০৬:০৩ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ
                       

বয়ঃসন্ধিকাল: বয়ঃসন্ধিকালের দ্বন্দ্ব ব্যবস্থাপনায় প্রতিরক্ষা কৌশলের গুরুত্ব ও সোশ্যাল মিডিয়ার ভূমিকা

মু. মিজানুর রহমান মিজান
  • প্রকাশ: ০৯:৩০:০০ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৭ মে ২০২১
  • / ২৩৭৯ বার পড়া হয়েছে

Image by LysogSalt from Pixabay

বয়ঃসন্ধিকাল কী

সাধারণভাবে বলা যায়, বয়ঃসন্ধিকাল হলো এমন একটি সময় যখন কোনো কিশোর পুরুষে এবং কোনো কিশোরী নারীতে পরিণত হতে থাকে। বয়ঃসন্ধিকালকে শৈশব থেকে যৌবনে পা রাখার মধ্যবর্তী সময়ও বলা যায়। এই সময় কিশোর-কিশোরীর শারীরিক ও মানসিক পরিবর্তন শুরু হয়। এই সময়ে আকস্মিক হরমোন পরিবর্তনের কারণে এদের মধ্যে মানসিক আবেগের উত্থান-পতনের একধরণের তীব্রতা লক্ষ্য করা যায়। বয়ঃসন্ধিকালকে ইংরেজিতে puberty বলে। এলিজাবেথ বার্গনার হারলক (Elizabeth Bergner Hurlock) মানুষের জীবনের ১১ থেকে ২০ বছর পর্যন্ত সময়কালকে বয়ঃসন্ধিকাল বলে চিহ্নিত করেছেন। কিন্তু অধিকাংশের মতে ১১ থেকে ১৯ বছর পর্যন্ত বয়সকালকে বয়ঃসন্ধিকাল বলা হয়।

বয়ঃসন্ধিকালের দ্বন্দ্ব ব্যবস্থাপনায় প্রতিরক্ষা কৌশলের গুরুত্ব ও সোশ্যাল মিডিয়ার ভূমিকা
বয়ঃসন্ধিকালের দ্বন্দ্ব ব্যবস্থাপনায় প্রতিরক্ষা কৌশলের গুরুত্ব ও সোশ্যাল মিডিয়ার ভূমিকা | Image by LysogSalt from Pixabay

বয়ঃসন্ধিকালে দ্বন্দ্ব

যখন আমাদের মধ্যে সমান শক্তিশালী বিপরিত দুইটি প্রেষণা বা ইচ্ছে কাজ করে তখন দ্বন্দ্বের সৃষ্টি হয়। আবার দ্বন্দ্ব্ব তখনই হয়ে থাকে যখন দেখা যায় প্রত্যাশা অনুসারে প্রাপ্তি হয় না, গতানুগতিক দায়িত্ব বা ভূমিকা প্রত্যাশা অনুসারে না হলে দ্বন্দ্ব বা সংঘাত বেধে যেতে পারে। যখন ছেলেমেয়েরা বয়ঃসন্ধিকালে পদার্পন করে তখন নিজের সাথে নিজের কিংবা মা-বাবা ও সমাজের অন্য সদস্যদের সাথে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন কারণে মতের অমিল হতে পারে যা দ্বন্দ্বের সৃষ্টি করতে পারে। একে ইংরেজিতে conflicts during teenage or puberty বলা হয়। বয়ঃসন্ধিকালের এই দ্বন্দ্ব পারিবারিক সম্পর্ক ও শৃঙ্খলাকে অনেক সময় রিঅর্গানাইজ করে তোলে যা পারিবারিক গণ্ডি পেরিয়ে সামাজিক ক্ষেত্রেও প্রভাব ফেলতে পারে।

বয়ঃসন্ধিকালে পদার্পন করা একেকটি ছেলেমেয়ে এবং এদেরকে ঘিরে থাকা পরিবার ও সমাজের অন্যান্য সদস্যরা খুব সহজেই তাঁদের মধ্যে দ্বন্দ্ব অনুভব করতে পারে। যে ছেলেমেয়ে কেবল বয়ঃসন্ধিকালে পা রেখেছে তারা খুবই হতবাক হতে পারে। তারা দেখতে পায়, যে মানুষগুলো তাদের সাথে কিছুদিন আগেও ভালো করে কথা বলেছে, তাদেরকে আদর করেছে, তাদের সাথে ভালো ব্যবহার করেছে তাঁরা কেমন যেন বিপরীত আচরণ করছে। অপরপক্ষে, পরিবার ও পরিবারের বাইরের যে মানুষগুলো দেখে এসেছে যে ছেলে কিংবা মেয়েটা তাঁদের সাথে খুবই সুন্দর আচরণ করেছে ও নমনীয় ছিল সে হঠাৎ করে কেমন যেন খিটখিটে হয়ে গেছে।

দ্বন্দ্ব দুই ধরণের হতে পারে। ১. খুবই সাধারণ দ্বন্দ্ব যা বিশেষ কোনো ক্ষতির কারণ হয় না এবং ২. মারাত্মক দ্বন্দ্ব, এর কারণে বিশেষ ক্ষতিক হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।

দ্বন্দ্বের কারণ

বয়ঃসন্ধিকালে বিভিন্ন কারণে দ্বন্দ্ব বা সংঘাত হতে পারে। যে কারণগুলো এই দ্বন্দ্বের জন্য দায়ী সে গুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি হলো-

