবেচেয়ে বেশি নির্যাতিত, নিপীড়িত এবং বিরক্তিকর এক জাতি। ইতিহাস ঘাটলে দেখা যায় ইহুদিরা নিজেদের কারণেই নানা সময়ে নানাভাবে নির্যাতিত হয়েছে। ইহুদিদের একটি স্বভাব হলো তাদের বাইরে অর্থাৎ ইহুদিদের বাইরের কেউ তাদের কোনোভাবে অনুগ্রহ করলে সেটি তারা ভুলে যায়। অথবা তারা অন্যের মাধ্যমে যে অনুগ্রহ পেয়েছে তা তাদের প্রাপ্য বলে ধরে নেয়। কিন্তু নিজেরা কোনো জায়গা থেকে কোনোভাবে আঘাতপ্রাপ্ত হয়ে থাকলে তার প্রতিশোধ না নেওয়া পর্যন্ত বিশ্রাম নিতে চায় না। পবিত্র কুরআনে ইহুদিদের পরিচয় করিয়ে দেওয়া হয় বনি ইসরাইল নামে।

ইহুদি এবং ইহুদিবাদ (Judaism) নিয়ে বলতে গেলে অনেক কিছুই বলা সম্ভব। এই নিবন্ধে শুধু জায়োনিজম বা জায়নবাদ নিয়ে অল্প কিছু কথা বলা হয়েছে। হতে পারে জায়োনিজম সম্পর্কে এখানে যা উল্লেখ করা হলো তা আপনার কাছে অজানা নয়।

জায়োনিজম বা জায়নবাদ কী?

জায়োনিজম হলো এক ধরনের ভাবাদর্শ এবং জাতীয়দাবাদি আন্দোলন। জায়নবাদ নামের এই ভাবাদর্শ যা ইহুদি শ্রেষ্ঠত্ববাদকে লালন করে সার্বভৌম রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠাকে সমর্থন করে। লেভাণ্টের একটি বিস্তৃত জায়গা নিয়ে ইহুদিদের জন্য একটি নিজস্ব রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করা জায়োনিজম বা জায়নবাদি জাতীয়তাবাদি আন্দোলনের প্রধান লক্ষ্য। জায়োনিজম (Zionism) শব্দটি এসেছে হিব্রু জায়ন (zion) শব্দ থেকে। হিব্রু ভাষার শব্দ ‘জায়ন’ দিয়ে বোঝানো হয় জেরুসালেম শহরকে। তবে জায়ন হলো মূলত জেরুসালেমের একটি পাহাড়ের নাম। পাহাড়টি মাউন্ট জায়ন (Mount Hill) বা জায়ন’স হিল (Zion’s Hill) নামে পরিচিত।

সত্যিকার অর্থে, জায়োনিজম একক কোনো মতবাদ, ভাবাদর্শ বা জাতীয়তাবাদ নয়। বিভিন্ন রকমের জায়োনিজমের উপস্থিতি চিহ্নিত করেছেন গবেষকরা। সাধারণ জায়নবাদ, রাজনৈতিক জায়নবাদ, ধর্মীয় জায়নবাদ, শ্রমিক বা সমাজতান্ত্রিক জায়নবাদ (বামপন্থী), সংশোধনবাদি জায়নবাদ, সবুজ জায়নবাদ ইত্যাদি। বিশ্বজড়ে যে জায়নবাদ নিয়ে চর্চা হচ্ছে তা হলো রাজনৈতিক জায়নবাদ। সাধারণভাবে চর্চিত এই জায়োনিজম বা জায়নবাদ অর্থ হলো জায়ন পাহাড়কে কেন্দ্র করে বা কেনানের আশেপাশে বিস্তির্ণ এলাকা নিয়ে একটি ইহুদি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা ও প্রতিরক্ষামূলক প্রত্যয়।

জায়োনিজম বা জায়নবাদ হলো এমন একটি রাজনৈতিক ভাবাদর্শ যা গড়ে উঠেছে ইহুদিবাদ বা জুদাইজম (Judaism) থেকে। জায়নবাদে বিশ্বাসীরা চায় নিজেদের জন্য এমন একটি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করতে, যেখানে তারাই হবে সংখ্যাগরিষ্ঠ। তাঁরা কোথাও সংখ্যলঘু হয়ে থাকতে চায় না।

ইহুদিদের ধর্ম, জুদাইজম-শ্রেষ্ঠত্ব-মতবাদ, সংখ্যালঘু হয়ে না থাকার চেয়ে সংখ্যাগুরু হয়ে রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করা, ঐতিহাসিক ও ধর্মীয় সম্পর্ক বিবেচনায় জায়ন পাহাড় বা জেরুসালেমের ভূমিতে বিচরণের প্রত্যাশা, প্রতিজ্ঞা ইত্যাদি মিলে যে বিশেষ রাজনৈতিক ভাবাদর্শ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে তাকে জায়োনিজম বা জায়নবাদ বলে।

জায়োনিস্ট কারা?