  • মূল্যবোধ ও মূল্যবোধের গুরুত্বের পার্থক্য দেখা দিলে দ্বন্দ্ব হতে পারে।
  • আত্মমর্যাদা ক্ষুন্ন হলে বা হয়েছে বলে মনে হলে দ্বন্দ্বের সৃষ্টি হতে পারে।
  • ব্যক্তিত্বের পার্থক্য হলে দ্বন্দ্ব হতে পারে।
  • কিশোর-কিশোরী বয়ঃসন্ধিকালে নিজেদের মতামত ও সিদ্ধান্তের প্রতি অটল থাকতে চায়; এটিও দ্বন্দ্বের কারণ।
  • মা-বাবা, পরিবারের অন্য সদস্য কিংবা সমাজের কারও কারও সাথে মতের অমিল দেখা দিলে দ্বন্দ্বের দেখা দিতে পারে।

এই কারণগুলোকে চার ধরণের হয়ে থাকে, যেমন- ১. আকর্ষণ-আকর্ষণ, ২. আকর্ষণ-বিকর্ষণ, ৩. বিকর্ষণ-বিকর্ষণ এবং ৪. দ্বৈত আকর্ষণ-বিকর্ষণ।

বয়ঃসন্ধিকালে দ্বন্দ্ব ব্যবস্থাপনা

বয়ঃসন্ধিকালীন দ্বন্দ্ব সাধারণ ও ক্ষতিকর, দুই ধরণেরই হয়ে থাকে। সাধারণ দ্বন্দ্বকে চিকিৎসাবিজ্ঞানীরা ও মনোবিজ্ঞানীরা স্বাস্থ্যকর (healthy) বলে চিহ্নিত করেছেন। এছাড়া এই স্বাধারণ দ্বন্দ্ব কিশোর-কিশোরীদের বিকাশেও সাহায্য করে। অপরদিকে ক্ষতিকর দ্বন্দ্ব বিপদের দিকে ঠেলে দিতে পারে। দ্বন্দ্ব ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে বয়ঃসন্ধিকালীন দ্বন্দ্ব অনেকাংশেই নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়। এই সময়ের দ্বন্দ্ব ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে যেমন ছেলেমেয়েদের আচরণে নিয়ন্ত্রণ আনা যায়, তেমনই মনস্তাত্বিক দিক থেকে ছেলেমেয়দের একটি উত্তম ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করা যায়।

বয়ঃসন্ধিকালের দ্বন্দ্ব ব্যবস্থাপনায় প্রতিরক্ষা কৌশল

সদ্য বয়ঃসন্ধিকালে পা দেওয়া ছেলেমেয়ে ও এদের আশপাশে বিচরণ করে থাকা সমাজের অন্য সদস্যের মধ্যে দ্বন্দ্ব ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে যে কৌশলসমূহ রয়েছে, সেগুলোর মধ্যে কয়েকটি এখানে উল্লেখ করা হলো-

  • দ্বন্দ্বের ফলে যে অবস্হার সৃষ্টি হয় তা যদি ক্ষতিকর পর্যায়ে না পৌঁছায় তাহলে তা মেনে নেওয়া যেতে পারে।
  • মা-বাবার উচিৎ তাঁদের সন্তান কি বলতে চায় তা মনোযোগ ও ধৈর্য্যের সাথে শোনা এবং নিশ্চিত করা যে তাঁরা সত্যিকার অর্থেই ছেলেমেয়েদের গুরুত্বের সাথে শুনছেন।
  • দ্বন্দ্ব যা নিয়ে হয় তা নিয়ে কিশোর-কিশোরীদের সাথে খোলাখুলি আলোচনা করা যেতে পারে।
  • ছেলেমেয়দের সাথে আলোচনার সময় যুক্তি নির্ভর অবস্থা বা পরিস্থিতির সৃষ্টি করার মাধ্যমে দ্বন্দ্ব প্রতিরোধ করা যেতে পারে।
  • বয়ঃসন্ধিকালে পদার্পনের পূর্বে ছেলেমেয়েদের সাথে সকলে যেমন সৌহার্দ্যপূর্ণ আচরণ করেছে সবাই তেমন আচরণ বয়ঃসন্ধিকালে পদার্পনের পরেও বজায় রাখা।
  • মিলেমিশে থাকার প্রবণতা ছেলেমেয়েদের মধ্যে স্থাপন করে দেওয়ার প্রচেষ্টা চালানো।
  • মা-বাবা ও পরিবারের অন্য সদস্যরা সব সময় সন্তানের ভালো চান তা এই বয়ঃসন্ধিকালীন ছেলেমেয়েদের বোঝাতে হবে।
  • পরিবারের সদস্যরাও মা-বাবার মতোই এ বয়সের ছেলেমেয়দের ভালো চান তা বলতে হবে এবং তা উদাহরণ সৃষ্টির মাধ্যমে বোঝাতে হবে।
  • কিশোর-কিশোরীদের সাথে এমন ব্যবহার করা উচিৎ যাতে এরা তাঁদের উপদেশকে কল্যাণকর মনে করে।
  • ছেলেমেয়দেরকে বিশেষ কোনো দক্ষতা অর্জনের কাজে ব্যস্ত রাখাও বয়ঃসন্ধিকালীন দ্বন্দ্ব ব্যবস্থাপনার অন্যতম প্রতিরক্ষা কৌশল হতে পারে।

উপর্যুক্ত কৌশলসমূহ ছাড়াও ব্যক্তি ও পরিস্থিতি বিচারে আরও অনেক কৌশল অবলম্বন করা যেতে পারে। তবে মনোবিজ্ঞানীরা দ্বন্দ্ব ব্যবস্থাপনায় দুইটি কৌশল নিয়ে বলেছেন, যথা- ১. উপযোগী প্রতিক্রিয়া এবং ২. অনুপযোগী প্রতিক্রিয়া।

উপযোগী প্রতিক্রিয়ার মধ্যে যা রয়েছে তা হলো – ১. সরাসরি উপযোগী, ২. আক্রমন ও ক্রোধ, ৩. পলায়ন ও বর্জন এবং ৪. সমযোতা ও বিকল্প লক্ষ্য নির্ধারণ।

অন্যদিকে অনুপযোগী প্রতিক্রিয়ার মধ্যে রয়েছে – ১. যুক্তাভ্যাস, ২. অবদমল, ৩. প্রক্ষেপ, ৪. বিপরিত প্রতিক্রিয়া গঠন, ৫. একাত্বতা অনুভব, ৬. প্রত্যাবৃত্তি, ৭. বিকল্প লক্ষ্য গ্রহণ, ৮. sublimation, ৯. ক্ষতিপূরণ।

বয়ঃসন্ধিকালের দ্বন্দ্ব ব্যবস্থাপনায় প্রতিরক্ষা কৌশলের গুরত্ব

একজন কিশোর বা কিশোরীর মধ্যে যখন বয়ঃসন্ধিকাল এসে যায় বা সে যখন বয়ঃসন্ধিকালে পা রাখে তখন তার মধ্যে আকস্মিক হরমোন পরিবর্তন হয়। যার কারণে তার শারীরিক বৃদ্ধিগত পরিবর্তনের পাশাপাশি মানসিক ক্ষেত্রেও বহুল পরিবির্তন দেখা যায়। এ সময় ছেলেমেয়েরা অনেকটা খিটখিটে মেজাজের হয়ে থাকতে পারে।

বয়ঃসন্ধিকালে একটি ছেলে বা একটি মেয়ে স্বাভাবিকভাবেই নিজের মতামত বা সিদ্ধান্তের প্রয়োগ ঘটাতে চায়। বয়ঃসন্ধিকালে একটি ছেলে বা একটি মেয়ে নিজেকে পরিবার বা সমাজের আর দশজন পরিণত সদস্যের মতোই নিজেকে ভাবতে শুরু করে। তার মধ্যে অনেক সীমাবদ্ধতা থাকার পরেও সে নিজের পছন্দ ও অপছন্দকে প্রাধান্য দিতে থাকে। এ সময়ে ছেলেমেয়েরা নিজেদেরকে স্বাভাবিকভাবেই বড়ো ভাবতে শুরু করে দেয়।

বেশ কিছু কারণে দ্বন্দ্ব ব্যবস্থাপনায় প্রতিরক্ষা কৌশল গুরুত্বপূর্ণ, এগুলো হলো-

  • ছেলেমেয়েরা নিজেদের সম্পর্কে উপযুক্ত ধারণা লাভ করতে পারে।
  • বয়ঃসন্ধিকালীন দ্বন্দ্বের প্রতিরক্ষা কৌশলের মাধ্যমে কিশোর-কিশোরীদের ‘আত্মসচেতন’ করে গড়ে তোলা সম্ভব।
  • প্রতিরক্ষা কৌশলের কারণে অনেক সময় ছেলেমেয়েরা নিজেরাই নিজেদের ত্রুটি সনাক্ত করতে পারে এবং সে অনুযায়ী নতুন মতের সৃষ্টি করতে পারে ও সিদ্ধান্ত নিতে সক্ষম হয়।
  • মা-বাবা ও অন্যদের মধ্যে বয়ঃসন্ধিকালে পদার্পন করা ছেলেমেয়দের মানসিক দূরত্ব হ্রাস করা সম্ভব হয়।
  • বয়ঃসন্ধিকালীন দ্বন্দ্ব ব্যবস্থাপনায় প্রতিরক্ষা কৌশলের মাধ্যমে ছেলেমেয়দের দায়িত্বসচেতন করে গড়ে তোলা যায়। এটি তাদের ভবিষ্যৎ দিনযাপনের একটি ইতিবাচক হাতিয়ার হয়ে থাকবে।

সোশ্যাল মিডিয়া ও বয়ঃসন্ধিকালের দ্বন্দ্ব ব্যবস্থাপনা

সোশ্যাল মিডিয়া বা সমাজমাধ্যম কী

ইন্টারনেট জগতে যে সকল ওয়েবসাইট মানুষে মানুষে যোগাযোগ রক্ষা ও মত বিনিময়, দৈনন্দিন কর্মের ইতিহাসসহ ইত্যাদি ভাগাভাগি করার সুযোগ প্রদান করে, সে-সকল ওয়েবসাইটকে সমাজমাধ্যম বা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম বলে। একে ইংরেজিতে সোশ্যাল মিডিয়া (social meida) বলা হয়।