সকল ইহুদি জায়োনিস্ট (Zionist) বলে বিবেচিত হয় না। যেসব ইহুদি ইহুদি-শ্রেষ্ঠত্ববাদকে ও জায়োনিজমকে ধারণ করে ইহুদি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করতে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে কাজ করেছে এবং প্রতিষ্ঠিত ইহুদি রাষ্ট্রকে রক্ষা ও রাষ্ট্রের আয়তন বৃদ্ধি করার জন্য চেষ্টা করে চলেছে তাদেরকে জায়োনিস্ট বলা হয়।

থিওডর হার্জল এবং ওয়ার্ল্ড জায়োনিস্ট অরগানাইজেশন (Theodor Herzl & World Zionist Organization)

আধুনিক জায়নবাদের জনক হলেন থিওডর হার্জল। থিওডর হার্জল ১৮৬০ সালের ২ মে তৎকালীন অস্ট্রিয়ান সাম্রাজ্যের হাঙ্গেরি রাজ্যের পেস্ট শহরে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ছিলেন একজন সাংবাদিক, লেখক এবং রাজিনীতিবিদ। হার্জল ১৮৯৭ সালে ওয়ার্ল্ড জায়োনিস্ট অরগানাইজেশন (World Zionist Organization – WZO) নামে একটি সংস্থা প্রতিষ্ঠা করেন। এই ইহুদিবাদি সংস্থার মাধ্যমে তিনি এবং তার সহযোগীরা তাঁদের নিজেদের ভাবাদর্শের প্রচার করতেন এবং ফিলিস্তিনে একটি ইহুদি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার জন্য প্রচার চালাতেন। থিওডর হার্জলের অন্যতম প্রধান সহকর্মি ছিলেন ম্যাক্স সিমন নরডাউ (Max Simon Nordau)। নরডাউও যুক্ত ছিলেন ওয়ার্ল্ড জায়োনিস্ট অরগানাইজেশন প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে।

যদিও ফিলিস্তিনে ইসরায়েল নামে ইহুদিদের নিজস্ব রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পূর্বেই থিওডর হার্জল মারা যান, তবুও ইসরায়েলের প্রতিষ্ঠাতা তাকেই ধরা হয়। ইসরায়েলের জনক থিওডর হার্জল।

ইতিহাসে ইহুদি জাতি এবং জায়োনিজম বা জায়োনবাদের ঐতিহাসিক পটভূমি

হিব্রু বাইবেল বা তানাখে বর্ণিত বাণী অনুযায়ী ইহুদিরা মনে করে যে, কেনান (লেভান্ট) অঞ্চল ঈশ্বর তাদেরকে দান করেছেন। এই লেভান্ট বা কেনান অঞ্চলকে ইহুদিরা প্রতিশ্রুত দেশ (Promised Land) বলে মনে করে। এই অঞ্চলটি আবার খ্রিস্টান ও মুসলমানদের কাছেও গুরুত্বপূর্ণ।

কেনান থেকে ইহুদিদের নির্বাসন শুরু হয়েছিল ৫৮৬ খ্রিস্টপূর্ব থেকে। তখন সমগ্র কেনান তথা লেভান্টের শাসনক্ষমতা ব্যাবিলনিয়দের হাতে। নেবুচাদনেজার ছিলেন তৎকালীন ব্যবিলনিয় রাজা। রাজা নেবুচাদনেজারের নির্দেশে মাউন্ট টেম্পলে অবস্থিত ইহুদিদের ফার্স্ট টেম্পল ধ্বংস করা হয়। এটিও ৫৮৬ খ্রিস্টপুর্বেরই ঘটনা। তখন ইহুদিদের অবস্থা খুবই সংকটাপন্ন হয়ে যায়। ব্যাবিলনিয় শাসনামলে ইহুদিরা খুব একটা ভালো ছিল না। তদেরকে না খেয়ে ও পরিশ্রম করে করে মরতে হতো, এরকম শোনা যায়।

পরবর্তিতে প্রথম শতাব্দীতে রোমান সাম্রাজ্যের সময় রোমানদের সাথেও সম্পর্কও ভালো যায় না। দ্বিতীয় শতাব্দীতে রোমানদের সাথে ইহুদিদের দ্বিতীয় যুদ্ধের (বার কোখবা যুদ্ধ) পর ইহুদিদের তাদের জুদেয়া (Judea) প্রদেশ থেকে, বিশেষ করে জেরুসালেমে চূড়ান্তভাবে নিষিদ্ধ করা হয়। এর পূর্বে যখন লেভান্ট বা কেনানের শাসনক্ষমতা ব্যাবিলনিয়দের (পারস্য) হাতে ছিল তখন থেকেই ইহুদি নির্বাসন শুরু হলেও, তখন ইহুদিদের এই অঞ্চলে নিষিদ্ধ করা হয়নি। রোমান-ইহুদি দ্বিতীয় যুদ্ধে ইহুদিরা পরাজিত হলে জেরুসালেম ছাড়তে হয় সকল ইহুদিকে। সেই যুদ্ধে সেকেন্ড টেম্পলও ধ্বংস হয়। এটি ১১৫ থেকে ১১৭ সালের কথা।

ইহুদিরা ইউরোপে থাকা শুরু করে। কেউ কেউ সেখানে বিচ্ছিন্নভাবে থাকে আবার কেউ কেউ গোষ্ঠীবদ্ধ হয়ে থাকে। খেয়ে থাকুক, না খেয়ে থাকুক, অন্যের দাস হয়ে থাকুক অথবা অন্য যে ভাবেই তারা দিন, মাস, বছর, শতাব্দী পার করুক না কেন তাদের মধ্যে থেকে কখনোই ইহুদিবাদ মুছে যায়নি। তারা সুযোগ পেলেই নিজেদের শ্রেষ্ঠত্ব প্রকাশ করতে চাইত। তাদেরকে বিভিন্ন সময়ে অকৃতজ্ঞ থাকতে দেখা গেছে। ইতিহাসবিদেরা মনে করেন, ইহুদিরা চারিত্রিকভাবে কখনোই ভালো ছিল না, যার কারণে নানান সময়ে শাসকদের রোষানলে পড়তে হয়েছে। ইহুদিরা সংখ্যা কম হয়েও কৌশলে বিভিন্ন জায়গায় প্রবেশ করে বা প্রবেশের সুযোগ পেলে সেখানেরই ক্ষতি করে বের হতো কিংবা ওইসব নিজেদের করে নিত। আড়াইহাজারেরও বেশি সময়ের ইতিহাস এই ইহুদিদের। জায়োনিজমকে ফোকাস করা এই নিবন্ধে তাঁদের আড়াইহাজার বছরের সকল ইতিহাস ফুটিয়ে তোলা সম্ভব নয়।

বিভিন্ন ঘটনা, প্রতিঘটনা, সম্মেলন, পরামর্শ, সিদ্ধান্ত, পুনঃসিদ্ধান্ত ইত্যাদির মধ্যদিয়ে সময় অতিবাহিত হতে হতে ১৮৯৭ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় ওয়ার্ল্ড জায়োনিস্ট অরগানাইজেশন। ইহুদিরা তখন খুবই চাইছিল নিজেদের একটি দেশ হোক। বিভিন্ন সময় বিভিন্ন অঞ্চলে তাদের দেশ গঠনের প্রস্তাব আসে। কেউ কেউ সেই সব প্রস্তাবে সাড়া প্রদান করলেও কারও প্রস্তাব সাফল্যের মুখ দেখেনি। পরবর্তিতে থিওডর হার্জল নামের একজন সাংবাদিক ও সাংস্কৃতিক কর্মি বিষয়টি নিয়ে ভাবেন। হার্জল একটি ইহুদি রাষ্ট্রের রূপরেখা তুলে ধরেন এবং প্রচারণাও করতে থাকেন। তখন সেটি বেশ গুরুত্বের সাথে নেয় সবাই। বিশেষ করে তখনকার রাব্বি এবং সেফার্ডিরা হার্জলের এই প্রস্তাবকে খুব প্রশংসার চোখেই দেখেছিলেন। ইহুদি পণ্ডিতদের বলা হয় রাব্বি। এবং পর্তুগাল ও স্পেনে বসবাসরত ইহুদি ধধর্মালম্বিদের বলা হতো সেফার্ডি।