বয়ঃসন্ধিকালের দ্বন্দ্ব ব্যবস্থাপনায় সোশ্যাল মিডিয়ার ভূমিকা

বর্তমানে সোশ্যাল মিডিয়া নানাভাবে সমাজের বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিভিন্নভাবে অবদান রাখছে। সমাজের নানা বিষয়কে ইতিবাচক ও নেতিবাচক, উভয়ভাবেই প্রভাবিত করছে। এ যুগে মানুষ যেমন সামাজিক যোগাযোগ রক্ষা করে চলার জন্য সোশ্যাল মিডিয়ার ওপর অনেকাংশেই নির্ভরশীল। বিভিন্ন বিভিন্ন প্রচারণামূলক কাজে একে ব্যবহার করা হয়ে থাকে এসব; যেহেতু এসব প্ল্যাটফর্মে মানুষ ঘনিষ্ঠভাবে মিশে গেছে। এখানে যেমন বিভিন্ন বাণিজ্যক প্রতিষ্ঠান নিজেদের ব্যবসায়িক প্রচারণা চালাতে পারে, তেমনই অবাণিজ্যিক এবং সরকারি সংস্থাগুলোও নানা সরকারি ও সামাজিক কার্যক্রমের প্রচারণা চালাতে পারে। বয়ঃসন্ধিকালের দ্বন্দ্ব ব্যবস্থাপনায় সোশ্যাল মিডিয়া (social media) বা সমাজমাধ্যম উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখতে পারে। সোশ্যাল মিডিয়া কীভাবে বয়ঃসন্ধিকালের দ্বন্দ্ব ব্যবস্থাপনায় ভূমিকা রাখতে পারে তা নিচে উল্লেখ করা হলো-

  • সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে সবাইকে বয়ঃসন্ধিকালের বিভিন্ন সমস্যা ও দ্বন্দ্ব সম্পর্কে সকলকে সচেতন করার জন্য বিভিন্নরকম প্রচারণা চালানো যায়। পাশাপাশি মানুষ বয়ঃসন্ধিকালে দ্বন্দ্বের কারণ ও এর প্রতিকার সম্পর্কে ধারণা লাভ করবে।
  • বয়ঃসন্ধিকালে পদার্পন করা অধিকাংশ ছেলেমেয়েই এখন সোশ্যাল মিডিয়াতে যুক্ত; এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে তাদের লক্ষ্য করে বিশেষ নিবন্ধ ও ভিডিয়ো প্রচার করা যেতে পারে। যে-সব নিবন্ধ ও ভিডিয়োর সহযোগিতা নিয়ে তারা নিজেদের অভ্যেস ও আচরণে পরিবর্তন আনতে পারবে।
  • বয়ঃসন্ধিকালীন নানা ধরণের বৈশিষ্ট্য ও করণীয় সম্পর্কে সরকারি, বেসরকারি উদ্যোগে কিংবা একান্তই ব্যক্তিগত উদ্যোগে নানান কন্টেন্ট প্রচার করার মাধ্যমে বয়ঃসন্ধিকালের দ্বন্দ্ব প্রতিরোধ করা যায়।
  • সোশ্যাল মিডিয়া কর্তৃপক্ষ বা উদ্যোক্তারা তাদের উদ্ভাবিত বিভিন্ন রকমের ডিজিটাল টুলের (digital tools) এর মাধ্যমে বয়ঃসন্ধিকালীন দ্বন্দ্ব ব্যবস্থাপনায় সহায়ক ভূমিকা পালন করতে পারে।
  • বয়ঃসন্ধিকালীন দ্বন্দ্ব ব্যবস্থাপনায় নানা শ্রেণি ও পেশার মানুষ নিজেদের অভিজ্ঞতা, উপলব্ধি, করণীয় ইত্যাদি সম্পর্কে বক্তব্য বা মতামত রাখতে পারেন।

উপসংহার

বয়ঃসন্ধিকাল হলো একজন মানুষের জীবনে খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি সময়। এ সময় কিশোর বা কিশোরীর দেহের পরিবর্তন বা বৃদ্ধি লক্ষ্য করা যায়। এর পাশাপাশি মানসিকভাবেও ব্যাপক পরিবর্তন হয়ে থাকে। ছেলেমেয়েদের বয়ঃসন্ধিকালে হঠাৎ আচরণের পরিবর্তনের কারণে বিভিন্ন রকম দ্বন্দ্বের সৃষ্টি হয়ে থাকে। এই দ্বন্দ্ব অনেক সময় ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। যার কারণে বয়ঃসন্ধিকালে এই দ্বন্দ্ব ব্যবস্থাপনায় প্রতিরক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় কৌশল সম্পর্কে সকলের অবগত হওয়া জরুরি। পাশাপাশি ইন্টারনেটের এই যুগে সোশ্যাল মিডিয়াও বয়ঃসন্ধিকালীন দ্বন্দ্ব ব্যবস্থাপনায় শক্ত ভূমিকা পালন করতে পারে।

শেয়ার করুন

মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার তথ্য সংরক্ষিত রাখুন

লেখকতথ্য

মু. মিজানুর রহমান মিজান

মু. মিজানুর রহমান মিজান একজন স্বাধীন শিক্ষামূলক লেখক। তিনি শিক্ষা গবেষণায় বেশ আগ্রহী। যৌথভাবে কিছু গবেষণায়ও অংশ নিয়েছেন।
তাহসান খান এবং মুনজেরিন শহীদের দুটি প্রফেশনাল কমিউনিকেশন কোর্স করুন ২৮% ছাড়ে
তাহসান খান এবং মুনজেরিন শহীদের দুটি প্রফেশনাল কমিউনিকেশন কোর্স করুন ২৮% ছাড়ে