থিওডর হার্জল চেয়েছিলেন আর্জেন্টিনা বা ফিলিস্তিনে ইহুদি রাষ্ট্রের জন্ম দিতে। আর্জেন্টিনাকে পছন্দ করার কারণ ছিল এর বিস্তৃত এবং বিচ্ছিন্ন জনবহুল অঞ্চল এবং নাতিশীতোষ্ণ জলবায়ু। কিন্তু ফিলিস্তিনে রাষ্ট্র গড়ায় তিনি অধিক আগ্রহী ছিলেন, কারণ ফিলিস্তিনের সাথে তাদের ঐতিহাসিক ও ধর্মীয় উভয় সম্পর্কই রয়েছে। যেহেতু হিব্রু বাইবেলে বলা হয়েছে কেনান (লেভান্ট) অঞ্চল স্রষ্টা তাদেরকেই দান করেছেন এবং ওই অঞ্চলকেই তাদের প্রতিশ্রুত দেশ মনে করে সেহেতু আর্জেন্টিনার চেয়ে ফিলিস্তিনকেই বেছে নেয় ইহুদিরা। জায়ন পাহাড় কিংবা জেরুসালেমের ভূমিতে তাঁরা পুনরায় বিচরণ করতে চাইল, সেখানে প্রতিষ্ঠা করতে চাইল নিজেদের সার্বভৌম রাষ্ট্র। এভাবেই জায়নবাদের প্রতিষ্ঠা হয়েছে। থিওডর হার্জলকে বলা হয় জায়নিজম তথা ইহুদি রাষ্ট্রের প্রবক্তা। ফিলিস্তিনের জমিতে জেরুসালেমকে ঘিরে যে ইসরায়েল নামের রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, সেই ইসরায়ল রাষ্ট্রের জনক বলা হয় থিওডর হার্জলকে

জায়োনিজম ও জুদাইজম এক নয়

জায়োনিজম হলো ইহুদি ধর্মের অনুসারীদের একটি বিশেষ গোষ্ঠী যারা রাজনৈতিকভাবে নিজেদের শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণ করতে ও অন্যের ওপর প্রভাব বিস্তার করতে মরিয়া হয়ে আছে। আর অন্যদিকে জুদাইজম হলো ইহুদি ধর্মের ধর্মীয় অ শান্তিপ্রিয় মতবাদ। জায়োনিজম ও জুদাইজম সম্পুর্ণ ভিন্ন বা আলাদা। যারা জায়োনিজমকে ধারণ করে তারা সকলেই ইহুদি কিন্তু সকল ইহুদি জায়োনিজম সমর্থন করে না। আবার এমনো জায়োনিস্ট আছে যারা পুরোপুরিভাব ইহুদিবাদে (জুদাইজম) বিশ্বাসী নয়। নাস্তিক জায়োনিস্টের সংখ্যাও কম নয়। নাস্তিক জায়োনিস্টদের কাছে ধর্ম বিশ্বাস কিছু না হলেও এরা রাজনৈতিকভাবে প্রভাব বিস্তার করতে চায়।

জায়োনিজম এবং জুদাইজম নিয়ে যা কিছুই বলা হোক না কেন, আপনি যদি বিশ্বের খবরাখবর রাখেন তাহলেই বুঝতে পারবে এই দুইটি কখনোই এক নয়। জায়োজিমকে বা জায়নবাদকে সন্ত্রাসবাদ হিসেবেও আখ্যায়িত করা হয়। স্বয়ং ইহুদিরাই, যারা জায়োনিস্ট নন, তারাই স্পষ্ট করে বলছে যে, জায়োনিজম হলো রাষ্ট্রীয়ভাবে সঙ্ঘবদ্ধ সন্ত্রাসী গোষ্ঠী। পৃথিবীতে অন্যতম বর্ণবাদি হলো জায়োনিস্টরা।

এ সম্পর্কে আরও জানতে আপনারা বইয়ের সহযোগিতা নিতে পারেন। উল্লেখযোগ্য কয়েকটি বই হলো- আ হিস্ট্রি অব জায়োনিজম: ফ্রোম দ্য ফ্রেন্স রেভ্যোলুশন টু দ্য এস্টাবলিশমেন্ট অব দ্য স্টেট অফ ইসরায়েল (ওয়াল্টার লেকার), সিক্রেটস অব জায়োনিজম (হেনরি ফোর্ড), জায়োনিজম: কনসাইজ হিস্ট্রি (অ্যালেক্স রিভচিন), জায়োজনিজম অ্যান্ড দ্য ল্যান্ড অব ইসরায়েল (ইয়োটাব এলিয়াচ) ।

শেয়ার করুন

One thought on “জায়োনিজম কী ও জায়োনিস্ট কারা, ইতিহাসে ইহুদি জাতি এবং থিওডর হার্জলের অনুসারী জায়োনিস্টদের ঐতিহাসিক পটভূমি কী?

  1. মাশাল্লাহ, অনেক সুন্দর করে লিখেছেন।

মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার তথ্য সংরক্ষিত রাখুন

লেখকতথ্য

মু. মিজানুর রহমান মিজান

মু. মিজানুর রহমান মিজান একজন স্বাধীন শিক্ষামূলক লেখক। তিনি শিক্ষা গবেষণায় বেশ আগ্রহী। যৌথভাবে কিছু গবেষণায়ও অংশ নিয়েছেন।

ওয়েবসাইটটির সার্বিক উন্নতির জন্য বাংলাদেশের বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানসমূহের মধ্য থেকে স্পনসর খোঁজা হচ্ছে।

জায়োনিজম কী ও জায়োনিস্ট কারা, ইতিহাসে ইহুদি জাতি এবং থিওডর হার্জলের অনুসারী জায়োনিস্টদের ঐতিহাসিক পটভূমি কী?

প্রকাশ: ০৮:২২:১৩ অপরাহ্ন, সোমবার, ৭ জুন ২০২১

মানুষের কাছে ইহুদিদের সম্পর্কে জানার আগ্রহ আজ নতুন নয়। কিন্তু কতটুকু জানা গেছে এদের সম্পর্কে আবার যা জানা গেল তার কতটুকু সত্য সেটি এখনো প্রশ্নবোধক হয়ে আছে সবার কাছে। পৃথিবীর ইতিহাসে সম্ভবত ইহুদিরাই সবেচেয়ে বেশি নির্যাতিত, নিপীড়িত এবং বিরক্তিকর এক জাতি। ইতিহাস ঘাটলে দেখা যায় ইহুদিরা নিজেদের কারণেই নানা সময়ে নানাভাবে নির্যাতিত হয়েছে। ইহুদিদের একটি স্বভাব হলো তাদের বাইরে অর্থাৎ ইহুদিদের বাইরের কেউ তাদের কোনোভাবে অনুগ্রহ করলে সেটি তারা ভুলে যায়। অথবা তারা অন্যের মাধ্যমে যে অনুগ্রহ পেয়েছে তা তাদের প্রাপ্য বলে ধরে নেয়। কিন্তু নিজেরা কোনো জায়গা থেকে কোনোভাবে আঘাতপ্রাপ্ত হয়ে থাকলে তার প্রতিশোধ না নেওয়া পর্যন্ত বিশ্রাম নিতে চায় না। পবিত্র কুরআনে ইহুদিদের পরিচয় করিয়ে দেওয়া হয় বনি ইসরাইল নামে।

ইহুদি এবং ইহুদিবাদ (Judaism) নিয়ে বলতে গেলে অনেক কিছুই বলা সম্ভব। এই নিবন্ধে শুধু জায়োনিজম বা জায়নবাদ নিয়ে অল্প কিছু কথা বলা হয়েছে। হতে পারে জায়োনিজম সম্পর্কে এখানে যা উল্লেখ করা হলো তা আপনার কাছে অজানা নয়।

জায়োনিজম বা জায়নবাদ কী?

জায়োনিজম হলো এক ধরনের ভাবাদর্শ এবং জাতীয়দাবাদি আন্দোলন। জায়নবাদ নামের এই ভাবাদর্শ যা ইহুদি শ্রেষ্ঠত্ববাদকে লালন করে সার্বভৌম রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠাকে সমর্থন করে। লেভাণ্টের একটি বিস্তৃত জায়গা নিয়ে ইহুদিদের জন্য একটি নিজস্ব রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করা জায়োনিজম বা জায়নবাদি জাতীয়তাবাদি আন্দোলনের প্রধান লক্ষ্য। জায়োনিজম (Zionism) শব্দটি এসেছে হিব্রু জায়ন (zion) শব্দ থেকে। হিব্রু ভাষার শব্দ ‘জায়ন’ দিয়ে বোঝানো হয় জেরুসালেম শহরকে। তবে জায়ন হলো মূলত জেরুসালেমের একটি পাহাড়ের নাম। পাহাড়টি মাউন্ট জায়ন (Mount Hill) বা জায়ন’স হিল (Zion’s Hill) নামে পরিচিত।

সত্যিকার অর্থে, জায়োনিজম একক কোনো মতবাদ, ভাবাদর্শ বা জাতীয়তাবাদ নয়। বিভিন্ন রকমের জায়োনিজমের উপস্থিতি চিহ্নিত করেছেন গবেষকরা। সাধারণ জায়নবাদ, রাজনৈতিক জায়নবাদ, ধর্মীয় জায়নবাদ, শ্রমিক বা সমাজতান্ত্রিক জায়নবাদ (বামপন্থী), সংশোধনবাদি জায়নবাদ, সবুজ জায়নবাদ ইত্যাদি। বিশ্বজড়ে যে জায়নবাদ নিয়ে চর্চা হচ্ছে তা হলো রাজনৈতিক জায়নবাদ। সাধারণভাবে চর্চিত এই জায়োনিজম বা জায়নবাদ অর্থ হলো জায়ন পাহাড়কে কেন্দ্র করে বা কেনানের আশেপাশে বিস্তির্ণ এলাকা নিয়ে একটি ইহুদি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা ও প্রতিরক্ষামূলক প্রত্যয়।