২৮℅ ছাড় পেতে ৩০/০৬/২০২৪ তারিখের মধ্যে প্রোমো কোড “professional10” ব্যবহার করুন। বিস্তারিত জানতে ও ভর্তি হতে ক্লিক করুন এখানে

বয়ঃসন্ধিকাল: বয়ঃসন্ধিকালের দ্বন্দ্ব ব্যবস্থাপনায় প্রতিরক্ষা কৌশলের গুরুত্ব ও সোশ্যাল মিডিয়ার ভূমিকা

প্রকাশ: ০৯:৩০:০০ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৭ মে ২০২১

বয়ঃসন্ধিকাল কী

সাধারণভাবে বলা যায়, বয়ঃসন্ধিকাল হলো এমন একটি সময় যখন কোনো কিশোর পুরুষে এবং কোনো কিশোরী নারীতে পরিণত হতে থাকে। বয়ঃসন্ধিকালকে শৈশব থেকে যৌবনে পা রাখার মধ্যবর্তী সময়ও বলা যায়। এই সময় কিশোর-কিশোরীর শারীরিক ও মানসিক পরিবর্তন শুরু হয়। এই সময়ে আকস্মিক হরমোন পরিবর্তনের কারণে এদের মধ্যে মানসিক আবেগের উত্থান-পতনের একধরণের তীব্রতা লক্ষ্য করা যায়। বয়ঃসন্ধিকালকে ইংরেজিতে puberty বলে। এলিজাবেথ বার্গনার হারলক (Elizabeth Bergner Hurlock) মানুষের জীবনের ১১ থেকে ২০ বছর পর্যন্ত সময়কালকে বয়ঃসন্ধিকাল বলে চিহ্নিত করেছেন। কিন্তু অধিকাংশের মতে ১১ থেকে ১৯ বছর পর্যন্ত বয়সকালকে বয়ঃসন্ধিকাল বলা হয়।

বয়ঃসন্ধিকালের দ্বন্দ্ব ব্যবস্থাপনায় প্রতিরক্ষা কৌশলের গুরুত্ব ও সোশ্যাল মিডিয়ার ভূমিকা
বয়ঃসন্ধিকালের দ্বন্দ্ব ব্যবস্থাপনায় প্রতিরক্ষা কৌশলের গুরুত্ব ও সোশ্যাল মিডিয়ার ভূমিকা | Image by LysogSalt from Pixabay

বয়ঃসন্ধিকালে দ্বন্দ্ব

যখন আমাদের মধ্যে সমান শক্তিশালী বিপরিত দুইটি প্রেষণা বা ইচ্ছে কাজ করে তখন দ্বন্দ্বের সৃষ্টি হয়। আবার দ্বন্দ্ব্ব তখনই হয়ে থাকে যখন দেখা যায় প্রত্যাশা অনুসারে প্রাপ্তি হয় না, গতানুগতিক দায়িত্ব বা ভূমিকা প্রত্যাশা অনুসারে না হলে দ্বন্দ্ব বা সংঘাত বেধে যেতে পারে। যখন ছেলেমেয়েরা বয়ঃসন্ধিকালে পদার্পন করে তখন নিজের সাথে নিজের কিংবা মা-বাবা ও সমাজের অন্য সদস্যদের সাথে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন কারণে মতের অমিল হতে পারে যা দ্বন্দ্বের সৃষ্টি করতে পারে। একে ইংরেজিতে conflicts during teenage or puberty বলা হয়। বয়ঃসন্ধিকালের এই দ্বন্দ্ব পারিবারিক সম্পর্ক ও শৃঙ্খলাকে অনেক সময় রিঅর্গানাইজ করে তোলে যা পারিবারিক গণ্ডি পেরিয়ে সামাজিক ক্ষেত্রেও প্রভাব ফেলতে পারে।

বয়ঃসন্ধিকালে পদার্পন করা একেকটি ছেলেমেয়ে এবং এদেরকে ঘিরে থাকা পরিবার ও সমাজের অন্যান্য সদস্যরা খুব সহজেই তাঁদের মধ্যে দ্বন্দ্ব অনুভব করতে পারে। যে ছেলেমেয়ে কেবল বয়ঃসন্ধিকালে পা রেখেছে তারা খুবই হতবাক হতে পারে। তারা দেখতে পায়, যে মানুষগুলো তাদের সাথে কিছুদিন আগেও ভালো করে কথা বলেছে, তাদেরকে আদর করেছে, তাদের সাথে ভালো ব্যবহার করেছে তাঁরা কেমন যেন বিপরীত আচরণ করছে। অপরপক্ষে, পরিবার ও পরিবারের বাইরের যে মানুষগুলো দেখে এসেছে যে ছেলে কিংবা মেয়েটা তাঁদের সাথে খুবই সুন্দর আচরণ করেছে ও নমনীয় ছিল সে হঠাৎ করে কেমন যেন খিটখিটে হয়ে গেছে।

দ্বন্দ্ব দুই ধরণের হতে পারে। ১. খুবই সাধারণ দ্বন্দ্ব যা বিশেষ কোনো ক্ষতির কারণ হয় না এবং ২. মারাত্মক দ্বন্দ্ব, এর কারণে বিশেষ ক্ষতিক হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।

দ্বন্দ্বের কারণ

বয়ঃসন্ধিকালে বিভিন্ন কারণে দ্বন্দ্ব বা সংঘাত হতে পারে। যে কারণগুলো এই দ্বন্দ্বের জন্য দায়ী সে গুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি হলো-

  • মূল্যবোধ ও মূল্যবোধের গুরুত্বের পার্থক্য দেখা দিলে দ্বন্দ্ব হতে পারে।
  • আত্মমর্যাদা ক্ষুন্ন হলে বা হয়েছে বলে মনে হলে দ্বন্দ্বের সৃষ্টি হতে পারে।
  • ব্যক্তিত্বের পার্থক্য হলে দ্বন্দ্ব হতে পারে।
  • কিশোর-কিশোরী বয়ঃসন্ধিকালে নিজেদের মতামত ও সিদ্ধান্তের প্রতি অটল থাকতে চায়; এটিও দ্বন্দ্বের কারণ।
  • মা-বাবা, পরিবারের অন্য সদস্য কিংবা সমাজের কারও কারও সাথে মতের অমিল দেখা দিলে দ্বন্দ্বের দেখা দিতে পারে।

এই কারণগুলোকে চার ধরণের হয়ে থাকে, যেমন- ১. আকর্ষণ-আকর্ষণ, ২. আকর্ষণ-বিকর্ষণ, ৩. বিকর্ষণ-বিকর্ষণ এবং ৪. দ্বৈত আকর্ষণ-বিকর্ষণ।

বয়ঃসন্ধিকালে দ্বন্দ্ব ব্যবস্থাপনা

বয়ঃসন্ধিকালীন দ্বন্দ্ব সাধারণ ও ক্ষতিকর, দুই ধরণেরই হয়ে থাকে। সাধারণ দ্বন্দ্বকে চিকিৎসাবিজ্ঞানীরা ও মনোবিজ্ঞানীরা স্বাস্থ্যকর (healthy) বলে চিহ্নিত করেছেন। এছাড়া এই স্বাধারণ দ্বন্দ্ব কিশোর-কিশোরীদের বিকাশেও সাহায্য করে। অপরদিকে ক্ষতিকর দ্বন্দ্ব বিপদের দিকে ঠেলে দিতে পারে। দ্বন্দ্ব ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে বয়ঃসন্ধিকালীন দ্বন্দ্ব অনেকাংশেই নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়। এই সময়ের দ্বন্দ্ব ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে যেমন ছেলেমেয়েদের আচরণে নিয়ন্ত্রণ আনা যায়, তেমনই মনস্তাত্বিক দিক থেকে ছেলেমেয়দের একটি উত্তম ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করা যায়।

বয়ঃসন্ধিকালের দ্বন্দ্ব ব্যবস্থাপনায় প্রতিরক্ষা কৌশল

সদ্য বয়ঃসন্ধিকালে পা দেওয়া ছেলেমেয়ে ও এদের আশপাশে বিচরণ করে থাকা সমাজের অন্য সদস্যের মধ্যে দ্বন্দ্ব ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে যে কৌশলসমূহ রয়েছে, সেগুলোর মধ্যে কয়েকটি এখানে উল্লেখ করা হলো-

  • দ্বন্দ্বের ফলে যে অবস্হার সৃষ্টি হয় তা যদি ক্ষতিকর পর্যায়ে না পৌঁছায় তাহলে তা মেনে নেওয়া যেতে পারে।
  • মা-বাবার উচিৎ তাঁদের সন্তান কি বলতে চায় তা মনোযোগ ও ধৈর্য্যের সাথে শোনা এবং নিশ্চিত করা যে তাঁরা সত্যিকার অর্থেই ছেলেমেয়েদের গুরুত্বের সাথে শুনছেন।
  • দ্বন্দ্ব যা নিয়ে হয় তা নিয়ে কিশোর-কিশোরীদের সাথে খোলাখুলি আলোচনা করা যেতে পারে।
  • ছেলেমেয়দের সাথে আলোচনার সময় যুক্তি নির্ভর অবস্থা বা পরিস্থিতির সৃষ্টি করার মাধ্যমে দ্বন্দ্ব প্রতিরোধ করা যেতে পারে।
  • বয়ঃসন্ধিকালে পদার্পনের পূর্বে ছেলেমেয়েদের সাথে সকলে যেমন সৌহার্দ্যপূর্ণ আচরণ করেছে সবাই তেমন আচরণ বয়ঃসন্ধিকালে পদার্পনের পরেও বজায় রাখা।
  • মিলেমিশে থাকার প্রবণতা ছেলেমেয়েদের মধ্যে স্থাপন করে দেওয়ার প্রচেষ্টা চালানো।
  • মা-বাবা ও পরিবারের অন্য সদস্যরা সব সময় সন্তানের ভালো চান তা এই বয়ঃসন্ধিকালীন ছেলেমেয়েদের বোঝাতে হবে।
  • পরিবারের সদস্যরাও মা-বাবার মতোই এ বয়সের ছেলেমেয়দের ভালো চান তা বলতে হবে এবং তা উদাহরণ সৃষ্টির মাধ্যমে বোঝাতে হবে।
  • কিশোর-কিশোরীদের সাথে এমন ব্যবহার করা উচিৎ যাতে এরা তাঁদের উপদেশকে কল্যাণকর মনে করে।
  • ছেলেমেয়দেরকে বিশেষ কোনো দক্ষতা অর্জনের কাজে ব্যস্ত রাখাও বয়ঃসন্ধিকালীন দ্বন্দ্ব ব্যবস্থাপনার অন্যতম প্রতিরক্ষা কৌশল হতে পারে।