জায়োনিজম বা জায়নবাদ হলো এমন একটি রাজনৈতিক ভাবাদর্শ যা গড়ে উঠেছে ইহুদিবাদ বা জুদাইজম (Judaism) থেকে। জায়নবাদে বিশ্বাসীরা চায় নিজেদের জন্য এমন একটি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করতে, যেখানে তারাই হবে সংখ্যাগরিষ্ঠ। তাঁরা কোথাও সংখ্যলঘু হয়ে থাকতে চায় না।

ইহুদিদের ধর্ম, জুদাইজম-শ্রেষ্ঠত্ব-মতবাদ, সংখ্যালঘু হয়ে না থাকার চেয়ে সংখ্যাগুরু হয়ে রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করা, ঐতিহাসিক ও ধর্মীয় সম্পর্ক বিবেচনায় জায়ন পাহাড় বা জেরুসালেমের ভূমিতে বিচরণের প্রত্যাশা, প্রতিজ্ঞা ইত্যাদি মিলে যে বিশেষ রাজনৈতিক ভাবাদর্শ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে তাকে জায়োনিজম বা জায়নবাদ বলে।

জায়োনিস্ট কারা?

সকল ইহুদি জায়োনিস্ট (Zionist) বলে বিবেচিত হয় না। যেসব ইহুদি ইহুদি-শ্রেষ্ঠত্ববাদকে ও জায়োনিজমকে ধারণ করে ইহুদি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করতে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে কাজ করেছে এবং প্রতিষ্ঠিত ইহুদি রাষ্ট্রকে রক্ষা ও রাষ্ট্রের আয়তন বৃদ্ধি করার জন্য চেষ্টা করে চলেছে তাদেরকে জায়োনিস্ট বলা হয়।

থিওডর হার্জল এবং ওয়ার্ল্ড জায়োনিস্ট অরগানাইজেশন (Theodor Herzl & World Zionist Organization)

আধুনিক জায়নবাদের জনক হলেন থিওডর হার্জল। থিওডর হার্জল ১৮৬০ সালের ২ মে তৎকালীন অস্ট্রিয়ান সাম্রাজ্যের হাঙ্গেরি রাজ্যের পেস্ট শহরে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ছিলেন একজন সাংবাদিক, লেখক এবং রাজিনীতিবিদ। হার্জল ১৮৯৭ সালে ওয়ার্ল্ড জায়োনিস্ট অরগানাইজেশন (World Zionist Organization – WZO) নামে একটি সংস্থা প্রতিষ্ঠা করেন। এই ইহুদিবাদি সংস্থার মাধ্যমে তিনি এবং তার সহযোগীরা তাঁদের নিজেদের ভাবাদর্শের প্রচার করতেন এবং ফিলিস্তিনে একটি ইহুদি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার জন্য প্রচার চালাতেন। থিওডর হার্জলের অন্যতম প্রধান সহকর্মি ছিলেন ম্যাক্স সিমন নরডাউ (Max Simon Nordau)। নরডাউও যুক্ত ছিলেন ওয়ার্ল্ড জায়োনিস্ট অরগানাইজেশন প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে।

যদিও ফিলিস্তিনে ইসরায়েল নামে ইহুদিদের নিজস্ব রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পূর্বেই থিওডর হার্জল মারা যান, তবুও ইসরায়েলের প্রতিষ্ঠাতা তাকেই ধরা হয়। ইসরায়েলের জনক থিওডর হার্জল।

ইতিহাসে ইহুদি জাতি এবং জায়োনিজম বা জায়োনবাদের ঐতিহাসিক পটভূমি

হিব্রু বাইবেল বা তানাখে বর্ণিত বাণী অনুযায়ী ইহুদিরা মনে করে যে, কেনান (লেভান্ট) অঞ্চল ঈশ্বর তাদেরকে দান করেছেন। এই লেভান্ট বা কেনান অঞ্চলকে ইহুদিরা প্রতিশ্রুত দেশ (Promised Land) বলে মনে করে। এই অঞ্চলটি আবার খ্রিস্টান ও মুসলমানদের কাছেও গুরুত্বপূর্ণ।

কেনান থেকে ইহুদিদের নির্বাসন শুরু হয়েছিল ৫৮৬ খ্রিস্টপূর্ব থেকে। তখন সমগ্র কেনান তথা লেভান্টের শাসনক্ষমতা ব্যাবিলনিয়দের হাতে। নেবুচাদনেজার ছিলেন তৎকালীন ব্যবিলনিয় রাজা। রাজা নেবুচাদনেজারের নির্দেশে মাউন্ট টেম্পলে অবস্থিত ইহুদিদের ফার্স্ট টেম্পল ধ্বংস করা হয়। এটিও ৫৮৬ খ্রিস্টপুর্বেরই ঘটনা। তখন ইহুদিদের অবস্থা খুবই সংকটাপন্ন হয়ে যায়। ব্যাবিলনিয় শাসনামলে ইহুদিরা খুব একটা ভালো ছিল না। তদেরকে না খেয়ে ও পরিশ্রম করে করে মরতে হতো, এরকম শোনা যায়।

পরবর্তিতে প্রথম শতাব্দীতে রোমান সাম্রাজ্যের সময় রোমানদের সাথেও সম্পর্কও ভালো যায় না। দ্বিতীয় শতাব্দীতে রোমানদের সাথে ইহুদিদের দ্বিতীয় যুদ্ধের (বার কোখবা যুদ্ধ) পর ইহুদিদের তাদের জুদেয়া (Judea) প্রদেশ থেকে, বিশেষ করে জেরুসালেমে চূড়ান্তভাবে নিষিদ্ধ করা হয়। এর পূর্বে যখন লেভান্ট বা কেনানের শাসনক্ষমতা ব্যাবিলনিয়দের (পারস্য) হাতে ছিল তখন থেকেই ইহুদি নির্বাসন শুরু হলেও, তখন ইহুদিদের এই অঞ্চলে নিষিদ্ধ করা হয়নি। রোমান-ইহুদি দ্বিতীয় যুদ্ধে ইহুদিরা পরাজিত হলে জেরুসালেম ছাড়তে হয় সকল ইহুদিকে। সেই যুদ্ধে সেকেন্ড টেম্পলও ধ্বংস হয়। এটি ১১৫ থেকে ১১৭ সালের কথা।

ইহুদিরা ইউরোপে থাকা শুরু করে। কেউ কেউ সেখানে বিচ্ছিন্নভাবে থাকে আবার কেউ কেউ গোষ্ঠীবদ্ধ হয়ে থাকে। খেয়ে থাকুক, না খেয়ে থাকুক, অন্যের দাস হয়ে থাকুক অথবা অন্য যে ভাবেই তারা দিন, মাস, বছর, শতাব্দী পার করুক না কেন তাদের মধ্যে থেকে কখনোই ইহুদিবাদ মুছে যায়নি। তারা সুযোগ পেলেই নিজেদের শ্রেষ্ঠত্ব প্রকাশ করতে চাইত। তাদেরকে বিভিন্ন সময়ে অকৃতজ্ঞ থাকতে দেখা গেছে। ইতিহাসবিদেরা মনে করেন, ইহুদিরা চারিত্রিকভাবে কখনোই ভালো ছিল না, যার কারণে নানান সময়ে শাসকদের রোষানলে পড়তে হয়েছে। ইহুদিরা সংখ্যা কম হয়েও কৌশলে বিভিন্ন জায়গায় প্রবেশ করে বা প্রবেশের সুযোগ পেলে সেখানেরই ক্ষতি করে বের হতো কিংবা ওইসব নিজেদের করে নিত। আড়াইহাজারেরও বেশি সময়ের ইতিহাস এই ইহুদিদের। জায়োনিজমকে ফোকাস করা এই নিবন্ধে তাঁদের আড়াইহাজার বছরের সকল ইতিহাস ফুটিয়ে তোলা সম্ভব নয়।

বিভিন্ন ঘটনা, প্রতিঘটনা, সম্মেলন, পরামর্শ, সিদ্ধান্ত, পুনঃসিদ্ধান্ত ইত্যাদির মধ্যদিয়ে সময় অতিবাহিত হতে হতে ১৮৯৭ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় ওয়ার্ল্ড জায়োনিস্ট অরগানাইজেশন। ইহুদিরা তখন খুবই চাইছিল নিজেদের একটি দেশ হোক। বিভিন্ন সময় বিভিন্ন অঞ্চলে তাদের দেশ গঠনের প্রস্তাব আসে। কেউ কেউ সেই সব প্রস্তাবে সাড়া প্রদান করলেও কারও প্রস্তাব সাফল্যের মুখ দেখেনি। পরবর্তিতে থিওডর হার্জল নামের একজন সাংবাদিক ও সাংস্কৃতিক কর্মি বিষয়টি নিয়ে ভাবেন। হার্জল একটি ইহুদি রাষ্ট্রের রূপরেখা তুলে ধরেন এবং প্রচারণাও করতে থাকেন। তখন সেটি বেশ গুরুত্বের সাথে নেয় সবাই। বিশেষ করে তখনকার রাব্বি এবং সেফার্ডিরা হার্জলের এই প্রস্তাবকে খুব প্রশংসার চোখেই দেখেছিলেন। ইহুদি পণ্ডিতদের বলা হয় রাব্বি। এবং পর্তুগাল ও স্পেনে বসবাসরত ইহুদি ধধর্মালম্বিদের বলা হতো সেফার্ডি।