উপর্যুক্ত কৌশলসমূহ ছাড়াও ব্যক্তি ও পরিস্থিতি বিচারে আরও অনেক কৌশল অবলম্বন করা যেতে পারে। তবে মনোবিজ্ঞানীরা দ্বন্দ্ব ব্যবস্থাপনায় দুইটি কৌশল নিয়ে বলেছেন, যথা- ১. উপযোগী প্রতিক্রিয়া এবং ২. অনুপযোগী প্রতিক্রিয়া।

উপযোগী প্রতিক্রিয়ার মধ্যে যা রয়েছে তা হলো – ১. সরাসরি উপযোগী, ২. আক্রমন ও ক্রোধ, ৩. পলায়ন ও বর্জন এবং ৪. সমযোতা ও বিকল্প লক্ষ্য নির্ধারণ।

অন্যদিকে অনুপযোগী প্রতিক্রিয়ার মধ্যে রয়েছে – ১. যুক্তাভ্যাস, ২. অবদমল, ৩. প্রক্ষেপ, ৪. বিপরিত প্রতিক্রিয়া গঠন, ৫. একাত্বতা অনুভব, ৬. প্রত্যাবৃত্তি, ৭. বিকল্প লক্ষ্য গ্রহণ, ৮. sublimation, ৯. ক্ষতিপূরণ।

বয়ঃসন্ধিকালের দ্বন্দ্ব ব্যবস্থাপনায় প্রতিরক্ষা কৌশলের গুরত্ব

একজন কিশোর বা কিশোরীর মধ্যে যখন বয়ঃসন্ধিকাল এসে যায় বা সে যখন বয়ঃসন্ধিকালে পা রাখে তখন তার মধ্যে আকস্মিক হরমোন পরিবর্তন হয়। যার কারণে তার শারীরিক বৃদ্ধিগত পরিবর্তনের পাশাপাশি মানসিক ক্ষেত্রেও বহুল পরিবির্তন দেখা যায়। এ সময় ছেলেমেয়েরা অনেকটা খিটখিটে মেজাজের হয়ে থাকতে পারে।

বয়ঃসন্ধিকালে একটি ছেলে বা একটি মেয়ে স্বাভাবিকভাবেই নিজের মতামত বা সিদ্ধান্তের প্রয়োগ ঘটাতে চায়। বয়ঃসন্ধিকালে একটি ছেলে বা একটি মেয়ে নিজেকে পরিবার বা সমাজের আর দশজন পরিণত সদস্যের মতোই নিজেকে ভাবতে শুরু করে। তার মধ্যে অনেক সীমাবদ্ধতা থাকার পরেও সে নিজের পছন্দ ও অপছন্দকে প্রাধান্য দিতে থাকে। এ সময়ে ছেলেমেয়েরা নিজেদেরকে স্বাভাবিকভাবেই বড়ো ভাবতে শুরু করে দেয়।

বেশ কিছু কারণে দ্বন্দ্ব ব্যবস্থাপনায় প্রতিরক্ষা কৌশল গুরুত্বপূর্ণ, এগুলো হলো-

  • ছেলেমেয়েরা নিজেদের সম্পর্কে উপযুক্ত ধারণা লাভ করতে পারে।
  • বয়ঃসন্ধিকালীন দ্বন্দ্বের প্রতিরক্ষা কৌশলের মাধ্যমে কিশোর-কিশোরীদের ‘আত্মসচেতন’ করে গড়ে তোলা সম্ভব।
  • প্রতিরক্ষা কৌশলের কারণে অনেক সময় ছেলেমেয়েরা নিজেরাই নিজেদের ত্রুটি সনাক্ত করতে পারে এবং সে অনুযায়ী নতুন মতের সৃষ্টি করতে পারে ও সিদ্ধান্ত নিতে সক্ষম হয়।
  • মা-বাবা ও অন্যদের মধ্যে বয়ঃসন্ধিকালে পদার্পন করা ছেলেমেয়দের মানসিক দূরত্ব হ্রাস করা সম্ভব হয়।
  • বয়ঃসন্ধিকালীন দ্বন্দ্ব ব্যবস্থাপনায় প্রতিরক্ষা কৌশলের মাধ্যমে ছেলেমেয়দের দায়িত্বসচেতন করে গড়ে তোলা যায়। এটি তাদের ভবিষ্যৎ দিনযাপনের একটি ইতিবাচক হাতিয়ার হয়ে থাকবে।

সোশ্যাল মিডিয়া ও বয়ঃসন্ধিকালের দ্বন্দ্ব ব্যবস্থাপনা

সোশ্যাল মিডিয়া বা সমাজমাধ্যম কী

ইন্টারনেট জগতে যে সকল ওয়েবসাইট মানুষে মানুষে যোগাযোগ রক্ষা ও মত বিনিময়, দৈনন্দিন কর্মের ইতিহাসসহ ইত্যাদি ভাগাভাগি করার সুযোগ প্রদান করে, সে-সকল ওয়েবসাইটকে সমাজমাধ্যম বা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম বলে। একে ইংরেজিতে সোশ্যাল মিডিয়া (social meida) বলা হয়।

বয়ঃসন্ধিকালের দ্বন্দ্ব ব্যবস্থাপনায় সোশ্যাল মিডিয়ার ভূমিকা

বর্তমানে সোশ্যাল মিডিয়া নানাভাবে সমাজের বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিভিন্নভাবে অবদান রাখছে। সমাজের নানা বিষয়কে ইতিবাচক ও নেতিবাচক, উভয়ভাবেই প্রভাবিত করছে। এ যুগে মানুষ যেমন সামাজিক যোগাযোগ রক্ষা করে চলার জন্য সোশ্যাল মিডিয়ার ওপর অনেকাংশেই নির্ভরশীল। বিভিন্ন বিভিন্ন প্রচারণামূলক কাজে একে ব্যবহার করা হয়ে থাকে এসব; যেহেতু এসব প্ল্যাটফর্মে মানুষ ঘনিষ্ঠভাবে মিশে গেছে। এখানে যেমন বিভিন্ন বাণিজ্যক প্রতিষ্ঠান নিজেদের ব্যবসায়িক প্রচারণা চালাতে পারে, তেমনই অবাণিজ্যিক এবং সরকারি সংস্থাগুলোও নানা সরকারি ও সামাজিক কার্যক্রমের প্রচারণা চালাতে পারে। বয়ঃসন্ধিকালের দ্বন্দ্ব ব্যবস্থাপনায় সোশ্যাল মিডিয়া (social media) বা সমাজমাধ্যম উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখতে পারে। সোশ্যাল মিডিয়া কীভাবে বয়ঃসন্ধিকালের দ্বন্দ্ব ব্যবস্থাপনায় ভূমিকা রাখতে পারে তা নিচে উল্লেখ করা হলো-

  • সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে সবাইকে বয়ঃসন্ধিকালের বিভিন্ন সমস্যা ও দ্বন্দ্ব সম্পর্কে সকলকে সচেতন করার জন্য বিভিন্নরকম প্রচারণা চালানো যায়। পাশাপাশি মানুষ বয়ঃসন্ধিকালে দ্বন্দ্বের কারণ ও এর প্রতিকার সম্পর্কে ধারণা লাভ করবে।
  • বয়ঃসন্ধিকালে পদার্পন করা অধিকাংশ ছেলেমেয়েই এখন সোশ্যাল মিডিয়াতে যুক্ত; এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে তাদের লক্ষ্য করে বিশেষ নিবন্ধ ও ভিডিয়ো প্রচার করা যেতে পারে। যে-সব নিবন্ধ ও ভিডিয়োর সহযোগিতা নিয়ে তারা নিজেদের অভ্যেস ও আচরণে পরিবর্তন আনতে পারবে।
  • বয়ঃসন্ধিকালীন নানা ধরণের বৈশিষ্ট্য ও করণীয় সম্পর্কে সরকারি, বেসরকারি উদ্যোগে কিংবা একান্তই ব্যক্তিগত উদ্যোগে নানান কন্টেন্ট প্রচার করার মাধ্যমে বয়ঃসন্ধিকালের দ্বন্দ্ব প্রতিরোধ করা যায়।
  • সোশ্যাল মিডিয়া কর্তৃপক্ষ বা উদ্যোক্তারা তাদের উদ্ভাবিত বিভিন্ন রকমের ডিজিটাল টুলের (digital tools) এর মাধ্যমে বয়ঃসন্ধিকালীন দ্বন্দ্ব ব্যবস্থাপনায় সহায়ক ভূমিকা পালন করতে পারে।
  • বয়ঃসন্ধিকালীন দ্বন্দ্ব ব্যবস্থাপনায় নানা শ্রেণি ও পেশার মানুষ নিজেদের অভিজ্ঞতা, উপলব্ধি, করণীয় ইত্যাদি সম্পর্কে বক্তব্য বা মতামত রাখতে পারেন।

উপসংহার

বয়ঃসন্ধিকাল হলো একজন মানুষের জীবনে খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি সময়। এ সময় কিশোর বা কিশোরীর দেহের পরিবর্তন বা বৃদ্ধি লক্ষ্য করা যায়। এর পাশাপাশি মানসিকভাবেও ব্যাপক পরিবর্তন হয়ে থাকে। ছেলেমেয়েদের বয়ঃসন্ধিকালে হঠাৎ আচরণের পরিবর্তনের কারণে বিভিন্ন রকম দ্বন্দ্বের সৃষ্টি হয়ে থাকে। এই দ্বন্দ্ব অনেক সময় ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। যার কারণে বয়ঃসন্ধিকালে এই দ্বন্দ্ব ব্যবস্থাপনায় প্রতিরক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় কৌশল সম্পর্কে সকলের অবগত হওয়া জরুরি। পাশাপাশি ইন্টারনেটের এই যুগে সোশ্যাল মিডিয়াও বয়ঃসন্ধিকালীন দ্বন্দ্ব ব্যবস্থাপনায় শক্ত ভূমিকা পালন করতে পারে।