থিওডর হার্জল চেয়েছিলেন আর্জেন্টিনা বা ফিলিস্তিনে ইহুদি রাষ্ট্রের জন্ম দিতে। আর্জেন্টিনাকে পছন্দ করার কারণ ছিল এর বিস্তৃত এবং বিচ্ছিন্ন জনবহুল অঞ্চল এবং নাতিশীতোষ্ণ জলবায়ু। কিন্তু ফিলিস্তিনে রাষ্ট্র গড়ায় তিনি অধিক আগ্রহী ছিলেন, কারণ ফিলিস্তিনের সাথে তাদের ঐতিহাসিক ও ধর্মীয় উভয় সম্পর্কই রয়েছে। যেহেতু হিব্রু বাইবেলে বলা হয়েছে কেনান (লেভান্ট) অঞ্চল স্রষ্টা তাদেরকেই দান করেছেন এবং ওই অঞ্চলকেই তাদের প্রতিশ্রুত দেশ মনে করে সেহেতু আর্জেন্টিনার চেয়ে ফিলিস্তিনকেই বেছে নেয় ইহুদিরা। জায়ন পাহাড় কিংবা জেরুসালেমের ভূমিতে তাঁরা পুনরায় বিচরণ করতে চাইল, সেখানে প্রতিষ্ঠা করতে চাইল নিজেদের সার্বভৌম রাষ্ট্র। এভাবেই জায়নবাদের প্রতিষ্ঠা হয়েছে। থিওডর হার্জলকে বলা হয় জায়নিজম তথা ইহুদি রাষ্ট্রের প্রবক্তা। ফিলিস্তিনের জমিতে জেরুসালেমকে ঘিরে যে ইসরায়েল নামের রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, সেই ইসরায়ল রাষ্ট্রের জনক বলা হয় থিওডর হার্জলকে

জায়োনিজম ও জুদাইজম এক নয়

জায়োনিজম হলো ইহুদি ধর্মের অনুসারীদের একটি বিশেষ গোষ্ঠী যারা রাজনৈতিকভাবে নিজেদের শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণ করতে ও অন্যের ওপর প্রভাব বিস্তার করতে মরিয়া হয়ে আছে। আর অন্যদিকে জুদাইজম হলো ইহুদি ধর্মের ধর্মীয় অ শান্তিপ্রিয় মতবাদ। জায়োনিজম ও জুদাইজম সম্পুর্ণ ভিন্ন বা আলাদা। যারা জায়োনিজমকে ধারণ করে তারা সকলেই ইহুদি কিন্তু সকল ইহুদি জায়োনিজম সমর্থন করে না। আবার এমনো জায়োনিস্ট আছে যারা পুরোপুরিভাব ইহুদিবাদে (জুদাইজম) বিশ্বাসী নয়। নাস্তিক জায়োনিস্টের সংখ্যাও কম নয়। নাস্তিক জায়োনিস্টদের কাছে ধর্ম বিশ্বাস কিছু না হলেও এরা রাজনৈতিকভাবে প্রভাব বিস্তার করতে চায়।

জায়োনিজম এবং জুদাইজম নিয়ে যা কিছুই বলা হোক না কেন, আপনি যদি বিশ্বের খবরাখবর রাখেন তাহলেই বুঝতে পারবে এই দুইটি কখনোই এক নয়। জায়োজিমকে বা জায়নবাদকে সন্ত্রাসবাদ হিসেবেও আখ্যায়িত করা হয়। স্বয়ং ইহুদিরাই, যারা জায়োনিস্ট নন, তারাই স্পষ্ট করে বলছে যে, জায়োনিজম হলো রাষ্ট্রীয়ভাবে সঙ্ঘবদ্ধ সন্ত্রাসী গোষ্ঠী। পৃথিবীতে অন্যতম বর্ণবাদি হলো জায়োনিস্টরা।

এ সম্পর্কে আরও জানতে আপনারা বইয়ের সহযোগিতা নিতে পারেন। উল্লেখযোগ্য কয়েকটি বই হলো- আ হিস্ট্রি অব জায়োনিজম: ফ্রোম দ্য ফ্রেন্স রেভ্যোলুশন টু দ্য এস্টাবলিশমেন্ট অব দ্য স্টেট অফ ইসরায়েল (ওয়াল্টার লেকার), সিক্রেটস অব জায়োনিজম (হেনরি ফোর্ড), জায়োনিজম: কনসাইজ হিস্ট্রি (অ্যালেক্স রিভচিন), জায়োজনিজম অ্যান্ড দ্য ল্যান্ড অব ইসরায়েল (ইয়োটাব এলিয়াচ) ।